
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে পর্যটন কেন্দ্র সাজেকের পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল সাড়ে ছয় ঘণ্টা। শুকনানন্দ রামপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসের কারণে গতকাল বুধবার সকাল থেকে ওই সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল রাস্তা থেকে মাটি সরানোর কাজ শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে সড়কটিতে যান চলাচল শুরু হয়।
এদিকে পাহাড় ধসে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাজেকগামী ও সাজেক থেকে ফেরা দুদিকের হাজারো পর্যটক সড়কে আটকা পড়েন। খাবার ও পানির সংকটে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।
বাঘাইছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুমানা আক্তার জানান, গত মঙ্গলবার রাতে প্রচুর বৃষ্টির কারণে সাজেকে যাওয়ার পথে শুকনানন্দ রামপাড়া এলাকায় রাস্তার ওপর একটি পাহাড়ের বেশ বড় অংশ ধসে পড়ে। সেখানে কোনো জনবসতি না থাকায় ঠিক কখন পাহাড় ধসে পড়ে তা জানা যায়নি। গতকাল সকালে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল শুরু হলে তখন জানা যায় পাহাড় ধসের বিষয়টি। খবর পেয়ে সকাল থেকেই সেনাবাহিনীর ২০ ইসিবির সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয়রা মাটি সরানোর কাজ শুরু করেন। এ কাজ শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে যান চলাচল শুরু হয়।
ইউএনও রুমানা আরও জানান, পাহাড় ধসের কারণে সাজেক থেকে খাগড়াছড়িগামী এবং খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকগামী প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক আটকা পড়েন। পাহাড় ধসে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান তিনি।
সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মণ জানান, সাজেকে ১১২টি কটেজ আছে। সব মিলিয়ে প্রায় চার হাজার পর্যটক সেগুলোতে থাকতে পারেন। পূজার ছুটির কারণে হাজারো পর্যটক ভিড় করেছিলেন পাহাড়ি উপত্যকা সাজেকে। সড়ক বন্ধ থাকায় সাজেক থেকে ফিরতি গাড়িগুলো মাচালং এলাকায় এবং সাজেকগামী গাড়িগুলো বাঘাইহাটে আটকে ছিল।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকালে পাহাড় ধসের বিষয়টি জানতে পারি। সাজেক এলাকায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ২০০ গাড়ি রয়েছে। যেগুলো গতকাল (মঙ্গলবার) এসেছিল। আজ (বুধবার) সকালে অনেকের চলে যাওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু পাহাড় ধসের কারণে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় সব পর্যটক আটকা পড়েন। দুপুরের দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হলে গাড়ি ছাড়তে শুরু করে।’
দুর্গাপূজা, সাপ্তাহিক ও ঈদে মিলাদুন্নবী (স.)-এর ছুটির কারণে সাজেকে বাড়তি পর্যটকের চাপ রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সেখানে দুই হাজার পর্যটক অবস্থান করছিলেন। এ ছাড়া আরও কয়েক হাজার আগামী কয়েক দিনে সেখানে যাবেন বলে আশা করছেন স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
দুদিন পার হয়ে গেল সয়াবিন তেলের নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কমার প্রভাব নেই। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, রংপুর ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভাগীয় শহর ও কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আগের দামেই সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তারা বলছেন, পুরনো দামেই যদি বিক্রি করবে তাহলে নতুন দাম নির্ধারণ কেন? তাদের দাবি, বাজারে সরকারি সংস্থাগুলোর নিয়ন্ত্রণের অভাব আছে। সে কারণে ভোক্তাদের মাশুল দিতে হচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, তারা নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করে। সয়াবিন তেলের দাম মনিটরিংয়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার থেকেই অভিযানে নামবে অধিদপ্তরের টিম।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, তারা তাদের বাজার মনিটরিং দল শনিবার থেকে মাঠে নামাবে।
গত সোমবার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। ঘোষণা অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৯২ থেকে কমে ১৭৮ টাকার বিক্রি হওয়ার কথা। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৭৫ থেকে ১৭ টাকা কমে ১৫৮ টাকা হওয়ার কথা। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮৮০ টাকা। যা আগে ছিল ৯৪৫ টাকা।
গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী জাহাঙ্গীর আলম দেশ রূপান্তরকে জানান, একাধিক দোকানে গিয়েও তিনি কম দামে সয়াবিন কিনতে পারেননি। দাম কমানোর ঘোষণার কথা তুললে বিক্রেতাদের সাফ জবাব বেশি দামে কেনা তেল কম দামে বিক্রি করে লোকসান দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘শুধু দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার মধ্যে সরকারের দায়িত্ব শেষ হয়। ভোক্তারা সেই দামে তেল পাচ্ছে কি না এ বিষয়টিও মনিটরিং হওয়া প্রয়োজন।’ জাহাঙ্গীর আলম প্রশ্ন করে বলেন, ‘দুদিনেও নতুন দাম কার্যকর হয়নি। এ ব্যর্থতা কার?’
নগরীর দেওয়ানবাজার এলাকার মুদি দোকানদার আকবর হোসেন বলেন, ‘দাম কমার ঘোষণা আসার আগেই ডিলারের লোকজন আমাদের চাহিদার অতিরিক্ত তেল গছিয়ে দিয়ে গেছেন। এখন এসব তেল কম দামে বিক্রি করলে আমরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হব। তাই আগের দামেই বিক্রি করা হচ্ছে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আগামী শনিবার থেকে তিনটি মনিটরিং টিম মাঠে নামানো হবে এবং ভোক্তারা যাতে নির্ধারিত দামে সয়াবিন তেল পায় সেটি নিশ্চিত করা হবে।’
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমান দেশ রূপান্তরকে জানান, সয়াবিন তেলের নতুন দাম নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকারের মনিটরিং টিম অভিযান শুরু করবে।
বরিশালে বিক্রেতারা বলছেন, দাম কমানো হলেও সেই তেল এখনো বাজারে ছাড়েনি কোম্পানি। কম দামের তেল বাজারে আসতে কয়েক দিন সময় লাগবে। নতুন দামের তেল না আসা পর্যন্ত যে তেল বিক্রি হবে, তা আগের দরে কিনতে হবে ভোক্তাদের।
বরিশাল নগরের নতুন বাজার এলাকার ব্যবসায়ী রিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোম্পানির লোক এসে নতুন দামের অর্ডার নিয়েছে। তবে সেই তেল দিতে কয়েক দিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, ‘ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের এখন ঝামেলা হচ্ছে। ১৪ টাকা বেশি দেখে অনেকেই গালিগালাজও করছে। কিন্তু আমরা কী করব।’
নুসরাত জাহান নামে এক ক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে তেলের দাম আগের মতোই আছে। আমাদের সঙ্গে এভাবে না করলেই পারত। আর বাজার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা কর্তারাও রয়েছেন চুপচাপ।’
এ বিষয়ে বরিশালের জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহ সোয়েব মিয়া বলেন, ‘আমরা নিয়মিত মনিটরিংয়ের কাজ করছি। মঙ্গলবার বাজার পরিদর্শন করেছি। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, বাজারে কোম্পানি থেকে নতুন তেল সরবরাহ করেননি। নতুন তেল সরবরাহ হলে তারা কম দামেই বিক্রি করবেন।’ তিনি বলেন, ‘নতুন করে তেল সরবরাহ হওয়ার পরও যদি কেউ দাম বেশি নেয় সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
ময়মনসিংহ নগরীর কালীবাড়ি এলাকার দোকানি জোনায়েদ আহম্মেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার দোকানে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৮৫ আর দুই লিটার ৩৭০ ও পাঁচ লিটারের বোতল ৯৩০ টাকায় বিক্রি করছি।’
শরিফুজ্জামান টিটু নামে এক ভোক্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যখন কোনো কিছুর দাম বাড়ে তখন ওই দিন থেকেই বাড়তি দাম নেওয়া শুরু হয়ে যায়। কিন্তু দাম কমলে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। বাজার মনিটরিং করা দরকার।’
ময়মনসিংহের ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে কম দামে সয়াবিন তেল বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলার বাজারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
রংপুরের খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমলেও বোতলজাত তেলের দাম এখনো কমেনি। ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন, বাজার মনিটরিং বা তদারকি না থাকার কারণে খুচরা দোকানদাররা যা ইচ্ছা তাই দামে বিক্রি করছে। বর্তমানে মূল্য তালিকাও ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে না হাট-বাজারের দোকানগুলোতে।
গতকাল সরেজমিনে রংপুর সিটি বাজারসহ আশপাশ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেল একেক দোকানদার একেক দামে বিক্রি করছেন।
নগরীর বুড়িরহাট বাজারের সূচনা স্টোরের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘তেলের দাম হঠাৎ কমানো হয়েছে। আমি এক লিটার বোতলজাত তেল কিনেছি ১৮১ টাকা আর বিক্রি করছি ১৮৫। লাভ হয় ৪ টাকা। কিন্তু হঠাৎ দাম কমল ১৪ টাকা। এখন আমি কি লস দিয়ে বেচব?’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রংপুর ভোক্তা অধিকারের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে অধিদপ্তরের নির্দেশনা ছাড়া কোনো অভিযানেই যেতে পারছেন না তারা। আগে নতুন মূল্য নির্ধারণ হলে অভিযোগ পেলে অভিযানে যেতেন। রংপুর ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক আফসানা পারভীন অভিযানের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
দিনাজপুর শহরের পাটুয়াপাড়া এলাকার ট্রাকচালক মামুনুর রশিদ আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘সরকার আমাদের কথা চিন্তা করে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৭ টাকা কমিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম সেই হিসাবে কমেনি।’ শহরের মাঝাডাঙ্গা গ্রামের ভ্যানচালক মো. বাবুল বলেন, ‘বাজারে তেলের দাম কিছু কমেছে। কিন্তু তেলের দাম যে পরিমাণ কমানো হয়েছে, সেই হিসেবে বাজারে কমেনি।’
চকবাজারের তেল ব্যবসায়ী প্রশান্ত কুমার ঘোষ বলেন, ‘একটা গাড়ি মিলে তেল আনতে গেলে ২০ দিন অথবা এক মাস অপেক্ষা করতে হয়। প্রতিটি গাড়ির জন্য প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে খরচ দিতে হয়। এতে করে পরিবহন খরচ অনেকটা বেড়ে যায়। সরকারের ঘোষিত দামের থেকে ৪-৫ টাকা বেশি খরচ পড়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘সরকার তো আমাদের এ ক্ষতির জন্য ভর্তুকি দেয় না। তারপরও অনেক সময় তেলের দাম বেড়ে গেলে তা পুষিয়ে নিতে হয়। কিন্তু আকস্মিক তেলের দাম কমিয়ে দিলে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়।’
দিনাজপুরের জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগমও বলেছেন, তারা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাজারে অভিযান পরিচালনা করবেন।
রাজশাহীর সাহেববাজার, নিউমার্কেট, শালবাগানসহ আরও বেশ কয়েকটি বাজারেই গতকাল পুরনো দামে সয়াবিন বিক্রি হতে দেখা গেছে। সবখানেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ক্রেতাদের বচসা হতেও দেখা গেছে।
সাহেববাজারে আমেনা বেগম নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়ীরা তা কার্যকর করে দেয়। অথচ দেখেন, এক দিন আগে ঘোষণা এলেও কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না।’ আরেক ক্রেতা মতিউর রহমান মনে করেন, ‘আজই (বুধবার) বাজার মনিটরিং করা দরকার ছিল। বাজারে ম্যাজিস্ট্রেট না এলে বিক্রেতারা এ দাম কমাবে না।’
তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহীর সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ বলেন, ‘আমরা শুনেছি কোনো কোনো ব্যবসায়ী দাবি করছেন, বেশি দামে কেনা তেল তাদের কাছে রয়েছে। এ যুক্তিতে বেশি দাম নেওয়ার কোনো অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
দিনাজপুরের হাকিমপুর বাজারে তেল কিনতে আসা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমরা টিভিতে, পত্রপত্রিকায় খবরে দেখলাম যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা করে কমিয়েছে। কিন্তু বাজারে তেল কিনতে এসে দেখি এখনো সেই আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে।’
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন বরিশালের আল আমিন জুয়েল, দিনাজপুরের কুরবান আলী, ময়মনসিংহের মো. মাঈন উদ্দিন রায়হান, রংপুরের তাজিদুল ইসলাম লাল, রাজশাহীর আহসান হাবীব অপু, হাকিমপুরের (দিনাজপুর) নজরুল ইসলাম খোকন)
রসায়নকে কার্যকারিতার যুগে নিয়ে আসা ও ক্লিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপনের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর রসায়নে নোবেল পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিজ্ঞানী ক্যারোলিন আর. বারতোজ্জি, কে. ব্যারি শার্পলেস এবং ডেনমার্কের মর্টেন মেলডাল। তাদের মধ্যে শার্পলেস ২০০১ সালে রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন। তিনি নোবেলের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিজ্ঞানী হিসেবে দুবার রসায়নে এই সম্মাননা পেলেন।
গতকাল বুধবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস রসায়নে ২০২২ সালে নোবেল বিজয়ী হিসেবে এ তিনজনের নাম ঘোষণা করে। পুরস্কারের ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১০ লাখ ডলার) সমানভাবে ভাগ করে পাবেন এই তিন বিজ্ঞানী।
নোবেল কমিটি জানায়, ক্লিক রসায়ন ও বায়োঅর্থোগোনাল রসায়নে অবদান রাখায় তাদের রসায়নে এ বছরের নোবেল দেওয়া হলো। ‘ক্লিক কেমিস্ট্রি’সংক্রান্ত তাদের গবেষণা আগামী দিনে ওষুধশিল্পকে নতুন মাত্রা দিতে পারে বলে মনে করে কমিটি ।
১৯০১ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত রসায়নে মোট ১১৬ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাতজন নারী বিজ্ঞানী।
নোবেল কমিটির তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছরের অক্টোবরের প্রথম সোমবার নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা শুরু হয়। সেই হিসেবে গত সোমবার শুরু হয় এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণার পালা। আজ বৃহস্পতিবার সাহিত্যে এবং আগামীকাল শুক্রবার শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। মাঝে শনি ও রবিবার বিরতি দিয়ে আগামী সোমবার শেষদিন ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম।
ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। গতকাল বুধবার রাষ্ট্রদূতের ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনের কয়েকটি ছবি পোস্ট করে এক টুইট বার্তা প্রকাশ করে দূতাবাস। সেই টুইটেই রাষ্ট্রদূত তার দেশের সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। টুইটে বলা হয়, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা জানাতে রাষ্ট্রদূত হাস ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করেছেন। তিনি বৈচিত্র্য, ঐক্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা উৎসাহিত করার মাধ্যমে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। ধর্মীয় স্বাধীনতা গণতন্ত্রের অন্যতম মূলনীতি। বিভিন্ন সমাজে সহনশীলতা ও বোঝাপড়া উৎসাহিত করার ভালো উপায় আর কী আছে?’
গতকাল ছিল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজায় বিজয়া দশমী অর্থাৎ পাঁচ দিনব্যাপী শারদ উৎসবের শেষ দিন। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এদিন শেষ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় এ উৎসব।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে মা দেবীকে বিদায় জানানো হয়। এদিকে টানা ছুটিতে সৈকতে বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। আর প্রতিমা বিসর্জনের দিন হওয়ায় সৈকতে নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। সন্ধ্যায় সৈকতে লাখো পর্যটকের ঢল নামে।
প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের শেষ হয়েছে। সম্প্রীতির সেতুবন্ধ তৈরিতে হিন্দুসম্প্রদায়ের পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে শামিল হয় সব ধর্মের মানুষ। অশ্রু চোখে আরও একটি বছরের জন্য দেবীকে বিদায় জানানো হয়। আগামী বছর দেবীর পুনরাগমনের আশায় বুক বাঁধবেন সবাই। মূলত দশমীই দুর্গাপূজার প্রধান অনুষঙ্গ। তবে দেবী দুর্গার বিদায়, অর্থাৎ স্বামীগৃহে গমনের পাঁচ দিন পরই লক্ষ্মীপূজার মধ্য দিয়ে আবার পিতৃগৃহে ফিরে আসবেন তিনি।
প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে সমুদ্রসৈকতে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি নিরাপত্তার কাজে মাঠে তৎপর ছিল র্যাব। এ ছাড়া আনসার-ভিডিপি ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন।
সকাল থেকে কক্সবাজার জেলার পূজামন্ডপগুলোতে বিরহের সুর বেজে ওঠে। মা দেবী দুর্গা ফিরে গেলেন কৈলাসে সন্তানদের আশীর্বাদ করে। সকাল থেকে কক্সবাজার জেলার পূজাম-পগুলোতে ভক্তদের মাকে বিদায়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে দেখা যায়। দুপুরের পর থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন মন্ডপ থেকে প্রতিমা বহনকারী ট্রাকগুলো কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের দিকে আসতে থাকে। শহরজুড়ে নেওয়া হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা। বেলা ৩টার পর থেকে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। লাবণী পয়েন্ট থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বী আর সৈকতে আসা পর্যটকদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
এ উপলক্ষে লাবণী সৈকতে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে এক সমাবেশ হয়। এই মিলন উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মজিবুর রহমান, টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুুর রহমান, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল করের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ নানা সম্প্রদায়ের মানুষ। বিসর্জন মঞ্চ থেকে মন্ত্র উচ্চারণ শেষে সমুদ্রসৈকতে শুরু হয় বিসর্জন। এরপর একে একে পূজাম-পের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় সাগর সৈকতে।
পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর জানিয়েছেন, জেলায় ৩০৫টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে ১৪৮টি প্রতিমা পূজা আর ১৫৭টি ঘট পূজা। প্রতিটি মন্ডপে ছোট-বড় ৬টি প্রতিমা রয়েছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলায় ২৮, ঈদগাহ উপজেলায় ২৬, কক্সবাজার পৌরসভায় ২১, রামু উপজেলায় ৩২, চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভায় ৯২, পেকুয়া উপজেলায় ৯, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৪৫, মহেশখালী উপজেলা ও পৌরসভায় ৩১, উখিয়া উপজেলায় ১৬ ও টেকনাফ উপজেলায় ৬টি পূজামন্ডপের আয়োজন করা হয়।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিসর্জন হলেও সৈকতে নানা ধর্ম-বর্ণ মানুষের মিলন ঘটে। বিসর্জন দেখতে আসা সুবর্ণা বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা বন্ধুবান্ধবরা প্রতিবছরই বিসর্জন দেখার জন্য সৈকতে আসি। গত বছর করোনার কারণে আসিনি। এবার অনেক ভালো লাগছে।’
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক দম্পতি সুধর্ম ও প্রিয়া বলেন, প্রতিমা বিসর্জনের এ দৃশ্যটি দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। কক্সবাজার সৈকতে এই মিলনমেলা না দেখলে বোঝা যাবে না বাংলাদেশ যে একটা সম্প্রীতির দেশ।
চট্টগ্রাম থেকে আসা রণজিত বড়ুয়া বলেন, ‘সাপ্তাহিক বন্ধ ও পূজার ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে এসেছি। বিসর্জনে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দেখে খুবই ভালো লাগছে।’
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ জানান, এ বছর জেলায় ৩০৫টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার সৈকতে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মিজানুজ্জামান জানান, তিন স্তরে নিরাপত্তা জোরদারের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। শুধু সৈকত এলাকায় প্রায় কয়েক শ ফোর্স মোতায়েন করা হয়। যানজট নিরসনে সৈকতের কলাতলী থেকে আশপাশের সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের পশ্চিম সেক্টরে বোয়ার এলাকায় শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদাতিক ব্যাটালিয়ন ব্যানব্যাট-৮। গত বছর নভেম্বর থেকে ওই এলাকার শান্তিরক্ষায় দিনরাত টহল দেন ব্যাটালিয়নটির সদস্যরা। বাংলাদেশ সময় গত সোমবার রাতেও মেজর আশরাফের নেতৃত্বে শান্তিরক্ষীদের একটি টহল দল কাইতা এলাকায় টহলে যায়। ফেরার পথে পুঁতে রাখা বোমার বিস্ফোরণে উড়ে যায় টহল কমান্ডার মেজর আশরাফের গাড়ি। নিহত হন গাড়িতে থাকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিন সৈনিক শরিফ, জাহাঙ্গীর ও জসিম। গত মঙ্গলবার তাদের মৃত্যুর খবর আসে দেশে। তাদের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রশাসন ও সেনা কর্মকর্তারা ছুটে যান ওই তিন সৈনিকের বাড়িতে। তবে কবে বা কখন তাদের মরদেহ দেশে আসবে সে খবর নিশ্চিত করতে পারেননি তারা। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরও (আইএসপিআর) এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
গতকাল বুধবার সৈনিক জসিম উদ্দিনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের কাটিজা গ্রাম, নীলফামারী জেলার ডিমলার দক্ষিণ টিটপাড়ায় সৈনিক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি এবং সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার বাড়াক রুয়া গ্রামে সৈনিক শরিফ হোসেনের বাড়িতে গিয়ে ছিলেন দেশ রূপান্তরের সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা। তাদের পাঠানো তথ্যে স্বজনহারা ওই তিন পরিবারের বর্তমান অবস্থা জসিমের লাশের অপেক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা বাবা : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার কাটিজা বড়বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর কমান্ডারের বাড়ি। শান্তিরক্ষা মিশনে নিহত সেনাসদস্য জসিম ওই বাড়িরই ছেলে। গতকাল বিকেলে সেখানে সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িভর্তি মানুষ। চার-পাঁচ বছর বয়সের দুটো ছেলে বাড়ির একটি ঘরের দাওয়ায় বসে খেলছে। ওই ঘর থেকে মাঝেমধ্যে ভেসে আসছে করুণ বিলাপ। স্থানীয়রা জানালেন, খেলতে থাকা বাচ্চা দুটো জসিমের। আর ঘরে আর্তনাদ করছেন জসিমের স্ত্রী শারমিন আক্তার। স্বামী হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। আত্মীয়-প্রতিবেশীরা তাকে চোখে-মুখে জল ছিটিয়ে হুঁশ ফেরাচ্ছেন। আরেকটি ঘরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছেন জসিমের বড় ভাই, আনসার বাহিনীর সহকারী প্লাটুন কমান্ডার জুলহাস উদ্দিন। তার মাথায় পানি ঢালছেন স্বজনরা। আর শোকে মুহ্যমান ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূর মিয়া। বাড়িটিতে আসা স্বজন-প্রতিবেশীদেরও চোখ ভিজে যাচ্ছে নূর মিয়ার চাপা কান্নায়।
গতকাল নূর মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার ২ মেয়ে ৪ ছেলের মধ্যে তৃতীয় সন্তান জসিম। শান্তিমিশনে বিদেশে থাকলেও মাঝে মাঝেই বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বলত ফোনে। সোমবার রাত বাংলাদেশ সময় ১০টায়ও পরিবারের অন্যদের মতো আমার সঙ্গেও কথা বলে। আমার শারীরিক খোঁজ-খবর নেয়। গতকালও বলেছিল নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখের দিকে বাড়ি আসতে পারে সে। কিন্তু আমার ছেলে আর আসবে না। আসবে তার লাশ। আমি আমার ছেলের বউ আর দুটি শিশু নাতিকে কী বলব? কী সান্ত¡না দেব? নূর মিয়া বলেন, আমি চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমার ছেলের লাশ বাড়িতে ফিরে আসুক।
জসিমের বন্ধু আউলিয়া বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী অভি হক মানিক বাবু বলেন, জসিম আর আমি একই প্রাইমারি স্কুল থেকে সমাপনী শেষ করে পাহাড়পুর ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করি। আমার বন্ধু জসিম ছোটবেলা থেকেই সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ ছিল। এলাকার সবাই তাকে ভালো ছেলে হিসেবে পছন্দ করত। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তবে সে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। আমরা আমাদের বন্ধুর জন্য গর্বিত।
বিজয়নগরের ইউএনও এএইচ ইরফান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, জসিমের পরিবারের খোঁজ-খবর আমরা রাখছি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আশা করছি দ্রুত মরদেহ তার বাড়িতে আনা হবে। তখন আমরা সরকারি সব নির্দেশনা অনুসারে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মাতম থামছে না জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে : মধ্য আফ্রিকায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত জাহাঙ্গীরের বাড়িতে শোকের মাতম থামছে না। ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন মা গুলেনাহার বেগম আর বাবা লতিফর রহমান। বাবা-মা নির্বাক হয়ে গেলেও জাহাঙ্গীরের স্ত্রী শিমু আকতারের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ওই এলাকার পরিবেশ। বিয়ের সময় বাবা-মা ও স্ত্রীর সঙ্গে তোলা একটি ছবি বারবার দেখছিলেন তারা। এত অল্প সময়ে এই ছবি স্মৃতি হয়ে যাবে ভাবতেই পারেননি কেউ।
ছেলের মৃত্যুতে শয্যাশায়ী মা গুলেনাহার বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ভিডিও কলে ব্যাটার সাথে কথা হইল, কইল মা, মুই ভালো আছো। মিশন শ্যাষ হয়ছে। কিছুদিন পর দ্যাশোত আসিম। তোমরা ভালো থাকো।’
একটু থেমে এবার আর্তনাদ শুরু করেন তিনিÑ ‘ছেলেটাক ক্যানে মরি গেইল, আল্লাহ মোকে আগোত নিয়া গেইলে তো হইল হয়। মুই ছেলেটাক দেখির চাও।’
বাবা লতিফর রহমান বলেন, ‘আমার বাবাটা দুর্ঘটনাত মারা গেছে শুনছি, মোর ছাওয়াটাক মুই দেখির চাও। কবে মোর ব্যাটাটা আসিবে। তাড়াতাড়ি যেন নিয়া আইসে বাবাক। সরকারের কাছে আবেদন সোনামুখটাক তাড়িতাড়ি যেন দেখির ব্যবস্থা করি দেয়।’
বাবা-মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম চতুর্থ। সবার বড় আবুজার রহমানও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সদস্য। দিনাজপুরের খোলাহাটি সেনানিবাসে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। প্রথমে দুর্ঘটনার খবরটি তাকেই জানানো হয় সেনাবাহিনী থেকে। ছুটি দেওয়া হয় তাকে বাড়িতে ফেরার জন্য। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ বিষয়টি দেখভাল করছেন লাশ দেশে আনার ব্যাপারে।
তিনি জানান, মিশনে যাওয়ার এক বছর আগে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের মেয়ে শিমু আকতারের বিয়ে হয় জাহাঙ্গীরের। মৃত্যুর বিষয়টি জানার পর থেকে কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না তার কান্না। বারবার স্বামীর মরদেহ ফিরিয়ে আনার আকুতি তার।
গতকাল বুধবার ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন যান জাহাঙ্গীরের বাড়িতে। তিনি বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। দাপ্তরিক ভাবে এখনো আমার কাছে কোনো তথ্য আসেনি। তারপরও বিষয়টি খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
শরিফের স্ত্রীর আহাজারিতে বাতাস ভারী : বিস্ফোরণে নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্য শরিফ হোসেনের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার পৌর এলাকার বাড়াক রুয়া গ্রামজুড়ে চলছে শোকের মাতম। শোকে ভারী হয়ে গেছে এলাকার আকাশ-বাতাস। শরিফ হোসেনের স্ত্রী সালমা খাতুনের কান্নায় পুরো এলাকার পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেছে। তিনি চিৎকার করে আহাজারি করছেন আর বলছেন, আমার জীবনের সব শেষ হয়ে গেছে। তোমরা আমার স্বামীকে ফিরিয়ে এনে দাও। আমার জীবন অন্ধকার হয়ে গেছে। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই। সালমার এমন আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকাও।
শরিফ হোসেন ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মিশনে যাওয়ার ৬ মাস আগে সালমা খাতুনকে বিয়ে করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শরিফ সবার বড়। মিশন থেকে ফিরে এসে একমাত্র বোন লাকী খাতুনের বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। বারবার এসব আক্ষেপের কথা বলে সালমা খাতুন মূর্ছা যাচ্ছেন। তার স্বজনদের চোখেও বইছে অশ্রুধারা।
শরিফের মা পাঞ্জু আরা বেগম ছেলের শোকে নির্বাক হয়ে গেছেন। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শরিফের বাবা লেবু তালুকদার। শরিফের বাবা ও মা আহাজারি করে বলছেন, ‘তোমরা আমার শরিফকে আইনা দাও, শরিফুলকে ছাড়া আমরা বাঁচব না। এইভাবে সে আমাগরে ফেলে চইলা যাইতে পারে না।’
বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, এ খবর জানার পর বুধবার বিকেলে নিহত শরিফের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে শরিফের বাড়িতে ছুটে যাই। কিছু সময় সেখানে অবস্থান করে পরিবারের সবার খোঁজ-খবর নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক ভাবে নিহতের পরিবারের খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। এছাড়া মরদেহ এসে পৌঁছামাত্র আমাদের তরফ থেকে যা যা করণীয় আমরা তার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
এদিকে নিহত শরিফের প্রতিবেশী চাচা শান্ত সরকার ও ছোট ভাই কাওসার তালুকদার জানান, বুধবার সকালে বগুড়া সেনানিবাস ও সিলেট সেনানিবাস থেকে পৃথক দুটি সেনাবাহিনীর টিম সেনাপ্রধানের তরফ থেকে নিহত শরিফের বাড়িতে আসে এবং তার মা-বাবার সঙ্গে কথা বলেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত বুকার পুরস্কারজয়ী ঔপন্যাসিক সালমান রুশদি তার ওপর সংঘটিত ছুরি হামলা নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে আসা রুশদি এখনো পুরোপুরি সেরে ওঠেননি। কিন্তু বেঁচে ফেরায় তিনি নিজেকে ‘ভাগ্যবান’ মনে করছেন। পাশাপাশি প্রকাশ করেছেন কৃতজ্ঞতা।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রতিবেদনটি সম্প্রতি দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া রুশদির একটি সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কে একটি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন রুশদি। এ সময় মঞ্চে তার ওপর হামলা চালান ২৪ বছর বয়সী যুবক হাদি মাতার। নিউ জার্সির এই বাসিন্দা সেদিন রুশদিকে ১০ থেকে ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে নিজের রক্তের ওপর লুটিয়ে পড়েন রুশদি। এর জের ধরে প্রায় ছয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটাতে হয় এই লেখককে। পরে এক চোখের দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলেন তিনি।
দ্য নিউইয়র্কারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদি বলেন, ‘আমি অনেকটাই ভাল হয়েছি। যা ঘটেছিল তা বিবেচনা করে দেখলে খুব একটা খারাপ নেই। বড় ক্ষতগুলো সেরে গেছে। তবে বুড়ো আঙুল, তর্জনী ও তালুর নিচের অর্ধেকটা অনুভব করছি। আমাকে প্রচুর হাতের থেরাপি নিতে হচ্ছে। যদিও আমাকে বলা হয়েছে শারীরিকভাবে আমি উন্নতি করছি’।
রুশদি জানান, আঙ্গুলের কিছু অংশে অনুভূতি না থাকায় লিখতে অসুবিধা হচ্ছে তার। তিনি বলেন, ‘আমি উঠে দাঁড়াতে পারছি। হাঁটতে পারছি চারপাশে। তবে আমার শরীরে এমন কিছু অংশ আছে যেগুলো নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এটা ছিল একটি মারাত্মক আক্রমণ’। তিনি জানান, ছুরি হামলার ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। এর ফলে তাকে নিরাপত্তার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাস দিয়ে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন রুশদি। শুধু যুক্তরাজ্যেই বইটির ১০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়েছিল। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ উপন্যাস ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে আসছিলেন এই লেখক। এই উপন্যাস লেখার জন্য রুশদিকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়। উপন্যাসটিতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা।
উপন্যাসটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন। সেই সঙ্গে তার মাথার দাম হিসেবে ঘোষণা করেন ৩ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার। রুশদি ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত হচ্ছে তার লেখা নতুন উপন্যাস ‘ভিক্টরি সিটি’। পুরুষতান্ত্রিক বিশ্বকে উপেক্ষা করে এই নারী কীভাবে একটি শহরকে পরিচালনা করেছেন, সে গল্পই উঠে এসেছে বইটিতে।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।