
কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে জিলা স্কুলের এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাউজিং ডি ব্লকের ২৮৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের ছয়তলা বাড়ির দ্বিতীয়তলায় নিজের কক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার হয়।
নিহত রোকশানা খানম (৫২) কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ইংরেজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত রওশন আলীর মেয়ে এবং একই উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক খুনকারের ছেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ যশোরের হিসাবরক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান শিশিরের স্ত্রী।
এই দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। রোকশানার স্বামী শিশির চাকরির কারণে যশোরেই থাকেন। সপ্তাহে একবার কুষ্টিয়ার বাসায় আসেন। হাউজিংয়ের ছয়তলা ভবনটি রোকশানা খানম ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে করেছিলেন, সেই ঋণের কিস্তি তিনিই প্রতি মাসে পরিশোধ করতেন বলে পরিবার জানিয়েছে। ভবনটির ছয়তলায় রোকশানার ভাইয়ের পরিবার ভাড়া থাকে।
নিহত রোকশানার ভায়ের ছেলে নিশাদ (২২) সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে ফুফুর বাসায় দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখে ডাকাডাকি করি। কোনো সাড়া না পেয়ে পরে আশপাশের প্রতিবেশীর সাহায্যে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ফুফুকে শয়নকক্ষে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পরে পুলিশে সংবাদ দিলে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।’
রোকশানার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান শিশির জানান, হত্যাকাণ্ডের কথা জেনে তিনি যশোর থেকে কুষ্টিয়ায় ছুটে আসেন। স্কুলের কাজে গতকাল সকালে রোকশানার যশোর শিক্ষা বোর্ডে যাওয়ার কথা ছিল।
পূর্বপরিকল্পিতভাবে রোকশানাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে শিশির বলেন, ‘খুনিরা বাসায় ঢুকে কেবলমাত্র একটা পিসি ভাঙচুর করেছে। আর কোনো কিছুই নিতে পারেনি। কোনো টাকা-পয়সা বা মূল্যবান গহনা খোয়া যায়নি। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’
রোকশানা কর্মপাগল মানুষ ছিলেন এবং নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করতেন বলে জানান কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. এফতে খায়রুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্রের কাজে আজ (গতকাল) সকালে উনার (রোকশানা) যশোর বোর্ডে যাওয়ার কথা ছিল। দাম্পত্য জীবনে কোনো কলহ ছিল বলে কখনো শুনিনি। তবে বাড়িটা এককভাবে করতে গিয়ে তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। নিঃসন্তান হওয়ায় তার সম্পত্তিগত কোনো বিষয়কেন্দ্রিক কিছু থাকলেও থাকতে পারে। নাহলে শুধু শুধু তো আর একটা মানুষকে হত্যা করার কথা না।’
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু রাসেল বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারা কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাসা থেকে মূল্যবান কিছু খোয়া যায়নি। এ ছাড়া সম্ভাব্য একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
স্বজনরা জানান, রোকশানা ভেড়ামারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে তিনি ভেড়ামারা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
শিক্ষাজীবন শেষে রোকশানা প্রথমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে মোস্তাফিজুর রহমান শিশিরের সঙ্গে পারিবারিকভাবেই তার বিয়ে হয়।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে উদ্বোধন হয়েছে সুনামগঞ্জবাসীর বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের রানীগঞ্জ সেতুর। সেতুটি চালু হওয়ায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়কপথে সুনামগঞ্জের দূরত্ব কমে এসেছে ৫৫ কিলোমিটার। গতকাল সোমবার ঢাকায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একযোগে দেশের ১০০টি সড়ক সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১০টায় রানীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধন করেন তিনি।
আর এরই মধ্য দিয়ে সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের বাস্তবায়ন হলো। উদ্বোধনের পর গতকাল থেকেই রানীগঞ্জ সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। এতে করে জগন্নাথপুর উপজেলাসহ জেলাবাসীর মধ্যে যেন আনন্দের জোয়ার বইছে।
সুনামগঞ্জবাসী বলছে, জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ সেতুটি পুরো জেলার সড়ক যোগাযোগে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। সেতুটি উদ্বোধনের মাধ্যমে কুশিয়ারা নদীতে দীর্ঘদিনের খেয়া ও ফেরি পারাপারের ভোগান্তি শেষ হচ্ছে। সেতুর এপারে সুনামগঞ্জ, ওপারে হবিগঞ্জ। মাঝখানে কুশিয়ারা নদী। সেতুটি চালুর পর হবিগঞ্জ হয়ে কম সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করতে পারবেন সুনামগঞ্জ জেলার বাসিন্দারা। সুনামগঞ্জ থেকে এখন রাজধানী ঢাকাতে পৌঁছতে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সময় বাঁচবে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা। সেতুটি ঘিরে নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনায় বিভোর এলাকাবাসী। পাশাপাশি সেতুটি সুনামগঞ্জের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন জেলাবাসী। কুশিয়ারা নদীর জন্য এতদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে জেলার বাসিন্দাদের। নৌকা কিংবা ফেরিতে নদী পারাপারের ব্যবস্থা থাকলেও সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে যোগাযোগ করতেন দুই পারের কয়েক লাখ মানুষ। ১৯৯৬ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদের প্রচেষ্টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডাবর পয়েন্ট থেকে জগন্নাথপুর হয়ে আউশকান্দি পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ হলেও কুশিয়ারা নদীর ওপর রানীগঞ্জ সেতুটি করতে পারেননি তিনি। পরে ২০১৬ সালের আগস্টে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সংযোগ সড়কসহ প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রানীগঞ্জ সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এতে শুধু ৭০২ মিটার সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৯১ কোটি টাকা। বাকি ব্যয় ধরা হয় সংযোগ সড়ক, আধুনিক টোলপ্লাজা, কালভার্ট ও পাশের ইটাখলা নদীর ওপর আরেকটি ছোট সেতু নির্মাণে। ছয় বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণকাজ চললেও সেতুটির কাজ সম্পন্ন হওয়ায় হাওরাঞ্চলে নতুর দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সেতুটি সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও দিরাইসহ এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় মাইলফলক তৈরি করবে বলে মনে করছে হাওরবাসী। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বাড়বে ব্যবসায়িক সম্পর্ক। সব মিলিয়ে উন্নয়নের মাপকাঠিতে আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে পিছিয়ে থাকা হাওরের এই জেলা।
রানীগঞ্জ সেতুর নির্মাণকাজের দায়িত্বে ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড ২৪ বি এবং এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এমবিইএল। চুক্তি অনুযায়ী ৭০২ দশমিক ৩২ মিটার দীর্ঘ এবং ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের সেতুটির নির্মাণকাজ ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা সময়মতো হয়নি।
রানীগঞ্জ সেতুর সম্ভাব্য সুফল তুলে ধরে রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রানীগঞ্জ সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানী ঢাকাসহ সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধা হবে। ঢাকার সঙ্গে কমবে দূরত্ব, বাঁচবে সময়। তা ছাড়া আশপাশে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। যা এলাকার বেকারত্ব নিরসনে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন, ‘রানীগঞ্জ সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে জগন্নাথপুরসহ জেলাবাসীর দীর্ঘদিন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল।’
রানীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গতকাল রানীগঞ্জ সেতুসহ জেলার আরও ১৬টি সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রানীগঞ্জ সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, ‘এ সেতুটি সুনামগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলের যোগাযোগ ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে প্রসার ঘটাবে। এটি জেলার মানুষের স্বপ্নের সেতু।’
নরসিংদীতে কাভার্ড ভ্যানের চাপায় প্রাণ হারিয়েছেন গীতিকার ও সাংবাদিক ওমর ফারুক বিশাল (২৭)। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রায়পুরার মরজাল বাসস্ট্যান্ডে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি ছুটি শেষে নরসিংদী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়ে মোটরসাইকেলে বাসস্ট্যান্ড যাচ্ছিলেন। এ ঘটনায় তার বন্ধু মোটরসাইকেল আরোহী ইমাম হোসেন (২৬) গুরুতর আহত হয়েছেন।
ওমর ফারুক বিশাল বেলাব উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের ধুকুন্দী গ্রামের নূরুল হকের ছেলে। তিনি জি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি দৈনিক যায়যায়দিন ও সমকাল এবং বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের সহ-সম্পাদক ছিলেন। তার মৃত্যুতে গীতিকারদের সংগঠন ‘গীতিকবি সংঘ’ শোক জানিয়েছে।
প্রায় এক দশক ধরে গান লিখেছেন বিশাল। তার কথায় জনপ্রিয় শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য, অনুপম রায়, তাহসানসহ বাংলাদেশ ও কলকাতার জনপ্রিয় শিল্পীরা কণ্ঠ দিয়েছেন। ‘তোমার ভালো মন্দে’, ‘দমে দমে’সহ বেশ কয়েকটি গানের সুবাদে তিনি গীতিকার হিসেবে পরিচিতি পান।
হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সকালে বিশাল তার কর্মস্থল ঢাকায় যাওয়ার জন্য তার বন্ধু ইমাম হোসেনের মোটরসাইকেলে মরজাল বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে বের হন। তারা মরজাল বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাছাকাছি পৌঁছালে ভৈরবগামী একটি বেপরোয়া কার্ভাডভ্যানের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই বিশাল মারা যান। গুরুতর আহত অবস্থায় ইমাম হোসেনকে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়, সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
ভৈরব হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোজাম্মেল হক বলেন, কার্ভাডভ্যানের পেছনের চাকায় রক্তের ছাপ রয়েছে। পেছনের চাকায় চাপা পড়েই বিশাল মারা গেছেন। চালক পালিয়ে গেলেও কার্ভাডভ্যান আটক রয়েছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
পাকিস্তানকে আনপ্রেডিক্টেবল এমনিতেই বলা হয় না। নিজেদের ভাগ্য ও পারফরম্যান্স দিয়েই তা প্রমাণ করেছে দলটি। ক্রিকেট ইতিহাসে সব সময়ই তারা চমক দিয়ে থাকেÑ ম্যাচ বা শিরোপা জিতে, নয়তো বাজেভাবে হেরে। হয় সমর্থকদের আশা দারুণভাবে মিটিয়ে দেবে নয়ত একেবারে হতাশায় ডোবাবে। ঠিক যেমন ভারত ও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে গিয়ে এবারের বিশ্বকাপে একেবারে হিসাবের বাইরে থেকে তারা চলে এসেছে সেমিফাইনালে। অবশ্য ভাগ্যেরও সহায়তা লেগেছে তাদের। নিউজিল্যান্ড-ভারত-ইংল্যান্ডের সঙ্গে সেমিফাইনালে পা রাখার সবচেয়ে বড় দাবিদার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ নেদারল্যান্ডস নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে পাকিস্তানের পথ সহজ করে দেয়। তাই সেমিফাইনালের চার দলের মধ্যে চমক হয়ে আছে পাকিস্তানই।
কাল সিডনিতে প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে পাকিস্তান এখন হুঙ্কার ছাড়ছে। দলের ব্যাটিং পরামর্শক অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু হেইডেন দিয়েছেন হুঁশিয়ারি, ‘সবাই ভেবেছিল সম্ভবত ফলটা ভিন্ন কিছু হতে যাচ্ছে। ঠিক সেই সময় পাকিস্তান ক্রিকেট দল জ্বলে ওঠে এবং নিজেদের শক্তি প্রকাশ করে। তারা এখন সত্যিকারের হুমকি হয়ে উঠেছে। বিশ্বে এবং এই প্রতিযোগিতায় এমন কোনো দল নেই যারা আমাদের মুখোমুখি হতে চাইবে। তারা ভেবেছিল আমাদের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছে। এখন তারা আর আমাদের কাছ থেকে পরিত্রাণ পাবে না।’
নিজেরা ছন্দে থাকলেও ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ীদের হালকাভাবে নিচ্ছে না নিউজিল্যান্ড। বিশ্বকাপে আগের আসরগুলোতে ছয়বারের দেখায় চারবার জিতেছিল পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড দুইবার। এর মধ্যে প্রথম আসরের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছিল পাকিস্তান। তাছাড়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বারবার হারের অতীতও ভয় দেখাচ্ছে নিউজিল্যান্ডকে। সতর্ক টিম সাউদি তাই জানালেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা অনেক খেলেছি এবং আমরা জানি, তারা খুবই ভয়ানক দল। কৃতিত্ব তাদের দিতে হবে। তারা সম্ভবত এটা ভেবে নিয়েছিল যে, তাদের খুব বেশি সুযোগ নেই। কিন্তু তারা আরেকটি ভালো পারফরম্যান্স করেছে। সেমিফাইনালে তারা হবে বিশাল এক হুমকি।’
এদিকে সবচেয়ে ফেভারিট ভারত এবার প্রথম আসরের পর শিরোপা জিততে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে। সামনে বাধা প্রথমে ইংল্যান্ড। দলটি গ্রুপ পর্বে বিপদে পড়লেও নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই লিখেছে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জয় দিয়ে। তাই ইংল্যান্ড সহজ প্রতিপক্ষ হবে না বলে জানিয়েছে ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শিরোপার জন্য সেমিফাইনাল জিতলেই হবে না ফাইনালও জিততে হবে বলে সতীর্থদের মনে করিয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের প্রথমে গর্বিত হওয়া উচিত যে সেমিফাইনালে খেলছি। এখন আমাদের সামনে এক ম্যাচ নয়। আরও একটি বড় ম্যাচ আছে। শিরোপা জিততে হলে দুটো ম্যাচই জিততে হবে। এজন্য আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকা চাই। ইংল্যান্ড খুব ভালো দল, সেমিফাইনাল লড়াইটা বেশ শক্ত হবে।’ ইংল্যান্ডও ভারতের সঙ্গে ম্যাচকে সেরা লড়াই হিসেবে দেখছে। এই বড় বাধা পার না হলে বিশ্বকাপ জিততে পারছে না এমনটাই জানিয়েছেন পেসার মার্ক উড, ‘ভারত বিশাল দল। ওদের সঙ্গে ম্যাচ হওয়া মানেই বিরাট। বড় আসরে শিরোপা জিততে চাইলে আপনি এমন বড় দলের সঙ্গেই জিততে চাইবেন।’
চার সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে একমাত্র নিউজিল্যান্ডেরই শিরোপা অভিজ্ঞতা নেই। গতবার অল্পের জন্য অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় তারা। জিতলে তারা হবে নতুন চ্যাম্পিয়ন। তার আগে পাকিস্তান বাধা পেরুতে হবে কিউইদের।
বঙ্গবন্ধুর খুনি ও গ্রেনেড হামলা-মামলার আসামিদের যারা বাঁচাতে চেয়েছে আগামী ১০ ডিসেম্বর তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সোমবার টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ হুঁশিয়ারি দেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পালানোর দল আওয়ামী লীগ নয় বিএনপি। বিএনপির আমলে মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি। এখন মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। বাঁশের লাঠিতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে রাস্তায় নামবেন তা হবে না। বরিশাল ও রংপুরে বস্তা বস্তা টাকা দিয়ে মানুষ নিয়ে গেছেন। দশ লাখ মানুষের কথা বলেন! অথচ সমাবেশে তো আপনাদের চেয়ার ফাঁকা থাকে।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে গেছেন যে, তিনি রাজনীতি করবেন না। তারপরও তিনি লন্ডনে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে রাজনীতি চালাচ্ছেন। ডিসেম্বরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে খেলা হবে। বিএনপির দুঃশাসন এবং যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ১০ ডিসেম্বর খেলা হবে। যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের বাঁচাতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন বলছেন। তিনি তো মুক্তই। তাকে নিয়ে তো আপনারা একটা মিছিলও করতে পারেননি। খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনীতি কইরেন না, বেশিও বুইঝেন না।’
সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। সারা বিশ্ব আজ শেখ হাসিনার প্রশংসা করে। এখন বছরের প্রথম দিনেই বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে বাঙালি জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা এ দেশকে বিশ্বদরবারে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘৭১-এর পরাজিত শক্তিরা দেশকে পিছিয়ে নিতে চায়, তারা আরেকটা ৭৫-এর দিবাস্বপ্ন দেখছে। তাদের সে ইচ্ছা কোনোভাবেই পূরণ হবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শাজাহান খান বলেন, ‘সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার পরোক্ষ খুনি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। এ দেশে এখন আর মঙ্গা নেই। খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। আমাদের খাদ্য এখন উদ্বৃত্ত হয়।’
টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে বেলুন উড়িয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি ও আব্দুর রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডক্টর আবদুস সালাম গোলাপ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন প্রমুখ। সম্মেলনে টাঙ্গাইলের আটটি সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্যরাসহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার নেতারা বক্তব্য রাখেন। প্রায় দেড় লাখ লোকের সম্মেলন পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপি।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলরদের সমর্থনে পুনরায় একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুককে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপিকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়।
বিএনপির নেতাকর্মীদের আরও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। এখন এক দফা এক দাবি। আর সেই দাবি হচ্ছে এই সরকারের পদত্যাগ। এই সরকারের পতন ছাড়া আমরা ঘরে ফিরে যাব না।’
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করে দলটি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার অভূতপূর্ব সমন্বয়ে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা হয়েছিল। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গত ১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র হরণ করে আবার স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। তাই এখন স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম চলছে। এখন একটাই দাবি সরকারের পদত্যাগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে অলিখিত বাকশাল চলছে। এই সরকারের পতনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পঁচাত্তরের পর রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ব্যর্থতায় জিয়া সফল হয়ে ৭ নভেম্বরের স্বাধীনতা রক্ষা করেছিলেন, সেই চেতনায় দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের আগেই ঢাকার আশপাশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে, হামলা হচ্ছে । এভাবে জনগণের আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশপাশে পঁচাত্তরের খুনিরা। এটা জাতির জন্য দুঃখজনক।’
বিএনপির শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘সমালোচনাকারীরা বলেন, ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সুবিধাভোগী জিয়াউর রহমান এটা ভুল কথা, মিথ্যা কথা। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে অগ্রভাগে কল্যাণ পার্টির অবস্থান থাকবে।’
সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
এর আগে সকালে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে শেরেবাংলা নগরে দলটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মির্জা ফখরুল। এ সময় তিনি বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ও অর্থনীতি ফিরে পেতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আজ লড়াই করছি। বেঁচে থাকার অধিকার ফিরে পেতে এবং দেশে সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য আমরা এ সংগ্রাম করছি। আমরা আমাদের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করছি। বিএনপির প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়ে আসামি করা হয়েছে। তাদের মুক্ত করার জন্য আন্দোলন করছি। আমাদের আন্দোলন আজ জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদনের পর একে একে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল, জাসাস, কৃষকদল, শ্রমিকদল, ওলামা দল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ইউট্যাব, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব), এমট্যাবসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষে জিয়ার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর আগে সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।