
ভুতুড়ে আর বিচিত্র সাজপোশাকে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় হ্যালোইন উৎসব। মহামারীর বিধিনিষেধ কাটিয়ে দীর্ঘদিন পর হ্যালোইন উৎসবে মেতে উঠেছিল দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের লাখো মানুষ। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে দিগি¦দিক ছুটতে থাকা তরুণ-তরুণীদের আনন্দের জোয়ার পৌঁছে যায় ইতেওন গলিতে, সেখানে হঠাৎ পাল্টে যায় পরিস্থিতি। সংকীর্ণ গলিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে ঢুকে পড়ায় দম বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়, ভিড়ের মধ্যে সামনে-পেছনে দুই দিকের চাপে পদদলিত হয়ে একে একে সড়কে পড়তে থাকে নিথর দেহ। পশ্চিমা ভূত উৎসবের সেই সত্যিকারের বীভৎস রাতে ঘটনাস্থল থেকে প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন এক বাংলাদেশি তরুণ। বেঁচে ফেরা এই সৌভাগ্যবান বাংলাদেশির নাম ম্যাক্সিম চৌধুরী, যিনি বেঁচে ফেরার কথা জানিয়েছেন বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারে।
ম্যাক্সিম জানান, সিউলের ইতেওন গলিটি তারও খুব প্রিয়। শনিবার ছিল তার ছুটি। হ্যালোইনের উৎসব দেখতে তারা ৪-৫ বন্ধু মিলে সেখানে যান। গিয়ে দেখেন সেখানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছে।
ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘গলিটা একদম সংকীর্ণ, নিঃশ্বাস ফেলার মতো জায়গা ছিল না। এরপর আবার আরেকটা গলি। মানুষের ভিড়ের মধ্যে ডানে-বামে কেটে আমরা সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু একটা পর্যায়ে স্রোতটা আটকে গেল। কারণ সামনের গলিতে ছিল একটা নাইট ক্লাব। এই ক্লাবে ঢোকার জন্য সব সময় একটা দীর্ঘ লাইন থাকে। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ, আবার এদিক থেকে যাওয়া মানুষের স্রোত সব মিলিয়ে একটা জট তৈরি হলো। আর এই জায়গাটা ছিল একটু ঢালু, নিচের দিকে নেমে গেছে। ভিড়ের চাপে যখন কেউ একজন পড়ে যাচ্ছিল, তাকে আর তোলা যাচ্ছিল না।’
প্রাণে বেঁচে যাওয়ার কারণ ম্যাক্সিমরা সেই গলিটার দিকেই যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু মানুষের স্রোত যখন আটকে গেল তখন তারা আর সেই গলিতে নামেননি। নামলে হয়তো আর জীবিত ফেরা হতো না তাদের।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্রসৈকতে বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপড়েপড়া ১৫৫টি ঝাউগাছ নিলামে বিক্রি করেছে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগ। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার শর্ত ভঙ্গ করে সংশ্লিষ্ট বনকর্মীর যোগসাজশে নিলামের দ্বিগুণ গাছ কেটে নিচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে গত দুই বছরে পারকি সমুদ্রসৈকতের অন্তত পাঁচ শতাধিক ঝাউগাছ উপড়ে পড়ে। দীর্ঘদিন উপড়ে পড়া গাছগুলো অরক্ষিত অবস্থায় সৈকতজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ছিল। অনেক গাছ সংশ্লিষ্ট বনকর্মীকে ম্যানেজ করে স্থানীয় লোকজন কেটে নিয়েছে। তাছাড়া সৈকতে লুটিয়ে পড়া গাছগুলোর কারণে সবল গাছগুলোর গোড়ালি থেকে বালু সরে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। ঝড়েপড়া এসব গাছ কর্তন ও অপসারণের জন্য গত ২৮ আগস্ট দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগ।
কার্যাদেশে, মোট ৬টি লটে ১৫৫টি গাছ বিক্রি করা হয় উৎসে কর ও ভ্যাটসহ ১ লাখ ৮২ হাজার ৭১৩ টাকায়। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নিলামটি পায় মেসার্স সেজুতি এন্টারপ্রাইজ নামের আনোয়ারা উপজেলার একটি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আবদুর রহমান স্বাক্ষরিত কার্যাদেশটি দেওয়া হয় গত ২৫ অক্টোবর। কার্যাদেশে উল্লিখিত আট শর্তের একটি হচ্ছে লট এলাকায় মার্কাকৃত গাছ ছাড়া অন্য কোনো গাছ কাটা যাবে না। কিন্তু কার্যাদেশের শর্ত ভঙ্গ করে সংশ্লিষ্ট বনকর্মীর যোগসাজশে নিলামের চেয়েও অতিরিক্ত গাছ কাটছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে উপকূলীয় বন বিভাগ বলছে, ১৫৫টি গাছ কাটার পর বাকি গাছগুলো নতুন করে নিলাম দেওয়া হবে।
উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পারকি সৈকতের বালিয়াড়িতে প্রথম ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ১২ হেক্টর জায়গায় ঝাউবন গড়ে তোলা হয়। এরপর ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ১৭ দশমিক ২ হেক্টর, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৫ হেক্টর ও ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৫ হেক্টর জায়গায় ঝাউবাগান করা হয়। চারবারে বালিয়াড়ির মোট ৩৯ দশমিক ২ হেক্টর বা ৯৭ একর জায়গায় লাগানো হয় ঝাউগাছ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, পারকি সৈকতে এক সময় লক্ষাধিক ঝাউগাছ ছিল। বিভিন্ন সময় সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছ। উপকূলীয় বন বিভাগ এ গাছগুলো বিভিন্নভাবে বিক্রি করে দিয়েছে। নিলাম ছাড়াও সারা বছর চলে গাছ বিক্রি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পারকি সমুদ্রসৈকতে উপড়েপড়া দুই শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি গাছের গোড়ায় করাত ও কুড়াল চালানো হচ্ছে। গাছগুলো কেটে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বন বিভাগের দুজন প্রতিনিধিও তাদের সঙ্গে ছিলেন।
মেসার্স সেজুতি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহজাহান বলেন, নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১৫৫টি গাছ কাটার অনুমোদন পাই। নিলামের বাইরে আমি গাছ কাটছি না।
এ সময় দায়িত্বে থাকা বনকর্মী আবু তৈয়ব জানান, এখানে শুধু ১৫৫টি গাছের টেন্ডার হয়েছে। এ গাছগুলোই কাটা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপকূলীয় বন বিভাগের বন্দর বিট কর্মকর্তা মো. আলমগীর কবির বলেন, পারকি সৈকতে বিভিন্ন সময় জোয়ারের আঘাতে উপড়েপড়া ১৫৫টি গাছ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। শুধু এ গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এর বাইরে অতিরিক্ত গাছ কাটার সুযোগ নেই। বাকি গাছগুলো পরে আবার নিলামে দেওয়া হবে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার তারিখ ফের পিছিয়েছে। এ মামলায় গতকাল সোমবার ধার্য দিনে প্রতিবেদন দাখিল করেনি র্যাব। ঢাকা মহানগর হাকিম মোরশেদুল আলম প্রতিবেদন দিতে আগামী ১ ডিসেম্বর নতুন দিন ধার্য করেন। এ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ৯৩ বার পেছাল।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছারাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরদিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক উপ-পরিদর্শক। এরপর মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়। এরপর হাইকোর্টের আদেশে তদন্তের দায়িত্ব নেয় র্যাব। আলোচিত এই হত্যা মামলায় আসামি করা হয় আটজনকে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কয়েকজন কারাগারে রয়েছেন। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল গ্রেপ্তার হলেও পরবর্তীতে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এ ছাড়া সাগর-রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান গ্রেপ্তার হন ২০১২ সালের ১ অক্টোবর। ২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি জামিন পান।
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ গুজরাটে ব্রিটিশ আমলের একটি ঝুলন্ত সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪১ জনে পৌঁছেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ। এ ঘটনায় ১৭৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও কয়েকজনের অনুসন্ধান চলছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে আর কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা নেই বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।
গত রবিবার প্রদেশের মোরবি জেলায় মাচ্ছু নদীতে নির্মিত প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ওই সেতু ভেঙে পড়লে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। এই মর্মান্তিক ঘটনায় মারা গেছেন রাজ্যটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এক সংসদ সদস্যের পরিবারের ১২ জন সদস্য। গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভয়াবহ সেতু দুর্ঘটনায় পরিবারের ১২ জন সদস্যকে হারানো ওই বিজেপি এমপির নাম মোহনভাই কল্যাণজি কুন্দারিয়ার। তিনি রাজ্যটির রাজকোটের বিজেপি দলীয় সংসদ সদস্য। তার পরিবারের নিহতদের মধ্যে ৫ জনই শিশু।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, গুজরাট প্রদেশের রাজধানী আহমেদাবাদ থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ঝুলন্ত সেতুটি রবিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে ভেঙে পড়ে। ঘটনার সময় সেতুতে প্রায় ৫০০ জন লোক ছট পূজার রীতি পালনের জন্য জড়ো হয়েছিলেন।
প্রায় ১৫০ বছর আগে নির্মিত মোরবির ঝুলন্ত এই সেতু ভারতের ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায়ও রয়েছে। গুজরাটের স্থানীয় নববর্ষ উপলক্ষে মেরামতের পর গত পাঁচদিন আগে সেতুটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়।
মোরবি পৌরসভার কর্মকর্তারা বলেছেন, যথাযথ ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই সেতুটি পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় একটি বেসরকারি ট্রাস্ট সেতুটির মেরামত ও সংস্কারকাজ করেছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়াই ওই ট্রাস্ট সেতুটি খুলে দেয়। কেন সেটি ভেঙে পড়ল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে গুজরাট প্রশাসন। এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৮ জনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ এবং আহতদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজ্য সরকারও নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে চার লাখ এবং আহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার রুপি করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
অনেক জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ব্রাজিলের ক্ষমতায় আবার ফিরেছেন লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকে পরাজিত করে ৭৭ বছর বয়সী লুলা আট বছর পর আবার ক্ষমতায় ফিরলেন। আর এর মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে কট্টর ডানপন্থি সরকারকে বিদায় নিয়ে ক্ষমতায় ফিরছে বামপন্থিরা। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন লুলা। তবে বলসোনারোর সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের মতো কোনো আচরণ করতে পারেন এমন আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটে লুলা পেয়েছেন ৫০ দশমিক ৯ শতাংশ এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী বলসোনারো পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোট। এরই ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাজিলের সুপ্রিম ইলেক্টোরাল কোর্ট লুলাকে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে। ফল ঘোষণার পর ডানপন্থি বলসোনারো কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তার ঘনিষ্ঠজনরা পরাজয় মেনে নিয়েছেন। অনেকের ধারণা ছিল, বলসোনারো হয়তো এই অল্প ব্যবধানকে চ্যালেঞ্জ করবেন বা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেরকম কোনো বার্তা দেননি বলসোনারো।
রয়টার্স বলছে, অভিনব রক্ষণশীল রাজনৈতিক জোট গঠন করে বলসোনারো ব্রাজিলের কংগ্রেসের পেছনের সারি থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিলেন, কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর মৃত্যুর মিছিলে ব্রাজিল একেবারে প্রথম দিকে থাকায় তিনি জনপ্রিয়তা হারান।
বিভিন্ন সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বলসোনারো নির্বাচনের ফলের সঙ্গে দ্বিমত করতে পারেন এমন ভাবনা থেকে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচনী কর্র্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তার সমর্থকরা প্রতিবাদে নামতে পারে আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে চূড়ান্ত বিজয়ের পর লুলা সমর্থকদের বলেন, আমি ২১ কোটি ব্রাজিলিয়ানের শাসক। যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন শুধু তাদের নই। আমাদের এক দেশ, আমরা এক জাতি। পৃথিবীতে ২টি ব্রাজিল বলে কিছু নেই।
তিনি বলেন, বিভক্ত দেশকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করবেন। পাশাপাশি আমাজন বন সংরক্ষণের জন্য ‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইবেন এবং বিশ্ববাণিজ্যকে ন্যায্য করে তুলবেন।
তার আগে স্থানীয় সময় রবিবার রাত ৮টার একটু পর লুলা সাউ পাউলোর একটি সমাবেশে হাজির হয়ে গাড়ির সানরুফ থেকে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। সেখানে অপেক্ষায় থাকা উৎফুল্ল সমর্থকরা সেøাগান দিয়ে শ্যাম্পেন ছিটিয়ে উল্লাস করে। নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরাল্দো আলকেমিন ও প্রচারণা শিবিরের অন্য সহযোগীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
এদিকে লুলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের নেতারাও ব্রাজিলের নতুন নেতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
২০০৩ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দুই মেয়াদে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন লুলা এবং ওই সময় লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের অনেক দেশে নির্বাচনের জিতে বামপন্থিরা ক্ষমতায় এসেছিল। এবারও কলম্বিয়া ও চিলির নির্বাচনে বামপন্থিদের ঐতিহাসিক জয়ের পর লুলা ফিরলেন ক্ষমতায়।
লুলাকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার পাশাপাশি দুই দেশের পারস্পরিক কল্যাণে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার আগ্রহও ব্যক্ত করেছেন তিনি।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে লুলা দা সিলভাকে পাঠানো এক চিঠিতে শেখ হাসিনা লিখেছেন, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে, নির্বাচনে আপনার অসাধারণ বিজয় লাভের জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ব্রাজিল পারস্পরিক কল্যাণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ততার ফলে চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উপভোগ করছে। দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে বন্ধন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও গভীর হচ্ছে। আমাদের দুই দেশের জনগণের স্বার্থে আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে আমি আপনার সঙ্গে কাজ করার জন্য আগ্রহী।
তিনি বলেন, একই সময়ে, আমরা এই কঠিন সময়ে বিশ্ব শান্তিও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে পারি যখন আমরা মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠছি এবং ইউক্রেন সংকটের প্রভাব মোকাবিলা করছি। শেখ হাসিনা চিঠিতে লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভার ব্যক্তি গত সুস্বাস্থ্য ও সুখ এবং ব্রাজিলের জনগণের অব্যাহত অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিও কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে টেড কেনেডি জুনিয়রের প্রয়াত পিতা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডি সিনিয়রের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তার হাতে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ পদক তুলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নগরীর একটি হোটেলে টেড কেনেডি জুনিয়র ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্মানে আয়োজিত নৈশভোজে যোগদানকালে এ পদক তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব কেএম শাখাওয়াত মুন এ কথা জানান।
এর আগে গত রবিবার সকালে কেনেডি জুনিয়র, তার স্ত্রী ক্যাথরিন কেনেডি, মেয়ে কাইলি কেনেডি এবং ছেলে টেডি কেনেডি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিক্সনের প্রশাসন পাকিস্তানের পক্ষে
থাকা সত্ত্বেও প্রয়াত সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির সমর্থন ও অসামান্য অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক প্রচারণা চালানো এবং ১৯৭২ সালে এডওয়ার্ড এম কেনেডির বাংলাদেশ সফরের কথাও স্মরণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট রাজ্যের সিনেটের সাবেক সদস্য টেড কেনেডি জুনিয়র বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকীতে যোগ দিতে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।
ঢাবির বটতলায় বাবার উপস্থিতি অনুভব করেছি : কেনেডি জুনিয়র স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলাভবনের সামনে বটগাছের চারা রোপণ করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সিনেটর প্রয়াত এডওয়ার্ড এম কেনেডি। তার ছেলে এডওয়ার্ড টেড কেনেডি জুনিয়র গতকাল সকালে ওই বটগাছ পরিদর্শন করেন। সেই গাছই এখন প্রশস্ত শাখা-প্রশাখায় ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। গাছটি দেখে টেড কেনেডি জুনিয়র বলেছেন, গাছটির সামনে গিয়ে তিনি বাবার উপস্থিতি অনুভব করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে দেওয়া নিজের অনুভূতি জানিয়ে টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘আমার বাবা যে বটগাছটি রোপণ করেছিলেন, সেটি পরিদর্শন করেছি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপড়ে ফেলা বটগাছের স্থলে তিনি ওই গাছ রোপণ করেছিলেন। কারণ এটি ছিল ছাত্রসমাবেশের একটি জনপ্রিয় জায়গা। এ গাছের নিচে (বাংলাদেশের) স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তাই আমার বাবা ভেবেছিলেন, ওই রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই তিনি নতুন গাছটি রোপণ করেছিলেন। এ গাছ পরিদর্শন আমার জন্য একটি আবেগের বিষয়। ওই গাছের সামনে গিয়ে আমি আমার বাবার উপস্থিতি অনুভব করেছি।’
এ বটগাছ বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন টেড কেনেডি জুনিয়র। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তির আন্দোলনের প্রতি সম্মানের নিদর্শন হিসেবে এটি থাকবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী স্মরণ’ শীর্ষক এ বিশেষ বক্তৃতায় টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণ চরম অন্যায় ও বর্বরতা মোকাবিলা করেছে। আমার বাবা ছিলেন সেই অল্প কয়েকজন রাজনীতিবিদের একজন, যারা শরণার্থী সংকটসহ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সংঘটিত বর্বর গণহত্যার বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরেছিলেন এবং ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন এ স্বাধীনতা সংগ্রামকে সবার সমর্থন করা উচিত। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকারী (প্রায় ৫০ বছর) সদস্যদের অন্যতম। তিনি সবার জন্য মানবিকতা ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করতেন। বাবা বিশ্বাস করতেন, টেকসই গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো। মানবিকতার এ ধারণার ওপরই তার পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাবনা তৈরি হয়েছিল, হেনরি কিসিঞ্জার (১৯৭১ সালে) যা বুঝতে পারেননি।
বক্তৃতার সময় তার পরিবারের পাঁচ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কেনেডি পরিবারের এ সদস্যরা ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশে এসেছেন। ৫ নভেম্বর পর্যন্ত তারা বাংলাদেশ সফর করবেন।
টেড কেনেডি জুনিয়র বলেন, ‘আমার বাবা পিছিয়ে থাকা ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন প্রতিষ্ঠায় তিনি সংগ্রাম করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, মুক্ত গণমাধ্যম থাকলেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। নিজের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে অনেক অন্যায্য সমালোচনা হলেও তিনি বিশ্বাস করতেন গণমাধ্যমের স্বাধীনতায়। আমার বাবা ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এসেছিলেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।’
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।