জাবিতে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকের সুবিধা বাতিলের আয়োজন!
ফারুক হোসাইন, জাবি | ২৩ জুন, ২০২২ ০০:০০
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) পদের হিসাব-নিকাশ মেলাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধা এক অধ্যাপককে তার চাকরির বয়সসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা বাতিল করে অবসরে পাঠানোর আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করেছে। যোগ্যতায় এগিয়ে থাকা এ শিক্ষক যেন ভিসি হতে না পারেন সেজন্যই এ ধরনের আয়োজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই শিক্ষকের অভিযোগ, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এক বছর বেশি চাকরি করার বিষয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত গত ২৮ এপ্রিল এক চিঠি দিয়ে তাকে অবহিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। কিন্তু শিক্ষক রাজনীতির মারপ্যাঁচে তাকে অবসরে পাঠানো হচ্ছে। তাকে অবসরে পাঠাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমার বিশেষ সুবিধাই বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট যা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামীকাল (২৪ জুন শুক্রবার) সিনেট সভায় উত্থাপন করা হবে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক ড. আমির হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপন্ডউপাচার্য (প্রো-ভিসি)। অর্থনীতি বিভাগের এ অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞান অনুষদের দুবারের নির্বাচিত ডিনের দায়িত্বও পালন করেছেন। দীর্ঘদিন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক পদে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধারা এক বছর বেশি চাকরির সুবিধা পান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এ নিয়ম রয়েছে। এর আগে শিক্ষক ও কর্মকর্তারা এ সুবিধা ভোগ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাষ্ট্র যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এ সুবিধা বাতিল করে। আমার জানামতে, তারা এটা করতে পারে না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকরা এ সুবিধা পেয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কোন আইনে বাতিল করতে যাচ্ছে তা আমার জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রো-ভিসি অধ্যাপক নূরুল আলম ভিসির সাময়িক দায়িত্বে আছেন। ৩০ জুন তিনি অবসরে যাবেন। এর আগেই নতুন ভিসির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। অধ্যাপক আমির হোসেন ভিসি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকায় কয়েক মাস আগে তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে সিন্ডিকেটে প্রশ্ন তোলে বর্তমান প্রশাসন। পরে আমির হোসেন তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সাবেক এক ভিসি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ায় পিছু হটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর সব মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকের এ বিশেষ সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের স্বাধীনতার সমান বয়সী এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বরাবরই উপেক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কখনোই মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বাধীনতাবিরোধীরা ঘাঁটি গেড়েছে।
শিক্ষকদের একাধিক সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদের হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত বর্তমান প্রশাসন। এ পদে বর্তমানে সাময়িক দায়িত্বে থাকা ভিসি নূরুল আলম চান তার মেয়াদ যেন বাড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা অধ্যাপক আমির হোসেন। সে কারণে তাকে অবসরে পাঠাতেই মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক আমির হোসেন যেন দ্রুতই অবসরে গিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে দেন সেজন্য শিক্ষকদের একটি পক্ষ চেষ্টা চালাচ্ছেন। যে প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট পর্যন্ত গড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনে একজন অধ্যাপকের অবসরগ্রহণের বয়সসীমা ৬৫ বছর। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এক বছর তথা ৬৬ বছর চাকরির সুযোগ রয়েছে। সে হিসাবে এ বছরের ২৮ এপ্রিল অধ্যাপক আমির হোসেনের চাকরির বয়স এক বছর বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে চিঠি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। চিঠিতে আমির হোসেনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়, ‘৩১ মে ২০১৫ তারিখের সিনেট সভার সিদ্ধান্ত ও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার চাকরির মেয়াদ এক বছর বর্ধিত করা হয়েছে।’
কিন্তু গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ‘সেশন বেনিফিট’ বাতিলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুবিধার আইনটি বাতিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা ২৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিনেট সভায় এ সুবিধা বাতিলের বিষয়টি প্রস্তাবনা আকারে উত্থাপিত হবে। কিন্তু সংস্থাপন (জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয়ের ‘পাবলিক সার্ভিস রিটায়েরমেন্ট অ্যাক্ট-২০১০’ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করে। দুই বছর পর ২০১২ সালে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (অবসর)-২০১২’ নীতিমালা প্রকাশ করে সরকার। এতে ‘সেশন বেনিফিট’ বাতিল করে সব অধ্যাপকের বয়স ৬৫ হলে অবসরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুবিধার কথা বাতিলের বিষয় কিছু বলা হয়নি। ফলে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধাদের এক বছর বাড়িয়ে ৬৬ বছরের অবসর দেয়। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর করে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, চলতি বছরের মার্চে ভিসি হিসেবে ফারজানা ইসলামের মেয়াদ শেষ হলে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন অধ্যাপক আমির হোসেন। তবে প্যানেল নির্বাচন ও অন্যান্য জটিলতায় নতুন কাউকে এ পদে নিয়োগ না করে প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলমকে প্রথমে ভিসির চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি সাময়িক মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পান। তাই ভিসি পদে আসার জন্য শিক্ষকরা এখনো সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আমির হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিয়ে চিঠি দেওয়া হলো। অভিনন্দন জানানো হলো সিন্ডিকেট থেকে। কিন্তু এখন কী এমন হলো যে, সেশন বেনিফিট আইনের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধার রাষ্ট্রীয় আইনটিও তারা বাতিল করতে চায়?’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেট কি রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন বাতিল করার এখতিয়ার রাখে বলেও প্রশ্ন ছোড়েন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (সাময়িক দায়িত্ব) অধ্যাপক নূরুল আলম ও প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুুরুল হককে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন ধরেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর আমি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ করা দুঃখজনক। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তারা এ সুযোগ ভোগ করেছেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এ সুবিধা দেওয়া হয়। আমি ভিসিকে (নূরুল আলম) অনুরোধ করেছি তাকে (অধ্যাপক আমির হোসেন) যেন অসম্মান না করা হয়।’
শেয়ার করুন
ফারুক হোসাইন, জাবি | ২৩ জুন, ২০২২ ০০:০০

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) পদের হিসাব-নিকাশ মেলাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধা এক অধ্যাপককে তার চাকরির বয়সসংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধা বাতিল করে অবসরে পাঠানোর আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করেছে। যোগ্যতায় এগিয়ে থাকা এ শিক্ষক যেন ভিসি হতে না পারেন সেজন্যই এ ধরনের আয়োজন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই শিক্ষকের অভিযোগ, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এক বছর বেশি চাকরি করার বিষয়ে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত গত ২৮ এপ্রিল এক চিঠি দিয়ে তাকে অবহিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। কিন্তু শিক্ষক রাজনীতির মারপ্যাঁচে তাকে অবসরে পাঠানো হচ্ছে। তাকে অবসরে পাঠাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমার বিশেষ সুবিধাই বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট যা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আগামীকাল (২৪ জুন শুক্রবার) সিনেট সভায় উত্থাপন করা হবে।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক ড. আমির হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপন্ডউপাচার্য (প্রো-ভিসি)। অর্থনীতি বিভাগের এ অধ্যাপক সমাজবিজ্ঞান অনুষদের দুবারের নির্বাচিত ডিনের দায়িত্বও পালন করেছেন। দীর্ঘদিন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক পদে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধারা এক বছর বেশি চাকরির সুবিধা পান। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও এ নিয়ম রয়েছে। এর আগে শিক্ষক ও কর্মকর্তারা এ সুবিধা ভোগ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাষ্ট্র যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছে সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে এ সুবিধা বাতিল করে। আমার জানামতে, তারা এটা করতে পারে না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকরা এ সুবিধা পেয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কোন আইনে বাতিল করতে যাচ্ছে তা আমার জানা নেই।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রো-ভিসি অধ্যাপক নূরুল আলম ভিসির সাময়িক দায়িত্বে আছেন। ৩০ জুন তিনি অবসরে যাবেন। এর আগেই নতুন ভিসির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। অধ্যাপক আমির হোসেন ভিসি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকায় কয়েক মাস আগে তার মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে সিন্ডিকেটে প্রশ্ন তোলে বর্তমান প্রশাসন। পরে আমির হোসেন তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সাবেক এক ভিসি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ায় পিছু হটে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর সব মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকের এ বিশেষ সুবিধা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের স্বাধীনতার সমান বয়সী এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বরাবরই উপেক্ষিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কখনোই মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। ফলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বাধীনতাবিরোধীরা ঘাঁটি গেড়েছে।
শিক্ষকদের একাধিক সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদের হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত বর্তমান প্রশাসন। এ পদে বর্তমানে সাময়িক দায়িত্বে থাকা ভিসি নূরুল আলম চান তার মেয়াদ যেন বাড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা অধ্যাপক আমির হোসেন। সে কারণে তাকে অবসরে পাঠাতেই মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অধ্যাপক আমির হোসেন যেন দ্রুতই অবসরে গিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে দেন সেজন্য শিক্ষকদের একটি পক্ষ চেষ্টা চালাচ্ছেন। যে প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট পর্যন্ত গড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনে একজন অধ্যাপকের অবসরগ্রহণের বয়সসীমা ৬৫ বছর। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এক বছর তথা ৬৬ বছর চাকরির সুযোগ রয়েছে। সে হিসাবে এ বছরের ২৮ এপ্রিল অধ্যাপক আমির হোসেনের চাকরির বয়স এক বছর বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে চিঠি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার। চিঠিতে আমির হোসেনকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়, ‘৩১ মে ২০১৫ তারিখের সিনেট সভার সিদ্ধান্ত ও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার চাকরির মেয়াদ এক বছর বর্ধিত করা হয়েছে।’
কিন্তু গত ১২ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ‘সেশন বেনিফিট’ বাতিলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুবিধার আইনটি বাতিল করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা ২৪ জুন অনুষ্ঠিতব্য সিনেট সভায় এ সুবিধা বাতিলের বিষয়টি প্রস্তাবনা আকারে উত্থাপিত হবে। কিন্তু সংস্থাপন (জনপ্রশাসন) মন্ত্রণালয়ের ‘পাবলিক সার্ভিস রিটায়েরমেন্ট অ্যাক্ট-২০১০’ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের অবসরের বয়সসীমা এক বছর বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করে। দুই বছর পর ২০১২ সালে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক (অবসর)-২০১২’ নীতিমালা প্রকাশ করে সরকার। এতে ‘সেশন বেনিফিট’ বাতিল করে সব অধ্যাপকের বয়স ৬৫ হলে অবসরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুবিধার কথা বাতিলের বিষয় কিছু বলা হয়নি। ফলে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধাদের এক বছর বাড়িয়ে ৬৬ বছরের অবসর দেয়। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় দুই বছর বাড়িয়ে ৬৭ বছর করে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, চলতি বছরের মার্চে ভিসি হিসেবে ফারজানা ইসলামের মেয়াদ শেষ হলে আলোচনার শীর্ষে ছিলেন অধ্যাপক আমির হোসেন। তবে প্যানেল নির্বাচন ও অন্যান্য জটিলতায় নতুন কাউকে এ পদে নিয়োগ না করে প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নূরুল আলমকে প্রথমে ভিসির চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে তিনি সাময়িক মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পান। তাই ভিসি পদে আসার জন্য শিক্ষকরা এখনো সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক আমির হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিয়ে চিঠি দেওয়া হলো। অভিনন্দন জানানো হলো সিন্ডিকেট থেকে। কিন্তু এখন কী এমন হলো যে, সেশন বেনিফিট আইনের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সুবিধার রাষ্ট্রীয় আইনটিও তারা বাতিল করতে চায়?’ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেট কি রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন বাতিল করার এখতিয়ার রাখে বলেও প্রশ্ন ছোড়েন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (সাময়িক দায়িত্ব) অধ্যাপক নূরুল আলম ও প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো. মনজুুরুল হককে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন ধরেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর আমি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ করা দুঃখজনক। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তারা এ সুযোগ ভোগ করেছেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এ সুবিধা দেওয়া হয়। আমি ভিসিকে (নূরুল আলম) অনুরোধ করেছি তাকে (অধ্যাপক আমির হোসেন) যেন অসম্মান না করা হয়।’