
আগামী শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। ৫ অক্টোবর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর সারা দেশে ম-পের সংখ্যা বেড়েছে। ৩২ হাজার ১৬৮ ম-পের মধ্যে ৭৯১৭টি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। গত বছর একাধিক মন্ডপে হামলার ঘটনাকে সামনে রেখে এবার প্রতিটি মন্ডপে কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। প্রায় এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও র্যাব পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নিরাপত্তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেসব স্থানে মন্ডপ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধ আছে তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর এ নিয়ে একটি গোপন প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদনে নিরাপত্তা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে পূজা উৎসবকে কেন্দ্র করে পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপাররা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। জঙ্গিদের বিষয়ে কঠোর মনিটরিং করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ধরনের উসকানিমূলক পোস্ট দিলেই গ্রেপ্তার করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ মন্ডপগুলোতে বাড়তি নজরদারির পাশাপাশি একাধিক সিসি ক্যামেরা ও আর্চওয়ে গেট স্থাপন করতে বলা হয়েছে। মন্ডপে যারা দায়িত্ব পালন করবে তাদের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য স্থানীয় থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবারের পূজায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় থাকবে। থানা পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি ও বিট পুলিশের সঙ্গে পূজা কমিটি সমন্বয় করে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এই সময়ে সারা দেশে তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ধরনের উসকানিমূলক পোস্ট দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুরো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। মন্ডপ নিয়ে কোনো ধরনের বিরোধিতা নেই। তারপরও আমরা বিষয়টি আমলে নিয়েছি। পুলিশ যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছে সেভাবে আমরা কাজ করছি। সরকার থেকে নিরাপত্তার ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, প্রতি বছরই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজা ম-পের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০০৯ সালে মন্ডপ ছিল ২১৯১৩টি, ২০১০ সালে ২৩৪৪০টি, ২০১১ সালে ২৮০০০টি, ২০১২ সালে ২৭৮০৭টি, ২০১৩ সালে ২৮২৪৪টি, ২০১৪ সালে ২৮০৮৩টি, ২০১৫ সালে ২৮৩৬৩টি, ২০১৬ সালে ২৯০৭০টি, ২০১৭ সালে ২৯২২৫টি, ২০১৮ সালে ৩০১৬০টি, ২০১৯ সালে ৩১০৯১টি, ২০২০ সালে ৩০৭১০টি, ২০২১ সালে ৩১৫০৭টি ও ২০২২ সালে ৩২১৬৮টি মন্ডপ আছে।
প্রতি বছরই মন্ডপ নিয়ে একটি মহল নানাভাবে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে। সবচেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা হয়েছে গত বছর। ওই বছর কুমিল্লা, রংপুর, নোয়াখালী, চাঁদপুরসহ দেশের অন্তত ১৮টি জেলায় মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকজন মারাও গেছেন। গত বছরের ঘটনার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তার ব্যবস্থা আলাদাভাবে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রায় এক মাস ধরে পূজামন্ডপ নিয়ে আমরা কাজ করেছি। এই সময়ে দেখা গেছে, মন্ডপের স্থান ও কমিটি গঠন নিয়ে কোনো কোনো স্থানে বিরোধ তৈরি হয়েছে। এসব নিয়ে আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। দুই/এক দিনের মধ্যে বিরোধ মিটাতে উদযাপন কমিটির নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিরোধকে পুঁজি করে তৃতীয় পক্ষ সুবিধা নিবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এমনকি জঙ্গি ও একটি মহল সুবিধা নিতে পারে। তারপরও আমরা সতর্ক আছি।’ তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে নজিরবিহীন নিরাপত্তার বলয় তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একটি প্রতিবেদন করা হয়েছে। রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তারা নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন। ঝুকিপূর্ণ যেসব ম-প আছে সেখানে আলাদাভাবে নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। যেসব মন্ডপে আমাদের নির্দেশনা মানবে না উল্টো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ঝুঁকিপূর্ন মন্ডপগুলোর মধ্যে ঢাকায় ৮৯টি, চট্টগ্রাম শহরে ১২৫টি, রাজশাহী শহরে ২৬টি, খুলনা শহরে ৪৫টি, বরিশাল শহরে ২০টি, সিলেট শহরে ৫৩টি, গাজীপুর মেট্রোতে ২১টি, রংপুর শহরে ১৯টি, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জে ১৭০৪টি, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৫৫৯টি, রাজশাহী রেঞ্জে ৯৮৮টি, রংপুর রেঞ্জে ১১৪২টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১০৮০টি, খুলনা রেঞ্জে ১০৮৯টি, বরিশাল রেঞ্জে ৫২৯টি ও সিলেট রেঞ্জে ৪২৮টি মন্ডপ রয়েছে। এর মধ্যে এবার সর্বোচ ৭১৮১টি মন্ডপ আছে ঢাকা রেঞ্জে। আর কম মন্ডপ আছে বরিশাল শহরে ৮৫টি। পুলিশের গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পূজা শুরুর আগে মন্ডপকেন্দ্রিক বিরোধ নিষ্পতি করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এছাড়া নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করতে হবে।
আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাজেটে দেওয়া বরাদ্দের অতিরিক্ত আরও প্রায় ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা চেয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে জ্বালানি খাতে বরাদ্দের শতভাগ ব্যবহার করার অনুমতি চেয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এ বাহিনী। সম্প্রতি অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য জ্বালানি, গোয়েন্দা, অপারেশনাল ও নিরাপত্তাসামগ্রী কেনার জন্য এ অর্থ প্রয়োজন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, পুলিশের চাওয়া অনুযায়ী অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে।
অর্থ বিভাগে দেওয়া চিঠিতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ বাহিনীর যেসব দাঙ্গা-দমনসামগ্রী ও অপারেশনাল সামগ্রী রয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। দাঙ্গা-দমনসামগ্রী ও অপারেশনাল সামগ্রী পুলিশে সংযুক্ত না হলে আগামী সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের জানমালের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া দুরূহ হবে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের নিমিত্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার, অপারেশনাল ও নিরাপত্তাসামগ্রী ক্রয়ের লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেটে অতিরিক্ত ১ হাজার ২২৫ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬১০ টাকা প্রয়োজন।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জননিরাপত্তা খাতের জন্য সরকার ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ছিল ২১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের চেয়ে এবার ১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। জননিরাপত্তা খাতে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, যার আওতায় রয়েছে পুলিশ, বর্ডার গার্ড, কোস্টগার্ড এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। রয়েছে সুরক্ষা সেবা বিভাগও।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, অতিরিক্ত যে অর্থ চেয়েছে পুলিশ তার মধ্যে ১৫৮ কোটি টাকার অস্ত্র ও গোলাবারুদ, ৭৭ কোটি টাকার নিরাপত্তাসামগ্রী, ২২৬ কোটি টাকার মোটরযান, ৫৪০ কোটি টাকার অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি, ১২ কোটি টাকার তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি, ৪৪ লাখ টাকার কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক, ৭ কোটি টাকার কম্পিউটার সফটওয়্যার, ২০৪ কোটি টাকার পেট্রোল, অয়েল, লুব্রিকেন্ট কেনা হবে।
এ ছাড়াও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জ্বালানি খাতে বরাদ্দের শতভাগ ব্যবহার করার অনুমতি চেয়েছে পুলিশ। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের ৮০ ভাগ ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পুলিশের তৎপরতা, নবসৃষ্ট কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন হওয়ায় এবং মোটরযান বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়ায় জ্বালানি খাতে বাজেটের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।
চলতি অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্টের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের কেন্দ্রস্থল ট্রাফালগার স্কয়ার দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য-ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত। এবার এ স্কয়ারে একটি নতুন ভাস্কর্য বসানো হয়েছে। তবে এটি ব্রিটিশ কোনো রাজা-রানী কিংবা যুদ্ধজয়ী বীরের ভাস্কর্য নয়, বরং ব্রিটিশবিরোধী এক আফ্রিকান নেতার ভাস্কর্য। আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ মালাউই, দেশটির ব্রিটিশবিরোধী ব্যক্তিত্ব জন চিলেমবুইর ভাস্কর্য এটি। ব্রোঞ্জে গড়া ৫ মিটার উঁচু চিলেমবুইর ভাস্কর্যটির নাম ‘অ্যান্টিলোপ’-এর মানে হলো আফ্রিকার দুরন্ত হরিণ। এটি তৈরি করেছেন মালাউইর ভাস্কর স্যামসন কামবালু। তার তৈরি ভাস্কর্যটি স্থান করে নিয়েছে ট্রাফালগার স্কয়ারের ফোর্থ প্লিন্থ নামে একটি বেদিতে। ২০০৩ সালে এ বেদিটি আসলে তৈরি করা হয়েছিল রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের মূর্তি বসানোর জন্য। তবে তহবিলের অভাবে সেটা আর বসানো হয়নি। এরপর থেকে বেদি কর্র্তৃপক্ষ সেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের নির্বাচিত ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে আসছে। বেদিতে নির্বাচিত ভাস্কর্যটির মেয়াদ দুই বছর। অর্থাৎ আগামী দুই বছর ট্রাফালগার স্কয়ারে জন চিলেমবুইর ভাস্কর্য দেখা যাবে। এটিই স্কয়ারে প্রথম কোনো আফ্রিকান ব্যক্তিত্বের ভাস্কর্য।
চিলেমবুইকে চেনেন না হয়তো অনেকেই। ২০ শতকে আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চারদের মধ্যে প্রথম সারির একজন। ১৯১৫ সালে মালাউইর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা তিনি। সেই আন্দোলনের মেয়াদ কম হলেও চিলেমবুইর প্রভাব ছড়িয়ে গিয়েছিল পুরো আফ্রিকায়। মালাউইর দক্ষিণে ১৮৭০-এর প্রথম দিকে চিলেমবুইর জন্ম, শৈশবেই তিনি ‘আফ্রিকা, আফ্রিকানদের’ এ দর্শনে আকৃষ্ট হন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মিশনারি প্রতিষ্ঠানে পড়তে যান এবং সেখানে আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন দেখেন।
কয়েক বছর পর মালাউইতে ফিরে নিজ দেশে উপনিবেশবাদীদের নিপীড়নের প্রতি সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশরা তখন মালাউইবাসীদের কারখানা, ক্ষেতে অমানুষিক পরিশ্রমে বাধ্য করত, চালানো হতো বর্বর নির্যাতন। শুরুতে এর প্রতিবাদে কলম হাতে নিলেও একপর্যায়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকেন চিলেমবুই ও সমর্থকরা। যদিও ব্রিটিশরা তা ব্যর্থ করে দেয় এবং তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ইতিহাসবিদদের মতে, চিলেমবুই আফ্রিকায় উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে দেন এবং সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই উপনিবেশমুক্ত হয় আফ্রিকা।
বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে সন্তানের জন্মদানে সবচেয়ে বেশি খরচ সিলেটে এবং সবচেয়ে কম খরচ বরিশালে। সিলেটে খরচ হয় ৩০ হাজার ৫৫৭ টাকা ও রাজশাহীতে খরচ হয় ১৫ হাজার ৭০৫ টাকা। সরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় সিলেটেই ১৭ হাজার ৮৩৭ টাকা; আর সবচেয়ে কম খরচ হয় রংপুরে ৭ হাজার ৩১ টাকা। নন-গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশনএনজিওতে সবচেয়ে বেশি খরচ ২১ হাজার ৪৭৬ টাকা, সিলেটে এবং কম খরচ ১২ হাজার ৮১ টাকা, রংপুরে।
গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবনে দুপুর ২টায় এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। তাতে মেসিভ বোম অব সি-সেকশন ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ: আ হাউজহোল্ড লেভেল অ্যানালাইসিস ২০০৪-২০১৮ শীর্ষক জরিপের ফল তুলে ধরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজবিআইডিএস। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে জরিপের ফল তুলে ধরেন পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশন ও বিআইডিএসের গবেষণা ফেলো ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালে সাধারণ (স্বাভাবিক বা ধাত্রী-সহায়তার) প্রসব ও প্রাতিষ্ঠানিক (চিকিৎসক-সহায়তার) প্রসব বাড়ার সঙ্গে সি-সেকশনের হারও বাড়ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন হয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজার। প্রতি ১০টি সি-সেকশনের অন্তত ছয়টি অপ্রয়োজনীয় ছিল। সি-সেকশন বাড়ার ফলে অনেক পরিবারকে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। বাড়িতে স্বাভাবিক প্রসবে ১ হাজার ৩০০ টাকা, ধাত্রী-সহায়তার স্বাভাবিক প্রসবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার বেশি এবং সি-সেকশনে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অপারেশন করা নারীদের থেকে তথ্য নেয়। ২৭ হাজার ৩২৮ নারীর মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে অন্তর্ভুক্ত নারীদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছর।
জরিপে জানানো হয়, দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে ডেলিভারিতে সরকারি হাসপাতালে ঢাকায় ১৩ হাজার ৩৮৩ টাকা, চট্টগ্রামে ১৫ হাজার ৮৩১, বরিশালে ১৬ হাজার ৮৪৬, খুলনায় ১১ হাজার ৮৯৩, রাজশাহীতে ১০ হাজার ৯৪১, সিলেটে ১৭ হাজার ৮৩৭, রংপুরে ৭ হাজার ৩১, ময়মনসিংহে ১১ হাজার ৫১৬ টাকা খরচ হয়।
বেসরকারি হাসপাতালে ঢাকায় ২৩ হাজার ১৬৮, চট্টগ্রামে ২৫ হাজার ৫০৭, বরিশালে ২৮ হাজার ৯৫৯, খুলনায় ১৫ হাজার ৭২৯, রাজশাহীতে ১৫ হাজার ৭০৫, সিলেটে ৩০ হাজার ৫৫৭, রংপুরে ১৮ হাজার ২৩০, ময়মনসিংহে ১৯ হাজার ৯৭৩ টাকা খরচ হয়। এনজিও’র হাসপাতালগুলোতে ঢাকায় ২০ হাজার ৪৯৮, চট্টগ্রামে ১৫ হাজার ২৬৯, বরিশালে ১৫ হাজার ৮২৩, খুলনায় ১৪ হাজার ৭১০, রাজশাহীতে ১০ হাজার ৩৪৬, সিলেটে ২১ হাজার ৪৭৬, রংপুরে ১২ হাজার ৮১, ময়মনসিংহে ১৫ হাজার ৬১ টাকা খরচ হয়।
এই অপারেশন হার ২০০৪ সালে ছিল ৩ দশমিক ৯৯ ভাগ থেকে ২০১৭-২০১৮ সালে ৩৩ দশমিক ২২ ভাগ।
অনলাইনে যুক্ত হয়ে নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক বলেন, গ্রামেও সি-সেকশন বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ার কারণ চিকিৎসকদের চাপ। তাদের চাপে পড়েই পরিবারগুলো সি-সেকশনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তদের সংখ্যা বেশি।
শিরিন হক বলেন, ‘আগে আমাদের দেশের ধাত্রীপ্রথা ছিল। সেটা হারিয়ে গেছে। সন্তান জন্ম নেওয়ার লক্ষণগুলো এসব ধাত্রীই ভালোভাবে ধরতে পারেন, চিহ্নিত করতে পারেন। এখন ডাক্তারকে অগ্রিম টাকা দিতে হয়। না হলে তারা আসতে চান না।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা হচ্ছে, অপারেশন ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে এই হার ২০১৭-১৮ সালে ৩৩ শতাংশ ছিল। একই সময়ে ভারতে ২২ শতাংশ, পাকিস্তানে ২২ শতাংশ, নেপালে ১৬ ও মিয়ানমারে ১৭ শতাংশ ছিল।
বছরভিত্তিক হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০০৩-০৪ সালে ৫৪১৩ জনের মধ্যে ২১৬ জন অর্থাৎ ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছিল। ২০০৭ সালে ছিল ৪৯০৩ জনের মধ্যে ৪২২ জন অর্থাৎ ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০১১ সালে ছিল ৭৩৪১ জনের মধ্যে ১১০৮ জন অর্থাৎ ১৫ দশমিক ০৯ শতাংশ।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে ৪৬২৬ জনের মধ্যে ১১২২ জন অর্থাৎ ২৪ দশমিক ২৫ শতাংশ ছিল। আর ২০১৭-১৮ সালে ছিল ৫০৪৫ জনের মধ্যে ১৬৭৬ জনের মধ্যে অর্থাৎ ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি দেশে মোট শিশুর জন্মের ১৫ শতাংশের বেশি সি-সেকশন হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে সি-সেকশনের হার প্রায় ৪ শতাংশ ছিল। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ শতাংশের বেশি। গ্রামের চেয়ে শহরের নারীদের বেশি সি-সেকশন হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই প্রবণতা বেশি।
বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ প্রতিবেদন অনুসারে, শহরের ৪৪ শতাংশ ও গ্রামের ২৯ শতাংশ মায়ের সি-সেকশন হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে প্রসবের ৫২ শতাংশ ও সরকারি হাসপাতালে ১১ শতাংশ সি-সেকশন হচ্ছে। ২০ বছর থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে সি-সেকশনের হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। সি-সেকশনে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এমন মায়ের প্রায় ৬০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশি পড়াশোনা করেছেন।
ইউক্রেনের যে চার অঞ্চল এখন রাশিয়া ও তার মিত্রদের দখলে আছে সেখানে পাঁচ দিন ধরে চলা গণভোটে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে বিপুল জনরায় এসেছে। গণভোট থেকে প্রাপ্ত আংশিক ফলাফলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ব্যাপকসংখ্যক মানুষ রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব অঞ্চলে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রুশপন্থি বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা খবর দিচ্ছে যে, ৯৯.২৩ শতাংশ মানুষ রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। আগামী শুক্রবারই প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনের মোট ভূখ-ের প্রায় ১৫ শতাংশের এ চার এলাকাকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন।
এদিকে এ গণভোটকে ‘জালিয়াতি’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন এবং তার মিত্র দেশগুলো। এ গণভোট আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে এর প্রক্রিয়া স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে অনুষ্ঠিত গণভোটকে ‘কলঙ্কজনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্স ও বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলোতে যে তথাকথিত গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটির মাধ্যমে সেসব জায়গাকে রাশিয়া তাদের অংশ করে নিতে ব্যবহার করতে পারে। দখলকৃত অঞ্চলে মস্কো যেসব কর্মকর্তাকে বসিয়েছে, তারা দাবি করছে এ গণভোটে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সবাই রাশিয়ার অংশে যাওয়ার জন্য মত দিয়েছে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলে জাপোরিশা অঞ্চলে এ গণভোট আয়োজন করা হয়। গণভোট থেকে প্রাপ্ত আংশিক ফলাফলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ব্যাপকসংখ্যক মানুষ রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে একই ধরনের একটি গণভোটের আয়োজনের মাধ্যমে পুতিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে গণভোটও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়নি।
তবে গণভোটকে সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, এসব অঞ্চলে বসবাসরত জাতিগত রাশিয়ান এবং রাশিয়ান ভাষাভাষী জনগণের ওপর দমনপীড়ন বন্ধ করার জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে। যদিও কোনো ধরনের দমনপীড়নের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে ইউক্রেন।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া যদি এ চারটি অঞ্চলে নিজেদের অংশ করে নেয়, তখন যুদ্ধ আরেকটি ভিন্ন এবং বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে যাবে। কারণ এসব অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য ইউক্রেন যখন যুদ্ধ করবে তখন সেটিকে রাশিয়া তাদের সার্বভৌম ভূমিতে হামলা হিসেবে বিবেচনা করবে। চারটি অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টাকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জাতিসংঘ সনদের চরম লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, দখল করা এলাকাগুলোতে এ ধরনের প্রহসনকে গণভোটের নকলও বলা যায় না।
এ গণভোট বাস্তবায়নের সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা জড়িত তাদের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্রিটেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আহ্বান জানিয়েছে যাতে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইউক্রেনের এসব অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ করে নিলে সেটিকে পাশ্চাত্য কখনোই স্বীকৃতি দেবে না। গণভোট নিয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, সব দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।
কিয়েভ থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জেমস ওয়াটার হাউজের বিশ্লেষণ হচ্ছে, চারটি অঞ্চলে গণভোটের যে ফল আসবে সেটিতে অবাক হওয়ার মতো তেমন কিছুই থাকবে না। তার মতে, এ গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের অবস্থানের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এসব অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ করে নেওয়ার মাধ্যমে এখানে বসবাসরত ইউক্রেনীয়দের ‘স্বাধীনতা’ দেওয়ার জন্য রাশিয়ার যে চেষ্টা করছে সেটির ধারাবাহিকতা হচ্ছে এ গণভোট।
বগুড়ার শেরপুরে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা মর্তুজা কাওসার অভিকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শেরপুর উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত অভি পৌর এলাকার খন্দকার পাড়ার মৃত হোসাইন কাওসার অভির ছেলে। তিনি শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক পদে ছিলেন। শেরপুর থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সোহাগ নামের এক যুবলীগ নেতার সঙ্গে অভি কিছুদিন আগে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝামেলা ছিল। এ নিয়ে অভি সোহাগকে মারপিট করেছিল। এতে দলের মধ্যে কোন্দলের সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অভি মোটরসাইকেল মেরামতের জন্য উপজেলা পরিষদের সামনের সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ওত পেতে থাকা ১০/১২ জনের দুর্বৃত্তদের একটি দল তার ওপর দেশীয় ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান খন্দকার জানান, ঘটনার পরপরই হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহত অভির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সারোয়ার রহমান মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সালাম হোসেন মর্তুজা কাওসার অভি পৌর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি তার ওপর সংঘটিত ছুরি হামলা নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা রুশদি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কিন্তু বেঁচে ফেরায় তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া রুশদির একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় মঞ্চে তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার। নিউ জার্সির এই বাসিন্দা সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে নিজের রক্তের ওপর লুটিয়ে পড়েন রুশদি। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় এই লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, ‘আমি অনেকটাই ভাল হয়েছি। যা ঘটেছিল তা বিবেচনা করে দেখলে খুব একটা খারাপ নেই। বড় ক্ষতগুলো সেরে গেছে। তবে বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও তালুর নিচের অর্ধেকটা অনুভব করছি। আমাকে প্রচুর হাতের থেরাপি নিতে হচ্ছে। যদিও আমাকে বলা হয়েছে শারীরিকভাবে আমি উন্নতি করছি’।
রুশদি জানান, আঙ্গুলের কিছু অংশে অনুভূতি না থাকায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি। হাঁটতে পারছি চারপাশে। তবে আমার শরীরে এমন কিছু অংশ আছে যেগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এটা ছিল একটি মারাত্মক আক্রমণ’। তিনি জানান, ছুরি হামলার ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এর ফলে তাকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন রুশদি। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন এই লেখক। এই উপন্যাস লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। উপন্যাসটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা।
উপন্যাসটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ঘোষণা করেন ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার। রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হচ্ছে তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই নারী কীভাবে একটি শহরকে পরিচালনা করেছেন, সে গল্পই উঠে এসেছে বইটিতে।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।