আশুগঞ্জে ইউপি নির্বাচন
প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে বিতর্কিতরা!
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওই ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম প্রস্তাব করেছে তাতে দলের পরীক্ষিতদের অবহেলা করার পাশাপাশি এবং বিএনপি-সংশ্লিষ্ট-বিতর্কিত এক ব্যক্তিকে গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য গত বুধবার প্রার্থী তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়। এর আগে ৩০ নভেম্বর ওই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দলের প্রার্থী ঠিক করতে সভা হয়। কিন্তু ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই সভা শেষ হয়। পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বসে আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হাজী সফিউল্লাহ মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু নাসের আহমেদ, হানিফ মুন্সি ও খোরশেদ আলম মনোনয়নের জন্য ঢাকা পাঠাতে ইউনিয়নভিত্তিক নামের তালিকা করেন।
সুত্র জানায়, তালশহর ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয় তাতে এক নম্বরে রয়েছে সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমানে নিজেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পরিচয় দেওয়া সুলেমান সেকান্দর ওরফে সুলেমান মিয়ার নাম। তার বড় ভাই মো. হারুন অর রশিদ এখনো বিএনপির একজন পৃষ্ঠপোষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে তালশহর ইউনিয়ন বিএনপির যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় সেখানে সদস্য হিসেবে ছিলেন সুলেমান মিয়া। ওই কমিটিতে হারুন অর রশিদও ছিলেন সদস্য হিসেবে। তবে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে ঘেঁষার চেষ্টা শুরু করেন সুলেমান। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদকালে ২০১৭ সালে দলটির ইউনিয়ন কমিটিতে ঢুকে পড়েন তিনি।
যদিও ওই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে সুলেমানকে বহিষ্কার করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। বহিষ্কারের চিঠি উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের হাতেও দেওয়া হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু নাছের আহমেদ তার সিল-স্বাক্ষর দিয়ে বুঝেও রাখেন ওই চিঠি।
তবে ওই ঘটনার পর থেকে সুলেমান মিয়া নিজেকে তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবি করেন। পাল্টা একটা কমিটিও করেছেন তিনি। অভিযোগ আছে, উপজেলার নেতাদের ইন্ধনেই তিনি এসব করতে সাহস পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, সুলেমান মিয়া বিএনপির রাজনীতি করার কারণে তাকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করেছিলাম। পরবর্তীতে তিনি একটি পকেট কমিটি করেছেন। তার পেছনে আছেন উপজেলার কিছু নেতা।
তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নিয়াজ আকতার বলেন, তাদের পরিবারের কাউকে দেখি নাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে। তার ভাই হারুন অর রশিদ বিএনপির সদস্য ও পৃষ্ঠপোষক। সুলেমানকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য কীভাবে সুপারিশ করা হলো তা বুঝতে পারছি না।
ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ মিয়া বলেন, ‘সুলেমান মিয়ার পুরো পরিবার বিএনপি করত। এখন শুনছি আওয়ামী লীগ করে। তার ভাই হারুন ইউনিয়ন বিএনপির ডোনার।’
তবে সুলেমান মিয়ার দাবি, ‘জন্মগত’ভাবেই তিনি আওয়ামী লীগ। কখনো বিএনপি করেননি। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তার কমিটিই বৈধ। এই কমিটি হাজী সফিউল্লাহ অনুমোদন দিয়েছেন।’
আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু নাছের আহমেদ জানান, ‘সুলেমান মিয়া বিএনপি করত তা সঠিক। এজন্য আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বহিষ্কারও হয়েছিল। তবে তাকে কেন চেয়ারম্যান পদে সুপারিশ করা হয়েছে তা আমি বলতে পারব না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। সুলেমানের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।’
প্রসঙ্গত, আগামীকাল ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে আশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হবে।
শেয়ার করুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি | ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের তালশহর ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ওই ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম প্রস্তাব করেছে তাতে দলের পরীক্ষিতদের অবহেলা করার পাশাপাশি এবং বিএনপি-সংশ্লিষ্ট-বিতর্কিত এক ব্যক্তিকে গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগ পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য গত বুধবার প্রার্থী তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়। এর আগে ৩০ নভেম্বর ওই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দলের প্রার্থী ঠিক করতে সভা হয়। কিন্তু ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া ছাড়াই ওই সভা শেষ হয়। পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে বসে আশুগঞ্জ আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হাজী সফিউল্লাহ মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু নাসের আহমেদ, হানিফ মুন্সি ও খোরশেদ আলম মনোনয়নের জন্য ঢাকা পাঠাতে ইউনিয়নভিত্তিক নামের তালিকা করেন।
সুত্র জানায়, তালশহর ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যে তিনজনের নাম প্রস্তাব করা হয় তাতে এক নম্বরে রয়েছে সাবেক বিএনপি নেতা ও বর্তমানে নিজেকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পরিচয় দেওয়া সুলেমান সেকান্দর ওরফে সুলেমান মিয়ার নাম। তার বড় ভাই মো. হারুন অর রশিদ এখনো বিএনপির একজন পৃষ্ঠপোষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালে তালশহর ইউনিয়ন বিএনপির যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় সেখানে সদস্য হিসেবে ছিলেন সুলেমান মিয়া। ওই কমিটিতে হারুন অর রশিদও ছিলেন সদস্য হিসেবে। তবে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে ঘেঁষার চেষ্টা শুরু করেন সুলেমান। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় মেয়াদকালে ২০১৭ সালে দলটির ইউনিয়ন কমিটিতে ঢুকে পড়েন তিনি।
যদিও ওই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে সুলেমানকে বহিষ্কার করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। বহিষ্কারের চিঠি উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের হাতেও দেওয়া হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু নাছের আহমেদ তার সিল-স্বাক্ষর দিয়ে বুঝেও রাখেন ওই চিঠি।
তবে ওই ঘটনার পর থেকে সুলেমান মিয়া নিজেকে তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবি করেন। পাল্টা একটা কমিটিও করেছেন তিনি। অভিযোগ আছে, উপজেলার নেতাদের ইন্ধনেই তিনি এসব করতে সাহস পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ বলেন, সুলেমান মিয়া বিএনপির রাজনীতি করার কারণে তাকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করেছিলাম। পরবর্তীতে তিনি একটি পকেট কমিটি করেছেন। তার পেছনে আছেন উপজেলার কিছু নেতা।
তালশহর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য নিয়াজ আকতার বলেন, তাদের পরিবারের কাউকে দেখি নাই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে। তার ভাই হারুন অর রশিদ বিএনপির সদস্য ও পৃষ্ঠপোষক। সুলেমানকে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নের জন্য কীভাবে সুপারিশ করা হলো তা বুঝতে পারছি না।
ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদ মিয়া বলেন, ‘সুলেমান মিয়ার পুরো পরিবার বিএনপি করত। এখন শুনছি আওয়ামী লীগ করে। তার ভাই হারুন ইউনিয়ন বিএনপির ডোনার।’
তবে সুলেমান মিয়ার দাবি, ‘জন্মগত’ভাবেই তিনি আওয়ামী লীগ। কখনো বিএনপি করেননি। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগ করে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তার কমিটিই বৈধ। এই কমিটি হাজী সফিউল্লাহ অনুমোদন দিয়েছেন।’
আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু নাছের আহমেদ জানান, ‘সুলেমান মিয়া বিএনপি করত তা সঠিক। এজন্য আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বহিষ্কারও হয়েছিল। তবে তাকে কেন চেয়ারম্যান পদে সুপারিশ করা হয়েছে তা আমি বলতে পারব না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। সুলেমানের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।’
প্রসঙ্গত, আগামীকাল ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে আশুগঞ্জ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হবে।