উদ্বেগ নিয়েই এইচএসসি পরীক্ষা শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৬৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৮ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫২ জন। দেশের ২ হাজার ৬২১টি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশের আটটি কেন্দ্রে এবার ৪০৬ জন পরীক্ষায় বসেছে।
নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৯ মাস পর এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছেন রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াদ। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হলেও উদ্বেগ আছে তার। কারণ দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকায় প্রস্তুতিতে ঘাটতি আছে এই শিক্ষার্থীর। অভিভাবক রোকেয়া সুলতানার উদ্বেগ আবার ভিন্ন কারণে। তার মতে, সব শিক্ষার্থী এখনো টিকা পায়নি। এর মধ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ফলে আতঙ্কে আছেন তিনি।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি পরীক্ষা কেন্দ্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওমিক্রনের কারণে পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুরু হওয়া এইচএসসি সমমান পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। তবে বেশির ভাগই বলেছেন, অটোপাসের চেয়ে অন্তত পরীক্ষায় বসে উত্তীর্ণ হওয়াটা বেশি ভালো।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড় যাওয়ায় গত বছর উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। গতকাল বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার সশরীরে ক্লাসের সুযোগ কম পাওয়ায় পরীক্ষা হচ্ছে নতুন নিয়মে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রের পরীক্ষা দিতে হবে তাদের। তিন ঘণ্টার বদলে পরীক্ষায় সময় থাকছে দেড় ঘণ্টা। নতুন নিয়মে, বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ১৫ মিনিটে ১২টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। আর সোয়া এক ঘণ্টায় তত্ত্বীয় পরীক্ষায় দিতে হয়েছে দুটির উত্তর।
গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। যারা এ ধরনের গুজব ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামাজিক মাধ্যমে এ ব্যাপারে যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরদারি করছে।
বিশ্বে নয়া আতঙ্ক ওমিক্রন প্রসঙ্গেও কথা বলেন দীপু মনি। আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওমিক্রনের কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। তবে আমরা প্রার্থনা করি আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয় এমন পরিস্থিতি যেন না হয়।’
আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এইচএসসি সমমান পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছর একেবারে নভেম্বর-ডিসেম্বরে পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু আগামী বছর এমনটা হবে না। আমরা যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি আশা রাখছি এবারের চেয়ে অনেক আগে পরীক্ষা হবে। বছরের প্রথমভাগে না হলেও মাঝামাঝি সময়ে এসব পরীক্ষা হবে।’
আগামী ২৩ ডিসেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ওইদিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেরও তারিখ ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করেছি। তারা নির্বাচন পিছিয়েছে। যার কারণে ২৩ তারিখে পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।’ দীপু মনি জানান, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের টিকা দেওয়া হয়নি বা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে, তাদের পরীক্ষার পরপরই দ্রুত টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া এইচএসসির ফলাফল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে এক মাসের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
প্রথম দিন রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কেন্দ্রে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা বলছেন, ‘তেমন প্রস্তুতি ছাড়াই দীর্ঘ বিরতির পর পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, তার প্রভাব পড়তে পারে ফলাফলে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা রওশন আক্তার কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। দেড় বছর সরাসরি ক্লাসের বাইরে থেকে ছেলে পরীক্ষায় বসায় উদ্বিগ্ন এই অভিভাবক। তিনি বলেন, করোনার কারণে তো তেমন ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। অনেক টেনশন লাগছে। এমন প্রশ্নে তো আগে কোনো পরীক্ষাও দেয়নি, দিলে হয়তো কনফিডেন্স থাকত। দেখা যাক, কী হয়।’
পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ঘাটতির কথা জানিয়ে শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের শিক্ষার্থী রিহাবুল তানভীর বলেন, ‘শর্ট সিলেবাস আমরা শেষ করেছি। কিন্তু অনেক দিন পরে পরীক্ষা হচ্ছে। অনেকে তো ভেবেছিল পরীক্ষা হবে না। সে কারণে প্রস্তুতিও তেমন নেয়নি। আবার কলেজে তেমন পরীক্ষাও হয়নি যে আমাদের প্র্যাকটিসটা থাকবে। সে কারণে কিছুটা ভয় লাগছে।’
গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগেই এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়। এরপর ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও মহামারীর কারণে ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। পরে এ বছর জানুয়ারিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফলের গড় করে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়।
মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরীক্ষা-সংশ্লিষ্টদের যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলেছিল। একজনের বেশি অভিভাবককে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কেন্দ্রে না আসতেও বলা হয়েছিল। রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্রে দেখা গেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হাত জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থাও ছিল কয়েকটি কেন্দ্রে।
পরীক্ষা চলার সময় শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রের কর্মী ছাড়া অন্য কাউকে কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতর প্রবেশ না করতে বলা হয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে। তার পরও বিভিন্ন কলেজের বাইরে অভিভাবকদের জটলা দেখা গেছে। অভিভাবকদের সরে যেতে মাইকে ঘোষণা দিলেও তা মানেননি অনেকে।
মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ভিড়ে প্রধান সড়কে যান চলাচলে ধীর গতি দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ সময় বারবার অভিভাবকদের সরিয়ে দেয়। এ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল আবদুস সামাদ বলেন, ‘নির্দেশনা দেয়ই। কিন্তু এইগুলা মানা যায় না। বাচ্চারা পরীক্ষা দিতে আসে, সঙ্গে তো বাবা-মা আসবেই।’
অভিভাবকদের ভিড়ের বিষয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল আফরিনা পারভীন বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা, পুলিশের সদস্যরা তাদের সরিয়ে দিয়েছেন, তারা আবার কেন্দ্রের সামনে ভিড় করেছেন। আমরা তো তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারি না।’ এই কেন্দ্রে মা ও ছোট বোনকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের পরীক্ষার্থী রুবিনা আক্তার। ভিড়ের কারণে কেন্দ্রে প্রবেশে যে সমস্যা হয়েছে, তা জানালেন এই পরীক্ষার্থীও।
মিরপুর-১৪ নম্বরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে এবার পরীক্ষা দিচ্ছে ১২টি বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা। এই কেন্দ্রে অনেক শিক্ষার্থীর আসন পড়ায় অভিভাবকদের বাড়তি চাপ দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে ঢুকে গেলেও অভিভাবকরা দাঁড়িয়ে থাকেন। এ কেন্দ্রটি প্রধান সড়কের সঙ্গে থাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় বারবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে অভিভাবকদের সরে যেতে বলা হয়।
শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

করোনা সংক্রমণের কারণে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৬৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ২৯ হাজার ৭৩৮ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৯৫২ জন। দেশের ২ হাজার ৬২১টি কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল প্রথম দিনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশের আটটি কেন্দ্রে এবার ৪০৬ জন পরীক্ষায় বসেছে।
নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৯ মাস পর এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছেন রাজধানীর বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াদ। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হলেও উদ্বেগ আছে তার। কারণ দীর্ঘদিন শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকায় প্রস্তুতিতে ঘাটতি আছে এই শিক্ষার্থীর। অভিভাবক রোকেয়া সুলতানার উদ্বেগ আবার ভিন্ন কারণে। তার মতে, সব শিক্ষার্থী এখনো টিকা পায়নি। এর মধ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন বিশ্বে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। ফলে আতঙ্কে আছেন তিনি।
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি পরীক্ষা কেন্দ্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওমিক্রনের কারণে পরিস্থিতি খারাপ হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর শুরু হওয়া এইচএসসি সমমান পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। তবে বেশির ভাগই বলেছেন, অটোপাসের চেয়ে অন্তত পরীক্ষায় বসে উত্তীর্ণ হওয়াটা বেশি ভালো।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড় যাওয়ায় গত বছর উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। গতকাল বিজ্ঞান বিভাগের পদার্থ বিজ্ঞান প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার সশরীরে ক্লাসের সুযোগ কম পাওয়ায় পরীক্ষা হচ্ছে নতুন নিয়মে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রের পরীক্ষা দিতে হবে তাদের। তিন ঘণ্টার বদলে পরীক্ষায় সময় থাকছে দেড় ঘণ্টা। নতুন নিয়মে, বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ১৫ মিনিটে ১২টি এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। আর সোয়া এক ঘণ্টায় তত্ত্বীয় পরীক্ষায় দিতে হয়েছে দুটির উত্তর।
গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। যারা এ ধরনের গুজব ছড়াবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামাজিক মাধ্যমে এ ব্যাপারে যাতে কেউ গুজব ছড়াতে না পারে এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরদারি করছে।
বিশ্বে নয়া আতঙ্ক ওমিক্রন প্রসঙ্গেও কথা বলেন দীপু মনি। আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওমিক্রনের কারণে পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। তবে আমরা প্রার্থনা করি আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে হয় এমন পরিস্থিতি যেন না হয়।’
আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এইচএসসি সমমান পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘চলতি বছর একেবারে নভেম্বর-ডিসেম্বরে পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু আগামী বছর এমনটা হবে না। আমরা যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি আশা রাখছি এবারের চেয়ে অনেক আগে পরীক্ষা হবে। বছরের প্রথমভাগে না হলেও মাঝামাঝি সময়ে এসব পরীক্ষা হবে।’
আগামী ২৩ ডিসেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ওইদিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনেরও তারিখ ছিল। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করেছি। তারা নির্বাচন পিছিয়েছে। যার কারণে ২৩ তারিখে পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে।’ দীপু মনি জানান, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের টিকা দেওয়া হয়নি বা টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে, তাদের পরীক্ষার পরপরই দ্রুত টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া এইচএসসির ফলাফল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে এক মাসের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
প্রথম দিন রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কেন্দ্রে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা বলছেন, ‘তেমন প্রস্তুতি ছাড়াই দীর্ঘ বিরতির পর পরীক্ষা দিতে হচ্ছে, তার প্রভাব পড়তে পারে ফলাফলে। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা রওশন আক্তার কেন্দ্রের সামনে অপেক্ষা করছিলেন। দেড় বছর সরাসরি ক্লাসের বাইরে থেকে ছেলে পরীক্ষায় বসায় উদ্বিগ্ন এই অভিভাবক। তিনি বলেন, করোনার কারণে তো তেমন ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। অনেক টেনশন লাগছে। এমন প্রশ্নে তো আগে কোনো পরীক্ষাও দেয়নি, দিলে হয়তো কনফিডেন্স থাকত। দেখা যাক, কী হয়।’
পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ঘাটতির কথা জানিয়ে শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের শিক্ষার্থী রিহাবুল তানভীর বলেন, ‘শর্ট সিলেবাস আমরা শেষ করেছি। কিন্তু অনেক দিন পরে পরীক্ষা হচ্ছে। অনেকে তো ভেবেছিল পরীক্ষা হবে না। সে কারণে প্রস্তুতিও তেমন নেয়নি। আবার কলেজে তেমন পরীক্ষাও হয়নি যে আমাদের প্র্যাকটিসটা থাকবে। সে কারণে কিছুটা ভয় লাগছে।’
গত বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর আগেই এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়। এরপর ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও মহামারীর কারণে ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। পরে এ বছর জানুয়ারিতে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার ফলাফলের গড় করে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়।
মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগেই শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরীক্ষা-সংশ্লিষ্টদের যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলেছিল। একজনের বেশি অভিভাবককে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কেন্দ্রে না আসতেও বলা হয়েছিল। রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্রে দেখা গেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হাত জীবাণুমুক্ত করে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থাও ছিল কয়েকটি কেন্দ্রে।
পরীক্ষা চলার সময় শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রের কর্মী ছাড়া অন্য কাউকে কেন্দ্রের ২০০ গজের ভেতর প্রবেশ না করতে বলা হয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে। তার পরও বিভিন্ন কলেজের বাইরে অভিভাবকদের জটলা দেখা গেছে। অভিভাবকদের সরে যেতে মাইকে ঘোষণা দিলেও তা মানেননি অনেকে।
মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ভিড়ে প্রধান সড়কে যান চলাচলে ধীর গতি দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ সময় বারবার অভিভাবকদের সরিয়ে দেয়। এ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কনস্টেবল আবদুস সামাদ বলেন, ‘নির্দেশনা দেয়ই। কিন্তু এইগুলা মানা যায় না। বাচ্চারা পরীক্ষা দিতে আসে, সঙ্গে তো বাবা-মা আসবেই।’
অভিভাবকদের ভিড়ের বিষয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল আফরিনা পারভীন বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা, পুলিশের সদস্যরা তাদের সরিয়ে দিয়েছেন, তারা আবার কেন্দ্রের সামনে ভিড় করেছেন। আমরা তো তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে পারি না।’ এই কেন্দ্রে মা ও ছোট বোনকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন মিরপুরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজের পরীক্ষার্থী রুবিনা আক্তার। ভিড়ের কারণে কেন্দ্রে প্রবেশে যে সমস্যা হয়েছে, তা জানালেন এই পরীক্ষার্থীও।
মিরপুর-১৪ নম্বরের শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে এবার পরীক্ষা দিচ্ছে ১২টি বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা। এই কেন্দ্রে অনেক শিক্ষার্থীর আসন পড়ায় অভিভাবকদের বাড়তি চাপ দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে ঢুকে গেলেও অভিভাবকরা দাঁড়িয়ে থাকেন। এ কেন্দ্রটি প্রধান সড়কের সঙ্গে থাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। এ সময় বারবার মাইকে ঘোষণা দিয়ে অভিভাবকদের সরে যেতে বলা হয়।