
রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সুন্দর নির্বাচন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘রাজপথে শক্তি দেখিয়ে সত্যিকারের যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন, সেটা হবে না। আপনাদের নির্বাচনে আসতে হবে, নির্বাচনের মাঠে নির্বাচনের নীতি-বিধি আছে, সে অনুসারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘আমাদের এই বক্তব্যটা যদি দলগুলোর কাছে যায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রজ্ঞা রয়েছে, উনারা চিন্তা করবেন। সব দল বলতে চাচ্ছে, রাজপথে দেখা হবে, রাজপথে শক্তি পরীক্ষা হবে। রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সুন্দর নির্বাচন হবে এটা আমি বিশ্বাস করি না। দলগুলোকে ভোটের মাঠে এসে ভারসাম্য আনতে হবে।’
তিনি বলেন, নির্বাচনী মাঠে ভারসাম্য আনতে হবে দল ও প্রার্থীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে দলগুলো প্রার্থী, এজেন্ট দিয়ে ভারসাম্য তৈরি না করলে পুলিশ-মিলিটারি দিয়ে সব সময় নির্বাচনকে সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ অপরিহার্য উল্লেখ করে সিইসি বলেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি মোটাদাগে মতৈক্য না থাকে নির্বাচন কমিশন সুন্দর নির্বাচন তুলে দিতে পারবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সহায়তা লাগবে। তাদের মধ্যে একটা সমঝোতা লাগবে। নির্বাচন আয়োজনে একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হবে।
তিনি বলেন, সরকারের একটা ভিন্ন সত্তা আছে। তার যে মন্ত্রণালয়গুলো আছে, বিভাগগুলো আছে নির্বাচন কমিশনকে তাদের সহায়তা করতে হবে। তাদের তরফ থেকে যদি আন্তরিকতা এবং সদিচ্ছাভিত্তিক সহায়তা না থাকে তাহলে নির্বাচনটাকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় সফল করা সম্ভব হবে না। তাদের সহযোগিতা থাকলে নির্বাচনটা আরও বেশি সুন্দর ও সফল হবে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনে আইন মন্ত্রণালয়ের সাড়া না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলে সিইসি বলেন, ‘এখনো আসেনি। এটা ঠিক। তবে আসবে না, এটা না। আমরা একটু অপেক্ষা করি। আমার বিশ্বাস সরকার সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবে। আমরা মনে করি, যৌক্তিকভাবেই কিছু প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সেটি সরকার অগ্রাহ্য করবে, বিষয়টি এমন নয়। আমরা আরও কিছুদিন দেখি।’
কুমিল্লায় গণসমাবেশে যোগ দিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে জড়ো হচ্ছেন। আগের কয়েকটি বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে সরকারবিরোধী দলটির নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়া, তাদের ওপর হামলা চালানোর মতো অভিযোগ কুমিল্লা বা আশপাশের জেলাগুলো থেকে এখনো আসেনি। কুমিল্লায় বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোনো নেতাকর্মীকে আটকের তথ্য পাওয়া যায়নি।
আগামীকাল শনিবার কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। নগরের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ ১০ শর্তে নগরীর টাউন হল মাঠে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে প্রশাসন। মাঠ প্রস্তুত করাসহ সব কাজ শেষের দিকে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলুসহ একদল জ্যেষ্ঠ নেতা প্রস্তুতির বিষয়গুলো তদারক করছেন।
এ সমাবেশকে ঘিরে কুমিল্লায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিএনপির পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে নগর ছেয়ে গেছে। বিএনপির কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক ইতিমধ্যে নগরীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষ করে হোটেল-মোটেলসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘর, জ্যেষ্ঠ নেতাদের ভবন, ফ্ল্যাটে উঠেছেন বহু নেতাকর্মী। আবার খন্ড খন্ডভাবে কেউ কেউ আশপাশের উপজেলাগুলোতেও অবস্থা করছেন।
কুমিল্লার বাইরে থেকে আসা অতিথি নেতাকর্মীরা যেন থাকা-খাওয়ার কোনো সমস্যায় না পড়ে সে দিকগুলো তদারকি করছে মহানগর বিএনপি। সমাবেশে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা না থাকায় ব্যাপক লোক সমাগমের আশা করছে বিএনপি। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় ভোগান্তি ছাড়াই হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশে আসতে পারবেন বলে দলটির নেতারা ধারণা করছেন।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কুমিল্লা দক্ষিণ, মহানগর এবং উত্তর জেলা বিএনপির উদ্যোগে আমরা ৫০ হাজার লোকের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। সমাবেশে আসা কোনো অতিথি নেতাকর্মী যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন, সে বিষয়টি খেয়াল রাখছি।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে নগরীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান করছেন। তাদের আপ্যায়ন এবং সব সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন তারা। নেতাকর্মীরা কোন কোন এলাকায় জড়ো হয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘পুলিশি হয়রানিসহ নানা ঝামেলা এড়াতে এই মুহূর্তে তা প্রকাশ করতে চাই না আমরা। তবে সময়মতো কুমিল্লার টাউন হল মাঠসহ প্রতিটি সড়ক লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে।’
কুমিল্লার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্বাভাবিকভাবেই বিএনপি তাদের সমাবেশের কাজ করছে। কুমিল্লা জেলা পরিবহনের পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের অবরোধ নেই। আওয়ামী লীগ বা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার প্রতিরোধের খবর পাওয়া যায়নি। একপ্রকার স্বাভাবিকভাবেই কুমিল্লায় সমাবেশের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি।
এদিকে সমাবেশের দিন মাঠের দখল এবং নিজেদের আধিপত্য দেখাতে পাল্লা দিয়ে লোকের সমাগম ঘটাচ্ছেন জেলা এবং মহানগর নেতারা। তাছাড়া বহিষ্কৃত নেতা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং পরাজিত মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারও ব্যাপক শোডাউন করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।
বিএনপি নেতা এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুর রশীদ ইয়াছিনও মাঠের সিংহভাগ তার সমর্থকের দখলে রাখার চেষ্টা করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে মাঠ দখল নিয়ে যেন কোনো সংঘাত-সহিংসতা কিংবা হট্টগোলের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখছেন সমাবেশ সফল করার দায়িত্বে থাকা বিএনপির নেতারা।
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘আমার ১০ হাজার কর্মী-সমর্থক সমাবেশে যোগ দেবে। এরই মধ্যে আমি তাদের আপ্যায়নসহ সবকিছু তদারকি করছি, তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয় এমন কোনো কাজ আমি এবং আমার কর্মী-সমর্থকরা করবে না।’
সুউচ্চ বাণিজ্যিক ভবন বুর্জ খলিফা, বুর্জ আল-আরবের পর এবার আরব-আমিরাতের দুবাইয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ আবাসিক ভবন নির্মিত হতে যাচ্ছে। আমিরাতি আবাসন কোম্পানি বিনগাতি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঘড়ি প্রস্তুতকারী জ্যাকব অ্যান্ড কোম্পানির যৌথ অর্থায়নে নির্মাণ করা হবে ভবনটি।
ইতিমধ্যে বিনগাতি এবং জ্যাকব অ্যান্ড কো. ‘বুর্জ বিনগাতি জ্যাকব অ্যান্ড কো. রেসিডেন্স’ নামের সেই ভবনটির নকশাও প্রকাশ করেছে। দুবাইয়ের ব্যস্ত ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিত বিজনেস বের কেন্দ্রস্থলে এই ভবনটি তৈরি করা হবে।
আবাসন কোম্পানি বিনগাতির শীর্ষ নির্বাহী মুহম্মদ বিনগাতি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘বুর্জ বিনগাতি জ্যাকব অ্যান্ড কো রেসিডেন্স’ হবে ১০০ তলাবিশিষ্ট একটি আবাসিক ভবন। এরই মধ্যে ভবনটি ‘হাইপার টাওয়ার’ নামে পরিচিতি পাচ্ছে। মূলত বৈশ্বিক ধনকুবের বা ব্যাপক ধনী ব্যক্তিদেরই এই ভবনটির বিভিন্ন তলার ক্রেতা হিসেবে বিবেচনা করছে নির্মাতারা। যারা হাইপার টাওয়ারে অ্যাপার্টমেন্ট কিনবেন তাদের জন্য ব্যক্তিগত দেহরক্ষী, বাবুর্চি, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন পরিষেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের জন্য ভবনের ভেতর এক্সক্লুসিভ প্রাইভেট ক্লাবের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। সেই ক্লাবে থাকবে বিশাল সুইমিং পুল এবং লাউঞ্জ। ভবনটির পাঁচটি পৃথক ইউনিট থাকবে। প্রতিটি ইউনিটের পেন্ট হাউস (সবচেয়ে বিলাসবহুল) ফ্ল্যাটগুলো হবে খুবই চাকচিক্যপূর্ণ। ভবনটির শীর্ষ অংশের ডিজাইন করা হয়েছে হিরার মুকুটাকৃতিতে।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু আবাসিক ভবনটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির সবচেয়ে জনবহুল এলাকা ম্যানহাটনের ৫৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত। ‘সেন্ট্রাল পার্ক টাওয়ার’ নামের সেই ভবনটি ৯৮ তলা বিশিষ্ট, উচ্চতা ১ হাজার ৪১৬ ফুট। সেই হিসেবে বুর্জ বিনগাতি জ্যাকব অ্যান্ড কো রেসিডেন্সের তলার সংখ্যা ও উচ্চতা দুটোই সেন্ট্রাল পার্ক টাওয়ারের চেয়ে বেশি হবে।
আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এ লক্ষ্যে একটি চুক্তি করতে একমত হয়েছে দুই পক্ষ। এ চুক্তিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা, কানেক্টিভিটি, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষাসহ সব বিষয় নিয়ে সহযোগিতার সুযোগ থাকবে এবং এর ভিত্তি হবে মানবাধিকার।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ও ইউরোপিয়ান এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিস ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এনরিকে মোরার মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক সংলাপে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকের মাঝামাঝি সময়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে জানানো হয়। প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতে হবে। আমাদের আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন কোথায় আছে এবং আগামীতে কোথায় নিতে চাই; বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটি যেমন আইসিটি, খাদ্য, জলবায়ু ইত্যাদি; ফিউচার থ্রেটসহ রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে দীর্ঘ সময়। এর বাইরে রিজিওনাল বিভিন্ন ব্যাপার, ইউক্রেন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদান, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য-সুবিধা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এনরিকে মোরা বলেন, আমরা সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছি দুটি কারণে দেশটির অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি ও অর্জন। এ কারণে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করতে চাইছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং বাংলাদেশের মধ্যে কৌশলগত দিকনির্দেশনা বিনিময় এবং বৈদেশিক ও নিরাপত্তানীতির সহযোগিতা জোরদার করাই এ সংলাপের প্রধান উদ্দেশ্য। ইইউ জাতি হিসেবে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির গতি ও নতুন আত্মবিশ্বাসকে স্বীকার করেছে এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের ওপর ফোকাসসহ যৌথ স্বার্থের ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে যুক্ত হওয়ার জন্য উন্মুখ।
মোরা বলেন, ওই চুক্তির মধ্যে যে উপাদানগুলো আছে সেগুলোর বাইরেও বিভিন্ন বিষয় চলে আসছে। ফলে আমাদের পরবর্তী ধাপে উন্নীত হতে হচ্ছে এবং সেটি হচ্ছে অংশীদারিত্ব চুক্তি। এই আইনি কাঠামোর মধ্যে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সম্মত হয়েছি যে অংশীদারিত্ব সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে কাজ করব। এর একটি আলোচনার প্রক্রিয়া আছে। বাংলাদেশের যে ক্রমবর্ধমান সক্ষমতা, প্রবৃদ্ধি এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের যে যাত্রা রয়েছে সেগুলো বিবেচনায় নিলে দুই পক্ষের সম্পর্ক আরও গভীর ও বিস্তৃত সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ আছে।’
ইন্দো-প্যাসিফিক ইইউর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে মোরা বলেন, বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাবে এবং এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের এই যাত্রায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেষ্টা করবে সবচেয়ে বড় অংশীদার হওয়ার।
এ প্রসঙ্গে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এ অঞ্চলে বাণিজ্য বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা আছে। এটি করার জন্য এ অঞ্চলে অবাধে চলাচলের সুযোগ থাকতে হবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত প্রসঙ্গে মোরা বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পরে সব দেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন সময় এবং ভিন্ন বিশ্বে বাস করছে। এ মুহূর্তে যারা জাতিসংঘ নীতিতে বিশ্বাস করে, তাদের মধ্যে অংশীদারিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইইউ প্রতিনিধি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন রেজল্যুশন নিয়ে বাংলাদেশ স্বপক্ষে ভোট দিয়েছে। এই সংঘাত নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিকে ইইউ সম্মান করে। বাংলাদেশ তার জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আমরা সেটিকে বাতিল করতে পারব না। আমরা যেটি করতে পারি, সেটি হচ্ছে নীতি নিয়ে আলোচনা এবং আমাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই আমরা অন্য দেশকে একটি অবস্থান নেওয়ার জন্য বলব না। আমরা বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি সম্মান জানাই।’
এসময় অন্য কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
চিনির বাজারের অস্থিরতা কাটছেই না। নানা অজুহাতে কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে বাড়তে কেজিপ্রতি দাম ছাড়িয়ে যায় ১২০ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে চিনির দাম কেজিতে ১২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এক কেজি প্যাকেট চিনি সেই অনুযায়ী বিক্রি হওয়ার কথা ১০৮ টাকা। কিন্তু পাইকার ও খুচরা বিক্রেতা এখনো সংকটের অজুহাতে বিক্রি করছেন বাড়তি দামে। পাড়া-মহল্লার কোনো দোকানেই নির্ধারিত দামে মিলছে না চিনি। বাজারের দোকানগুলোতে পাওয়া গেলেও রাখা হচ্ছে নির্ধারিত দামের চাইতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেশি। চিনির দামের এ নৈরাজ্যের মধ্যেই ভোক্তাদের জন্য বাড়তি চাপ হিসেবে চেপে বসেছে আটার দামও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটিও চিনির মতো উধাও হয়ে গেছে বাজার থেকে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি দোকানে চিনি পাওয়া যায় না। কিছু চিনি পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম ও বাড়তি দামে কিনতে হয়। প্রতি কেজি চিনি কিনে আনতে হয় ১০৮-১০৯ টাকা করে। সঙ্গে অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনির মূল্য ১১৫ টাকা পড়ে যায়। যা বিক্রি করতে হয় ১২০-১২৫ টাকা করে। চিনির অস্বাভাবিক দামের জন্য জরিমানার ভয়ে থাকতে হয়। এর জন্য অনেক দোকানি চিনি বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাঁটাবন, গ্রিনরোড, কলাবাগান, কাজীপাড়া ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে খোলা কিংবা প্যাকেটজাত চিনি নেই। হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকা করে। কারওরান বাজারে প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া গেলেও তা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন দোকানিরা।
গ্রিনরোডের দোকানি হারুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজার থেকে চিনি কিনে দোকানে আসা পর্যন্ত প্রতি কেজিতে মূল্য পড়ে ১১৫ টাকা। এর পরে আমাদের আরও অন্যান্য খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনি ১২৫ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। ১২০ টাকা করে চিনি বিক্রি করলেও আমার লাভ হয় না।
কাজীপাড়ার সামিয়া জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ফ্রেশ চিনির প্রতিনিধিরা ২ মাসের বেশি সময় ধরে মহল্লায় আসেন না। চিনির দরকার হলে কারওয়ান বাজার গিয়ে আনতে হয়। তাও ১০ কেজির বেশি দিচ্ছেন না পাইকাররা। অনেক সময় ৫০ কেজির এক বস্তা চিনি অর্ডার করে আসতে হয় ১০ দিন আগে, তাও অগ্রিম টাকা নিয়ে চিনি দিতে তারা গড়িমসি করে।
কারওয়ান বাজারের ফ্রেশ চিনির ডিলার ইব্রাহীম দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোম্পানি আমাদের চিনি দিলে তা আমাদের বিক্রি করতে সমস্যা নেই। কোম্পানি আমাদের চিনি না দিলে আমরা কীভাবে বিক্রি করব। অগ্রিম টাকা দিয়ে চাহিদার তুলনায় অল্পকিছু চিনি পাই। তাও আবার প্রতি বস্তা চিনি মিল থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কিনে আনতে হয়। বর্তমানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চিনি ৫ হাজার ৩৫০ টাকা করে কিনতে হয়। আমাদের হাতে প্রতি কেজিতে ১০৭ টাকার বেশি পড়ে। সেটি কী করে ১০২ টাকা করে বিক্রি করব?
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব বলছে, ঢাকার বাজারগুলোতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজি চিনি ১১০-১১৫ টাকা ও আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকার মধ্যে। তবে বাজারে খবর নিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে খোলা আটা নেই। যেসব দোকানে আটা পাওয়া যাচ্ছে তাও আবার মোড়কজাত ২ কেজির আটা। যা বিক্রি হচ্ছে ১৪৪-১৫০ টাকা করে। এর মধ্যে স্বাদের ২ কেজির আটা বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকা ও তীরের ২ কেজি প্যাকেটের আটা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে।
কলাবাগান এলাকার মা স্টোরের বিক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজারে খোলা আটা পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানির লেকেরা বিশেষ কারে তীর ও স্বাদের আটা দোকানে এসে দিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রতি কেজি আটার মূল্য ৭২-৭৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের তীরের ডিলার আবুল হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোম্পানি থেকে আটার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। গত সপ্তাহে কিছুটা সরবরাহ ভালো থাকায় আটার দাম অনেক কমেছে। তবে চলতি সপ্তাহে আবার আটার সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে প্রতি বস্তা আটা ২ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হলেও আটার দাম আবারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা ময়দার দাম বাড়লে আটার দামও বেড়ে যায়।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) ৫ম জাতীয় সম্মেলন আজ শুক্রবার। দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে দেশের প্রায় ৩০ হাজার চিকিৎসক ও চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত পেশাজীবীরা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সম্মেলনকে ঘিরে স্বাচিপের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে শেষ দিন পর্যন্ত মুখর ছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসক অঙ্গন। সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, স্বাচিপের নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। কিন্তু কারা আসছেন নেতৃত্বেÑ এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। বিশেষ করে কে হচ্ছেন সভাপতি ও মহাসচিব এ নিয়ে এতদিন নানা জনের নাম শোনা গেছে। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে এই দুই পদে দুই-তিন জনের নাম বেশি শোনা যাচ্ছে।
স্বাচিপ নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, নেতৃত্ব নির্বাচন প্রশ্নে স্বাচিপের চিকিৎসকরা এখন দুই অংশে বিভক্ত হয়েছেন। এক অংশ চাইছেন, বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিবকে ঠিক রেখে নেতৃত্ব আসুক। কিন্তু অপর অংশ চাইছেন, অপেক্ষাকৃত তরুণদের নেতৃত্ব আসুক। তবে দুই পক্ষই নেতৃত্ব নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর তাদের শেষ আস্থা রাখছেন। অন্যদিকে, সভাপতি ও মহাসচিব পদে এমন কয়েকজনের নাম আলোচনায় এসেছে, যারা চিকিৎসক অঙ্গন ও পেশাজীবী রাজনীতিতে প্রভাবশালী। ফলে স্বাচিপের এবারের নেতৃত্বে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।
তারা আরও জানান, সম্মেলন শেষে আজ সন্ধ্যায় কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে পুরো কমিটির ঘোষণা দেওয়া হবে কি না, সেটা নির্ভর করবে সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী নির্দেশনা দেনÑ তার ওপর।
সম্মেলনের সর্বশেষ প্রস্তুতির তথ্য জানিয়ে স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, হাজার হাজার চিকিৎসক আসছেন। চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। নেতৃত্ব নির্বাচনে আমাদের সাংগঠনিক নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গতবারও দায়িত্ব অর্পণ করেছিলাম। এবারের সম্মেলনেও আমি মনে করছি, কাউন্সিলররা জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রেখে তার ওপর নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পণ করবেন। আমি মনে করি, তুলনামূলকভাবে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে স্বাচিপের, সেই নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বাচিপ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে।
সম্মেলনের ব্যাপারে স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব-১ অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষ। আমরা আশা করছি ২০-৩০ হাজার চিকিৎসক সম্মেলনে অংশ নেবেন। সম্মেলনে চিকিৎসকদের বাইরেও চিকিৎসা পেশার সঙ্গে জড়িত ফার্মাসিস্ট, টেকনোলজিস্ট তারাও অংশ নেবেন। তাদের জন্য আলাদা কার্ড করা হয়েছে।
সভাপতি পদে যাদের নাম আলোচনায় : এতদিন নানাজনের নাম শোনা গেলেও একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে হাতেগোনা কিছু প্রবীণ চিকিৎসকের নাম স্বাচিপ সভাপতি হিসেবে শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) দুই সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান ও অধ্যাপক ডা. কনককান্তি বড়ুয়া, স্বাচিপের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ, বিএসএমএমইউয়ের নিউরো মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী ও ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী।
স্বাচিপের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে সভাপতি হিসেবে অন্তত তিনজনের নাম বেশি শোনা গেছে। তারা হলেন অধ্যাপক ডা. কনককান্তি বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান ও অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী। স্বাচিপ নেতারা বলেছেন, সাধারণত একজন অধ্যাপক ও প্রবীণ চিকিৎসককে সভাপতি করা হয়ে থাকে। তবে এবার সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এবং তাদের কেউ কেউ মনোনয়ন পেতেও পারেন। সেক্ষেত্রে স্বাচিপের নেতৃত্বে তারা বাদ পড়তে পারেন।
অবশ্য স্বাচিপ নেতারা এমনও বলেছেন, সামনের বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিরোধী দল এ সময়ে ব্যাপক আন্দোলন-সংগ্রাম করবে। সেক্ষেত্রে স্বাচিপকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে হবে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় যারা পরীক্ষিত ও সাহসী নেতা তাদের দিয়েই কমিটি গঠিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব এম এ আজিজকেই বহাল রাখা হতে পারে। এর বাইরে অধ্যাপক ডা. কনককান্তি বড়ুয়াকে সভাপতি ও এম এ আজিজকে মহাসচিব করে নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে।
মহাসচিবে তরুণ নেতৃত্বের সম্ভাবনা : স্বাচিপ নেতারা বলেছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার তুলনামূলক তরুণ ও রাজনীতিতে সক্রিয় এমন একজন স্বাচিপ মহাসচিব হতে পারেন। কারণ নির্বাচনী রাজনীতি ও প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রাজপথে নেমে পড়েছেন। তাতে বোঝা যাচ্ছে সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে যারা দুর্দিনের পরীক্ষিত নেতা ও নেতৃত্বে সক্ষম ও সাহসী এমন কেউ নেতৃত্বে আসবেন।
এই পদের প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা হলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, ডা. তারেক মেহেদী পারভেজ, স্বাচিপের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির, স্বাচিপের যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জুলফিকার আলী লেলিন ও একই হাসপাতালের ডা. কামরুল হাসান মিলন, স্বাচিপের কেন্দ্রীয় নেতা ও বিএসএমএমইউয়ের নিউরো সার্জারি বিভাগের ডিন ও নিউরো সার্জন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার নবী শাকিল ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী ডা. আবুল হাসনাৎ মিল্টন। তবে তাদের মধ্যে শেষ মুহূর্তে এসে ডা. জুলফিকার আলী লেলিন ও অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকিরের নাম কিছুটা বেশি শোনা যাচ্ছে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।