
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নজির রয়েছে। এখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষ পরস্পর মিলেমিশে একসঙ্গে বসবাস করেন।
তিনি বলেন, কতিপয় দুষ্কৃতকারী কোনো অঘটন ঘটিয়ে আমাদের সহাবস্থানকে বিনষ্ট করতে চায়, দেশের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে চায়। আমরা তাদের কঠোর হাতে দমন করতে বদ্ধপরিকর।
আইজিপি গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির, রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন এবং বনানী পূজামণ্ডপ পরিদর্শনকালে এ কথা বলেন। ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা এ সময় বক্তব্য রাখেন।
দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আইজিপি বলেন, কোনো দুষ্কৃতকারী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ কোনো ধরনের অঘটন ঘটানোর দুঃসাহস না দেখাতে পারে।
তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারীরা কোনো একটা সময়ে যখন মানুষ বিশ্রামে যায় সে নির্জনতার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। এ জন্য সবাইকে সার্বক্ষণিক সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে।
আইজিপি আশা প্রকাশ করে বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
সিআইডির সক্ষমতা বৃদ্ধির নির্দেশ : পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সক্ষমতা বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেছেন, মানি লন্ডারিং মামলাসহ অন্যান্য মামলার তদন্তে সিআইডির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশি বেশি প্রশিক্ষণ ও আলোচনা সভার আয়োজন করতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অপরাধ দূর করতে ভূমিকা রাখতে হবে। অনলাইন জুয়া ও মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। গতকাল সিআইডি
সদর দপ্তরে অনলাইন জুয়া ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে সিআইডি আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সেমিনারের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন আইজিপি।
সেমিনারে অনলাইন জুয়া এবং মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ, অপরাধীদের শনাক্ত, ডিজিটাল সই সংগ্রহ, মামলার তদন্ত পরিচালনা, পারিবারিক, সামাজিক সচেতনতাসহ যাবতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় নানা বিষয় উঠে আসে।
সভাপতিত্ব করেন সিআইডিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন এসবির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মনিরুল ইসলাম।
সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘অনলাইন জুয়া ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধে সিআইডি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।’
এসবিপ্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা ভোগ করছি। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নানা অপরাধ করছে। এসব অপরাধ কঠোরভাবে দমন করা হবে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর এইচআর অ্যান্ড ওডি স্পেশালিস্ট ড. খান সরফরাজ আলী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশিদ আলম খান, অক্টগ্রাম লিমিটেডের এমডি মো. হাসান শাহরিয়ার ফাহিমসহ সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
সিআইডির ঢাকা কার্যালয়ে কর্মরত উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) থেকে ঊর্ধ্বতন সব কর্মকর্তা সশরীরে এবং বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার সিআইডির কর্মকর্তারা অনলাইনে সংযুক্ত থেকে সেমিনারে অংশ নেন।
বসতিতে হারিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাহাড়গুলো। বৃষ্টির পানি ধারণের জায়গাগুলো ভরাট করে গড়ে ওঠা এসব বসতির কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। এতে নগরী এখন বসবাসের অনুপযোগী। পাহাড় কেটে ও জলাধার ভরাট করে গত ২০ বছরে ১০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। যদিও সিডিএর দাবি, পাহাড় কাটা হয়নি, নিচু জমি ভরাট করে আবাসন করা হয়েছে। নগরবিদরা একে ‘দুষ্ট পরিকল্পনা’ ও স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্য হাসিলের পরিকল্পনা বলে উল্লেখ করেছেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনন্যা আবাসিক এলাকা। চান্দগাঁও ও কুয়াইশ এলাকার প্রায় ৬২ একর নিচু ভূমি ভরাট করে ১ হাজার ৭০০টি প্লটের বিশাল এক আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও শেষ হয় ২০১৮ সালের দিকে। আর শেষ হওয়ার পরপরই অক্সিজেন, বালুচরাসহ আশপাশ এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
শুধু এ আবাসিক এলাকার মাধ্যমে সিডিএ নগর দুর্ভোগ ডেকে আনেনি, পাহাড় কেটে ও জলাধার ভরাট করে সীতাকুন্ডের সিলিমপুর আবাসিক এলাকায় ২০১৩ সালে আংশিক প্লট বরাদ্দ দিয়েছে সিডিএ। বাকলিয়া এলাকার জলাধার ভরাট করে কল্পলোক আবাসিক এলাকা প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় (১ হাজার ৭০০ প্লট) গড়ে তোলা হয়েছে ২০০৫ থেকে ’০৭ সালে। এখন এই এলাকায় বাড়িঘর গড়ে উঠছে এবং পানির কারণে ভবনগুলোর নিচতলা রাস্তা থেকে উঁচু করে নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রকৃতি বিনাশ করে শুধু সিডিএই আবাসিক এলাকা গড়ে তুলছে না, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ২০০০ সালের দিকে ৪ হাজার ১৪৪ প্লটের কৈবল্যধাম বিশ্বব্যাংক কলোনি আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে পাহাড় কেটে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০০৪ সালের দিকে দক্ষিণ খুলশী এলাকায় পাহাড় কেটে ৬৫টি প্লটের সিটি করপোরেশন ভিআইপি আবাসিক এলাকা করেছে, আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় কেটে ৫২০টি প্লটের লেকসিটি হাউজিং, বাকলিয়ায় নিচু এলাকা ভরাট করে ২৬টি প্লটের বগারবিল ও সৈয়দশাহ হাউজিং গড়ে তোলা হয়েছে।
বিশ^ বসতি দিবস আজ। এবারের বসতি দিবসের প্রতিবাদ্য ‘মাইন্ড দ্য গ্যাপ। লিভ অন ওয়ান অ্যান্ড প্লেস বিহাইন্ড’। এ উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে গৃহায়ন অধিদপ্তর।
প্রকৃতি বিনাশে পিছিয়ে নেই প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানও : সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে যেখানে প্রকৃতি বিনাশ করে বসতি গড়ে তুলেছে, সেখানে ব্যক্তিগত ও প্রাইভেট অনেক প্রতিষ্ঠানও বসতি গড়ে তুলেছে। এদের মধ্যে অন্যতম জাকির হোসেন রোডে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা নাসিরাবাদ হাউজিং প্রপার্টিজ। পুরো এলাকায় একসময় সুউচ্চ পাহাড় ছিল, এখন পাহাড়ের ওপর গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশে হয়েছে এয়াকুব ফিউচার পার্ক। এ স্থানে ২০০০ সালেও পাহাড় ও ইটভাটা ছিল। ইটভাটার মাধ্যমে পাহাড় সাবাড় করার পর ইটভাটা বন্ধ করে এখন সিডিএর অনুমোদনে গড়ে তোলা হয়েছে এয়াকুব ফিউচার পার্ক নামে আবাসন প্রকল্প। এ ছাড়া পশ্চিম খুলশীর উত্তরে কৃষ্ণচূড়া আবাসিক এলাকা, গোল্ডেন ভিউসহ কয়েকটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে পাহাড় কেটে। একই সঙ্গে আকবরশাহ এলাকায় শাপলা হাউজিং, বায়েজিদে হিলভিউ আবাসিক এলাকা, চন্দ্রনগর সোসাইটি, জালালাবাদ হাউজিং, দক্ষিণ খুলশী পাহাড়িকা আবাসিক এলাকা, রহমান নগর আবাসিক এলাকা ও কসমোপলিটনসহ অনেক আবাসিক এলাকা পাহাড় কেটে কিংবা নিচু ভূমি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে।
আইনে যা আছে : বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-তে পাহাড় কাটা সম্পর্কে বাধা-নিষেধ (৬খ) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন ও/বা মোচন করা যাইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে কোনো পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইতে পারে।
নগরবিদদের বক্তব্য : দেশের নগরগুলো নিয়ে গবেষণা করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর গবেষণা কেন্দ্র। এ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ভূগোলবিদ প্রফেসর নজরুল ইসলাম সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগরের ভৌগোলিক সমীক্ষা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছেন। চট্টগ্রামে বসতি নিয়ে কথা হয় এ নগরবিদের কাছে। তিনি বলেন, ‘পাহাড় কেটে ও জলাধার ভরাট করে বসতির নামে যে পরিকল্পনা হচ্ছে তা হলো দুষ্ট পরিকল্পনা। একে অপরিকল্পনা না বলে বলতে হবে ভুল পরিকল্পনা এবং স্বার্থান্বেষী মহলের উদ্দেশ্য হাসিলের পরিকল্পনা। আর তাদের এ দুষ্ট পরিকল্পনার কারণে নগর দুর্যোগ শুরু হয়েছে।’
কিন্তু সিডিএ বলছে চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা, তাই পাহাড় না কেটে ও নিচু ভূমি ভরাট না করে বসতি সম্ভব নয়। এমন প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বের কোনো দেশে পাহাড় কাটে না। আমরাই পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলছি। পাহাড়ই সৌন্দর্য। পাহাড় রেখে যেমন পরিকল্পনা করা যায় তেমনি নিচু ভূমি এলাকা রক্ষা করেও পরিকল্পনা করে বসতি নির্মাণ করা যায়।’
প্রফেসর নজরুল ইসলামের সঙ্গে একমত পোষণ করে রাশিয়া থেকে স্থাপত্য বিদ্যায় এবং নগর পরিকল্পনা বিষয়ে ডিগ্রি নেওয়া স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ‘পাহাড় কাটা ও নিচু ভূমি ভরাটের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। আর এতে নগরীর বিকাশ হয়েছে অপরিকল্পিত। এই মুহূর্তে নগরীর প্রান্তিক এলাকা ও উপজেলা পর্যায় নিয়ে পরিকল্পনা জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় উপজেলা সদরগুলোর বিকাশও অপরিকল্পিত হবে।’
বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় গবেষণারত ও সিডিএর সাবেক ঊর্ধ্বতন স্থপতি মাহারিনা জাফরিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহর অপরিকল্পিত বসতির কারণ হলো সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা। ওয়াসা যেসব নিচু এলাকা চিহ্নিত করেছে সেসব এলাকায় আবাসন না করাই উত্তম ছিল। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলো তা মানেনি। আর এতেই নগরীতে আজ দুর্ভোগ।’
সিডিএর বক্তব্য : সিডিএ পাহাড় কেটে কোনো আবাসিক এলাকা গড়ে তোলেনি উল্লেখ করে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা কিছু নিচু জায়গা ভরাট করে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছি, তবে সেগুলোতে যাতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকে সে জন্য খাল ও ড্রেন নির্মাণের প্রস্তাবনা ছিল। বর্তমানে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় তা করা হচ্ছে।’
কিন্তু নগরজুড়ে আবাসিক এলাকার অনুমোদন দিয়ে থাকে সিডিএ। পাহাড় কেটে ও নিচু এলাকা ভরাট করে গড়ে ওঠা বসতির কারণে আজ নগর জীবন দুর্বিষহ। এ প্রশ্নের জবাবে কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘অন্যান্য সরকারি সংস্থা সিডিএ থেকে অনাপত্তিপত্র না নিয়ে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে। অন্যদিকে ব্যক্তিগতভাবে অনেকে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে এবং সিডিএ সেসব এলাকায় ভবনের অনুমোদনও দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে একটু ব্যত্যয় হয়েছে।’
সমাধান কোথায়? : সিডিএর সাবেক প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি শাহীনুল ইসলাম খান বলেন, ‘সিডিএর প্রায় সব আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে প্রাকৃতিক জলাধার ভরাট করে। তাই আজ জলাবদ্ধতা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। সিডিএ যদি আবাসিক এলাকা গড়ে তুলতে পারে তাহলে জলাধারও তৈরি করতে হবে অথবা রক্ষা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় গুলশান ও ধানমন্ডি লেকের মাধ্যমে পানি ধারণের জায়গা করা হয়েছে। চট্টগ্রামেও এমন জলাধার তৈরি করতে হবে।’
এ বিষয়ে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় জলাধার নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া খাল ও ড্রেনও নির্মাণ করা হচ্ছে।’
প্রাকৃতিক জলাধার ছাড়া অতিরিক্ত পানি ধারণের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে বিশিষ্ট স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ‘এ কাজটি সিডিএকে করতে হবে। কোন কোন এলাকায় প্রাকৃতিক জলাধার নির্মাণ করবে তা আগে থেকে নির্ধারণ করে সেই এলাকায় ঘরবাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া যাবে না।’
কয়েক বছর ধরেই দুর্গাপূজার সময় দেশের পরিবেশ কিছুটা থমথমে হয়ে ওঠে। পূজামণ্ডপগুলোতে সাম্প্রদায়িক হামলার শঙ্কায় থাকে উৎকণ্ঠা। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে নেওয়া হয় বাড়তি ব্যবস্থা। তবে লালমনিরহাট শহরের কালীবাড়ি এলাকার পুরান বাজারের পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। সেখানে একই প্রাঙ্গণে হচ্ছে আজান, হচ্ছে উলুধ্বনি। মসজিদের আগরবাতি বা আতরের গন্ধ একাকার হয়ে যায় মন্দিরের ধূপের গন্ধে। দেড়শ বছরের বেশি সময় ধরে সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে পাশাপাশি চলছে পৃথক দুটি ধর্মের উপাসনালয়।
শহরের বাসিন্দারা জানান, ১৮৩৬ সালে কালীমন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত। ওই সময় লালমনিরহাট শহরে কালীবাড়ির পুরান বাজার এলাকায় আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমান ব্যবসায়ীরা নামাজ আদায়ের জন্য তার পাশেই একটি ছোট ঘর তোলেন। সেটির নামকরণ করা হয় পুরান বাজার জামে মসজিদ। সেই থেকে এক উঠানেই চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কাজ।
স্থানীয়রা জানান, পূজা শুরুর আগে মসজিদ ও মন্দির কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেয় নামাজ ও পূজার অনুষ্ঠানে সূচি নির্ধারণ করে। ফলে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে না। আজান থেকে নামাজের জামাত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দিরের মাইক, ঢাকঢোলসহ যাবতীয় শব্দযন্ত্র বন্ধ থাকে। নামাজ শেষ হলে মন্দিরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলাও হয় না। শালীনতা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের ধর্মাবলম্বীরা।
তারা জানান, গায়ে গায়ে লেগে থাকা মন্দির ও মসজিদ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসে সাধারণ মানুষ। কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতও এই মন্দির ও মসজিদ পরিদর্শন করেছেন।
কালীবাড়ি এলাকার হাসানুল ইসলাম বলন, দীর্ঘ দিন ধরে এখানে দুর্গাপূজাসহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিন্দুসম্প্রদায়ের লোকজন চালিয়ে আসছে। অন্যদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনও মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছেন। কিন্তু কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এটি সামাজিক সম্প্রীতির এক বড় উদাহরণ।
পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, মসজিদের আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবুও এখানে জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ স্বাধীনভাবে ঘুরতে আসে। আমরা তাদের সব কাজে সহযোগিতা করি। তারাও আমাদের সহযোগিতা করে। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাকঢোল বন্ধ রাখা হয়। কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে চলছে এই সম্প্রীতির বন্ধন।
কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দিরের সভাপতি ও প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী জানান, ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এলাকার নামকরণও করা হয় কালীবাড়ি। পরে এখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করেন পুরান বাজার জামে মসজিদ। সেই থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কার্যক্রম।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, এখানকার মানুষ সব ধর্মের সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। যার প্রমাণ এক উঠানে কেন্দ্রীয় কালীবাড়ি মন্দির ও পুরান বাজার জামে মসজিদ।
কুয়েতপ্রবাসী এক বাংলাদেশি গত ২ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। পরে বগুড়া যাওয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দর থেকে প্রাইভেট কারে প্রথমে উত্তরার আজমপুর বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখানে উত্তরবঙ্গগামী বাসের টিকিট কিনতে কাউন্টারে যাওয়ার সময় আরেক ব্যক্তি নিজেকে প্রবাসী পরিচয় দিয়ে জানান, তার কাছে বগুড়ার একটি অতিরিক্ত টিকিট আছে। তিনিও চাইলে সেটি নিতে পারেন। ওই ব্যক্তির কাছে ব্যাগপত্র ও বিদেশি মুদ্রা দেখে কুয়েতপ্রবাসী তাকে বিশ্বাস করেন ও টিকিট কিনে নেন। পরে তারা বাসে বসেন পাশাপাশি আসনেই। বাস ছাড়ার পর ওই ব্যক্তির দেওয়া বিস্কুট খেয়ে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। পরে তার পরিবারের সদস্যরা যখন তাকে উদ্ধার করেন তখন তার সঙ্গে আনা কোনো জিনিসপত্রই ছিল না। বাসের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তার পাশের আসনে বসা যাত্রীই সব নিয়ে সিরাজগঞ্জে নেমে গেছেন।
ওই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় ভুক্তভোগী ওই প্রবাসীর করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব বিমানবন্দর এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। অবশেষে গত শনিবার রাতে চক্রটির হোতা মো. আমির হোসেনসহ (৫২) চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তার অন্যরা হলোÑ লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন (৪৮), আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ (৩৫) ও জাকির হোসেন (৪০)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মোবাইল, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণে ব্যবহৃত লাগেজ ও চোরাই স্বর্ণ।
র্যাব জানিয়েছে, চক্রটি সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা গত ১৫ বছরে প্রায় ৩০০ ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান করে তাদের কাছ থেকে মূল্যবান মালামাল লুট করেছে। চক্রের মূলহোতা আমিরের বিরুদ্ধে অজ্ঞান ও মলম পার্টিসংক্রান্ত ১৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ব্যাংকপাড়ায় সাধারণ যাত্রীদের, ব্যাংকে আসা গ্রাহকদের টার্গেট করে থাকে। চক্রটি বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাসফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করত। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল। বিদেশফেরত যেসব ব্যক্তির কোনো স্বজন বিমানবন্দরে আসেন না এবং নিজস্ব গাড়ি নেই তাদের টার্গেট করে চক্রটি। তারা কৌশলে বিদেশফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কুশল বিনিময় করে চক্রের অন্য সদস্যদের নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরে একই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত হয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য রাজি করাত। তারা একসঙ্গে বাসের টিকিট কেটে যাত্রা শুরু করত। ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যরা কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে ভুক্তভোগীদের অচেতন করত। এরপর প্রবাসীর সঙ্গে থাকা লাগেজের টোকেনের মাধ্যমে বাস থেকে মালামাল নিয়ে চক্রটি পরবর্তী স্টেশনে নেমে যেত।
গ্রেপ্তারদের বিষয়ে তিনি বলেন, চক্রের হোতা আমির বিমানবন্দর এলাকায় ফাস্টফুডের দোকানে চাকরির আড়ালে গত ১৫ বছর ধরে এসব অপরাধ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, চক্রে আরও ছয়-সাতজন বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিল। তাদের মধ্যে অনেকে বর্তমানে কারাগারে। এ ছাড়া ১৫টি মামলার আসামি আমির র্যাব ও পুলিশের হাতে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছে। পরে জামিনে মুক্ত হয়। মূলত লুট করা টাকার একটি অংশ সে জামিনসংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যয় করে। আমিরের সহযোগী গ্রেপ্তার লিটন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। পরে সে মাইক্রোবাস চালানো শুরু করে। এর আড়ালে তিন-চার বছর ধরে আমিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল লিটন। সেও একাধিকবার একই ধরনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়। এ ছাড়া গ্রেপ্তার আবু বক্কর আট-নয় বছর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে কর্মরত ছিল। পরে গত ছয়-সাত বছর আগে নিজেই রাজধানীর শ্যামপুরে জুয়েলারির দোকান প্রতিষ্ঠা করে। জুয়েলারি দোকানের আড়ালে গত দুই-তিন বছর ধরে এ চক্রের লুট করা স্বর্ণ গ্রহণ, রূপ পরিবর্তন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার জাকির হোসেন ছাপাখানার ঠিকাদার হিসেবে কর্মরত। গত তিন-চার বছর আগে আমিরের মাধ্যমে চক্রে যোগ দেয়। সে লুট করা স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিল।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের খানাখন্দে রবিবার ভোরে বৃষ্টির পানি জমে। এতে গাজীপুর মহানগরীর কুনিয়া তারগাছ থেকে ঢাকার বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ যানজটে দুর্ভোগে পড়ে ওই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা। দীর্ঘ সময় গাড়ি না পেয়ে ও যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে চলাচল করেছেন অনেক যাত্রী। এতে গাজীপুর অংশে আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, মিলগেট, কলেজ গেট, কুনিয়া তারগাছা পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বোর্ডবাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্তও যানচলাচল ছিল ধীরগতি।
সরেজমিনে পরিবহন চালক ও মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিবার সপ্তাহের কর্মদিবসের প্রথম দিন হওয়ায় সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অন্য দিনের চেয়ে বেশি ছিল। এ ছাড়া উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কে খানাখন্দে গাড়িগুলো এমনিতেই ছিল ধীরগতি। অপরদিকে ভোরে বৃষ্টিতে রাজধানীর বিমানবন্দর ও গাজীপুর অংশে মহাসড়কের ওপর পানি জমে খানাখন্দগুলো বড় হয়ে যাওয়ায় চার লেনের মহাসড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী অংশে মিল গেট থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত অসংখ্য খানাখন্দ বৃষ্টিতে বড় হয়ে গাড়ি চলাচলে ধীরগতি তৈরি হয়। আবার কোথাও কোথাও গাড়ি পুরোই আটকে গেছে।
চান্দনা চৌরাস্তা থেকে উত্তরার উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। তিনি জানান, বাসে উঠে কিছুদূর গিয়েই যানজটের মুখে পড়তে হয় তাকে। দীর্ঘসময় গাড়িতে বসে থাকলেও যানজট না কমায় কোথাও হেঁটে ও রিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।
অপর এক যাত্রী মেহেদী হাসান জানান, বাসের জন্য দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পথে সিএনজি অটোরিকশা করেও যানজটের কারণে বেশিদূর এগোতে পারেননি।
গাজীপুর পরিবহনের চালক ইসমাইল হোসেন জানান, সকাল ৮টায় গাড়ি ছেড়ে যানজটের কারণে ওই বাসের প্রায় যাত্রীই নেমে বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে গিয়েছেন। ভোর ৫টায় গাজীপুরের শিমুলতলী থেকে ঢাকার উদ্দেশে ফার্স্ট ট্রিপ ছেড়ে গিয়েছে, কিন্তু সেই গাড়ি দুপুর ২টাও গন্তব্যে পৌঁছায়নি।
মহাসড়কে যানজটের অন্যতম কারণ শুধুই খানাখন্দ। এয়ারপোর্ট এলাকায় খানাখন্দে ভরা মহাসড়কে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় এ যানজট তৈরি হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, এয়ারপোর্ট এলাকায় উভয়মুখী রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমার কারণে এক লেনে গাড়ি চলাচল করেছে। ফলে ট্রাফিক চেইন সিস্টেমে জিএমপি এরিয়ার ঢাকামুখী রাস্তায় যানবাহনের ধীর গতি হয়। তবে এয়ারপোর্টের রাস্তার সমস্যার কারণে জিএমপির ময়মনসিংহমুখী ইনকামিংয়ে ধীরগতি থাকা সত্ত্বেও জিএমপির অভ্যন্তরে ময়মনসিংহমুখী রাস্তায় যান চলাচল একদম স্বাভাবিক ছিল। এ ক্ষেত্রে মহাসড়কটির ঢাকামুখী রাস্তা ব্যবহারকারীরা সাময়িক অসুবিধায় পড়ে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, মূলত রাজধানীর বিমানবন্দরে সড়কের ওপর পানি জমে থাকায় ঢাকাগামী লেনে যানজট তৈরি হয়। মহাসড়কের টঙ্গীর অংশে যথেষ্ট খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় মহাসড়কে পানি জমে না থাকলে গাজীপুর থেকে গাড়িগুলো রাজধানীতে প্রবেশ সম্ভব ছিল। ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করছে। বৃষ্টিতে তৈরি হওয়া মহাসড়কের খানাখন্দ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে।
ফরিদপুরে বহুল আলোচিত দুই হাজার কোটি টাকা পাচার মামলার অন্যতম আসামি দুই ভাই মো. ইমতিয়াজ হাসান রুবেল ও সাজ্জাদ হোসেন বরকতের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল রবিবার তিন মামলায় রুবেল-বরকতের সহযোগী সাইফুল ইসলামের (৩৫) জামিনের আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় ফরিদপুরের দুই আদালত।
পুলিশ ও আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর শহরতলীর বনগ্রামের বাসিন্দা মাজেদ মল্লিকের ছেলে সাইফুল এক সময় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তবে পরবর্তীতে বহিষ্কার করা হয়। রুবেল-বরকতের নির্দেশে বিভিন্ন ব্যক্তিকে মারধর ও হুমকির মূল নায়ক ছিলেন।
ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতার আইনজীবী শফিক মুন্সী বলেন, প্রথমে অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে একটি মামলার শুনানিতে জামিন নাকচ করা হয়। পরে জেলা জজ আদালতে বাকি দুটি মামলার শুনানিতে জামিন নাকচ হয়ে যায়।
তিনি জানান, জেলা ও দায়রা জজ আকবর আলী শেখের আদালতে দুটি এবং অতিরিক্ত জেলা জজ-২ এর শিয়াবুল ইসলামের আদালতে একটিসহ তিনটি মামলায় জামিনের আবেদন করা হয়। তিনটি মামলাতেই তার জামিনের আবেদন নাকচ করে দেয় আদালত।
তিনি জানান, তিন মামলার মধ্যে রয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম চৌধুরীর ওপর হামলা ও কুপিয়ে জখম করা, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক দীপক মজুমদারের ওপর হামলা ও কুপিয়ে জখম করা এবং বিআরটিসির ম্যানেজার দুলাল লস্করের চাঁদাবাজীর অভিযোগে করা মামলা।
সাইফুল পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঢাকার কাফরুল অভিযোগে রুবেল-বরকতের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকা পাচারের যে মামলা করে সেই মামলারও চার্জশিটভুক্ত আসামি সাইফুল।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ছোটন হত্যা মামলা, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার মামলাসহ আরও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
২০২০ সালের ১৬ মে শহরের গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লাবাড়ি সড়কে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ১৮ মে মামলা করেন সুবল চন্দ্র সাহা।
ওই মামলার সূত্র ধরে ওই বছর ৭ জুন ফরিদপুরে পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। ওই দিন ফরিদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের শহরতলীর বদরপুরস্থ আফসানা মঞ্জিল নামের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রুবেল বরকতসহ ১০জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন সাইফুল।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার জানিয়েছেন, আদালতে জামিনের আবেদন নাকচ হওয়ার পর সাইফুলকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং মামলাসহ বাকি মামলাগুলোতেও সাইফুলকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হবে।
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনা ঘটেছিল শুক্রবার রাতে। তারপর থেকে আসছিল হতাহতের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য। তবে প্রকৃত ভয়াবহতার চিত্র ফুটতে শুরু করে গতকাল শনিবার ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে। সকালে দেখা যায় তিনটি ট্রেনের বেশিরভাগ কামরা পড়ে আছে মাটিতে। কোনো কামরা পুরোপুরি উল্টে গেছে। কোনোটি আবার উঠে গেছে আরেকটির ওপর। আশপাশে, সামনে-পেছনে শুধু মৃতদেহ। কয়েক ঘণ্টা আগেও যারা বেঁচে ছিলেন, যাদের চোখে স্বপ্ন ছিল তারা লাশ হয়ে পড়ে আছেন খোলা আকাশের নিচে। আহত ও স্বজনহারাদের আর্তনাদ-হাহাকার আর অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দে গতকাল সারা দিনই বিভীষিকাময় ছিল ভারতের ওড়িশার বালাশ্বরের কাছের বাহানগায়ের বাতাস। ওড়িশা রাজ্যে ঘোষণা করা হয়েছে এক দিনের শোক।
শুক্রবার রাতে বালাশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর উদ্ধার শেষে দেশটির সরকার ২৮৮ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও হাজার ছুঁইছুঁই করছে। উদ্ধারকাজ শেষ হলেও এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মানুষ আটকে থাকার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। উদ্ধারকাজের নেতৃত্ব দেওয়া ওড়িশা ফায়ার সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু সারাঙ্গি জানান, নিহতের সংখ্যা ২৮৮। অবশ্য উদ্ধারকাজ শেষ হওয়ার পর রেল কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। ভারতের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াও দাবি করেছে নিহতের সংখ্যা ২৬১। দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিও প্রথমে ২৬১ জনের কথা বললেও গতকাল সন্ধ্যার পরে তারা নিহতের সংখ্যা ২৮৮ বলেই জানায়। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। দেশটির কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মাও তেমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। এখন আমরা সংযোগ পুনঃ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করব। তবে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।’
এনডিটিভি জানায়, যাত্রীবাহী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল। বেলা ৩টার দিকে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ট্রেনটি পৌঁছায় বালাশ্বরে। কাছেই বাহানগা বাজারের কাছে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রেনটি। সে সময় তৃতীয় ট্রেন যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসও এই দুর্ঘটনার শিকার হয়।
ওড়িশা রাজ্যের মুখ্যসচিব প্রদীপ জেনা দুর্ঘটনার পরপর জানিয়েছিলেন, দুর্ঘটনাস্থলে অন্তত ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ জন অতিরিক্ত ডাক্তার সেখানে সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে।
ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনার কারণ কী, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় মানুষ বলছে, মালগাড়ি গিয়ে ধাক্কা দেয় করমণ্ডল এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। উল্টোদিক থেকে আসছিল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। উল্টে যাওয়া কামরায় ধাক্কা লেগে সেই ট্রেনের অধিকাংশ কামরা উল্টে যায়। গতকাল দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একজন ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমি ১০ থেকে ১৫ জনের নিচে চাপা পড়ি। আমি ওই মানুষের স্তূপে সবার নিচে ছিলাম। আমার হাতে আর ঘাড়ে আঘাত লাগে। আমি যখন ট্রেনের বগি থেকে বের হই, তখন দেখি কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে, কারও আবার মুখ সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে গেছে।’
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন রেলওয়ে সেফটি বিভাগের কমিশনার। এ সংস্থাটি বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে।
এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সুনিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও সিগন্যালের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই রুটে ট্রেনের মধ্যে সংঘর্ষ প্রতিরোধী ব্যবস্থা ‘কবচ’ ব্যবহার করা হতো না। রেলওয়ের মুখপাত্র অমিতাভ শর্মা জানান, কবচ সিস্টেমটি এই রুটে নেই। বর্তমানে দিল্লি-হাওড়া এবং দিল্লি-বোম্বে রুটে কবচ স্থাপন করা হচ্ছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের চারটি বগি ও ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের রেললাইনে পড়ে, যে লাইন দিয়ে যশবন্তপুর-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস যাচ্ছিল। দ্বিতীয় ট্রেনটির পেছন দিকের দুটি বগি তখন লাইনচ্যুত হয়।
রেলওয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১২টি বগি বাহানগার বাজার স্টেশন পার করার সময় লাইনচ্যুত হয় এবং পাশের লাইনের ওপর পড়ে। সে সময় ওই লাইন দিয়ে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন যাওয়ার সময় সেগুলোর সঙ্গে ধাক্কা খায় এবং ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, বাহানগা বাজার স্টেশনে চারটি রেললাইন আছে, যার একটিতে দুর্ঘটনার সময় একটি মালবাহী ট্রেন দাঁড়িয়ে ছিল। যাত্রীবাহী ট্রেন দুটি ভিন্ন ভিন্ন লাইনে একে অপরকে বিপরীত দিক দিয়ে পার করার কথা ছিল। কিন্তু একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনে পড়ে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ হয়।
হিন্দুস্তান টাইমস পত্রিকা বলছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ১৫টি কোচ লাইনচ্যুত হয়ে পাশের লাইনের ওপরে পড়ে এবং পরে হাওড়া এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে সেই ট্রেনের দুটি বগি লাইনের বাইরে চলে যায়।
অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছে যে প্রথমে হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়। করমণ্ডল এক্সপ্রেস পশ্চিমবঙ্গ থেকে তামিলনাড়ু যাতায়াতের মাধ্যম। দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে ট্রেনটি শালিমার স্টেশন অতিক্রম করে। পত্রিকাটি বলছে, মূলত তামিলনাড়ুতে কাজের জন্য ও উন্নত চিকিৎসার জন্য যারা গিয়ে থাকেন, তারা এই ট্রেন ব্যবহার করে থাকেন।
এদিকে বিবিসি বলছে, দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের পাঠানো খবর ও ছবি দিয়ে সেখানকার সবশেষ পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। রেললাইনসহ আশপাশের জায়গাগুলোতে ট্রেনে থাকা মানুষের জিনিসপত্র ছড়িয়ে রয়েছে। লাইনের পাশে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরা মৃতদেহ সারিতে রাখা ছিল। কিছুক্ষণ পরপর এই মৃতদেহগুলো গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ট্রেনের বগির ভেতরে মানুষের স্যান্ডেল, কাপড় এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্ধারকাজ চলাকালে কয়েকজনকে পড়ে থাকা কাপড় ও দড়ির সাহায্যে টেনে বের করা হয়।
ওড়িশার মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা জানিয়েছেন, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত মানুষকে গোপালপুরে একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কিছু মানুষকে বালাশ্বর মেডিকেল কলেজেও নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের বাইরে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, বালাশ^র হাসপাতালের পোস্টমর্টেম বিভাগের বাইরে শত শত মানুষ ভিড় করেছে। শুক্রবার রাতেই ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রদীপ জেনা। মানুষ নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে এসে রক্তদান করে যাচ্ছে।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব শুক্রবার দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভুক্তভোগীদের সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের আশ্বাস দেন। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা শিগগিরই বোঝা যাবে। এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে তিনি পদত্যাগ করবেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের চিন্তা মানুষের জীবন বাঁচানো ও উদ্ধারকাজ শেষ করা।’
রেলমন্ত্রী অশি^নী বৈষ্ণব বলেছেন, প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া গুরুতর আহতদের জন্য দুই লাখ রুপি ও অপেক্ষাকৃত কম আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি বলেছেন, এই মর্মান্তিক ঘটনায় যারা পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন তাদের পাশে রয়েছে সরকার। এটা বেদনাদায়ক ঘটনা। আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। এটা গুরুতর ঘটনা। তিনি বলেন, এই দুর্ঘটনার প্রতিটি দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ট্রেন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গে ঘুরে দেখেন দুর্ঘটনাস্থল। পরিদর্শনকালে মমতা বলেন, এই দুর্ঘটনার পেছনে কিছু আছে। ভালো করে তদন্ত করতে হবে। তিনি অভিযোগ তোলেন, রেলের কাজে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের অ্যান্টিকলিশন ডিভাইস ছিল না। ভারতের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮১ সালে। সে সময় অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বিহার রাজ্যে সাইক্লোনের সময় লাইনচ্যুত হয়ে নদীতে পড়ে যায়। ওই দুর্ঘটনায় অন্তত ৮০০ মানুষ মারা গিয়েছিল।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। আর স্বল্প সময়ের উৎপাদন দিয়েই গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিয়া মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ দেখা। এরই অংশ হিসেবে স্বল্প সময়ের উৎপাদন দিয়ে আমরা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছি, যাতে ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে বের করে আনা যায়। এখন লক্ষ্য হচ্ছে ভালো লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা।
মিয়া মামুন আরও বলেন, মূলত এমারেল্ডের তেল জাপানে রপ্তানির উদ্দেশ্যেই আমরা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করেছি। একটি রুগ্ণ কোম্পানিকে স্বাভাবিক উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি চেয়ারম্যানের সহায়তায় এখন আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি জাপানে রপ্তানির জন্য। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই এটি সম্ভব হবে বলে মনে করছি। কিছু কমপ্লায়েন্স ইস্যু ছিল, যা আসন্ন এজিএমে সমাধান হয়ে যাবে। এরপর তেল রপ্তানিতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
গত ১ জুন এমারেল্ড অয়েলের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কোম্পানিটির আগের উদ্যোক্তা বাদে অন্য সবাই এ লভ্যাংশ পাবেন। ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে দীর্ঘদিন বিদেশে পলাতক থাকায় আগের উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার ফ্রিজ করা আছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল কোম্পানিটির তৎকালীন পর্ষদ। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেষ্টায় ২০২১ সালে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। বন্ধ থাকা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে জাপান-বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড। মিনোরির নতুন বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফেরে এমারেল্ড অয়েল। কোম্পানিটির রাইস ব্র্যান তেলের দুটি ইউনিটের একটি সচল রয়েছে, যেখান থেকে এখন প্রতিদিন প্রায় ৪৫ টন ক্রুড অয়েল উৎপাদন হচ্ছে। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি। কোম্পানিটি উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের সহায়তা দেন এসইসি চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে এসইসি চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুধু এমারেল্ড নয় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, রিং সাইন টেক্সটাইলসহ প্রায় ২০টির মতো পুরনো বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানি আমরা পুনর্গঠিত করেছি। এরমধ্যে অনেকগুলো কোম্পানি নতুন ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনে ফিরেছে। পুরনো বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলো সচলে আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে আরও প্রায় ২০টি কোম্পানি উৎপাদনে ফিরবে। এখন বড় বড় গ্রুপগুলো পুরনো বন্ধ থাকা এসব কোম্পানি নিতে চাইছে। কারণ নতুন করে জমি, যন্ত্রপাতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগসহ পুরো প্রক্রিয়া শেষে উৎপাদন শুরু করতে অনেক সময় ও অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু পুরনো কোম্পানি ছয় মাসের মধ্যে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা যায়।
এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, পুরনো কোম্পানিগুলো বন্ধ থাকায় দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছিল। মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের মাধ্যমে সেসব কোম্পানি এখন বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফিরছে, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে। এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
এদিকে দেশজুড়ে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছিল না এমারেল্ড অয়েল। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন সংকট কাটাতে গত ১১ মে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রাইস হাস্ক (ধানের তুষ) বয়লার সংযোজন করেছে কোম্পানিটি। এর ফলে এখন থেকে টানা ২৪ ঘণ্টা ধানের কুড়ার তেল উৎপাদন করতে পারবে এমারেল্ড অয়েল। এর ফলে প্রতিদিন অন্তত ২০০ টন রাইস ব্র্যান ক্রাশিং করা যাবে, যা থেকে ৪০-৪৫ টন তেল পাওয়া যাবে। বয়লার স্থাপনের কারণে পরিশোধিত তেল উৎপাদন সর্বোচ্চ ৭০ টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি কোম্পানি এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদন চালাচ্ছে। মুনাফাও হচ্ছে। প্রথম বছরের স্বল্প উৎপাদন থেকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাঁচামাল, জ্বালানি থেকে সবকিছু অনুকূলে থাকায় এটি এখন আমাদের আরও বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
এদিকে নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার বরাদ্দ হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
এমারেল্ড অয়েলকে সফলভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার পর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা তুলে দেওয়া হয় মিনোরির হাতে। এটিরও ধারাবাহিক উন্নতি দেখা গেছে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও মুনাফা বাড়ছে।
গত ১৪ বছর ধরে গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের তালিকা করছে বিএনপি। গায়েবি মামলাকারী কর্মকর্তাদের তালিকাও করছে তারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের এই তালিকা করা হচ্ছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিস্তারিত তথ্যও সংগ্রহ করছে দলটি।
গত শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে একথা জানিয়েছে বিএনপি। দলের দপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও অনুরূপ কথা জানিয়েছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুন, গুম, গায়েবি মামলায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রে পাঠাতে জেলা নেতাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। সমন্বিত তথ্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে পাঠানো হবে।’
তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খুন, গুমের শিকার নেতাকর্মীর স্বজনদের কান্না থামছে না। নিখোঁজদের ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদন করেও লাভ হচ্ছে না। আমরা খুন, গুমের শিকার নেতাকর্মীদের তালিকা করছি এবং জড়িতদের তথ্যও সংগ্রহ করছি। জনগণ একদিন তাদের বিচার করবে।’
নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ নিখোঁজদের খুঁজে পেতে নানা কর্মসূচি পালন করছে। সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বারিধারার আমেরিকান সেন্টারে বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠকে নিখোঁজ নেতাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন তিনি।
বিএনপির দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতারা বলেন, গত ১৫ মে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় জেলা সভাপতি/আহ্বায়ককে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৮ মে দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি জেলা নেতাদের কাছে পাঠানো হয়। এ সংক্রান্ত একটি সেল গঠন করা হয়েছে। তথ্য সেলে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গায়েবি মামলাকারী ও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয়ও পাঠাতে বলা হয়েছে।’
চিঠিতে সারা দেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের খুন ও গুম সংক্রান্ত এবং মিথ্যা ও গায়েবি মামলাসংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট সার্কেলের এডিসি, জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), মিথ্যা ও গায়েবি মামলাকারী ও তদন্ত কর্মকর্তার নাম-পরিচয় পাঠাতে বলা হয়েছে। সারা দেশে ৪২৭ জন গুমের শিকার নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। খুনের তালিকায় রয়েছে ১ হাজার ২৭৩ জন।’
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘সম্প্রতি উচ্চ আদালত নেতাকর্মীদের জামিন দিলেও নিম্ন আদালত জামিন বাতিল করে নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠিয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের নামও তালিকাভুক্ত করতে বলা হয়েছে।’
আমেরিকান সেন্টারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মায়ের ডাকের সদস্যদের বৈঠক : গত ১০ মে ‘মায়ের ডাক’ সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে রাজধানীর বারিধারার আমেরিকান সেন্টারে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। বৈঠক শেষে সংগঠনের নেত্রী তুলি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতের আমন্ত্রণে আমরা আমেরিকান সেন্টারে গিয়েছিলাম। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের বিষয় তুলে ধরা হয়। তাদের ফিরে পেতে রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করা হয়। জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা না করে উল্টো নানাভাবে হয়রানি করছে।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়, সেখানেই আমরা তা বন্ধে কাজ করি। বাংলাদেশে গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।