
সাধারণত স্বজনদের কাছে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করতেই পূর্ণবয়স্ক মানুষ কিংবা শিশুদের জোর করে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। কিন্তু বিশ্বে এবারই প্রথম শিম্পাঞ্জির বাচ্চা অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনা ঘটেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে বিশ্বগণমাধ্যম। এই ঘটনা ঘটেছে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে। আফ্রিকার এই দেশটির কাতাঙ্গা অভয়ারণ্য থেকে শিম্পাঞ্জির তিনটি শাবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। অপহরণের শিকার শিশু শিম্পাঞ্জিদের নাম সিজার, হুসেইন এবং মঙ্গা। ৯ সেপ্টেম্বর রাত ৩টার দিকে তাদের অপহরণ করা হয়। সেদিন অভয়ারণ্যের ইয়ং এনিমেল কনফিসকেটেডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ে অপহরণকারীরা। সে সময় শাবকদের পরিচর্যাকেন্দ্রে শিম্পাঞ্জির পাঁচটি শাবক ছিল। বুদ্ধিমান শিশুরা গোলমালের আঁচ পেয়ে এবং অপরিচিত লোকদের দেখে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, তিনটি শিম্পাঞ্জি শাবককে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। আর বাকি দুটি শাবক পরিচর্যাকেন্দ্রের রান্নাঘরে লুকিয়ে কোনোমতে নিজেদের রক্ষা করে। অভয়ারণ্যের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রাঙ্ক শাতেরি বলেন, ‘বিশ্বে এটাই বোধহয় শিম্পাঞ্জির শাবক অপহরণের ঘটনা। কিন্তু আসলে অপহরণকারীরা আমার সন্তানদের অপহরণের পরিকল্পনা করেছিল। কারণ তাদের এখানে ছুটি কাটাতে আসার কথা ছিল। তারা না আসায় দুষ্ট লোকেরা শিম্পাঞ্জি শাবকদের ধরে নিয়ে গেছে।’
তিনি জানান, এরপর তার স্ত্রীকে অপহরণকারীরা তিনটি এসএমএস পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে, শিম্পাঞ্জি শাবকদের আটকে রাখার ভিডিও পাঠায়, হুমকি দেয় দাবি করা টাকা না দিলে শাবকগুলোকে আঘাত করবে।
তবে যে অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে ফ্রাঙ্কের জন্য সেটা দেওয়া সম্ভব নয়, তিনি দিতেও চান না। কারণ টাকা দিলেও অপহরণকারীরা কথামতো শিম্পাঞ্জি শাবকদের ফেরত দেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাছাড়া দাবি করা মুক্তিপণ দিলে তা আফ্রিকার শিম্পাঞ্জির আরও ২৩ অভয়ারণ্যের জন্যও একই ঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করেন ফ্রাঙ্ক। এদিকে শিম্পাঞ্জি শাবকদের খুঁজে বের করার প্রত্যয় জানিয়েছে কঙ্গো সরকার। বিশ্বে মানুষের পর অন্যতম বুদ্ধিমান প্রাণী শিম্পাঞ্জি। নানা কারণে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে থাকা প্রাণীটির সুরক্ষা দেয় অভয়ারণ্য, এখন লোভী মানুষের কারণে সেখানেও ঢুকে গেছে ভয়।
দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বল্গা হরিণের মতো ছুটছে। নিয়মিত বিরতিতে বাড়ছে খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে ব্যবহার্য সব জিনিসপত্রের দাম। ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই নানা অজুহাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ফেলছেন বিপাকে। সরকার নানা সময়ে নানা উদ্যোগ নিয়েও বাজারের এই নৈরাজ্য থামাতে পারছে না। খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোক্তা অধিকার বা খাদ্য অধিদপ্তরের অভিযানের পর এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ও সংবাদ প্রকাশের পর নির্দিষ্ট এলাকা বা পণ্যে কিছুটা প্রভাব পড়লেও সামষ্টিক ফলাফল প্রায় শূন্য। বিশেষ করে জ্বালানি ছাড়া খাদ্যপণ্যের বাইরের অন্য পণ্যের দাম নিয়ে আলোচনাও হয় কম। আর এরই সুযোগ নেন সংশ্লিষ্টরা। দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে দেন তারা। এই সুযোগ নেওয়া ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আছে দেশি ছোট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অনেক বহুজাতিক কোম্পানিও। তবে টয়লেট্রিজ সামগ্রীর দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড। হুইল সাবান ও ডিটারজেন্ট পাউডার, রিন ডিটারজেন্ট পাউডার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি ধাপে ধাপে দাম বাড়িয়ে অনেকটা নীরবেই সাধারণ জনগণের পকেট কাটছে। ডিটারজেন্টে ব্যবহৃত কাঁচামাল ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে আগামী ১ অক্টোবর থেকে আবারও এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।
বাজারদর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন-চার ধাপে বেড়েছে টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইউনিলিভার কোম্পানির ডিটারজেন্ট পাউডার হুইল, রিন এবং কাপড় কাচা হুইল সাবানের দাম। ১৮-২০ টাকার ১২০ গ্রাম হুইল সাবানের দাম বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, ১ কেজির ডিটারজেন্ট হুইল পাউডারের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা ও ১২০ টাকা কেজির ডিটারজেন্ট পাউডারের মূল্য বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই মাসের ব্যবধানেই ইউনিলিভারের ১০০ গ্রাম ওজনের একটি লাক্স সাবানের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। একই ওজনের ৪০ থেকে ৪৫ টাকার লাইফবয় সাবানের দাম এখন ৫০ টাকা, হুইল সাবান ৩০ টাকা, এক কেজি রিন ডিটারজেন্ট পাউডারের দাম ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দোকানি ও ক্রেতারা বলছেন, মাত্র দুই-তিন মাসের ব্যবধানে একটি কাপড় কাচা সাবানের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। নতুন করে আবারও মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে। ব্যবসার নামে মানুষ ঠকানোর বিষয় কোনোভাবে মানা যায় না। প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইচ্ছেমতো পণ্যের গায়ে দাম বসিয়ে জনসাধারণকে জিম্মি করে তাদের পকেট লুটে নিচ্ছে। হয় এসব কোম্পানি তাদের পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনবে, না হয় মূল্যবৃদ্ধিতে লাগামহীন কোম্পানির পণ্য বর্জনের সময় এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারওয়ান বাজারের এক দোকানি দেশ রূপান্তরকে জানান, কয়েক মাসের ব্যবধানের প্রসাধন সামগ্রীর মধ্যে সাবান ও ডিটারজেন্ট পাউডারের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। বিশেষ করে ইউনিলিভার কোম্পানি সবচেয়ে বেশি ডাকাতি করছে।
অপূর্ব নামের মোহাম্মদপুর বাজারের আরেক ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজারে সব ধরনের খাদ্য ও ব্যবহার্য নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় কোম্পানিগুলো একপ্রকার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেকর্ড দামে হুইলের ডিটারজেন্ট ও সাবান বিক্রি করছে ইউনিলিভার কোম্পানি।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হল এলাকার শফিক নামের এক ক্রেতা অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন চাল, ডাল, তেল, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। সঙ্গে বাড়ছে দৈনন্দিন ব্যবহারের সাবান, ডিটারজেন্ট ও টুথপেস্টসহ অন্যান্য পণ্যের দামও। এভাবে বাড়তে থাকলে আমাদের হিসাব মেলে না।
তবে ইউনিলিভাবের দাবি, বিশ্ববাজারে এসব পণ্য তৈরির কাঁচামাল ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, জাহাজ ভাড়া ও দেশে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ কারণে দাম কিছুটা বাড়লেও তা উৎপাদন খরচ বাড়ার চেয়ে তুলনামূলক কম।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, পার্টনারশিপস অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স ডিরেক্টর শামীমা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, মার্কেটে আমাদের প্রায় ৩০০ প্রডাক্ট রয়েছে। এর মধ্যে কোন প্রডাক্টের দাম কখন বাড়ছে তা বলা সম্ভব নয়। আমরা দেশের সাধারণ জনগণের বিষয় মাথায় রেখে পণ্যে মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। তবে সাবান উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি থাকায় আমাদের উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। দাম বাড়িয়েও আমাদের লাভ হচ্ছে না।
চলে গেলেন ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক রণেশ মৈত্র।
গতকাল সোমবার ভোররাত ৩টা ৪৭ মিনিটে ঢাকার পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। সম্প্রতি তিনি মফস্বল সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদান রাখায় বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। তিনি পাবনা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
দেশবরেণ্য প্রবীণ এই সাংবাদিকের মৃত্যুর খবরে পাবনায় বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
পাবনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ বলেন, তার সন্তান অস্ট্রেলিয়া থেকে রওনা হয়েছেন। তিনি পৌঁছানোর পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হবে।
১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর রাজশাহী জেলার ন’হাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পৈতৃক বাসস্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামে। বাবা রমেশ চন্দ্র ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই রণেশ মৈত্র টিউশনি করে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন।
নিজের জীবন সংগ্রাম থেকে শিক্ষা নিয়েই রণেশ মৈত্র দেশের অসহায়, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করেছেন। ১৯৫০ সালে পাবনা জিসিআই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৫ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমেই তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর সাংবাদিকতার পর ১৯৫৫ সালে তিনি যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত দৈনিক অবজারভারে পাবনা প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২ সালে দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দি ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়ে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশের শীর্ষ পত্রপত্রিকায় কলাম লিখে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।
১৯৬১ সালে পাবনায় পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা তাদের পেশার স্বীকৃতি পান। একই বছরে প্রতিষ্ঠিত পাবনা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।
তিনি দীর্ঘদিন প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে জেলার সাংবাদিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তিনি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।
১৯৪৮ সালে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ভাষা আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় রণেশ মৈত্রের রাজনৈতিক জীবন। একই সময়ে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে জেল খেটেছেন।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি পাবনা জেলার অন্যতম সংগঠক ছিলেন। সেই বছরেই তিনি ছাত্র ইউনিয়নের জেলা সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালে এডওয়ার্ড কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদার করার লক্ষ্যে তিনি বাংলাদেশ অবজারভারের আব্দুল মতিন, কামাল লোহানীসহ প্রগতিশীল বন্ধুদের সঙ্গে গঠন করেন শিখা সংঘ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। সেখানে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার ছিল, যেখান থেকে শিখা নামে একটি হাতে লেখা পত্রিকাও প্রকাশিত হতো।
তার স্ত্রী পূরবী মৈত্র বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি। চার ছেলেমেয়ে সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
গুণী এই ব্যক্তির পরলোকগমনে তাৎক্ষণিকভাবে পাবনার সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠন ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা এবং তার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।
রণেশ মৈত্রর মৃত্যুতে পাবনা প্রেস ক্লাব তিন দিনের শোক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। শোক প্রকাশ করেছেন পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম বিপ্লব, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলি মুনসী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলাম রবি, বেবী ইসলাম প্রমুখ।
অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকছিল পাকিস্তান, এর মধ্যেই দেখা দেয় দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক বন্যা। এই পরিস্থিতিতে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী মিফতাহ ইসমাইল। দেশের বাইরে থাকা অবস্থায় নিজের পদত্যাগের কথা জানালেন তিনি। এই নিয়ে গত চার বছরে দেশটির পাঁচ অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করলেন। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে দলীয় প্রধান নওয়াজ শরিফের অনুমোদন পেয়েছেন ইসহাক দার।
মিফতাহ ইসমাইল এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে আগামী সপ্তাহের শুরুতে নতুন অর্থমন্ত্রীসহ দেশে ফিরবেন শাহবাজ।
গতকাল সোমবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন জানায়, গত রবিবারই মিফতাহ মৌখিকভাবে পদত্যাগের কথা জানান, ওইদিন বিদেশের মাটিতে নিজ দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নওয়াজ) বা পিএমএলের (এন) জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে দেখা করে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পিএমএলের এক বিবৃতিতেও পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে হঠাৎ কেন অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ বিবৃতিতে সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি। যদিও ডন বলছে, কয়েক মাস ধরেই কানাঘুষা চলছিল সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রীর কিছু সিদ্ধান্তে নাখোশ ছিলেন দলীয় প্রধান নওয়াজ শরিফ ও ইসহাক দার।
পাকিস্তানের অর্থনীতি ক্রমাগতভাবে অস্থির সময় পার করছে। দেশটিতে চলতি হিসাবের ঘাটতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি পরিবার ও ব্যবসা উভয়ের ওপরই চাপ সৃষ্টি করেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বিধ্বংসী বন্যা আগে থেকেই বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটকে চরম মাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্যায় পাকিস্তানের আনুমানিক ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে এবং দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দিকে তাকিয়ে আছে পাকিস্তান।
রাজধানীর হাজারীবাগের বউবাজার বালুর মাঠ বেড়িবাঁধ এলাকায় ‘মেট্রো এক্সপ্রেস’ নামের একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যানের মালামাল নামানোর সময় বিস্ফোরণে মো. ইলিয়াস (২২) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও তিনজন। তাদের মধ্যে একজনের পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
গত রবিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। কাভার্ড ভ্যানে থাকা দাহ্য কেমিক্যালের কথা জানত না বলে জানিয়েছে শ্রমিকরা। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত কুরিয়ার সার্ভিসের কাউকে আটক করেনি পুলিশ। কোনো মামলাও হয়নি। তবে যাদের অবহেলায় এ ঘটনা ঘটেছে তাদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন হাজারীবাগ থানার ওসি মো. মোক্তারুজ্জামান। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, কুরিয়ার সার্ভিস অফিসের ভেতরে কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। এখনো কুরিয়ার সার্ভিসের কাউকে আটক করা হয়নি। তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।
নিহত ইলিয়াসের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার মূত্রদিঘী গ্রামে। ঢাকায় ওই কুরিয়ার সার্ভিসের মেসে থাকতেন তিনি। এ ঘটনায় আহতরা হলেন দিলীপ, আব্দুল হালিম ও মারসেল ট্রুডু। তাদের মধ্যে আব্দুল হালিম ও মারসেল ট্রুডুকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। হালিমের অবস্থায় গুরুতর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। আর পা বিচ্ছিন্ন হওয়া দিলীপকে পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন জানান, হালিমের শরীরের ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া তার মাথা, মুখমন্ডল, বাম হাতসহ শরীর ও দুই পায়ে আঘাত রয়েছে। আর মারসেলে দুই পায়ে ও ডান হাতে আঘাত রয়েছে। বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়েছে দিলীপের।
আহত মারসেল জানান, মেট্রো এক্সপ্রেস নামে কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানটিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তিনি। রাতে একটি কাভার্ড ভ্যান থেকে মালামাল নামিয়ে অফিসের ভেতরে রাখছিলেন তারা। ড্রামগুলো দিলীপ ও ইলিয়াস নামিয়ে অফিসের ভেতর রাখার মুহূর্তেই বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ইলিয়াস। দিলীপসহ পাশে থাকা হালিম ও তিনি আহত হন।
দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। হাজারীবাগ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুস শহীদ জানান, কাভার্ড ভ্যানটিতে ৫টি ড্রামে ১০০ লিটারের মতো ইথাইল পারঅক্সাইড ছিল। এগুলো মানব শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গুলশান থেকে আনা হয়েছিল এ ড্রামগুলো। যাওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রামে।
তিনি বলেন, এ ধরনের কেমিক্যাল রাখার জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদন লাগে। তাদের অনুমোদন ছিল কি না তা জানা সম্ভব হয়নি। কারণ ঘটনার পর থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের সকলে আত্মগোপনে চলে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ‘মেট্রো এক্সপ্রেস’ নামের কুরিয়ার সার্ভিসের টিনশেডের ওই গুদামটিতে রাতদিন মালামাল রাখা ও বের করা হয়। ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক কয়েক শিফটে কাজ করেন। ঘটনার সময় অন্তত ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশ না করে এক শ্রমিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা শুধু মালামাল গাড়ি থেকে গোডাউনে নামাই আর উঠাই। কী মালামাল তা আমাদের কখনোই জানানো হয় না।’
এ বিষয়ে ‘মেট্রো এক্সপ্রেস’ কুরিয়ার সার্ভিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. শাহদাত হোসেনকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফোনে মেসেজ পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। পরে মোহাম্মদপুরের মেইন ডিপোতে ফোন করলে দায়িত্বরত কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রাজধানীর হাজারীবাগে বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশস্থলে যুবলীগের পাল্টা কর্মসূচি ডাকাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। গতকাল সোমবার ওই সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং দল দুটির অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্য এক দফা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে দুপক্ষেরই বেশ কয়েকজন আহত হন।
এদিকে হাজারীবাগে সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে জানিয়েছেন ওই দুই সাংবাদিক। বিষয়টি জানার পর বিএনপির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশের পাশাপাশি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি এবং দলের চার নেতাকর্মীকে ‘হত্যা’র প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার ১৬টি জায়গায় সমাবেশের অংশ হিসেবে গতকালের সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। প্রথমে ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ডে এ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। সেখানে সমাবেশের অনুমতি পায়নি। পরে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সামনে অনুমতি দেয়। কিন্তু গত রবিবার রাতে ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সামনে বিএনপির সমাবেশস্থলে হঠাৎ করে যুবলীগ কর্মসূচির ডাক দেয়। এমন পরিস্থিতিতে সংঘর্ষের আশঙ্কা ও জানমালের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে উভয় সংগঠনকে সমাবেশ করতে নিষেধ করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। অবশ্য পরে গতকাল সকালে বিএনপিকে হাজারীবাগে সিকদার মেডিকেল কলেজের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।
বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের লাগবাগ, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি থানা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই ধানমন্ডি ও হাজারীবাগ এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাঁশ ও লাঠিসোঁটা হাতে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেয়। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরাও লাঠির মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশমুখী হয়। চারটি থানার নেতাকর্মীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। তাদের হাতে লাঠি ও জাতীয় পতাকা ছিল। নেতাকর্মীদের হাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীমের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার দেখা গেছে। তবে মঞ্চে অসীমের ছবি ছিল না। সেখানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম রবির ছবি দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ২টার দিকে লাঠি নিয়ে সমাবেশে যোগ দিতে বিএনপি নেতাকর্মীরা হাজারীবাগের টালি অফিসের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পালিয়ে না গিয়ে উল্টো তাদের ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়। সেখানে কয়েক মিনিট ধরে চলা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় দুই দলের বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের পর টালি অফিস রোডের মোড়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা লাঠি হাতে অবস্থান নিলেও পরে আর কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশের ধানমন্ডিঅঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার এহসানুল ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছে বিএনপি। তবে শান্তিপূর্ণ সমাবেশে লাঠির দরকার নেই। লাঠি থাকলে শান্তি বিনষ্ট হতে পারে। সে জন্য আমরা সমাবেশে আসা লোকজনকে লাঠি সরিয়ে ফেলতে বলেছি।’
হাজারীবাগে গতকালের সমাবেশের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের দুই সাংবাদিক হামলার শিকার হন। বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায় বলে ওই দুই সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি জানার পর বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করার পাশাপাশি হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আশ্বাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেওয়া হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম নিজেও দুঃখ প্রকাশ করেন।
জামায়াত-আওয়ামী লীগের পরকীয়া চলছে : হাজারীবাগের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনি সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘জামায়াত-আওয়ামী লীগের পরকীয়া চলছে। আওয়ামী লীগ জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, তবে বেআইনি ঘোষণা করছে না। আবার আওয়ামী লীগ ও জামায়াত উর্দু শব্দ। দুই দলের মধ্যে পরকীয়া চলছে।’
তিনি সরকারকে সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় রাজপথে নেমেছি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আঘাত এলে পাল্টা আঘাত করা হবে।’
মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম সিরাজের সভাপতিত্বে এবং কে এম জোবায়ের এজাজ ও আরিফা সুলতানা রুমার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম এবং বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিসহ বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।