
আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি করতে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। এ চুক্তিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা, কানেক্টিভিটি, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষাসহ সব বিষয় নিয়ে সহযোগিতার সুযোগ থাকবে এবং এর ভিত্তি হবে মানবাধিকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিস ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরার মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের মাঝামাঝি সময়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে হবে। আমাদের আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন কোথায় আছে এবং আগামীতে কোথায় নিতে চাই; বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি যেমন আইসিটি, খাদ্য, জলবায়ু ইত্যাদি; ফিউচার থ্রেটসহ রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দীর্ঘ সময়। এর বাইরে রিজিওনাল বিভিন্ন ব্যাপার, ইউক্রেন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদান, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য-সুবিধা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এনরিকে মোরা বলেন, আমরা সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছি দুটি কারণে দেশটির অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি ও অর্জন। এ কারণে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করতে চাইছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং বাংলাদেশের মধ্যে কৌশলগত দিকনির্দেশনা বিনিময় এবং বৈদেশিক ও নিরাপত্তানীতির সহযোগিতা জোরদার করাই এ সংলাপের প্রধান উদ্দেশ্য। ইইউ জাতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি ও নতুন আত্মবিশ্বাসকে স্বীকার করেছে এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের ওপর ফোকাসসহ যৌথ স্বার্থের ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য উন্মুখ।
মোরা বলেন, ওই চুক্তির মধ্যে যে উপাদানগুলো আছে সেগুলোর বাইরেও বিভিন্ন বিষয় চলে আসছে। ফলে আমাদের পরবর্তী ধাপে উন্নীত হতে হচ্ছে এবং সেটি হচ্ছে অংশীদারিত্ব চুক্তি। এই আইনি কাঠামোর মধ্যে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সম্মত হয়েছি যে অংশীদারিত্ব সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে কাজ করব। এর একটি আলোচনার প্রক্রিয়া আছে। বাংলাদেশের যে ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা, প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের যে যাত্রা রয়েছে সেগুলো বিবেচনায় নিলে দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ আছে।’
ইন্দো-প্যাসিফিক ইইউর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে মোরা বলেন, বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবে এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের এই যাত্রায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেষ্টা করবে সবচেয়ে বড় অংশীদার হওয়ার।
এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এ অঞ্চলে বাণিজ্য বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা আছে। এটি করার জন্য এ অঞ্চলে অবাধে চলাচলের সুযোগ থাকতে হবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত প্রসঙ্গে মোরা বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পরে সব দেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন সময় এবং ভিন্ন বিশ্বে বাস করছে। এ মুহূর্তে যারা জাতিসংঘ নীতিতে বিশ্বাস করে, তাদের মধ্যে অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইইউ প্রতিনিধি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন রেজল্যুশন নিয়ে বাংলাদেশ স্বপক্ষে ভোট দিয়েছে। এই সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিকে ইইউ সম্মান করে। বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আমরা সেটিকে বাতিল করতে পারব না। আমরা যেটি করতে পারি, সেটি হচ্ছে নীতি নিয়ে আলোচনা এবং আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই আমরা অন্য দেশকে একটি অবস্থান নেওয়ার জন্য বলব না। আমরা বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি সম্মান জানাই।’
এসময় অন্য কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লায় গণসমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে জড়ো হচ্ছেন। আগের কয়েকটি বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে সরকারবিরোধী দলটির নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া, তাদের ওপর হামলা চালানোর মতো অভিযোগ কুমিল্লা বা আশপাশের জেলাগুলো থেকে এখনো আসেনি। কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোনো নেতাকর্মীকে আটকের তথ্য পাওয়া যায়নি।
আগামীকাল শনিবার কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নগরের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ ১০ শর্তে নগরীর টাউন হল মাঠে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। মাঠ প্রস্তুত করাসহ সব কাজ শেষের দিকে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুসহ একদল জ্যেষ্ঠ নেতা প্রস্তুতির বিষয়গুলো তদারক করছেন।
এ সমাবেশকে ঘিরে কুমিল্লায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিএনপির পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে নগর ছেয়ে গেছে। বিএনপির কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক ইতিমধ্যে নগরীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষ করে হোটেল-মোটেলসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভবন, ফ্ল্যাটে উঠেছেন বহু নেতাকর্মী। আবার খন্ড খন্ডভাবে কেউ কেউ আশপাশের উপজেলাগুলোতেও অবস্থা করছেন।
কুমিল্লার বাইরে থেকে আসা অতিথি নেতাকর্মীরা যেন থাকা-খাওয়ার কোনো সমস্যায় না পড়ে সে দিকগুলো তদারকি করছে মহানগর বিএনপি। সমাবেশে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা না থাকায় ব্যাপক লোক সমাগমের আশা করছে বিএনপি। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে আসতে পারবেন বলে দলটির নেতারা ধারণা করছেন।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কুমিল্লা দক্ষিণ, মহানগর এবং উত্তর জেলা বিএনপির উদ্যোগে আমরা ৫০ হাজার লোকের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সমাবেশে আসা কোনো অতিথি নেতাকর্মী যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন, সে বিষয়টি খেয়াল রাখছি।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে নগরীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। তাদের আপ্যায়ন এবং সব সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন তারা। নেতাকর্মীরা কোন কোন এলাকায় জড়ো হয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পুলিশি হয়রানিসহ নানা ঝামেলা এড়াতে এই মুহূর্তে তা প্রকাশ করতে চাই না আমরা। তবে সময়মতো কুমিল্লার টাউন হল মাঠসহ প্রতিটি সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে।’
কুমিল্লার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি তাদের সমাবেশের কাজ করছে। কুমিল্লা জেলা পরিবহনের পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের অবরোধ নেই। আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার প্রতিরোধের খবর পাওয়া যায়নি। একপ্রকার স্বাভাবিকভাবেই কুমিল্লায় সমাবেশের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
এদিকে সমাবেশের দিন মাঠের দখল এবং নিজেদের আধিপত্য দেখাতে পাল্লা দিয়ে লোকের সমাগম ঘটাচ্ছেন জেলা এবং মহানগর নেতারা। তাছাড়া বহিষ্কৃত নেতা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং পরাজিত মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারও ব্যাপক শোডাউন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
বিএনপি নেতা এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুর রশীদ ইয়াছিনও মাঠের সিংহভাগ তার সমর্থকের দখলে রাখার চেষ্টা করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে মাঠ দখল নিয়ে যেন কোনো সংঘাত-সহিংসতা কিংবা হট্টগোলের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখছেন সমাবেশ সফল করার দায়িত্বে থাকা বিএনপির নেতারা।
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘আমার ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক সমাবেশে যোগ দেবে। এরই মধ্যে আমি তাদের আপ্যায়নসহ সবকিছু তদারকি করছি, তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন কোনো কাজ আমি এবং আমার কর্মী-সমর্থকরা করবে না।’
সুউচ্চ বাণিজ্যিক ভবন বুর্জ খলিফা, বুর্জ আল-আরবের পর এবার আরব-আমিরাতের দুবাইয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ আবাসিক ভবন নির্মিত হতে যাচ্ছে। আমিরাতি আবাসন কোম্পানি বিনগাতি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘড়ি প্রস্তুতকারী জ্যাকব অ্যান্ড কোম্পানির যৌথ অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে ভবনটি।
ইতিমধ্যে বিনগাতি এবং জ্যাকব অ্যান্ড কো. ‘বুর্জ বিনগাতি জ্যাকব অ্যান্ড কো. রেসিডেন্স’ নামের সেই ভবনটির নকশাও প্রকাশ করেছে। দুবাইয়ের ব্যস্ত ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিত বিজনেস বের কেন্দ্রস্থলে এই ভবনটি তৈরি করা হবে।
আবাসন কোম্পানি বিনগাতির শীর্ষ নির্বাহী মুহম্মদ বিনগাতি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বুর্জ বিনগাতি জ্যাকব অ্যান্ড কো রেসিডেন্স’ হবে ১০০ তলাবিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবন। এরই মধ্যে ভবনটি ‘হাইপার টাওয়ার’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে। মূলত বৈশ্বিক ধনকুবের বা ব্যাপক ধনী ব্যক্তিদেরই এই ভবনটির বিভিন্ন তলার ক্রেতা হিসেবে বিবেচনা করছে নির্মাতারা। যারা হাইপার টাওয়ারে অ্যাপার্টমেন্ট কিনবেন তাদের জন্য ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, বাবুর্চি, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন পরিষেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের জন্য ভবনের ভেতর এক্সক্লুসিভ প্রাইভেট ক্লাবের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সেই ক্লাবে থাকবে বিশাল সুইমিং পুল এবং লাউঞ্জ। ভবনটির পাঁচটি পৃথক ইউনিট থাকবে। প্রতিটি ইউনিটের পেন্ট হাউস (সবচেয়ে বিলাসবহুল) ফ্ল্যাটগুলো হবে খুবই চাকচিক্যপূর্ণ। ভবনটির শীর্ষ অংশের ডিজাইন করা হয়েছে হিরার মুকুটাকৃতিতে।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু আবাসিক ভবনটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির সবচেয়ে জনবহুল এলাকা ম্যানহাটনের ৫৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত। ‘সেন্ট্রাল পার্ক টাওয়ার’ নামের সেই ভবনটি ৯৮ তলা বিশিষ্ট, উচ্চতা ১ হাজার ৪১৬ ফুট। সেই হিসেবে বুর্জ বিনগাতি জ্যাকব অ্যান্ড কো রেসিডেন্সের তলার সংখ্যা ও উচ্চতা দুটোই সেন্ট্রাল পার্ক টাওয়ারের চেয়ে বেশি হবে।
চিনির বাজারের অস্থিরতা কাটছেই না। নানা অজুহাতে কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে বাড়তে কেজিপ্রতি দাম ছাড়িয়ে যায় ১২০ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে চিনির দাম কেজিতে ১২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এক কেজি প্যাকেট চিনি সেই অনুযায়ী বিক্রি হওয়ার কথা ১০৮ টাকা। কিন্তু পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা এখনো সংকটের অজুহাতে বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। পাড়া-মহল্লার কোনো দোকানেই নির্ধারিত দামে মিলছে না চিনি। বাজারের দোকানগুলোতে পাওয়া গেলেও রাখা হচ্ছে নির্ধারিত দামের চাইতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি। চিনির দামের এ নৈরাজ্যের মধ্যেই ভোক্তাদের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে চেপে বসেছে আটার দামও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটিও চিনির মতো উধাও হয়ে গেছে বাজার থেকে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি দোকানে চিনি পাওয়া যায় না। কিছু চিনি পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম ও বাড়তি দামে কিনতে হয়। প্রতি কেজি চিনি কিনে আনতে হয় ১০৮-১০৯ টাকা করে। সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১১৫ টাকা পড়ে যায়। যা বিক্রি করতে হয় ১২০-১২৫ টাকা করে। চিনির অস্বাভাবিক দামের জন্য জরিমানার ভয়ে থাকতে হয়। এর জন্য অনেক দোকানি চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাঁটাবন, গ্রিনরোড, কলাবাগান, কাজীপাড়া ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে খোলা কিংবা প্যাকেটজাত চিনি নেই। হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা করে। কারওরান বাজারে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া গেলেও তা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন দোকানিরা।
গ্রিনরোডের দোকানি হারুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজার থেকে চিনি কিনে দোকানে আসা পর্যন্ত প্রতি কেজিতে মূল্য পড়ে ১১৫ টাকা। এর পরে আমাদের আরও অন্যান্য খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনি ১২৫ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। ১২০ টাকা করে চিনি বিক্রি করলেও আমার লাভ হয় না।
কাজীপাড়ার সামিয়া জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফ্রেশ চিনির প্রতিনিধিরা ২ মাসের বেশি সময় ধরে মহল্লায় আসেন না। চিনির দরকার হলে কারওয়ান বাজার গিয়ে আনতে হয়। তাও ১০ কেজির বেশি দিচ্ছেন না পাইকাররা। অনেক সময় ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি অর্ডার করে আসতে হয় ১০ দিন আগে, তাও অগ্রিম টাকা নিয়ে চিনি দিতে তারা গড়িমসি করে।
কারওয়ান বাজারের ফ্রেশ চিনির ডিলার ইব্রাহীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোম্পানি আমাদের চিনি দিলে তা আমাদের বিক্রি করতে সমস্যা নেই। কোম্পানি আমাদের চিনি না দিলে আমরা কীভাবে বিক্রি করব। অগ্রিম টাকা দিয়ে চাহিদার তুলনায় অল্পকিছু চিনি পাই। তাও আবার প্রতি বস্তা চিনি মিল থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনে আনতে হয়। বর্তমানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চিনি ৫ হাজার ৩৫০ টাকা করে কিনতে হয়। আমাদের হাতে প্রতি কেজিতে ১০৭ টাকার বেশি পড়ে। সেটি কী করে ১০২ টাকা করে বিক্রি করব?
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, ঢাকার বাজারগুলোতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি চিনি ১১০-১১৫ টাকা ও আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকার মধ্যে। তবে বাজারে খবর নিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে খোলা আটা নেই। যেসব দোকানে আটা পাওয়া যাচ্ছে তাও আবার মোড়কজাত ২ কেজির আটা। যা বিক্রি হচ্ছে ১৪৪-১৫০ টাকা করে। এর মধ্যে স্বাদের ২ কেজির আটা বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকা ও তীরের ২ কেজি প্যাকেটের আটা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে।
কলাবাগান এলাকার মা স্টোরের বিক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজারে খোলা আটা পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানির লেকেরা বিশেষ কারে তীর ও স্বাদের আটা দোকানে এসে দিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রতি কেজি আটার মূল্য ৭২-৭৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের তীরের ডিলার আবুল হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোম্পানি থেকে আটার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। গত সপ্তাহে কিছুটা সরবরাহ ভালো থাকায় আটার দাম অনেক কমেছে। তবে চলতি সপ্তাহে আবার আটার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি বস্তা আটা ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হলেও আটার দাম আবারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা ময়দার দাম বাড়লে আটার দামও বেড়ে যায়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) ৫ম জাতীয় সম্মেলন আজ শুক্রবার। দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে দেশের প্রায় ৩০ হাজার চিকিৎসক ও চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত পেশাজীবীরা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্মেলনকে ঘিরে স্বাচিপের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে শেষ দিন পর্যন্ত মুখর ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসক অঙ্গন। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বাচিপের নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। কিন্তু কারা আসছেন নেতৃত্বেÑ এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বিশেষ করে কে হচ্ছেন সভাপতি ও মহাসচিব এ নিয়ে এতদিন নানা জনের নাম শোনা গেছে। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে এই দুই পদে দুই-তিন জনের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।
স্বাচিপ নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, নেতৃত্ব নির্বাচন প্রশ্নে স্বাচিপের চিকিৎসকরা এখন দুই অংশে বিভক্ত হয়েছেন। এক অংশ চাইছেন, বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিবকে ঠিক রেখে নেতৃত্ব আসুক। কিন্তু অপর অংশ চাইছেন, অপেক্ষাকৃত তরুণদের নেতৃত্ব আসুক। তবে দুই পক্ষই নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর তাদের শেষ আস্থা রাখছেন। অন্যদিকে, সভাপতি ও মহাসচিব পদে এমন কয়েকজনের নাম আলোচনায় এসেছে, যারা চিকিৎসক অঙ্গন ও পেশাজীবী রাজনীতিতে প্রভাবশালী। ফলে স্বাচিপের এবারের নেতৃত্বে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
তারা আরও জানান, সম্মেলন শেষে আজ সন্ধ্যায় কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে পুরো কমিটির ঘোষণা দেওয়া হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী নির্দেশনা দেনÑ তার ওপর।
সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতির তথ্য জানিয়ে স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাজার হাজার চিকিৎসক আসছেন। চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। নেতৃত্ব নির্বাচনে আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গতবারও দায়িত্ব অর্পণ করেছিলাম। এবারের সম্মেলনেও আমি মনে করছি, কাউন্সিলররা জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখে তার ওপর নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পণ করবেন। আমি মনে করি, তুলনামূলকভাবে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে স্বাচিপের, সেই নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাচিপ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।
সম্মেলনের ব্যাপারে স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব-১ অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ। আমরা আশা করছি ২০-৩০ হাজার চিকিৎসক সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনে চিকিৎসকদের বাইরেও চিকিৎসা পেশার সঙ্গে জড়িত ফার্মাসিস্ট, টেকনোলজিস্ট তারাও অংশ নেবেন। তাদের জন্য আলাদা কার্ড করা হয়েছে।
সভাপতি পদে যাদের নাম আলোচনায় : এতদিন নানাজনের নাম শোনা গেলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে হাতেগোনা কিছু প্রবীণ চিকিৎসকের নাম স্বাচিপ সভাপতি হিসেবে শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) দুই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান ও অধ্যাপক ডা. কনককান্তি বড়ুয়া, স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ, বিএসএমএমইউয়ের নিউরো মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী ও ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী।
স্বাচিপের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে সভাপতি হিসেবে অন্তত তিনজনের নাম বেশি শোনা গেছে। তারা হলেন অধ্যাপক ডা. কনককান্তি বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান ও অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী। স্বাচিপ নেতারা বলেছেন, সাধারণত একজন অধ্যাপক ও প্রবীণ চিকিৎসককে সভাপতি করা হয়ে থাকে। তবে এবার সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এবং তাদের কেউ কেউ মনোনয়ন পেতেও পারেন। সেক্ষেত্রে স্বাচিপের নেতৃত্বে তারা বাদ পড়তে পারেন।
অবশ্য স্বাচিপ নেতারা এমনও বলেছেন, সামনের বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিরোধী দল এ সময়ে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। সেক্ষেত্রে স্বাচিপকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে হবে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় যারা পরীক্ষিত ও সাহসী নেতা তাদের দিয়েই কমিটি গঠিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব এম এ আজিজকেই বহাল রাখা হতে পারে। এর বাইরে অধ্যাপক ডা. কনককান্তি বড়ুয়াকে সভাপতি ও এম এ আজিজকে মহাসচিব করে নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে।
মহাসচিবে তরুণ নেতৃত্বের সম্ভাবনা : স্বাচিপ নেতারা বলেছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার তুলনামূলক তরুণ ও রাজনীতিতে সক্রিয় এমন একজন স্বাচিপ মহাসচিব হতে পারেন। কারণ নির্বাচনী রাজনীতি ও প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রাজপথে নেমে পড়েছেন। তাতে বোঝা যাচ্ছে সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে যারা দুর্দিনের পরীক্ষিত নেতা ও নেতৃত্বে সক্ষম ও সাহসী এমন কেউ নেতৃত্বে আসবেন।
এই পদের প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, ডা. তারেক মেহেদী পারভেজ, স্বাচিপের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী লেলিন ও একই হাসপাতালের ডা. কামরুল হাসান মিলন, স্বাচিপের কেন্দ্রীয় নেতা ও বিএসএমএমইউয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের ডিন ও নিউরো সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী শাকিল ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন। তবে তাদের মধ্যে শেষ মুহূর্তে এসে ডা. জুলফিকার আলী লেলিন ও অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকিরের নাম কিছুটা বেশি শোনা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রিজার্ভ চুরির সঙ্গে যে তিন-চারটি দেশের সংযোগ রয়েছে, সেসব দেশের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তথ্য এলেই শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গেটওয়ে ‘বিনিময়’ অ্যাপস ব্যবহার করে প্রায় ৯৭ লাখ টাকা লোপাটের ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে হ্যাকিং করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ওই টাকা ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেন, দেশের অভ্যন্তরের কোনো চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থ পাচার করেছে। ওই ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪ ধারাসহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ৫৪ ধারায় ও ৩৭৯ ধারায় মামলা করেন।
টাকা লোপাটের বিষয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠিত গেটওয়ে ‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্মে ডিজিটাল প্রতারণা করে একটি চক্র প্রায় ৯৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সাত দিন ধরে প্রতারণা করে চক্রটি এই টাকা আত্মসাৎ করেছে। গত বুধবার বগুড়ায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এ ছাড়া চক্রের আরও তিনজন সিআইডির নজরদারিতে রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন গোলাম রব্বানী, শামীম আহমেদ ও রুহুল আমিন। এসময় তাদের কাছ থেকে কম্পিউটারের সিপিইউ, বিপুল পরিমাণ সিম কার্ড, ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড, ১৪টি মোবাইলফোন ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের বিভিন্ন ধরনের রেজিস্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়।
মোহাম্মদ আলী মিয়া আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বোধন করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠিত ‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্মে গত ১০ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৯৬ লাখ ৭৪ হাজার ২৫৭ টাকা ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। চক্রটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সেলফিন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ‘বিনিময়’ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে। পরে তাদের নিজেদের বিকাশের ব্যক্তিগত হিসাবে অবৈধভাবে টাকা স্থানান্তর করার জন্য অনুরোধ পাঠায়। এই অনুরোধের প্রেক্ষিতে গ্রাহকদের টাকা প্রতারকদের বিকাশ হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার যমুনা নদীর ভাঙ্গণ এলাকার পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে ভাঙ্গণ এলাকায় হাজার হাজার বালুর বস্তা ডাম্পিং করেও ভাঙ্গণরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা এ বাবদ খরচ হলেও কোনো কাজেই আসছে না বালুর বস্তা ডাম্পিং করে।
অপরদিকে অব্যাহত ভাঙ্গণের তাণ্ডবে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলিন হয়ে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের নাজমা খাতুন আব্দুল কাদের, ইয়াহিয়া, জহুরুল ইসলাম, এমদাদুল হক মিলন, আরকান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান, হালিমা খাতুন ও রেমান সরকার বলেন, গত ২ সপ্তাহ ধরে এখানে ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। এই ভাঙ্গণের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও বহু গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ভাঙ্গণের তাণ্ডবে গৃহহারা হয়ে শত শত মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে আবার খোলাস্থানে ছাপড়া তুলে বাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তারা আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ভাঙ্গণ এলাকায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে কাজ করায় তা কোনো কাজেই আসছে না। যেসব স্থানে বস্তা ফেলা হচ্ছে দুই দিন না যেতেই সেখানে আবার ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙ্গণ এলাকার ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন না যেতেই ওই এলাকায় আবারও ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হলেও ভাঙ্গণ রোধ হচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বস্তা ফেলার কাজ না করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়ে যখন ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে, তখন ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে ২/৪ নৌকা বস্তা ফেলে চলে যায়। ২-৩ দিন না যেতেই তা আবার ভেঙ্গে যমুনায় বিলিন হয়ে যায়। ফলে এ বস্তা ফেলা কোনো কাজেই আসছে না। অপরদিকে ঠিকাদারকে বালু সরবরাহের নামে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫/২০ ট্রলারে করে বালু অন্যত্র বিক্রি করছে। ফলে এ ভাঙ্গণের তাণ্ডব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে বালু সরবরাহকারী খোরশেদ আলম, জয়নাল সরকার ও ফজলু ব্যাপারী এলাকাবাসীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন বালু উত্তোলন করে তা বস্তায় ভরে ভাঙ্গণ স্থানে ফেলছে। আমরা শুধু তাদের কাজে সহযোগিতা করছি। একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, নদীভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। অচিরেই এ সমস্যা আর থাকবে না।
ভাঙ্গণ এলাকার অদূরে যমুনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রির বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে খুকনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।