ভোটের ইস্যু গরুর গুঁতা!
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
গেল বছরের নভেম্বরের এক সন্ধ্যায় বাড়ির অন্যদের সঙ্গে বসেই চা-নাশতা করছিলেন রাম রাজ। ঠিক সে সময়ই একটি বুড়োমতন গরু ঢুকে পড়ে উঠানে। আগেও এমন অসংখ্য গরু এসেছে, খাবার খুঁজে আবার চলেও গেছে। কিন্তু সেদিনের গরুটির আচরণ ভালো ঠেকেনি রাম রাজের। নাতি-পুতিদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই গরুটিকে তাড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গরুটি আক্রমণ করে বসে রাম রাজকে। পরিবারের সদস্যদের লাগাতার চিৎকার আর তাড়ানোর চেষ্টার মধ্যেও পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে গুঁতিয়ে তাকে মারাত্মক আহত করে। পরে হাসপতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয় ৫৫ বছর বয়সী রাম রাজের।
ভারতের উত্তর প্রদেশে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। কেউ গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছেন, কেউ বছরের পর বছর ধরে আছেন কোমায়। ভারতে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার গরু জবাইকে বেআইনি ঘোষণার পরে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যেই গরুর সংখ্যা বেড়েছে ভয়াবহ রকম। এর মধ্যে গোঁড়া হিন্দুবাদী যোগী আদিত্যনাথ শাসিত উত্তর প্রদেশের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। দুধ দেওয়া বন্ধ হলে কিংবা লাঙল টানার ক্ষমতা হারালেও পশুটিকে বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। আর তাদের খাবার জোগাড় করাও অসম্ভব। তাই ‘সৃষ্টিকর্তার নামে’ ছেড়ে দেন বুড়ো পশুটিকে। পরে তারাই এলাকায় ঘুরে ঘুরে ত্রাস ছড়ায়।
বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে, এই সব গরুর জন্য যোগী সরকার ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়েছে। তাতে কয়েক লাখ গরুর ঠাঁইও মিলেছে। কিন্তু এখনো রাজ্যটির শহর-গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাখ লাখ মালিকহীন গরু। খাবারের জন্য তারা মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ছে বসতবাড়ি আর ক্ষেতখামারে। তাদের তাড়াতে গিয়ে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানমালের।
বিবিসি হিন্দির নিতিন শ্রীবাস্ত সরেজমিনে দেখেছেন, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এ বিষয়টিকেই বড় ইস্যু হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছে বিরোধীরা। আর কৃষকরাও সেটি গ্রহণ করেছেন। এমনকি গরুকে পরম শ্রদ্ধা করা ব্যক্তিদের অনেকেই গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কিছু করতে না পারাকে বিজেপি সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।
গরুর গুঁতায় হাত ভেঙে আহত হওয়া পূজন নামের এক কৃষকের ভাষ্য, গরুকে তিনি মাতৃজ্ঞানই করেন। কিন্তু সব গরুকে বাঁচানোর যে ঢালাও সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, তা যৌক্তিক নয়। যে গরু কোনো কাজে আসে না তাকে খাওয়ানোর সামর্থ্য সবার নেই। তাই তারা বাধ্য হয়েই গরুগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দেন।
যদিও রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র সামীর সিং বলেন, গরু আমাদের হিন্দু সংস্কৃতিরই অংশ। আমাদের আত্মীয় স্বজনদের যেমন বয়স হলে ফেলে দিই না, তেমনি গরুদের তাড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। এই সব সমস্যা মোকাবিলায় সরকার নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। সরকার আবার ক্ষমতায় এলে এর সমাধান হয়ে যাবে।
তবে পূজনের মতো রাজ্যের অংসখ্য কৃষক ও বাসিন্দারা বিজেপির এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে চাচ্ছেন না। তারা চাচ্ছেন রাজ্যে গরুর জ্বালাতন যারা কমাতে পারবেন, তাদেরই ক্ষমতায় আসা উচিত।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

গেল বছরের নভেম্বরের এক সন্ধ্যায় বাড়ির অন্যদের সঙ্গে বসেই চা-নাশতা করছিলেন রাম রাজ। ঠিক সে সময়ই একটি বুড়োমতন গরু ঢুকে পড়ে উঠানে। আগেও এমন অসংখ্য গরু এসেছে, খাবার খুঁজে আবার চলেও গেছে। কিন্তু সেদিনের গরুটির আচরণ ভালো ঠেকেনি রাম রাজের। নাতি-পুতিদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই গরুটিকে তাড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। তবে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গরুটি আক্রমণ করে বসে রাম রাজকে। পরিবারের সদস্যদের লাগাতার চিৎকার আর তাড়ানোর চেষ্টার মধ্যেও পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে গুঁতিয়ে তাকে মারাত্মক আহত করে। পরে হাসপতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয় ৫৫ বছর বয়সী রাম রাজের।
ভারতের উত্তর প্রদেশে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। কেউ গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছেন, কেউ বছরের পর বছর ধরে আছেন কোমায়। ভারতে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার গরু জবাইকে বেআইনি ঘোষণার পরে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যেই গরুর সংখ্যা বেড়েছে ভয়াবহ রকম। এর মধ্যে গোঁড়া হিন্দুবাদী যোগী আদিত্যনাথ শাসিত উত্তর প্রদেশের অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। দুধ দেওয়া বন্ধ হলে কিংবা লাঙল টানার ক্ষমতা হারালেও পশুটিকে বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা। আর তাদের খাবার জোগাড় করাও অসম্ভব। তাই ‘সৃষ্টিকর্তার নামে’ ছেড়ে দেন বুড়ো পশুটিকে। পরে তারাই এলাকায় ঘুরে ঘুরে ত্রাস ছড়ায়।
বিবিসির এক প্রতিবেদন বলছে, এই সব গরুর জন্য যোগী সরকার ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র বানিয়েছে। তাতে কয়েক লাখ গরুর ঠাঁইও মিলেছে। কিন্তু এখনো রাজ্যটির শহর-গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে লাখ লাখ মালিকহীন গরু। খাবারের জন্য তারা মাঝেমধ্যেই ঢুকে পড়ছে বসতবাড়ি আর ক্ষেতখামারে। তাদের তাড়াতে গিয়ে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জানমালের।
বিবিসি হিন্দির নিতিন শ্রীবাস্ত সরেজমিনে দেখেছেন, আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এ বিষয়টিকেই বড় ইস্যু হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছে বিরোধীরা। আর কৃষকরাও সেটি গ্রহণ করেছেন। এমনকি গরুকে পরম শ্রদ্ধা করা ব্যক্তিদের অনেকেই গরুর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে কিছু করতে না পারাকে বিজেপি সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই উল্লেখ করেছেন।
গরুর গুঁতায় হাত ভেঙে আহত হওয়া পূজন নামের এক কৃষকের ভাষ্য, গরুকে তিনি মাতৃজ্ঞানই করেন। কিন্তু সব গরুকে বাঁচানোর যে ঢালাও সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, তা যৌক্তিক নয়। যে গরু কোনো কাজে আসে না তাকে খাওয়ানোর সামর্থ্য সবার নেই। তাই তারা বাধ্য হয়েই গরুগুলোকে রাস্তায় ছেড়ে দেন।
যদিও রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র সামীর সিং বলেন, গরু আমাদের হিন্দু সংস্কৃতিরই অংশ। আমাদের আত্মীয় স্বজনদের যেমন বয়স হলে ফেলে দিই না, তেমনি গরুদের তাড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়। এই সব সমস্যা মোকাবিলায় সরকার নতুন নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। সরকার আবার ক্ষমতায় এলে এর সমাধান হয়ে যাবে।
তবে পূজনের মতো রাজ্যের অংসখ্য কৃষক ও বাসিন্দারা বিজেপির এই আশ্বাসে ভরসা রাখতে চাচ্ছেন না। তারা চাচ্ছেন রাজ্যে গরুর জ্বালাতন যারা কমাতে পারবেন, তাদেরই ক্ষমতায় আসা উচিত।