
প্রায় এক মাস হয়ে গেল, সন্ধান মিলছে না ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাকিবের। তারা দেশে আছে নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাও নিশ্চিত নয়।
পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের ধরতে সারা দেশে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের বিশেষ অভিযান শেষ হয়েছে। এই সময়ে বিএনপির ২ হাজার ৭০০ নেতাকর্মী, জামায়াতের আমির ও তার ছেলে এবং কিছু মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ বা জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়নি। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিএনপির দাবি, বিশেষ অভিযান মূলত তাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে চালানো হয়েছিল। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা বিএনপির দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, নাশকতা ও জ্বালাও-পোড়াও মামলার আসামিদের ধরা হয়েছে। কাউকে হয়রান করা হয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের বিশেষ অভিযান সফল হয়েছে। সন্ত্রাসী ও বেশ কিছু জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলকে দমন করার জন্য অভিযান চালানো হয়নি। তবে আদালতপাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সন্ধান পাওয়া যাবে।’
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের অবস্থান এবং কোন রুট ধরে তারা পালিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো অন্ধকারে গোয়েন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে সারাক্ষণ মাঠে থাকছে র্যাব-পুলিশের একাধিক ইউনিট। তাদের ধারণা, শিগগির জঙ্গিরা গ্রেপ্তার হবে। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সমন্বয়ক হিসেবে মেহেদী হাসান অমি নামে এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই দফায় ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে অমি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে দাবি তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের। ওই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বরখাস্ত মেজর জিয়ার নাম সামনে এসেছে। জিয়াসহ ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি এখন গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি ইদি আমিন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ঘটনার দিন সে একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। তবে রিমান্ডে তার কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ২০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে শুনানি শেষে প্রিজন ভ্যানে তোলার ঠিক আগমুহূর্তে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি সামির ও শাকিবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগী জঙ্গিরা। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি।
দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সারা দেশে রেড এলার্ট জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট। একপর্যায়ে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সমন্বয়ক হিসেবে অমিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট।
পুলিশ-সূত্র জানায়, রিমান্ডে জঙ্গি অমির কাছ থেকে অর্থ ও আশ্রয়দাতাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, পুলিশ জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া আরও ২০ জনের নামের তালিকা রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। তাদের অনেকের অবস্থান দেশের বাইরে। কাট-আউট পদ্ধতিতে চলা জঙ্গিদের নাম ছাড়া কোনো তথ্যই দিতে পারেনি অমি। তার দেওয়া নামগুলো সাংকেতিক বলে গোয়েন্দা নিশ্চিত হয়েছে। এরপর প্রকৃত অর্থদাতাদের তালিকা পেয়েছে সিটিটিসি। জামিন নিয়ে লাপাত্তা থাকা জঙ্গিরাই এখন নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে। তারা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পলাতক জঙ্গিরা তাদের সহযোগীদের ডেরায় পৌঁছে গেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি যেসব জঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েছে, তাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বেশ কয়েক জন জঙ্গি র্যাবের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করছি। জঙ্গিদের আক্রমণাত্মক হওয়ার সামর্থ্য নেই। র্যাব বহুমুখী কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রম চালাচ্ছে। যখনই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ও অর্থসংগ্রহের চেষ্টা করছে, তখনই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু অভিযান নয়, জঙ্গিবাদবিরোধী জনমত গঠনে র্যাব ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে।
ডিএমপির উপকমিশনার (জনসংযোগ) ফারুক হোসেন বলেন, ‘আইজিপির নির্দেশে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান হয়েছে গত ১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অভিযানে ডিএমপিও অংশগ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে ডিএমপির ৫০টি থানায় অন্তত ১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের ধারণা ছিল, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু তা ভুল ধারণা। বিশেষ অভিযান চালানো হয় ওয়ারেন্টের আসামি, পেশাদার অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তারে ও জঙ্গিবাদ দমনে। মাঝেমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়। এটি রুটিনওয়ার্ক।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দারা। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত তারা ধরা পড়বে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশেষ অভিযানে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশও বিবেচ্য ছিল। এই অভিযান না চালালে দেশে বড় ধরনের নাশকতা ঘটতে পারত। তবে অভিযানে বড় ধরনের অপরাধী গ্রেপ্তার হয়নি। ধরা যায়নি পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকেও। তারা দেশে নাকি বিদেশে, আমাদের কাছে তথ্য নেই।’
লেখার অরিজিনাল হেডলাইন যে এটা ছিল না শুরুতে স্বীকার করে নেওয়া ভালো। বিদেশে বিশ্ব পর্যায়ের যেকোনো টুর্নামেন্ট কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করবেন। টাইম ডিফারেন্সের সঙ্গে যুদ্ধ করে লেখাটা ঠিকমতো ধরানোর জন্য তাদের খেলা চলতে চলতে নানানরকম হেডলাইন মাথায় খেলাতে খেলাতে যেতে হয়। পুরস্কার বিতরণ শেষ হলো। সব শুনলেন। তারপর ধীরেসুস্থে শিরোনাম ভাবলেন সেটা এমবাপ্পেকে পেনাল্টি বক্সে ছেড়ে রাখার মতো মৃত্যুকামী বিলাসিতা।
দুটো ম্যাচে কোনো তুলনাই হয় না। আজকেরটা শতাব্দীসেরা বিশ্বকাপ ফাইনাল। অন্যটা যত বাহারিই হোক, পাঁচ দলের ওয়ানডে ফাইনাল। তবু শারজায় সেই জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কার ম্যাচ রিপোর্টের মতো আজ প্রতিনিয়ত দলেছে। এমবাপ্পের দ্বিতীয় পেনাল্টির পর শেষ হেডলাইন ল্যাপটপে কম্পোজ করে রাখি। জানতাম এটাই ব্যবহার হবে।
বিশ্ব শ্রেষ্ঠ প্রেমকাহিনীর সেই ভাঙা কাচের টুকরো।
প্রথম প্যারাও লেখা হয়ে যায়। জীবনে কিছু কিছু ঘটনা এমনই অদৃষ্টনির্দিষ্ট থাকে যে যতরকম ফুল ফোটানোরই চেষ্টা হোক। যাত্রাপথ যত বাহারি আর ঐশ্বরিক দেখতে লাগুক। ভবিতব্য ঠিক সেই ধূসর, বাঁকাচোরা গলিতে ঢুকিয়ে দিয়ে অন্তহীন রোমান্সের পেটে ছুরি চালিয়ে দেয়। কাহিনীগুলো অমর হয়ে থাকে। কিন্তু শেষ হয় ট্র্যাজিক বিন্দুতে।
লাইলি-মজনু।
রোমিও-জুলিয়েট।
মার্ক আন্টনি-ক্লিওপেট্রা।
টাইটানিকে রোজ অ্যান্ড জ্যাক।
লিওনেল মেসি ও বিশ্বকাপ।
কে জানত যে মারাত্মক ভুল। আধুনিক পৃথিবীর ফুটবল-ঈশ্বরকে প্রাচীন প্রেমকাহিনী বা ক্ল্যাসিকসের নিরিখে মাপতে নেই। ঈশ্বর তার নিজের মতো করে মর্ত্যরে রাজমুকুট ছিনিয়ে নেন। নইলে আজকের অমর ফুটবল রাত বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে আবির্ভূত হয়?
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর গোল্ডেন বল পুরস্কার নিতে গিয়ে মেসির হেঁটে যাওয়া যতদিন বেঁচে থাকব মনে থাকবে। জীবজগতে কোনো মনুষ্য বিশ্বসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে এমন নিস্পন্দ, রক্তশূন্য আর প্রাণহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারেÑ না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আর এদিনকার মেসি? কাপ আর একগাল হাসি নিয়ে এমন নাচতে নাচতে ভিকট্রি স্ট্যান্ডে অলরেডি জড়ো হয়ে যাওয়া তার টিমমেটদের দিকে এগোচ্ছিলেন, যেটা বিশ্বকাপ আর্কাইভে নিশ্চয়ই চিরকালের জন্য ফ্রেমবন্দি থাকল।
শুধু তো বিশ্বকাপ নয়। শুধু তো গোল্ডেন বল নয়। আর একটা সুখ খেলায় তিনি বহুদিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও হজড়িয়ে গিয়েছেন গোটের লড়াই। খুব কম মেম্বার এই ক্লাবে। কারণ গোট হলো গ্রেটেস্ট প্লেয়ার অব অল টাইম। ক্লাব ফুটবলের মুকুটহীন অধীশ্বর হয়েও স্রেফ দেশকে ম্যারাডোনার মতো বিশ্বকাপ দিতে পারেননি বলে কোথায় একটা কর্ণ সিন্ড্রোমে রেখে দেওয়া হতো মেসিকে। লুসাইল স্টেডিয়াম তাকে আগের কয়েকটা কঠিন ম্যাচ জিতিয়ে লাকি মাঠের সংস্কারে ঢুকছিল। রবিবার রাতে তাকে সুতপুত্র থেকে বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুনে রূপান্তরিত করে গেল। ফুটবল ইতিহাসের এমন মোহিনী রাত কবে এসেছে যে এক ৩৫ বছরের আপাত বৃদ্ধ ফুটবলার চূড়ান্ত প্রতিকূলতা এবং বিপক্ষ যৌবনের উদ্দাম দাপাদাপি সামলে স্থিতধী এবং জয়যুক্ত থেকে সিংহাসনে বসলেন।
সকালে স্যার জিওফ হার্স্টের ইন্টারভিউ দেখে অবাক লাগল। হার্স্টকে গত ২০ বছর ধরে ইন্টারভিউয়ের ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমনিতে সেই কোন প্রাচীনকালে তিনি বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকে। ১৯৬৬-তে যে খেলত তার ইন্টারভিউ পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়া উচিত। কিন্তু হার্স্ট এখনো এমন ঠাটবাটে থাকেন যে ম্যানেজার অতিক্রম করে পৌঁছনোই যায় না। স্বদেশীয় কাগজে এদিন তার সাক্ষাৎকারের বক্তব্য হলো এই ৮১ বছর পৌঁছে তার প্রার্থনা জীবদ্দশায় কোনো কাপ ফাইনালে যেন হ্যাটট্রিক না হয়। থলে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড অক্ষত রেখে তিনি ওপারে যেতে পারেন।
কে জানত সেই প্রার্থনাকে হাস্যকরতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে তিনি কিলিয়ান এমবাপ্পে করবেন চার গোল আর মেসি তিন। হার্স্টের একটা গোল নিয়ে আজও বিতর্ক থেকে গিয়েছে যে বল ঠিকমতো গোললাইন ক্রস করেছিল কি না? ম্যারাডোনা তো ঠিকই বলতেন যে ইংরেজরা হ্যান্ড অব গড গোল নিয়ে এত কথা লেখে। ওদের নিজেদের চুরি নিয়ে তো টুঁ-শব্দটি করে না। আজকের নায়ক ও বিজিতকে নিয়ে ভবিষ্যৎ তেমন কোনো প্রশ্ন তোলার সাহস পাবে না।
ইংল্যান্ড মিডিয়া এত নেগেটিভ সব কথা লিখেছিল কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে। ঠিক যেমন পেছনে লেগেছিল ব্রাজিলের। কাতারের রাজা শুধু পুরস্কারই ফিফা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাসিমুখে তুলে দিলেন না, ফাইনাল ম্যাচের মহিমায় আরও বেশি করে আধুনিক সময়ের শ্রেষ্ঠ বিশ্বকাপ সংগঠন হিসেবে আলোকিত হয়ে থাকলেন। শতাব্দীসেরা ফাইনাল তো নিঃসন্দেহে। তর্কযোগ্যভাবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ম্যাচ।
কোনো জ্যোতিষী, কোনো বেটিং বাজে, কোনো বিশেষজ্ঞের কোনোরকম পূর্বাভাস মেলেনি। কেউ জানত গ্রিজমানকে তুলে নিতে হবে কোচকে? কেউ জানত জিরুÑ ফ্রান্সের আর এক সোনালি রেখা তাকে যে তুলতে হবে? কেউ জানত যে ডি মারিয়া সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি। চোটের জন্য একইভাবে মিস করেছেন ২০১৪ ফাইনাল। তিনি নেমে গোল শুধু করবেন না। আর একটা গোলের পেছনে থাকে পেনাল্টি আদায় হবে তার জন্য? কেউ ভেবেছিল আলভারেজকেও পুরো সময় মাঠে রাখা হবে না? কেউ জানত এমবাপ্পে ফাস্ট হাফে চূড়ান্ত নিরাশ করে দর্শকসদৃশ উপস্থিতি রাখবেন? কেউ জানত সেই এমবাপ্পেই দ্বিতীয়ার্ধে এমন তোড়ফোড় শুরু করবেন যে আর্জেন্টিনা রক্ষণ বাদ দিচ্ছি। মেসিরও সাময়িক গ্রহণ হয়ে যাবে। মনে হতে থাকবে যৌবনেরই ঝড় উঠেছে আকাশ পাতালে।
তার আগে আর্জেন্টিনা যেভাবে শুরু করেছিল তাতে মনে হচ্ছিল একটা টিম তো শুধু খেলছে। আর প্রথমার্ধেই ২-০ এগিয়ে যাওয়া তারা নিশ্চিন্তে জয়ী দেশের মেডেলগুলো গলায় পরবে। সুনীল গাঙ্গুলি আর ভালোভাবে বঙ্গজ পাঠককে বুঝিয়েছেন যে ফ্রান্স হলো ছবির দেশ। কবিতার দেশ। কিন্তু তখনকার মতো কবিতা, ছবি আর গান তো আর্জেন্টিনীয়দের পায়ে। মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে। মেসি অন্য ম্যাচে খেলায় ঢুকেছেন একটু দেরিতে। সবিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আড়াই মিনিট থেকে তিনি ধ্বংসাত্মক। যেমন সেরা চ্যাম্পিয়নের নার্ভ তেমনি তাগড়া শরীর। বিপক্ষের চোরাগোপ্তা হাত চালানোয় কানে যে প্রচ- চোট পেলেন সেটা সামলানোর জন্য বিশ্বসেরা মনও লাগে।
কী করেননি মেসি! দুটো পেনাল্টিসহ তিনটে গোল। দুটো ফাইনাল পাস। দুটো গোলে তীব্রতম শট। অবিরাম দুদিকে বল বাড়িয়ে যাওয়া। এমনকি বিপক্ষ আক্রমণ বাঁচাতে হেড করে কর্নার করা। সবাই জানত আধুনিক ফুটবল ঈশ্বরের একটা পা। বাঁ পা। আজ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল তো ডান পায়ে করলেন। ঈশ্বর যেন এই জবাবটাও চুকিয়ে দেওয়ার প্রতীক্ষারত ছিলেন।
তবু এত কিছুর পরও তিনি আমার পুরনো হেডলাইন অনুযায়ী ব্যর্থ অমর প্রেম কাহিনী হয়ে থাকতেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সাহায্য না পেলে। কদিন আগে মিডিয়া সেন্টারে আর্জেন্টিনার দুজন সাংবাদিক বলছিলেন, এমিলিয়ানো থাকলে নাকি ২০১৪-এর ফাইনাল তারা হারতেন না। মারাকানার সেই গোলটা মিডিয়া গ্যালারির দিকে হয়েছিল। কাছ থেকে দেখেছিলাম বলে মৃদু প্রতিবাদ করি যে মারিও গোতজে চেস্টট্র্যাপ করে যেভাবে কাছ থেকে ঠেলেছিলেন তাতে কিপারের কিছু করার ছিল না। সকালে ইউটিউবে জার্মানির গোলটা আবার দেখে এবং অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে এমিলিয়ানোর এগিয়ে এসে অব্যর্থ গোল বাঁচানো দেখে মনে হচ্ছে এড়ে তর্ক করছিলাম।
টাইব্রেকারে দুরন্ত বাঁচানো বাদ দিচ্ছি। শেষ মিনিটে তার এগিয়ে এসে অব্যর্থ গোল বাঁচানো না ঘটলে তো খেলার শেষে এমবাপ্পেকে এত ম্রিয়মাণ লাগার কথা নয়। তখনই বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আবার খেতাব পেয়ে যায় ৪-৩। গোল্ডেন বল নিয়ে মেসির নিস্পন্দ হাঁটা আবার প্রত্যক্ষ করতে হয় বিশ্বকে। আমার কাছে ফাইনালের ওটাই টার্নিং পয়েন্ট।
আর বিশ্ববাণিজ্যের বাজারে বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকা ফুটবলের টার্নিং পয়েন্টÑ আজকের ফাইনালের মহাজাগতিক মান। নাহ, এই গ্রহে যতদিন একটি লোকও ফুটবলে কেউ লাথি মারবে, ততদিন জীবিত থাকবে মেসিয়ানার জ্যোৎস্নারাত!
৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি দেশের তৃতীয় বিশ্বকাপ সাফল্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকেই। লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার জয়ে দুই গোল করেছেন। একটি নির্ধারিত সময়ে, অন্যটি অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। টুর্নামেন্টে তার গোল সাতটি। সঙ্গে অ্যাসিস্ট তিনটি। তাতে বিশ্বকাপের সঙ্গে গোল্ডেন বলটা মেসির হাতেই মানায়। হলোও তাই। বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন মেসি।
১৯৮২ সাল থেকে অফিশিয়ালভাবে দেওয়া হচ্ছে গোল্ডেন বল পুরস্কার। মেসিই এখন পর্যন্ত একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পুরস্কারটি দ্বিতীয়বার পেলেন।
এর আগে ২০১৪ বিশ্বকাপেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন এ খুদে জাদুকর। তবে সেবার তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল রানার্সআপ হয়ে। এবার গোল্ডেন বল জিতে যেন প্রাপ্তির পূর্ণতা পেলেন। কাতার বিশ্বকাপ দুই হাত ভরে দিয়েছে মেসিকে। বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে করেছেন বেশ কিছু রেকর্ডও। কাতার আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্তÑ অর্থাৎ শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল। সব রাউন্ডেই মেসি পেয়েছেন গোলের দেখা। সাত ম্যাচের ছয়টিতেই করেছেন গোল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এ রেকর্ড শুধু মেসিরই।
বিশ্বকাপে মেসির মোট গোলসংখ্যা ১৩টি। যা মেসিকে তুলেছে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় চার নম্বরে। ১৩টি করে গোল মেসি এবং ফ্রান্সের জিস্ত ফন্তেইনের। ১৯৫৮ সালে এক আসরেই ১৩ গোল করেছিলেন ফন্তেইন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (২৬টি) খেলার রেকর্ডও এলএমটেনের। ২৫ ম্যাচ খেলেছেন জার্মানির লোথার ম্যাথিউস। চারটি বিশ্বকাপ খেলার পথে ইতালির পাওলো মালদিনি ২ হাজার ২১৭ মিনিট খেলেছিলেন। মেসি খেললেন ২ হাজার ৩১৫ মিনিট। বিশ্বকাপে মেসির গোলে অবদান অর্থাৎ (গোল ও অ্যাসিস্ট) সংখ্যা ২১। গোল করেছেন ১৩টি, অ্যাসিস্ট ৮টি। ফাইনালের দুই গোলে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৯৮-তে। গোল্ডেন বল পুরস্কার হাতে নিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমু খেয়েছেন মেসি।
রাজধানীর চকবাজারের ইমামগঞ্জ লেনে হার্ডওয়্যার মার্কেটের দোকানমালিক মো. দেলোয়ার হোসেন। ২২ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আশা এন্টারপ্রাইজ ও আফসার এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি হার্ডওয়্যারের দোকান। দোকানের ওপর ও ভেতরে ছিল দুটি গুদাম। গত শনিবার রাতে হার্ডওয়্যার মার্কেটের আগুনে তার দোকান ও গুদাম যখন জ¦লছিল, তখন দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না দেলোয়ার হোসেনের। আগুনে পুড়ে গেছে তার স্বপ্নগুলোও।
গতকাল রবিবার দুপুরে ইমামগঞ্জ লেনের হার্ডওয়্যার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া দোকানের সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন দেলোয়ার। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে মার্কেটে দোকানদারি করছি। একসময় অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করলেও বছর পাঁচেক আগে নিজেই দুটি পজিশন নিয়ে দোকান ও গুদাম দিয়েছি। সেখানে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল, যার সবই নষ্ট হয়ে গেছে।’
গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হার্ডওয়্যার মার্কেটটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১টা ৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুনে একটি মন্দির ও মার্কেটের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
দোকানমালিকদের অভিযোগ, আগুন লাগার অন্তত ৩০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসেছে। এ কারণে দোকান ও গুদামগুলো পুড়ে গেছে। মার্কেটটির কোনো দোকানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন তারা। মোট কতটি দোকান ও গুদাম পুড়েছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুন নেভাতে তাদের বেগ পেতে হয়েছে। রাস্তা সরু হওয়ায় ঢুকতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটার দূরে গাড়ি রেখেই কাজ করেছেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে সাত মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে একে একে ১০টি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে। পানির স্বল্পতার কারণে আমাদের পানিবাহী গাড়ি নিতে হয়। এ ছাড়া পাশের নদী ও অন্যান্য ভবনের রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। আগুনের সূত্রাপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।’
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সরু রাস্তার দুই পাশে হার্ডওয়্যারের সারি সারি দোকান ও গুদামঘর। টিনের দোকান ও গুদাম পুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। মার্কেটের ছয়টি টিনের বড় দোকান একেবারে পুড়ে গেছে। এ ছাড়া আশপাশের ৬টি বহুতল ভবনে থাকা দুই শতাধিক দোকান ও গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পোড়া মালামালের বেশির ভাগই ছিল তার, তারকাঁটা, লোহা, সুতি, ঝাড়ু, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য। মার্কেটের আশপাশের যে ৬টি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার বেশির ভাগই গুদাম। এসব ভবনের একটিতে কয়েকতলায় লোকজনও থাকে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাসা ছেড়ে বের হয়ে আসায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় লোকজন জানান, অন্তত ১ হাজার দোকান রয়েছে ইমামগঞ্জ লেনে। আগুন লাগার পর সবাই আতঙ্কে ছিলেন। তবে আগুন খুব একটা ছড়াতে না পারায় বেশির ভাগ দোকান অক্ষত আছে।
তারা জানান, চকবাজারের ইমামগঞ্জ লেনের মার্কেটে আগুনের ঘটনা নতুন নয়। বছর তিনেক আগে নুরানী সেন্টারের দোকানেও আগুন লাগে। তখনো কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেসার্স শওকত অ্যান্ড ব্রাদার্সের ছয়তলা ভবনের পুরোটা বিভিন্ন পণ্যের গুদাম। সেখানে ৫০টির বেশি ছোট ছোট গুদামঘর রয়েছে। আগুনে গুদামের বেশির ভাগ মালামাল পুড়ে গেছে। গতকাল বেলা ২টার দিকেও সেই ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, মেসার্স শওকত অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের ভবনটির সব তলায় প্লাস্টিক পণ্যের গুদাম।
পাশের চারতলা ভবনের পুরোটাই অগ্রণী ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। আগুনে ব্যাংকের মালামাল পুড়ে গেছে। ভবনটিতে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তা প্রহরী বাধা দেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভেতর মূল্যবান জিনিসপত্র আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসেছেন। বাইরের লোকের প্রবেশ নিষেধ।
পাশের সাততলা আরেকটি ভবনের (খান প্লাজা) বেশির ভাগজুড়েই মানুষের বসবাস। ভবনটির নিচতলায় হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে।
হাবিব অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি দোকানের কর্মচারী জিহাদুল মিজান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগুনের তাপে তাদের দোকানের অনেক মালামাল গলে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ভবনটির পাশের আরেকটি ভবনের নিচতলায় বিসমিল্লাহ স্টোরের কর্মচারী জাকির হোসেন জানান, তার দোকানে কোটি টাকার মালামাল আছে। অল্পের জন্য পোড়েনি। পুড়ে যাওয়া দোকান ও গুদামগুলোর প্রতিটিতেই কোটি টাকার ওপরে মালামাল ছিল বলে তিনি জানান।
শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ার-২০২২। আবাসন ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় এ আয়োজন আগামী ২১ ডিসেম্বর বুধবার থেকে ২৫ ডিসেম্বর রবিবার পর্যন্ত চলবে। বুধবার সকাল ১১টা থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম-এ ফেয়ারের উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। মেলার প্রথম দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা দুপুর ২টা থেকে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। এ বছর মেলায় ১৮০টি স্টল অংশ নিচ্ছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রিহ্যাব ফেয়ার ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব নেতারা এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (অর্থ) ও মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সোহেল রানা লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের পরিচালক এবং প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. সুলতান মাহমুদ, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম (ইসলাম) প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব-এর সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ড্যাপের কারণে আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবার জন্য মানসম্মত আবাসন আরও কঠিন হয়ে যাবে। ড্যাপ নিয়ে এক বছর আগে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আমরা যে শঙ্কার কথা বলেছিলাম সেই শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নতুন ড্যাপের ঘোষিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) হ্রাসের কারণে মূল ঢাকায় বেশিরভাগ ভবন হবে ৪ থেকে ৫ তলা। ফলে আগামীতে আবাসন সংকট আরও প্রকট হবে। উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বী হবে বাড়িভাড়া। কারণ ফ্ল্যাটের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর বিগত প্রায় ৪ মাসে আমাদের রিহ্যাব সদস্যরা জমির মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তি বা সমঝোতায় যেতে পারেননি। কেউ নতুন করে প্ল্যান পাস করেননি। পুরাতন প্রকল্পগুলো নিয়েই অনেকে কাজ করছেন। ফলে আগামীতে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে এবং দাম বাড়বে। আমরা রাজউকসহ ড্যাপের আহ্বায়ক এলজিআরডিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা তুলে ধরে ফার-এর পরিমাণ সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করবেন। আমাদের প্রত্যাশা নতুন ড্যাপে ফার-এর পরিমাণ সংশোধন করা হবে।
কামাল মাহমুদ বলেন, রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে সুন্দর সুন্দর নান্দনিক ভবন তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের বেশ কয়েকজন রিহ্যাব সদস্য অল্প জায়গায় কনডোমোনিয়াম প্রজেক্ট তৈরি করেছেন। অনেকের এই কনডোমোনিয়াম প্রজেক্টের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের।
আয়োজকরা জানান, এবারের ফেয়ারে ১৮০টি স্টল থাকছে। এ বছর ৩টা ডায়মন্ড প্যাভিলিয়ন, ৭টি গোল্ড স্পন্সর, ২২টি কো-স্পন্সর, ১৬টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে রিহ্যাব। বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় এ বছরের মেলাতেও দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় ৫ বার প্রবেশ করতে পারবেন। এন্ট্রি টিকিটের প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ দুস্থদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে। এন্ট্রি টিকিটের র্যাফেল ড্র’তে থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।
নোট : ছবি যেতে পারে
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীক প্রার্থীর নারীসহ চার সমর্থককে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার দুপুরে হামলার শিকার অনুকূল চন্দ্র রায় বাদী হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলুকে প্রধান আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদিবাড়ী এলাকায় হামলার ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে জানানো হয়েছে।
হামলায় আহতরা হলেন সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদিবাড়ী এলাকার অনুকূল চন্দ্র রায় (২৭), মহেশ চন্দ্র (৩৫), তার মা ফুলতি রানী (৫৫) ও বাবলু (৩৫)। তারা হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে তারা হলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরল আমিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলু (৫৫), তার ছেলে সিয়াম (২৮), নজরুল ইসলাম (৪৫), মোস্তফা (৩৫), কেশরুজ্জামান বাবু (৪৫), মহিদুল ইসলাম জুয়েল (২৮) ও মিন্টু (৪০)।
চিকিৎসাধীন অনুকূল চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, ২৯ ডিসেম্বর সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরল আমিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলু ও তার ছেলে সিয়ামসহ অন্য অভিযুক্তরা শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে অনুকূল চন্দ্রের বাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করতে থাকেন। এ সময় অনুকূল বাড়ির সামনে গেলে নৌকা প্রার্থীর লোকজন তাকে আনারস প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলামের পক্ষে কাজ করতে নিষেধ করেন ও নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে বলেন। এতে রাজি না হলে তার ওপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে। অনুকূলের চিৎকার শুনে মহেশ, ফুলতি রানী ও বাবুল বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। পরে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আহত মহেশ চন্দ্র বলেন, ‘অনুকূলের চিৎকার শুনে আমরা এগিয়ে গেলে নৌকা প্রার্থীর লোকজন আমাদেরও মারধর শুরু করে। আমরা কাকে সমর্থন করব সেটা একান্ত নিজের ব্যাপার। কাউকে জোর-জুলুম করে কিছু করা যায় না। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে নুর মোহাম্মদ বাবলু বলেন, ‘আমি অনুকূলকে চিনি না। ওনার সঙ্গে আমার কোনো দিন কথাই হয়নি। মারধর করতে যাব কেন? এটা মিথ্যা কথা।’
এ বিষয়ে সিন্দুর্না ইউনিয়নের উপনির্বাচনে আনারস প্রতীকের (স্বতন্ত্র) প্রার্থী অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী নুরল আমিনের ভাই বাবলু ও সিয়ামসহ কয়েকজন আমার লোকজনকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে বলে। তারা রাজি না হওয়ায় তাদের বেধড়ক পেটানো হয়। তারা থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরল আমিনের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরে মেডিকেল অফিসার ডা. আল আকসা জানান, আহত চারজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
হাতীবান্ধা থানার ওসি শাহ আলম জানান, হামলার ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, ‘কেউ মারধরের শিকার হলে তারা আইনের আশ্রয় নেবেন। পুলিশ তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলে তিনি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। যদি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকে তাহলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে আরকান্দি গ্রাম পর্যন্ত এক কিলোমিটার যমুনা নদীর ভাঙ্গণ এলাকার পাশ থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ কারণে ভাঙ্গণ এলাকায় হাজার হাজার বালুর বস্তা ডাম্পিং করেও ভাঙ্গণরোধ করা যাচ্ছে না। ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা এ বাবদ খরচ হলেও কোনো কাজেই আসছে না বালুর বস্তা ডাম্পিং করে।
অপরদিকে অব্যাহত ভাঙ্গণের তাণ্ডবে প্রতিদিনই নদীগর্ভে বাড়িঘর বিলিন হয়ে যাওয়ায় এ এলাকার মানুষ গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে বাস করছে ও মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণগ্রামের নাজমা খাতুন আব্দুল কাদের, ইয়াহিয়া, জহুরুল ইসলাম, এমদাদুল হক মিলন, আরকান্দি গ্রামের মেহেদী হাসান, হালিমা খাতুন ও রেমান সরকার বলেন, গত ২ সপ্তাহ ধরে এখানে ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। এই ভাঙ্গণের তাণ্ডবে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ও বহু গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ ভাঙ্গণের তাণ্ডবে গৃহহারা হয়ে শত শত মানুষ অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে আবার খোলাস্থানে ছাপড়া তুলে বাস করছে ও মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তারা আরও বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ভাঙ্গণ এলাকায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে কাজ করায় তা কোনো কাজেই আসছে না। যেসব স্থানে বস্তা ফেলা হচ্ছে দুই দিন না যেতেই সেখানে আবার ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ভাঙ্গণ এলাকার ৫০ থেকে ১০০ গজ দূরে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে বস্তা ফেলার কয়েকদিন না যেতেই ওই এলাকায় আবারও ভাঙ্গণ দেখা দিচ্ছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হলেও ভাঙ্গণ রোধ হচ্ছে না।
তারা আরও বলেন, শুষ্ক মৌসুমে বস্তা ফেলার কাজ না করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়ে যখন ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে, তখন ঠিকাদারের লোকজন ধীরগতিতে ২/৪ নৌকা বস্তা ফেলে চলে যায়। ২-৩ দিন না যেতেই তা আবার ভেঙ্গে যমুনায় বিলিন হয়ে যায়। ফলে এ বস্তা ফেলা কোনো কাজেই আসছে না। অপরদিকে ঠিকাদারকে বালু সরবরাহের নামে এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রতিদিন ১৫/২০ ট্রলারে করে বালু অন্যত্র বিক্রি করছে। ফলে এ ভাঙ্গণের তাণ্ডব আরও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
এ বিষয়ে বালু সরবরাহকারী খোরশেদ আলম, জয়নাল সরকার ও ফজলু ব্যাপারী এলাকাবাসীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রি করা হচ্ছে না। ঠিকাদারের লোকজন বালু উত্তোলন করে তা বস্তায় ভরে ভাঙ্গণ স্থানে ফেলছে। আমরা শুধু তাদের কাজে সহযোগিতা করছি। একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে আমাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার করছে।
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদার আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, নদীভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বস্তা ফেলার কাজ শুরু করেছে। অচিরেই এ সমস্যা আর থাকবে না।
ভাঙ্গণ এলাকার অদূরে যমুনা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে অন্যত্র বিক্রির বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) লিয়াকত সালমান বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে খুকনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল করা হলে ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে হাইড্রোলিক পাওয়ার স্টেশনে তীব্র পানির সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনাবৃষ্টি এবং তীব্র তাপদাহে কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এই সংকট দেখা দিয়েছে। ৫টি ইউনিটের মধ্যে কোনরকমে মাত্র ১টি ইউনিট সচল রেখে সর্বনিম্ন ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৬ জুন) সকালে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আবদুজ্জাহের জানান, হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে।
তিনি জানান, পানির অভাবে কেন্দ্রের সব ক’টি ইউনিট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ঠেকেছে। তিনি আরও জানান, কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে ১ নম্বর ইউনিটটি চালু রাখা হয়েছে। এই ইউনিট হতে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। অথচ এই কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল থাকলে প্রায় ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। সেখানে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট।
এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, বছরের এই সময়ে কখনই পানি এতো নিচে থাকে না। এ বছর এখনো বৃষ্টিপাত শুরু না হওয়ায় খুবই বিপাকে পড়তে হয়েছে আমাদের। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মাত্র একটি ইউনিট চালু আছে। আমরাও বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দায়িত্বরত প্রকৌশলী জানান, গত মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ ৭৩ দশমিক ৬২ ফুট (মিন সি লেভেল) ছিল। রুলকার্ভ অনুযায়ী এসময় হ্রদে পানি থাকার কথা ৭৮ দশমিক ২০ ফুট এমএসএল (মিন সি লেভেল)। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর বৃষ্টিপাত না হলে এই সংকট হতে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জানান প্রকৌশলীরা।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, অনাবৃষ্টি, বন উজার হওয়া, কাপ্তাই হ্রদে নাব্যতা সংকটের কারণে পানি তলানিতে চলে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে এমন বিপর্যয় ঘটেছে। সঙ্গতকারণে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পানি কমে যাওয়ার ফলে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপজেলার সাথে নৌপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কাপ্তাই হ্রদের পাশে বসবাসকারী নুরুল ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টিপাত না হলে হ্রদে পানি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত সময়ে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদের গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনি এই সমস্যা থেকে কিছুটা সমাধান পাওয়া যাবে।
বিলাইছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী ইসমাঈল হোসেন জানান, বিলাইছড়িতে নৌপথ বন্ধ মানেই জীবন ও জীবিকার দুর্বিষহ অবস্থা। আমরা বিলাইছড়িবাসীই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছি হ্রদের পানি কমে যাওয়ায়। বৃষ্টি হতে যত দেরি হবে আমাদের কষ্ট তত বেশি দীর্ঘায়িত হবে।
তিনি বলেন, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় বাজারের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। বড় বোটতো আসতেই পারছে না, ছোট ছোট বোটে পণ্য পরিবহনে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পণ্যও আনা যাচ্ছে না। আবার অনেক দূর থেকে পণ্য বাজারে তুলতে শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক বাজারও এখন ঠিকমতো জমছে না। কারণ দূর থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। এখন বৃষ্টি হওয়া ছাড়া পানি বাড়ার তো আর কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।