টিকে থাকার লড়াইয়ে বরিস জনসন
রূপান্তর ডেস্ক | ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ওপর আস্থা হারিয়ে তার মন্ত্রিসভার একের পর এক মন্ত্রী এবং শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা পদত্যাগ করছেন। এ অবস্থায় টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জনসন। গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন জনসন সরকারের দুই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। তাদের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর যেন পদত্যাগের হিড়িক শুরু হয়।
বিবিসি বলছে, প্রভাবশালী ওই দুই মন্ত্রী পদত্যাগের পরেই শিশুবিষয়ক মন্ত্রী উইল কুইন্স, স্কুলবিষয়ক মন্ত্রী রবিন ওয়াকার, বিচারমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া অ্যাটকিনস, অর্থবিষয়ক মন্ত্রী জন গ্লেন এবং দুই জুনিয়র মন্ত্রী লরা ট্রট ও ফেলিসিটি বুচান পদত্যাগ করেন। এভাবে এক দিনেই জনসন সরকারের ১৬ মন্ত্রী-এমপি পদত্যাগ করেন। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত পদত্যাগ করেন মন্ত্রীরাসহ সরকারের নানা পর্যায়ের আরও কর্মকর্তা। পদত্যাগের এ ঢেউ চলছেই। বিবিসি জানাচ্ছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৭ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।
ঋষি সুনাকের পদত্যাগের পর নতুন অর্থমন্ত্রী হয়েছেন নাদিম জাহাবি। তিনি আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। নাদিম দলের মন্ত্রী-এমপিদের একজোট থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গত তিন বছরের মধ্যে নাদিম যুক্তরাজ্যের চতুর্থ অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ স্টিভ বার্কলেইকে করা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ বছরের শুরুতে ক্রিস পিনচারকে ডেপুটি চিফ হুইপের পদে নিয়োগ দেন জনসন। তার এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের অনেকেরই তখন আপত্তি ছিল। এ অবস্থায় বরিস জনসনের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী আছে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রী জনসনের শেষ দেখতে পাচ্ছেন।
বিবিসি বলছে, একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মাধ্যমে জনসন সরকার টিকিয়ে রাখার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার এ চেষ্টা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
লকডাউনের মধ্যে নিজের কার্যালয়ে মদের পার্টি করাসহ নানা কেলেঙ্কারিতে নিজের ইমেজ নিয়েও বেকায়দায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। কনজারভেটিভ এমপি ও সাবেক চিফ হুইপ অ্যান্ড্রু মিচেল প্রধানমন্ত্রী জনসনের ‘শেষ’ দেখতে পাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো চরিত্র বা মেজাজ-মর্জি কোনোটাই তার নেই। এখন শুধু একটিই প্রশ্ন, ঘটনা কতদূর গড়াবে।’
মদের পার্টি এবং কর বাড়ানো নিয়ে জনসনের সঙ্গে পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ দলের ব্যাকবেঞ্চারদের সম্পর্কেরও অবনতি হয়েছে। যদিও মাত্র গত মাসেই পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে টিকে যান জনসন। তাই আগামী এক বছর দল থেকে তার প্রতি আর অনাস্থা প্রস্তাব তোলা যাবে না। যদিও নিয়মে কিছু সংশোধন এনে কোনো কোনো বিদ্রোহী টোরি এমপি এর আগেই জনসনের বিরুদ্ধে আনাস্থা প্রস্তাব তুলতে আগ্রহী। যদি সত্যিই জনসনকে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয় তবে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
গত মাসে দুটি পার্লামেন্টারি আসনের উপনির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর ওপর পদত্যাগের জন্য চাপ আরও বেড়েছে। উপনির্বাচনে দলের হারের পরই ইস্তফা দেন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান। জনসন তখনো ইস্তফা দিতে নারাজ ছিলেন।
কনজারভেটিভ এমপি অ্যান্ড্রু ব্রিগেন বিবিসিকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। তা যদি তিনি না করেন তাহলে দল তাকে সরে যেতে বাধ্য করবে। সে ক্ষেত্রে ১৯২২ কমিটি টালমাটাল অবস্থায় থাকা প্রধানমন্ত্রীকে সরাতে পদক্ষেপ নেবে। ১৯২২ নির্বাহী কমিটির সদস্য বব ব্ল্যাকম্যান বলেন, এই নির্বাহী দলে পরিবর্তন আনতে নির্বাচন করা হবে পার্লামেন্টের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের আগেই। অর্থাৎ দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে। বাধ্যতামূলকভাবে নেতৃত্বের শাসন পরিবর্তন করতে টোরি দলের বিদ্রোহীরা নির্বাচনের এ পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক।
এদিকে বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কির স্টারমার জানিয়েছেন, তিনি আগাম নির্বাচনকে স্বাগত জানাবেন। দেশের এখন দরকার সরকার পরিবর্তন। তিনি বলেন, ‘সব দুর্নীতি, সব ব্যর্থতার পর এটি স্পষ্ট যে, এই টোরি (কনজারভেটিভ) সরকার এখন পতনের মুখে আছে।’
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ৭ জুলাই, ২০২২ ০০:০০

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ওপর আস্থা হারিয়ে তার মন্ত্রিসভার একের পর এক মন্ত্রী এবং শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা পদত্যাগ করছেন। এ অবস্থায় টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জনসন। গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন জনসন সরকারের দুই জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। তাদের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর যেন পদত্যাগের হিড়িক শুরু হয়।
বিবিসি বলছে, প্রভাবশালী ওই দুই মন্ত্রী পদত্যাগের পরেই শিশুবিষয়ক মন্ত্রী উইল কুইন্স, স্কুলবিষয়ক মন্ত্রী রবিন ওয়াকার, বিচারমন্ত্রী ভিক্টোরিয়া অ্যাটকিনস, অর্থবিষয়ক মন্ত্রী জন গ্লেন এবং দুই জুনিয়র মন্ত্রী লরা ট্রট ও ফেলিসিটি বুচান পদত্যাগ করেন। এভাবে এক দিনেই জনসন সরকারের ১৬ মন্ত্রী-এমপি পদত্যাগ করেন। গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত পদত্যাগ করেন মন্ত্রীরাসহ সরকারের নানা পর্যায়ের আরও কর্মকর্তা। পদত্যাগের এ ঢেউ চলছেই। বিবিসি জানাচ্ছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৭ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।
ঋষি সুনাকের পদত্যাগের পর নতুন অর্থমন্ত্রী হয়েছেন নাদিম জাহাবি। তিনি আগে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। নাদিম দলের মন্ত্রী-এমপিদের একজোট থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। গত তিন বছরের মধ্যে নাদিম যুক্তরাজ্যের চতুর্থ অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ স্টিভ বার্কলেইকে করা হয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ বছরের শুরুতে ক্রিস পিনচারকে ডেপুটি চিফ হুইপের পদে নিয়োগ দেন জনসন। তার এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের অনেকেরই তখন আপত্তি ছিল। এ অবস্থায় বরিস জনসনের ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত কী আছে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রী জনসনের শেষ দেখতে পাচ্ছেন।
বিবিসি বলছে, একের পর এক মন্ত্রীর পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের মাধ্যমে জনসন সরকার টিকিয়ে রাখার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার এ চেষ্টা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
লকডাউনের মধ্যে নিজের কার্যালয়ে মদের পার্টি করাসহ নানা কেলেঙ্কারিতে নিজের ইমেজ নিয়েও বেকায়দায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। কনজারভেটিভ এমপি ও সাবেক চিফ হুইপ অ্যান্ড্রু মিচেল প্রধানমন্ত্রী জনসনের ‘শেষ’ দেখতে পাওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো চরিত্র বা মেজাজ-মর্জি কোনোটাই তার নেই। এখন শুধু একটিই প্রশ্ন, ঘটনা কতদূর গড়াবে।’
মদের পার্টি এবং কর বাড়ানো নিয়ে জনসনের সঙ্গে পার্লামেন্টে কনজারভেটিভ দলের ব্যাকবেঞ্চারদের সম্পর্কেরও অবনতি হয়েছে। যদিও মাত্র গত মাসেই পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে টিকে যান জনসন। তাই আগামী এক বছর দল থেকে তার প্রতি আর অনাস্থা প্রস্তাব তোলা যাবে না। যদিও নিয়মে কিছু সংশোধন এনে কোনো কোনো বিদ্রোহী টোরি এমপি এর আগেই জনসনের বিরুদ্ধে আনাস্থা প্রস্তাব তুলতে আগ্রহী। যদি সত্যিই জনসনকে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয় তবে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
গত মাসে দুটি পার্লামেন্টারি আসনের উপনির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টির পরাজয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর ওপর পদত্যাগের জন্য চাপ আরও বেড়েছে। উপনির্বাচনে দলের হারের পরই ইস্তফা দেন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান। জনসন তখনো ইস্তফা দিতে নারাজ ছিলেন।
কনজারভেটিভ এমপি অ্যান্ড্রু ব্রিগেন বিবিসিকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত। তা যদি তিনি না করেন তাহলে দল তাকে সরে যেতে বাধ্য করবে। সে ক্ষেত্রে ১৯২২ কমিটি টালমাটাল অবস্থায় থাকা প্রধানমন্ত্রীকে সরাতে পদক্ষেপ নেবে। ১৯২২ নির্বাহী কমিটির সদস্য বব ব্ল্যাকম্যান বলেন, এই নির্বাহী দলে পরিবর্তন আনতে নির্বাচন করা হবে পার্লামেন্টের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের আগেই। অর্থাৎ দুই সপ্তাহ সময়ের মধ্যে। বাধ্যতামূলকভাবে নেতৃত্বের শাসন পরিবর্তন করতে টোরি দলের বিদ্রোহীরা নির্বাচনের এ পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক।
এদিকে বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কির স্টারমার জানিয়েছেন, তিনি আগাম নির্বাচনকে স্বাগত জানাবেন। দেশের এখন দরকার সরকার পরিবর্তন। তিনি বলেন, ‘সব দুর্নীতি, সব ব্যর্থতার পর এটি স্পষ্ট যে, এই টোরি (কনজারভেটিভ) সরকার এখন পতনের মুখে আছে।’