
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় প্রতিপক্ষ আনারস প্রতীক প্রার্থীর নারীসহ চার সমর্থককে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার দুপুরে হামলার শিকার অনুকূল চন্দ্র রায় বাদী হয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলুকে প্রধান আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর আগে গত শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদিবাড়ী এলাকায় হামলার ওই ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগে জানানো হয়েছে।
হামলায় আহতরা হলেন সিন্দুর্না ইউনিয়নের উত্তর হলদিবাড়ী এলাকার অনুকূল চন্দ্র রায় (২৭), মহেশ চন্দ্র (৩৫), তার মা ফুলতি রানী (৫৫) ও বাবলু (৩৫)। তারা হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।
যাদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করা হয়েছে তারা হলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরল আমিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলু (৫৫), তার ছেলে সিয়াম (২৮), নজরুল ইসলাম (৪৫), মোস্তফা (৩৫), কেশরুজ্জামান বাবু (৪৫), মহিদুল ইসলাম জুয়েল (২৮) ও মিন্টু (৪০)।
চিকিৎসাধীন অনুকূল চন্দ্র অভিযোগ করে বলেন, ২৯ ডিসেম্বর সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরল আমিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বাবলু ও তার ছেলে সিয়ামসহ অন্য অভিযুক্তরা শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে অনুকূল চন্দ্রের বাড়ির সামনে গিয়ে ডাকাডাকি করতে থাকেন। এ সময় অনুকূল বাড়ির সামনে গেলে নৌকা প্রার্থীর লোকজন তাকে আনারস প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলামের পক্ষে কাজ করতে নিষেধ করেন ও নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে বলেন। এতে রাজি না হলে তার ওপর চড়াও হয়ে মারধর শুরু করে। অনুকূলের চিৎকার শুনে মহেশ, ফুলতি রানী ও বাবুল বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। পরে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আহত মহেশ চন্দ্র বলেন, ‘অনুকূলের চিৎকার শুনে আমরা এগিয়ে গেলে নৌকা প্রার্থীর লোকজন আমাদেরও মারধর শুরু করে। আমরা কাকে সমর্থন করব সেটা একান্ত নিজের ব্যাপার। কাউকে জোর-জুলুম করে কিছু করা যায় না। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে নুর মোহাম্মদ বাবলু বলেন, ‘আমি অনুকূলকে চিনি না। ওনার সঙ্গে আমার কোনো দিন কথাই হয়নি। মারধর করতে যাব কেন? এটা মিথ্যা কথা।’
এ বিষয়ে সিন্দুর্না ইউনিয়নের উপনির্বাচনে আনারস প্রতীকের (স্বতন্ত্র) প্রার্থী অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী নুরল আমিনের ভাই বাবলু ও সিয়ামসহ কয়েকজন আমার লোকজনকে নৌকার পক্ষে কাজ করতে বলে। তারা রাজি না হওয়ায় তাদের বেধড়ক পেটানো হয়। তারা থানায় অভিযোগ দিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
এ ব্যাপারে জানতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরল আমিনের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরে মেডিকেল অফিসার ডা. আল আকসা জানান, আহত চারজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
হাতীবান্ধা থানার ওসি শাহ আলম জানান, হামলার ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, ‘কেউ মারধরের শিকার হলে তারা আইনের আশ্রয় নেবেন। পুলিশ তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। এ ছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলে তিনি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। যদি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকে তাহলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’
লেখার অরিজিনাল হেডলাইন যে এটা ছিল না শুরুতে স্বীকার করে নেওয়া ভালো। বিদেশে বিশ্ব পর্যায়ের যেকোনো টুর্নামেন্ট কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করবেন। টাইম ডিফারেন্সের সঙ্গে যুদ্ধ করে লেখাটা ঠিকমতো ধরানোর জন্য তাদের খেলা চলতে চলতে নানানরকম হেডলাইন মাথায় খেলাতে খেলাতে যেতে হয়। পুরস্কার বিতরণ শেষ হলো। সব শুনলেন। তারপর ধীরেসুস্থে শিরোনাম ভাবলেন সেটা এমবাপ্পেকে পেনাল্টি বক্সে ছেড়ে রাখার মতো মৃত্যুকামী বিলাসিতা।
দুটো ম্যাচে কোনো তুলনাই হয় না। আজকেরটা শতাব্দীসেরা বিশ্বকাপ ফাইনাল। অন্যটা যত বাহারিই হোক, পাঁচ দলের ওয়ানডে ফাইনাল। তবু শারজায় সেই জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কার ম্যাচ রিপোর্টের মতো আজ প্রতিনিয়ত দলেছে। এমবাপ্পের দ্বিতীয় পেনাল্টির পর শেষ হেডলাইন ল্যাপটপে কম্পোজ করে রাখি। জানতাম এটাই ব্যবহার হবে।
বিশ্ব শ্রেষ্ঠ প্রেমকাহিনীর সেই ভাঙা কাচের টুকরো।
প্রথম প্যারাও লেখা হয়ে যায়। জীবনে কিছু কিছু ঘটনা এমনই অদৃষ্টনির্দিষ্ট থাকে যে যতরকম ফুল ফোটানোরই চেষ্টা হোক। যাত্রাপথ যত বাহারি আর ঐশ্বরিক দেখতে লাগুক। ভবিতব্য ঠিক সেই ধূসর, বাঁকাচোরা গলিতে ঢুকিয়ে দিয়ে অন্তহীন রোমান্সের পেটে ছুরি চালিয়ে দেয়। কাহিনীগুলো অমর হয়ে থাকে। কিন্তু শেষ হয় ট্র্যাজিক বিন্দুতে।
লাইলি-মজনু।
রোমিও-জুলিয়েট।
মার্ক আন্টনি-ক্লিওপেট্রা।
টাইটানিকে রোজ অ্যান্ড জ্যাক।
লিওনেল মেসি ও বিশ্বকাপ।
কে জানত যে মারাত্মক ভুল। আধুনিক পৃথিবীর ফুটবল-ঈশ্বরকে প্রাচীন প্রেমকাহিনী বা ক্ল্যাসিকসের নিরিখে মাপতে নেই। ঈশ্বর তার নিজের মতো করে মর্ত্যরে রাজমুকুট ছিনিয়ে নেন। নইলে আজকের অমর ফুটবল রাত বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে আবির্ভূত হয়?
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর গোল্ডেন বল পুরস্কার নিতে গিয়ে মেসির হেঁটে যাওয়া যতদিন বেঁচে থাকব মনে থাকবে। জীবজগতে কোনো মনুষ্য বিশ্বসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে এমন নিস্পন্দ, রক্তশূন্য আর প্রাণহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারেÑ না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আর এদিনকার মেসি? কাপ আর একগাল হাসি নিয়ে এমন নাচতে নাচতে ভিকট্রি স্ট্যান্ডে অলরেডি জড়ো হয়ে যাওয়া তার টিমমেটদের দিকে এগোচ্ছিলেন, যেটা বিশ্বকাপ আর্কাইভে নিশ্চয়ই চিরকালের জন্য ফ্রেমবন্দি থাকল।
শুধু তো বিশ্বকাপ নয়। শুধু তো গোল্ডেন বল নয়। আর একটা সুখ খেলায় তিনি বহুদিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও হজড়িয়ে গিয়েছেন গোটের লড়াই। খুব কম মেম্বার এই ক্লাবে। কারণ গোট হলো গ্রেটেস্ট প্লেয়ার অব অল টাইম। ক্লাব ফুটবলের মুকুটহীন অধীশ্বর হয়েও স্রেফ দেশকে ম্যারাডোনার মতো বিশ্বকাপ দিতে পারেননি বলে কোথায় একটা কর্ণ সিন্ড্রোমে রেখে দেওয়া হতো মেসিকে। লুসাইল স্টেডিয়াম তাকে আগের কয়েকটা কঠিন ম্যাচ জিতিয়ে লাকি মাঠের সংস্কারে ঢুকছিল। রবিবার রাতে তাকে সুতপুত্র থেকে বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুনে রূপান্তরিত করে গেল। ফুটবল ইতিহাসের এমন মোহিনী রাত কবে এসেছে যে এক ৩৫ বছরের আপাত বৃদ্ধ ফুটবলার চূড়ান্ত প্রতিকূলতা এবং বিপক্ষ যৌবনের উদ্দাম দাপাদাপি সামলে স্থিতধী এবং জয়যুক্ত থেকে সিংহাসনে বসলেন।
সকালে স্যার জিওফ হার্স্টের ইন্টারভিউ দেখে অবাক লাগল। হার্স্টকে গত ২০ বছর ধরে ইন্টারভিউয়ের ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমনিতে সেই কোন প্রাচীনকালে তিনি বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকে। ১৯৬৬-তে যে খেলত তার ইন্টারভিউ পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়া উচিত। কিন্তু হার্স্ট এখনো এমন ঠাটবাটে থাকেন যে ম্যানেজার অতিক্রম করে পৌঁছনোই যায় না। স্বদেশীয় কাগজে এদিন তার সাক্ষাৎকারের বক্তব্য হলো এই ৮১ বছর পৌঁছে তার প্রার্থনা জীবদ্দশায় কোনো কাপ ফাইনালে যেন হ্যাটট্রিক না হয়। থলে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড অক্ষত রেখে তিনি ওপারে যেতে পারেন।
কে জানত সেই প্রার্থনাকে হাস্যকরতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে তিনি কিলিয়ান এমবাপ্পে করবেন চার গোল আর মেসি তিন। হার্স্টের একটা গোল নিয়ে আজও বিতর্ক থেকে গিয়েছে যে বল ঠিকমতো গোললাইন ক্রস করেছিল কি না? ম্যারাডোনা তো ঠিকই বলতেন যে ইংরেজরা হ্যান্ড অব গড গোল নিয়ে এত কথা লেখে। ওদের নিজেদের চুরি নিয়ে তো টুঁ-শব্দটি করে না। আজকের নায়ক ও বিজিতকে নিয়ে ভবিষ্যৎ তেমন কোনো প্রশ্ন তোলার সাহস পাবে না।
ইংল্যান্ড মিডিয়া এত নেগেটিভ সব কথা লিখেছিল কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে। ঠিক যেমন পেছনে লেগেছিল ব্রাজিলের। কাতারের রাজা শুধু পুরস্কারই ফিফা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাসিমুখে তুলে দিলেন না, ফাইনাল ম্যাচের মহিমায় আরও বেশি করে আধুনিক সময়ের শ্রেষ্ঠ বিশ্বকাপ সংগঠন হিসেবে আলোকিত হয়ে থাকলেন। শতাব্দীসেরা ফাইনাল তো নিঃসন্দেহে। তর্কযোগ্যভাবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ম্যাচ।
কোনো জ্যোতিষী, কোনো বেটিং বাজে, কোনো বিশেষজ্ঞের কোনোরকম পূর্বাভাস মেলেনি। কেউ জানত গ্রিজমানকে তুলে নিতে হবে কোচকে? কেউ জানত জিরুÑ ফ্রান্সের আর এক সোনালি রেখা তাকে যে তুলতে হবে? কেউ জানত যে ডি মারিয়া সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি। চোটের জন্য একইভাবে মিস করেছেন ২০১৪ ফাইনাল। তিনি নেমে গোল শুধু করবেন না। আর একটা গোলের পেছনে থাকে পেনাল্টি আদায় হবে তার জন্য? কেউ ভেবেছিল আলভারেজকেও পুরো সময় মাঠে রাখা হবে না? কেউ জানত এমবাপ্পে ফাস্ট হাফে চূড়ান্ত নিরাশ করে দর্শকসদৃশ উপস্থিতি রাখবেন? কেউ জানত সেই এমবাপ্পেই দ্বিতীয়ার্ধে এমন তোড়ফোড় শুরু করবেন যে আর্জেন্টিনা রক্ষণ বাদ দিচ্ছি। মেসিরও সাময়িক গ্রহণ হয়ে যাবে। মনে হতে থাকবে যৌবনেরই ঝড় উঠেছে আকাশ পাতালে।
তার আগে আর্জেন্টিনা যেভাবে শুরু করেছিল তাতে মনে হচ্ছিল একটা টিম তো শুধু খেলছে। আর প্রথমার্ধেই ২-০ এগিয়ে যাওয়া তারা নিশ্চিন্তে জয়ী দেশের মেডেলগুলো গলায় পরবে। সুনীল গাঙ্গুলি আর ভালোভাবে বঙ্গজ পাঠককে বুঝিয়েছেন যে ফ্রান্স হলো ছবির দেশ। কবিতার দেশ। কিন্তু তখনকার মতো কবিতা, ছবি আর গান তো আর্জেন্টিনীয়দের পায়ে। মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে। মেসি অন্য ম্যাচে খেলায় ঢুকেছেন একটু দেরিতে। সবিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আড়াই মিনিট থেকে তিনি ধ্বংসাত্মক। যেমন সেরা চ্যাম্পিয়নের নার্ভ তেমনি তাগড়া শরীর। বিপক্ষের চোরাগোপ্তা হাত চালানোয় কানে যে প্রচ- চোট পেলেন সেটা সামলানোর জন্য বিশ্বসেরা মনও লাগে।
কী করেননি মেসি! দুটো পেনাল্টিসহ তিনটে গোল। দুটো ফাইনাল পাস। দুটো গোলে তীব্রতম শট। অবিরাম দুদিকে বল বাড়িয়ে যাওয়া। এমনকি বিপক্ষ আক্রমণ বাঁচাতে হেড করে কর্নার করা। সবাই জানত আধুনিক ফুটবল ঈশ্বরের একটা পা। বাঁ পা। আজ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল তো ডান পায়ে করলেন। ঈশ্বর যেন এই জবাবটাও চুকিয়ে দেওয়ার প্রতীক্ষারত ছিলেন।
তবু এত কিছুর পরও তিনি আমার পুরনো হেডলাইন অনুযায়ী ব্যর্থ অমর প্রেম কাহিনী হয়ে থাকতেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সাহায্য না পেলে। কদিন আগে মিডিয়া সেন্টারে আর্জেন্টিনার দুজন সাংবাদিক বলছিলেন, এমিলিয়ানো থাকলে নাকি ২০১৪-এর ফাইনাল তারা হারতেন না। মারাকানার সেই গোলটা মিডিয়া গ্যালারির দিকে হয়েছিল। কাছ থেকে দেখেছিলাম বলে মৃদু প্রতিবাদ করি যে মারিও গোতজে চেস্টট্র্যাপ করে যেভাবে কাছ থেকে ঠেলেছিলেন তাতে কিপারের কিছু করার ছিল না। সকালে ইউটিউবে জার্মানির গোলটা আবার দেখে এবং অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে এমিলিয়ানোর এগিয়ে এসে অব্যর্থ গোল বাঁচানো দেখে মনে হচ্ছে এড়ে তর্ক করছিলাম।
টাইব্রেকারে দুরন্ত বাঁচানো বাদ দিচ্ছি। শেষ মিনিটে তার এগিয়ে এসে অব্যর্থ গোল বাঁচানো না ঘটলে তো খেলার শেষে এমবাপ্পেকে এত ম্রিয়মাণ লাগার কথা নয়। তখনই বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আবার খেতাব পেয়ে যায় ৪-৩। গোল্ডেন বল নিয়ে মেসির নিস্পন্দ হাঁটা আবার প্রত্যক্ষ করতে হয় বিশ্বকে। আমার কাছে ফাইনালের ওটাই টার্নিং পয়েন্ট।
আর বিশ্ববাণিজ্যের বাজারে বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকা ফুটবলের টার্নিং পয়েন্টÑ আজকের ফাইনালের মহাজাগতিক মান। নাহ, এই গ্রহে যতদিন একটি লোকও ফুটবলে কেউ লাথি মারবে, ততদিন জীবিত থাকবে মেসিয়ানার জ্যোৎস্নারাত!
৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি দেশের তৃতীয় বিশ্বকাপ সাফল্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকেই। লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার জয়ে দুই গোল করেছেন। একটি নির্ধারিত সময়ে, অন্যটি অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। টুর্নামেন্টে তার গোল সাতটি। সঙ্গে অ্যাসিস্ট তিনটি। তাতে বিশ্বকাপের সঙ্গে গোল্ডেন বলটা মেসির হাতেই মানায়। হলোও তাই। বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন মেসি।
১৯৮২ সাল থেকে অফিশিয়ালভাবে দেওয়া হচ্ছে গোল্ডেন বল পুরস্কার। মেসিই এখন পর্যন্ত একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পুরস্কারটি দ্বিতীয়বার পেলেন।
এর আগে ২০১৪ বিশ্বকাপেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন এ খুদে জাদুকর। তবে সেবার তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল রানার্সআপ হয়ে। এবার গোল্ডেন বল জিতে যেন প্রাপ্তির পূর্ণতা পেলেন। কাতার বিশ্বকাপ দুই হাত ভরে দিয়েছে মেসিকে। বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে করেছেন বেশ কিছু রেকর্ডও। কাতার আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্তÑ অর্থাৎ শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল। সব রাউন্ডেই মেসি পেয়েছেন গোলের দেখা। সাত ম্যাচের ছয়টিতেই করেছেন গোল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এ রেকর্ড শুধু মেসিরই।
বিশ্বকাপে মেসির মোট গোলসংখ্যা ১৩টি। যা মেসিকে তুলেছে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় চার নম্বরে। ১৩টি করে গোল মেসি এবং ফ্রান্সের জিস্ত ফন্তেইনের। ১৯৫৮ সালে এক আসরেই ১৩ গোল করেছিলেন ফন্তেইন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (২৬টি) খেলার রেকর্ডও এলএমটেনের। ২৫ ম্যাচ খেলেছেন জার্মানির লোথার ম্যাথিউস। চারটি বিশ্বকাপ খেলার পথে ইতালির পাওলো মালদিনি ২ হাজার ২১৭ মিনিট খেলেছিলেন। মেসি খেললেন ২ হাজার ৩১৫ মিনিট। বিশ্বকাপে মেসির গোলে অবদান অর্থাৎ (গোল ও অ্যাসিস্ট) সংখ্যা ২১। গোল করেছেন ১৩টি, অ্যাসিস্ট ৮টি। ফাইনালের দুই গোলে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৯৮-তে। গোল্ডেন বল পুরস্কার হাতে নিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমু খেয়েছেন মেসি।
প্রায় এক মাস হয়ে গেল, সন্ধান মিলছে না ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাকিবের। তারা দেশে আছে নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাও নিশ্চিত নয়।
পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের ধরতে সারা দেশে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের বিশেষ অভিযান শেষ হয়েছে। এই সময়ে বিএনপির ২ হাজার ৭০০ নেতাকর্মী, জামায়াতের আমির ও তার ছেলে এবং কিছু মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ বা জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়নি। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিএনপির দাবি, বিশেষ অভিযান মূলত তাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে চালানো হয়েছিল। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা বিএনপির দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, নাশকতা ও জ্বালাও-পোড়াও মামলার আসামিদের ধরা হয়েছে। কাউকে হয়রান করা হয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের বিশেষ অভিযান সফল হয়েছে। সন্ত্রাসী ও বেশ কিছু জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলকে দমন করার জন্য অভিযান চালানো হয়নি। তবে আদালতপাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সন্ধান পাওয়া যাবে।’
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের অবস্থান এবং কোন রুট ধরে তারা পালিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো অন্ধকারে গোয়েন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে সারাক্ষণ মাঠে থাকছে র্যাব-পুলিশের একাধিক ইউনিট। তাদের ধারণা, শিগগির জঙ্গিরা গ্রেপ্তার হবে। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সমন্বয়ক হিসেবে মেহেদী হাসান অমি নামে এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই দফায় ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে অমি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে দাবি তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের। ওই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বরখাস্ত মেজর জিয়ার নাম সামনে এসেছে। জিয়াসহ ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি এখন গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি ইদি আমিন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ঘটনার দিন সে একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। তবে রিমান্ডে তার কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ২০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে শুনানি শেষে প্রিজন ভ্যানে তোলার ঠিক আগমুহূর্তে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি সামির ও শাকিবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগী জঙ্গিরা। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি।
দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সারা দেশে রেড এলার্ট জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট। একপর্যায়ে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সমন্বয়ক হিসেবে অমিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট।
পুলিশ-সূত্র জানায়, রিমান্ডে জঙ্গি অমির কাছ থেকে অর্থ ও আশ্রয়দাতাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, পুলিশ জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া আরও ২০ জনের নামের তালিকা রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। তাদের অনেকের অবস্থান দেশের বাইরে। কাট-আউট পদ্ধতিতে চলা জঙ্গিদের নাম ছাড়া কোনো তথ্যই দিতে পারেনি অমি। তার দেওয়া নামগুলো সাংকেতিক বলে গোয়েন্দা নিশ্চিত হয়েছে। এরপর প্রকৃত অর্থদাতাদের তালিকা পেয়েছে সিটিটিসি। জামিন নিয়ে লাপাত্তা থাকা জঙ্গিরাই এখন নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে। তারা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পলাতক জঙ্গিরা তাদের সহযোগীদের ডেরায় পৌঁছে গেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি যেসব জঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েছে, তাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বেশ কয়েক জন জঙ্গি র্যাবের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করছি। জঙ্গিদের আক্রমণাত্মক হওয়ার সামর্থ্য নেই। র্যাব বহুমুখী কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রম চালাচ্ছে। যখনই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ও অর্থসংগ্রহের চেষ্টা করছে, তখনই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু অভিযান নয়, জঙ্গিবাদবিরোধী জনমত গঠনে র্যাব ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে।
ডিএমপির উপকমিশনার (জনসংযোগ) ফারুক হোসেন বলেন, ‘আইজিপির নির্দেশে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান হয়েছে গত ১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অভিযানে ডিএমপিও অংশগ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে ডিএমপির ৫০টি থানায় অন্তত ১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের ধারণা ছিল, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু তা ভুল ধারণা। বিশেষ অভিযান চালানো হয় ওয়ারেন্টের আসামি, পেশাদার অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তারে ও জঙ্গিবাদ দমনে। মাঝেমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়। এটি রুটিনওয়ার্ক।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দারা। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত তারা ধরা পড়বে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশেষ অভিযানে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশও বিবেচ্য ছিল। এই অভিযান না চালালে দেশে বড় ধরনের নাশকতা ঘটতে পারত। তবে অভিযানে বড় ধরনের অপরাধী গ্রেপ্তার হয়নি। ধরা যায়নি পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকেও। তারা দেশে নাকি বিদেশে, আমাদের কাছে তথ্য নেই।’
রাজধানীর চকবাজারের ইমামগঞ্জ লেনে হার্ডওয়্যার মার্কেটের দোকানমালিক মো. দেলোয়ার হোসেন। ২২ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আশা এন্টারপ্রাইজ ও আফসার এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি হার্ডওয়্যারের দোকান। দোকানের ওপর ও ভেতরে ছিল দুটি গুদাম। গত শনিবার রাতে হার্ডওয়্যার মার্কেটের আগুনে তার দোকান ও গুদাম যখন জ¦লছিল, তখন দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না দেলোয়ার হোসেনের। আগুনে পুড়ে গেছে তার স্বপ্নগুলোও।
গতকাল রবিবার দুপুরে ইমামগঞ্জ লেনের হার্ডওয়্যার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া দোকানের সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন দেলোয়ার। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে মার্কেটে দোকানদারি করছি। একসময় অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করলেও বছর পাঁচেক আগে নিজেই দুটি পজিশন নিয়ে দোকান ও গুদাম দিয়েছি। সেখানে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল, যার সবই নষ্ট হয়ে গেছে।’
গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হার্ডওয়্যার মার্কেটটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১টা ৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুনে একটি মন্দির ও মার্কেটের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
দোকানমালিকদের অভিযোগ, আগুন লাগার অন্তত ৩০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসেছে। এ কারণে দোকান ও গুদামগুলো পুড়ে গেছে। মার্কেটটির কোনো দোকানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন তারা। মোট কতটি দোকান ও গুদাম পুড়েছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুন নেভাতে তাদের বেগ পেতে হয়েছে। রাস্তা সরু হওয়ায় ঢুকতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটার দূরে গাড়ি রেখেই কাজ করেছেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে সাত মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে একে একে ১০টি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে। পানির স্বল্পতার কারণে আমাদের পানিবাহী গাড়ি নিতে হয়। এ ছাড়া পাশের নদী ও অন্যান্য ভবনের রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। আগুনের সূত্রাপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।’
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সরু রাস্তার দুই পাশে হার্ডওয়্যারের সারি সারি দোকান ও গুদামঘর। টিনের দোকান ও গুদাম পুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। মার্কেটের ছয়টি টিনের বড় দোকান একেবারে পুড়ে গেছে। এ ছাড়া আশপাশের ৬টি বহুতল ভবনে থাকা দুই শতাধিক দোকান ও গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পোড়া মালামালের বেশির ভাগই ছিল তার, তারকাঁটা, লোহা, সুতি, ঝাড়ু, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য। মার্কেটের আশপাশের যে ৬টি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার বেশির ভাগই গুদাম। এসব ভবনের একটিতে কয়েকতলায় লোকজনও থাকে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাসা ছেড়ে বের হয়ে আসায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় লোকজন জানান, অন্তত ১ হাজার দোকান রয়েছে ইমামগঞ্জ লেনে। আগুন লাগার পর সবাই আতঙ্কে ছিলেন। তবে আগুন খুব একটা ছড়াতে না পারায় বেশির ভাগ দোকান অক্ষত আছে।
তারা জানান, চকবাজারের ইমামগঞ্জ লেনের মার্কেটে আগুনের ঘটনা নতুন নয়। বছর তিনেক আগে নুরানী সেন্টারের দোকানেও আগুন লাগে। তখনো কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেসার্স শওকত অ্যান্ড ব্রাদার্সের ছয়তলা ভবনের পুরোটা বিভিন্ন পণ্যের গুদাম। সেখানে ৫০টির বেশি ছোট ছোট গুদামঘর রয়েছে। আগুনে গুদামের বেশির ভাগ মালামাল পুড়ে গেছে। গতকাল বেলা ২টার দিকেও সেই ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, মেসার্স শওকত অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের ভবনটির সব তলায় প্লাস্টিক পণ্যের গুদাম।
পাশের চারতলা ভবনের পুরোটাই অগ্রণী ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। আগুনে ব্যাংকের মালামাল পুড়ে গেছে। ভবনটিতে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তা প্রহরী বাধা দেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভেতর মূল্যবান জিনিসপত্র আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসেছেন। বাইরের লোকের প্রবেশ নিষেধ।
পাশের সাততলা আরেকটি ভবনের (খান প্লাজা) বেশির ভাগজুড়েই মানুষের বসবাস। ভবনটির নিচতলায় হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে।
হাবিব অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি দোকানের কর্মচারী জিহাদুল মিজান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগুনের তাপে তাদের দোকানের অনেক মালামাল গলে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ভবনটির পাশের আরেকটি ভবনের নিচতলায় বিসমিল্লাহ স্টোরের কর্মচারী জাকির হোসেন জানান, তার দোকানে কোটি টাকার মালামাল আছে। অল্পের জন্য পোড়েনি। পুড়ে যাওয়া দোকান ও গুদামগুলোর প্রতিটিতেই কোটি টাকার ওপরে মালামাল ছিল বলে তিনি জানান।
শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ার-২০২২। আবাসন ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় এ আয়োজন আগামী ২১ ডিসেম্বর বুধবার থেকে ২৫ ডিসেম্বর রবিবার পর্যন্ত চলবে। বুধবার সকাল ১১টা থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম-এ ফেয়ারের উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। মেলার প্রথম দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা দুপুর ২টা থেকে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। এ বছর মেলায় ১৮০টি স্টল অংশ নিচ্ছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রিহ্যাব ফেয়ার ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব নেতারা এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (অর্থ) ও মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সোহেল রানা লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের পরিচালক এবং প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. সুলতান মাহমুদ, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম (ইসলাম) প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব-এর সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ড্যাপের কারণে আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবার জন্য মানসম্মত আবাসন আরও কঠিন হয়ে যাবে। ড্যাপ নিয়ে এক বছর আগে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আমরা যে শঙ্কার কথা বলেছিলাম সেই শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নতুন ড্যাপের ঘোষিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) হ্রাসের কারণে মূল ঢাকায় বেশিরভাগ ভবন হবে ৪ থেকে ৫ তলা। ফলে আগামীতে আবাসন সংকট আরও প্রকট হবে। উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বী হবে বাড়িভাড়া। কারণ ফ্ল্যাটের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর বিগত প্রায় ৪ মাসে আমাদের রিহ্যাব সদস্যরা জমির মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তি বা সমঝোতায় যেতে পারেননি। কেউ নতুন করে প্ল্যান পাস করেননি। পুরাতন প্রকল্পগুলো নিয়েই অনেকে কাজ করছেন। ফলে আগামীতে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে এবং দাম বাড়বে। আমরা রাজউকসহ ড্যাপের আহ্বায়ক এলজিআরডিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা তুলে ধরে ফার-এর পরিমাণ সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করবেন। আমাদের প্রত্যাশা নতুন ড্যাপে ফার-এর পরিমাণ সংশোধন করা হবে।
কামাল মাহমুদ বলেন, রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে সুন্দর সুন্দর নান্দনিক ভবন তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের বেশ কয়েকজন রিহ্যাব সদস্য অল্প জায়গায় কনডোমোনিয়াম প্রজেক্ট তৈরি করেছেন। অনেকের এই কনডোমোনিয়াম প্রজেক্টের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের।
আয়োজকরা জানান, এবারের ফেয়ারে ১৮০টি স্টল থাকছে। এ বছর ৩টা ডায়মন্ড প্যাভিলিয়ন, ৭টি গোল্ড স্পন্সর, ২২টি কো-স্পন্সর, ১৬টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে রিহ্যাব। বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় এ বছরের মেলাতেও দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় ৫ বার প্রবেশ করতে পারবেন। এন্ট্রি টিকিটের প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ দুস্থদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে। এন্ট্রি টিকিটের র্যাফেল ড্র’তে থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।
নোট : ছবি যেতে পারে
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।