মলনুপিরাভিরে আগ্রহ নেই চিকিৎসকদের
পাঠান সোহাগ | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে, মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গ এবং কোনো একটি কোমর্বিডিটি আছে, এমন রোগীরা মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল মলনুপিরাভির সেবন করতে পারবেন এমন নির্দেশনা দিয়ে সারা দেশের হাসপাতালগুলোয় চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু চিকিৎসকরা নির্দেশনা অনুসারে করোনার চিকিৎসায় লিখছেন না দেশে প্রথম আসা এ ওষুধটি।
রাজধানীর শাহবাগ ওষুধের মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক বড় বড় ওষুধের দোকানের বিক্রেতারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে মলনুপিরাভির বাজারে পাওয়া গেলেও প্রেসক্রিপশন নিয়ে এই ওষুধ কিনতে আসা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। প্রথম দুই সপ্তাহে তো একেবারেই ক্রেতা ছিল না। এক সপ্তাহের অবস্থাও প্রায় একই রকম।
এমন অবস্থায় যেসব ফার্মেসি ওষুধটি বিক্রির জন্য রেখেছে, তাদের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি করছে বলেও জানা গেছে।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া এ ওষুধটি কোনো মতেই ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহারের নিয়মকানুন না জেনে এটি সেবন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃদু থেকে মাঝারি লক্ষণযুক্ত এবং কোনো একটি কোমর্বিডিটি আছে, এমন ব্যক্তিরা মলনুপিরাভির ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ১৮ বছরের নিচে, গর্ভবতী নারীরা এই ওষুধ খেতে পারবেন না।’
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন সকাল ও রাতে দুবার ২০০ মিলিগ্রামের ৪টা করে ৮টা ক্যাপসুল খেতে হবে। ওষুধ ব্যবহার করতে হবে পাঁচ দিন। দুই দিন ব্যবহার করে এই ক্যাপসুল বাদ দেওয়া যাবে না। করোনায় মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত রোগী যারা বাসায় থাকে, হাসপাতালে যাচ্ছে না, কিন্তু রিস্ক ফ্যাক্টর (বয়স্ক, ডায়াবেটিকসহ কোমর্বিডিটি) থাকে, তাদের জন্য এই ওষুধ।’
তবে কিছুতেই চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া ওষুধটি ব্যবহার করা যাবে না বলেও সতর্ক করেছেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেউ এটি দোকান থেকে কিনে ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।’
এক সপ্তাহে রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক, মধুবাগ, শাহবাগ, ধানমণ্ডি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বনানী ও মহাখালী, গুলশান এলাকায় গিয়ে খুব কমসংখ্যক ফার্মেসিতেই ওষুধটি পাওয়া গেছে। মগবাজারের লাজফার্মায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ইমোরিভির নামে, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের মনুভির নামে ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মোলভির নামে এই ওষুধটি পাওয়া গেলেও আশপাশের অন্যান্য ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়নি।
মগবাজার লাজফার্মা লিমিটেডের বিক্রয়কর্মী মো. হাবিব জানান, বেক্সিমকোর ইমোরিভিরের ১০টি ক্যাপসুলের একটি প্যাকেটের দাম ৭০০ টাকা। একটি ক্যাপসুলের দাম পড়ছে ৭০ টাকা। এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের মনুভির ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মোলভিরের ১০টি ক্যাপসুলের একটি প্যাকেটের দাম ৫০০ টাকা। এ দুটি কোম্পানির ক্যাপসুলের দাম ৫০ টাকা করে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ওষুধ বাজারে আসার ১ সপ্তাহের মধ্যে কেউ প্রেসক্রিপশন নিয়ে কিনতে আসেনি। আমরা প্রেসক্রিপশন নিয়ে এলে বিক্রি করছি, আবার কেউ যদি নাম বলতে পারছে তাদের কাছে প্রেসক্রিপশন ছাড়াও বিক্রি করছি।’
মহাখালীর বেস্ট ফার্মেসি ও মা ফার্মেসি, বনানী বাজারের আমেনা ফার্মেসি, মধুবাগের মমতা ফার্মেসি এবং শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ মেডিসিন অ্যান্ড মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মার্কেটের নুসরাত ফার্মা, মেডিসিন গার্ডেন, এ টু জেড ফার্মা ও বাজিতপুর ফার্মায় এই ওষুধ পাওয় যায়নি। বাজিতপুর ফার্মার বিক্রয়কর্মী মো. রাব্বুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এই মার্কেটে এ ওষুধ পাওয়া যাবে না। চাহিদা নেই। তাই আমরা রাখি না। আমাদের এখানে এই ওষুধ চলে না।’
একই মার্কেটের দয়াল ফার্মায় ওষুধটির খোঁজ করলে বিক্রয়কর্মী মো. হাদি বলেন, ‘আপনিই প্রথম এই ক্যাপসুল খুঁজলেন। আপনার আগে কেউ খুঁজতেও আসেনি।’ মধুবাগের ওষুধ ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এ ওষুধ এখনো আসেনি।’
এদিকে, ময়মনসিংহের ভালুকায় মা ফার্মেসির মালিক মামুন অর রশিদ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় করোনা নাই। আর একটা ট্যাবলেট ৭০ টাকা। এই জ্বরের জন্য ২ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে কেউ চায় না। সবাই নাপা, প্যারাসিটামল কিনতেই বেশি আগ্রহী। তাই আমরাও এ ওষুধ রাখি না।’
মলনুপিরাভির ওষুধটির ব্যাপারে চিকিৎসকদের আগ্রহ কেমন জানতে চাইলে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘এখন দেশে করোনার রোগী কম শনাক্ত হচ্ছে। এদের বেশিরভাগ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এরা কেউ মলনুপিরাভির ব্যবহার করার মতো রোগী না। তাই হয়তো চিকিৎসকরাও লিখছেন না।’
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘চিকিৎসকরা এখনো ব্যাপকভাবে মলনুপিরাভির ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া শুরু করেননি। আমাদের চিকিৎসকরাও বিষয়টি নিয়ে এখনো ভালোভাবে জানেন না।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মলনুপিরাভির ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করে এটি ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়। এ ছাড়া ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তাদের ওষুধটি ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা পজিটিভ রোগীদের মৃদু ও মাঝারি ধরনের লক্ষণ থাকলে এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি রোগীর বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও অন্যান্য কোমর্বিডিটি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে মুখে খাওয়ার এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। তবে গুরুতর অসুস্থ কভিড রোগীদের এই ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে আরও বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীদের এবং লক্ষণ প্রকাশের পাঁচ দিন পার হয়ে গেলে এই ওষুধ কার্যকর হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করোনার মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল মলনুপিরাভির বাংলাদেশে বাজারজাত করতে বেক্সিমকো, এসকেএফ ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসকে অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ইতিমধ্যেই এ তিনটি প্রতিষ্ঠান ওষুধটি বাজারে এনেছে। বাজারজাতকরণের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।
শেয়ার করুন
পাঠান সোহাগ | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে, মৃদু থেকে মাঝারি উপসর্গ এবং কোনো একটি কোমর্বিডিটি আছে, এমন রোগীরা মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল মলনুপিরাভির সেবন করতে পারবেন এমন নির্দেশনা দিয়ে সারা দেশের হাসপাতালগুলোয় চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু চিকিৎসকরা নির্দেশনা অনুসারে করোনার চিকিৎসায় লিখছেন না দেশে প্রথম আসা এ ওষুধটি।
রাজধানীর শাহবাগ ওষুধের মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক বড় বড় ওষুধের দোকানের বিক্রেতারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে মলনুপিরাভির বাজারে পাওয়া গেলেও প্রেসক্রিপশন নিয়ে এই ওষুধ কিনতে আসা মানুষের সংখ্যা খুবই কম। প্রথম দুই সপ্তাহে তো একেবারেই ক্রেতা ছিল না। এক সপ্তাহের অবস্থাও প্রায় একই রকম।
এমন অবস্থায় যেসব ফার্মেসি ওষুধটি বিক্রির জন্য রেখেছে, তাদের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বিক্রি করছে বলেও জানা গেছে।
তবে চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া এ ওষুধটি কোনো মতেই ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহারের নিয়মকানুন না জেনে এটি সেবন করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃদু থেকে মাঝারি লক্ষণযুক্ত এবং কোনো একটি কোমর্বিডিটি আছে, এমন ব্যক্তিরা মলনুপিরাভির ব্যবহার করতে পারবেন। তবে ১৮ বছরের নিচে, গর্ভবতী নারীরা এই ওষুধ খেতে পারবেন না।’
এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও বলেন, ‘আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রতিদিন সকাল ও রাতে দুবার ২০০ মিলিগ্রামের ৪টা করে ৮টা ক্যাপসুল খেতে হবে। ওষুধ ব্যবহার করতে হবে পাঁচ দিন। দুই দিন ব্যবহার করে এই ক্যাপসুল বাদ দেওয়া যাবে না। করোনায় মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রায় আক্রান্ত রোগী যারা বাসায় থাকে, হাসপাতালে যাচ্ছে না, কিন্তু রিস্ক ফ্যাক্টর (বয়স্ক, ডায়াবেটিকসহ কোমর্বিডিটি) থাকে, তাদের জন্য এই ওষুধ।’
তবে কিছুতেই চিকিৎসকদের পরামর্শ ছাড়া ওষুধটি ব্যবহার করা যাবে না বলেও সতর্ক করেছেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেউ এটি দোকান থেকে কিনে ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।’
এক সপ্তাহে রাজধানীর মগবাজার, মৌচাক, মধুবাগ, শাহবাগ, ধানমণ্ডি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বনানী ও মহাখালী, গুলশান এলাকায় গিয়ে খুব কমসংখ্যক ফার্মেসিতেই ওষুধটি পাওয়া গেছে। মগবাজারের লাজফার্মায় বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ইমোরিভির নামে, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের মনুভির নামে ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মোলভির নামে এই ওষুধটি পাওয়া গেলেও আশপাশের অন্যান্য ওষুধের দোকানে পাওয়া যায়নি।
মগবাজার লাজফার্মা লিমিটেডের বিক্রয়কর্মী মো. হাবিব জানান, বেক্সিমকোর ইমোরিভিরের ১০টি ক্যাপসুলের একটি প্যাকেটের দাম ৭০০ টাকা। একটি ক্যাপসুলের দাম পড়ছে ৭০ টাকা। এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের মনুভির ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের মোলভিরের ১০টি ক্যাপসুলের একটি প্যাকেটের দাম ৫০০ টাকা। এ দুটি কোম্পানির ক্যাপসুলের দাম ৫০ টাকা করে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই ওষুধ বাজারে আসার ১ সপ্তাহের মধ্যে কেউ প্রেসক্রিপশন নিয়ে কিনতে আসেনি। আমরা প্রেসক্রিপশন নিয়ে এলে বিক্রি করছি, আবার কেউ যদি নাম বলতে পারছে তাদের কাছে প্রেসক্রিপশন ছাড়াও বিক্রি করছি।’
মহাখালীর বেস্ট ফার্মেসি ও মা ফার্মেসি, বনানী বাজারের আমেনা ফার্মেসি, মধুবাগের মমতা ফার্মেসি এবং শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ মেডিসিন অ্যান্ড মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মার্কেটের নুসরাত ফার্মা, মেডিসিন গার্ডেন, এ টু জেড ফার্মা ও বাজিতপুর ফার্মায় এই ওষুধ পাওয় যায়নি। বাজিতপুর ফার্মার বিক্রয়কর্মী মো. রাব্বুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এই মার্কেটে এ ওষুধ পাওয়া যাবে না। চাহিদা নেই। তাই আমরা রাখি না। আমাদের এখানে এই ওষুধ চলে না।’
একই মার্কেটের দয়াল ফার্মায় ওষুধটির খোঁজ করলে বিক্রয়কর্মী মো. হাদি বলেন, ‘আপনিই প্রথম এই ক্যাপসুল খুঁজলেন। আপনার আগে কেউ খুঁজতেও আসেনি।’ মধুবাগের ওষুধ ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এ ওষুধ এখনো আসেনি।’
এদিকে, ময়মনসিংহের ভালুকায় মা ফার্মেসির মালিক মামুন অর রশিদ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় করোনা নাই। আর একটা ট্যাবলেট ৭০ টাকা। এই জ্বরের জন্য ২ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে কেউ চায় না। সবাই নাপা, প্যারাসিটামল কিনতেই বেশি আগ্রহী। তাই আমরাও এ ওষুধ রাখি না।’
মলনুপিরাভির ওষুধটির ব্যাপারে চিকিৎসকদের আগ্রহ কেমন জানতে চাইলে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘এখন দেশে করোনার রোগী কম শনাক্ত হচ্ছে। এদের বেশিরভাগ বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছে। এরা কেউ মলনুপিরাভির ব্যবহার করার মতো রোগী না। তাই হয়তো চিকিৎসকরাও লিখছেন না।’
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘চিকিৎসকরা এখনো ব্যাপকভাবে মলনুপিরাভির ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া শুরু করেননি। আমাদের চিকিৎসকরাও বিষয়টি নিয়ে এখনো ভালোভাবে জানেন না।’
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর মলনুপিরাভির ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চিকিৎসকদের নিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক সেমিনারের আয়োজন করে এটি ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়। এ ছাড়া ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক, সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তাদের ওষুধটি ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনা পজিটিভ রোগীদের মৃদু ও মাঝারি ধরনের লক্ষণ থাকলে এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি রোগীর বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও অন্যান্য কোমর্বিডিটি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে মুখে খাওয়ার এই ওষুধ ব্যবহার করা যাবে। তবে গুরুতর অসুস্থ কভিড রোগীদের এই ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে আরও বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীদের এবং লক্ষণ প্রকাশের পাঁচ দিন পার হয়ে গেলে এই ওষুধ কার্যকর হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করোনার মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল মলনুপিরাভির বাংলাদেশে বাজারজাত করতে বেক্সিমকো, এসকেএফ ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসকে অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ইতিমধ্যেই এ তিনটি প্রতিষ্ঠান ওষুধটি বাজারে এনেছে। বাজারজাতকরণের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে আরও কয়েকটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।