
বৃহত্তর পরিসরে লাক্সারি সিটি ডেভেলপমেন্টে প্রবেশ করল রূপায়ণ সিটি। ‘ব্রেক দ্য স্কয়ার ফিট স্টোরি’-এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেটে প্রথম সিটি ব্র্যান্ড ‘রূপায়ণ সিটি’। দেশের ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে প্রবেশের সময়কালে, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রূপায়ণ সিটি তার দ্বিতীয় সিটি নির্মাণ করতে যাচ্ছে। পূর্বাচল এক্সপ্রেস হাইওয়ের পাশেই বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্স সংলগ্ন ‘এন’ ব্লকে নতুন এই আন্তর্জাতিক মানের লাক্সারি সিটি নির্মিত হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে রূপায়ণ সিটি ও নর্থ সাউথ সোসাইটির মধ্যে এ যৌথ উদ্যোগে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন রূপায়ণ গ্রুপের পক্ষে কো-চেয়ারম্যান মাহির আলী খাঁন রাতুল ও নর্থ সাউথ সোসাইটির পক্ষে চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসাইন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
রূপায়ণ সিটির নতুন এ লাক্সারি প্রকল্প সম্পর্কিত তথ্য ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানের সিইও এম মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আধুনিক শহরের পরিকল্পনা মাথায় রেখে আগামী ৫০ বছর-পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক নৈসর্গিক আবাসন তৈরি করেতে যাচ্ছে রূপায়ণ সিটি।’
নর্থ সাউথ সোসাইটির পক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুল হামিদ তার মতামত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা সাদাত হোসেন সেলিম, উপদেষ্টা ও কনসালট্যান্ট অধ্যাপক ড. এম. শামিম জেড বসুনিয়া।
রূপায়ণ গ্রুপ ও নর্থ সাউথ সোসাইটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, শুভানুধ্যায়ী, গণ্যমান্য অতিথিবৃন্দ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক বর্ণাঢ্য ও আড়ম্বরপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এ আয়োজন শেষ হয়। সবশেষে সবাইকে ধন্যবাদ দেন রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল।
স্বাধীনতার পরে দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকেও যতটা উন্নয়নকর্ম কক্সবাজারের মানুষ দেখনি তার কয়েক গুণ বেশি হয়েছে গত ১৪ বছরে। এ সময়ের মধ্যে জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়িত হচ্ছে কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, সাবমেরিন ঘাঁটি, মেডিকেল কলেজ, সাবরাং ইকো ট্যুরিজম, বিকেএসপির মাঠ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ ৭২টি প্রকল্প। এসব প্রকল্প শেষ হলে বদলে যাবে কক্সবাজারের অর্থনীতি। পর্যটনের আসবে আমূল পরিবর্তন। সেই বদলে গতি আসবে দেশের অর্থনীতিতেও। স্থানীয়রা বলছে, স্বাধীনতার বহু বছর পর কক্সবাজারকে ঢেলে সাজাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজারের চেহারা পাল্টে যাবে। কর্মসংস্থান হবে লাখো লোকের।
এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের মধ্যে আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর ঘিরে উৎসবে উন্মুখ কক্সবাজারবাসী। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে বর্ণিল সাজে সেজেছে পর্যটন নগরী। সাড়ে ৫ বছর পর তিনি আসছেন কক্সবাজারে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন।
এদিকে উচ্ছ্বাস থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বৃদ্ধি ও বাজেট বাড়ানোর কারণে অসন্তুষ্টি রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। তারা মনে করেন প্রকল্পগুলোতে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার। এ ছাড়া উন্নয়নের মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে রয়ে গেছে ঘাটতি। কক্সবাজার জেলায় নেই একটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়। মেডিকেল কলেজ থাকলেও নেই কলেজ হাসপাতাল। অপ্রতুল চিকিৎসাব্যবস্থার কারণে কভিড মহামারীতে রোগীদের রাখতে হয়েছে আবাসিক হোটেলে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ৬ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও সিঙ্গেল পাওয়ার মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প কাজও চলছে। সেখানে নির্মিত হচ্ছে এলএনজি ও এলপিজি টার্মিনাল।
১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। বাকখালী নদীর ওপর ৫৯৫ মিটার পিসি বক্স গার্ডার ব্রিজসহ ২.৩০ কিমি অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণকাজ চলছে। নির্মিত হয়েছে ৪.৭৭ কিমি বাঁধ। এ ছাড়া অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১১টি বাস ভবন, ৫৫০ মিটারের ১টি ও ৭০০ মিটারের ৩টি, ৯৫টি স্কুল কাম সাইক্লেন সেন্টার, ১৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ১৮টি ভূমি অফিস নির্মাণ, ৪টি মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল জাদুঘর, ১৯৮টি সর্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন, ২৭টি পুকুর ও খাল উন্নয়ন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরীণ ৫৩ কিমি সড়ক ও ৫০ কিমি সংযোগ সড়ক, ৩টি বহুমুখী সেবাকেন্দ্র, ৪টি ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার, ৯টি ফায়ার সিসেস্টম ওয়ার হাউজ, ৩টি হাটবাজার, ২.৫০ কিমি ড্রেন, ১০ কিমি ওয়াটারবডি রিটেনশন ক্যানেল, ৪ কিমি প্রটেকটিভ ওয়ার্ক ও জেলা ফায়ার স্টেশন ভবন নির্মাণ এবং ১ হাজার ৭২৫ কিমি গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। তা ছাড়া ৭৮৯ কিমি বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক, ১ হাজার ২০০ কিমি এইচবিবি সড়ক নির্মাণ ও ৫২৫ কিমি আরসিসি সড়ক নির্মাণকাজ চলছে।
বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কক্সবাজার জেলার ৮টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হলো টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, কক্সবাজার বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালীর কালারমারছড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালীর ধলঘাটাতে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গা-সোনাদিয়ায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জেলার ৪ হাজার ৭৭২টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ২ হাজার ৮৪৬ ভূমিহীনকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং ৭৯৪টি পরিবারের গৃহ নির্মাণকাজ চলছে।
কক্সবাজার জেলা ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিকে অত্যাধুনিক হাসপাতাল হিসেবে বিনির্মাণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে এই সরকারের আমলে আধুনিক বহির্বিভাগ ভবন, ১০ হাজার লিটার অক্সিজেনপ্ল্যান্ট স্থাপন, ১০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) প্রতিষ্ঠা, ৬৫ বেডের অত্যাধুনিক শেখ রাসেল স্ক্যানো, একটি আধুনিক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ১০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪ বছরে স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি নতুন কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে। ১৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক পুনর্নির্মাণ করা হয়। চকরিয়া এবং পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ২০ শয্যা হতে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩টি পাঁচতলা আবাসন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। উখিয়া এবং টেকনাফের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। তা ছাড়া ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পরিবার পরিকল্পনার জন্য ভবন নির্মিত হচ্ছে।
২০০৯ থেকে ২০২২ সময়কালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ কক্সবাজারের আওতায় ৩৭৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের বহুতল অফিস ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। জেলাসহ প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। বালাদেশ কোস্টগার্ডের ৩টি স্টেশনে প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ লাইনসে ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট দোতলা মহিলা পুলিশ ব্যারাক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া সমুদ্র উপকূলে উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তর, মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে জেলের জীবনমান উন্নয়ন ও জাতীয় উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার লক্ষ্যে কক্সবাজার মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় নানামুখী প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। চকরিয়া উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ (১৮৬.৫ মিটার) বাগগুজরা রাবার ড্যাম, ৫৯.৬৫ কিমি বাঁধ নির্মাণ, মেরামতও শক্তিশালীকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের অভ্যন্তরস্থ পানি নিষ্কাশন, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় লোনা পানির প্রবেশ রোধ ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি কল্পে ৬০.৬০ কিমি বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করা হয়েছে। এসব ছাড়া শাহপরীর দ্বীপে ৩ কিমি প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে কক্সবাজার সরকারি কলেজে ৩ কোটি ৩১ লাখ ৯৯ হাজার ৬২১ টাকা ব্যয়ে একটি পাঁচতলা একাডেমিক ভবন ও ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭৮৪ টাকা ব্যয়ে পাঁচতলাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ, সংস্কার, সম্প্রসারণের জন্য ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ৭হাজার ৮৪৫ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকালে কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের আওতায় ১২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাডার প্রতিস্থাপন, ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপন করা হয়েছ। এ ছাড়া ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আবহাওয়ার তথ্যসেবা ও আগাম সতর্কবাণী পদ্ধতি জোরদারকরণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এ ছাড়া কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরীণ সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন নির্মাণ, আলোকসজ্জাসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে।
বর্তমান সরকারের আমলে কক্সবাজার জেলা খাদ্য বিভাগের আওতায় জেলা অফিসসহ জেলার ৮টি উপজেলার সব এলএসডি অফিসের গুদাম মেরামত ও সংস্কারকাজ করা হয়েছে। কুতুবদিয়া উপজেলায় ৫০০ মে. টন ধারণক্ষমতার একটি গুদাম নির্মাণ করা হয়েছে। টিডিএস এবং অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ এএসআই কোয়ার্টার, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোয়ার্টার, সীমানাপ্রাচীর ও অ্যাপ্রোচ রোডের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনতলাবিশিষ্ট রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের জেলা কার্যালয়।
বিআরডিবির কক্সবাজার কার্যালয়ও জেলায় নানা উন্নয়নকাজ করেছে। রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ৫টি ফায়ার স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া শহরের সার্কিট হাউজ রোডে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল (অরুণোদয়), বইল্ল্যাপাড়ার সিঅ্যান্ডবি কলোনিতে ডিসি কলেজ ও কবিতা সরণিতে শিশু হাসপাতাল নির্মিত হয়েছে। তা ছাড়া কস্তুরীঘাট সংলগ্ন সরকারি জায়গায় ‘পথশিশু নিবাস’-এর নকশা তৈরি ও বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।
আর যা চায় কক্সবাজারবাসী
সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ চলমান থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আরও বেশি কিছু চান জেলাবাসী। একটি পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়, একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারসহ আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র করতে বিশেষ নীতি ঘোষণা, পর্যটনবান্ধব শহররক্ষা বাঁধ, সামুদ্রিক অর্থনীতির স্বচ্ছ ঘোষণা, কক্সবাজার-মহেশখালীর সঙ্গে সেতু সংযোগ, মাতামুহুরী উপজেলা গঠন, লবণ বোর্ড গঠন, কুতুবদিয়া মগনামাতে ফেরিঘাট নির্মাণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যবসায়ীদের কোটা, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু ও রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা চান জেলাবাসী। এই ১০টি দাবির পক্ষে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানাভাবে আলোচনা হচ্ছে জোরালোভাবে।
মধ্যপ্রাচ্যে প্রথমবারের মতো ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর বিশ্বকাপ আয়োজন নিয়ে বিতর্কের শেষ ছিল না। বিতর্ক শুরু হয়েছিল কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার পর থেকেই। রক্ষণশীল দেশটিতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে যাওয়া ফুটবলভক্তদের জন্য সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় অ্যালকোহল-পানীয়তে। এছাড়া বিদেশি দর্শকদের মার্জিত পোশাক পরার পরামর্শ দেয় কাতার কর্র্তৃপক্ষ। দেশটিতে আগত নারী ফুটবলভক্তদের খোলামেলা পোশাক পরা থেকে বিরত থাকতে বলে তারা। এ ক্ষেত্রে কাতারের কর্র্তৃপক্ষ দেশটিতে বিদ্যমান আইনের কথাও বিদেশি ফুটবলভক্তদের মনে করিয়ে দেয়। এসব ঘিরে এবারের আসরের শুরুতে ব্যাপক বিতর্ক থাকলেও কাতারের কিছু পদক্ষেপ যেন শাপে বর হয়ে দেখা দিয়েছে। কঠোর নিরাপত্তা থাকায় গভীর রাতেও বাইরে থাকতে পেরে প্রশান্তি প্রকাশ করছে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কাতারে আসা নারী দর্শকরা। ব্রাজিল থেকে কলম্বিয়া, ইথিওপিয়া থেকে সৌদি আরব, বিশ্বকাপ দেখতে আসা নারী ভক্ত-সমর্থকরা কাতারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট। ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশ, যারা কাতারে বিশ্বকাপ
আয়োজনের ঘোর বিরোধী ছিল, সেসব দেশের নারীরাও নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিশ্বকাপ ভেন্যু ও আশপাশে রাত্রিকালীন নিরাপত্তা নিয়ে কয়েকজন নারী দর্শকের মন্তব্য প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে আসা ফুটবলভক্ত আন্দ্রিয়া বলেন, ‘পশ্চিমা মিডিয়া মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যা বলে এখানে এসে তার চেয়ে ভিন্ন কিছুর অভিজ্ঞতা হলো আমার। এই তো মাঝরাতেও রাস্তা দিয়ে নির্বিঘ্নে হাঁটতে পারছি।’ কাতারে এখন রাতে খেলা দেখে স্টেডিয়াম থেকে বের হতে হতে মাঝরাত হয়ে যায়। এছাড়া দোহার বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দাতেও খেলা দেখানো হয়। এসব জায়গায় বিপুলসংখ্যক নারী খেলা দেখেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কথা শোনা যায়নি। ব্রাজিলের ভক্ত তাতিয়ানা লোপেজ কাতারে এসেছেন দুই বান্ধবীকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আমি কলম্বিয়া থেকে এসেছি। যদিও এখানকার সব জায়গায় পুরুষের আনাগোনা বেশি। তবে সেসব জায়গায় আমরা সৌজন্যমূলক আচরণই পেয়েছি।’
মঞ্চে বসাকে কেন্দ্র করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের সম্মেলনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা পার্কের এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ সমর্থকদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল বেলা ১১টার পর পৌরসভা পার্কে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষকলীগের সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সমীর চন্দ এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. উম্মে কুলসুম স্মৃতিসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর সম্মেলনের মূল মঞ্চে আসেন। এর পরপরই মঞ্চে নেতাদের বসাকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমান সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় সম্মেলনস্থলের চেয়ার ভাঙচুর। উভয়পক্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় সম্মেলনস্থলের পাশে ৫টি ককটেল বিস্ফোরণ এবং কয়েকটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। সম্মেলনস্থল ও আশপাশের এলাকায় উভয়পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। সম্মেলনস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তাদের উপস্থিতিতেই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে বসে ছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় সম্মেলনস্থল ত্যাগ করেন তারা।
সংঘর্ষে দুই পক্ষের কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজ চৌধুরী বলেন, ‘কৃষকলীগের সমাবেশস্থলে বিশৃঙ্খলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ দ্রুত সমাবেশস্থলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
এদিকে কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থল থেকে সার্কিট হাউজে ফিরে আসার পর বিকেলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনসহ স্থানীয় নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠক শেষে অ্যাড. আব্দুস সামাদ বকুলকে সভাপতি ও আল কামাল ইব্রাহিম রতনকে সাধারণ সম্পাদক করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা দখল করবে, রাজপথ দখল করবে। আমি বলতে চাই, আমাদের নেতাকর্মীরা মহানগর, পাড়া-মহল্লা, অলিগলি, জেলা-উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, শহর, গ্রাম সব জায়গায় সতর্ক পাহারায় থাকবে। গতকাল সোমবার নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আপনারা প্রস্তুত হন, খেলা হবে। এই ডিসেম্বরে খেলা হবে, আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, আন্দোলনে খেলা হবে, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে, হাওয়া ভবনের বিরুদ্ধে খেলা হবে, টাকা চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে খেলা হবে।
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই, আমাদের অস্তিত্বের জন্য। আমি কারও অন্ধ সমর্থক নই। কাজ করে যারা আমি তাদের পক্ষে বলি। আমি নোয়াখালীর স্বার্থে, রাজনীতির স্বার্থে আমার ভাই আব্দুল কাদের মির্জা ও একরামুল করিম চৌধুরী এমপিকে ক্ষমা করে দিয়েছি। নোয়াখালীতে আমি কোনো কলহ রাখতে চাই না। আমি কলহমুক্ত আওয়ামী লীগ চাই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন ‘পলাশীর মীরজাফর এখানে খন্দকার মোশতাক, খুনি। ওখানে সেনাপতি ইয়ার লতিফ এখানে সেনাপতি জিয়াউর রহমান। বিশ্বাসঘাতক। জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্টে পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম হত্যাকা-ে ছিলেন মাস্টারমাইন্ড।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বিআরটিসির গাড়ি পুড়িয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট সড়কে শেখ হাসিনার ভিত্তিপ্রস্তর রাতের অন্ধকারে পুড়িয়েছে। তারা আগুন নিয়ে আসবে, লাঠি নিয়ে আসবে। এজন্যই পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করতে চায়। বিশাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ফখরুল বলে খাঁচা।
জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম সেলিমের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
গাড়ি ভাঙচুর ও পোড়ানোর অভিযোগে হওয়া পুরনো আলাদা দুই মামলায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সদস্য ইশরাক হোসেনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এর মধ্যে গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় রিজভীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন। আর গাড়ি পোড়ানোর মামলায় ইশরাকের বিরুদ্ধে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গতকাল সোমবার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে হওয়া মামলায় রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের দেওয়া আদেশের অনুলিপি গতকাল হাতে পান বলে জানান সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার এই মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির ধার্য দিনে আসামি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা আদালতে হাজিরা দেন। তবে ওই দিন রিজভীসহ তিনজন হাজির ছিলেন না। তাদের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন বিচারক।
এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইকবাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই দিন (বৃহস্পতিবার) গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে মৌখিকভাবে আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। আজ (গতকাল) লিখিত আদেশের অনুলিপি পাওয়া গেছে।’
২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাকরাইলে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পল্টন থানায় মামলাটি করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর মির্জা ফখরুল ও রিজভীসহ নয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
অন্যদিকে ২০২০ সালের নভেম্বরে রাজধানীর মতিঝিলে গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে হওয়া মামলায় ইশরাক হোসেনকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এ মামলায় তার জামিন চেয়ে করা আবেদন নাকচ করে গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী পরোয়ানা জারি করেন। ইশরাকের পক্ষে আবেদন করেন আইনজীবী মহিউদ্দিন চৌধুরী। শুনানিতে এই আইনজীবী আদালতকে বলেন, গত রবিবার জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সামনে ইশরাকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ কারণে আসতে পারেননি। শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচের আদেশ দেন।
২০২০ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকা-১৮ আসনের (উত্তরা) উপনির্বাচনের সময় রাজধানীর কয়েকটি জায়গায় বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ওই দিন মতিঝিলে অগ্রণী ব্যাংকের কর্মচারীদের বাসও পোড়ানো হয়। এ ঘটনায় ইশরাকসহ ৪২ জনকে আসামি করে মামলা করে মতিঝিল থানা পুলিশ। গত ৬ এপ্রিল এ মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি। কিছুদিন পর জামিনে মুক্তি পান।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।