বৈধ বারে ভেজাল মদের কারবার
এস এম নূরুজ্জামান | ২১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন অনুমোদিত বারগুলোতেও ভেজাল মদের জমজমাট কারবার চলছে। বিদেশি মদের খালি বোতল কিনে তাতে ভেজাল মদ ভরে সরবরাহ করছে কারবারিরা। গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন বার, ক্লাব ও মদের খালি বোতল বিক্রি হয় এমন ভাঙ্গাড়ির দোকান ঘুরে ও ভ্রাম্যমাণ মদ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর একাধিক বারের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার), কর্মকর্তা ও কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে জানান, বার, ক্লাব ও রেস্টুরেন্টে বিদেশি মদের সরবরাহ প্রায় বন্ধ। শুল্ক আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কড়াকড়ির কারণে ওয়্যারহাউজ ও চোরাচালানির মাধ্যমে বিদেশি মদের উৎস প্রায় বন্ধ। অন্যদিকে বৈধভাবে মদ আমদানিসংক্রান্ত তাদের ফাইল বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আটকে আছে। পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে যেসব বিদেশি মদের বোতল সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে সেগুলোর জন্য কমপক্ষে ৬০০-৬৫০ শতাংশ শুল্ক ও কর দিতে হচ্ছে। এর বাইরে পদে পদে ভোগান্তি তো রয়েছেই। এসব কারণেই তারা মূলত বৈধভাবে বিদেশি মদ কেনার ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছেন। সব মিলিয়ে দেশে প্রায় এক বছর ধরে বিদেশি মদের সংকট তৈরি হয়েছে। আর এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভেজাল মদের কারবারিরা। খোদ ওয়্যারহাউজ ও বৈধ বারের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এক বোতল বিদেশি মদ দিয়ে একাধিক বোতল মদ তৈরি করছে তারা। পরে তা বিভিন্ন বার, ক্লাব ও রেস্টুরেন্টে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর একটি বৈধ বারের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি মদের চাহিদা বেশি থাকায় গ্রাহকদের হাতে টিউনিং (ভেজাল) করা মাল তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে অনেকেই। যদিও বোতল ও বোতলের ছিপি দেখে বোঝার উপায় থাকে না, এটি আসল না নকল। তবে সেবন করতে গেলে স্বাদের তারতম্যে অনেক অভিজ্ঞ লোক বুঝতে পারেন। এ ধরনের অনেক অভিযোগ আমি নিজেই পেয়েছি। এছাড়া আমার কাছের অনেক কাস্টমার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সরবরাহকারীকে ডেকে এনে বিষয়টি বুঝতে পারি যে, তারা বিদেশি মদের নামে ভেজাল মদ আমাদের সরবরাহ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ সংকটকালে রাজধানীর অধিকাংশ বারে এ ধরনের ভেজাল মদ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা বেশি হচ্ছে। ভেজাল হলেও এ মদ পান করে কেউ অসুস্থ কিংবা মৃত্যুর ঘটনা ঘটে না। কারণ ক্ষতিকর কোনো উপকরণ মেশানো হয় না।’
তবে বিদেশি মদের সংকটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) কাজী আবেদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধিসম্মতভাবে সরকারের যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তাই নিয়েছে। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেশে বিদেশি মদের সংকট নেই। যারা ভেজাল করছে, তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর গুলশান-১-এর একটি সুপরিচিত ক্লাবের দুটি ওয়্যারহাউজে একাধিক চক্রের সদস্যরা বিদেশি ভেজাল মদ তৈরি করে তা বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছেন। এছাড়া উত্তরা ও মতিঝিল এলাকার বেশ কয়েকটি চক্র ভেজাল মদ তৈরি ও সরবরাহের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
র্যাব-১-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নোমান আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্প্রতি ৭২০ বোতল বিদেশি মদের একটি চালান জব্দসহ বেশ কয়েকজন কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এসব বিদেশি মদের বোতল থেকে ভেজাল মদ তৈরি করে এ চক্রের কেউ কেউ বেশি মুনাফার লোভে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করার টার্গেট নিয়েছিল।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বৈধভাবে বিদেশি মদ কেনায় ব্যবসায়ীদের কম আগ্রহের সুযোগ নিয়ে যেসব ভেজাল কারবারির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদেশি মদ আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক ও কর আরোপ থাকায় তাদের ব্যবসায় মন্দাভাব নেমে এসেছে। এ সুযোগে অবৈধ কারবারিরা লাভবান হলেও বৈধ ব্যবসায়ী ও সাধারণ ভোক্তার ক্ষতি হচ্ছে। এসব বিষয় তুলে ধরে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তাদের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
যেভাবে ভেজাল মদ তৈরি করছে অবৈধ কারবারিরা : কখনো ইথাইল অ্যালকোহলের সঙ্গে পানি মিশিয়ে, কখনো বিদেশি মদের সঙ্গে দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানির দেশি মদ মিশিয়ে বিদেশি মদের খালি বোতলে ভরে সেগুলো ভোক্তার কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া কেরুর দেশি মদ ও বিদেশি টাকিলা ব্র্যান্ডের মদের মিশ্রণে তৈরি করা হচ্ছে অ্যাবসলিউট ব্র্যান্ডের ভেজাল বিদেশি মদ। এ ক্ষেত্রে বিদেশি মদের প্রতিটি খালি বোতল বিভিন্ন বার ও রেস্টুরেন্ট থেকে ১৫ থেকে শুরু করে ৫০ টাকা দরে কিনছে চক্রের সদস্যরা। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার ভাঙ্গাড়ির দোকান থেকে বিদেশি মদের খালি বোতল সংগ্রহ করে তারা। তারপর সেসব বোতলের ছিপি অর্ডার দিয়ে তৈরি করে। বিশেষ কৌশলে সেসব বোতলে ভেজাল মদ ভরে তারা বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকে।
তেজগাঁওয়ের একটি বারের ব্যবস্থাপক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চড়া দামে মদ আমদানি করতে হচ্ছে আমাদের। পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে মদ আনতে গিয়ে অতিরিক্ত ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধের পাশাপাশি আরও অনেক সমস্যা ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব জটিলতার কারণেই মানুষজন অবৈধভাবে মদ তৈরি করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা এলাকার কামারপাড়া, মুগদা কবরস্থানের আশপাশের বেশ কয়েকটি বাসাবাড়িতে, আবুল হোটেলের পেছনে, রামপুরা টিভি স্টেশনের পাশে ও নিমতলী এলাকার অন্তত ১০-১২টি চক্রের সদস্যরা ভেজাল মদের কারবারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে করোনাকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির কাঁচামাল ইথাইল অ্যালকোহল প্রচুর পরিমাণ মুজদ করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কাঁচামাল দিয়েও মদ তৈরির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া হোমিওপ্যাথির ওষুধ ও শিল্পে ব্যবহারের জন্যও এ কেমিক্যাল আমদানি করা হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অসাধু কারবারিরা বিভিন্ন উপায়ে ইথাইল অ্যালকোহল সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া গ্রামেগঞ্জে ইউরিয়া সার দিয়েও মদ তৈরি করে থাকে, যেটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
পর্যটন করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, বৈধ ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে মদ সংগ্রহে একেবারেই আগ্রহী নয়। কী কারণে তারা আগ্রহী নয়, সে বিষয়ে অবশ্য তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শেয়ার করুন
এস এম নূরুজ্জামান | ২১ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বিভিন্ন অনুমোদিত বারগুলোতেও ভেজাল মদের জমজমাট কারবার চলছে। বিদেশি মদের খালি বোতল কিনে তাতে ভেজাল মদ ভরে সরবরাহ করছে কারবারিরা। গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন বার, ক্লাব ও মদের খালি বোতল বিক্রি হয় এমন ভাঙ্গাড়ির দোকান ঘুরে ও ভ্রাম্যমাণ মদ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর একাধিক বারের ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার), কর্মকর্তা ও কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে জানান, বার, ক্লাব ও রেস্টুরেন্টে বিদেশি মদের সরবরাহ প্রায় বন্ধ। শুল্ক আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কড়াকড়ির কারণে ওয়্যারহাউজ ও চোরাচালানির মাধ্যমে বিদেশি মদের উৎস প্রায় বন্ধ। অন্যদিকে বৈধভাবে মদ আমদানিসংক্রান্ত তাদের ফাইল বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আটকে আছে। পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে যেসব বিদেশি মদের বোতল সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে সেগুলোর জন্য কমপক্ষে ৬০০-৬৫০ শতাংশ শুল্ক ও কর দিতে হচ্ছে। এর বাইরে পদে পদে ভোগান্তি তো রয়েছেই। এসব কারণেই তারা মূলত বৈধভাবে বিদেশি মদ কেনার ক্ষেত্রে অনীহা দেখাচ্ছেন। সব মিলিয়ে দেশে প্রায় এক বছর ধরে বিদেশি মদের সংকট তৈরি হয়েছে। আর এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভেজাল মদের কারবারিরা। খোদ ওয়্যারহাউজ ও বৈধ বারের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এক বোতল বিদেশি মদ দিয়ে একাধিক বোতল মদ তৈরি করছে তারা। পরে তা বিভিন্ন বার, ক্লাব ও রেস্টুরেন্টে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর একটি বৈধ বারের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি মদের চাহিদা বেশি থাকায় গ্রাহকদের হাতে টিউনিং (ভেজাল) করা মাল তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে অনেকেই। যদিও বোতল ও বোতলের ছিপি দেখে বোঝার উপায় থাকে না, এটি আসল না নকল। তবে সেবন করতে গেলে স্বাদের তারতম্যে অনেক অভিজ্ঞ লোক বুঝতে পারেন। এ ধরনের অনেক অভিযোগ আমি নিজেই পেয়েছি। এছাড়া আমার কাছের অনেক কাস্টমার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সরবরাহকারীকে ডেকে এনে বিষয়টি বুঝতে পারি যে, তারা বিদেশি মদের নামে ভেজাল মদ আমাদের সরবরাহ করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ সংকটকালে রাজধানীর অধিকাংশ বারে এ ধরনের ভেজাল মদ সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করে মুনাফা বেশি হচ্ছে। ভেজাল হলেও এ মদ পান করে কেউ অসুস্থ কিংবা মৃত্যুর ঘটনা ঘটে না। কারণ ক্ষতিকর কোনো উপকরণ মেশানো হয় না।’
তবে বিদেশি মদের সংকটের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) কাজী আবেদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিধিসম্মতভাবে সরকারের যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা তাই নিয়েছে। আমাদের পর্যবেক্ষণে দেশে বিদেশি মদের সংকট নেই। যারা ভেজাল করছে, তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর গুলশান-১-এর একটি সুপরিচিত ক্লাবের দুটি ওয়্যারহাউজে একাধিক চক্রের সদস্যরা বিদেশি ভেজাল মদ তৈরি করে তা বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছেন। এছাড়া উত্তরা ও মতিঝিল এলাকার বেশ কয়েকটি চক্র ভেজাল মদ তৈরি ও সরবরাহের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।
র্যাব-১-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নোমান আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্প্রতি ৭২০ বোতল বিদেশি মদের একটি চালান জব্দসহ বেশ কয়েকজন কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এসব বিদেশি মদের বোতল থেকে ভেজাল মদ তৈরি করে এ চক্রের কেউ কেউ বেশি মুনাফার লোভে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করার টার্গেট নিয়েছিল।
র্যাবের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বৈধভাবে বিদেশি মদ কেনায় ব্যবসায়ীদের কম আগ্রহের সুযোগ নিয়ে যেসব ভেজাল কারবারির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদেশি মদ আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক ও কর আরোপ থাকায় তাদের ব্যবসায় মন্দাভাব নেমে এসেছে। এ সুযোগে অবৈধ কারবারিরা লাভবান হলেও বৈধ ব্যবসায়ী ও সাধারণ ভোক্তার ক্ষতি হচ্ছে। এসব বিষয় তুলে ধরে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তাদের পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
যেভাবে ভেজাল মদ তৈরি করছে অবৈধ কারবারিরা : কখনো ইথাইল অ্যালকোহলের সঙ্গে পানি মিশিয়ে, কখনো বিদেশি মদের সঙ্গে দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানির দেশি মদ মিশিয়ে বিদেশি মদের খালি বোতলে ভরে সেগুলো ভোক্তার কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়া কেরুর দেশি মদ ও বিদেশি টাকিলা ব্র্যান্ডের মদের মিশ্রণে তৈরি করা হচ্ছে অ্যাবসলিউট ব্র্যান্ডের ভেজাল বিদেশি মদ। এ ক্ষেত্রে বিদেশি মদের প্রতিটি খালি বোতল বিভিন্ন বার ও রেস্টুরেন্ট থেকে ১৫ থেকে শুরু করে ৫০ টাকা দরে কিনছে চক্রের সদস্যরা। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার ভাঙ্গাড়ির দোকান থেকে বিদেশি মদের খালি বোতল সংগ্রহ করে তারা। তারপর সেসব বোতলের ছিপি অর্ডার দিয়ে তৈরি করে। বিশেষ কৌশলে সেসব বোতলে ভেজাল মদ ভরে তারা বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে থাকে।
তেজগাঁওয়ের একটি বারের ব্যবস্থাপক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চড়া দামে মদ আমদানি করতে হচ্ছে আমাদের। পর্যটন করপোরেশনের মাধ্যমে মদ আনতে গিয়ে অতিরিক্ত ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধের পাশাপাশি আরও অনেক সমস্যা ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব জটিলতার কারণেই মানুষজন অবৈধভাবে মদ তৈরি করছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ ভোক্তারা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরা এলাকার কামারপাড়া, মুগদা কবরস্থানের আশপাশের বেশ কয়েকটি বাসাবাড়িতে, আবুল হোটেলের পেছনে, রামপুরা টিভি স্টেশনের পাশে ও নিমতলী এলাকার অন্তত ১০-১২টি চক্রের সদস্যরা ভেজাল মদের কারবারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে করোনাকালে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির কাঁচামাল ইথাইল অ্যালকোহল প্রচুর পরিমাণ মুজদ করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কাঁচামাল দিয়েও মদ তৈরির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া হোমিওপ্যাথির ওষুধ ও শিল্পে ব্যবহারের জন্যও এ কেমিক্যাল আমদানি করা হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অসাধু কারবারিরা বিভিন্ন উপায়ে ইথাইল অ্যালকোহল সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া গ্রামেগঞ্জে ইউরিয়া সার দিয়েও মদ তৈরি করে থাকে, যেটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
পর্যটন করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, বৈধ ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে মদ সংগ্রহে একেবারেই আগ্রহী নয়। কী কারণে তারা আগ্রহী নয়, সে বিষয়ে অবশ্য তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।