
প্রায় পাঁচ বছর সিনেট, সিন্ডিকেট, ডিন ও অর্থ কমিটির নির্বাচন হচ্ছে না জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ে। ফলে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটের ১৯টি পদের মধ্যে ৮টিই শূন্য, আরও ৮টি মেয়াদোত্তীর্ণ। পদাধিকার বলে বাকি তিনটি পদে রয়েছেন নিয়মিত সদস্য। নিয়মিত তিনজনের সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ৮ জনএই ১১ জনকে নিয়ে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। এদিকে নির্বাচিত কোনো ডিনেরই মেয়াদ নেই। অর্থ কমিটি এবং সিনেটের নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যদেরও সবার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তাই এসব পর্ষদে নির্বাচন দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের মধ্য থেকে বিভিন্ন সময়ে দাবি উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের পর থেকেই সিন্ডিকেটের কোনো না কোনো পদ ফাঁকা থেকেছে। তবে এটি প্রকট আকার ধারণ করে করোনাকালে। তখন কোরাম পূর্ণ (৬ জন) না হওয়ায় সভা বিলম্বের মতো ঘটনাও ঘটেছে। বর্তমানে সিন্ডিকেটের সভাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে আট থেকে ৯জনকে নিয়ে। যেখানেই নেওয়া হচ্ছে নিয়োগ চূড়ান্ত করাসহ বিশ^বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত। রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) পদে কেউ না থাকায় সিন্ডিকেটের এই পদটি খালি রয়েছে। ’৭৩-এর অধ্যাদেশের ২২ (১)(ডি) ধারা অনুযায়ী, সিন্ডিকেটে একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত সরকারি কলেজের দুজন অধ্যক্ষের মধ্যে একটি পদ খালি, আরেকটি মেয়াদোত্তীর্ণ। ডিন, প্রাধ্যক্ষ, অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে একজন নির্বাচিত হয়ে সিন্ডিকেটের সদস্য হন। কিন্তু দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় শিক্ষকদের পদোন্নতি ও সংশ্লিষ্ট পদ হারানোর কারণে অধ্যাপক ক্যাটাগরি ছাড়া অন্য পাঁচটি পদ শূন্য হয়েছে। ২০১৬ সালের ৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সবশেষ সিন্ডিকেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসেবে ২০১৮ সালের জুনে নির্বাচিত সব সদস্যের মেয়াদ শেষ হয়। তবে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের সঙ্গে বাকি আটজন মেয়াদোত্তীর্ণ সদস্য নিয়েই সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে।
রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সবশেষ ডিন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ১০ মে। অধ্যাদেশের ২৫(৫) ধারা অনুযায়ী ডিনের মেয়াদ দুই বছর। সেই হিসেবে সকল ডিন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছেন সাড়ে চার বছর আগে। তবে নির্বাচিত ওই ডিনদের মধ্যে এখন মাত্র একজন দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি পাঁচটিতেই ভারপ্রাপ্ত ডিনরা দায়িত্বে রয়েছেন।
এদিকে অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের সদস্য হবেন ৯৩ জন। এর মধ্যে গত আড়াই যুগ ধরে জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির পাঁচটি পদ খালি রয়েছে। বাকি ৮৮ জনের মধ্যে পাঁচজন হলেন সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। ২০১০ সালের পর সরকার থেকে এই ক্যাটাগরিতে নতুন করে কাউকে মনোনীত না করায় এই পদগুলো শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া সিনেটে স্পিকার মনোনীত পাঁচজন সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রপতি মনোনীত পাঁচজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সিন্ডিকেট মনোনীত পাঁচজন গবেষক এবং একাডেমিক কাউন্সিল থেকে পাঁচজন কলেজ অধ্যক্ষ রয়েছেন। তবে এদের মধ্যে শিক্ষাবিদদের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে। আর বাকি ২০ জনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের জুলাইয়ের আগে। সিনেটের বাকি ৬৩ সদস্যের মধ্যে ৫৮ জন নির্বাচিত হয়ে আসেন। এর মধ্যে ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি এবং ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। তিন বছর মেয়াদি এই সিনেট সদস্যদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। আর শিক্ষক প্রতিনিধিদের নির্বাচন হয়েছে সবশেষ ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। সে হিসেবে চার বছর আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের। সিনেটের বাকি পাঁচজন সদস্য (পদাধিকার বলে) হলেন উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়, ট্রেজারার এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।
তবে অধ্যাদেশের ১৯ (২) ধারা অনুযায়ী ‘সিনেটরদের দায়িত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত বহাল থাকবে, যতক্ষণ না তাদের উত্তরাধিকার নির্বাচিত, মনোনীত ও নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।’ এই ধারাবলে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন মেয়াদোত্তীর্ণ ৮৩ সিনেটর।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন উপ-উপাচার্য থাকায় বর্তমানে অর্থ কমিটির সদস্য হওয়ার কথা ৯ জন। তবে এর মধ্যে একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত একজন ডিন এবং সিনেটের একজন প্রতিনিধির পদ খালি। বাকিদের মধ্যে শিক্ষক সমিতির একজন প্রতিনিধি, সিন্ডিকেট মনোনীত একজন শিক্ষক এবং দুজন অর্থ বিশেষজ্ঞের মেয়াদ শেষ হয়েছে। অর্থ কমিটিতেও পদাধিকার বলে বৈধ মেয়াদে রয়েছেন শুধু উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ।
এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মঞ্চের আহ্বায়ক ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্ষমতাকেন্দ্রিক কাঠামো টিকিয়ে রাখা বা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার জন্যই নির্বাচন দেওয়া হচ্ছে না। নির্বাচন না দেওয়ার পেছনে এখন তো কভিড-১৯ মহামারীর মতো কোনো অজুহাতও নেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে বিভিন্ন পর্ষদের সদস্য নবায়ন না করার ফলে প্রশাসনের জবাবদিহিতার জায়গা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।’
তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নতুন উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব পর্ষদে নির্বাচন দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিল। একে একে নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।’
জাতীয় পার্টিতে (জাপা) দেবর-ভাবির দৃশ্যমান দ্বন্দ্বের বরফ গলতে শুরু করেছে। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ গত রবিবার দেশে ফিরেই দেবর পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। সে ডাকে সাড়া দিয়ে গতকাল সোমবার কিছুটা নরম সুর শোনা গেছে কাদেরপন্থিদের মুখে। কাদেরপন্থির দুই নেতা গতকাল রওশনের সঙ্গে দেখাও করেছেন। রওশনের সম্মতি পেয়ে বসার প্রস্তাব কাদেরের কাছেও পৌঁছানো হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই দুপক্ষের বসার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন দুই অংশের নেতারাই।
অন্যদিকে গতকাল রাতে রওশন এরশাদের সঙ্গে হোটেল ওয়েস্টিনে দেখা করেছেন রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। সেখানে রওশন তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। এর আগে গত রবিবার দেশে নেমেই বিমানবন্দরে রওশন তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারও আগে কাদেরপন্থিদের অংশ থেকে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু মোস্তফাকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন এবং তার মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর দেন।
জাপার দুই অংশের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, মোস্তফার দলীয় মনোনয়নের মধ্য দিয়েই জাপায় নতুন করে ঐক্য শুরু হলো। মেয়র নির্বাচনে লাঙ্গলের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই ঐক্য আরও দৃঢ় হবে।
এ ব্যাপারে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা ঘরের ব্যাপার। দেবর-ভাবির মনোমালিন্য। এটা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল। তার ভাইকে তিনি দিয়ে গেছেন। রওশন এরশাদ তার ভাবি, মায়ের মতো। তিনি দীর্ঘদিন ব্যাংককে ছিলেন চিকিৎসার জন্য। নানা কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলো বড় কিছু নয়। দেবর-ভাবি একদিন এক টেবিলে বসলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা দীর্ঘদিন দল করছি। আমাদের দলে কোনো বিরোধ নেই, হবেও না। এই দল করে তৃপ্তি পাই। কারণ এই দলেই রাজনীতি আছে। দলের ভেতর কোনো গ্রুপিং নেই।’
এ নেতা বলেন, ‘আমি আজকেও (গতকাল) ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছি। কথা হয়েছে। আমরা নেতাকর্মীরা সবাই দলের সঙ্গে আছি, আমরা তাদের সঙ্গে আছি, থাকা। এটা এক আছে, একই হয়ে যাবে।’
তবে দ্বন্দ্ব নিরসন ও দলে ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে রওশন এরশাদের অনুসারীরা পার্টির গঠনতন্ত্র আগের অবস্থায় পুনর্বহালের কথা বলেছেন। তারা বলছেন, গঠনতন্ত্র আগের অবস্থায় ফিরে গেলেই রওশন এরশাদ পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তার সম্মান ফিরে পাবেন। পরে সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।
জাপার রওশনপন্থি নেতারা জানান, ব্যাংকক থাকতে ও দেশে ফিরে রওশন এরশাদ তার পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব আলোচনায় পার্টিতে চলমান দ্বন্দ্ব ও বিভাজন দূর করতে তার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে সে ক্ষেত্রে তিনি দলে তার সম্মান ও মর্যাদা চান। রওশন এরশাদ চান তাকে সম্মান দিক জাপা। তার কথার গুরুত্ব দিক। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হোক।
এ ব্যাপারে রওশনপন্থি এক শীর্ষ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রওশন এরশাদ দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তার ক্ষমতা খর্ব করে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় কাউন্সিলে রওশন এরশাদকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করা হয়। পরে পার্টির প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া অনুমোদন হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার সময় তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেই জায়গাটা নতুন করে ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি ক্ষমতার ভারসাম্য ঠিক করতে হবে।
এ নেতা আরও বলেন, ধারা ২০ উপধারা ১-এ বলা ছিল ‘জাতীয় পার্টিতে একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকিবেন। তিনি পার্টির সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হইবেন। পার্টির কোনো জনসভায় তিনি উপস্থিত থাকিলে চেয়ারম্যানের ওপরে তাহার অবস্থান হইবে। জাতীয় ও দলীয় সকল বিষয়ে চেয়ারম্যান তাহার পরামর্শ গ্রহণ করিবেন। তিনি দলের পতাকা বহন ও সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করিবেন।’ কিন্তু কাদেরপন্থিরা সেটা পরিবর্তন করে ‘সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করিবেন’ এ অংশটুকু বাদ দেন। ‘জাতীয় ও দলীয় সকল বিষয়ে চেয়ারম্যান তাহার পরামর্শ গ্রহণ করিবেন’ এ অংশটা পরিবর্তন করে ‘প্রয়োজন মনে করিলে’ শব্দ যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, পরে তারা উপধারা ১-এর ভেতর লিখেছেন ‘উপরে উল্লিখিত যে কোনো ধারায় ক্ষমতা থাকিলেও সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করিবেন চেয়ারম্যান।’ অথচ চেয়ারম্যানের ক্ষমতার বিষয়ে গঠনতন্ত্রে বলা আছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পার্টির সর্বপ্রধান কর্মকর্তা গণ্য হইবেন। তিনি পার্টির সংহতি ঐক্য ও মর্যাদার প্রতীক। কিন্তু সেটা বাদ দিয়ে তারা নতুন করে যুক্ত করেছে ‘গঠনতন্ত্রের অন্য ধারায় যাহা উল্লেখ থাকুক না কেন, পার্টির চেয়ারম্যান বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত থাকিবেন। এ ক্ষমতাবলে তিনি প্রয়োজনবোধে পার্টির প্রতিটি স্তরে কমিটি গঠন, পুনর্গঠন, বাতিল ও বিলোপ করিতে পারিবেন। তিনি যে কোনো পদ সৃষ্টি ও অবলুপ্ত করিতে পারিবেন, চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির যে কোনো পদ, যে কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, যে কোনো পদ হইতে যে কোনো ব্যক্তিকে অপসারণ ও যে কোনো ব্যক্তিকে তার স্থলাভিষিক্ত করিতে পারিবেন।’
রওশনপন্থি এই নেতা বলেন, রওশন এরশাদের সেই সম্মানটা প্রতিষ্ঠিত হলেই চলবে। এরপর সাংগঠনিক কাঠামোর ব্যাপারে আলোচনা হবে। কারণ সম্মান প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দলের মধ্যে কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে। তা না হলে তো সম্মান প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
জাপা নেতারা জানান, রওশন এরশাদ চান সম্মিলিতভাবে একটি জাতীয় কাউন্সিল হোক। তার ডাকা কাউন্সিল স্থগিত হয়েছে। পার্টির মূল অংশের কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে। দুটো কাউন্সিল এক জায়গায় হয়ে সম্মিলিতভাবে একটা জাতীয় কাউন্সিল হোক। তবে তার আগে শেষ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে যে প্রেসিডিয়াম বৈঠক, সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা হতে পারে একটা নোটিস দিয়ে বা মেনে নিয়ে। এটা হলে কাউন্সিলের আগে পার্টি যেভাবে চলছিল, যার যে পদ ছিল, সেটাও বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।
দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব ও দলের অনৈক্য নিরসনে দুপক্ষের কিছু নেতা অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন বলে জানান দুপক্ষের নেতারা। তারা জানান, গত রবিবার বিমানবন্দরে কাদেরপন্থির তিন নেতা কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি রওশন এরশাদকে স্বাগত জানাতে যান। এ ছাড়া গতকাল হোটেল ওয়েস্টিনে রওশনের সঙ্গে দেখা করেন জাপার কাদেরপন্থির অন্য দুই নেতা সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ শফিকুল ইসলাম সেন্টু। এ সময় রওশন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বসতে সম্মতি দেন। গতকাল দুপক্ষের বসার কথাও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বৈঠক হয়নি। আজকালের মধ্যে রওশন-কাদের আলোচনায় বসতে পারেন বলেও জানান এসব নেতা।
মানিক রহমান। জন্ম থেকেই দুই হাত নেই তার। দুই পা থাকলেও একটি লম্বা ও অন্যটি খাটো। তবে শরীরের এ প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাকে। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে পা দিয়ে লিখে এবার এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মানিকের এ ফলাফলে মুগ্ধ তার বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা। আর মানিক চায় এভাবে আরও দূরে যেতে। হতে চায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
অদম্য মেধাবী মানিক রহমান এ বছর ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। বাবা মিজানুর রহমান ওষুধ ব্যবসায়ী আর মা মরিয়ম বেগম একটি কলেজের প্রভাষক। জন্ম থেকেই মানিকের দুটো হাত নেই। পা দুটোও একই মাপের নয়। তবে বাবা-মায়ের সহায়তা আর নিজের পরিশ্রমে কখনো পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েনি। বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের চেষ্টায় পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল মানিক রহমান। এর পেছনে অবশ্য পা দিয়ে লেখা তার গোটা গোটা হরফগুলোও ভূমিকা রেখেছিল।
পা দিয়ে কেবল ভালো লেখাই না, মোবাইল চালানো এবং কম্পিউটার টাইপিং ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী মানিক রহমান।
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমাদের দুই ছেলে। মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক পিএসসি ও জেএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমাদের ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন যেন সে সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।
মানিকের বাবা জানান, মানিক ঢাকার নটরডেম কলেজে পড়তে চায়। তবে সেখানে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে পরে খরচ চালানো সব নিয়ে আছে সংশয়ও। তাই ছেলের ইচ্ছে পূরণে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
নিজের সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত মানিক রহমান বলেছে, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহ রহমতে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।
ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও মানিক রহমান অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো ফলাফল করায় আমরা মুগ্ধ। সে জীবনে অনেক বড় হোক এ দোয়াই করি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সামছুল আলম বলেন, মানুষ চেষ্টা করলে যে সব পারে তার প্রমাণ ফুলবাড়ী উপজেলার মানিক রহমান। সে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার জন্য দোয়া ও শুভকামনা থাকল।
আর কারও মুখাপেক্ষী নয়। আধুনিক পদ্ধতিতে খামার করা এবং সহজ বিপণন এখন নিজের হাতেই। দিন যত যাবে খামার বড় হবে। কেউ আর ছোট করে কথা বলতে পারবে না। খামারি হিসেবে যত ছোটই হই না কেন, আমরা খামারি, আমাদের সেই শক্ত পরিচয় আছে। নিজেদের নামে আছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। মুরগি, হাঁস, গরু-ছাগলের রোগ বালাই নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে আমরা পিজিরা (প্রডিউসার গ্রুপ) বসে বৈঠক করি। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে একেবারে ঢাকায় কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের সহজ যোগাযোগ। প্রতি মাসে সঞ্চয় করছি। আমাদের খামারের প্রাণীদের জন্য হেলথ কার্ড রয়েছে। ফলে এসব প্রাণীর স্বাস্থ্যসেবায়ও আর বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমরা যেভাবে কাজ করছি, তাতে আগামীতে ছোট ছোট খামারিরা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নীরব বিপ্লব ঘটাবেন।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে (এলডিডিপি) কাজ করার মাধ্যমে এভাবেই নিজেদের জীবন বদলানোর কথা জানালেন সিরাজগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের খামারি নাদিরা, নোয়াখালীর শাহীন, রংপুরের আকবর, বরিশালের সুফিয়া, দিনাজপুরের হারুনসহ অন্তত ৩০ জন খামারি।
এলডিডিপির আওতায় ২০১৯ সালে দেশব্যাপী প্রডিউসার গ্রুপ চালু করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চার হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে চলতি বছর। প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, মার্কেট লিংকেজ ও ভ্যালু চেইন সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে এ প্রকল্প। আর এর মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করাই এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর পরই কভিড মহামারীতে পড়ে দেশ। ফলে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কাজে বেশ ব্যাঘাত ঘটে। তারপরও এক বছর ধরে কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। বিশ^ব্যাংকের সহায়তায় চলমান এ প্রকল্পটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিস্ময়কর সাফল্য যোগ করবে। আর প্রকল্প শেষ হলেও সমবায় আন্দোলনের একটা বিপ্লব দেখবে জাতি। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত খামারিরাও প্রাণিসম্পদ খাতে তাদের নীরব বিপ্লবের কথা বললেন দেশ রূপান্তরের কাছে। শাহীন আক্তার বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে তার নেতৃত্বে একটি প্রডিউসার গ্রুপ (পিজি) গড়ে ওঠে। সেখানে ৪০ জন সদস্য রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই খামারি। এলডিডিপির পক্ষ থেকে উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন কীভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালন করা যায়, কীভাবে শেড তৈরি করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বিপণনেরও। প্রতি সপ্তাহে গ্রুপ লিডার বৈঠকের আয়োজন করেন। সবার জন্য সুবিধাজনক জায়গা এবং সময়ে এ বৈঠক করা হয়।
ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, চাঁদপুরসহ কয়েকটি জেলার পিজির আওতাভুক্ত খামারিদের কাছে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে উঠে আসে প্রত্যাশা ও স্বপ্নের কথা। সিরাজগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের নিয়ে গঠিত পিজির সদস্য নাদিরা ও হিরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাঁচ বছর আগেও সমাজে আমাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে আমরা নিজের ঘর পেয়েছি। এখন আমরা খামারি হিসেবে আইডি কার্ড পেয়েছি। আমাদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। আমরা মাসে মাসে টাকা জমাই। প্রাণীগুলোকে নিয়মিত আমরা উপজেলার ডাক্তারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের সম্মান পেয়েছি। আর কী চাই?’
রংপুরের গঙ্গাচড়ার প্রডিউসার গ্রুপের সদস্যরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগেও তারা নিজেরা গরু-ছাগল পালন করেছেন। কিন্তু কীভাবে এগুলো বিক্রি করবেন এবং কোনো সমস্যা হলে কী করবেন, তা বুঝতেন না। ভ্যাকসিন দিতে উল্টাপাল্টা হয়ে যেত। কিন্তু এখন তা হয় না। হেলথ কার্ড আছে। সেখানে সব লেখা থাকে। তারিখ অনুযায়ী তারা ভেটেরিনারি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এলডিডিপির এ সহায়তা তাদের নতুন উদ্যমে কিছু করার স্বপ্ন তৈরি করে দিয়েছে। বাড়ি বাড়ি খামার হবে, তাদের আর কোনো অভাব থাকবে না।
সম্প্রতি রাজধানীতে পিজির সদস্যদের এক অনুষ্ঠানে আসা বরিশাল ও যশোরের কয়েকজন লিডার দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার সময় তারা পিজি থেকে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন এবং একেকজন খামারি সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন।
করোনার সময় দুধ, ডিম, মাংসের বিপণনে অসুবিধার কথা তুলে ধরে ডেইরি ও পোলট্রি খামারিরা বলেন, করোনায় যখন সবকিছু বন্ধ, তখন দুধ, ডিম ও মাংস কীভাবে বিক্রি করবেন, তা নিয়ে মহাসংকটে পড়ে যান। তখন এই পিজিই তাদের সব সমস্যার সমাধান করেছে। এলডিডিপির প্রকল্প থেকে তাদের জন্য ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং সেল করা হয়েছে। তারাই মাঠপর্যায় থেকে তাদের উৎপাদিত সব জিনিস নিয়ে আসত এবং তাদের আয় একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। অনেক ঝুঁকি নিয়ে উপজেলা এবং ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা লাইভ স্টক অফিসাররা তাদের কর্মীদের নিয়ে দুধ, ডিম, মাংস সংগ্রহ করতেন।
বরিশালের বাবুগঞ্জে প্রকল্পের প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (এলইও) ভেটেরিনারি চিকিৎসক রেহানা বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দেশি মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের খামারিদের নিয়ে কাজ করেন। এই প্রডিউসার গ্রুপের প্রতি সাড়া দিন দিন বাড়ছে। এরই মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয়ে গেছে। এখানে অনেক নারী গ্রুপ লিডার রয়েছেন; বিশেষ করে হাঁস-মুরগি এবং ছাগলের যে খামার, সেখানে আমরা মেয়েদের প্রাধান্য দিয়ে থাকি। নারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং বাণিজ্যিকভাবে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এলইও ডা. সেলিনা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ১৪টি গ্রুপ আছে। এর মধ্যে ডেইরি গ্রুপ আটটি। একটি ছাগলের, একটি হাঁসের আর বাকিগুলো মুরগির। পিজি সদস্যরা এখন উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত করার পদ্ধতি সব জানেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পশুপালন, পশুদের ভালো খাবার নিশ্চিত এবং রোগ-বালাইয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা গ্রুপ করে দিয়েছি। গ্রুপের সদস্যদের মধ্যেই গ্রুপ লিডার নির্বাচন করা হয়েছে এবং তারা নিজেরা উঠোন বৈঠক করেন। সেখানে আমাদের লাইফস্টক অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসাররা কাজ করেন এবং আরও দুজন লাইভ স্টক ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট কাজ করছেন। আবার প্রতিটি ইউনিয়নে এলএসপি বা লাইভ স্টক সার্ভিস প্রডিউসার একজন করে থাকেন।’
মাঠপর্যায়ের অন্তত ১০ জন এলইও ও গ্রুপ লিডারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের ৬১টি জেলায় গাভির ৩ হাজার ৩৩৪টি, গরু মোটাতাজাকরণের ৬৬৬টি, ছাগল ও ভেড়ার ৫০০টি এবং দেশি মুরগির ১ হাজারসহ ৫ হাজার ৫০০টি প্রডিউসার গ্রুপ গঠন ও সংহতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এই গ্রুপগুলোতে ১ লাখ ৬৫ হাজার পরিবার সংযুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতের প্রান্তিক খামারিদের বিভিন্ন ভ্যালু চেইনভিত্তিক প্রডিউসার গ্রপে যুক্ত করে জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত, বাজারজাতকরণ, ঋণ ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তারা যাতে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়, সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে এলডিডিপি প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রাব্বানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে এলডিডিপি প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামীতে সমবায় বিপ্লব ঘটবে। একটা আদর্শ খামার করতে যা যা করা দরকার, এলডিডিপি তা করছে।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ প্রকল্পটির মাধ্যমে আমরা জেলা পর্যায়ে ৫ হাজারের বেশি গ্রুপ গঠন করেছি। পার্বত্য তিন জেলা ছাড়া সারা দেশে এই চেইন গড়ে উঠছে। ভবিষ্যতে এখানে যারা গ্রুপ মেম্বার আছেন কিংবা গ্রুপ লিডার আছেন, এই প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদে আমরা বড় রকমের একটি সাফল্য পাব। কারণ তাদের উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি সরকার প্রাণিসম্পদে বাজার ব্যবস্থাপনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এই প্রডিউসার গ্রুপের সদস্যরা অবশ্যই এর সুফল পাবেন।’
কক্সবাজার জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে তিন বছর আগে। এই কমিটির ৮৫ ভাগ নেতাকেই চেনেন না বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা। এছাড়া ৯০ ভাগ নেতাই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়। এমনটাই দাবি করছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূলের কর্মীরা।
তারা বলছেন, গত ১৩ বছরে জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়নি। বর্তমান কমিটির কারণে দলীয় কার্যক্রম যেমন ঝিমিয়ে পড়েছে, তেমনি ভেঙে পড়েছে সাংগঠনিক চেইন অব কমান্ড। দলে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বে আসতে পারছেন না অসংখ্য ত্যাগী কর্মী। যে কারণে হতাশ হয়ে তাদের অনেকেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে রয়েছেন।
দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২০ নভেম্বর কক্সবাজারের শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। অবশ্য সেই সম্মেলনও দলের বিবদমান দুটি পক্ষের মারামারিতে পণ্ড হয়ে যায়। পরে কেন্দ্র থেকে শাহজাহান চৌধুরীকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই থেকে জেলা বিএনপি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তৃণমূলে দেখা দেয় ক্ষোভ। ওই কমিটির ৮ বছর পর সম্মেলন ও কাউন্সিল ছাড়াই ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ফের শাহজাহান চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নাকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। সেই কমিটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, ২০০৯ সাল থেকে আজ অবধি কোনো সম্মেলন না হওয়ায় ভেঙে পড়েছে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো। তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই জেলা নেতাদের। এই কমিটির অধিকাংশ নেতাদেরই চেনেন না তারা।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কানন বড়ুয়া বিশাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে একটি বিতর্কিত কমিটি জেলা বিএনপির নেতৃত্বে। এদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। করোনাকাল কিংবা বন্যা পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে জনগণের জন্য কিংবা দলীয় কর্মীদের জন্য কিছুই করেনি। এই কমিটির কারণে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক নেতাকর্মী নিজেদের বিএনপির রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছর ধরে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অথচ জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির ৮৫ ভাগ নেতাকে আমরা চিনিই না।’
দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির অর্থ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘জেলায় বর্তমানে বিএনপির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, এতে লুকিয়ে রাখার কিছু নেই। সম্মেলন হলে দলে গতি আসবে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হবেন।’
নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে জেলায় বিএনপির অবস্থা নাজুক বলে স্বীকার করেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০০৯ সালের সম্মেলনে আমি জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। সেই কারণে জেলা বিএনপির কোনো পদে তখন থেকে আমার ঠাঁই হয়নি। এটা নিয়ে আমার দুঃখ নেই। তবে নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে জেলায় বিএনপির নাজুক অবস্থা মেনে নিতে কষ্ট হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় দুজনের হাতে জেলা বিএনপির ক্ষমতা কুক্ষিগত রয়েছে। তাদের পছন্দের লোকজনকে কমিটিতে স্থান দিয়ে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করছেন।’
দলীয় কার্যক্রম তেমন একটা না থাকায় বহু নেতাকর্মী সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন জানিয়ে আলমগীর ফরিদ বলেন, ‘বর্তমানে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যক্রমও নেই বললেই চলে। অনেকে চরম হতাশায় নিষ্ক্রিয়। কেউ জড়িয়ে পড়েছেন ব্যবসায়। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। আবার অনেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক কক্সবাজার-রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘জেলা বিএনপির কমিটির বিষয়ে কী হবে না হবে সেটা কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। আমি বিষয়টি কেন্দ্রকে কয়েকবার অবহিত করেছি। কিন্তু কেন্দ্র কোনো নির্দেশনা দেয়নি। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেব। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলেই সম্মেলন দিতে প্রস্তুত।’
জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির ৮৫ ভাগ নেতাকে তৃণমূলের কর্মীরা চেনেন না এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধের মধ্যে আছি। সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে যারা নেতাদের চেনে না তারা বিএনপিই করে না।’
কক্সবাজার জেলা বিএনপি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহাবুবুর রহমান শামীম। কিন্তু তিনি কক্সবাজার জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেছেন, ‘সারা দেশে নতুন করে বিএনপির সম্মেলন ও কমিটি করা হচ্ছে। কক্সবাজারও এর বাইরে থাকবে না। তবে কক্সবাজার জেলা বিএনপির বিষয়টি দেখভাল করছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম। তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে ডাকা নৌযান শ্রমিদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হবে এমন আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন তারা। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে সরকার এবং মালিক-শ্রমিক নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে নৌযান শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা এবং নৌযান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত শনিবার রাত ১২টা থেকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ এই ধর্মঘট শুরু করেছিল। ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, ‘বেতন কাঠামো গঠনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে কমিটি শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এক হাজার টনের বেশি জাহাজের শ্রমিকরা নভেম্বর থেকে ১২০০ টাকা ভাতা পাবেন এবং এর চেয়ে বেশি পণ্যবাহী জাহাজের শ্রমিকরা ১৫০০ টাকা মাসিক ভাতা পাবেন। এমন আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘মালিক ও শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাদের দাবি ও সমস্যাগুলো দেখছি। একমাসের মধ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে কমিটি করেছি। আর এই একমাস শ্রমিকদের অন্তর্বতীকালীন ভাতা প্রদানের জন্য মালিকপক্ষকে বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরমধ্যে মাঝখানের একটি পক্ষ বিশৃঙ্খলা করেছে। কয়েক জায়গায় হামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার ও মামলা হয়েছে। সেটাও আমরা দেখবো। সে মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তাতে আমরা সহযোগিতা করব বলে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেছি। এছাড়া নৌ-মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং মালিক-শ্রমিকরা মিলে এসব দাবি নিরসনে একটি কমিটি হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে সব সমস্যা সমাধান হবে।’
নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবিতে গত শনিবার রাত ১২ টা থেকে সারাদেশে কর্মবিরতি পালন শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা। ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে নৌপথে অচলাবস্থা তৈরি হয়। বন্ধ ছিল সব ধরনের যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান। ঢাকা নদীবন্দরসহ (সদরঘাট) দেশের বিভিন্ন বন্দরে লঞ্চ না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।
এদিকে গতকাল ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরেও ভোগান্তির রেশ ছিল বিভিন্ন টার্মিনালে। মো. সাইদ নামে সদরঘাট টার্মিনালের এক কর্মী বলেন, ‘যাত্রীরা ভেবেছে সকালে ধর্মঘট ছেড়ে দেব। এই আশায় অনেকে রাতে টার্মিনালে রাত কাটিয়েছেন। সকালে যখন দেখলো লঞ্চ ছাড়ছে না, তখন তারা বিকল্প পথে গন্তব্যে রওনা হন।’
মো. দাউদ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘পায়ের চিকিৎসার জন্য ভোলা থেকে চারদিন আগে ঢাকায় এসেছি মাকে নিয়ে। আজকে যাওয়ার দিন, জানতাম যে ধর্মঘট। ঘাটে এসে দেখি এমন পরিস্থিতি। মা গাড়িতে উঠলে প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই লঞ্চ ছাড়া যাওয়ার উপায় নাই। অপেক্ষা করতে হবে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা পর্যন্ত।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে কী হবে না এই নিয়ে যাত্রীরা সংশয়ে ছিল। তাই অনেক যাত্রী ফিরে গেছে। যারা থেকে গেছেন তাদের বেশিরভাগ বরিশালগামী যাত্রী। তাই লঞ্চ ও যাত্রীর সংখ্যা দুটিই কম ছিল।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ধর্মঘটের কারণে যাত্রীর সংখ্যা কম। শুধুমাত্র লঞ্চ রাজধানীর সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে। আশা করি কালকে (মঙ্গলবার) যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।’
ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে স্বস্তি ফিরেছে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার পরে সন্ধ্যা থেকে টার্মিনালে আসতে শুরু করে বিভিন্ন রুটের লঞ্চ। এ সময় বরিশাল রুটের কীর্তনখোলা, মানামী, সুরভী ও অ্যাডভেঞ্চারসহ আরও কয়েকটি লঞ্চে যাত্রী তুলতে দেখা যায়।
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।