পদোন্নতি নিয়ে হতাশা
সরোয়ার আলম | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
পুলিশে নতুন করে বেশকিছু উচ্চপদ সৃষ্টি হওয়ার পর নিম্নপদের কর্মকর্তারা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিম্নপদের কর্মকর্তাদের দাবি, তারা যথাসময়ে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত রবিবার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টরসহ ২৭ জনকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পদোন্নতির পর পদায়ন করা হয়। যদিও গত বুধবার তাদের এই পদোন্নতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি জানতে পারেন পুলিশ পরিদর্শকরা। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ৮১ জনকে পদোন্নতির প্রস্তাব থাকলেও তাদের মধ্যে ৫৪ জনকেই বঞ্চিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব (পুলিশ শাখা-১) স্বাক্ষরিত ২৭ জনের পদোন্নতিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। আর এই প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরই হতাশা দেখা দেয় মাঠপর্যায়ের পরিদর্শকদের মধ্যে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নন-ক্যাডার পরিদর্শকদের ৫৪ জনকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা হতাশ। একই পদে ২৫-৩০ বছর ধরে চাকরি করার পর আমরা পদোন্নতি পাইনি। পরিবার ও সামাজিকভাবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী আছে। আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে প্রথমে ১০০ জন ও পরে ২৩ জনের নাম প্রস্তাব পাঠানো হয় এসএসপি পদে পদোন্নতির জন্য। এরপর চলতি বছরের ৫ অক্টোবর পদোন্নতির জন্য ৮১ জনের তালিকা পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ৩১ অক্টোবর উচ্চপদ সৃষ্টি করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। আর ৫ অক্টোবর পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কর্মকর্তাদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। তারপরও আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সঙ্গে আলোচনা করব।’
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, ২৩৫টি সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) পদ থাকলেও তাতে ২০১৮ সাল থেকে পদায়ন হচ্ছিল না। দীর্ঘদিন ওই পদে পদায়ন বন্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বন্ধ থাকে। সম্প্রতি ২৩৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে এসপি পদে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হলে দেখা দেয় জটিলতা। কারণ বিসিএস ক্যাডার থেকে শূন্য হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদগুলো পূরণ করা হয়। আর শূন্য হওয়া এএসপির পদগুলো ক্যাডার নাকি নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের দিয়ে পূরণ করা হবে এ নিয়ে সময়ক্ষেপণ হয়। এতে করে বঞ্চিত হন মাঠপর্যায়ের পুলিশ পরিদর্শকরা।
অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশের বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে পরিবর্তন এনে নিম্নপর্যায়ের ক্যাডার পদের সংখ্যা কমিয়ে তার পরিবর্তে বাড়তি উচ্চপদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। গত ২ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটের কাঠামো হতে বিভিন্ন পদবির ক্যাডার পদ বিলুপ্ত করে ঊর্ধ্বতন ধাপে সমসংখ্যক ক্যাডার পদ সৃষ্টি করতে হবে। তারমধ্যে এসপির ২০টি ও এএসপির ২০৮টিসহ ২২৮টি পদ বিলুপ্ত করে অতিরিক্ত আইজিপির ৪টি, ডিআইজির ১৮টি, অতিরিক্ত ডিআইজির ১০০টি, এসপির ২০টি ও অ্যাডিশনাল এসপির ৮৬টি পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে ২০টি এসপি পদ বহাল রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে। এমন খবরে বিভিন্ন থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারাসহ নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা হতাশা প্রকাশ করেন। পরে ওই প্রস্তাবটি ৩১ অক্টোবর বাস্তবায়ন করলেও পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতনরা পরিদর্শকদের আশ্বস্ত করে বলেন, প্রস্তাবিত ১২৩ জনকে কোটা অনুযায়ী এএসপি পদে পদায়ন করা হবে। কিন্তু গত রবিবারের প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এই পদোন্নতির খবরে তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পরিদর্শক পদের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, উচ্চপর্যায়ে নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে তারা অবগত। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে তারা দেখা করেছেন। নিচের পদ বিলুপ্ত করলেও ২০৮টি এএসপি পদ বিলুপ্ত করা হবে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন। সব পরিদর্শকেরই স্বপ্ন থাকে পদোন্নতি পেয়ে এএসপি হওয়ার। ইতিমধ্যে পরিদর্শক থেকে অনেকে এএসপি হয়েছেন। আগামীতে আরও হবেন বলে তারা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক পদোন্নতির তালিকা দেখে তারা সবাই হতাশ। এই কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশে উচ্চপদ সৃষ্টি হোক তা তারাও চান। কিন্তু নিম্নপদের কর্মকর্তারা কেন বঞ্চিত হবেন?
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত ২ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ওঅ্যান্ডএম) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটের কাঠামো হতে বিভিন্ন পদবির ক্যাডার পদ বিলুপ্ত করে ঊর্ধ্বতন ধাপে সমসংখ্যক ক্যাডার পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সূত্রোক্ত ‘ঘ’ স্মারকমূলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (পুলিশ ও এনটিএমসি) সভাপতিত্বে চলতি বছরের ১০ জুন একটি সভায় পুনরায় পদের নাম ও কাঠামো সংশোধন করে অর্গানোগ্রাম পাঠানোর জন্য বলা হয়। পরে ওই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত পদের নাম ও সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন ও সংশোধনের স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব স্মারক ‘ক’ মূলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশে কর্মরত মাঠপর্যায়ের কয়েকজন পরিদর্শক বলছেন, সারা দেশে এএসপির পদ শূন্য রয়েছে ৭০টি। এ ছাড়া আরও প্রায় ৩০ জন এএসপির অবসরে চলে যাওয়ার কথা। ১৯৯০ সালে এসআই হিসেবে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যরা চাকরি জীবনে পদোন্নতি পেয়েছেন মাত্র একবার। অথচ একই ব্যাচের ক্যাডার কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়েছেন ৫ থেকে ৬ বার। বিভাগীয় পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতি নিয়েও রয়েছে দীর্ঘ জটিলতা। এসব জটিলতা নিরসনের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর উদ্যোগ নিলে পরিদর্শকদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। ওই পদটির নাম রাখা হয় (ডিএসপি)। ডিএসপি পদ থাকলেও ওই পদে কোনো বাড়তি সুবিধা পাবেন না পরিদর্শকরা।
তারা আরও জানান, পরিদর্শক থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি না হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপ-পরিদর্শকরা (এসআই) পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। যদিও কয়েক মাস আগে ৫০ জনের বেশি পরিদর্শক পদোন্নতি পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ বেশি বয়সে পদোন্নতি পেলেও তারা বয়সজনিত কারণে ভালো পদ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে পুলিশে ক্যাডার পদের সংখ্যা ৩ হাজার ১২৩ জন। এ ছাড়া ৬ হাজার ৮৯৬ জন পরিদর্শক এবং ২৪ হাজার ৪২২ জন এসআই পদের কর্মকর্তা রয়েছেন। ক্যাডার পদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি আছেন ১৮ জন, ডিআইজি ৬৭ জন, অ্যাডিশনাল ডিআইজি ১১২ জন, এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ৫৯৩ জন, অ্যাডিশনাল এসপি ৯৫২ জন এবং এএসপি আছেন ১৩৮০ জন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কয়েকটি থানার ওসি দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০০ সালে এসআই হিসেবে পুলিশে চাকরি নেন। তাদের সহকর্মী যারা এএসপি হিসেবে পুলিশের চাকরিতে প্রবেশ করেছেন তাদের অধিকাংশই এখন অতিরিক্ত ডিআইজি। ওইসব ক্যাডার কর্মকর্তা ৪ থেকে ৫টি পদোন্নতি পেয়েছেন, অথচ চাকরি জীবনে তারা (পরিদর্শক) মাত্র একবার পদোন্নতি পেয়েছেন। তাদের চাকরির বয়স প্রায় শেষ পর্যায়ে, কিন্তু পদ থাকার পরও পদোন্নতি হচ্ছে না। পরিদর্শক থেকে এএসপি পদোন্নতি পাওয়া তাদের প্রাণের দাবি।
শেয়ার করুন
সরোয়ার আলম | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

পুলিশে নতুন করে বেশকিছু উচ্চপদ সৃষ্টি হওয়ার পর নিম্নপদের কর্মকর্তারা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিম্নপদের কর্মকর্তাদের দাবি, তারা যথাসময়ে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত রবিবার পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ও ট্রাফিক ইন্সপেক্টরসহ ২৭ জনকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পদোন্নতির পর পদায়ন করা হয়। যদিও গত বুধবার তাদের এই পদোন্নতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি জানতে পারেন পুলিশ পরিদর্শকরা। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ৮১ জনকে পদোন্নতির প্রস্তাব থাকলেও তাদের মধ্যে ৫৪ জনকেই বঞ্চিত করা হয়েছে বলে মনে করছেন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব (পুলিশ শাখা-১) স্বাক্ষরিত ২৭ জনের পদোন্নতিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়। আর এই প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরই হতাশা দেখা দেয় মাঠপর্যায়ের পরিদর্শকদের মধ্যে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নন-ক্যাডার পরিদর্শকদের ৫৪ জনকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা হতাশ। একই পদে ২৫-৩০ বছর ধরে চাকরি করার পর আমরা পদোন্নতি পাইনি। পরিবার ও সামাজিকভাবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী আছে। আমাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে প্রথমে ১০০ জন ও পরে ২৩ জনের নাম প্রস্তাব পাঠানো হয় এসএসপি পদে পদোন্নতির জন্য। এরপর চলতি বছরের ৫ অক্টোবর পদোন্নতির জন্য ৮১ জনের তালিকা পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ৩১ অক্টোবর উচ্চপদ সৃষ্টি করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। আর ৫ অক্টোবর পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কর্মকর্তাদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। তারপরও আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির সঙ্গে আলোচনা করব।’
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, ২৩৫টি সহকারী পুলিশ সুপারের (এএসপি) পদ থাকলেও তাতে ২০১৮ সাল থেকে পদায়ন হচ্ছিল না। দীর্ঘদিন ওই পদে পদায়ন বন্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বন্ধ থাকে। সম্প্রতি ২৩৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে এসপি পদে পদোন্নতি দিয়ে পদায়ন করা হলে দেখা দেয় জটিলতা। কারণ বিসিএস ক্যাডার থেকে শূন্য হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পদগুলো পূরণ করা হয়। আর শূন্য হওয়া এএসপির পদগুলো ক্যাডার নাকি নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের দিয়ে পূরণ করা হবে এ নিয়ে সময়ক্ষেপণ হয়। এতে করে বঞ্চিত হন মাঠপর্যায়ের পুলিশ পরিদর্শকরা।
অভ্যন্তরীণ সংস্কারের মাধ্যমে পুলিশের বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে পরিবর্তন এনে নিম্নপর্যায়ের ক্যাডার পদের সংখ্যা কমিয়ে তার পরিবর্তে বাড়তি উচ্চপদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। গত ২ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটের কাঠামো হতে বিভিন্ন পদবির ক্যাডার পদ বিলুপ্ত করে ঊর্ধ্বতন ধাপে সমসংখ্যক ক্যাডার পদ সৃষ্টি করতে হবে। তারমধ্যে এসপির ২০টি ও এএসপির ২০৮টিসহ ২২৮টি পদ বিলুপ্ত করে অতিরিক্ত আইজিপির ৪টি, ডিআইজির ১৮টি, অতিরিক্ত ডিআইজির ১০০টি, এসপির ২০টি ও অ্যাডিশনাল এসপির ৮৬টি পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে ২০টি এসপি পদ বহাল রাখারও সুপারিশ করা হয়েছে। এমন খবরে বিভিন্ন থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারাসহ নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা হতাশা প্রকাশ করেন। পরে ওই প্রস্তাবটি ৩১ অক্টোবর বাস্তবায়ন করলেও পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতনরা পরিদর্শকদের আশ্বস্ত করে বলেন, প্রস্তাবিত ১২৩ জনকে কোটা অনুযায়ী এএসপি পদে পদায়ন করা হবে। কিন্তু গত রবিবারের প্রজ্ঞাপনের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এই পদোন্নতির খবরে তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
পরিদর্শক পদের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, উচ্চপর্যায়ে নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে তারা অবগত। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে তারা দেখা করেছেন। নিচের পদ বিলুপ্ত করলেও ২০৮টি এএসপি পদ বিলুপ্ত করা হবে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি মৌখিকভাবে জানিয়েছিলেন। সব পরিদর্শকেরই স্বপ্ন থাকে পদোন্নতি পেয়ে এএসপি হওয়ার। ইতিমধ্যে পরিদর্শক থেকে অনেকে এএসপি হয়েছেন। আগামীতে আরও হবেন বলে তারা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক পদোন্নতির তালিকা দেখে তারা সবাই হতাশ। এই কর্মকর্তারা বলছেন, পুলিশে উচ্চপদ সৃষ্টি হোক তা তারাও চান। কিন্তু নিম্নপদের কর্মকর্তারা কেন বঞ্চিত হবেন?
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত ২ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ওঅ্যান্ডএম) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটের কাঠামো হতে বিভিন্ন পদবির ক্যাডার পদ বিলুপ্ত করে ঊর্ধ্বতন ধাপে সমসংখ্যক ক্যাডার পদ সৃষ্টির প্রস্তাব সূত্রোক্ত ‘ঘ’ স্মারকমূলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (পুলিশ ও এনটিএমসি) সভাপতিত্বে চলতি বছরের ১০ জুন একটি সভায় পুনরায় পদের নাম ও কাঠামো সংশোধন করে অর্গানোগ্রাম পাঠানোর জন্য বলা হয়। পরে ওই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত পদের নাম ও সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন ও সংশোধনের স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রস্তাব স্মারক ‘ক’ মূলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশে কর্মরত মাঠপর্যায়ের কয়েকজন পরিদর্শক বলছেন, সারা দেশে এএসপির পদ শূন্য রয়েছে ৭০টি। এ ছাড়া আরও প্রায় ৩০ জন এএসপির অবসরে চলে যাওয়ার কথা। ১৯৯০ সালে এসআই হিসেবে নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যরা চাকরি জীবনে পদোন্নতি পেয়েছেন মাত্র একবার। অথচ একই ব্যাচের ক্যাডার কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়েছেন ৫ থেকে ৬ বার। বিভাগীয় পুলিশ সদস্যদের পদোন্নতি নিয়েও রয়েছে দীর্ঘ জটিলতা। এসব জটিলতা নিরসনের জন্য পুলিশ সদর দপ্তর উদ্যোগ নিলে পরিদর্শকদের জন্য নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। ওই পদটির নাম রাখা হয় (ডিএসপি)। ডিএসপি পদ থাকলেও ওই পদে কোনো বাড়তি সুবিধা পাবেন না পরিদর্শকরা।
তারা আরও জানান, পরিদর্শক থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি না হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপ-পরিদর্শকরা (এসআই) পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। যদিও কয়েক মাস আগে ৫০ জনের বেশি পরিদর্শক পদোন্নতি পেয়েছেন। আবার কেউ কেউ বেশি বয়সে পদোন্নতি পেলেও তারা বয়সজনিত কারণে ভালো পদ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমানে পুলিশে ক্যাডার পদের সংখ্যা ৩ হাজার ১২৩ জন। এ ছাড়া ৬ হাজার ৮৯৬ জন পরিদর্শক এবং ২৪ হাজার ৪২২ জন এসআই পদের কর্মকর্তা রয়েছেন। ক্যাডার পদের মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি আছেন ১৮ জন, ডিআইজি ৬৭ জন, অ্যাডিশনাল ডিআইজি ১১২ জন, এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা ৫৯৩ জন, অ্যাডিশনাল এসপি ৯৫২ জন এবং এএসপি আছেন ১৩৮০ জন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কয়েকটি থানার ওসি দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ স্নাতকোত্তর শেষ করে ২০০০ সালে এসআই হিসেবে পুলিশে চাকরি নেন। তাদের সহকর্মী যারা এএসপি হিসেবে পুলিশের চাকরিতে প্রবেশ করেছেন তাদের অধিকাংশই এখন অতিরিক্ত ডিআইজি। ওইসব ক্যাডার কর্মকর্তা ৪ থেকে ৫টি পদোন্নতি পেয়েছেন, অথচ চাকরি জীবনে তারা (পরিদর্শক) মাত্র একবার পদোন্নতি পেয়েছেন। তাদের চাকরির বয়স প্রায় শেষ পর্যায়ে, কিন্তু পদ থাকার পরও পদোন্নতি হচ্ছে না। পরিদর্শক থেকে এএসপি পদোন্নতি পাওয়া তাদের প্রাণের দাবি।