
বিএনপির সঙ্গে আমরা খেলব না, ছাত্রলীগ খেলবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আপনি বারবার বলেন খেলা হবে। কিন্তু গতবার ঠাকুরগাঁওয়ে নির্বাচনে আপনাকে হারিয়েছেন রমেশ চন্দ্র সেন। সে সময় তো রমেশ দা আপনাকে আউট করেছিলেন। আপনাদের সঙ্গে আমরা খেলব না। এখন থেকে আপনাদের সঙ্গে ছাত্রলীগ খেলবে। চাইলে যুবলীগও খেলতে পারবে।’ দিনাজপুর গোর-এ শহীদ বড়ময়দানে সোমবার দুপুর আড়াইটায় দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান বক্তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি একথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, হিমালয় ও সাইবেরিয়া থেকে শীতের সময় কিছু পাখি বাংলাদেশে আসে। তারা বাংলাদেশে এসে এদেশের ফসল খেয়ে আবার চলে যায়। তেমনি বিএনপিও শীতের পাখির মতো। বিএনপি সমাবেশের নামে পিকনিক পাটি করছে। তারা তো কোনো ধরনের সমাবেশ করছে না। কুমিল্লায় সমাবেশের তিন দিন আগে থেকে তাদের নেতাকর্মীরা সেখানে পিকনিক শুরু করে দিয়েছিল। কুমিল্লায় সমাবেশে ১০০ গরু জবাই করে পিকনিক খেয়েছে। পরশুদিন কুমিল্লায় সমাবেশে বিএনপির সাবেক মেয়র সাক্কু সাহেব বলেছেন ‘আমার ৭৩টি ফ্লাট নেতাকর্মীদের জন্য বরাদ্দ রেখেছি। এই ফ্লাটগুলোতে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীরা থাকবেন।’ বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে পুকুরে কিছু মাছ লাফ্ফা-লাফ্ফি শুরু করে। পুকুরে কিন্তু বড় মাছ লাফ্ফা-লাফ্ফি করে না। লাফ্ফা-লাফ্ফি করে পুটি মাছ। বিএনপিও তেমনি পুটি মাছের মতো লাফ্ফা-লাফ্ফি করছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে পুকুরে বোয়াল মাছ থাকে। বোয়াল মাছ কিন্তু পুটি মাছকে খেয়ে ফেলবে।
জাতীয় পার্টিতে (জাপা) দেবর-ভাবির দৃশ্যমান দ্বন্দ্বের বরফ গলতে শুরু করেছে। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ গত রবিবার দেশে ফিরেই দেবর পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বসার প্রস্তাব দিয়েছেন। সে ডাকে সাড়া দিয়ে গতকাল সোমবার কিছুটা নরম সুর শোনা গেছে কাদেরপন্থিদের মুখে। কাদেরপন্থির দুই নেতা গতকাল রওশনের সঙ্গে দেখাও করেছেন। রওশনের সম্মতি পেয়ে বসার প্রস্তাব কাদেরের কাছেও পৌঁছানো হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যেই দুপক্ষের বসার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন দুই অংশের নেতারাই।
অন্যদিকে গতকাল রাতে রওশন এরশাদের সঙ্গে হোটেল ওয়েস্টিনে দেখা করেছেন রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা। সেখানে রওশন তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন। এর আগে গত রবিবার দেশে নেমেই বিমানবন্দরে রওশন তাকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারও আগে কাদেরপন্থিদের অংশ থেকে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু মোস্তফাকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেন এবং তার মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর দেন।
জাপার দুই অংশের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, মোস্তফার দলীয় মনোনয়নের মধ্য দিয়েই জাপায় নতুন করে ঐক্য শুরু হলো। মেয়র নির্বাচনে লাঙ্গলের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই ঐক্য আরও দৃঢ় হবে।
এ ব্যাপারে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা ঘরের ব্যাপার। দেবর-ভাবির মনোমালিন্য। এটা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল। তার ভাইকে তিনি দিয়ে গেছেন। রওশন এরশাদ তার ভাবি, মায়ের মতো। তিনি দীর্ঘদিন ব্যাংককে ছিলেন চিকিৎসার জন্য। নানা কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। এগুলো বড় কিছু নয়। দেবর-ভাবি একদিন এক টেবিলে বসলেই ঠিক হয়ে যাবে। আমরা দীর্ঘদিন দল করছি। আমাদের দলে কোনো বিরোধ নেই, হবেও না। এই দল করে তৃপ্তি পাই। কারণ এই দলেই রাজনীতি আছে। দলের ভেতর কোনো গ্রুপিং নেই।’
এ নেতা বলেন, ‘আমি আজকেও (গতকাল) ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছি। কথা হয়েছে। আমরা নেতাকর্মীরা সবাই দলের সঙ্গে আছি, আমরা তাদের সঙ্গে আছি, থাকা। এটা এক আছে, একই হয়ে যাবে।’
তবে দ্বন্দ্ব নিরসন ও দলে ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে রওশন এরশাদের অনুসারীরা পার্টির গঠনতন্ত্র আগের অবস্থায় পুনর্বহালের কথা বলেছেন। তারা বলছেন, গঠনতন্ত্র আগের অবস্থায় ফিরে গেলেই রওশন এরশাদ পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তার সম্মান ফিরে পাবেন। পরে সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে।
জাপার রওশনপন্থি নেতারা জানান, ব্যাংকক থাকতে ও দেশে ফিরে রওশন এরশাদ তার পক্ষের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব আলোচনায় পার্টিতে চলমান দ্বন্দ্ব ও বিভাজন দূর করতে তার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে সে ক্ষেত্রে তিনি দলে তার সম্মান ও মর্যাদা চান। রওশন এরশাদ চান তাকে সম্মান দিক জাপা। তার কথার গুরুত্ব দিক। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হোক।
এ ব্যাপারে রওশনপন্থি এক শীর্ষ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, রওশন এরশাদ দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তার ক্ষমতা খর্ব করে গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় কাউন্সিলে রওশন এরশাদকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করা হয়। পরে পার্টির প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া অনুমোদন হয়। এরপর নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার সময় তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেই জায়গাটা নতুন করে ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি ক্ষমতার ভারসাম্য ঠিক করতে হবে।
এ নেতা আরও বলেন, ধারা ২০ উপধারা ১-এ বলা ছিল ‘জাতীয় পার্টিতে একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকিবেন। তিনি পার্টির সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী হইবেন। পার্টির কোনো জনসভায় তিনি উপস্থিত থাকিলে চেয়ারম্যানের ওপরে তাহার অবস্থান হইবে। জাতীয় ও দলীয় সকল বিষয়ে চেয়ারম্যান তাহার পরামর্শ গ্রহণ করিবেন। তিনি দলের পতাকা বহন ও সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করিবেন।’ কিন্তু কাদেরপন্থিরা সেটা পরিবর্তন করে ‘সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করিবেন’ এ অংশটুকু বাদ দেন। ‘জাতীয় ও দলীয় সকল বিষয়ে চেয়ারম্যান তাহার পরামর্শ গ্রহণ করিবেন’ এ অংশটা পরিবর্তন করে ‘প্রয়োজন মনে করিলে’ শব্দ যোগ করেন।
তিনি আরও বলেন, পরে তারা উপধারা ১-এর ভেতর লিখেছেন ‘উপরে উল্লিখিত যে কোনো ধারায় ক্ষমতা থাকিলেও সর্বময় ক্ষমতা সংরক্ষণ করিবেন চেয়ারম্যান।’ অথচ চেয়ারম্যানের ক্ষমতার বিষয়ে গঠনতন্ত্রে বলা আছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পার্টির সর্বপ্রধান কর্মকর্তা গণ্য হইবেন। তিনি পার্টির সংহতি ঐক্য ও মর্যাদার প্রতীক। কিন্তু সেটা বাদ দিয়ে তারা নতুন করে যুক্ত করেছে ‘গঠনতন্ত্রের অন্য ধারায় যাহা উল্লেখ থাকুক না কেন, পার্টির চেয়ারম্যান বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত থাকিবেন। এ ক্ষমতাবলে তিনি প্রয়োজনবোধে পার্টির প্রতিটি স্তরে কমিটি গঠন, পুনর্গঠন, বাতিল ও বিলোপ করিতে পারিবেন। তিনি যে কোনো পদ সৃষ্টি ও অবলুপ্ত করিতে পারিবেন, চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির যে কোনো পদ, যে কোনো ব্যক্তিকে নিয়োগ, যে কোনো পদ হইতে যে কোনো ব্যক্তিকে অপসারণ ও যে কোনো ব্যক্তিকে তার স্থলাভিষিক্ত করিতে পারিবেন।’
রওশনপন্থি এই নেতা বলেন, রওশন এরশাদের সেই সম্মানটা প্রতিষ্ঠিত হলেই চলবে। এরপর সাংগঠনিক কাঠামোর ব্যাপারে আলোচনা হবে। কারণ সম্মান প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই দলের মধ্যে কাঠামোগত পরিবর্তন আসবে। তা না হলে তো সম্মান প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
জাপা নেতারা জানান, রওশন এরশাদ চান সম্মিলিতভাবে একটি জাতীয় কাউন্সিল হোক। তার ডাকা কাউন্সিল স্থগিত হয়েছে। পার্টির মূল অংশের কাউন্সিলের প্রস্তুতি চলছে। দুটো কাউন্সিল এক জায়গায় হয়ে সম্মিলিতভাবে একটা জাতীয় কাউন্সিল হোক। তবে তার আগে শেষ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুমোদন দিয়েছে যে প্রেসিডিয়াম বৈঠক, সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। সেটা হতে পারে একটা নোটিস দিয়ে বা মেনে নিয়ে। এটা হলে কাউন্সিলের আগে পার্টি যেভাবে চলছিল, যার যে পদ ছিল, সেটাও বাস্তবায়ন হয়ে যাবে।
দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব ও দলের অনৈক্য নিরসনে দুপক্ষের কিছু নেতা অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করেছেন বলে জানান দুপক্ষের নেতারা। তারা জানান, গত রবিবার বিমানবন্দরে কাদেরপন্থির তিন নেতা কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি ও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি রওশন এরশাদকে স্বাগত জানাতে যান। এ ছাড়া গতকাল হোটেল ওয়েস্টিনে রওশনের সঙ্গে দেখা করেন জাপার কাদেরপন্থির অন্য দুই নেতা সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি ও প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ শফিকুল ইসলাম সেন্টু। এ সময় রওশন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে বসতে সম্মতি দেন। গতকাল দুপক্ষের বসার কথাও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে বৈঠক হয়নি। আজকালের মধ্যে রওশন-কাদের আলোচনায় বসতে পারেন বলেও জানান এসব নেতা।
মানিক রহমান। জন্ম থেকেই দুই হাত নেই তার। দুই পা থাকলেও একটি লম্বা ও অন্যটি খাটো। তবে শরীরের এ প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি তাকে। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে পা দিয়ে লিখে এবার এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। মানিকের এ ফলাফলে মুগ্ধ তার বাবা-মা ও প্রতিবেশীরা। আর মানিক চায় এভাবে আরও দূরে যেতে। হতে চায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
অদম্য মেধাবী মানিক রহমান এ বছর ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামে। বাবা মিজানুর রহমান ওষুধ ব্যবসায়ী আর মা মরিয়ম বেগম একটি কলেজের প্রভাষক। জন্ম থেকেই মানিকের দুটো হাত নেই। পা দুটোও একই মাপের নয়। তবে বাবা-মায়ের সহায়তা আর নিজের পরিশ্রমে কখনো পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েনি। বাবা-মা ও শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় নিজের চেষ্টায় পিইসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ও জেএসসিতেও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছিল মানিক রহমান। এর পেছনে অবশ্য পা দিয়ে লেখা তার গোটা গোটা হরফগুলোও ভূমিকা রেখেছিল।
পা দিয়ে কেবল ভালো লেখাই না, মোবাইল চালানো এবং কম্পিউটার টাইপিং ও ইন্টারনেট ব্যবহারেও পারদর্শী মানিক রহমান।
মানিকের বাবা মিজানুর রহমান ও মা মরিয়ম বেগম বলেন, আমাদের দুই ছেলে। মানিক বড়। ছোট ছেলে মাহীম ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে মানিক প্রতিবন্ধী এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুটো হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। সমাজে অনেক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছেলে-মেয়েদের চেয়েও মানিক পিএসসি ও জেএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমাদের ছেলেটার জন্য দোয়া করবেন যেন সে সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে। সে তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।
মানিকের বাবা জানান, মানিক ঢাকার নটরডেম কলেজে পড়তে চায়। তবে সেখানে ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে পরে খরচ চালানো সব নিয়ে আছে সংশয়ও। তাই ছেলের ইচ্ছে পূরণে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন তিনি।
নিজের সাফল্য নিয়ে উচ্ছ্বসিত মানিক রহমান বলেছে, আমার দুটো হাত না থাকলেও আল্লাহ রহমতে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।
ফুলবাড়ী জছিমিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও মানিক রহমান অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে ভালো ফলাফল করায় আমরা মুগ্ধ। সে জীবনে অনেক বড় হোক এ দোয়াই করি।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. সামছুল আলম বলেন, মানুষ চেষ্টা করলে যে সব পারে তার প্রমাণ ফুলবাড়ী উপজেলার মানিক রহমান। সে পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার জন্য দোয়া ও শুভকামনা থাকল।
আর কারও মুখাপেক্ষী নয়। আধুনিক পদ্ধতিতে খামার করা এবং সহজ বিপণন এখন নিজের হাতেই। দিন যত যাবে খামার বড় হবে। কেউ আর ছোট করে কথা বলতে পারবে না। খামারি হিসেবে যত ছোটই হই না কেন, আমরা খামারি, আমাদের সেই শক্ত পরিচয় আছে। নিজেদের নামে আছে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। মুরগি, হাঁস, গরু-ছাগলের রোগ বালাই নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে আমরা পিজিরা (প্রডিউসার গ্রুপ) বসে বৈঠক করি। ইউনিয়ন থেকে শুরু করে একেবারে ঢাকায় কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের সহজ যোগাযোগ। প্রতি মাসে সঞ্চয় করছি। আমাদের খামারের প্রাণীদের জন্য হেলথ কার্ড রয়েছে। ফলে এসব প্রাণীর স্বাস্থ্যসেবায়ও আর বিশৃঙ্খলা হওয়ার আশঙ্কা নেই। আমরা যেভাবে কাজ করছি, তাতে আগামীতে ছোট ছোট খামারিরা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নীরব বিপ্লব ঘটাবেন।
প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পে (এলডিডিপি) কাজ করার মাধ্যমে এভাবেই নিজেদের জীবন বদলানোর কথা জানালেন সিরাজগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের খামারি নাদিরা, নোয়াখালীর শাহীন, রংপুরের আকবর, বরিশালের সুফিয়া, দিনাজপুরের হারুনসহ অন্তত ৩০ জন খামারি।
এলডিডিপির আওতায় ২০১৯ সালে দেশব্যাপী প্রডিউসার গ্রুপ চালু করে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। চার হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে চলতি বছর। প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো, মার্কেট লিংকেজ ও ভ্যালু চেইন সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে এ প্রকল্প। আর এর মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করাই এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর পরই কভিড মহামারীতে পড়ে দেশ। ফলে মাঠপর্যায়ে প্রকল্পের কাজে বেশ ব্যাঘাত ঘটে। তারপরও এক বছর ধরে কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। বিশ^ব্যাংকের সহায়তায় চলমান এ প্রকল্পটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিস্ময়কর সাফল্য যোগ করবে। আর প্রকল্প শেষ হলেও সমবায় আন্দোলনের একটা বিপ্লব দেখবে জাতি। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত খামারিরাও প্রাণিসম্পদ খাতে তাদের নীরব বিপ্লবের কথা বললেন দেশ রূপান্তরের কাছে। শাহীন আক্তার বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে তার নেতৃত্বে একটি প্রডিউসার গ্রুপ (পিজি) গড়ে ওঠে। সেখানে ৪০ জন সদস্য রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই খামারি। এলডিডিপির পক্ষ থেকে উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন কীভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগি পালন করা যায়, কীভাবে শেড তৈরি করতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বিপণনেরও। প্রতি সপ্তাহে গ্রুপ লিডার বৈঠকের আয়োজন করেন। সবার জন্য সুবিধাজনক জায়গা এবং সময়ে এ বৈঠক করা হয়।
ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, চাঁদপুরসহ কয়েকটি জেলার পিজির আওতাভুক্ত খামারিদের কাছে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে উঠে আসে প্রত্যাশা ও স্বপ্নের কথা। সিরাজগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের নিয়ে গঠিত পিজির সদস্য নাদিরা ও হিরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাঁচ বছর আগেও সমাজে আমাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে আমরা নিজের ঘর পেয়েছি। এখন আমরা খামারি হিসেবে আইডি কার্ড পেয়েছি। আমাদের প্রত্যেকের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। আমরা মাসে মাসে টাকা জমাই। প্রাণীগুলোকে নিয়মিত আমরা উপজেলার ডাক্তারের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারি। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের সম্মান পেয়েছি। আর কী চাই?’
রংপুরের গঙ্গাচড়ার প্রডিউসার গ্রুপের সদস্যরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগেও তারা নিজেরা গরু-ছাগল পালন করেছেন। কিন্তু কীভাবে এগুলো বিক্রি করবেন এবং কোনো সমস্যা হলে কী করবেন, তা বুঝতেন না। ভ্যাকসিন দিতে উল্টাপাল্টা হয়ে যেত। কিন্তু এখন তা হয় না। হেলথ কার্ড আছে। সেখানে সব লেখা থাকে। তারিখ অনুযায়ী তারা ভেটেরিনারি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নেন। এলডিডিপির এ সহায়তা তাদের নতুন উদ্যমে কিছু করার স্বপ্ন তৈরি করে দিয়েছে। বাড়ি বাড়ি খামার হবে, তাদের আর কোনো অভাব থাকবে না।
সম্প্রতি রাজধানীতে পিজির সদস্যদের এক অনুষ্ঠানে আসা বরিশাল ও যশোরের কয়েকজন লিডার দেশ রূপান্তরকে বলেন, করোনার সময় তারা পিজি থেকে আর্থিক সহযোগিতা চেয়েছেন এবং একেকজন খামারি সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়েছেন।
করোনার সময় দুধ, ডিম, মাংসের বিপণনে অসুবিধার কথা তুলে ধরে ডেইরি ও পোলট্রি খামারিরা বলেন, করোনায় যখন সবকিছু বন্ধ, তখন দুধ, ডিম ও মাংস কীভাবে বিক্রি করবেন, তা নিয়ে মহাসংকটে পড়ে যান। তখন এই পিজিই তাদের সব সমস্যার সমাধান করেছে। এলডিডিপির প্রকল্প থেকে তাদের জন্য ২৪ ঘণ্টার মনিটরিং সেল করা হয়েছে। তারাই মাঠপর্যায় থেকে তাদের উৎপাদিত সব জিনিস নিয়ে আসত এবং তাদের আয় একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। অনেক ঝুঁকি নিয়ে উপজেলা এবং ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা লাইভ স্টক অফিসাররা তাদের কর্মীদের নিয়ে দুধ, ডিম, মাংস সংগ্রহ করতেন।
বরিশালের বাবুগঞ্জে প্রকল্পের প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (এলইও) ভেটেরিনারি চিকিৎসক রেহানা বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে তারা গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দেশি মুরগি, হাঁস, কবুতর ও কোয়েলের খামারিদের নিয়ে কাজ করেন। এই প্রডিউসার গ্রুপের প্রতি সাড়া দিন দিন বাড়ছে। এরই মধ্যে সাড়ে ৫ হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হয়ে গেছে। এখানে অনেক নারী গ্রুপ লিডার রয়েছেন; বিশেষ করে হাঁস-মুরগি এবং ছাগলের যে খামার, সেখানে আমরা মেয়েদের প্রাধান্য দিয়ে থাকি। নারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং বাণিজ্যিকভাবে নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার এলইও ডা. সেলিনা আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এখানে ১৪টি গ্রুপ আছে। এর মধ্যে ডেইরি গ্রুপ আটটি। একটি ছাগলের, একটি হাঁসের আর বাকিগুলো মুরগির। পিজি সদস্যরা এখন উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত করার পদ্ধতি সব জানেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পশুপালন, পশুদের ভালো খাবার নিশ্চিত এবং রোগ-বালাইয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা গ্রুপ করে দিয়েছি। গ্রুপের সদস্যদের মধ্যেই গ্রুপ লিডার নির্বাচন করা হয়েছে এবং তারা নিজেরা উঠোন বৈঠক করেন। সেখানে আমাদের লাইফস্টক অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসাররা কাজ করেন এবং আরও দুজন লাইভ স্টক ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট কাজ করছেন। আবার প্রতিটি ইউনিয়নে এলএসপি বা লাইভ স্টক সার্ভিস প্রডিউসার একজন করে থাকেন।’
মাঠপর্যায়ের অন্তত ১০ জন এলইও ও গ্রুপ লিডারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের ৬১টি জেলায় গাভির ৩ হাজার ৩৩৪টি, গরু মোটাতাজাকরণের ৬৬৬টি, ছাগল ও ভেড়ার ৫০০টি এবং দেশি মুরগির ১ হাজারসহ ৫ হাজার ৫০০টি প্রডিউসার গ্রুপ গঠন ও সংহতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এই গ্রুপগুলোতে ১ লাখ ৬৫ হাজার পরিবার সংযুক্ত হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতের প্রান্তিক খামারিদের বিভিন্ন ভ্যালু চেইনভিত্তিক প্রডিউসার গ্রপে যুক্ত করে জ্ঞান ও প্রযুক্তিগত, বাজারজাতকরণ, ঋণ ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তারা যাতে এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়, সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
এ সম্পর্কে এলডিডিপি প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. গোলাম রাব্বানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদে গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে এলডিডিপি প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামীতে সমবায় বিপ্লব ঘটবে। একটা আদর্শ খামার করতে যা যা করা দরকার, এলডিডিপি তা করছে।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ প্রকল্পটির মাধ্যমে আমরা জেলা পর্যায়ে ৫ হাজারের বেশি গ্রুপ গঠন করেছি। পার্বত্য তিন জেলা ছাড়া সারা দেশে এই চেইন গড়ে উঠছে। ভবিষ্যতে এখানে যারা গ্রুপ মেম্বার আছেন কিংবা গ্রুপ লিডার আছেন, এই প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদে আমরা বড় রকমের একটি সাফল্য পাব। কারণ তাদের উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত একটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি সরকার প্রাণিসম্পদে বাজার ব্যবস্থাপনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, এই প্রডিউসার গ্রুপের সদস্যরা অবশ্যই এর সুফল পাবেন।’
কক্সবাজার জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির মেয়াদ ফুরিয়েছে তিন বছর আগে। এই কমিটির ৮৫ ভাগ নেতাকেই চেনেন না বিএনপির তৃণমূলের কর্মীরা। এছাড়া ৯০ ভাগ নেতাই সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়। এমনটাই দাবি করছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূলের কর্মীরা।
তারা বলছেন, গত ১৩ বছরে জেলা বিএনপির সম্মেলন হয়নি। বর্তমান কমিটির কারণে দলীয় কার্যক্রম যেমন ঝিমিয়ে পড়েছে, তেমনি ভেঙে পড়েছে সাংগঠনিক চেইন অব কমান্ড। দলে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতৃত্বে আসতে পারছেন না অসংখ্য ত্যাগী কর্মী। যে কারণে হতাশ হয়ে তাদের অনেকেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে রয়েছেন।
দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২০ নভেম্বর কক্সবাজারের শহীদ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন হয়। অবশ্য সেই সম্মেলনও দলের বিবদমান দুটি পক্ষের মারামারিতে পণ্ড হয়ে যায়। পরে কেন্দ্র থেকে শাহজাহান চৌধুরীকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই থেকে জেলা বিএনপি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। তৃণমূলে দেখা দেয় ক্ষোভ। ওই কমিটির ৮ বছর পর সম্মেলন ও কাউন্সিল ছাড়াই ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ফের শাহজাহান চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্নাকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়ে কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। সেই কমিটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন বছর আগে। তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, ২০০৯ সাল থেকে আজ অবধি কোনো সম্মেলন না হওয়ায় ভেঙে পড়েছে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো। তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই জেলা নেতাদের। এই কমিটির অধিকাংশ নেতাদেরই চেনেন না তারা।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কানন বড়ুয়া বিশাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে একটি বিতর্কিত কমিটি জেলা বিএনপির নেতৃত্বে। এদের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। করোনাকাল কিংবা বন্যা পরিস্থিতিতে জেলা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে জনগণের জন্য কিংবা দলীয় কর্মীদের জন্য কিছুই করেনি। এই কমিটির কারণে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক নেতাকর্মী নিজেদের বিএনপির রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রায় ২০ বছর ধরে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল ও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অথচ জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির ৮৫ ভাগ নেতাকে আমরা চিনিই না।’
দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির অর্থ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘জেলায় বর্তমানে বিএনপির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, এতে লুকিয়ে রাখার কিছু নেই। সম্মেলন হলে দলে গতি আসবে। ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যায়িত হবেন।’
নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে জেলায় বিএনপির অবস্থা নাজুক বলে স্বীকার করেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০০৯ সালের সম্মেলনে আমি জেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। সেই কারণে জেলা বিএনপির কোনো পদে তখন থেকে আমার ঠাঁই হয়নি। এটা নিয়ে আমার দুঃখ নেই। তবে নেতৃত্বের ঘাটতির কারণে জেলায় বিএনপির নাজুক অবস্থা মেনে নিতে কষ্ট হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় দুজনের হাতে জেলা বিএনপির ক্ষমতা কুক্ষিগত রয়েছে। তাদের পছন্দের লোকজনকে কমিটিতে স্থান দিয়ে ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করছেন।’
দলীয় কার্যক্রম তেমন একটা না থাকায় বহু নেতাকর্মী সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন জানিয়ে আলমগীর ফরিদ বলেন, ‘বর্তমানে জেলা বিএনপির দলীয় কার্যক্রমও নেই বললেই চলে। অনেকে চরম হতাশায় নিষ্ক্রিয়। কেউ জড়িয়ে পড়েছেন ব্যবসায়। কেউ কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন। আবার অনেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছেন।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক কক্সবাজার-রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘জেলা বিএনপির কমিটির বিষয়ে কী হবে না হবে সেটা কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। আমি বিষয়টি কেন্দ্রকে কয়েকবার অবহিত করেছি। কিন্তু কেন্দ্র কোনো নির্দেশনা দেয়নি। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেব। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলেই সম্মেলন দিতে প্রস্তুত।’
জেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির ৮৫ ভাগ নেতাকে তৃণমূলের কর্মীরা চেনেন না এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধের মধ্যে আছি। সরকার পতনের আন্দোলনের দিকে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে যারা নেতাদের চেনে না তারা বিএনপিই করে না।’
কক্সবাজার জেলা বিএনপি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহাবুবুর রহমান শামীম। কিন্তু তিনি কক্সবাজার জেলা বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক মোহাম্মদ শাহাজাহান বলেছেন, ‘সারা দেশে নতুন করে বিএনপির সম্মেলন ও কমিটি করা হচ্ছে। কক্সবাজারও এর বাইরে থাকবে না। তবে কক্সবাজার জেলা বিএনপির বিষয়টি দেখভাল করছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান শামীম। তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’
ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে ডাকা নৌযান শ্রমিদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হবে এমন আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন তারা। গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে সরকার এবং মালিক-শ্রমিক নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে নৌযান শ্রমিক নেতারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা এবং নৌযান মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত শনিবার রাত ১২টা থেকে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ এই ধর্মঘট শুরু করেছিল। ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, ‘বেতন কাঠামো গঠনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এক মাসের মধ্যে কমিটি শ্রমিকদের বেতন নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করবে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এক হাজার টনের বেশি জাহাজের শ্রমিকরা নভেম্বর থেকে ১২০০ টাকা ভাতা পাবেন এবং এর চেয়ে বেশি পণ্যবাহী জাহাজের শ্রমিকরা ১৫০০ টাকা মাসিক ভাতা পাবেন। এমন আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
বৈঠকে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘মালিক ও শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়েছেন। আমরা তাদের দাবি ও সমস্যাগুলো দেখছি। একমাসের মধ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে কমিটি করেছি। আর এই একমাস শ্রমিকদের অন্তর্বতীকালীন ভাতা প্রদানের জন্য মালিকপক্ষকে বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরমধ্যে মাঝখানের একটি পক্ষ বিশৃঙ্খলা করেছে। কয়েক জায়গায় হামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার ও মামলা হয়েছে। সেটাও আমরা দেখবো। সে মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। তাতে আমরা সহযোগিতা করব বলে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেছি। এছাড়া নৌ-মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শ্রম মন্ত্রণালয় এবং মালিক-শ্রমিকরা মিলে এসব দাবি নিরসনে একটি কমিটি হচ্ছে। এক মাসের মধ্যে সব সমস্যা সমাধান হবে।’
নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবিতে গত শনিবার রাত ১২ টা থেকে সারাদেশে কর্মবিরতি পালন শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা। ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে নৌপথে অচলাবস্থা তৈরি হয়। বন্ধ ছিল সব ধরনের যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান। ঢাকা নদীবন্দরসহ (সদরঘাট) দেশের বিভিন্ন বন্দরে লঞ্চ না পেয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা।
এদিকে গতকাল ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরেও ভোগান্তির রেশ ছিল বিভিন্ন টার্মিনালে। মো. সাইদ নামে সদরঘাট টার্মিনালের এক কর্মী বলেন, ‘যাত্রীরা ভেবেছে সকালে ধর্মঘট ছেড়ে দেব। এই আশায় অনেকে রাতে টার্মিনালে রাত কাটিয়েছেন। সকালে যখন দেখলো লঞ্চ ছাড়ছে না, তখন তারা বিকল্প পথে গন্তব্যে রওনা হন।’
মো. দাউদ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘পায়ের চিকিৎসার জন্য ভোলা থেকে চারদিন আগে ঢাকায় এসেছি মাকে নিয়ে। আজকে যাওয়ার দিন, জানতাম যে ধর্মঘট। ঘাটে এসে দেখি এমন পরিস্থিতি। মা গাড়িতে উঠলে প্রচ- অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই লঞ্চ ছাড়া যাওয়ার উপায় নাই। অপেক্ষা করতে হবে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা পর্যন্ত।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে কী হবে না এই নিয়ে যাত্রীরা সংশয়ে ছিল। তাই অনেক যাত্রী ফিরে গেছে। যারা থেকে গেছেন তাদের বেশিরভাগ বরিশালগামী যাত্রী। তাই লঞ্চ ও যাত্রীর সংখ্যা দুটিই কম ছিল।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল যাত্রী পরিবহন সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ধর্মঘটের কারণে যাত্রীর সংখ্যা কম। শুধুমাত্র লঞ্চ রাজধানীর সদরঘাট থেকে ছেড়ে গেছে। আশা করি কালকে (মঙ্গলবার) যাত্রী সংখ্যা বাড়বে।’
ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে স্বস্তি ফিরেছে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার পরে সন্ধ্যা থেকে টার্মিনালে আসতে শুরু করে বিভিন্ন রুটের লঞ্চ। এ সময় বরিশাল রুটের কীর্তনখোলা, মানামী, সুরভী ও অ্যাডভেঞ্চারসহ আরও কয়েকটি লঞ্চে যাত্রী তুলতে দেখা যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ফুল সুজিপানা (ওলফিয়া আরিজাহ)।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Wolffia Arrhiza
এটি একবীজপত্রী উদ্ভিদ বর্গের Lemnaceae গোত্রের অন্তর্গত অবাধ ভাসমান জলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ। পানিতে চরে বেড়ানো পাখিদের প্রিয়খাদ্য।
দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে অন্যান্য গাছগাছালিকে সহজেই ছাড়িয়ে যায় এবং খরা, ঠান্ডা, খাদ্যাভাব ইত্যাদি পরিবেশগত দুর্যোগেও টিকে থাকতে পারে।
সপুষ্পক হলেও সুজিপানায় দৈবাৎ ফুল ফোটে, বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ-মুকুলে। এগুলো বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আছে গত এক শতক ধরে।
এ ক্ষুদ্রতম ফুল উৎপাদনকারী উদ্ভিদটি থ্যালাস (যে উদ্ভিদ পাতা, শাখা-প্রশাখা এবং মূলে বিন্যস্ত নয়) প্রজাতির উদ্ভিদ।
সবুজ বা হলুদাভ সবুজ বর্ণের এই উদ্ভিদটির কোনো মূল নেই।
উদ্ভিদটির দৈর্ঘ্য ১ থেকে ৫ মিমি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর কোনো স্বতন্ত্র কান্ড ও পাতা নেই। গোটা উদ্ভিদটিই আসলে চ্যাপ্টা ছোট একটি পত্রকল্প কাঠামো বা ফ্রন্ড (frond)। এ ফ্রন্ড নিচে ঝুলন্ত এক বা একাধিক কৈশিক মূলসহ একক বা দলবদ্ধ থাকে।
ফুল সাধারণত উদ্ভিদটির ওপরের স্তরে জন্মে থাকে। এর একটি করে পুংকেশর ও গর্ভকেশর থাকে। এর সম্পূর্ণ পুষ্পবিন্যাসের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১ মিমি হয়ে থাকে। ওলফিয়া শতকরা ৮০ ভাগ প্রোটিনসমৃদ্ধ একটি উদ্ভিদ। আদর্শ পরিবেশে এগুলোর জীবসত্তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিগুণ হয়।
সালাদ হিসেবে খাদ্যযোগ্য ওলফিয়া প্রোটিন, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘বি’ সমৃদ্ধ।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।