
চিকিৎসা নিতে দেশের রোগীদের বিদেশমুখী হওয়ার পেছনে কোনো কারণ আছে বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, ‘সরকার দেশের সব শ্রেণির ও পেশার মানুষকে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশে উন্নত চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জন সবকিছুই আছেন। তারপরও ৮০ শতাংশ রোগী বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। এর পেছনে নিশ্চয় কোনো ঘাপলা আছে।’
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘ঢাকা ক্যানসার সামিট’-এ মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অনকোলজি সোসাইটি এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সামিটে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘২০-৩০ বছর আগে চোখ, হার্টসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কোনো ইনস্টিটিউট ছিল না, এখন অনেক হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয়, আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হলেও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভারত, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংককে চিকিৎসা নিতে যায়। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিমানে করে দিল্লি, মাদ্রাজ, সিঙ্গাপুর ও ব্যাংকক যাচ্ছে। অনেকে পড়াশোনার জন্য যায়, সেটা ঠিক আছে, কিন্তু বড় অংশ যাচ্ছে চিকিৎসা নিতে। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো কারণ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে গড়ে ওঠা কমিউনিটি ক্লিনিকে ২৫-৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। তবে যে কারণে এসব ক্লিনিক হয়েছে, সেটি পূরণ না হওয়ার পেছনেও কারণ রয়েছে। আমাদের আর্থসামাজিক পরিবর্তনের যে গতি এসেছে, ২০৪০-৪১ সালের দিকে উন্নত দেশে পৌঁছানোর যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়নে সবাইকে পরিশ্রম করতে হবে। এ জন্য গ্রামাঞ্চলেও চিকিৎসাব্যবস্থায় জোর দিতে হবে। কারণ দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই গ্রামে থাকে।’
চিকিৎসকদের গবেষণায় জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘দেশের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গবেষণা হচ্ছে না, যার কারণে প্রধানমন্ত্রীও অনেকটা ক্ষুব্ধ। চিকিৎসকদের অন্যতম প্রধান কাজ গবেষণা। এর জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে সরকার দেবে।’
সামিটে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. স্বপন কুমার বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, ক্যানসার অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা। বর্তমানে রোগটির প্রকোপ বেড়েছে। গ্রামাঞ্চলে মুখের ক্যানসারসহ নানা ধরনের ক্যানসার রোগী দেখা দিলেও উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ফলে বেশির ভাগ রোগীকে ঢাকামুখী হতে হয়; বিশেষ করে জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন। স্থানীয় পর্যায়ে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা থাকলে এ রোগী কমানো সম্ভব।
এ সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ‘বিশ^জুড়েই ক্যানসার চিকিৎসা একটি বড় সমস্যা। শুধু বয়স্করা নন, কম বয়সীরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ জন্য ডায়াগনসিস বাড়ানোর বিকল্প নেই। আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ক্যানসার নির্ণয়ে ডায়াগনসিস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সংকট অবকাঠামো এখনো দুর্বল। কার্ডিয়াক চিকিৎসার অবস্থা অনেক ভালো। কিন্তু ক্যানসার চিকিৎসায় এখনো পিছিয়ে আমরা। আগামীতে ক্যানসার পরিস্থিতি কোনো পর্যায়ে যেতে পারে, সে জন্য একটি রোডম্যাপ করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নিতে হবে।’
রাজধানীতে যানজট ও দুর্ঘটনার নতুন ঝুঁকির সৃষ্টি করেছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজধানীতে দিনের বেলায় অলিগলিতে থাকলেও সন্ধ্যার পর এগুলো চলে আসে প্রধান সড়কে। প্রশাসনের সামনেই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে এসব অবৈধ যান।
জানা গেছে, রাজধানীতে প্রায় দুই লাখ ব্যাটারিচালিত এই অবৈধ যান চলাচল করছে। এগুলোর জন্য একদিকে যেমন বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে, অন্য দিকে অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। এসব যান নিয়ন্ত্রণে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ফলে এদের বেপরোয়া চলাচলে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনকে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। তবে অটোচালকদের দাবি, তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সড়কে এই যান চালাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার গলিতে এই অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দেখা যায়। তবে পুরান ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ এলাকায় এদের আধিপত্য বেশি। এখানে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এসব ব্যাটারিচালিত যান। পরে রাতে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। দিনপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার চুক্তিতে পাওয়া যায় এই ব্যাটারিচালিত যান।
কামরাঙ্গীরচরসহ এর আশপাশের এলাকায় ৩০০টির মতো ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যানগাড়ি চালাচ্ছে মো. ইসরাফিল। পাশাপাশি অভিযোগ রয়েছে, দুই নারীর পরিচালনা করছেন অর্ধশতাধিক ব্যাটারিচালিত যান। তা ছাড়া এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে কিছু ট্রাফিক পুলিশও। বিভিন্ন পক্ষ ম্যানেজ করে শক্তিশালী একাধিক সিন্ডিকেট অবৈধ এ ব্যবসা করে বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া দুই নারীর মধ্যে একজনের সঙ্গে দেশ রূপান্তর ফোনে যোগাযোগ করে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে ফোন কেটে দেন। পরে পুনরায় ফোন দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এদিকে দেশ রূপান্তর থেকে ইসরাফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি রং নাম্বার বলে ফোন কেটে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই জোনের একজন সার্জেন্ট দেশ রূপান্তরকে জানান, ইসরাফিলের ভ্যান ধরা হলে প্রথমে ইসরাফিলের হুমকি, তারপর তথাকথিত সাংবাদিকের হুমকি, এরপর উপর মহলের হুমকির শিকার হতে হয়। কাউকে কাউকে বদলির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে লালবাগ ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মেহেদী হাসানের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
মো. আনোয়ার নামে এক অটোরিকশাচালক বাংলামোটর এলাকায় উল্টো পথে এসে বাইকের ওপর উঠিয়ে দেন। পরে তিনি তার দোষ স্বীকার করে বাইকচালকের কাছে ক্ষমা চান। তিনি জানান, ‘তার অটোরিকশাটি লালবাগ এলাকার। দিনের বেলায় পুরান ঢাকায় থাকলেও রাতের বেলায় বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যায়। খুব সহজে ব্রেক ধরা যায় না, যার জন্য এই দুর্ঘটনা হয়।’
গুলিস্তানে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে মো. মান্না নামের পায়ে চালিত এক রিকশাচালক। তিনি জানান, সড়কে অটোরিকশা চলার কারণে প্রায় দুর্ঘটনা লেগে থাকে। এগুলোর জন্য তাদের আয় আগের থেকে অনেক কমে গেছে। মানুষ দ্রুত চলাচল করতে পারায় ব্যাটারিচালিত রিকশায় উঠতে চায়। যার জন্য সড়কে একদিকে যেমন আয় কমেছে তাদের, আরেক দিকে এগুলোর জন্য মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনায় পড়তে হয়।
সেভ দ্য রোডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই অবৈধ ব্যাটারিচালিত যানের মোটর, ব্যাটারি এবং বাইরে থেকে আমদানি করা যানগুলো সরকার কী কারণে দেশে আনার অনুমোদন দিয়েছে। এগুলোর অনুমোদন যদি না দেওয়া হতো, তাহলেই সড়কে এই অবৈধ যান চলাচল করতে পারত না।’ তবে এখন নতুন করে চিন্তা করার সময় হয়েছে, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য এই ব্যাটারিচালিত যান প্রায় ২৫ শতাংশের মতো দায়ী বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাইকোর্ট যেখানে এই ব্যাটারিচালিত যান নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে সড়কে কীভাবে চলছে এই যান? মূলত এই অবৈধ ব্যাটারিচালিত যান দিয়ে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। সেজন্যই এটি বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু সরকারেরই উচিত দেশে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ আনার জন্য এই বিষয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাটারিচালিত যানের জন্য সড়কে একদিকে যেমন বাড়ছে যানজট, তেমনি দুর্ঘটনার নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিটিতে প্রায় দু লাখের মতো এই ব্যাটারিচালিত যান চলাচল করে। এর জন্য দেশে বাড়তি বিদ্যুতের অপচয় হয়। প্রতিদিন ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎসাশ্রয় করা যেত এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হলে। কারণ দেশে এখন এই মুহূর্তে বিদ্যুৎসাশ্রয়ে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সিটিতে কমে যেত লোডশেডিং।
তিনি আরও বলেন, ব্যাটারি, মোটরসহ এসব যান আমদানি করার নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দেশে এসব যান ঢুকে গেছে। তাদের সঙ্গে লাখ লাখ পরিবারের জীবিকা এই যানগুলো থেকে হয়ে থাকে। তাই সিটির মহাসড়কে এসব যান তো চলাচলের অনুমোদন দেওয়া যাবে না। তবে সিটির বাইরে জেলা শহরে এবং মহাসড়কে সাইড রোডে স্বল্প দূরত্ব বাহন হিসেবে এগুলো ব্যবহার করা যেত পারে মানবিক দিক বিবেচনায়। কিন্তু কোনোভাবেই সিটিতে চালানো যাবে না বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
বাংলাদেশের পথিকৃৎ প্রত্নতত্ত্ববিদ, অনুবাদক, নৃ-বিজ্ঞানী, পুঁথিবিশারদ, ক্রীড়া সংগঠক ও সাবেক সচিব আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার ১০৫তম জন্মদিন আজ। আজীবন জ্ঞানসাধনায় মগ্ন থেকে মাঠপর্যায়ে গবেষণা, অনুসন্ধান, সংগ্রহ, সম্পাদনা এবং অনুবাদের মধ্য দিয়ে বহুভাষাবিদ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া প্রাচীন বাংলার প্রত্নতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব ও ইতিহাসের পাশাপাশি মধ্যযুগের বাংলার জনসংস্কৃতি ও ধর্মসাধনা এবং সাহিত্য ও শিল্পকলাচর্চার বিষয়ে বহু আকর গ্রন্থ রচনা করেছেন। একই সঙ্গে তিনি প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা এবং বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রত্নস্থান রক্ষায় সংগঠকের দায়িত্ব পালন করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তার জীবন ও কর্ম দেশকে জানার এবং দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিচর্চায় অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার ১০৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকার স্থাপত্যবিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি এবং আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার পরিবারের উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চবিদ্যালয়ে এক আলোচনা ও প্রীতি সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ছিলেন শতবর্ষী এই বিদ্যাপীঠের সাবেক শিক্ষার্থী।
অনুষ্ঠানে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার রচিত গ্রন্থগুলো এবং তার বাঁধাই করা একটি প্রতিকৃতি রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চবিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মুহম্মদ জমাদ্দারের কাছে হস্তান্তর করেন ঢাকার স্থাপত্যবিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি ও যাকারিয়ার পরিবারের সদস্যরা। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়াসহ বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ঢাকার স্থাপত্যবিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার পরিবার ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আলোচনাসভায় বক্তব্য দেন আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার মেজো কন্যা ডা. জাকিয়া মাহফুজা যাকারিয়া, প্রাচীন শিল্পকলা বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় জাদুঘরের সাবেক কিপার ড. নীরু শামসুন্নাহার, আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার কনিষ্ঠ কন্যা সুফিয়া আতিয়া যাকারিয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কামালউদ্দিন কবীর, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মুহাম্মদ জমাদ্দার, স্থানীয় রাজনীতিবিদ এ কে এম যাকারিয়া খোকন, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য মোবায়েলনুল ইসলাম মুকুল প্রমুখ। আলোচনাসভা শেষে অনুষ্ঠিত মোনাজাত পরিচালনা করেন বিদ্যালয়ের ধর্ম শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হালিম।
ঢাকার স্থাপত্যবিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি এবং আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার পরিবারের সদস্যরা এরপর দরিকান্দি গোলাম আকবর মিল্কী দাখিল মাদ্রাসার গ্রন্থাগারের জন্য আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার রচিত গ্রন্থগুলো হস্তান্তর করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার কবর জিয়ারত করেন কমিটি এবং আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার পরিবারের সদস্যরা।
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ১৯১৮ সালের ১ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিকান্দি গ্রামের এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বপূর্ণ শিক্ষাজীবন শেষে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি দেশের নানা প্রান্তে প্রত্নসম্পদের অনুসন্ধান এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি দেশের প্রথম শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সভাপতি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া দেশের তৃতীয় বৃহত্তম জাদুঘর দিনাজপুর মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা। তার অধিকাংশ গ্রন্থই অপ্রকাশিত। প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ, বাংলা সাহিত্যে গাযী কালু ও চম্পাবতী উপাখ্যান, গুপিচন্দ্রের সন্ন্যাস, কুমিল্লা জেলার ইতিহাস, তবাকাত-ই-নাসিরী, সিয়ার-উল-মুতাখ্খিরিন, বাংলাদেশের নৃতাত্ত্বিক পরিচিতি উল্লেখযোগ্য।
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া বাংলাদেশে প্রত্নতত্ত্ব চর্চার পথিকৃৎ ব্যক্তিত্ব। সুলতানি, মুঘল ও নবাবি আমলের বাংলাকে নিয়ে লেখা ইতিহাস গ্রন্থগুলোর ভাষা মূলত ফারসি। ফারসি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় সর্বাধিক ইতিহাস গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন তিনি। গবেষণা করেছেন বাংলার নৃতত্ত্ব ও ধর্ম নিয়ে।
আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া ‘একুশে পদক’, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’সহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ২০১৬ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার দরিকান্দি গ্রামে সমাহিত করা হয়।
বাংলাদেশ সফরের জন্য সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী প্রকৌশলী ওয়ালিদ বিন আবদুল করিম আল-খুরাইজির কাছে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তর করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমন্ত্রণপত্রে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ ও জনগণের দৃঢ় বন্ধন ও শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সমর্থন আগামী দিনে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তরের সময় রাষ্ট্রদূত দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখা, আন্তর্জাতিক সংস্থায় একে অপরকে সমর্থন করাসহ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী যুবরাজ সালমানকে সৌদি আরবের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের জন্য শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
দেশে দুই দিন পর করোনা রোগী বেড়ে আবার ৭০০-এর ঘর ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ৭০৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন গত বৃহস্পতিবার শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৭৯ এবং আগের দিন বুধবার ছিল ৬৬৫ জন। তিন দিন আগে গত মঙ্গলবার করোনায় শনাক্ত হয়েছিল ৭৩৭ জন।
একইভাবে দুদিন পর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার বেড়ে ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ হয়েছে। এর আগের দিন এই হার ছিল ১৩ দশমিক ৫৩ ও তার আগের দিন ছিল ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। তিন দিন আগে শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছে ১ জন। আগের দিন মৃত্যু ছিল দুজনের।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে করোনায় শনাক্ত হলো ২০ লাখ ২৫ হাজার ১৯৭ জন, মারা গেছে ২৯ হাজার ৩৬৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত নতুন রোগীদের মধ্যে ৫১৬ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। এ সময় দেশের সব বিভাগের ৩৭ জেলায় রোগী পাওয়া গেছে। এ সময় যে একজনের মৃত্যু হয়েছে তিনি ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। তিনি ছিলেন পুরুষ, বয়স ৬০ বছরের বেশি। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে যাওয়ায় ঢাকা থেকে সৌদি আরবের রিয়াদগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ছাড়তে ৯ ঘণ্টার বেশি বিলম্ব হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কথা থাকলেও সেটি রিয়াদের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে গতকাল শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে। ওই ঘটনার প্রভাব পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পুরো ফ্লাইট শিডিউলে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার বলেন, বিমানের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে যাওয়ায় ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়েছে। তবে বিমানবন্দরে যাত্রীদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর এবং সেবা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে হয়। বিমান কর্র্তৃপক্ষ বলছে, প্লেনের ইঞ্জিনে পাখি ঢুকে যাওয়ায় ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়েছে। শুক্রবার সকাল সোয়া ৭টায় ফ্লাইটটি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে অপেক্ষারত যাত্রীরা বলছেন, ফ্লাইট ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল বৃহস্পতিবার রাত ১টা ১৫ মিনিট। তাদের টিকিটেও ফ্লাইট ছাড়ার এই সময় উল্লেখ আছে। এ জন্য তারা বৃহস্পতিবার রাত ১০টার আগেই বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় সৌদিগামী যাত্রী সালাউদ্দিন মোবাইল ফোনে বলেন, তাদের বিজি-০৩৩৯ ফ্লাইটটির যাত্রা শুরুর কথা ছিল বৃহস্পতিবার রাত ১টা ১৫ মিনিটে। কিন্তু ওই সময় ফ্লাইট ছাড়েনি। পরে জানানো হয় ফ্লাইট রাত ২টা ৩০ মিনিটে ছাড়বে। এরপর আবার শুক্রবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ফ্লাইট ছাড়বে বলে জানানো হয়। সে সময়ও ফ্লাইট ছাড়েনি। পরে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে আরেকটি প্লেনে তাদের ফ্লাইট দেওয়া হয়।
রাত থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা জানান, বিমান কর্র্তৃপক্ষ সঠিকভাবে তাদের কিছুই জানায়নি।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি তার ওপর সংঘটিত ছুরি হামলা নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা রুশদি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কিন্তু বেঁচে ফেরায় তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া রুশদির একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় মঞ্চে তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার। নিউ জার্সির এই বাসিন্দা সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে নিজের রক্তের ওপর লুটিয়ে পড়েন রুশদি। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় এই লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, ‘আমি অনেকটাই ভাল হয়েছি। যা ঘটেছিল তা বিবেচনা করে দেখলে খুব একটা খারাপ নেই। বড় ক্ষতগুলো সেরে গেছে। তবে বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও তালুর নিচের অর্ধেকটা অনুভব করছি। আমাকে প্রচুর হাতের থেরাপি নিতে হচ্ছে। যদিও আমাকে বলা হয়েছে শারীরিকভাবে আমি উন্নতি করছি’।
রুশদি জানান, আঙ্গুলের কিছু অংশে অনুভূতি না থাকায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি। হাঁটতে পারছি চারপাশে। তবে আমার শরীরে এমন কিছু অংশ আছে যেগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এটা ছিল একটি মারাত্মক আক্রমণ’। তিনি জানান, ছুরি হামলার ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এর ফলে তাকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন রুশদি। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন এই লেখক। এই উপন্যাস লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। উপন্যাসটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা।
উপন্যাসটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ঘোষণা করেন ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার। রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হচ্ছে তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই নারী কীভাবে একটি শহরকে পরিচালনা করেছেন, সে গল্পই উঠে এসেছে বইটিতে।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।