
তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদদৌল্লাহ। ১৪ অক্টোবর তার সফরে আসার কথা রয়েছে। এটিই হবে ব্রুনাইয়ের সুলতানের প্রথম বাংলাদেশ সফর। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
এ কর্মকর্তা জানান, সফরকালে দুই দেশের মধ্যে চারটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অভিবাসন, জ¦ালানি সহযোগিতা এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আকাশপথে যোগাযোগ।
তিনি আরও জানান, ব্রুনাইয়ের সুলতান দেশে আসার পরদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। একই দিনে তিনি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন এবং তার সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দেবেন।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে ব্রুনাই সফর করেন। ওই সময় দুই দেশের মধ্যে কৃষি ও মৎস্য খাতে সহযোগিতায় দুটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। এবার সেসব বিষয়ের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি কমানো হলেও আগস্টে আবার বাড়ানো হয় ভোজ্য তেলের দাম। প্রায় আড়াই মাস পর বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমানো হয়। এ সিদ্ধান্ত গতকাল মঙ্গলবার কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারের চিত্র ভিন্ন। ব্যবসায়ীদের পুরনো দামেই সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন করে নির্ধারণ করা দাম কার্যকরের জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকে জানানো উচিত। তা না হলে তাদের লোকসান দিতে হয়। কিন্তু যখন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়, তখন তো সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করার বিষয়ে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত একধরনের তামাশা। কারণ কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ব্যবসায়ীরা যত সময় নেন, বাড়ানোর সিদ্ধান্তের বেলায় উল্টো।
গত সোমবার বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৭৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের ৬৫ টাকা কমিয়ে ৮৮০ টাকা ঠিক করা হয়েছে। আর খোলা সয়াবিন লিটারে ১৭ টাকা কমিয়ে ১৫৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তদের সিদ্ধান্ত জানায়, যেখানে বলা হয় মঙ্গলবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
নতুন দামের তেল বাজারে না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিটারে ১৪ টাকা কমের তেল বাজারে আসতে আরও দুই-চার দিন সময় লাগবে। ফ্যাক্টরি থেকে সিল দেওয়া তেল পেতে আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের মূল্য কমে, তখন এই কম দামের তেল দেশের বাজারে আসতে এক-দুই মাস সময় লাগতে পারে, অর্থাৎ সাধারণ জনগণকে এই তেল পেতে কিছুটা ধৈর্য ধরে ব্যবসায়ীদের সময় দিতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, সেই দামে বাজারে পণ্য না পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অধিকাংশ সময় ব্যবসায়ীরা দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। এখন বেশি দামে কেনা তেল নতুন দামে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন না, কিন্তু যখন দাম বৃদ্ধির বিষয় আসে, তখন ঠিকই বেশি দামেই তারা বিক্রি করেন এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে নতুন দামের তেল আসতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে। ঘোষণা দিয়ে পরদিন তা কার্যকর করলে তারা তো লোকসান দিয়ে তেল বিক্রি করতে পারবেন না।
গতকাল রাজধানীর হাতিরপুল, মহাখালী ও মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখনো কোনো দোকানে ১৪ টাকা কমের বোতলজাত সয়াবিন তেল আসেনি। ফলে দোকানিরা আগের দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন।
হাতিরপুল বাজারের বাসার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আবুল বাসার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যখন যা সিদ্ধান্ত আসবে, তাই আমাদের মেনে নিতে হবে। লিটারে ১৪ টাকা কম হলে ৫ লিটারে আমার প্রায় ৬০-৭০ টাকা লোকসান দিতে হবে। তবে এমন ঘোষণা আসার অন্তত এক সপ্তাহ আগে গণমাধ্যম ও নোটিসের মাধ্যমে আমাদের অবহিত করলে আমাদের বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে হতো না।’
মহাখালী ওয়ারলেস গেটের মাহিম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এক দিন আগে ১ ও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনেছি। কোম্পানিগুলো তেল বিক্রি করে হঠাৎ করেই সরকারের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত দিলে তা কীভাবে মানা যায়? এটি তাদের একতরফা সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই না। তবে যে দামে তেল কিনেছি, লোকসান দিয়ে তা বিক্রি করা সম্ভব নয়।’
মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজারে আসা বিল্লাহ খান নামের এক বেসরকারি কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য কমিয়ে কী লাভ? এসব নিয়ম শুধু কাগজে আর কলমের হিসাব। বাস্তবে কোনো মিল নেই।’
খাতুনগঞ্জেও প্রভাব নেই : আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে ১৭ টাকা কমানো হলেও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। গত সোমবার বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সয়াবিনের দাম কমানোর এ ঘোষণা দেয়। হিসাব অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন প্রতি লিটারে ১৭ টাকা হিসাবে প্রতি মণে ৬৮০ টাকা কমার কথা থাকলেও খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দাম ছিল আগের মতোই।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও আগে থেকেই বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কম ছিল। যে কারণে বাজারে ওই ঘোষণার কোনো প্রভাব পড়েনি।
দেশে ভোগ্যপণ্যের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গতকাল মঙ্গলবার রেডি সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৫ হাজার ৮৫০ থেকে ৬ হাজার টাকায়। আগের দিনও একই দামে সয়াবিন বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল খাতুনগঞ্জে এস আলমের রেডি সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ৫ হাজার ৮৫০ টাকা। সিটি গ্রুপের সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকায়। একইভাবে এস আলমের পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ১৩০ এবং সিটি গ্রুপের পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ১৫০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের শীর্ষ ব্যবসায়ী আর এম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ জানান, অ্যাসোসিয়েশন থেকে সয়াবিনের দাম কমানো হয়েছে। প্রতি লিটারে ১৪-১৭ টাকা কমেছে। খুচরা বোতলজাত সয়াবিনের দাম আগে না কমলেও খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে আগে থেকেই সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম কম ছিল; বিশেষ করে এখন যে দাম ঘোষণা করা হয়েছে, তার আগে থেকেই বাজার কম ছিল। যে কারণে দাম কমার ঘোষণার প্রভাব পাইকারি বাজারে পড়েনি। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কয়েক দিন ধরে বুকিং রেটও বাড়ছে বলে জানান তিনি।
সরেজমিন বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিনের দাম গায়ের দাম অনুযায়ী প্রতি লিটার ১৯২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারাও ওই দামে কিনে নিচ্ছেন। নগরীর আসকারদীঘির পাড় বাজারের মুদি ব্যবসায়ী সুধীর দেব দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত কয়েক দিনে বিভিন্ন পরিবেশক প্রচুর তেল দোকানে সরবরাহ করেছে। আগের দামে কেনা এসব তেল কম দামে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
নতুন কাজির দেউড়ি বাজারের গ্রোসারি শপ নাছির স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. নাছির উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন লেবেলে নতুন তেল বাজারে না আসা পর্যন্ত বাজারে সয়াবিনের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিচ্ছিন্ন বস্তুকণাকে খতিয়ে দেখা ও নিয়ন্ত্রণের উপায় গবেষণা পথ দেখিয়ে কোয়ান্টাম বিদ্যার নয়া দ্বার উন্মোচন করার স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ফ্রান্সের অ্যালাই অ্যাসপেক্ট, যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ ক্লজার ও অস্ট্রিয়ার আন্টন জেলিঙ্গার।
গতকাল মঙ্গলবার নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে জানানো হয়, ‘বেল ইনেকুয়ালিটির পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ ও কোয়ান্টাম এন্টেঙ্গেলমেন্ট’ গবেষণায় অবদানের জন্য তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হলো। নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ৩ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। প্রথম দিনে অর্থাৎ গত সোমবার চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই ঘোষণার পালা। আগামী ১০ অক্টোবর অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হবে কার্যক্রম।
নোবেল কমিটির তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছরের অক্টোবরের প্রথম সোমবার নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হয়। সে হিসাবে গত সোমবার শুরু হলো এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পালা। প্রথম দিন ঘোষণা করা হলো চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীর নাম। প্রতিবছর চিকিৎসা, পদার্থ, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিএ ছয় শাখায় নোবেল দেওয়া হয়।
এ বছর নোবেল ফাউন্ডেশন ২০২২ সালের বিজয়ীদের সঙ্গে ২০২০ ও ২০২১ সালের বিজয়ীদেরও আগামী ডিসেম্বরে সুইডেনের স্টকহোমে নোবেল সপ্তাহে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে রসায়নে নোবেল বিজয়ীর নাম। এরপর যথাক্রমে ৬ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে সাহিত্যে ও ৭ অক্টোবর শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম। মাঝে শনি ও রবিবার বিরতি দিয়ে আগামী সোমবার শেষদিন ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম।
মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। সেই সঙ্গে শিক্ষার সম্প্রসারণ এবং দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে তার অক্লান্ত প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেছে।
সম্প্রতি নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার হোটেল রিট্জ্-কার্লটনের বলরুমে নেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে কলামনিস্ট পেটুলা ডিভোরাকের নিবন্ধটি বহুল প্রচারিত এই মার্কিন দৈনিকে সোমবার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকার ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। নিবন্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে একটি সম্মানজনক স্থানে নিয়ে আসার জন্য শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। কীভাবে প্রধানমন্ত্রী একজন নারী হয়েও বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেটি উল্লেখ করেছেন তিনি।
‘দিস প্রাইম মিনিস্টার লাফড এট দ্য মিম্ শি ইন্সপাইয়ার্ড : ডিসপাইট বিইং আ ওম্যান’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধটিতে তিনি শুরু করেন এভাবে ‘তিনি তার ছয় বছর বয়সী মেয়েকে উঁচু করে তুলে ধরেছেন, রিট্জ্-কার্লটন হোটেলের বলরুমে কালো রঙের স্যুট পরিহিত পুরুষদের ভিড়ে ছোট্ট মেয়েটির গোলাপি পোশাকটি চোখে পড়ছিল।’
‘আমি তাকে (আর মেয়েকে) প্রধানমন্ত্রীকে দেখাতে চাই’ বলছিলেন আব্দুল্লাহ নিয়ামি। নর্দার্ন ভার্জিনিয়ায় প্রথম শ্রেণিতে পড়া তার মেয়ে জোয়াকে তিনি গত সপ্তাহে এমন একজন নারী সরকারপ্রধানকে দেখানোর জন্য নিয়ে আসেন, যা আমেরিকায় সচরাচর দেখা যায় না।
পেটুলা ডিভোরাক তার নিবন্ধে লিখেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ প্রদান শেষে অন্যান্য অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার রিট্জ্-কার্লটন হোটেলে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিবেক জাগ্রত করার আহ্বান জানান।’
বিশ্বে দীর্ঘতম সময়ের নারী সরকারপ্রধান, রাশিয়ার চেয়ে বেশি জনবহুল একটি দেশের নেতৃত্ব প্রদানকারী এবং জনসভায় গ্রেনেড হামলাসহ অন্তত ২০ বার হত্যা প্রচেষ্টা থেকে রক্ষা পাওয়া শেখ হাসিনা একজন দাদি ও নানি। তার ৭৬তম জন্মদিন তিনি তার ছেলে ও ১৬ বছর বয়সী নাতনির সঙ্গে পালন করেছেন যারা রাজধানীর (আমেরিকার) বাইরে একটি শহরতলিতে বাস করেন।
পেটুয়া আরও লিখেছেন, আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পৃথিবীতে একজন প্রধানমন্ত্রী কীভাবে অন্য সাধারণ একজন দাদির মতো হওয়ার সময় পান? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের জন্য রান্না করি। মুরগি বিরিয়ানি... আমার ছেলের বাড়িতে, আমার নিজের রান্নাঘর আছে; সেটা শুধু আমার জন্যই।’
তাছাড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সেকথা উল্লেখ করে এই সাংবাদিক বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিবির জীবন ভালো নয়। তারা (রোহিঙ্গারা) তাদের দেশে ফিরতে চায়।’
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের বিষয়টির তুলনা করা যায় না বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
দেশীয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির প্রশংসা করেছেন পেটুলা। ‘একজন নারী হওয়া সত্ত্বেও’ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ওই সময় মোদি তাকে বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ভারতের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জবাবে বলেছিলেন, ‘পুরুষদের চেয়ে নারীরা সব সময়ই এগিয়ে।’ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জবাব বেশ সাড়া ফেলেছিল ২০১৫ সালে। পেটুলা ডিভোরাক সেই প্রসঙ্গ তুললে আবারও হেসে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীরা সব সময়ই পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে।’
বাংলাদেশের প্রধামন্ত্রীর প্রশংসা করে পেটুলা লিখেছেন, ‘গত এক দশকে শেখ হাসিনা তার দেশে দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। শিক্ষার সুযোগ প্রসারিত করেছেন এবং আবাসন ব্যবস্থার উন্নতি করেছেন।
শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, ‘এখন আর বাংলাদেশে কুঁড়েঘর দেখা যায় না। একেবারে সাধারণ কাঠামো হলেও মানুষ এখন ইট ও টিনের ছাদের বাড়িতে থাকে। আবাসনকে মানবাধিকারের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ।’
নারী অধিকার, বাসস্থান নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করেন পেটুলা ডিভোরাক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে এবং তারা আন্তরিক। চীন সব সময়ই তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপান সফর শেষে গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমন মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘ সফর প্রসঙ্গে ড. মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে এবং বিভিন্ন বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এই সংকট সমাধানে বাংলাদেশের সঙ্গে সব দেশ ঐকমত্য। আমরা শান্তির কথা বলেছি। সব দেশ শান্তির পক্ষেই কথা বলেছে। সংকট সমাধানে আমরা আমাদের করণীয় করে যাচ্ছি।’
মিয়ানমারের উসকানিতে বাংলাদেশ পা দেবে না উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘ ইদানীং অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে তারা যুদ্ধ থামাতে পারছে না এবং সুবিধাও করতে পারছে না।’ তিনি বলেন, ‘মানবাধিকার প্রশ্নে আমরা অত্যন্ত সোচ্চার। বহু দেশের তুলনায় আমাদের মানবাধিকার সমুন্নত। আমরা মানবাধিকার নিয়ে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি, সেটা তারা (জাতিসংঘ) পছন্দ করেছে। তারা যাদের গুমের কথা বলছে, দেখা গেছে তারা ভারতের জেলে আছে। জাতিসংঘের দেওয়া গুমের তথ্য ভুল, এই ভুলটা দুঃখজনক।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে সদস্য পদে আমরা আগের মতো এবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমাদের প্রস্তুতি খুব ভালো। জয়ী হব বলে আমার বিশ^াস। কারণ, পৃথিবীতে মানবাধিকার প্রশ্নে আমরা একটি সোচ্চার দেশ।’
র্যাবের সংস্কার প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য তার (রাষ্ট্রদূত) নিজস্ব বলেও মন্তব্য করেন ড. মোমেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আমরা আমাদের ইস্যুগুলো তুলে ধরেছি। আমরা সব প্রক্রিয়াই গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি।’ আগামী মাসের শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফর করবেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দেশে নিবন্ধিত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) ছাড়া কোনো ফার্মেসি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বিক্রি করলে ওই ফার্মেসির লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সরকার এ ধরনের ওষুধের প্যাকেট লাল রঙ দেওয়ার নিয়ম করতে যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার রোধে করণীয় নির্ধারণসংক্রান্ত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব নির্দেশনা দেন।
অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্র্তৃপক্ষ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, ড্রাগস অ্যান্ড কেমিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল মন্ত্রী এ বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয় না, কেউ কেনেও না। আমাদের এখানে যে কেউ চাইলেই ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে পারে। আমরা চাই কোনো ফার্মেসি যেন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি না করে। জনগণের সচেতনতা বাড়াতে অ্যান্টিবায়োটিকের মোড়কে রঙ করে দেওয়া হবে। আমরা লাল রঙ দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল প্রয়োগে বিশ্বে বছরে ১৫ লাখের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল প্রয়োগে মৃত্যুহার বাড়ছে। পৃথিবীর কোথাও রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের নির্দেশনা ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হয় না। কিন্তু দেশে যত্রতত্র ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো কোর্সও শেষ করে না অনেকে। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ওষুধ আইন কঠিন করা হচ্ছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইনের অভাব রয়েছে। এ কারণে আইন কঠিন করা হচ্ছে। ওষুধ আইন ২০২২ শেষ পর্যায়ে আছে। সংসদে পাস হলে এর প্রয়োগ শুরু হবে। যেসব ফার্মেসির লাইসেন্স নেই, তারা যেন ওষুধ বিক্রি করতে না পারে, সে বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
মাছ, মাংসেও অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খাদ্যে ইচ্ছেমতো ভেজাল মেশানো হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে আইনেরও অনেকটা ঘাটতি রয়েছে। ওষুধ আইন হলে অপচিকিৎসার সঙ্গে জড়িত ও ভেজাল মেশানোদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’
করোনার টিকা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘গত চার দিনে (বিশেষ কর্মসূচিতে) মানুষ অনেক নিয়েছে। এতে আমরা এখন লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৮ শতাংশই পূরণ করতে পেরেছি। যারা এখনো টিকা নেয়নি, তাদের জন্য আগামী তিন দিন (৪, ৬ ও ৮ অক্টোবর) টিকা দেওয়া হবে। এরপর তারা আর টিকা নাও পেতে পারেন।’
বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহ. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম বাদল, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’
'স্যার নয় আপা ডাকলেই চলবে' রংপুরের জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীনের এমন বক্তব্যের পর রাত ৯ টার দিকে আন্দোলন সমাপ্ত করে ক্যাম্পাসে ফিরে গেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এর আগে চিত্রলেখা নাজনীনের বিরুদ্ধে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে বুধবার (২২ মার্চ) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একাই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন উমর ফারুক। এর পর তার সাথে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলনে যুক্ত হন বেরোবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা।
তুহিন ওয়াদুদ তার ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসক চিত্রলেখা নাজনীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেরোবির একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে উমর ফারুক আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় আমি বাইরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম। তখন ওই শিক্ষক আমাকে দেখে আপা বলে ডাক দেন। আমি তাকে স্যার না বলে আপা কেন ডাকছেন জানতে চাই। আমার জায়গায় একজন পুরুষ দায়িত্বে থাকলেও কি তিনি স্যার না বলে ভাই ডাকতেন?
জেলা প্রশাসক জানান, রাতে তিনি ওই শিক্ষক ও আন্দোলনকারীদের স্যার ডাকতে হবে না, আপা ডাকলেই চলবে বলে জানান। এরপর তারা আন্দোলন বন্ধ করে দেন এবং ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে চলে যান।