এতিমদের টাকা খরচ হচ্ছে অবৈধ কর্মীদের পেছনে!
আশরাফুল ইসলাম রানা | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাড়ানো হয়েছে পদ। সেই পদে ইচ্ছেমাফিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বিধিমালা ন্যূনতম অনুসরণ করা হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদের মাধ্যমে দেড় বছর আগে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মীর অনেকে আজও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এতে প্রতি মাসে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার লাখ টাকার বেশি গচ্চা যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাইকোর্টের একটি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আজিমপুরের স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানার কার্যকরী কমিটি গঠনের জন্য ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একটি তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ পুনর্গঠন করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রধান ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে অতিরিক্ত পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রকনুল হক ও শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহির উদ্দিন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ গঠনের ওই চিঠিতে কমিটির কর্মপরিধি সম্পর্কে বলা হয়, পর্ষদ অনুমোদিত গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাজ করবে। তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ কার্যকরী কমিটির মতো কাজ করবে। তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ এ আদেশ পাওয়া মাত্র অনতিবিলম্বে গঠনতন্ত্র অনুসারে সদস্য তালিকা হালনাগাদসহ খসড়া তৈরি করবে। নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং নবনির্বাচিত কমিটির হাতে ক্ষমতা অর্পণ করবে, অর্থাৎ এই তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ গঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল কার্যকরী কমিটি গঠন করা।
কিন্তু অভিযোগ আছে, কমিটি মূল দায়িত্ব পালন না করে ২০২০ সালের ২২ আগস্ট একটি সভার মাধ্যমে নিয়োগবিধি-২০২০ তৈরি করে। যেখানে মূল ১২টি পদের বিপরীতে নতুন পদ সৃষ্টি করে ৬১ জনের নির্বাহী পদ অনুমোদন দেয়। কিন্তু এতিমখানার গঠনতন্ত্রের বিধিতে বলা হয়েছে, ‘সংস্থাপন/কর্মচারী বিধি কাযনির্বাহী পরিষদ কর্র্তৃক প্রস্তুত করত, বার্ষিক সাধারণ সভায় পাশ করাইয়া লইতে হইবে।’ কিন্তু এটি না করেই উপসহকারী প্রকৌশলী, জুনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, প্লাম্বার, ট্রেড ইন্সট্রাক্টরসহ একাধিক পদ সৃষ্টি করে তত্ত্বাবধায়ক কমিটি। এরপর চাকরির কোনো বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে মো. আশিকুর রহমান, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে মোছা. পারভীন বেগম এবং প্লাম্বার পদে নয়ন আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানায় কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানান, নিয়োগপত্রে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট মৌখিক সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কোনো লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। কোনো লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে নুসরাত আলম, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে মো. শাকিল এবং আবাসিক শিক্ষক (মহিলা) পদে আয়েশা খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তদের ঠিকানা যাচাই করে দেখা যায় প্রায় সবারই ঠিকানা তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদের আহ্বায়ক কামরুজ্জামানের নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের। এমনকি সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. শাকিলের বর্তমান ঠিকানা হিসেবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বজনপ্রীতি, বেআইনি ও অবৈধভাবে সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন হারুন অর রশীদ ও ইউসুফ মোল্লাহ নামে লালবাগের দুই বাসিন্দা। এরপর গত মার্চে হাইকোর্ট থেকে একটি রুল জারি করা হয়। তারপর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমানকে তড়িঘড়ি করে জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। রিটকারীদের অভিযোগ, আশিকুর রহমান ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী। যার কোর্স মর্যাদা এইচএসসির সমমানের। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতায় জনসংযোগ কর্মকর্তার পদটি সম্মান শ্রেণির। ফলে এ ক্ষেত্রেও নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
জানা যায়, হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ বাতিল করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে এতিমখানার প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যদিকে কামরুল ইসলাম চৌধুরী দায়িত্ব পাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ফজলুর রহমান তালুকদার, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. শাকিল ও প্লাম্বার নয়নকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নুসরাত আলম, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মোছা. পারভীন বেগম ও আবাসিক শিক্ষক (মহিলা) আয়েশা খাতুন এখনো চাকরিতে বহাল রয়েছেন। অভিযোগ আছে, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নুসরাত আলম ও অফিস সহকারী আক্তার স্যার সলিমুল্লাহ্ মুসলিম এতিমখানার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে ফেলেছেন।
এতিমখানার একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, ৩০ বছর চাকরি করেও যে বেতন তারা পাননি, অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তরা এর চেয়েও বেশি বেতন পাচ্ছেন। তাদের বাসা বরাদ্দ ও মেরামতের জন্য এতিমখানার প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহা. কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা এসব অভিযোগ এনেছে, তারা মূলত এতিমখানাকে পঙ্গু করতে চায়। তারা অনুদানের অর্থ মেরে খান, এতিমখানার দোকানের ভাড়া দেন না।’
২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এতিমখানাটিতে অর্থের ঘাটতি ছিল দাবি করে কামরুজ্জামান আরও বলেন, ‘এই দুরবস্থা থেকে আমাদের সময়ে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত হয়েছিল। এ জন্য কিছু পক্ষ সংক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান।’
অন্যদিকে এতিমখানার প্রশাসক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই পদের কাজ আমাকে করতে হচ্ছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর আমার অবজারভেশনে তত্ত্বাবধায়ক পদটি নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়েছে। সেটার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। বাকি পদগুলোতেও যদি একই কায়দায় নিয়োগ হয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
শেয়ার করুন
আশরাফুল ইসলাম রানা | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাড়ানো হয়েছে পদ। সেই পদে ইচ্ছেমাফিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের বিধিমালা ন্যূনতম অনুসরণ করা হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদের মাধ্যমে দেড় বছর আগে নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মীর অনেকে আজও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এতে প্রতি মাসে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার লাখ টাকার বেশি গচ্চা যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাইকোর্টের একটি আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আজিমপুরের স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানার কার্যকরী কমিটি গঠনের জন্য ২০২০ সালের জানুয়ারিতে একটি তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ পুনর্গঠন করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। তিন সদস্যের ওই কমিটির প্রধান ছিলেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে অতিরিক্ত পরিচালক, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান। কমিটির অন্য দুই সদস্য ছিলেন ঢাকা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রকনুল হক ও শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহির উদ্দিন।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ গঠনের ওই চিঠিতে কমিটির কর্মপরিধি সম্পর্কে বলা হয়, পর্ষদ অনুমোদিত গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাজ করবে। তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ কার্যকরী কমিটির মতো কাজ করবে। তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ এ আদেশ পাওয়া মাত্র অনতিবিলম্বে গঠনতন্ত্র অনুসারে সদস্য তালিকা হালনাগাদসহ খসড়া তৈরি করবে। নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের সামগ্রিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং নবনির্বাচিত কমিটির হাতে ক্ষমতা অর্পণ করবে, অর্থাৎ এই তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ গঠনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল কার্যকরী কমিটি গঠন করা।
কিন্তু অভিযোগ আছে, কমিটি মূল দায়িত্ব পালন না করে ২০২০ সালের ২২ আগস্ট একটি সভার মাধ্যমে নিয়োগবিধি-২০২০ তৈরি করে। যেখানে মূল ১২টি পদের বিপরীতে নতুন পদ সৃষ্টি করে ৬১ জনের নির্বাহী পদ অনুমোদন দেয়। কিন্তু এতিমখানার গঠনতন্ত্রের বিধিতে বলা হয়েছে, ‘সংস্থাপন/কর্মচারী বিধি কাযনির্বাহী পরিষদ কর্র্তৃক প্রস্তুত করত, বার্ষিক সাধারণ সভায় পাশ করাইয়া লইতে হইবে।’ কিন্তু এটি না করেই উপসহকারী প্রকৌশলী, জুনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, প্লাম্বার, ট্রেড ইন্সট্রাক্টরসহ একাধিক পদ সৃষ্টি করে তত্ত্বাবধায়ক কমিটি। এরপর চাকরির কোনো বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) পদে মো. আশিকুর রহমান, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে মোছা. পারভীন বেগম এবং প্লাম্বার পদে নয়ন আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানায় কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানান, নিয়োগপত্রে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট মৌখিক সাক্ষাৎকারের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে কোনো লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। কোনো লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে নুসরাত আলম, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা পদে মো. শাকিল এবং আবাসিক শিক্ষক (মহিলা) পদে আয়েশা খাতুনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তদের ঠিকানা যাচাই করে দেখা যায় প্রায় সবারই ঠিকানা তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদের আহ্বায়ক কামরুজ্জামানের নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের। এমনকি সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. শাকিলের বর্তমান ঠিকানা হিসেবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বজনপ্রীতি, বেআইনি ও অবৈধভাবে সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে হাইকোর্টে একটি রিট করেন হারুন অর রশীদ ও ইউসুফ মোল্লাহ নামে লালবাগের দুই বাসিন্দা। এরপর গত মার্চে হাইকোর্ট থেকে একটি রুল জারি করা হয়। তারপর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমানকে তড়িঘড়ি করে জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। রিটকারীদের অভিযোগ, আশিকুর রহমান ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী। যার কোর্স মর্যাদা এইচএসসির সমমানের। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতায় জনসংযোগ কর্মকর্তার পদটি সম্মান শ্রেণির। ফলে এ ক্ষেত্রেও নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
জানা যায়, হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই তত্ত্বাবধায়ক পর্ষদ বাতিল করে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে এতিমখানার প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যদিকে কামরুল ইসলাম চৌধুরী দায়িত্ব পাওয়ার পর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ফজলুর রহমান তালুকদার, সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. শাকিল ও প্লাম্বার নয়নকে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নুসরাত আলম, উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মোছা. পারভীন বেগম ও আবাসিক শিক্ষক (মহিলা) আয়েশা খাতুন এখনো চাকরিতে বহাল রয়েছেন। অভিযোগ আছে, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নুসরাত আলম ও অফিস সহকারী আক্তার স্যার সলিমুল্লাহ্ মুসলিম এতিমখানার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথি সরিয়ে ফেলেছেন।
এতিমখানার একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, ৩০ বছর চাকরি করেও যে বেতন তারা পাননি, অবৈধ প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্তরা এর চেয়েও বেশি বেতন পাচ্ছেন। তাদের বাসা বরাদ্দ ও মেরামতের জন্য এতিমখানার প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহা. কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যারা এসব অভিযোগ এনেছে, তারা মূলত এতিমখানাকে পঙ্গু করতে চায়। তারা অনুদানের অর্থ মেরে খান, এতিমখানার দোকানের ভাড়া দেন না।’
২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এতিমখানাটিতে অর্থের ঘাটতি ছিল দাবি করে কামরুজ্জামান আরও বলেন, ‘এই দুরবস্থা থেকে আমাদের সময়ে ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা উদ্বৃত্ত হয়েছিল। এ জন্য কিছু পক্ষ সংক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালান।’
অন্যদিকে এতিমখানার প্রশাসক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই পদের কাজ আমাকে করতে হচ্ছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর আমার অবজারভেশনে তত্ত্বাবধায়ক পদটি নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়েছে। সেটার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। বাকি পদগুলোতেও যদি একই কায়দায় নিয়োগ হয়ে থাকে, তাহলে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’