
যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী মন্ত্রী আফরিন আক্তার আগামী শনিবার ঢাকা আসছেন। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দেখভাল করার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। শুধু ঢাকাতেই নয়, তিনি এই অঞ্চলের আরও কয়েকটি দেশ সফর করবেন। এর মধ্যে ২৬ ঘণ্টা থাকবেন ঢাকায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ সফরে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন আফরিন আক্তার। এ ছাড়াও নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় করবেন তিনি।
এশিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রভাবশালী এ কর্মকর্তার সংক্ষিপ্ত সফরটি গুরুত্বপূর্ণ। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও জনগণের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের অব্যাহত তাগিদ রয়েছে। মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। যদিও এসব বিষয়ে দুই সরকারেরই আলাদা আলাদা ভাষ্য রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আফরিন আক্তারের বাংলাদেশ সফর ও আলোচনায় অবধারিতভাবে সম্পর্কের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে কথা হবে।
আফরিন বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দেখভাল করেন। পাশাপাশি তিনি বাইডেন প্রশাসনের নিরাপত্তা ও আন্তঃদেশীয় সম্পর্ক দেখভাল করেন। মার্কিন সহকারী মন্ত্রী ডন লুর জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। এসব দায়িত্বে আসার আগে আফরিন মার্কিন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট থেকে পাবলিক পলিসিতে স্নাতকোত্তর আফরিন একজন ফুলব্রাইট স্কলার এবং প্রেসিডেন্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট ফেলো।
অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে চলতি বছর সর্বোচ্চসংখ্যক মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে নদীতে। গত বছরের চেয়ে এবার ডিম ছাড়ার হার দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। এবার ৫২ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে।
বিভিন্ন নদ-নদীতে তিনটি ধাপে চালানো গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ ফলাফল পেয়েছেন বলে দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আশরাফুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, আশি^নের অমাবস্যা ও ভরা পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে মা ইলিশ প্রচুর ডিম পাড়ে। প্রজননের প্রধান এ সময়টাতে পরিভ্রমণ স্বভাবের ইলিশ মাছ সাগর ছেড়ে মোহনা ও নদীর মিঠা পানিতে ছুটে আসে। ইলিশের ডিমের পরিপক্বতা ও প্রাপ্যতা এবং আগের গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন দেশের ছয়টি অঞ্চলের নদ-নদীতে অভয়াশ্রম কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। অনুকূল পরিবেশ ও অভয়াশ্রমে প্রশাসনের তৎপরতার কারণে এ বছর রেকর্ড ৫২ শতাংশ ইলিশ ডিম ছেড়েছে। গত বছর যা ছিল ৫১.৭ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জেলেরা বলছেন, আসছে জাটকা অভয়াশ্রম কর্মসূচি সফলভাবে করতে পারলে আগামী মৌসুমে দেশে রেকর্ড পরিমাণ ইলিশ উৎপাদন হবে।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান ও আবু কাউসার দিদার বলেন, কিছু অসাধু জেলে ইলিশ শিকারে নামলেও অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় প্রচুর পরিমাণে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। নিষেধাজ্ঞার আগের ৭, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ২২ ও এর পরের ৭ দিন বিভিন্ন নদী-নদীতে গবেষণা চালিয়ে প্রচুর পরিমাণে ইলিশের লার্ভি ও জাটকা পাওয়া গেছে। তাছাড়া গবেষকদের জালে ধরা পড়া অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম দেখতে পাননি তারা। পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ইলিশের খাদ্য উপাদান রয়েছে। এসব বিষয় তাদের মধ্যে ইলিশ উৎপাদন বাড়ার আশা জাগাচ্ছে। অবশ্য সেটা নির্ভর করবে জাটকা সুরক্ষার ওপর।
মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে ৪৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৪৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৪৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০২০ সালে ৫১ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। চলতি বছর ডিম ছেড়েছে ৫২ শতাংশ মা ইলিশ।
মৎস্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৮৮ লাখ টন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৯৫ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৪ দশমিক ৯৭ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ দশমিক ১৭ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৩৩ লাখ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে ৫ দশমিক ৫ লাখ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে দেশে।
এ বছর মা ইলিশ যে বেশি ডিম ছেড়েছে সেটা জানা গেল জেলেদের অভিজ্ঞতা থেকে। চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে জমির হোসেন বলেন, ‘এই বছর মেলা ইলিশ ডিম পারছে গাঙ্গে। নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরা গাঙ্গ গিয়া যেই ইলিশ পাইছি হের মইদ্যে বে¹ুনই চিকনা। ডিম ছারনে মাছ লম্ফা অইয়া গেছে। অহন আর গোলগাল ইলিশ বেশি একটা পাওন যায় না।’
ইলিশ গবেষক ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম জানান, সঠিক সময়ে অভয়াশ্রম পালিত হওয়ার পাশাপাশি ঝড় ও বৃষ্টিপাত এবং নদীতে প্রশাসনের কড়া নজরদারির কারণে এ বছর রেকর্ড পরিমাণে ডিম ছেড়েছে মা ইলিশ। এ বছর মা ইলিশ ৮ লাখ ৫ হাজার ৫১৫ কেজি ডিম ছেড়েছে। এ ডিমের যদি ৫০ ভাগ ফোটে এবং ১০ ভাগ টেকানো যায় তাহলে আগামী মৌসুমে নতুন করে অন্তত ৪০ হাজার ২৭৬ কোটি জাটকা ইলিশে পরিণত হবে।
তিনি এটাও বলেন, সারা বছরই কমবেশি ডিম ছাড়ায় কিছু ইলিশের পেটে এখনো ডিম পাওয়া যাচ্ছে।
ড. আশরাফুল আলম বলেন, নদীতে ছাড়া মা ইলিশের ডিম ফুটে দুই থেকে আড়াই মাসের মধ্যে জাটকায় পরিণত হবে। এ সময়টাতে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই সেন্টিমিটার বাড়ে। তিনি বলেন, ‘মার্চ-এপ্রিল জাটকা মৌসুমে সঠিকভাবে সুরক্ষা দিতে পারলে আগামীতে ইলিশের উৎপাদন প্রায় ছয় লাখ টন হবে বলে আশা করি। এর জন্য জেলেদের নদী থেকে জাটকা ধরা থেকে বিরত রাখতে হবে।’
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ৩২ কিলোমিটার নতুন রেলপথে পরীক্ষামূলক ‘ট্র্যাক কার’ চলাচল শুরু হয়েছে। এই পুরো পথে আধুনিক রেললাইন বসে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভাঙ্গা রেলস্টেশনসংলগ্ন পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এলাকা থেকে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে ট্র্যাক কারটি ছেড়ে যায়।
‘গ্যাংকার’ নামে পরিচিত এই ট্রেনটি বিশেষ আকৃতিতে নির্মিত একটি রেল ইঞ্জিন। ৪ কিলোমিটার পাথরবিহীন এবং ২৮ কিলোমিটার পাথরসহ ৩২ কিলোমিটার রেললাইন পাড়ি দিয়ে দুপুর ১টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পৌঁছায় ট্র্যাক কারটি। মাঝপথে কয়েকটি স্থানে নেওয়া হয় বিরতি।
পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরুর সময় পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল জাহিদ হাসান, প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন, প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ট্র্যাক কার চালানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাওয়া-ভাঙ্গা (সেকশন-১) অংশের স্টেশন ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কর্নেল তৌহিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘৩২ কিলোমিটার পথে আধুনিক রেললাইন বসে যাওয়ায় প্রথমবারের মতো রেল চালানো হয়েছে। কয়েক দিন আগে এ পথের কাজ শেষ হয়েছিল। আজ (গতকাল) চীনের তৈরি একটি গ্যাংকার পরীক্ষামূলক চালানো হয়। পরীক্ষামূলক হওয়ায় কিছুটা ধীরগতিতে পুরো পথে রেলটি চালানো হয়েছে, কয়েকটি স্থানে বিরতি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। আজকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সফল হয়েছে।’
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প তিন অংশে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ছিল ৬৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজ হয়েছে ৮৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আর ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজ হয়েছে ৫৭ দশমিক ৩১ শতাংশ।
চলতি বছর ২৫ জুন যানবাহন চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেওয়া হয়। পদ্মা সেতু যেদিন চালু হবে, একই দিনে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর কথা ছিল বাংলাদেশ রেলওয়ের। যদিও তখন সেতুতে রেললাইন বসানোর অনুমতি পায়নি রেলওয়ে। গত ২০ আগস্ট পদ্মা সেতুতে রেল ট্র্যাক বসানোর কাজ শুরু হয়। এ কাজ শেষ করতে ছয় মাস সময় লাগবে।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। মূল লাইনের সঙ্গে ৪৬ কিলোমিটার লুপ লাইনও নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এতে চীন অর্থায়ন করছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকার জোগান দেবে সরকার।
নতুন রেলপথ দিয়ে যাতায়াতে রাজধানী থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এ রেলপথ দিয়ে খুলনায় যেতে সময় লাগবে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা।
স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরার নিউ টাউন এলাকার বাসিন্দা মিরান্ডা ডিকসন। ৪৮ বছর বয়সী মিরান্ডা ২০১৯ সালে মা-বাবার কাছ থেকে বাড়িটি পেয়েছিলেন তিনি। মালিকানা বুঝে পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন পুরো বাড়িটি নতুন করে সাজানোর। দুই বছর ধরে চলে সংস্কারকাজ। শেষ পর্যায়ে এসে গত বছর ফটকে গোলাপি রং করান মিরান্ডা। কিন্তু এ রং নিয়েই বাধে বিপত্তি। শহর কর্র্তৃপক্ষ বলেছে, ফটকের রং না বদলালে মিরান্ডাকে বিপুল জরিমানা গুনতে হতে পারে। তবে শহর কর্র্তৃপক্ষের এমন পদক্ষেপকে মিরান্ডা বাড়াবাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ডেইলি মেইল, ইউকে এক্সপ্রেসসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে বাড়িটির কাজ শেষ হওয়ার পর সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তাদের অনেকে বাড়িটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় একটু থেমে গোলাপি ফটকের সঙ্গে ছবি তুলতেন।
তবে এই রং নিয়ে আপত্তি তুলেছে এডিনবরা শহর কর্র্তৃপক্ষ। এডিনবরা শহর কর্র্তৃপক্ষের আইন অনুযায়ী, বাড়ির ফটকে অবশ্যই অনুজ্জ্বল রং করতে হবে। মিরান্ডাকে গোলাপি রং বদলে সাদা রং করতে বলেছে তারা। এ নির্দেশ না মানলে জরিমানা দিতে হবে। এতে চটেছেন মিরান্ডাও। তার ভাষ্যমতে, এই নির্দেশের পেছনে শহর কর্র্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য একদম ভালো নয়।
ফটকের রংয়ের বিষয়ে মিরান্ডা বলেন, ব্রিস্টল, নটিং হিল ও হ্যারোগেটের মতো যুক্তরাজ্যে অনেক শহর রয়েছে; যেখানে ফটকে উজ্জ্বল রং করা হয়। আমি যখন বাড়িতে ফিরি, বাড়ির ফটক দেখে এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করে। অবশ্য শেষ অবধি বাড়ির রং বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মিরান্ডা। তবে শহর কর্র্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী সাদা রং করবেন না তিনি। উল্টো প্রগাঢ় লাল রং করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মসিউর রহমান (৬৯) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে মসিউর রহমানের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রেখে গেছেন।
বর্ষীয়ান এ নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ছাড়া তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা থেকে এসেছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান ও যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন।
জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক জানান, পরিবারের সদস্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ পারিবারিক করবস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
মসিউর রহমানের গাড়িচালক নাজমুল হাসান বাঁধন জানান, সকাল ৮টার দিকে মসিউর রহমান অসুস্থ বোধ করছেন জানিয়ে তাকে দ্রুত বাসায় আসতে বলেন। বাঁধন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঝিনাইদহ শহরের গীতাঞ্জলি সড়কের বাসায় এসে ডাকাডাকি করতে থাকেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় স্থানীয়দের ডেকে আনেন তিনি। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মসিউর রহমানের ছোট ভাই আসাদুজ্জামান, পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শেখরসহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ঘরের দরজা ভেঙে মসিউর রহমানের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। ইজিবাইকযোগে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই তার মৃত্যু ঘটেছে।
মসিউর রহমান ঝিনাইদহ হরিণাকুন্ডু উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের কন্যাদহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্ত্রী মাহবুবা রহমান শিখা পেশায় একজন আয়কর আইনজীবী। এই দম্পতির শামীম রহমান শিমু, ইব্রাহীম রহমান, শোয়াইব রহমান নামে তিন সন্তান রয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মসিউর রহমান টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার উদ্যোগেই হরিণাকুন্ডু উপজেলায় প্রথম বিসিএস নার্স ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া ঝিনাইদহে বেশকিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েছে তার একান্ত উদ্যোগে। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
গতকাল সাবেক এ সংসদ সদস্যের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় ঝিনাইদহ শহর। লাশ দেখতে দলমত নির্বিশেষে মানুষ ছুটতে থাকেন ক্যাসেল ব্রিজসংলগ্ন তার নতুন বাড়িতে। এ সময় পুলিশ ও দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।
মসিউর রহমানের মৃত্যুর খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও তার রণাঙ্গনের বন্ধু মো. আব্দুল হাই ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মকবুল হোসেনও ছুটে আসেন।
ময়মনসিংহের ত্রিশালের কানিহারী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাছরীন সুলতানা তার অফিসে বসেই নিচ্ছেন ঘুষের টাকা। নেওয়ার সময় আবার করছেন রসিকতা। ঘুষদাতাকে হাসতে হাসতে বলছেন, ‘আমার চাকরি খাবেন নাকি?’ গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন একটি ভিডিও দেখে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। সে সময় তারা নাছরীন সুলতানার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি, ওই কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে নামজারির জন্য ঘুষ নিয়ে আসছেন। টাকা ছাড়া তিনি কোনো কাজই করতে চান না, করেন খারাপ ব্যবহার।
নাছরীন সুলতানা তার অফিসে নামজারি করতে আসা এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন আর ঘুষের জন্য দরকষাকষি করছেন ৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও গত সোমবার ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, নাছরীন সুলতানা তার অফিসে নামজারি করতে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে টাকার বিনিময়ে কাজ করে দেওয়ার জন্য দরকষাকষি করছেন। একপর্যায়ে টাকা হাতে নিতে নিতে তাকে বলতে শোনা যায় ‘আপনি তো আমার চাকরি খাবেন। সামনাসামনি যা করছেন!’
এক হাতে টাকা নাড়তে নাড়তে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাছরীন সুলতানা হাসিমুখে বলতে থাকেন ‘আমার চাকরিটা খাওয়ার জন্য আপনি লাগছেন! এই শোনেন, যেটা দেখাইছি ওইটা দিতে হবে, তাহলে আপনি কাজ পেয়ে যাবেন। ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা টাকা দিলে এটা অয় না। তারপরও দিয়ে গেলেন! ওই ভাই সামনে ছিল, (পাশে বসে কথা বলতে থাকা এক ব্যক্তিকে দেখিয়ে) তাই আমি রাখলাম, নাইলে রাখতাম না। কিন্তু দেওয়া লাগব, ওইটা না দিলে আপনার নামজারি হবে না।’
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, অফিস করছেন নাছরীন সুলতানা। আর অফিসের সামনে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন।
ভূমি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় সোহেল মিয়া, রুবেল বেপারি, বাবুল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওই কর্মকর্তা এখানে আসার পর ভূমি অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তিনি অনেক ক্ষমতাধর। তিনি কারও কথা শোনেন না। যা ইচ্ছা তাই করেন। মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেন। তার বিরুদ্ধে এলাকার হাজারো মানুষের অভিযোগ আছে। আমরা এর অপসারণ চাই।
এদিকে ভূমি অফিসের সামনে বিক্ষোভের মধ্যেই দুপুরের দিকে প্রশাসক এনামুল হক তাকে সাময়িক বরখাস্তের লিখিত আদেশ পাঠান। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি হাসান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বরখাস্তের আদেশের পর নাছরীন সুলতানা অফিস থেকে চলে গেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চালু করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলায় পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে সাজা হবে।
অবশ্য মোবাইল ফোনে নাছরীন সুলতানা বলেন, ‘ভিডিওটি সুপার এডিট করা হয়েছে। আমি অন্যজনের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছিলাম সরকারি ফি বাবদ। কিন্তু একটি চক্র পুরো ভিডিওটি কেটে আমাকে হেনস্তা করেছে। আমি খারিজের সরকারি ফি ছাড়া কারও কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিইনি।’
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য দেশের আইন ও আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির মামলায় এর আগে বিএনপির দুই নেতাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখে দেশের উচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে, সে সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দেশবাসীকে হতাশ করেছে।’
গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদে জানিয়ে এ বিবৃতি দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনে করেন, মার্কিন নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করার পর বিএনপি তাদের বিদেশি প্রভুদের কাছ থেকে করুণা প্রাপ্তির আশায় সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায়কে ফরমায়েশি বলা তাদের সেই চলমান ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিএনপির এ দুই নেতার আজকের পরিণতি তাদের ধারাবাহিক অপরাজনীতিরই ফসল বলে মন্তব্য করেন সেতুমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন আমলে হাওয়া ভবন খুলে তারা দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠেছিল, যার পরিণতিতে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সে সময় হাওয়া ভবনের কর্ণধার জিয়াপুত্র তারেক রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান বিশ^ গণমাধ্যম ও বিশ^খ্যাত গোপন নথি প্রকাশকারী সংস্থা উইকিলিকসে বিস্তারিত প্রকাশিত হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি দুই নেতার দুর্নীতির মামলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কোনো যোগসূত্র নেই। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তাদের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ার পর নিম্ন আদালত সাজা দিয়ে রায় দেয়। প্রায় ১৬ বছর বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে আদালত তাদের সাজা দিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাও আইন ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি বিশ্বজিৎ হত্যাকা- এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলায়ও ছাত্রলীগের নেতারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করছেন।’ তিনি বলেন, বিএনপি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে এবং দলের চিহ্নিত শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের সুরক্ষা দিয়েছে।
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই আলোচনায় আসেন সাবেক সিটি মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। নগরীর লোকেরা বলে, তার মতো নগর পিতা দরকার। এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীকে কথা দিয়েছেন, হিরণের মতো করে নগরী গড়বেন তিনি। শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর এক দশক পেরিয়ে গেছে, তবু তিনি আলোচনায়; শুধু বরিশালে নয়, সারা দেশে।
সংশ্লিষ্ট লোকজন বলে, হিরণের কর্মফলই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। একসময় সব ক্ষেত্রে বরিশাল সিটির মানুষ অবহেলিত ছিল। সেসব অবহেলার কারণ ঘুচিয়ে এবং মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নগরীকে আধুনিক করার অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হন হিরণ। মেয়র নির্বাচিত হয়ে পাঁচ বছরের মধ্যে নগরীর রূপ পাল্টে দেন তিনি। বরিশালকে সাজান আধুনিক রূপে।
অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ ছিলেন আদর্শ নেতা। মানুষকে বোঝার চেষ্টা করতেন। দক্ষ ও বিচক্ষণ এবং সৃজনশীল মানুষ। তিনি নগরীর উন্নয়ন নিয়ে যেমন ভেবেছেন, ঠিক তেমনি মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন। তাই মানুষ ভুলতে পারে না তাকে।’
বিসিক শিল্পনগরীসংলগ্ন চায়ের দোকানদার মো. হালিম বলেন, ‘হিরণ সবসময় মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। সাধারণ পোশাকে চলতেন। দলমত নির্বিশেষ সবাইকে ভালোবাসতেন।’
নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সমির বলেন, ‘মেয়র হিরণ আমাদের জন্য রাস্তাঘাট, সড়কে বাতির ব্যবস্থাসহ অনেক কিছু করেছেন। তার কাজগুলোই কোনোমতে অনুসরণ করেছে অন্যরা। যে কাজ করে তাকেই তো মনে রাখব আমরা, তাই হিরণকে মনে রেখেছি।’
রিকশাচালক মো. হারুন বলেন, ‘এ নগরীর রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য ছিল। রাতে অন্ধকারে ডুবে থাকত। চুরি-ডাকাতি নিত্যখবর ছিল। কিন্তু হিরণ মেয়র হওয়ার পর রাতারাতি নগরী বদলে গেল। অনেক মানুষকে সিটি করপোরেশনে চাকরি দিয়েছেন তিনি। নগরীর গরিব মানুষকে এক টাকা করে হলেও সাহায্য করেছেন। সবার মন জয় করেছেন। আজ তার মতো একজন মানুষ থাকলে আমরা শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যাকে হারিয়েছি তাকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু তার কর্ম, মানুষের প্রতি তার সম্মান এবং ভালোবাসা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তিনি বিদ্যালয়ে এলে কখনো রাজনৈতিক আলাপ করতেন না। সবসময় শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য বলতেন, গল্প শোনাতেন।’
একজন ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব থাকাকালে ব্যবসা করতে গিয়ে কখনো হেনস্তার শিকার হইনি। তিনি নিজেও ব্যবসায়ী ছিলেন। আমাদের ব্যবসায়ীদের কষ্ট তিনি বুঝতেন। কিন্তু নগরীর একদল মানুষ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তাকে নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছে। তারপর হিরণ সাহেব দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
বিএম কলেজের সাবেক ভিপি ও শওকত হোসেন হিরণের ঘনিষ্ঠ মঈন তুষার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হিরণ সাহেব প্রত্যেক নেতাকর্মীর নাম জানতেন। তিনি যার সাঙ্গে কথা বলতেন, সেই মানুষটিকে ভুলতেন না। এজন্য মানুষ তার প্রতি এত দুর্বল এবং আকৃষ্ট। নগরীর জন্য তিনি মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করেছেন। তার সঙ্গে মানুষ সরাসরি কথা বলতে পারত এবং দেখা করত। এখনো মানুষ তাকে ভালোবাসে এবং মনে রেখেছে।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান সোহেল রানা বলেন, ‘সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ বরিশালকে আধুনিক নগরীতে রূপান্তরিত করে গেছেন। উন্নয়ন-আন্তরিকতা ও ব্যবস্থাপনার দক্ষতার সমন্বয় ঘটিয়ে তিনি একজন আইকনিক সিটি মেয়র ছিলেন। আন্তরিকতাই একজন প্রশাসকের মূল সূচক। তাই তিনি সাধারণ মানুষের হৃদয়ে গেঁথে আছেন।’
মেয়র হিরণ ব্যক্তিগত জীবনে কেমন ছিলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তার সহধর্মিণী ও সাবেক সংসদ সদস্য জেবুন্নেসা আফরোজ হিরণ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২৬ বছর আমি তাকে দেখেছি। তিনি কারও ভাই ছিলেন, একজন স্বামী ছিলেন এবং সন্তানদের বাবা ছিলেন। পরিবারভক্ত একজন মানুষ। মানবিক গুণাবলি ছিল। তার মা-ভক্তির খুব নাম আছে বরিশাল শহরে। স্বজন-সন্তান ও পরিবারের প্রতি যতœ নেওয়ায় কোনো কমতি ছিল না। স্ত্রী হিসেবে তাকে অসাধারণ কর্তব্যপরায়ণ একজন মানুষ হিসেবে দেখেছি আমি।’
তিনি বলেন, ‘উনি রাজনৈতিক মহলে অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি ছিলেন। কর্মী ও সহযোদ্ধাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল; নেতাদের প্রতি সম্মানে কোনো ঘাটতি ছিল না তার। ২০০১ সালের জামায়াত-বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসে, তখন কর্মীদের কীভাবে বুকে আগলে রাখতে হয় আমি তা পাশে থেকে দেখেছি। রাজনীতি এবং নগর উন্নয়নÑ দুই ক্ষেত্রেই তিনি সফল।’
প্রসঙ্গত, শওকত হোসেন হিরণ এলএলবি পাস করার পর জাসদ ছাত্রলীগে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বরিশাল সদর উপজেলা থেকে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আলোচনায় আসেন তিনি। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজনীতিতে আরেক দফা পরিবর্তন আসে ১৯৯৬ সালের পর। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে ভালো সখ্য থাকায় আওয়ামী লীগে যোগ দেন হিরণ। তার রাজনৈতিক সক্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। বরিশাল মহানগরীকে আধুনিক সাজে সাজান। স্থানীয় মানুষ ও তার অনুসারীদের কাছে আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০১২ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন। গুঞ্জন রয়েছে, তার দলীয় লোকেরাই তার পরাজয়ের কারণ। হিরণের মন ভাঙলেও তিনি থেমে যাননি। ২০১৪ সালে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একই বছর ৯ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে থাকা কুড়িগ্রামের চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে। ক্লিনিকটি সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের চর ভগপতিপুর এলাকায় ছিল।
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে চর ভগপতিপুর সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি ব্রহ্মপুত্রের গর্ভে বিলীন হয়। এর আগে ওই এলাকার একটি স্কুলও ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়াও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে একটি মসজিদ ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ব্রহ্মপুত্র নদসহ অন্যান্য নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির কারণে ক্লিনিকটি নিলামে বিক্রি করা সম্ভব হয়নি।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ক্লিনিকটি রক্ষা করা গেল না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।