
রাজধানীর চকবাজারের ইমামগঞ্জ লেনে হার্ডওয়্যার মার্কেটের দোকানমালিক মো. দেলোয়ার হোসেন। ২২ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আশা এন্টারপ্রাইজ ও আফসার এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি হার্ডওয়্যারের দোকান। দোকানের ওপর ও ভেতরে ছিল দুটি গুদাম। গত শনিবার রাতে হার্ডওয়্যার মার্কেটের আগুনে তার দোকান ও গুদাম যখন জ¦লছিল, তখন দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না দেলোয়ার হোসেনের। আগুনে পুড়ে গেছে তার স্বপ্নগুলোও।
গতকাল রবিবার দুপুরে ইমামগঞ্জ লেনের হার্ডওয়্যার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া দোকানের সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন দেলোয়ার। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে মার্কেটে দোকানদারি করছি। একসময় অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করলেও বছর পাঁচেক আগে নিজেই দুটি পজিশন নিয়ে দোকান ও গুদাম দিয়েছি। সেখানে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল, যার সবই নষ্ট হয়ে গেছে।’
গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হার্ডওয়্যার মার্কেটটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১টা ৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুনে একটি মন্দির ও মার্কেটের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
দোকানমালিকদের অভিযোগ, আগুন লাগার অন্তত ৩০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসেছে। এ কারণে দোকান ও গুদামগুলো পুড়ে গেছে। মার্কেটটির কোনো দোকানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন তারা। মোট কতটি দোকান ও গুদাম পুড়েছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুন নেভাতে তাদের বেগ পেতে হয়েছে। রাস্তা সরু হওয়ায় ঢুকতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটার দূরে গাড়ি রেখেই কাজ করেছেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে সাত মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে একে একে ১০টি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে। পানির স্বল্পতার কারণে আমাদের পানিবাহী গাড়ি নিতে হয়। এ ছাড়া পাশের নদী ও অন্যান্য ভবনের রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। আগুনের সূত্রাপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।’
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সরু রাস্তার দুই পাশে হার্ডওয়্যারের সারি সারি দোকান ও গুদামঘর। টিনের দোকান ও গুদাম পুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। মার্কেটের ছয়টি টিনের বড় দোকান একেবারে পুড়ে গেছে। এ ছাড়া আশপাশের ৬টি বহুতল ভবনে থাকা দুই শতাধিক দোকান ও গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পোড়া মালামালের বেশির ভাগই ছিল তার, তারকাঁটা, লোহা, সুতি, ঝাড়ু, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য। মার্কেটের আশপাশের যে ৬টি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার বেশির ভাগই গুদাম। এসব ভবনের একটিতে কয়েকতলায় লোকজনও থাকে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাসা ছেড়ে বের হয়ে আসায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় লোকজন জানান, অন্তত ১ হাজার দোকান রয়েছে ইমামগঞ্জ লেনে। আগুন লাগার পর সবাই আতঙ্কে ছিলেন। তবে আগুন খুব একটা ছড়াতে না পারায় বেশির ভাগ দোকান অক্ষত আছে।
তারা জানান, চকবাজারের ইমামগঞ্জ লেনের মার্কেটে আগুনের ঘটনা নতুন নয়। বছর তিনেক আগে নুরানী সেন্টারের দোকানেও আগুন লাগে। তখনো কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেসার্স শওকত অ্যান্ড ব্রাদার্সের ছয়তলা ভবনের পুরোটা বিভিন্ন পণ্যের গুদাম। সেখানে ৫০টির বেশি ছোট ছোট গুদামঘর রয়েছে। আগুনে গুদামের বেশির ভাগ মালামাল পুড়ে গেছে। গতকাল বেলা ২টার দিকেও সেই ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, মেসার্স শওকত অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের ভবনটির সব তলায় প্লাস্টিক পণ্যের গুদাম।
পাশের চারতলা ভবনের পুরোটাই অগ্রণী ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। আগুনে ব্যাংকের মালামাল পুড়ে গেছে। ভবনটিতে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তা প্রহরী বাধা দেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভেতর মূল্যবান জিনিসপত্র আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসেছেন। বাইরের লোকের প্রবেশ নিষেধ।
পাশের সাততলা আরেকটি ভবনের (খান প্লাজা) বেশির ভাগজুড়েই মানুষের বসবাস। ভবনটির নিচতলায় হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে।
হাবিব অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি দোকানের কর্মচারী জিহাদুল মিজান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগুনের তাপে তাদের দোকানের অনেক মালামাল গলে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ভবনটির পাশের আরেকটি ভবনের নিচতলায় বিসমিল্লাহ স্টোরের কর্মচারী জাকির হোসেন জানান, তার দোকানে কোটি টাকার মালামাল আছে। অল্পের জন্য পোড়েনি। পুড়ে যাওয়া দোকান ও গুদামগুলোর প্রতিটিতেই কোটি টাকার ওপরে মালামাল ছিল বলে তিনি জানান।
লেখার অরিজিনাল হেডলাইন যে এটা ছিল না শুরুতে স্বীকার করে নেওয়া ভালো। বিদেশে বিশ্ব পর্যায়ের যেকোনো টুর্নামেন্ট কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করবেন। টাইম ডিফারেন্সের সঙ্গে যুদ্ধ করে লেখাটা ঠিকমতো ধরানোর জন্য তাদের খেলা চলতে চলতে নানানরকম হেডলাইন মাথায় খেলাতে খেলাতে যেতে হয়। পুরস্কার বিতরণ শেষ হলো। সব শুনলেন। তারপর ধীরেসুস্থে শিরোনাম ভাবলেন সেটা এমবাপ্পেকে পেনাল্টি বক্সে ছেড়ে রাখার মতো মৃত্যুকামী বিলাসিতা।
দুটো ম্যাচে কোনো তুলনাই হয় না। আজকেরটা শতাব্দীসেরা বিশ্বকাপ ফাইনাল। অন্যটা যত বাহারিই হোক, পাঁচ দলের ওয়ানডে ফাইনাল। তবু শারজায় সেই জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কার ম্যাচ রিপোর্টের মতো আজ প্রতিনিয়ত দলেছে। এমবাপ্পের দ্বিতীয় পেনাল্টির পর শেষ হেডলাইন ল্যাপটপে কম্পোজ করে রাখি। জানতাম এটাই ব্যবহার হবে।
বিশ্ব শ্রেষ্ঠ প্রেমকাহিনীর সেই ভাঙা কাচের টুকরো।
প্রথম প্যারাও লেখা হয়ে যায়। জীবনে কিছু কিছু ঘটনা এমনই অদৃষ্টনির্দিষ্ট থাকে যে যতরকম ফুল ফোটানোরই চেষ্টা হোক। যাত্রাপথ যত বাহারি আর ঐশ্বরিক দেখতে লাগুক। ভবিতব্য ঠিক সেই ধূসর, বাঁকাচোরা গলিতে ঢুকিয়ে দিয়ে অন্তহীন রোমান্সের পেটে ছুরি চালিয়ে দেয়। কাহিনীগুলো অমর হয়ে থাকে। কিন্তু শেষ হয় ট্র্যাজিক বিন্দুতে।
লাইলি-মজনু।
রোমিও-জুলিয়েট।
মার্ক আন্টনি-ক্লিওপেট্রা।
টাইটানিকে রোজ অ্যান্ড জ্যাক।
লিওনেল মেসি ও বিশ্বকাপ।
কে জানত যে মারাত্মক ভুল। আধুনিক পৃথিবীর ফুটবল-ঈশ্বরকে প্রাচীন প্রেমকাহিনী বা ক্ল্যাসিকসের নিরিখে মাপতে নেই। ঈশ্বর তার নিজের মতো করে মর্ত্যরে রাজমুকুট ছিনিয়ে নেন। নইলে আজকের অমর ফুটবল রাত বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে আবির্ভূত হয়?
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর গোল্ডেন বল পুরস্কার নিতে গিয়ে মেসির হেঁটে যাওয়া যতদিন বেঁচে থাকব মনে থাকবে। জীবজগতে কোনো মনুষ্য বিশ্বসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে এমন নিস্পন্দ, রক্তশূন্য আর প্রাণহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারেÑ না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আর এদিনকার মেসি? কাপ আর একগাল হাসি নিয়ে এমন নাচতে নাচতে ভিকট্রি স্ট্যান্ডে অলরেডি জড়ো হয়ে যাওয়া তার টিমমেটদের দিকে এগোচ্ছিলেন, যেটা বিশ্বকাপ আর্কাইভে নিশ্চয়ই চিরকালের জন্য ফ্রেমবন্দি থাকল।
শুধু তো বিশ্বকাপ নয়। শুধু তো গোল্ডেন বল নয়। আর একটা সুখ খেলায় তিনি বহুদিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও হজড়িয়ে গিয়েছেন গোটের লড়াই। খুব কম মেম্বার এই ক্লাবে। কারণ গোট হলো গ্রেটেস্ট প্লেয়ার অব অল টাইম। ক্লাব ফুটবলের মুকুটহীন অধীশ্বর হয়েও স্রেফ দেশকে ম্যারাডোনার মতো বিশ্বকাপ দিতে পারেননি বলে কোথায় একটা কর্ণ সিন্ড্রোমে রেখে দেওয়া হতো মেসিকে। লুসাইল স্টেডিয়াম তাকে আগের কয়েকটা কঠিন ম্যাচ জিতিয়ে লাকি মাঠের সংস্কারে ঢুকছিল। রবিবার রাতে তাকে সুতপুত্র থেকে বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুনে রূপান্তরিত করে গেল। ফুটবল ইতিহাসের এমন মোহিনী রাত কবে এসেছে যে এক ৩৫ বছরের আপাত বৃদ্ধ ফুটবলার চূড়ান্ত প্রতিকূলতা এবং বিপক্ষ যৌবনের উদ্দাম দাপাদাপি সামলে স্থিতধী এবং জয়যুক্ত থেকে সিংহাসনে বসলেন।
সকালে স্যার জিওফ হার্স্টের ইন্টারভিউ দেখে অবাক লাগল। হার্স্টকে গত ২০ বছর ধরে ইন্টারভিউয়ের ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমনিতে সেই কোন প্রাচীনকালে তিনি বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকে। ১৯৬৬-তে যে খেলত তার ইন্টারভিউ পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়া উচিত। কিন্তু হার্স্ট এখনো এমন ঠাটবাটে থাকেন যে ম্যানেজার অতিক্রম করে পৌঁছনোই যায় না। স্বদেশীয় কাগজে এদিন তার সাক্ষাৎকারের বক্তব্য হলো এই ৮১ বছর পৌঁছে তার প্রার্থনা জীবদ্দশায় কোনো কাপ ফাইনালে যেন হ্যাটট্রিক না হয়। থলে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড অক্ষত রেখে তিনি ওপারে যেতে পারেন।
কে জানত সেই প্রার্থনাকে হাস্যকরতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে তিনি কিলিয়ান এমবাপ্পে করবেন চার গোল আর মেসি তিন। হার্স্টের একটা গোল নিয়ে আজও বিতর্ক থেকে গিয়েছে যে বল ঠিকমতো গোললাইন ক্রস করেছিল কি না? ম্যারাডোনা তো ঠিকই বলতেন যে ইংরেজরা হ্যান্ড অব গড গোল নিয়ে এত কথা লেখে। ওদের নিজেদের চুরি নিয়ে তো টুঁ-শব্দটি করে না। আজকের নায়ক ও বিজিতকে নিয়ে ভবিষ্যৎ তেমন কোনো প্রশ্ন তোলার সাহস পাবে না।
ইংল্যান্ড মিডিয়া এত নেগেটিভ সব কথা লিখেছিল কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে। ঠিক যেমন পেছনে লেগেছিল ব্রাজিলের। কাতারের রাজা শুধু পুরস্কারই ফিফা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাসিমুখে তুলে দিলেন না, ফাইনাল ম্যাচের মহিমায় আরও বেশি করে আধুনিক সময়ের শ্রেষ্ঠ বিশ্বকাপ সংগঠন হিসেবে আলোকিত হয়ে থাকলেন। শতাব্দীসেরা ফাইনাল তো নিঃসন্দেহে। তর্কযোগ্যভাবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ম্যাচ।
কোনো জ্যোতিষী, কোনো বেটিং বাজে, কোনো বিশেষজ্ঞের কোনোরকম পূর্বাভাস মেলেনি। কেউ জানত গ্রিজমানকে তুলে নিতে হবে কোচকে? কেউ জানত জিরুÑ ফ্রান্সের আর এক সোনালি রেখা তাকে যে তুলতে হবে? কেউ জানত যে ডি মারিয়া সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি। চোটের জন্য একইভাবে মিস করেছেন ২০১৪ ফাইনাল। তিনি নেমে গোল শুধু করবেন না। আর একটা গোলের পেছনে থাকে পেনাল্টি আদায় হবে তার জন্য? কেউ ভেবেছিল আলভারেজকেও পুরো সময় মাঠে রাখা হবে না? কেউ জানত এমবাপ্পে ফাস্ট হাফে চূড়ান্ত নিরাশ করে দর্শকসদৃশ উপস্থিতি রাখবেন? কেউ জানত সেই এমবাপ্পেই দ্বিতীয়ার্ধে এমন তোড়ফোড় শুরু করবেন যে আর্জেন্টিনা রক্ষণ বাদ দিচ্ছি। মেসিরও সাময়িক গ্রহণ হয়ে যাবে। মনে হতে থাকবে যৌবনেরই ঝড় উঠেছে আকাশ পাতালে।
তার আগে আর্জেন্টিনা যেভাবে শুরু করেছিল তাতে মনে হচ্ছিল একটা টিম তো শুধু খেলছে। আর প্রথমার্ধেই ২-০ এগিয়ে যাওয়া তারা নিশ্চিন্তে জয়ী দেশের মেডেলগুলো গলায় পরবে। সুনীল গাঙ্গুলি আর ভালোভাবে বঙ্গজ পাঠককে বুঝিয়েছেন যে ফ্রান্স হলো ছবির দেশ। কবিতার দেশ। কিন্তু তখনকার মতো কবিতা, ছবি আর গান তো আর্জেন্টিনীয়দের পায়ে। মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে। মেসি অন্য ম্যাচে খেলায় ঢুকেছেন একটু দেরিতে। সবিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আড়াই মিনিট থেকে তিনি ধ্বংসাত্মক। যেমন সেরা চ্যাম্পিয়নের নার্ভ তেমনি তাগড়া শরীর। বিপক্ষের চোরাগোপ্তা হাত চালানোয় কানে যে প্রচ- চোট পেলেন সেটা সামলানোর জন্য বিশ্বসেরা মনও লাগে।
কী করেননি মেসি! দুটো পেনাল্টিসহ তিনটে গোল। দুটো ফাইনাল পাস। দুটো গোলে তীব্রতম শট। অবিরাম দুদিকে বল বাড়িয়ে যাওয়া। এমনকি বিপক্ষ আক্রমণ বাঁচাতে হেড করে কর্নার করা। সবাই জানত আধুনিক ফুটবল ঈশ্বরের একটা পা। বাঁ পা। আজ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল তো ডান পায়ে করলেন। ঈশ্বর যেন এই জবাবটাও চুকিয়ে দেওয়ার প্রতীক্ষারত ছিলেন।
তবু এত কিছুর পরও তিনি আমার পুরনো হেডলাইন অনুযায়ী ব্যর্থ অমর প্রেম কাহিনী হয়ে থাকতেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সাহায্য না পেলে। কদিন আগে মিডিয়া সেন্টারে আর্জেন্টিনার দুজন সাংবাদিক বলছিলেন, এমিলিয়ানো থাকলে নাকি ২০১৪-এর ফাইনাল তারা হারতেন না। মারাকানার সেই গোলটা মিডিয়া গ্যালারির দিকে হয়েছিল। কাছ থেকে দেখেছিলাম বলে মৃদু প্রতিবাদ করি যে মারিও গোতজে চেস্টট্র্যাপ করে যেভাবে কাছ থেকে ঠেলেছিলেন তাতে কিপারের কিছু করার ছিল না। সকালে ইউটিউবে জার্মানির গোলটা আবার দেখে এবং অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে এমিলিয়ানোর এগিয়ে এসে অব্যর্থ গোল বাঁচানো দেখে মনে হচ্ছে এড়ে তর্ক করছিলাম।
টাইব্রেকারে দুরন্ত বাঁচানো বাদ দিচ্ছি। শেষ মিনিটে তার এগিয়ে এসে অব্যর্থ গোল বাঁচানো না ঘটলে তো খেলার শেষে এমবাপ্পেকে এত ম্রিয়মাণ লাগার কথা নয়। তখনই বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আবার খেতাব পেয়ে যায় ৪-৩। গোল্ডেন বল নিয়ে মেসির নিস্পন্দ হাঁটা আবার প্রত্যক্ষ করতে হয় বিশ্বকে। আমার কাছে ফাইনালের ওটাই টার্নিং পয়েন্ট।
আর বিশ্ববাণিজ্যের বাজারে বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকা ফুটবলের টার্নিং পয়েন্টÑ আজকের ফাইনালের মহাজাগতিক মান। নাহ, এই গ্রহে যতদিন একটি লোকও ফুটবলে কেউ লাথি মারবে, ততদিন জীবিত থাকবে মেসিয়ানার জ্যোৎস্নারাত!
৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি দেশের তৃতীয় বিশ্বকাপ সাফল্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকেই। লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার জয়ে দুই গোল করেছেন। একটি নির্ধারিত সময়ে, অন্যটি অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। টুর্নামেন্টে তার গোল সাতটি। সঙ্গে অ্যাসিস্ট তিনটি। তাতে বিশ্বকাপের সঙ্গে গোল্ডেন বলটা মেসির হাতেই মানায়। হলোও তাই। বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন মেসি।
১৯৮২ সাল থেকে অফিশিয়ালভাবে দেওয়া হচ্ছে গোল্ডেন বল পুরস্কার। মেসিই এখন পর্যন্ত একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পুরস্কারটি দ্বিতীয়বার পেলেন।
এর আগে ২০১৪ বিশ্বকাপেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন এ খুদে জাদুকর। তবে সেবার তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল রানার্সআপ হয়ে। এবার গোল্ডেন বল জিতে যেন প্রাপ্তির পূর্ণতা পেলেন। কাতার বিশ্বকাপ দুই হাত ভরে দিয়েছে মেসিকে। বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে করেছেন বেশ কিছু রেকর্ডও। কাতার আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্তÑ অর্থাৎ শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল। সব রাউন্ডেই মেসি পেয়েছেন গোলের দেখা। সাত ম্যাচের ছয়টিতেই করেছেন গোল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এ রেকর্ড শুধু মেসিরই।
বিশ্বকাপে মেসির মোট গোলসংখ্যা ১৩টি। যা মেসিকে তুলেছে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় চার নম্বরে। ১৩টি করে গোল মেসি এবং ফ্রান্সের জিস্ত ফন্তেইনের। ১৯৫৮ সালে এক আসরেই ১৩ গোল করেছিলেন ফন্তেইন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (২৬টি) খেলার রেকর্ডও এলএমটেনের। ২৫ ম্যাচ খেলেছেন জার্মানির লোথার ম্যাথিউস। চারটি বিশ্বকাপ খেলার পথে ইতালির পাওলো মালদিনি ২ হাজার ২১৭ মিনিট খেলেছিলেন। মেসি খেললেন ২ হাজার ৩১৫ মিনিট। বিশ্বকাপে মেসির গোলে অবদান অর্থাৎ (গোল ও অ্যাসিস্ট) সংখ্যা ২১। গোল করেছেন ১৩টি, অ্যাসিস্ট ৮টি। ফাইনালের দুই গোলে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৯৮-তে। গোল্ডেন বল পুরস্কার হাতে নিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমু খেয়েছেন মেসি।
প্রায় এক মাস হয়ে গেল, সন্ধান মিলছে না ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাকিবের। তারা দেশে আছে নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাও নিশ্চিত নয়।
পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের ধরতে সারা দেশে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের বিশেষ অভিযান শেষ হয়েছে। এই সময়ে বিএনপির ২ হাজার ৭০০ নেতাকর্মী, জামায়াতের আমির ও তার ছেলে এবং কিছু মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ বা জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়নি। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিএনপির দাবি, বিশেষ অভিযান মূলত তাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে চালানো হয়েছিল। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা বিএনপির দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, নাশকতা ও জ্বালাও-পোড়াও মামলার আসামিদের ধরা হয়েছে। কাউকে হয়রান করা হয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের বিশেষ অভিযান সফল হয়েছে। সন্ত্রাসী ও বেশ কিছু জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলকে দমন করার জন্য অভিযান চালানো হয়নি। তবে আদালতপাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সন্ধান পাওয়া যাবে।’
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের অবস্থান এবং কোন রুট ধরে তারা পালিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো অন্ধকারে গোয়েন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে সারাক্ষণ মাঠে থাকছে র্যাব-পুলিশের একাধিক ইউনিট। তাদের ধারণা, শিগগির জঙ্গিরা গ্রেপ্তার হবে। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সমন্বয়ক হিসেবে মেহেদী হাসান অমি নামে এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই দফায় ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে অমি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে দাবি তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের। ওই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বরখাস্ত মেজর জিয়ার নাম সামনে এসেছে। জিয়াসহ ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি এখন গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি ইদি আমিন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ঘটনার দিন সে একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। তবে রিমান্ডে তার কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ২০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে শুনানি শেষে প্রিজন ভ্যানে তোলার ঠিক আগমুহূর্তে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি সামির ও শাকিবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগী জঙ্গিরা। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি।
দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সারা দেশে রেড এলার্ট জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট। একপর্যায়ে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সমন্বয়ক হিসেবে অমিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট।
পুলিশ-সূত্র জানায়, রিমান্ডে জঙ্গি অমির কাছ থেকে অর্থ ও আশ্রয়দাতাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, পুলিশ জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া আরও ২০ জনের নামের তালিকা রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। তাদের অনেকের অবস্থান দেশের বাইরে। কাট-আউট পদ্ধতিতে চলা জঙ্গিদের নাম ছাড়া কোনো তথ্যই দিতে পারেনি অমি। তার দেওয়া নামগুলো সাংকেতিক বলে গোয়েন্দা নিশ্চিত হয়েছে। এরপর প্রকৃত অর্থদাতাদের তালিকা পেয়েছে সিটিটিসি। জামিন নিয়ে লাপাত্তা থাকা জঙ্গিরাই এখন নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে। তারা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পলাতক জঙ্গিরা তাদের সহযোগীদের ডেরায় পৌঁছে গেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি যেসব জঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েছে, তাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বেশ কয়েক জন জঙ্গি র্যাবের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করছি। জঙ্গিদের আক্রমণাত্মক হওয়ার সামর্থ্য নেই। র্যাব বহুমুখী কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রম চালাচ্ছে। যখনই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ও অর্থসংগ্রহের চেষ্টা করছে, তখনই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু অভিযান নয়, জঙ্গিবাদবিরোধী জনমত গঠনে র্যাব ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে।
ডিএমপির উপকমিশনার (জনসংযোগ) ফারুক হোসেন বলেন, ‘আইজিপির নির্দেশে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান হয়েছে গত ১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অভিযানে ডিএমপিও অংশগ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে ডিএমপির ৫০টি থানায় অন্তত ১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের ধারণা ছিল, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু তা ভুল ধারণা। বিশেষ অভিযান চালানো হয় ওয়ারেন্টের আসামি, পেশাদার অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তারে ও জঙ্গিবাদ দমনে। মাঝেমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়। এটি রুটিনওয়ার্ক।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দারা। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত তারা ধরা পড়বে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশেষ অভিযানে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশও বিবেচ্য ছিল। এই অভিযান না চালালে দেশে বড় ধরনের নাশকতা ঘটতে পারত। তবে অভিযানে বড় ধরনের অপরাধী গ্রেপ্তার হয়নি। ধরা যায়নি পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকেও। তারা দেশে নাকি বিদেশে, আমাদের কাছে তথ্য নেই।’
শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ার-২০২২। আবাসন ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় এ আয়োজন আগামী ২১ ডিসেম্বর বুধবার থেকে ২৫ ডিসেম্বর রবিবার পর্যন্ত চলবে। বুধবার সকাল ১১টা থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম-এ ফেয়ারের উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। মেলার প্রথম দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা দুপুর ২টা থেকে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। এ বছর মেলায় ১৮০টি স্টল অংশ নিচ্ছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রিহ্যাব ফেয়ার ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব নেতারা এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (অর্থ) ও মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সোহেল রানা লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের পরিচালক এবং প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. সুলতান মাহমুদ, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম (ইসলাম) প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব-এর সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ড্যাপের কারণে আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবার জন্য মানসম্মত আবাসন আরও কঠিন হয়ে যাবে। ড্যাপ নিয়ে এক বছর আগে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আমরা যে শঙ্কার কথা বলেছিলাম সেই শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নতুন ড্যাপের ঘোষিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) হ্রাসের কারণে মূল ঢাকায় বেশিরভাগ ভবন হবে ৪ থেকে ৫ তলা। ফলে আগামীতে আবাসন সংকট আরও প্রকট হবে। উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বী হবে বাড়িভাড়া। কারণ ফ্ল্যাটের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর বিগত প্রায় ৪ মাসে আমাদের রিহ্যাব সদস্যরা জমির মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তি বা সমঝোতায় যেতে পারেননি। কেউ নতুন করে প্ল্যান পাস করেননি। পুরাতন প্রকল্পগুলো নিয়েই অনেকে কাজ করছেন। ফলে আগামীতে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে এবং দাম বাড়বে। আমরা রাজউকসহ ড্যাপের আহ্বায়ক এলজিআরডিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা তুলে ধরে ফার-এর পরিমাণ সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করবেন। আমাদের প্রত্যাশা নতুন ড্যাপে ফার-এর পরিমাণ সংশোধন করা হবে।
কামাল মাহমুদ বলেন, রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে সুন্দর সুন্দর নান্দনিক ভবন তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের বেশ কয়েকজন রিহ্যাব সদস্য অল্প জায়গায় কনডোমোনিয়াম প্রজেক্ট তৈরি করেছেন। অনেকের এই কনডোমোনিয়াম প্রজেক্টের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের।
আয়োজকরা জানান, এবারের ফেয়ারে ১৮০টি স্টল থাকছে। এ বছর ৩টা ডায়মন্ড প্যাভিলিয়ন, ৭টি গোল্ড স্পন্সর, ২২টি কো-স্পন্সর, ১৬টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে রিহ্যাব। বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় এ বছরের মেলাতেও দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় ৫ বার প্রবেশ করতে পারবেন। এন্ট্রি টিকিটের প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ দুস্থদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে। এন্ট্রি টিকিটের র্যাফেল ড্র’তে থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।
নোট : ছবি যেতে পারে
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীক প্রার্থীর নারীসহ চার সমর্থককে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার দুপুরে হামলার শিকার অনুকূল চন্দ্র রায় বাদী হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলুকে প্রধান আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদিবাড়ী এলাকায় হামলার ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে জানানো হয়েছে।
হামলায় আহতরা হলেন সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদিবাড়ী এলাকার অনুকূল চন্দ্র রায় (২৭), মহেশ চন্দ্র (৩৫), তার মা ফুলতি রানী (৫৫) ও বাবলু (৩৫)। তারা হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে তারা হলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরল আমিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলু (৫৫), তার ছেলে সিয়াম (২৮), নজরুল ইসলাম (৪৫), মোস্তফা (৩৫), কেশরুজ্জামান বাবু (৪৫), মহিদুল ইসলাম জুয়েল (২৮) ও মিন্টু (৪০)।
চিকিৎসাধীন অনুকূল চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, ২৯ ডিসেম্বর সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরল আমিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলু ও তার ছেলে সিয়ামসহ অন্য অভিযুক্তরা শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে অনুকূল চন্দ্রের বাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করতে থাকেন। এ সময় অনুকূল বাড়ির সামনে গেলে নৌকা প্রার্থীর লোকজন তাকে আনারস প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলামের পক্ষে কাজ করতে নিষেধ করেন ও নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে বলেন। এতে রাজি না হলে তার ওপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে। অনুকূলের চিৎকার শুনে মহেশ, ফুলতি রানী ও বাবুল বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। পরে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আহত মহেশ চন্দ্র বলেন, ‘অনুকূলের চিৎকার শুনে আমরা এগিয়ে গেলে নৌকা প্রার্থীর লোকজন আমাদেরও মারধর শুরু করে। আমরা কাকে সমর্থন করব সেটা একান্ত নিজের ব্যাপার। কাউকে জোর-জুলুম করে কিছু করা যায় না। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে নুর মোহাম্মদ বাবলু বলেন, ‘আমি অনুকূলকে চিনি না। ওনার সঙ্গে আমার কোনো দিন কথাই হয়নি। মারধর করতে যাব কেন? এটা মিথ্যা কথা।’
এ বিষয়ে সিন্দুর্না ইউনিয়নের উপনির্বাচনে আনারস প্রতীকের (স্বতন্ত্র) প্রার্থী অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী নুরল আমিনের ভাই বাবলু ও সিয়ামসহ কয়েকজন আমার লোকজনকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে বলে। তারা রাজি না হওয়ায় তাদের বেধড়ক পেটানো হয়। তারা থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরল আমিনের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরে মেডিকেল অফিসার ডা. আল আকসা জানান, আহত চারজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
হাতীবান্ধা থানার ওসি শাহ আলম জানান, হামলার ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, ‘কেউ মারধরের শিকার হলে তারা আইনের আশ্রয় নেবেন। পুলিশ তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলে তিনি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। যদি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকে তাহলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় ব্যবসায়ীদের। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ট্রান্সপোর্ট খরচ, ট্যাক্স পরিশোধ ও লেবার খরচসহ আমদানিকরদের হাতে ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা। যা ভারতের বাজারে ১৪-১৫ রুপি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখানেও মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজি রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের মতো কয়েক হাত ঘুরে অস্বাভাবিক দামে ২৭ টাকার পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকায়। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ এখনো খুচরা বাজারে পৌঁছায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়। প্রথম দিনে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গতকাল দ্বিতীয় দিন শেষে আইপি বা আমদানি অনুমোদনের পরিমাণ ৪ লাখ ৩৩ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। চলতি বছর পেঁয়াজের নিট উৎপাদন ধরা হচ্ছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার টন। ফলে বাকি পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। গতকাল কৃষি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থলবন্দর হয়ে ১ হাজার ২৮৮ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে।
চলতি বছর পেঁয়াজের দর রোজার ঈদের পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল। এক মাসের ব্যবধানে তা ৩০ থেকে ৮০ টাকায় উঠে যায়। গত কয়েক দিন ধরে ১০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছিল।
কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে এতদিন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি কৃষি মন্ত্রণালয় না দিলেও পরিস্থিতি দেখে রবিবার সায় দেয়। পরদিনই পাইকারি বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হলে পাইকারিতে দাম কমে যায় এক ধাক্কায় ৩০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য এখন ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে সরকার মনে করে। আর প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে যে পেঁয়াজ দেশে এসেছে, সেগুলো কেনা প্রতি কেজি ২১ থেকে ২২ টাকার মধ্যে ছিল বলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব খরচ মিলিয়ে বন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ২৭ টাকায়। আমদানিকারকরা কেজিপ্রতি ২ টাকা লাভে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ২৯ টাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয়রা আরও ৫ টাকা লাভে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ঢাকার পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ৩৪ টাকায়। ঢাকার পাইকাররা শ্যামবাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করেন ৫০-৫৬ টাকায়। শ্যামবাজার ব্যবসায়ীর হাতবদল হয়ে কারওয়ান বাজার পাইকারি মার্কেটে এসে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে।
ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক আমির হামজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারতীয় বাজার থেকে ১৪-১৫ রুপিতে কিনে সব খরচসহ বন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা। কেজিতে ২ টাকা লাভে ভোমরা স্থলবন্দরের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ২৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হিলির বন্দর এলাকার আরেক ব্যবসায়ী আহমেদ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মূলত আমদানিকারকদের থেকে আমরা পেঁয়াজ কিনে থাকি। আমাদের কাছ থেকে ঢাকার ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ সংগ্রহ করেন। কেজিপ্রতি ৩১-৩২ টাকা আমাদের কেনা পড়ে। ঘরভাড়া, লেবার খরচসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজে সামান্য লাভ করে ৩৪-৩৫ টাকা বিক্রি করতে হয়। এর নিচে বিক্রি করলে আমাদের ৭০-৮০ পয়সার মতো লোকসান হয়।’
গতকাল রাজধানীর শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ বাছাই করে দুই ভাগে বিক্রি করছেন শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা। আকারে কিছুটা ছোট পেঁয়াজের কেজি ৪০-৪৫ ও ভালো মানের পেঁঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকায়।
শ্যামবাজারের মেসার্স নিউ সেবা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শেখর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আজই (গতকাল) আমদানি করা পেঁয়াজের চালান শ্যামবাজারে এসেছে। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ভারতীয় পেঁয়াজ পেলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ী আমদানি করা এসব পেঁয়াজ পাননি। বেশ কিছু পেঁয়াজ ট্রাকে পচে যাওয়ায় দুই ভাগে তা বিক্রি হয়েছে। তুলনামূলক ভালো প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ ও ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকা করে।’
জানতে চাইলে শ্যামবাজার পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ মাজেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে ভারতের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৫ রুপিতে। সেই হিসাবে সব খরচ মিলিয়ে আমাদের দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে ৩৫-৩৬ টাকায় ভোক্তারা কিনতে পারবেন। তবে এ পেঁয়াজ কেন ৫০ টাকার ওপর বিক্রি হচ্ছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’
এদিকে ভারত থেকে আসা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ময়না মিঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসায় আমাদের অনেক লস হয়েছে। আগের কেনা দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা করে লস দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আমদানি করা যেসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা শ্যামবাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। মার্কেটে ক্রেতা না থাকায় সব খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে ২ টাকা লাভ করতেও এখন কষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে খুচরা বাজারগুলোতে খবর নিয়ে জানা যায়, এখনো ভারত থেকে আসা আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে প্রবেশ করেনি। আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে না এলেও দেশি পেঁয়াজের দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে। যা গত তিন দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১০০-১০৫ টাকায়।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে বলে জানান দিনাজপুর ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাদের তথ্যমতে, সোমবার বিকেলে ভোমরা বন্দর দিয়ে ২৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে হাকিমপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে গত দুদিনে ১৬ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। আর দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।