গরিবের চাল হাঁস-মুরগির খাবার
মো. রওশন আলম পাপুল, গাইবান্ধা | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রামীণ হতদরিদ্র নারীদের জন্য সরকারের ভিজিডি কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী নারীরা বলছেন, চেয়ারম্যান ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে ভিজিডি কার্ডধারী ১৯৩ নারীর নামে বরাদ্দ হওয়া গত বছরের অক্টোবর মাসের প্রায় ১৪৫ মণ চাল আত্মসাৎ করেন। শত চেষ্টায়ও চাল না পেয়ে তারা গত ১৩ জানুয়ারি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর গত সোমবার থেকে সেই চাল দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু কয়েক মাস পর এখন যে চাল দেওয়া হচ্ছে তা পচা, লাল ও পোকা ধরা। যা নিজেরা খেতে না পেরে হাঁস-মুরগিকে খাওয়াচ্ছেন। আবার গরু-ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য গ্রামের অনেক বাসিন্দা কম দামে এই চাল কিনে নিচ্ছেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারের দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। গ্রামীণ নারীদের চরম দরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তা করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য। নিয়ম অনুযায়ী, ইউপি চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধি সরকারি গুদাম থেকে ভিজিডি কর্মসূচির চাল উত্তোলনের সময় আর্দ্রতা, ধুলাবালি, পোকামাকড়, মরা/নষ্ট/ভাঙা শস্য এবং অন্য কোনো ক্ষতিকারক উপাদান আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেবেন। এর ব্যত্যয় হলে তিনি জেলা প্রশাসক, ইউএনও, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবহিত করবেন। পরে উত্তোলন করা এই চাল একজন ট্যাগ অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ভিজিডি কার্ডধারীদের দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী নারীদের করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভিজিডি কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু গত অক্টোবর মাসে বরাদ্দকৃত ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়নি। তখন সুবিধাভোগীরা মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে কার্ড নিয়ে গেলে তিনি চাল না দিয়ে নানা অজুহাত দেখান। এ ছাড়া দেব, দিচ্ছি বলে ভিজিডির সুবিধাভোগী ১৯৩ নারীকে হয়রানির পাশাপাশি কাউকে কাউকে গালিগালাজও করেন। এমন পরিস্থিতিতে সুবিধাভোগী নারীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, তাদের জন্য বরাদ্দ করা অক্টোবর মাসের চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। তখন ভিজিডি কার্ডধারী কয়েক নারী চাল আত্মসাতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এই দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেন। অভিযোগকারীরা হলেন- মহিমাগঞ্জের বোচাদহ গ্রামের গোলাপী বেগম, পুনতাইড় গ্রামের রেহেনা বেগম ও গোপালপুর গ্রামের লাইলী বেগম। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক এবং মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের গাইবান্ধা জেলা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়েও ওই অভিযোগের অনুলিপি জমা দেওয়া হয়।
মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় থাকা কয়েক নারীর ভিজিডি কার্ডে থাকা তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, কার্ডে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সবগুলো ঘরে চাল প্রদানের তারিখ লেখা থাকলেও অক্টোবর মাসের ঘর ফাঁকা। সেই ঘরে কিছুই লেখা নেই। এ ছাড়া এসব কার্ডে দেখা গেছে আরও কিছু অসঙ্গতি। যেমন জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের চাল দেওয়া হয়েছে ১৮ এপ্রিল। এপ্রিলের চাল ২৩ মে, মে ও জুনের চাল ১৩ জুলাই, জুলাইয়ের চাল ৮ সেপ্টেম্বর, আগস্টের চাল ১৭ অক্টোবর, সেপ্টেম্বরের চাল ৪ নভেম্বর, অক্টোবরে চাল দেওয়া হয়নি, নভেম্বরের চাল ১ ডিসেম্বর ও ডিসেম্বরের চাল দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি।
চাল না পেয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করা গোলাপী বেগম, রেহেনা বেগম ও লাইলী বেগম এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গত ৩১ অক্টোবর সরকারি গুদাম থেকে ভিজিডির ১৯৩ কার্ডধারীর ১৪৪.৭৫ মণ চাল উত্তোলন করেন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুল জব্বার প্রধান। যার বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও ট্যাগ অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে এই চাল আত্মসাতের চেষ্টা করেন। ওই চাল বিতরণের দাবি জানিয়ে তারা অনেকবার চেয়ারম্যান ও সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। উল্টো তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। বাধ্য হয়ে ইউএনওর কাছে অভিযাগ দেওয়ার পর গত সোমবার থেকে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই চাল পচা, লাল, পোকা ধরা ও খাবার অযোগ্য। রান্না করলে কটু গন্ধ আসে।
ভুক্তভোগী এই তিন নারীর দাবি, তাদের যে চাল দেওয়া হয়েছে তা সরকারি গুদাম থেকে উত্তোলন করা চাল নয়। সরকারি গুদামের ভালো চাল গোপনে বেশি দামে বিক্রি করে বাজার থেকে কম দামে নিম্নমানের চাল কিনে তাদের দেওয়া হয়েছে। নিজেরা খেতে না পেরে এখন সেই চাল হাঁস-মুরগিকে খাওয়াচ্ছেন। এ ছাড়া গরু-ছাগলকে খাওয়াবেন বলে কম দামে এই চাল গ্রামের অনেকে কিনে নিয়েছেন।
ভিজিডির সুবিধাভোগীরা আরও জানান, নিম্নমানের চাল বিতরণের সময় প্রতিবাদ হওয়ার ভয়ে একসঙ্গে সবাইকে না দিয়ে থেমে থেমে চাল দেওয়া হচ্ছে। কার্ডধারীরা যে যখন জানতে পারছেন সে তখন গিয়ে চাল নিচ্ছেন।
তবে চাল আত্মসাৎ করে চাপের মুখে পড়ে চাল বিতরণ শুরু এবং নিম্নমানের চাল দেওয়াসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রুবেল আমিন শিমুল। এ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওগুলো চাল (ভিজিডির) দেওয়া কমপ্লিট। বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য একটি পক্ষ চাল নষ্ট বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ সরকারি গুদাম থেকে উত্তোলন করা চালই ভিজিডি কার্ডধারীদের দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আর সরকারি গুদাম থেকে চাল উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুল জব্বার প্রধান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অক্টোবরের ডিও ছিল চেয়ারম্যানের নামে। চাল উত্তোলন করেছেন চেয়ারম্যান। চাল বিতরণ বাকি ছিল, তা চেয়ারম্যান দিয়ে দিয়েছেন। কোথা থেকে দিয়েছেন তা আমি বলতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘চাল নষ্ট নয়, নষ্ট হলে কি চাল মানুষ নেয়?’ গত ১৩ জানুয়ারি এই চাল দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন ইউপি সচিব।
তবে ভিজিডির আলোচিত এই চাল ইউপি সচিব আবদুল জব্বার প্রধানই গত ৩১ অক্টোবর উত্তোলন করেন জানিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্বপন কুমার দে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তাকে (ইউপি সচিব) ভালো চালই দেওয়া হয়েছে।’
ভিজিডির চাল নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য জানতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মহিলবিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. জেবুন নেছার মোবাইল ফোনে গতকাল বিকেলে কয়েক দফায় কল করা হলে ব্যস্ত পাওয়া যায়।
ভিজিডি কার্ডধারীদের নিম্নমানের চাল দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও মো. আরিফ হোসেন গতকাল বিকেলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলব।’
শেয়ার করুন
মো. রওশন আলম পাপুল, গাইবান্ধা | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রামীণ হতদরিদ্র নারীদের জন্য সরকারের ভিজিডি কর্মসূচির চাল আত্মসাৎ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী নারীরা বলছেন, চেয়ারম্যান ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে ভিজিডি কার্ডধারী ১৯৩ নারীর নামে বরাদ্দ হওয়া গত বছরের অক্টোবর মাসের প্রায় ১৪৫ মণ চাল আত্মসাৎ করেন। শত চেষ্টায়ও চাল না পেয়ে তারা গত ১৩ জানুয়ারি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর গত সোমবার থেকে সেই চাল দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু কয়েক মাস পর এখন যে চাল দেওয়া হচ্ছে তা পচা, লাল ও পোকা ধরা। যা নিজেরা খেতে না পেরে হাঁস-মুরগিকে খাওয়াচ্ছেন। আবার গরু-ছাগলকে খাওয়ানোর জন্য গ্রামের অনেক বাসিন্দা কম দামে এই চাল কিনে নিচ্ছেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারের দুস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়। গ্রামীণ নারীদের চরম দরিদ্র অবস্থা থেকে উত্তরণে সহায়তা করাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য। নিয়ম অনুযায়ী, ইউপি চেয়ারম্যান বা তার প্রতিনিধি সরকারি গুদাম থেকে ভিজিডি কর্মসূচির চাল উত্তোলনের সময় আর্দ্রতা, ধুলাবালি, পোকামাকড়, মরা/নষ্ট/ভাঙা শস্য এবং অন্য কোনো ক্ষতিকারক উপাদান আছে কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেবেন। এর ব্যত্যয় হলে তিনি জেলা প্রশাসক, ইউএনও, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবহিত করবেন। পরে উত্তোলন করা এই চাল একজন ট্যাগ অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ভিজিডি কার্ডধারীদের দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী নারীদের করা লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভিজিডি কার্ডের বিপরীতে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু গত অক্টোবর মাসে বরাদ্দকৃত ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়নি। তখন সুবিধাভোগীরা মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে কার্ড নিয়ে গেলে তিনি চাল না দিয়ে নানা অজুহাত দেখান। এ ছাড়া দেব, দিচ্ছি বলে ভিজিডির সুবিধাভোগী ১৯৩ নারীকে হয়রানির পাশাপাশি কাউকে কাউকে গালিগালাজও করেন। এমন পরিস্থিতিতে সুবিধাভোগী নারীরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, তাদের জন্য বরাদ্দ করা অক্টোবর মাসের চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। তখন ভিজিডি কার্ডধারী কয়েক নারী চাল আত্মসাতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এই দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেন। অভিযোগকারীরা হলেন- মহিমাগঞ্জের বোচাদহ গ্রামের গোলাপী বেগম, পুনতাইড় গ্রামের রেহেনা বেগম ও গোপালপুর গ্রামের লাইলী বেগম। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক এবং মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের গাইবান্ধা জেলা ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়েও ওই অভিযোগের অনুলিপি জমা দেওয়া হয়।
মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় থাকা কয়েক নারীর ভিজিডি কার্ডে থাকা তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, কার্ডে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সবগুলো ঘরে চাল প্রদানের তারিখ লেখা থাকলেও অক্টোবর মাসের ঘর ফাঁকা। সেই ঘরে কিছুই লেখা নেই। এ ছাড়া এসব কার্ডে দেখা গেছে আরও কিছু অসঙ্গতি। যেমন জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের চাল দেওয়া হয়েছে ১৮ এপ্রিল। এপ্রিলের চাল ২৩ মে, মে ও জুনের চাল ১৩ জুলাই, জুলাইয়ের চাল ৮ সেপ্টেম্বর, আগস্টের চাল ১৭ অক্টোবর, সেপ্টেম্বরের চাল ৪ নভেম্বর, অক্টোবরে চাল দেওয়া হয়নি, নভেম্বরের চাল ১ ডিসেম্বর ও ডিসেম্বরের চাল দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি।
চাল না পেয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করা গোলাপী বেগম, রেহেনা বেগম ও লাইলী বেগম এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে বলেন, গত ৩১ অক্টোবর সরকারি গুদাম থেকে ভিজিডির ১৯৩ কার্ডধারীর ১৪৪.৭৫ মণ চাল উত্তোলন করেন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুল জব্বার প্রধান। যার বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান, সচিব ও ট্যাগ অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে এই চাল আত্মসাতের চেষ্টা করেন। ওই চাল বিতরণের দাবি জানিয়ে তারা অনেকবার চেয়ারম্যান ও সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি। উল্টো তাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। বাধ্য হয়ে ইউএনওর কাছে অভিযাগ দেওয়ার পর গত সোমবার থেকে চাল বিতরণ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই চাল পচা, লাল, পোকা ধরা ও খাবার অযোগ্য। রান্না করলে কটু গন্ধ আসে।
ভুক্তভোগী এই তিন নারীর দাবি, তাদের যে চাল দেওয়া হয়েছে তা সরকারি গুদাম থেকে উত্তোলন করা চাল নয়। সরকারি গুদামের ভালো চাল গোপনে বেশি দামে বিক্রি করে বাজার থেকে কম দামে নিম্নমানের চাল কিনে তাদের দেওয়া হয়েছে। নিজেরা খেতে না পেরে এখন সেই চাল হাঁস-মুরগিকে খাওয়াচ্ছেন। এ ছাড়া গরু-ছাগলকে খাওয়াবেন বলে কম দামে এই চাল গ্রামের অনেকে কিনে নিয়েছেন।
ভিজিডির সুবিধাভোগীরা আরও জানান, নিম্নমানের চাল বিতরণের সময় প্রতিবাদ হওয়ার ভয়ে একসঙ্গে সবাইকে না দিয়ে থেমে থেমে চাল দেওয়া হচ্ছে। কার্ডধারীরা যে যখন জানতে পারছেন সে তখন গিয়ে চাল নিচ্ছেন।
তবে চাল আত্মসাৎ করে চাপের মুখে পড়ে চাল বিতরণ শুরু এবং নিম্নমানের চাল দেওয়াসহ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রুবেল আমিন শিমুল। এ প্রসঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওগুলো চাল (ভিজিডির) দেওয়া কমপ্লিট। বিভ্রান্তিতে ফেলার জন্য একটি পক্ষ চাল নষ্ট বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ সরকারি গুদাম থেকে উত্তোলন করা চালই ভিজিডি কার্ডধারীদের দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
আর সরকারি গুদাম থেকে চাল উত্তোলনের বিষয়টি অস্বীকার করে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আবদুল জব্বার প্রধান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অক্টোবরের ডিও ছিল চেয়ারম্যানের নামে। চাল উত্তোলন করেছেন চেয়ারম্যান। চাল বিতরণ বাকি ছিল, তা চেয়ারম্যান দিয়ে দিয়েছেন। কোথা থেকে দিয়েছেন তা আমি বলতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘চাল নষ্ট নয়, নষ্ট হলে কি চাল মানুষ নেয়?’ গত ১৩ জানুয়ারি এই চাল দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন ইউপি সচিব।
তবে ভিজিডির আলোচিত এই চাল ইউপি সচিব আবদুল জব্বার প্রধানই গত ৩১ অক্টোবর উত্তোলন করেন জানিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্বপন কুমার দে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তাকে (ইউপি সচিব) ভালো চালই দেওয়া হয়েছে।’
ভিজিডির চাল নিয়ে অনিয়মের বিষয়ে বক্তব্য জানতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা মহিলবিষয়ক কর্মকর্তা মোছা. জেবুন নেছার মোবাইল ফোনে গতকাল বিকেলে কয়েক দফায় কল করা হলে ব্যস্ত পাওয়া যায়।
ভিজিডি কার্ডধারীদের নিম্নমানের চাল দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গোবিন্দগঞ্জের ইউএনও মো. আরিফ হোসেন গতকাল বিকেলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলব।’