
নববধূ বন্যা রানী রায়কে সঙ্গে নিয়ে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার সময় গত রবিবার নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হওয়া হিমালয় চন্দ্র রায়ের মরদেহ অবশেষে উদ্ধার হয়েছে। চার দিন পর গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীর পানির নিচে বালুচাপা অবস্থায় থাকা তার লাশ উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা। এ নিয়ে পঞ্চগড়ের আলোচিত এ নৌকাডুবির ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৬৯ জনে দাঁড়াল বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও নৌকাডুবির ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান দীপঙ্কর রায়।
এর আগে গত রবিবার দুপুরের ওই নৌকাডুবির ঘটনায় গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৮। এখনো নিখোঁজ আছেন তিনজন। এ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধারে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের রংপুর, রাজশাহী ও কুড়িগ্রামের তিনটি ডুবুরি দল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল লাশ উদ্ধার হওয়া হিমালয় চন্দ্র রায়ের বাড়ি বোদার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের খালপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার বীরেন্দ্র নাথ রায়ের ছেলে। দিনাজপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র হিমালয়ের গত ৩ আগস্ট পাশের ঝলইশালশিরি ইউনিয়নের বড়ুয়াপাড়া এলাকার রবীন চন্দ্র রায়ের মেয়ে বন্যার সঙ্গে বিয়ে হয়।
গত রবিবার দুপুরে বোদার মাড়েয়া বাজারের পাশে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকা বড়শশী ইউনিয়নের বরদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। ঘাট থেকে কিছুদূর যাওয়ার পর নৌকাটি ডুবে যায়। যাতে যাত্রী হিসেবে ছিলেন হিমালয় ও তার স্ত্রী বন্যা। নৌকাটি ডুবে যাওয়ার পর উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের পরনের কাপড় ছুড়ে ফেলে বন্যা সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও হিমালয়ের খোঁজ মিলছিল না। এমন পরিস্থিতিতে তাকে ফিরে পেতে আউলিয়ার ঘাটে গঙ্গাপূজা করে আসছিলেন স্বজনরা।
হিমালয়ের খোঁজে করতোয়ার তীরে চার দিন অপেক্ষমাণ ছিলেন তার দুলাভাই গ্রি বাবু। শ্যালকের খোঁজে মধ্যরাত অবধি করতোয়ার তীরে অপেক্ষা করে বাড়ি ফিরে ভোরে আবারও আসতেন করতোয়াপাড়ে। গতকাল হিমালয়ের লাশ পেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ছিল হিমালয়ের খোঁজ পাবই। অবশেষে পেলাম, কিন্তু অর্ধগলিত। স্বামীর প্রতীক্ষায় পানিতে চোখ ভাসাচ্ছে বন্যা। বাকরুদ্ধ, কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।’
হিমালয়ের বাবা বীরেন্দ্র নাথ রায় কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ছেলের মাত্র দেড় মাস আগে বিয়ে হয়েছে বন্যার সঙ্গে। হিমালয় মরে গেছে, সব শেষ। কিন্তু বউমার কী হবে? সান্ত¡না এটুকুই যে, সৎকার করতে পারব। বাবা হয়ে ছেলের লাশের সৎকার মেনে নিতে পারছি না।’
এদিকে গতকালও দিনভর প্রিয়জনকে ফিরে পেতে করতোয়াপাড়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় নিখোঁজদের স্বজনদের। এছাড়া পঞ্চগড় ও এর আশপাশ জেলাগুলো থেকেও লোকজন নৌকাডুবির ঘটনাস্থলটি একবারের জন্য দেখতে আসেন। মহালয়ায় পুণ্য অর্জনের জন্য মা আলো রানী (২৫) দুই মেয়ে দেড় বছরের জ্যোতি ও চার বছরের জয়া রানীকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয়েছিলেন বরদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়ার অনুষ্ঠান ও মন্দির দর্শনের জন্য। কিন্তু নদী পার হওয়ার সময় মাঝনদীতে নৌকা উল্টে অন্য অনেকের সঙ্গে দুই সন্তানসহ পানিতে পড়ে যান আলো। সাঁতরে তীরে ওঠেন তিনি। ওই দিনই ঘটনাস্থলেই খুঁজে পাওয়া জ্যোতির লাশ। কিন্তু জয়া রানীকে আর পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত যে তিনজন নিখোঁজ তাদের মধ্যে জয়া একজন।
দুই সন্তান জ্যোতি ও জয়াকে হারিয়ে নির্বাক-নিথর তাদের বাবা পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামের বীরেন্দ্র নাথ রায় ও মা আলো রানী। জ্যোতি আর জয়ার মামা নীলকুমার রায় বলেন, ‘জয়ার খোঁজে ঘটনার দিন থেকে ঘুরছি আউলিয়ার ঘাট এলাকায়। কিন্তু আজ (গতকাল বুধবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত লাশ পাওয়া যায়নি। প্রতিদিন সকালে আসি আর রাতে বিফল মনোরথ নিয়ে বাড়িতে ফিরি। ভগ্নিপতি আর বোনকে সান্ত¡না দেওয়ার ভাষা নেই। তাদের বাড়িতে গেলে জড়িয়ে ধরে বলে আমার জয়ার লাশ কই? জয়ার লাশ এনে দাও।’
নিখোঁজ অন্য দুজনের মধ্যে একজন বোদার সাকোয়া ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের খগেন্দ্রনাথ বর্মণের ছেলে সুরেন, আরেকজন একই উপজেলার ছত্র শিকারপুর হাতিডোবা গ্রামের মদন চন্দ্রের ছেলে ভূপেন। তাদের স্বজনরা দুর্ঘটনার পর থেকে প্রতিদিন আউলিয়ার ঘাট এলাকায় উ™£ান্তের মতো ঘুরছেন। অন্যদিকে তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
এদিকে নৌকাডুবির ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় আরও তিন দিন বাড়ানো হয়েছে। এ কমিটিকে গত মঙ্গলবারের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর কুমার রায় বলেন, ‘একই সময়ে দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা, মনিটরিং, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা প্রদান ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদানে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছি। তাই তদন্ত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য অতিরিক্ত তিন কার্যদিবস সময় বৃদ্ধির আবেদন করলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. জহুরুল ইসলাম আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন।’
আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাজেটে দেওয়া বরাদ্দের অতিরিক্ত আরও প্রায় ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা চেয়েছে পুলিশ। একই সঙ্গে জ্বালানি খাতে বরাদ্দের শতভাগ ব্যবহার করার অনুমতি চেয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এ বাহিনী। সম্প্রতি অর্থ বিভাগে চিঠি দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য জ্বালানি, গোয়েন্দা, অপারেশনাল ও নিরাপত্তাসামগ্রী কেনার জন্য এ অর্থ প্রয়োজন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, পুলিশের চাওয়া অনুযায়ী অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে।
অর্থ বিভাগে দেওয়া চিঠিতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ বাহিনীর যেসব দাঙ্গা-দমনসামগ্রী ও অপারেশনাল সামগ্রী রয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। দাঙ্গা-দমনসামগ্রী ও অপারেশনাল সামগ্রী পুলিশে সংযুক্ত না হলে আগামী সংসদ নির্বাচন এবং নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের জানমালের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া দুরূহ হবে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও বিঘ্নিত হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণের নিমিত্ত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার, অপারেশনাল ও নিরাপত্তাসামগ্রী ক্রয়ের লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেটে অতিরিক্ত ১ হাজার ২২৫ কোটি ৯৯ লাখ ৮৬ হাজার ৬১০ টাকা প্রয়োজন।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জননিরাপত্তা খাতের জন্য সরকার ২৪ হাজার ৫৯৪ কোটি বরাদ্দ দিয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট ছিল ২১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের চেয়ে এবার ১ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। জননিরাপত্তা খাতে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, যার আওতায় রয়েছে পুলিশ, বর্ডার গার্ড, কোস্টগার্ড এবং আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। রয়েছে সুরক্ষা সেবা বিভাগও।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, অতিরিক্ত যে অর্থ চেয়েছে পুলিশ তার মধ্যে ১৫৮ কোটি টাকার অস্ত্র ও গোলাবারুদ, ৭৭ কোটি টাকার নিরাপত্তাসামগ্রী, ২২৬ কোটি টাকার মোটরযান, ৫৪০ কোটি টাকার অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি, ১২ কোটি টাকার তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি সরঞ্জামাদি, ৪৪ লাখ টাকার কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক, ৭ কোটি টাকার কম্পিউটার সফটওয়্যার, ২০৪ কোটি টাকার পেট্রোল, অয়েল, লুব্রিকেন্ট কেনা হবে।
এ ছাড়াও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে জ্বালানি খাতে বরাদ্দের শতভাগ ব্যবহার করার অনুমতি চেয়েছে পুলিশ। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দের ৮০ ভাগ ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও রাজনৈতিক কর্মসূচি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে পুলিশের তৎপরতা, নবসৃষ্ট কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন হওয়ায় এবং মোটরযান বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়ায় জ্বালানি খাতে বাজেটের অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।
চলতি অর্থবছরের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয় পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্টের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের কেন্দ্রস্থল ট্রাফালগার স্কয়ার দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য-ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত। এবার এ স্কয়ারে একটি নতুন ভাস্কর্য বসানো হয়েছে। তবে এটি ব্রিটিশ কোনো রাজা-রানী কিংবা যুদ্ধজয়ী বীরের ভাস্কর্য নয়, বরং ব্রিটিশবিরোধী এক আফ্রিকান নেতার ভাস্কর্য। আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ মালাউই, দেশটির ব্রিটিশবিরোধী ব্যক্তিত্ব জন চিলেমবুইর ভাস্কর্য এটি। ব্রোঞ্জে গড়া ৫ মিটার উঁচু চিলেমবুইর ভাস্কর্যটির নাম ‘অ্যান্টিলোপ’-এর মানে হলো আফ্রিকার দুরন্ত হরিণ। এটি তৈরি করেছেন মালাউইর ভাস্কর স্যামসন কামবালু। তার তৈরি ভাস্কর্যটি স্থান করে নিয়েছে ট্রাফালগার স্কয়ারের ফোর্থ প্লিন্থ নামে একটি বেদিতে। ২০০৩ সালে এ বেদিটি আসলে তৈরি করা হয়েছিল রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের মূর্তি বসানোর জন্য। তবে তহবিলের অভাবে সেটা আর বসানো হয়নি। এরপর থেকে বেদি কর্র্তৃপক্ষ সেখানে বিশ্বের নানা প্রান্তের নির্বাচিত ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমোদন দিয়ে আসছে। বেদিতে নির্বাচিত ভাস্কর্যটির মেয়াদ দুই বছর। অর্থাৎ আগামী দুই বছর ট্রাফালগার স্কয়ারে জন চিলেমবুইর ভাস্কর্য দেখা যাবে। এটিই স্কয়ারে প্রথম কোনো আফ্রিকান ব্যক্তিত্বের ভাস্কর্য।
চিলেমবুইকে চেনেন না হয়তো অনেকেই। ২০ শতকে আফ্রিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চারদের মধ্যে প্রথম সারির একজন। ১৯১৫ সালে মালাউইর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা তিনি। সেই আন্দোলনের মেয়াদ কম হলেও চিলেমবুইর প্রভাব ছড়িয়ে গিয়েছিল পুরো আফ্রিকায়। মালাউইর দক্ষিণে ১৮৭০-এর প্রথম দিকে চিলেমবুইর জন্ম, শৈশবেই তিনি ‘আফ্রিকা, আফ্রিকানদের’ এ দর্শনে আকৃষ্ট হন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মিশনারি প্রতিষ্ঠানে পড়তে যান এবং সেখানে আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়ন দেখেন।
কয়েক বছর পর মালাউইতে ফিরে নিজ দেশে উপনিবেশবাদীদের নিপীড়নের প্রতি সোচ্চার হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশরা তখন মালাউইবাসীদের কারখানা, ক্ষেতে অমানুষিক পরিশ্রমে বাধ্য করত, চালানো হতো বর্বর নির্যাতন। শুরুতে এর প্রতিবাদে কলম হাতে নিলেও একপর্যায়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকেন চিলেমবুই ও সমর্থকরা। যদিও ব্রিটিশরা তা ব্যর্থ করে দেয় এবং তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ইতিহাসবিদদের মতে, চিলেমবুই আফ্রিকায় উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে দেন এবং সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই উপনিবেশমুক্ত হয় আফ্রিকা।
বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের মাধ্যমে সন্তানের জন্মদানে সবচেয়ে বেশি খরচ সিলেটে এবং সবচেয়ে কম খরচ বরিশালে। সিলেটে খরচ হয় ৩০ হাজার ৫৫৭ টাকা ও রাজশাহীতে খরচ হয় ১৫ হাজার ৭০৫ টাকা। সরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় সিলেটেই ১৭ হাজার ৮৩৭ টাকা; আর সবচেয়ে কম খরচ হয় রংপুরে ৭ হাজার ৩১ টাকা। নন-গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশনএনজিওতে সবচেয়ে বেশি খরচ ২১ হাজার ৪৭৬ টাকা, সিলেটে এবং কম খরচ ১২ হাজার ৮১ টাকা, রংপুরে।
গতকাল বুধবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে নিজস্ব ভবনে দুপুর ২টায় এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। তাতে মেসিভ বোম অব সি-সেকশন ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ: আ হাউজহোল্ড লেভেল অ্যানালাইসিস ২০০৪-২০১৮ শীর্ষক জরিপের ফল তুলে ধরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজবিআইডিএস। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে জরিপের ফল তুলে ধরেন পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশন ও বিআইডিএসের গবেষণা ফেলো ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালে সাধারণ (স্বাভাবিক বা ধাত্রী-সহায়তার) প্রসব ও প্রাতিষ্ঠানিক (চিকিৎসক-সহায়তার) প্রসব বাড়ার সঙ্গে সি-সেকশনের হারও বাড়ছে। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে অপ্রয়োজনীয় সি-সেকশন হয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজার। প্রতি ১০টি সি-সেকশনের অন্তত ছয়টি অপ্রয়োজনীয় ছিল। সি-সেকশন বাড়ার ফলে অনেক পরিবারকে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। বাড়িতে স্বাভাবিক প্রসবে ১ হাজার ৩০০ টাকা, ধাত্রী-সহায়তার স্বাভাবিক প্রসবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার বেশি এবং সি-সেকশনে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে।
বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে অপারেশন করা নারীদের থেকে তথ্য নেয়। ২৭ হাজার ৩২৮ নারীর মধ্যে এই জরিপ চালানো হয়। জরিপে অন্তর্ভুক্ত নারীদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছর।
জরিপে জানানো হয়, দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে ডেলিভারিতে সরকারি হাসপাতালে ঢাকায় ১৩ হাজার ৩৮৩ টাকা, চট্টগ্রামে ১৫ হাজার ৮৩১, বরিশালে ১৬ হাজার ৮৪৬, খুলনায় ১১ হাজার ৮৯৩, রাজশাহীতে ১০ হাজার ৯৪১, সিলেটে ১৭ হাজার ৮৩৭, রংপুরে ৭ হাজার ৩১, ময়মনসিংহে ১১ হাজার ৫১৬ টাকা খরচ হয়।
বেসরকারি হাসপাতালে ঢাকায় ২৩ হাজার ১৬৮, চট্টগ্রামে ২৫ হাজার ৫০৭, বরিশালে ২৮ হাজার ৯৫৯, খুলনায় ১৫ হাজার ৭২৯, রাজশাহীতে ১৫ হাজার ৭০৫, সিলেটে ৩০ হাজার ৫৫৭, রংপুরে ১৮ হাজার ২৩০, ময়মনসিংহে ১৯ হাজার ৯৭৩ টাকা খরচ হয়। এনজিও’র হাসপাতালগুলোতে ঢাকায় ২০ হাজার ৪৯৮, চট্টগ্রামে ১৫ হাজার ২৬৯, বরিশালে ১৫ হাজার ৮২৩, খুলনায় ১৪ হাজার ৭১০, রাজশাহীতে ১০ হাজার ৩৪৬, সিলেটে ২১ হাজার ৪৭৬, রংপুরে ১২ হাজার ৮১, ময়মনসিংহে ১৫ হাজার ৬১ টাকা খরচ হয়।
এই অপারেশন হার ২০০৪ সালে ছিল ৩ দশমিক ৯৯ ভাগ থেকে ২০১৭-২০১৮ সালে ৩৩ দশমিক ২২ ভাগ।
অনলাইনে যুক্ত হয়ে নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক বলেন, গ্রামেও সি-সেকশন বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ার কারণ চিকিৎসকদের চাপ। তাদের চাপে পড়েই পরিবারগুলো সি-সেকশনের সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তদের সংখ্যা বেশি।
শিরিন হক বলেন, ‘আগে আমাদের দেশের ধাত্রীপ্রথা ছিল। সেটা হারিয়ে গেছে। সন্তান জন্ম নেওয়ার লক্ষণগুলো এসব ধাত্রীই ভালোভাবে ধরতে পারেন, চিহ্নিত করতে পারেন। এখন ডাক্তারকে অগ্রিম টাকা দিতে হয়। না হলে তারা আসতে চান না।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা হচ্ছে, অপারেশন ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশে এই হার ২০১৭-১৮ সালে ৩৩ শতাংশ ছিল। একই সময়ে ভারতে ২২ শতাংশ, পাকিস্তানে ২২ শতাংশ, নেপালে ১৬ ও মিয়ানমারে ১৭ শতাংশ ছিল।
বছরভিত্তিক হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০০৩-০৪ সালে ৫৪১৩ জনের মধ্যে ২১৬ জন অর্থাৎ ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ ছিল। ২০০৭ সালে ছিল ৪৯০৩ জনের মধ্যে ৪২২ জন অর্থাৎ ৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০১১ সালে ছিল ৭৩৪১ জনের মধ্যে ১১০৮ জন অর্থাৎ ১৫ দশমিক ০৯ শতাংশ।
২০১৪ সালে বাংলাদেশে ৪৬২৬ জনের মধ্যে ১১২২ জন অর্থাৎ ২৪ দশমিক ২৫ শতাংশ ছিল। আর ২০১৭-১৮ সালে ছিল ৫০৪৫ জনের মধ্যে ১৬৭৬ জনের মধ্যে অর্থাৎ ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি দেশে মোট শিশুর জন্মের ১৫ শতাংশের বেশি সি-সেকশন হওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে সি-সেকশনের হার প্রায় ৪ শতাংশ ছিল। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ শতাংশের বেশি। গ্রামের চেয়ে শহরের নারীদের বেশি সি-সেকশন হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই প্রবণতা বেশি।
বিডিএইচএস ২০১৭-১৮ প্রতিবেদন অনুসারে, শহরের ৪৪ শতাংশ ও গ্রামের ২৯ শতাংশ মায়ের সি-সেকশন হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালে প্রসবের ৫২ শতাংশ ও সরকারি হাসপাতালে ১১ শতাংশ সি-সেকশন হচ্ছে। ২০ বছর থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে সি-সেকশনের হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। সি-সেকশনে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এমন মায়ের প্রায় ৬০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশি পড়াশোনা করেছেন।
ইউক্রেনের যে চার অঞ্চল এখন রাশিয়া ও তার মিত্রদের দখলে আছে সেখানে পাঁচ দিন ধরে চলা গণভোটে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পক্ষে বিপুল জনরায় এসেছে। গণভোট থেকে প্রাপ্ত আংশিক ফলাফলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, ব্যাপকসংখ্যক মানুষ রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত এসব অঞ্চলে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক অঞ্চলে রুশপন্থি বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা খবর দিচ্ছে যে, ৯৯.২৩ শতাংশ মানুষ রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে। আগামী শুক্রবারই প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনের মোট ভূখ-ের প্রায় ১৫ শতাংশের এ চার এলাকাকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দিতে পারেন।
এদিকে এ গণভোটকে ‘জালিয়াতি’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন এবং তার মিত্র দেশগুলো। এ গণভোট আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে এর প্রক্রিয়া স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র সেখানে অনুষ্ঠিত গণভোটকে ‘কলঙ্কজনক’ অ্যাখ্যা দিয়ে জাতিসংঘে নিন্দা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্স ও বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলোতে যে তথাকথিত গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটির মাধ্যমে সেসব জায়গাকে রাশিয়া তাদের অংশ করে নিতে ব্যবহার করতে পারে। দখলকৃত অঞ্চলে মস্কো যেসব কর্মকর্তাকে বসিয়েছে, তারা দাবি করছে এ গণভোটে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় সবাই রাশিয়ার অংশে যাওয়ার জন্য মত দিয়েছে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলে জাপোরিশা অঞ্চলে এ গণভোট আয়োজন করা হয়। গণভোট থেকে প্রাপ্ত আংশিক ফলাফলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ব্যাপকসংখ্যক মানুষ রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে একই ধরনের একটি গণভোটের আয়োজনের মাধ্যমে পুতিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে গণভোটও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়নি।
তবে গণভোটকে সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, এসব অঞ্চলে বসবাসরত জাতিগত রাশিয়ান এবং রাশিয়ান ভাষাভাষী জনগণের ওপর দমনপীড়ন বন্ধ করার জন্য এ আয়োজন করা হয়েছে। যদিও কোনো ধরনের দমনপীড়নের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে ইউক্রেন।
বিবিসি বলছে, রাশিয়া যদি এ চারটি অঞ্চলে নিজেদের অংশ করে নেয়, তখন যুদ্ধ আরেকটি ভিন্ন এবং বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে যাবে। কারণ এসব অঞ্চল ফিরে পাওয়ার জন্য ইউক্রেন যখন যুদ্ধ করবে তখন সেটিকে রাশিয়া তাদের সার্বভৌম ভূমিতে হামলা হিসেবে বিবেচনা করবে। চারটি অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টাকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জাতিসংঘ সনদের চরম লঙ্ঘন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, দখল করা এলাকাগুলোতে এ ধরনের প্রহসনকে গণভোটের নকলও বলা যায় না।
এ গণভোট বাস্তবায়নের সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা জড়িত তাদের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্রিটেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আহ্বান জানিয়েছে যাতে রাশিয়ার ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ইউক্রেনের এসব অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ করে নিলে সেটিকে পাশ্চাত্য কখনোই স্বীকৃতি দেবে না। গণভোট নিয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, সব দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।
কিয়েভ থেকে বিবিসির সংবাদদাতা জেমস ওয়াটার হাউজের বিশ্লেষণ হচ্ছে, চারটি অঞ্চলে গণভোটের যে ফল আসবে সেটিতে অবাক হওয়ার মতো তেমন কিছুই থাকবে না। তার মতে, এ গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের অবস্থানের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এসব অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ করে নেওয়ার মাধ্যমে এখানে বসবাসরত ইউক্রেনীয়দের ‘স্বাধীনতা’ দেওয়ার জন্য রাশিয়ার যে চেষ্টা করছে সেটির ধারাবাহিকতা হচ্ছে এ গণভোট।
বগুড়ার শেরপুরে পৌর আওয়ামী লীগ নেতা মর্তুজা কাওসার অভিকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শেরপুর উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে। নিহত অভি পৌর এলাকার খন্দকার পাড়ার মৃত হোসাইন কাওসার অভির ছেলে। তিনি শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক পদে ছিলেন। শেরপুর থানা-পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সোহাগ নামের এক যুবলীগ নেতার সঙ্গে অভি কিছুদিন আগে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ঝামেলা ছিল। এ নিয়ে অভি সোহাগকে মারপিট করেছিল। এতে দলের মধ্যে কোন্দলের সৃষ্টি হয়। ধারণা করা হচ্ছে, এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অভি মোটরসাইকেল মেরামতের জন্য উপজেলা পরিষদের সামনের সড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ওত পেতে থাকা ১০/১২ জনের দুর্বৃত্তদের একটি দল তার ওপর দেশীয় ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা চালায়। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান খন্দকার জানান, ঘটনার পরপরই হত্যাকাণ্ডের স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। নিহত অভির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সারোয়ার রহমান মিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সালাম হোসেন মর্তুজা কাওসার অভি পৌর আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমে সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সরকার নানারকম প্রস্তুতি নিয়েছে বলে দাবি করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের যে পরিস্থিতি তাতে গ্রীষ্মে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বেশি দাম দিয়েও কৃষক ঠিকমতো বিদ্যুৎ না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়তে পারে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ্বালানি তেল, সার ও বীজের দাম বেড়েছে। এখন আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। তার মানে চারদিক থেকে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এর ফলে কৃষকের ‘সিগনিফিকেন্ট লস’ হবে। এভাবে দাম বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বোরো উপকরণনির্ভর ফসল। কিন্তু উপকরণের দাম এভাবে বাড়তে থাকলে, কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেললে; সে ঠিকমতো উপকরণ ব্যবহার করতে পারবে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। উৎপাদন খারাপ হলে চালের ঘাটতি হবে। এমনিতেই এখন প্রায় ৭০ লাখ টন গম ও ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। এরমধ্যে যদি চাল আমদানি করতে হয়; তাহলে খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
ড. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘সারাবিশ্ব নানারকম সংকটে ভুগছে। এ অবস্থায় আমাদের অন্তত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ রয়েছে। সেজন্য যে পরিমাণ দাম বেড়েছে সে পরিমাণ নগদ অর্থ সহায়তা দিতে হবে কৃষককে। ২০০৯-১০ সালের দিকে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এক কোটির বেশি কৃষককে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা সরাসরি নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। এজন্য তারা ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও খুলেছিলেন। তাদের সেই অ্যাকাউন্ট এখনো আছে, কিন্তু সহায়তা দেওয়া হয় না। এখন যদি সেই সহায়তা দেওয়া হয় তাহলে কৃষক আবার উৎসাহ পাবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, প্রতি বছর সেচ মৌসুমে (ফেব্রুয়ারি থেকে মে) বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায়। গত মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছর সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। গত বছরের তুলনায় এ বছর সেচ সংযোগের সংখ্যা ১ হাজার ৯১টি বেড়ে মোট ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫৯টি হয়েছে। এজন্য বিদ্যুৎ লাগবে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট।
সেচ মৌসুমে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিদ্যুতের চাহিদার সঙ্গে সমন্বয় রেখে উৎপাদনও বাড়ানো হচ্ছে। সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতি ভালো হবে।’
বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস, ৭৭ হাজার ৪০০ টন ফার্নেস অয়েল এবং ৬৬ হাজার ১০০ টন ডিজেলের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্রমতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ করা বাস্তবে খুব কঠিন ব্যাপার। গত বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পিডিবির দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল। বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর জ¦ালানির ঘাটতি আরও বেশি। তবে সরকার খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি করে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমদানিকৃত গ্যাস দিয়ে চাহিদা অনুযায়ী কতটা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে তা নিয়ে কর্মকর্তাদের অনেকেই সন্দিহান।
পিডিবির তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ১০ হাজার থেকে ১০ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। গ্যাস ও কয়লা সংকটের কারণে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের কারণেও কিছু কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে।
দেশে নির্মাণাধীন ও আমদানিকৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আগামী মার্চের শেষ দিকে ভারতের আদানি থেকে অতি উচ্চ দামে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ছাড়া মে মাসের দিকে চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ৬১২ মেগাওয়াট এবং অন্যান্য কিছু ছোট বা মাঝারি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৫০ থেকে ২০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এপ্রিল-মে মাসের দিকে বিদ্যুতের চাহিদা সবচেয়ে বেশি হবে। তখন এসব কেন্দ্র সময়মতো উৎপাদনে এলেও ১৩ হাজার মেগাওয়াটের জোগান দেওয়া সম্ভব হবে। এর বাইরে উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে কিছু কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে উচ্চ দামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
এদিকে ডলার সংকট এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিলম্বের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। সরকারের কাছে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মোটা অঙ্কের বিল পাওনা থাকলেও তারা ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি আমদানি করতে পারছেন না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নির্মাণকাজ এবং জ্বালানি আমদানির যে অগ্রগতি তাতে চাহিদার তুলনায় আগামী গ্রীষ্মে বিদ্যুতের ঘাটতি হবে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট। তবে সাশ্রয় নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে ১ হাজার মেগাওয়াট এবং উচ্চ মূল্যের জ্বালানি আমদানির মাধ্যমে আরও ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে পারে সরকার। এরপরও অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি থাকবে।
এদিকে দাম সমন্বয়ের নামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে জানুয়ারি মাসে ১৮ দিনে চার দফা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সরকার। এর মধ্যে দু’দফায় অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের আগস্টে সেচে ব্যবহৃত ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ২৯ টাকা দাম বাড়ানো হয়। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে।
কুমিল্লার নাঙলকোট উপজেলার বাসন্ডা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম মজুমদার বলছিলেন, গত বছর এক বিঘা বা ৩৩ শতক জমিতে ধান চাষ করতে সেচের জন্য ২৭৫০ টাকা ব্যয় হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলতি বোরো মৌসুমে এ ব্যয় বেড়ে অন্তত ৪ হাজার টাকা হবে। এর বাইরে অন্যান্য খরচও আনুপাতিক হারে অনেক বেড়েছে। ফলে এখন ধান চাষ করলে প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
ডিজেলচালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর গ্রামের শিয়ালা গ্রামের কৃষক নাঈম। শনিবার রাতে টেলিফোনে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রতিবিঘা জমিতে এ বছর সেচের ব্যয় বেড়েছে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা। সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও বেড়েছে।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির গণশুনানির সময় বিইআরসি কৃষক ও প্রান্তিক মানুষের কথা বিবেচনা করলেও নির্বাহী আদেশের সময় এসব কিছুই বিবেচনা করা হয় না।
অতীতে সামাজিক সুরক্ষার অংশ হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীকে লাইফলাইন বা প্রান্তিক ব্যবহারকারী হিসেবে বিবেচনা করে তাদের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলক কম বাড়াত কমিশন। দেশে এ ধরনের গ্রাহক রয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ, যাদের অধিকাংশই কৃষক। কিন্তু সর্বশেষ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আদেশে এ সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।
লাইফ লাইন শ্রেণির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল ছিল ৩.৭৫ টাকা। গত ডিসেম্বরে তা বাড়িয়ে ৩.৯৪ টাকা করেছিল মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে এবার আরেক দফা বাড়িয়ে ৪.১৪ টাকা করা হয়েছে। ফলে গত দুই মাসের ব্যবধানে দরিদ্র মানুষকে এখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩৯ পয়সা বাড়তি ব্যয় করতে হবে।
কৃষকের কথা বিবেচনা করে আগে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম সবসময়েই তুলনামূলক সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করা হতো। কিন্তু এখন কৃষকেরাও রেহাই পাচ্ছে না। গত ১২ ডিসেম্বর কৃষিতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২১ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৩৭ টাকা করা হয়। সেখান থেকে এবার আরও ২২ পয়সা বাড়িয়ে ৪.৫৯ টাকা করা হয়েছে।
রংপুরের একজন কৃষক আনোয়ার আলী খানিকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দফায় দফায় যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে চাষি তো আর বেশিদিন বাঁচতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘ধান চাষ করে এখন লাভ তো দূরের কথা খরচই ওঠে না। তাই আগের চেয়ে ধান চাষ কমিয়ে দিয়েছি। এখন সারা বছর খাওয়ার জন্য যতটুকু ধান দরকার ততটুকুই চাষ করি। তাতে লোকসান হলেও কী করব? ডাল-ভাত তো খাওয়া লাগবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গতিশীল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে যোগ দিতে দেশটিতে সফরে আছেন মোমেন ও হিনা। গতকাল শনিবার সেখানে তাদের মধ্যে সাইডলাইন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রেডিও পাকিস্তান ও নিউজ নেটওয়ার্কের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার পাকিস্তান-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অর্থনীতি ও বাণিজ্যে পারস্পরিক উপকারী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অর্থনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংযোগ জোরদার করার এবং পর্যটন ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। অনেক আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ সংক্রান্ত বিষয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে মতের মিল রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সহযোগিতা জোরদারের আশা : এদিকে গত শুক্রবার বিকেলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদুজানা পেরামুনা পার্টির দিনেশ গুনাবর্ধনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এ সময় তারা দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যে চলমান সেক্টরাল সহযোগিতা আরও বাড়ানোর গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। বিশেষ করে বাণিজ্য সহজীকরণ, ব্যবসা ও বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংযোগের ক্ষেত্রে সহযোগিতার ওপর জোর দেন তারা।
গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এর আগে সেদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মর্যাদাপূর্ণ ‘লক্ষ্মণ কাদিরগামার স্মারক বক্তৃতা’ শিরোনামে ‘শেয়ারড প্রসপারটি : এ ভিশন ফর সাউথ এশিয়া’ প্রদান করেন। সেখানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দক্ষিণ এশীয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত আকাক্সক্ষা এবং যৌথ সমৃদ্ধির জন্য দক্ষিণ এশিয়া সম্মিলিতভাবে যে লক্ষ্যগুলো অনুসরণ করতে পারে সে সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যবাহী পারফরমিং আর্ট সমন্বিত ঐতিহাসিক ইন্ডিপেন্ডেন্স হলে সাংস্কৃতিক উৎসব ‘লঙ্কারলঙ্কা’তে অংশগ্রহণ করেন।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কার ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশগ্রহণের জন্য দেশটিতে সফর করছেন ড. মোমেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সফরে তিনি প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী সাবরি, নেপালের সদ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা বিমলা রায় পাওডেলের সঙ্গে এবং মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের সঙ্গেও বৈঠক করেন। আশা করা হচ্ছে, সফর শেষে আজ ঢাকায় পৌঁছাবেন ড. মোমেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
বিশ্বে জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে পেঁপে একটি। পুষ্টিগুণের জন্যই সবাই এই ফলটি বেশি পছন্দ করেন।
চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদ— সকলেই এই ফলকে ‘মহৌষধ’ বলে থাকেন। শিশুদের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে, বয়স্কদের অর্শের সমস্যায় আবার কম বয়সীদের ওজন কমানোর ডায়েটে পাকা পেঁপের স্থান সকলের আগে। বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজের প্রাকৃতিক উৎস পাকা পেঁপে চোখের জন্যও উপকারী। বিটা ক্যারোটিনে ভরপুর পাকা পেঁপে ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর
ভিটামিন সি এবং অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর পাকা পেঁপে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য ব্যধির প্রতিরোধক। এ ছাড়াও পেঁপেতে ছড়েছে ক্যারোটিনয়েড, ভিটামিন সি এবং ই, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হজমে সহায়ক
পেঁপে মুখের রুচি ফেরায়। সেই সঙ্গে খিদেও বাড়ায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে। পেট পরিষ্কার থাকলে গ্যাস অম্বলের সমস্যাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুধু তাই নয়, যাদের অর্শের সমস্যা রয়েছে, চিকিৎসকরা তাদের পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম
পেঁপে কিন্তু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ১০০ শতাংশ ভিটামিন সি পাওয়া যায় এই পাকা পেঁপে থেকেই। শরীরে কোনও সংক্রমণ হলে, তা কমাতে চিকিৎসকরা পাকা পেঁপে খাওয়ার পরামর্শ দেন।
ওজন কমাতে
পাকা পেঁপেতে যথেষ্ট পরিমাণ ফাইবার থাকায় তা অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। পাশাপাশি বিপাক হারও বাড়িয়ে তোলে। এ ছাড়াও যারা ওজন কমাতে ডায়েট মেনে খাবার খেয়ে থাকেন, তাদের জন্যও ভাল পাকা পেঁপে।
হার্টের স্বাস্থ্যরক্ষা করে
হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে পটাশিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগ সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করে এই যৌগ। প্রাকৃতিকভাবে পটাশিয়ামের উৎস হল পাকা পেঁপে।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।