
কক্সবাজার জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে তিন বছর আগে। এই কমিটির ৮৫ ভাগ নেতাকেই চেনেন না বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা। এছাড়া ৯০ ভাগ নেতাই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়। এমনটাই দাবি করছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূলের কর্মীরা।
তারা বলছেন, গত ১৩ বছরে জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়নি। বর্তমান কমিটির কারণে দলীয় কার্যক্রম যেমন ঝিমিয়ে পড়েছে, তেমনি ভেঙে পড়েছে সাংগঠনিক চেইন অব কমান্ড। দলে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বে আসতে পারছেন না অসংখ্য ত্যাগী কর্মী। যে কারণে হতাশ হয়ে তাদের অনেকেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে রয়েছেন।
দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২০ নভেম্বর কক্সবাজারের শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। অবশ্য সেই সম্মেলনও দলের বিবদমান দুটি পক্ষের মারামারিতে পণ্ড হয়ে যায়। পরে কেন্দ্র থেকে শাহজাহান চৌধুরীকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই থেকে জেলা বিএনপি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তৃণমূলে দেখা দেয় ক্ষোভ। ওই কমিটির ৮ বছর পর সম্মেলন ও কাউন্সিল ছাড়াই ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ফের শাহজাহান চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নাকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। সেই কমিটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, ২০০৯ সাল থেকে আজ অবধি কোনো সম্মেলন না হওয়ায় ভেঙে পড়েছে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো। তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই জেলা নেতাদের। এই কমিটির অধিকাংশ নেতাদেরই চেনেন না তারা।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কানন বড়ুয়া বিশাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে একটি বিতর্কিত কমিটি জেলা বিএনপির নেতৃত্বে। এদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। করোনাকাল কিংবা বন্যা পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে জনগণের জন্য কিংবা দলীয় কর্মীদের জন্য কিছুই করেনি। এই কমিটির কারণে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক নেতাকর্মী নিজেদের বিএনপির রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছর ধরে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অথচ জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির ৮৫ ভাগ নেতাকে আমরা চিনিই না।’
দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির অর্থ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘জেলায় বর্তমানে বিএনপির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, এতে লুকিয়ে রাখার কিছু নেই। সম্মেলন হলে দলে গতি আসবে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হবেন।’
নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে জেলায় বিএনপির অবস্থা নাজুক বলে স্বীকার করেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০০৯ সালের সম্মেলনে আমি জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। সেই কারণে জেলা বিএনপির কোনো পদে তখন থেকে আমার ঠাঁই হয়নি। এটা নিয়ে আমার দুঃখ নেই। তবে নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে জেলায় বিএনপির নাজুক অবস্থা মেনে নিতে কষ্ট হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় দুজনের হাতে জেলা বিএনপির ক্ষমতা কুক্ষিগত রয়েছে। তাদের পছন্দের লোকজনকে কমিটিতে স্থান দিয়ে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করছেন।’
দলীয় কার্যক্রম তেমন একটা না থাকায় বহু নেতাকর্মী সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন জানিয়ে আলমগীর ফরিদ বলেন, ‘বর্তমানে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যক্রমও নেই বললেই চলে। অনেকে চরম হতাশায় নিষ্ক্রিয়। কেউ জড়িয়ে পড়েছেন ব্যবসায়। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। আবার অনেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক কক্সবাজার-রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘জেলা বিএনপির কমিটির বিষয়ে কী হবে না হবে সেটা কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। আমি বিষয়টি কেন্দ্রকে কয়েকবার অবহিত করেছি। কিন্তু কেন্দ্র কোনো নির্দেশনা দেয়নি। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেব। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলেই সম্মেলন দিতে প্রস্তুত।’
জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির ৮৫ ভাগ নেতাকে তৃণমূলের কর্মীরা চেনেন না এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধের মধ্যে আছি। সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে যারা নেতাদের চেনে না তারা বিএনপিই করে না।’
কক্সবাজার জেলা বিএনপি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহাবুবুর রহমান শামীম। কিন্তু তিনি কক্সবাজার জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেছেন, ‘সারা দেশে নতুন করে বিএনপির সম্মেলন ও কমিটি করা হচ্ছে। কক্সবাজারও এর বাইরে থাকবে না। তবে কক্সবাজার জেলা বিএনপির বিষয়টি দেখভাল করছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম। তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
জাতীয় পার্টিতে (জাপা) দেবর-ভাবির দৃশ্যমান দ্বন্দ্বের বরফ গলতে শুরু করেছে। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ গত রবিবার দেশে ফিরেই দেবর পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। সে ডাকে সাড়া দিয়ে গতকাল সোমবার কিছুটা নরম সুর শোনা গেছে কাদেরপন্থিদের মুখে। কাদেরপন্থির দুই নেতা গতকাল রওশনের সঙ্গে দেখাও করেছেন। রওশনের সম্মতি পেয়ে বসার প্রস্তাব কাদেরের কাছেও পৌঁছানো হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই দুপক্ষের বসার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন দুই অংশের নেতারাই।
অন্যদিকে গতকাল রাতে রওশন এরশাদের সঙ্গে হোটেল ওয়েস্টিনে দেখা করেছেন রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। সেখানে রওশন তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। এর আগে গত রবিবার দেশে নেমেই বিমানবন্দরে রওশন তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারও আগে কাদেরপন্থিদের অংশ থেকে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু মোস্তফাকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন এবং তার মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর দেন।
জাপার দুই অংশের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, মোস্তফার দলীয় মনোনয়নের মধ্য দিয়েই জাপায় নতুন করে ঐক্য শুরু হলো। মেয়র নির্বাচনে লাঙ্গলের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই ঐক্য আরও দৃঢ় হবে।
এ ব্যাপারে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা ঘরের ব্যাপার। দেবর-ভাবির মনোমালিন্য। এটা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল। তার ভাইকে তিনি দিয়ে গেছেন। রওশন এরশাদ তার ভাবি, মায়ের মতো। তিনি দীর্ঘদিন ব্যাংককে ছিলেন চিকিৎসার জন্য। নানা কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলো বড় কিছু নয়। দেবর-ভাবি একদিন এক টেবিলে বসলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা দীর্ঘদিন দল করছি। আমাদের দলে কোনো বিরোধ নেই, হবেও না। এই দল করে তৃপ্তি পাই। কারণ এই দলেই রাজনীতি আছে। দলের ভেতর কোনো গ্রুপিং নেই।’
এ নেতা বলেন, ‘আমি আজকেও (গতকাল) ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছি। কথা হয়েছে। আমরা নেতাকর্মীরা সবাই দলের সঙ্গে আছি, আমরা তাদের সঙ্গে আছি, থাকা। এটা এক আছে, একই হয়ে যাবে।’
তবে দ্বন্দ্ব নিরসন ও দলে ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে রওশন এরশাদের অনুসারীরা পার্টির গঠনতন্ত্র আগের অবস্থায় পুনর্বহালের কথা বলেছেন। তারা বলছেন, গঠনতন্ত্র আগের অবস্থায় ফিরে গেলেই রওশন এরশাদ পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তার সম্মান ফিরে পাবেন। পরে সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।
জাপার রওশনপন্থি নেতারা জানান, ব্যাংকক থাকতে ও দেশে ফিরে রওশন এরশাদ তার পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব আলোচনায় পার্টিতে চলমান দ্বন্দ্ব ও বিভাজন দূর করতে তার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে সে ক্ষেত্রে তিনি দলে তার সম্মান ও মর্যাদা চান। রওশন এরশাদ চান তাকে সম্মান দিক জাপা। তার কথার গুরুত্ব দিক। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হোক।
এ ব্যাপারে রওশনপন্থি এক শীর্ষ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রওশন এরশাদ দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তার ক্ষমতা খর্ব করে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় কাউন্সিলে রওশন এরশাদকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করা হয়। পরে পার্টির প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া অনুমোদন হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার সময় তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেই জায়গাটা নতুন করে ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি ক্ষমতার ভারসাম্য ঠিক করতে হবে।
এ নেতা আরও বলেন, ধারা ২০ উপধারা ১-এ বলা ছিল ‘জাতীয় পার্টিতে একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকিবেন। তিনি পার্টির সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হইবেন। পার্টির কোনো জনসভায় তিনি উপস্থিত থাকিলে চেয়ারম্যানের ওপরে তাহার অবস্থান হইবে। জাতীয় ও দলীয় সকল বিষয়ে চেয়ারম্যান তাহার পরামর্শ গ্রহণ করিবেন। তিনি দলের পতাকা বহন ও সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করিবেন।’ কিন্তু কাদেরপন্থিরা সেটা পরিবর্তন করে ‘সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করিবেন’ এ অংশটুকু বাদ দেন। ‘জাতীয় ও দলীয় সকল বিষয়ে চেয়ারম্যান তাহার পরামর্শ গ্রহণ করিবেন’ এ অংশটা পরিবর্তন করে ‘প্রয়োজন মনে করিলে’ শব্দ যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, পরে তারা উপধারা ১-এর ভেতর লিখেছেন ‘উপরে উল্লিখিত যে কোনো ধারায় ক্ষমতা থাকিলেও সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করিবেন চেয়ারম্যান।’ অথচ চেয়ারম্যানের ক্ষমতার বিষয়ে গঠনতন্ত্রে বলা আছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পার্টির সর্বপ্রধান কর্মকর্তা গণ্য হইবেন। তিনি পার্টির সংহতি ঐক্য ও মর্যাদার প্রতীক। কিন্তু সেটা বাদ দিয়ে তারা নতুন করে যুক্ত করেছে ‘গঠনতন্ত্রের অন্য ধারায় যাহা উল্লেখ থাকুক না কেন, পার্টির চেয়ারম্যান বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত থাকিবেন। এ ক্ষমতাবলে তিনি প্রয়োজনবোধে পার্টির প্রতিটি স্তরে কমিটি গঠন, পুনর্গঠন, বাতিল ও বিলোপ করিতে পারিবেন। তিনি যে কোনো পদ সৃষ্টি ও অবলুপ্ত করিতে পারিবেন, চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির যে কোনো পদ, যে কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, যে কোনো পদ হইতে যে কোনো ব্যক্তিকে অপসারণ ও যে কোনো ব্যক্তিকে তার স্থলাভিষিক্ত করিতে পারিবেন।’
রওশনপন্থি এই নেতা বলেন, রওশন এরশাদের সেই সম্মানটা প্রতিষ্ঠিত হলেই চলবে। এরপর সাংগঠনিক কাঠামোর ব্যাপারে আলোচনা হবে। কারণ সম্মান প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দলের মধ্যে কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে। তা না হলে তো সম্মান প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
জাপা নেতারা জানান, রওশন এরশাদ চান সম্মিলিতভাবে একটি জাতীয় কাউন্সিল হোক। তার ডাকা কাউন্সিল স্থগিত হয়েছে। পার্টির মূল অংশের কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে। দুটো কাউন্সিল এক জায়গায় হয়ে সম্মিলিতভাবে একটা জাতীয় কাউন্সিল হোক। তবে তার আগে শেষ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে যে প্রেসিডিয়াম বৈঠক, সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা হতে পারে একটা নোটিস দিয়ে বা মেনে নিয়ে। এটা হলে কাউন্সিলের আগে পার্টি যেভাবে চলছিল, যার যে পদ ছিল, সেটাও বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।
দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব ও দলের অনৈক্য নিরসনে দুপক্ষের কিছু নেতা অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন বলে জানান দুপক্ষের নেতারা। তারা জানান, গত রবিবার বিমানবন্দরে কাদেরপন্থির তিন নেতা কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি রওশন এরশাদকে স্বাগত জানাতে যান। এ ছাড়া গতকাল হোটেল ওয়েস্টিনে রওশনের সঙ্গে দেখা করেন জাপার কাদেরপন্থির অন্য দুই নেতা সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ শফিকুল ইসলাম সেন্টু। এ সময় রওশন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বসতে সম্মতি দেন। গতকাল দুপক্ষের বসার কথাও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বৈঠক হয়নি। আজকালের মধ্যে রওশন-কাদের আলোচনায় বসতে পারেন বলেও জানান এসব নেতা।
মানিক রহমান। জন্ম থেকেই দুই হাত নেই তার। দুই পা থাকলেও একটি লম্বা ও অন্যটি খাটো। তবে শরীরের এ প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাকে। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে পা দিয়ে লিখে এবার এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মানিকের এ ফলাফলে মুগ্ধ তার বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা। আর মানিক চায় এভাবে আরও দূরে যেতে। হতে চায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
অদম্য মেধাবী মানিক রহমান এ বছর ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। বাবা মিজানুর রহমান ওষুধ ব্যবসায়ী আর মা মরিয়ম বেগম একটি কলেজের প্রভাষক। জন্ম থেকেই মানিকের দুটো হাত নেই। পা দুটোও একই মাপের নয়। তবে বাবা-মায়ের সহায়তা আর নিজের পরিশ্রমে কখনো পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েনি। বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের চেষ্টায় পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল মানিক রহমান। এর পেছনে অবশ্য পা দিয়ে লেখা তার গোটা গোটা হরফগুলোও ভূমিকা রেখেছিল।
পা দিয়ে কেবল ভালো লেখাই না, মোবাইল চালানো এবং কম্পিউটার টাইপিং ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী মানিক রহমান।
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমাদের দুই ছেলে। মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক পিএসসি ও জেএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমাদের ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন যেন সে সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।
মানিকের বাবা জানান, মানিক ঢাকার নটরডেম কলেজে পড়তে চায়। তবে সেখানে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে পরে খরচ চালানো সব নিয়ে আছে সংশয়ও। তাই ছেলের ইচ্ছে পূরণে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
নিজের সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত মানিক রহমান বলেছে, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহ রহমতে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।
ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও মানিক রহমান অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো ফলাফল করায় আমরা মুগ্ধ। সে জীবনে অনেক বড় হোক এ দোয়াই করি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সামছুল আলম বলেন, মানুষ চেষ্টা করলে যে সব পারে তার প্রমাণ ফুলবাড়ী উপজেলার মানিক রহমান। সে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার জন্য দোয়া ও শুভকামনা থাকল।
আর কারও মুখাপেক্ষী নয়। আধুনিক পদ্ধতিতে খামার করা এবং সহজ বিপণন এখন নিজের হাতেই। দিন যত যাবে খামার বড় হবে। কেউ আর ছোট করে কথা বলতে পারবে না। খামারি হিসেবে যত ছোটই হই না কেন, আমরা খামারি, আমাদের সেই শক্ত পরিচয় আছে। নিজেদের নামে আছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। মুরগি, হাঁস, গরু-ছাগলের রোগ বালাই নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে আমরা পিজিরা (প্রডিউসার গ্রুপ) বসে বৈঠক করি। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে একেবারে ঢাকায় কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের সহজ যোগাযোগ। প্রতি মাসে সঞ্চয় করছি। আমাদের খামারের প্রাণীদের জন্য হেলথ কার্ড রয়েছে। ফলে এসব প্রাণীর স্বাস্থ্যসেবায়ও আর বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমরা যেভাবে কাজ করছি, তাতে আগামীতে ছোট ছোট খামারিরা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নীরব বিপ্লব ঘটাবেন।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে (এলডিডিপি) কাজ করার মাধ্যমে এভাবেই নিজেদের জীবন বদলানোর কথা জানালেন সিরাজগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের খামারি নাদিরা, নোয়াখালীর শাহীন, রংপুরের আকবর, বরিশালের সুফিয়া, দিনাজপুরের হারুনসহ অন্তত ৩০ জন খামারি।
এলডিডিপির আওতায় ২০১৯ সালে দেশব্যাপী প্রডিউসার গ্রুপ চালু করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চার হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে চলতি বছর। প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, মার্কেট লিংকেজ ও ভ্যালু চেইন সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে এ প্রকল্প। আর এর মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করাই এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর পরই কভিড মহামারীতে পড়ে দেশ। ফলে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কাজে বেশ ব্যাঘাত ঘটে। তারপরও এক বছর ধরে কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। বিশ^ব্যাংকের সহায়তায় চলমান এ প্রকল্পটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিস্ময়কর সাফল্য যোগ করবে। আর প্রকল্প শেষ হলেও সমবায় আন্দোলনের একটা বিপ্লব দেখবে জাতি। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত খামারিরাও প্রাণিসম্পদ খাতে তাদের নীরব বিপ্লবের কথা বললেন দেশ রূপান্তরের কাছে। শাহীন আক্তার বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে তার নেতৃত্বে একটি প্রডিউসার গ্রুপ (পিজি) গড়ে ওঠে। সেখানে ৪০ জন সদস্য রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই খামারি। এলডিডিপির পক্ষ থেকে উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন কীভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালন করা যায়, কীভাবে শেড তৈরি করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বিপণনেরও। প্রতি সপ্তাহে গ্রুপ লিডার বৈঠকের আয়োজন করেন। সবার জন্য সুবিধাজনক জায়গা এবং সময়ে এ বৈঠক করা হয়।
ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, চাঁদপুরসহ কয়েকটি জেলার পিজির আওতাভুক্ত খামারিদের কাছে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে উঠে আসে প্রত্যাশা ও স্বপ্নের কথা। সিরাজগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের নিয়ে গঠিত পিজির সদস্য নাদিরা ও হিরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাঁচ বছর আগেও সমাজে আমাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে আমরা নিজের ঘর পেয়েছি। এখন আমরা খামারি হিসেবে আইডি কার্ড পেয়েছি। আমাদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। আমরা মাসে মাসে টাকা জমাই। প্রাণীগুলোকে নিয়মিত আমরা উপজেলার ডাক্তারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের সম্মান পেয়েছি। আর কী চাই?’
রংপুরের গঙ্গাচড়ার প্রডিউসার গ্রুপের সদস্যরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগেও তারা নিজেরা গরু-ছাগল পালন করেছেন। কিন্তু কীভাবে এগুলো বিক্রি করবেন এবং কোনো সমস্যা হলে কী করবেন, তা বুঝতেন না। ভ্যাকসিন দিতে উল্টাপাল্টা হয়ে যেত। কিন্তু এখন তা হয় না। হেলথ কার্ড আছে। সেখানে সব লেখা থাকে। তারিখ অনুযায়ী তারা ভেটেরিনারি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এলডিডিপির এ সহায়তা তাদের নতুন উদ্যমে কিছু করার স্বপ্ন তৈরি করে দিয়েছে। বাড়ি বাড়ি খামার হবে, তাদের আর কোনো অভাব থাকবে না।
সম্প্রতি রাজধানীতে পিজির সদস্যদের এক অনুষ্ঠানে আসা বরিশাল ও যশোরের কয়েকজন লিডার দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার সময় তারা পিজি থেকে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন এবং একেকজন খামারি সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন।
করোনার সময় দুধ, ডিম, মাংসের বিপণনে অসুবিধার কথা তুলে ধরে ডেইরি ও পোলট্রি খামারিরা বলেন, করোনায় যখন সবকিছু বন্ধ, তখন দুধ, ডিম ও মাংস কীভাবে বিক্রি করবেন, তা নিয়ে মহাসংকটে পড়ে যান। তখন এই পিজিই তাদের সব সমস্যার সমাধান করেছে। এলডিডিপির প্রকল্প থেকে তাদের জন্য ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং সেল করা হয়েছে। তারাই মাঠপর্যায় থেকে তাদের উৎপাদিত সব জিনিস নিয়ে আসত এবং তাদের আয় একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। অনেক ঝুঁকি নিয়ে উপজেলা এবং ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা লাইভ স্টক অফিসাররা তাদের কর্মীদের নিয়ে দুধ, ডিম, মাংস সংগ্রহ করতেন।
বরিশালের বাবুগঞ্জে প্রকল্পের প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (এলইও) ভেটেরিনারি চিকিৎসক রেহানা বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দেশি মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের খামারিদের নিয়ে কাজ করেন। এই প্রডিউসার গ্রুপের প্রতি সাড়া দিন দিন বাড়ছে। এরই মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয়ে গেছে। এখানে অনেক নারী গ্রুপ লিডার রয়েছেন; বিশেষ করে হাঁস-মুরগি এবং ছাগলের যে খামার, সেখানে আমরা মেয়েদের প্রাধান্য দিয়ে থাকি। নারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং বাণিজ্যিকভাবে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এলইও ডা. সেলিনা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ১৪টি গ্রুপ আছে। এর মধ্যে ডেইরি গ্রুপ আটটি। একটি ছাগলের, একটি হাঁসের আর বাকিগুলো মুরগির। পিজি সদস্যরা এখন উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত করার পদ্ধতি সব জানেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পশুপালন, পশুদের ভালো খাবার নিশ্চিত এবং রোগ-বালাইয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা গ্রুপ করে দিয়েছি। গ্রুপের সদস্যদের মধ্যেই গ্রুপ লিডার নির্বাচন করা হয়েছে এবং তারা নিজেরা উঠোন বৈঠক করেন। সেখানে আমাদের লাইফস্টক অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসাররা কাজ করেন এবং আরও দুজন লাইভ স্টক ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট কাজ করছেন। আবার প্রতিটি ইউনিয়নে এলএসপি বা লাইভ স্টক সার্ভিস প্রডিউসার একজন করে থাকেন।’
মাঠপর্যায়ের অন্তত ১০ জন এলইও ও গ্রুপ লিডারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের ৬১টি জেলায় গাভির ৩ হাজার ৩৩৪টি, গরু মোটাতাজাকরণের ৬৬৬টি, ছাগল ও ভেড়ার ৫০০টি এবং দেশি মুরগির ১ হাজারসহ ৫ হাজার ৫০০টি প্রডিউসার গ্রুপ গঠন ও সংহতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এই গ্রুপগুলোতে ১ লাখ ৬৫ হাজার পরিবার সংযুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতের প্রান্তিক খামারিদের বিভিন্ন ভ্যালু চেইনভিত্তিক প্রডিউসার গ্রপে যুক্ত করে জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত, বাজারজাতকরণ, ঋণ ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তারা যাতে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়, সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে এলডিডিপি প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রাব্বানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে এলডিডিপি প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামীতে সমবায় বিপ্লব ঘটবে। একটা আদর্শ খামার করতে যা যা করা দরকার, এলডিডিপি তা করছে।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ প্রকল্পটির মাধ্যমে আমরা জেলা পর্যায়ে ৫ হাজারের বেশি গ্রুপ গঠন করেছি। পার্বত্য তিন জেলা ছাড়া সারা দেশে এই চেইন গড়ে উঠছে। ভবিষ্যতে এখানে যারা গ্রুপ মেম্বার আছেন কিংবা গ্রুপ লিডার আছেন, এই প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদে আমরা বড় রকমের একটি সাফল্য পাব। কারণ তাদের উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি সরকার প্রাণিসম্পদে বাজার ব্যবস্থাপনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এই প্রডিউসার গ্রুপের সদস্যরা অবশ্যই এর সুফল পাবেন।’
ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে ডাকা নৌযান শ্রমিদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হবে এমন আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন তারা। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে সরকার এবং মালিক-শ্রমিক নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে নৌযান শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা এবং নৌযান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত শনিবার রাত ১২টা থেকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ এই ধর্মঘট শুরু করেছিল। ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, ‘বেতন কাঠামো গঠনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে কমিটি শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এক হাজার টনের বেশি জাহাজের শ্রমিকরা নভেম্বর থেকে ১২০০ টাকা ভাতা পাবেন এবং এর চেয়ে বেশি পণ্যবাহী জাহাজের শ্রমিকরা ১৫০০ টাকা মাসিক ভাতা পাবেন। এমন আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘মালিক ও শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাদের দাবি ও সমস্যাগুলো দেখছি। একমাসের মধ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে কমিটি করেছি। আর এই একমাস শ্রমিকদের অন্তর্বতীকালীন ভাতা প্রদানের জন্য মালিকপক্ষকে বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরমধ্যে মাঝখানের একটি পক্ষ বিশৃঙ্খলা করেছে। কয়েক জায়গায় হামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার ও মামলা হয়েছে। সেটাও আমরা দেখবো। সে মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তাতে আমরা সহযোগিতা করব বলে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেছি। এছাড়া নৌ-মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং মালিক-শ্রমিকরা মিলে এসব দাবি নিরসনে একটি কমিটি হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে সব সমস্যা সমাধান হবে।’
নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবিতে গত শনিবার রাত ১২ টা থেকে সারাদেশে কর্মবিরতি পালন শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা। ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে নৌপথে অচলাবস্থা তৈরি হয়। বন্ধ ছিল সব ধরনের যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান। ঢাকা নদীবন্দরসহ (সদরঘাট) দেশের বিভিন্ন বন্দরে লঞ্চ না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।
এদিকে গতকাল ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরেও ভোগান্তির রেশ ছিল বিভিন্ন টার্মিনালে। মো. সাইদ নামে সদরঘাট টার্মিনালের এক কর্মী বলেন, ‘যাত্রীরা ভেবেছে সকালে ধর্মঘট ছেড়ে দেব। এই আশায় অনেকে রাতে টার্মিনালে রাত কাটিয়েছেন। সকালে যখন দেখলো লঞ্চ ছাড়ছে না, তখন তারা বিকল্প পথে গন্তব্যে রওনা হন।’
মো. দাউদ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘পায়ের চিকিৎসার জন্য ভোলা থেকে চারদিন আগে ঢাকায় এসেছি মাকে নিয়ে। আজকে যাওয়ার দিন, জানতাম যে ধর্মঘট। ঘাটে এসে দেখি এমন পরিস্থিতি। মা গাড়িতে উঠলে প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই লঞ্চ ছাড়া যাওয়ার উপায় নাই। অপেক্ষা করতে হবে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা পর্যন্ত।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে কী হবে না এই নিয়ে যাত্রীরা সংশয়ে ছিল। তাই অনেক যাত্রী ফিরে গেছে। যারা থেকে গেছেন তাদের বেশিরভাগ বরিশালগামী যাত্রী। তাই লঞ্চ ও যাত্রীর সংখ্যা দুটিই কম ছিল।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ধর্মঘটের কারণে যাত্রীর সংখ্যা কম। শুধুমাত্র লঞ্চ রাজধানীর সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে। আশা করি কালকে (মঙ্গলবার) যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।’
ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে স্বস্তি ফিরেছে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার পরে সন্ধ্যা থেকে টার্মিনালে আসতে শুরু করে বিভিন্ন রুটের লঞ্চ। এ সময় বরিশাল রুটের কীর্তনখোলা, মানামী, সুরভী ও অ্যাডভেঞ্চারসহ আরও কয়েকটি লঞ্চে যাত্রী তুলতে দেখা যায়।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে হওয়ার কথা বিরোধী দল বিএনপির নবম বিভাগীয় গণসমাবেশ। নগরীর মাদ্রাসা মাঠে এই সমাবেশ করতে চান দলটির নেতারা। কিন্তু সময় ঘনিয়ে এলেও এখনো সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি পাননি তারা। যে কারণে সব প্রস্তুতি নিলেও সমাবেশের মঞ্চ বানাতে পারছে না বিএনপি। দলটির এই সমাবেশ ঘিরে মাদ্রাসা মাঠে থাকছে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপির পক্ষ থেকে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন দলটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন, ‘আজ পর্যন্ত আমাদের মাঠ দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসা মাঠের গেটে পুলিশ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমরা আবেদন করেছি, কিন্তু এখনো মাঠ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না। পুলিশ ককটেল উদ্ধারের নামে নতুন সন্ত্রাস তৈরি করছে। নয়টি উপজেলায় মামলা হয়েছে। সেই মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তারবাণিজ্য করছে।’ সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘রাজশাহী জেলার সব থানাতেই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। সেই মামলাগুলোর নকল দেওয়া হচ্ছে না। আবেদন করার পরও সেটা পাচ্ছি না। বিদেশে থাকা নেতাকর্মীদের নামেও মামলা হয়েছে। জেলার বাইরে যারা আছেন, তাদের নামেও মামলা হচ্ছে। তবে যত বাধাই আসুক আমরা এই সমাবেশ করব। সমাবেশ সফল হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে মাদ্রাসা মাঠে সমাবেশের জন্য বিএনপির আবেদন প্রসঙ্গে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেছেন, তিনি শুনছেন যে বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো সেটা হাতে পাননি। হয়তো ডাকযোগে দিয়েছে। আবেদনপত্র পেলে দেখবেন বিএনপি কী শর্তে মাঠটি চেয়েছে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘটের প্রতিবাদে বিক্ষোভ : বিএনপির সমাবেশের আগে রাজশাহী বিভাগে ১ ডিসেম্বর থেকে ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের প্রতিবাদে রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এই ধর্মঘট সরকারের চাপিয়ে দেওয়া বলে দাবি করেছেন তারা। গতকাল বিকেলে নগরীর মালোপাড়ায় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়। রাজশাহীর ‘পরিবহন শ্রমিকবৃন্দ’র ব্যানারে আয়োজিত মিছিলটি আশপাশের রাস্তা ঘুরে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শিমুল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এই ধর্মঘট মালিক-শ্রমিক কারও নয়, এটা সরকারের চাপিয়ে দেওয়া এবং সাজানো ধর্মঘট। কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ঠেকাতে এ ধরনের ধর্মঘট পৃথিবীর নজিরে নেই। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার এই কু-নজির স্থাপন করেছে।’
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।