
চীনের সঙ্গে যেকোনো সংঘাত কিংবা নতুন স্নায়ুযুদ্ধ এড়াতে চান বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট গ্রুপ অব টোয়েন্টি বা জি-২০ জোটের শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর বাইডেন এ কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শি চিনপিংয়ের সঙ্গে এবারই প্রথম মুখোমুখি বৈঠক করলেন জো বাইডেন। এর আগে উভয় নেতা পাঁচবার ফোন বা ভিডিও কলে কথা বলেছেন। আর সোমবারের আগে এ দুই নেতার সামনাসামনি দেখা হয়েছিল ওবামার শাসনামলে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন।
জি-২০ সম্মেলন শুরুর আগের দিন সোমবার বৈঠকের পর বাইডেন বলেন, ‘আমি পুরোপুরিই বিশ্বাস করি, নতুন স্নায়ুযুদ্ধের দরকার নেই। আমরা একে অন্যের সঙ্গে অকপট ও স্পষ্ট ভাষায় কথা বলেছি। পেইচিং বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা পাল্টে দিতে চায় না।’
বৈশ্বিক পরাশক্তি এ দুই দেশের সর্বোচ্চ নেতার বৈঠকের পর তাদের কার্যালয় থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে উভয় নেতা আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, ঋণ, ত্রাণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা, বৈশ্বিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাসহ আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনকে অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এটাই প্রত্যাশা করে।
অন্যদিকে সরকারি চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়াও প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে উদ্ধৃত করে বলেছে, বিশ্ব শান্তির জন্য আরও আশা, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার ওপর বৃহত্তর আস্থা এবং অভিন্ন উন্নয়নে শক্তিশালী প্রেরণা আনতে উভয়পক্ষের সব দেশের সঙ্গে কাজ করা উচিত।
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বালিতে উপস্থিত হওয়া বাইডেন এবং চিনপিংয়ের মধ্যে ওই বৈঠক তিন ঘণ্টা ধরে চলে। সাক্ষাতের শুরুতে দুই নেতা সাংবাদিকদের সামনে হাসিমুখে করমর্দন করেন। এ বৈঠকের ফলে দুই পরাশক্তির মধ্যে সম্প্রতি শীতল হয়ে পড়া সম্পর্ক অন্তত কিছুটা উষ্ণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, দুই দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলবে, কিন্তু তা সংঘাতে পরিণত হতে দেওয়া উচিত নয়।
ইন্দোনেশিয়ায় বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি২০ সম্মেলনের প্রথম দিন গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেন জুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রাজধানী ছাড়াও লিভিভ, পশ্চিমের রিউন, উত্তর-পূর্বের খারকিভ, মধ্যাঞ্চলের ক্রিভি রিহ ও পোলতাভা, দক্ষিণের ওদেসা এবং উত্তরের ঝাইতোমিরে রীতিমতো ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টিবর্ষণ হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। হামলায় কিয়েভে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন বলে নগরীর মেয়রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
সম্প্রতি রুশ বাহিনী তাদের দখলে থাকা ইউক্রেনের খেরসন অঞ্চল থেকে পিছু হটার পর গতকালই প্রথম আবার ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল রাশিয়া এবং তা জি২০ সম্মেলন চলাকালে। অথচ এবারের জি২০ সম্মেলনের প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ইউক্রেন যুদ্ধ। সম্মেলনে বক্তব্য রাখা সব নেতাই রাশিয়াকে এ যুদ্ধ বন্ধ করতে বলেছেন। গতকাল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও ভার্চুয়ালি এ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। তিনি রাশিয়ার, ‘ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ’ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তিনি জি২০ জোটের ২০টি দেশ থেকে রাশিয়াকে বাদ দিয়ে এ জোটকে জি১৯ বলে উল্লেখ করেন। জেলেনস্কির ভাষণের জবাব হিসেবে মস্কো গতকাল হামলা চালিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন জেলেনস্কির কার্যালয়ের প্রধান আন্দ্রি ইয়েরমাক।
গতকাল কিয়েভের প্রাণকেন্দ্রে অন্তত দুটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত করেছে। হামলায় ইউক্রেনের অনেক অঞ্চল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর রাজধানীর অর্ধেক অংশে বিদ্যুৎ নেই। এদিন রাশিয়া ইউক্রেনে ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং আরও অন্তত ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়বে বলে এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি নাগরিকদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
রাশিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে জানিয়ে জেলেনস্কির কার্যালয়ের উপপ্রধান কিরিলো তিমোশেঙ্কো বলেন, ‘রাজধানী কিয়েভসহ পুরো দেশের অবস্থাই গুরুতর। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে হামলার কারণে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে আয়োজিত এবারের জি২০ সম্মেলনে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে যোগ দেননি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। তার পরিবর্তে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বালিতে যান। তাকে নিয়ে বালিতে এবার নানান খবর শোনা যাচ্ছে। গত সোমবার সম্মেলনের আগের দিন প্রথমে শোনা যায় তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। পরে ওই খবর ভুয়া বলে উড়িয়ে দেন তার সঙ্গে থাকা এক রুশ কূটনীতিক। পরে গতকাল সকালে ল্যাভরভ বালি ত্যাগ করেছেন বলে শোরগোল উঠে। তার পরপরই রাশিয়া ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র বর্ষণ শুরু করে। অবশ্য পরে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, ল্যাভরভ বালিতেই আছেন এবং গতকাল রাতে তিনি বালি ছাড়বেন।
সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে সারা দেশে বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ১৯ নভেম্বর শনিবার সিলেটে অনুষ্ঠিত হবে বিভাগীয় গণসমাবেশ। নগরীর চৌহাট্টায় অবস্থিত সিলেট সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে হবে এই সমাবেশ। বিশাল আয়তনের এই মাঠে সচরাচর রাজনৈতিক জনসভা হয় না। এর অন্যতম একটি কারণ মাঠ ফাঁকা থাকার ভয়। ইতিপূর্বে দেখা গেছে, কেবল বড় দুই দলের শীর্ষ নেতা (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) সিলেট সফরে এলে এই মাঠে জনসভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এবার খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই বিশাল এই মাঠে বড় সমাবেশ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে বিএনপি।
সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে তারা নানা কৌশল ও বহুমুখী প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। বিভাগের চার জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ এবং চার জেলার প্রতিটি উপজেলায় দলীয় নেতাকর্মীরা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফলে মাঠে নেমেছেন। বিভাগীয় শহর সিলেটে চালানো হচ্ছে ব্যাপক প্রচার। নগরীর জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। অলিগলিতেও শোভা পাচ্ছে সমাবেশের পোস্টার। চলছে মাইকিং ও অনলাইন প্রচারণা। সমাবেশস্থল আলীয়া মাদ্রাসা মাঠ ইতিমধ্যেই তাদের দখলে। মাঠের চারপাশে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড় বড় ছবি সংবলিত ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চলছে সুবিশাল মঞ্চ তৈরির কাজ।
সমাবেশ যাতে সফল না হয় এজন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও পুলিশের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু বাধা আসছে উল্লেখ করে সিলেট বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা গতকাল মঙ্গলবার দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘এখনো বড় ধরনের কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। আশা করছেন সিলেটের রাজনৈতিক সহাবস্থানের অতীত ঐতিহ্য বজায় রেখে নির্বিঘে্ন সমাবেশ করতে পারবেন তারা। বাধা ডিঙিয়ে বড় সমাবেশ করার প্রস্তুতি তাদের আছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে নেতারা বলেন, ‘তাদের টার্গেট হলো সমাবেশ মাঠ ছাড়িয়ে পুরো সিলেট নগরীতে জনসমাগম ঘটানো। যাতে মনে হয় পুরো সিলেট নগরে সমাবেশ হচ্ছে।’ এজন্য তারা চার লাখ লোক সমাগমের লক্ষ্যে কাজ করছেন।
বিএনপি সূত্র জানায়, গতকাল মঙ্গলবার বিয়ানীবাজারে সমাবেশের পক্ষে বিএনপির প্রচার কাজে ছাত্রলীগ দফায় দফায় বাধা দিয়েছে। এ নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়াও হয়েছে। এর আগে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ সদরেও বাধা দানের ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অন্য বিভাগীয় সমাবেশগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সিলেটে ভিন্ন কৌশল নিচ্ছে বিএনপি। তারা সমাবেশের আগের দিনের ‘পরিবহন ধর্মঘট’ যাতে না হয় সেজন্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে ‘সুসম্পর্ক’ রেখে চলেছেন। পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিএনপিপন্থি নেতাদের সক্রিয় করেছেন। বড় ধরনের ‘চাপ’ না এলে সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট হবে না বলে আশা করছেন বিএনপি নেতারা। আর পরিবহন ধর্মঘট হলেও এর বিকল্প ব্যবস্থা রাখছেন তারা। বিভাগের জেলা-উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে তারা সমাবেশের আগের দিনই সিলেটে এসে নিরাপদে থাকতে ও খেতে পারেন। এজন্য নগরীর প্রায় সব (অন্তত ২০-২৫টি) কমিউনিটি সেন্টার ১৮ নভেম্বরের জন্য বুকড করেছে বিএনপি। আগের দিন চলে আসা নেতাকর্মীদের রান্না করা খাওয়ার (খিচুড়ি) দেওয়া হবে। পাশাপাশি আগের দিন থেকেই মাঠে অবস্থান নেবেন নেতাকর্মীরা, সারা রাত সেখানেই থাকবেন।
ফাঁকা নেই কমিউনিটি সেন্টার : বিএনপির সমাবেশের আগের দিন ১৮ নভেম্বর শুক্রবার। যেকোনো শুক্রবারই বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে ঠাসা থাকে। এজন্য কমিউনিটি সেন্টারগুলো আগাম বুকিং নেন আগ্রহীরা। কিন্তু আগামী শুক্রবার সিলেটে বিপাকে পড়বেন সেখানকার এরকম অনুষ্ঠানের আয়োজকরা। ওই দিনের জন্য ইতিমধ্যে কমিউনিটি সেন্টারগুলো বিএনপি বুকড করে নিয়েছে।
দক্ষিণ সুরমার তায়েফ আহমদ জানান, আগামী শুক্রবার তার গায়েহলুদ। কিন্তু অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য কোনো কমিউনিটি সেন্টার খালি পাচ্ছেন না। মঙ্গলবার ৫-৬টি সেন্টারে খোঁজ নিয়ে কোথায়ও ফাঁকা পাননি।
নগরীর আগ্রা, মালঞ্চ, ময়ূরকুঞ্জ, নুরে আলা, সাজিদ আলী সেন্টারসহ বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির পক্ষে সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ১৮ নভেম্বরের জন্য সেন্টারগুলো ভাড়া নিয়েছেন। আরিফুল হক চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং সিলেটের সমাবেশ উপলক্ষে গঠিত আবাসন উপকমিটির প্রধান। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তার ব্যক্তিগত সহকারী ফোন রিসিভ করে জানান, ‘মেয়র কিছুটা অসুস্থ বোধ করায় ঘুমিয়ে আছেন।’ তবে বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানিয়েছেন, মেয়র আরিফই কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নিয়ে নেতাকর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া নেওয়ার খবর আমরাও জানতে পেরেছি। যে কেউ তার প্রয়োজনমতো এগুলো ভাড়া নিতেই পারে। তবে সেন্টার ভাড়া নিয়ে কোনো বেআইনি কাজ করলে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে পুলিশ।’
সমাবেশ সফলে ৬ কমিটি : সিলেটে বিভাগীয় সমাবেশ সফলে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বিএনপি। গণসমাবেশ সফলে করা হয়েছে ৬টি কমিটি। দলীয় সূত্র জানায়, সমাবেশ ‘ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা’ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। ‘আবাসন ব্যবস্থাপনা’ কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ‘প্রচার ও মিডিয়া’ কমিটিতে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, ‘অভ্যর্থনা’ কমিটির দায়িত্বে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী, আপ্যায়ন কমিটির দায়িত্বে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন এবং দপ্তর কমিটিতে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ূন কবির শাহীন নেতৃত্বে রয়েছেন। সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।
সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশ এখন আর বিএনপির একার নয়, প্রতিটি সমাবেশই জনতার সমাবেশে রূপ নিচ্ছে। কারণ অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিএনপির সমাবেশে যোগ দিয়ে তারা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাচ্ছে।’
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাধা দিয়ে জনতার জোয়ার কেউ রুখতে পারবে না। বরং কেউ বাধা দিতে এলে সেই জোয়ারে ভেসে যাবে।’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সমাবেশ সফলে নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছায় যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা খরচ করছেন। এখানে চাপ প্রয়োগের কিছু নেই।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের হত্যাকারীরা শনাক্ত হলেও কারণ এখনো জানতে পারেনি বলে দাবি করছে পুলিশের তদন্তকারী সংস্থা। তদন্তসংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে, ফারদিনকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী রায়হান গ্যাং হত্যা করেছে। তবে কেন হত্যা করেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে পুলিশের ওই বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, বিভিন্ন আলামত, সিসিটিভি ফুটেজ, প্রযুক্তি ও সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি ফারদিন হত্যাকান্ডের সঙ্গে চনপাড়া বস্তির মাদক কারবারি রায়হান গ্যাং জড়িত। তবে এ গ্যাং কেন তাকে হত্যা করল এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, যে জায়গাটাতে আমরা সন্দেহ করছি, হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে যেখানে, সেখান থেকে ফারদিনের বাসার দূরত্ব চার কিলোমিটারের মতো। কোনাপাড়ায় ছোট থেকে সে বড় হয়েছে। ফলে বস্তি এলাকায় যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চনপাড়াকেন্দ্রিক গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা ফাঁদেও ফেলে অনেককে। কেউ আবার তাদের তৈরি করা ফাঁদে পা দেন। ওই রাতে চনপাড়ায় কোনো ধরনের ফাঁদে ফারদিনকে ফেলা হয়েছিল কি না তা আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এত রাতে চনপাড়া এলাকায় তার উপস্থিতি বের করার চেষ্টা চলছে।
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন ৪ নভেম্বর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। পরদিন রাজধানীর রামপুরা থানায় নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা। ৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। ৯ নভেম্বর রাতে ফারদিনের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা করেন ফারদিনের বাবা।
আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। চিঠিতে সমাবেশ সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধে সহযোগিতাও চেয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাতে গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া না হয়, সে বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের হস্তক্ষেপ চেয়েছে দলটি। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে চিঠিটি হস্তান্তর করে।
ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আমান বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ডিএমপি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছি আমরা। সেই সঙ্গে সমাবেশের সময় যেন যান চলাচল বন্ধ না হয়, সেই দাবিও জানিয়েছি। পাশাপাশি সমাবেশে আসতে নেতাকর্মীদের যেন কেউ বাধা না দেয় তা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ডিএমপি কমিশনারকে বলেছি, আপনি আওয়ামী লীগের কমিশনার নন, বিএনপির কমিশনার নন, আপনি সরকারের কমিশনার। আপনি সরকারি কর্মকর্তা। এদিকে লক্ষ রেখে আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করব।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা আমাদের পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছি। তারা বলেছেন, আর কোনো বিকল্প প্রস্তাব আছে কি না। আমরা বলেছি, আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানাব। বিভিন্ন দিক বিবেচনা করেই আমরা পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করতে চেয়েছি। সরকারি দল যেভাবে ফ্যাসিবাদের দিকে যাচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করছে। তাই আমরা যদি আমাদের পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করি, তবে সরকারি দল তেমন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে না।’
বৈঠক শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা লিখিত দরখাস্ত পেয়েছি, এখন সেটি বিবেচনা করে দেখব অনুমতি দেওয়া যায় কি না। আমাদের যে গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে তাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখব কোনো ধরনের ঝুঁকি রয়েছে কি না।’
বিএনপি তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের যে অভিযোগ করেছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করিনি। যাদের বিরুদ্ধে মামলা নেই তাদের বিরুদ্ধে এ রকম কোনো গ্রেপ্তার অভিযানও চলছে না। তবে যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা আছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে গ্রেপ্তার করব।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার এবং নানা দাবিতে দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করছে বিএনপি। বিএনপি প্রথম সমাবেশ করে চট্টগ্রামে। এরপর ময়মনসিংহ, পরে খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও সবশেষে ফরিদপুরে হয় সমাবেশ। আগামী শনিবার সিলেটে সমাবেশ করবে বিএনপি।
১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশকে ঘিরে কথার লড়াই শুরু হয়েছে রাজনীতিতে। সমাবেশের দিন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ চলবে বিএনপি নেতাদের এমন ঘোষণা দেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তবে দলটির শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে সেই বক্তব্য নাকচ করা হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও দিনটিকে ঘিরে নানা কর্মপরিকল্পনা করছে। তারাও রাজপথে শক্তি দেখাচ্ছে নানা কর্মসূচিতে।
দেশের পাঁচটি মহাসড়কে ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চলাচল এখনই বন্ধ নয়, ক্লোজলি মনিটর করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল মঙ্গলবার বনানীতে বিআরটিএ’র কার্যালয়ে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনআরএসসি) সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই ৫টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ইজিবাইক চলাচল ক্লোজলি মনিটর করবে হাইওয়ে পুলিশ। তবে হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা আছে, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলতে পারবে না। সেজন্য এই যানবাহনগুলো আমরা মনিটর করব। এগুলো এখনই বন্ধ করা যাচ্ছে না, কারণ অনেক মানুষ এই বাহন চালিয়ে জীবিকা চালচ্ছে। এই ৫ মহাসড়ক হলো ঢাকান্ডআরিচা, ঢাকান্ডময়মনসিংহ, ঢাকান্ডসিলেট, ঢাকান্ডচট্টগ্রাম এবং ঢাকান্ডটাঙ্গাইল।’
মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মহাসড়কে মোটরসাইকেল এখনই বন্ধ হচ্ছে না। আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আর মোটরসাইকেল বন্ধের জন্য আলাদা নীতিমালা করা হবে। তা ছাড়া, বিশ্বব্যাংক প্রস্তাবিত রোড সেফটি প্রোগ্রামের আওতাধীন প্রথম পর্যায়ের একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে; যার প্রাক্কলিতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৮০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়েছে, যা দ্রুতই একনেক সভার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস এবং এর কারণে সংঘটিত ক্ষতির মাত্রা কমানো; সড়ক নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সরকারি সংস্থাসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। প্রকল্পটিতে সওজ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বাংলাদেশ পুলিশ এবং স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর স্টেক হোল্ডার হিসেবে রয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকাল ডিসেম্বর ২০২২ থেকে নভেম্বর ২০২৭।
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) থেকে যারা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন; তারা ঘরে বসেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবেন। তবে আবেদনকারীকে বায়োমেট্রিক্স প্রদানসহ পরীক্ষার জন্য একবার বিআরটিএতে আসতে হবে।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও মাদারীপুর-২ আসনের এমপি শাজাহান খান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী প্রমুখ।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৬৯৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এ খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং মাসিক ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের হিসাবে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১ লাখ বাড়িয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ২৯ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৮০ করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২০ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৬২০ করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩০ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৩৮০ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা আরও রয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।