
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শোমসপুর গ্রামের সাব্বির হোসেন (২১) ও আসলাম হোসেন (২১)। পাশাপাশি বাড়ির এই দুই যুবক একসঙ্গে খেলেছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকেও তারা ছিলেন সহপাঠী। বর্তমানেও তারা একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত শনিবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় একই সঙ্গে ছেড়েছেন পৃথিবী। পাশাপাশি কবরে হয়েছে তাদের দাফন। গতকাল রবিবার জেলায় আরও এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আরও এক জন। এছাড়া হবিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন আর দুই জন।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, গত শনিবার রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার কাদিরপুর খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসার সামনে মোটরসাইকেলের সঙ্গে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার যান নসিমনের মুখোমুখি সংঘর্ষে আহত হন সাব্বির ও আসলাম। তাদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন রাসেল হোসেন (২২) নামের আরও একজন মোটরসাইকেল চালক।
নিহত সাব্বির খোকসা উপজেলার শোমসপুর গ্রামের আমিরুল ইসলামের ছেলে আর আসলাম মৃত আজম হোসেনের ছেলে। তারা কুষ্টিয়া সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল।
থানা-পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, খোকসা বাজার থেকে দুটি মোটরসাইকেল একসঙ্গে শোমসপুরের দিকে যাচ্ছিল। আর শোমসপুর থেকে ছেড়ে আসা নসিমনটি খোকসা বাজারের দিকে যাচ্ছিল। কাদিরপুর খাদিজাতুল কোবরা মহিলা মাদ্রাসার সামনে দুই মোটরসাইকেলের সঙ্গে নসিমনটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল চালক সাব্বির হোসেন ও রাসেল আহমেদ এবং আরোহী আসলাম হোসেন গুরুতর আহত হন। নিহত আসলামের খালাতো ভাই ফজলুর রহমান বলেন, সাব্বির ও আসলাম আত্মীয় হলেও দুজনকে সবাই ভালো বন্ধু হিসেবে চিনতেন। তাদের বেড়ে ওঠা, চলাফেরা, পড়াশোনা একই সঙ্গে ও একই প্রতিষ্ঠানে। এভাবে দুজন একসঙ্গে চলে যাবেন, কেউ ভাবতে পারেননি তারা। তাদের কবরও পাশাপাশি হয়েছে।
জেলার অপর দুর্ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সকাল ৯টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের লক্ষীপুর ভাটাপাড়া এলাকায়। সেখানেও ইঞ্জিনচালিত নসিমন ও বালু ভর্তি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নছিমনের যাত্রী এনামুল (৪৫) নামে এক পান ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এ-সময় ওই নছিমনের আরও ২ যাত্রী আহত হয়েছেন। নিহত এনামুল ঝিনাইদহের হরিণাকু- উপজেলার মৃত আজব মালিথার ছেলে।
মাধবপুর (হবিগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার মৌজপুরের কাছে দুই সিএনজি চালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে এরুপ খান (৬৫) নামের এক ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ট্রাকচাপায় মতি মিয়া নামের এক অটোরিকশা চালক নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার কুশাব এলাকার এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়কে ঘটে এ দুর্ঘটনা। ঘটনার পর ট্রাকচালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। ঘাটক ট্রাক জব্দ করেছে পুলিশ। নিহত মতি মিয়া উপজেলার কৃষ্ণনগর এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে।
লেখার অরিজিনাল হেডলাইন যে এটা ছিল না শুরুতে স্বীকার করে নেওয়া ভালো। বিদেশে বিশ্ব পর্যায়ের যেকোনো টুর্নামেন্ট কভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করবেন। টাইম ডিফারেন্সের সঙ্গে যুদ্ধ করে লেখাটা ঠিকমতো ধরানোর জন্য তাদের খেলা চলতে চলতে নানানরকম হেডলাইন মাথায় খেলাতে খেলাতে যেতে হয়। পুরস্কার বিতরণ শেষ হলো। সব শুনলেন। তারপর ধীরেসুস্থে শিরোনাম ভাবলেন সেটা এমবাপ্পেকে পেনাল্টি বক্সে ছেড়ে রাখার মতো মৃত্যুকামী বিলাসিতা।
দুটো ম্যাচে কোনো তুলনাই হয় না। আজকেরটা শতাব্দীসেরা বিশ্বকাপ ফাইনাল। অন্যটা যত বাহারিই হোক, পাঁচ দলের ওয়ানডে ফাইনাল। তবু শারজায় সেই জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলে ছক্কার ম্যাচ রিপোর্টের মতো আজ প্রতিনিয়ত দলেছে। এমবাপ্পের দ্বিতীয় পেনাল্টির পর শেষ হেডলাইন ল্যাপটপে কম্পোজ করে রাখি। জানতাম এটাই ব্যবহার হবে।
বিশ্ব শ্রেষ্ঠ প্রেমকাহিনীর সেই ভাঙা কাচের টুকরো।
প্রথম প্যারাও লেখা হয়ে যায়। জীবনে কিছু কিছু ঘটনা এমনই অদৃষ্টনির্দিষ্ট থাকে যে যতরকম ফুল ফোটানোরই চেষ্টা হোক। যাত্রাপথ যত বাহারি আর ঐশ্বরিক দেখতে লাগুক। ভবিতব্য ঠিক সেই ধূসর, বাঁকাচোরা গলিতে ঢুকিয়ে দিয়ে অন্তহীন রোমান্সের পেটে ছুরি চালিয়ে দেয়। কাহিনীগুলো অমর হয়ে থাকে। কিন্তু শেষ হয় ট্র্যাজিক বিন্দুতে।
লাইলি-মজনু।
রোমিও-জুলিয়েট।
মার্ক আন্টনি-ক্লিওপেট্রা।
টাইটানিকে রোজ অ্যান্ড জ্যাক।
লিওনেল মেসি ও বিশ্বকাপ।
কে জানত যে মারাত্মক ভুল। আধুনিক পৃথিবীর ফুটবল-ঈশ্বরকে প্রাচীন প্রেমকাহিনী বা ক্ল্যাসিকসের নিরিখে মাপতে নেই। ঈশ্বর তার নিজের মতো করে মর্ত্যরে রাজমুকুট ছিনিয়ে নেন। নইলে আজকের অমর ফুটবল রাত বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে আবির্ভূত হয়?
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর গোল্ডেন বল পুরস্কার নিতে গিয়ে মেসির হেঁটে যাওয়া যতদিন বেঁচে থাকব মনে থাকবে। জীবজগতে কোনো মনুষ্য বিশ্বসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে এমন নিস্পন্দ, রক্তশূন্য আর প্রাণহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারেÑ না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আর এদিনকার মেসি? কাপ আর একগাল হাসি নিয়ে এমন নাচতে নাচতে ভিকট্রি স্ট্যান্ডে অলরেডি জড়ো হয়ে যাওয়া তার টিমমেটদের দিকে এগোচ্ছিলেন, যেটা বিশ্বকাপ আর্কাইভে নিশ্চয়ই চিরকালের জন্য ফ্রেমবন্দি থাকল।
শুধু তো বিশ্বকাপ নয়। শুধু তো গোল্ডেন বল নয়। আর একটা সুখ খেলায় তিনি বহুদিন অনিচ্ছা সত্ত্বেও হজড়িয়ে গিয়েছেন গোটের লড়াই। খুব কম মেম্বার এই ক্লাবে। কারণ গোট হলো গ্রেটেস্ট প্লেয়ার অব অল টাইম। ক্লাব ফুটবলের মুকুটহীন অধীশ্বর হয়েও স্রেফ দেশকে ম্যারাডোনার মতো বিশ্বকাপ দিতে পারেননি বলে কোথায় একটা কর্ণ সিন্ড্রোমে রেখে দেওয়া হতো মেসিকে। লুসাইল স্টেডিয়াম তাকে আগের কয়েকটা কঠিন ম্যাচ জিতিয়ে লাকি মাঠের সংস্কারে ঢুকছিল। রবিবার রাতে তাকে সুতপুত্র থেকে বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুনে রূপান্তরিত করে গেল। ফুটবল ইতিহাসের এমন মোহিনী রাত কবে এসেছে যে এক ৩৫ বছরের আপাত বৃদ্ধ ফুটবলার চূড়ান্ত প্রতিকূলতা এবং বিপক্ষ যৌবনের উদ্দাম দাপাদাপি সামলে স্থিতধী এবং জয়যুক্ত থেকে সিংহাসনে বসলেন।
সকালে স্যার জিওফ হার্স্টের ইন্টারভিউ দেখে অবাক লাগল। হার্স্টকে গত ২০ বছর ধরে ইন্টারভিউয়ের ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এমনিতে সেই কোন প্রাচীনকালে তিনি বিশ্বকাপ ফাইনাল জিতিয়েছিলেন ইংল্যান্ডকে। ১৯৬৬-তে যে খেলত তার ইন্টারভিউ পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়া উচিত। কিন্তু হার্স্ট এখনো এমন ঠাটবাটে থাকেন যে ম্যানেজার অতিক্রম করে পৌঁছনোই যায় না। স্বদেশীয় কাগজে এদিন তার সাক্ষাৎকারের বক্তব্য হলো এই ৮১ বছর পৌঁছে তার প্রার্থনা জীবদ্দশায় কোনো কাপ ফাইনালে যেন হ্যাটট্রিক না হয়। থলে বিশ্বকাপ ফাইনালে হ্যাটট্রিকের রেকর্ড অক্ষত রেখে তিনি ওপারে যেতে পারেন।
কে জানত সেই প্রার্থনাকে হাস্যকরতম পর্যায়ে নামিয়ে আনতে তিনি কিলিয়ান এমবাপ্পে করবেন চার গোল আর মেসি তিন। হার্স্টের একটা গোল নিয়ে আজও বিতর্ক থেকে গিয়েছে যে বল ঠিকমতো গোললাইন ক্রস করেছিল কি না? ম্যারাডোনা তো ঠিকই বলতেন যে ইংরেজরা হ্যান্ড অব গড গোল নিয়ে এত কথা লেখে। ওদের নিজেদের চুরি নিয়ে তো টুঁ-শব্দটি করে না। আজকের নায়ক ও বিজিতকে নিয়ে ভবিষ্যৎ তেমন কোনো প্রশ্ন তোলার সাহস পাবে না।
ইংল্যান্ড মিডিয়া এত নেগেটিভ সব কথা লিখেছিল কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে। ঠিক যেমন পেছনে লেগেছিল ব্রাজিলের। কাতারের রাজা শুধু পুরস্কারই ফিফা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হাসিমুখে তুলে দিলেন না, ফাইনাল ম্যাচের মহিমায় আরও বেশি করে আধুনিক সময়ের শ্রেষ্ঠ বিশ্বকাপ সংগঠন হিসেবে আলোকিত হয়ে থাকলেন। শতাব্দীসেরা ফাইনাল তো নিঃসন্দেহে। তর্কযোগ্যভাবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ম্যাচ।
কোনো জ্যোতিষী, কোনো বেটিং বাজে, কোনো বিশেষজ্ঞের কোনোরকম পূর্বাভাস মেলেনি। কেউ জানত গ্রিজমানকে তুলে নিতে হবে কোচকে? কেউ জানত জিরুÑ ফ্রান্সের আর এক সোনালি রেখা তাকে যে তুলতে হবে? কেউ জানত যে ডি মারিয়া সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি। চোটের জন্য একইভাবে মিস করেছেন ২০১৪ ফাইনাল। তিনি নেমে গোল শুধু করবেন না। আর একটা গোলের পেছনে থাকে পেনাল্টি আদায় হবে তার জন্য? কেউ ভেবেছিল আলভারেজকেও পুরো সময় মাঠে রাখা হবে না? কেউ জানত এমবাপ্পে ফাস্ট হাফে চূড়ান্ত নিরাশ করে দর্শকসদৃশ উপস্থিতি রাখবেন? কেউ জানত সেই এমবাপ্পেই দ্বিতীয়ার্ধে এমন তোড়ফোড় শুরু করবেন যে আর্জেন্টিনা রক্ষণ বাদ দিচ্ছি। মেসিরও সাময়িক গ্রহণ হয়ে যাবে। মনে হতে থাকবে যৌবনেরই ঝড় উঠেছে আকাশ পাতালে।
তার আগে আর্জেন্টিনা যেভাবে শুরু করেছিল তাতে মনে হচ্ছিল একটা টিম তো শুধু খেলছে। আর প্রথমার্ধেই ২-০ এগিয়ে যাওয়া তারা নিশ্চিন্তে জয়ী দেশের মেডেলগুলো গলায় পরবে। সুনীল গাঙ্গুলি আর ভালোভাবে বঙ্গজ পাঠককে বুঝিয়েছেন যে ফ্রান্স হলো ছবির দেশ। কবিতার দেশ। কিন্তু তখনকার মতো কবিতা, ছবি আর গান তো আর্জেন্টিনীয়দের পায়ে। মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে। মেসি অন্য ম্যাচে খেলায় ঢুকেছেন একটু দেরিতে। সবিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আড়াই মিনিট থেকে তিনি ধ্বংসাত্মক। যেমন সেরা চ্যাম্পিয়নের নার্ভ তেমনি তাগড়া শরীর। বিপক্ষের চোরাগোপ্তা হাত চালানোয় কানে যে প্রচ- চোট পেলেন সেটা সামলানোর জন্য বিশ্বসেরা মনও লাগে।
কী করেননি মেসি! দুটো পেনাল্টিসহ তিনটে গোল। দুটো ফাইনাল পাস। দুটো গোলে তীব্রতম শট। অবিরাম দুদিকে বল বাড়িয়ে যাওয়া। এমনকি বিপক্ষ আক্রমণ বাঁচাতে হেড করে কর্নার করা। সবাই জানত আধুনিক ফুটবল ঈশ্বরের একটা পা। বাঁ পা। আজ জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোল তো ডান পায়ে করলেন। ঈশ্বর যেন এই জবাবটাও চুকিয়ে দেওয়ার প্রতীক্ষারত ছিলেন।
তবু এত কিছুর পরও তিনি আমার পুরনো হেডলাইন অনুযায়ী ব্যর্থ অমর প্রেম কাহিনী হয়ে থাকতেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজের সাহায্য না পেলে। কদিন আগে মিডিয়া সেন্টারে আর্জেন্টিনার দুজন সাংবাদিক বলছিলেন, এমিলিয়ানো থাকলে নাকি ২০১৪-এর ফাইনাল তারা হারতেন না। মারাকানার সেই গোলটা মিডিয়া গ্যালারির দিকে হয়েছিল। কাছ থেকে দেখেছিলাম বলে মৃদু প্রতিবাদ করি যে মারিও গোতজে চেস্টট্র্যাপ করে যেভাবে কাছ থেকে ঠেলেছিলেন তাতে কিপারের কিছু করার ছিল না। সকালে ইউটিউবে জার্মানির গোলটা আবার দেখে এবং অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগে এমিলিয়ানোর এগিয়ে এসে অব্যর্থ গোল বাঁচানো দেখে মনে হচ্ছে এড়ে তর্ক করছিলাম।
টাইব্রেকারে দুরন্ত বাঁচানো বাদ দিচ্ছি। শেষ মিনিটে তার এগিয়ে এসে অব্যর্থ গোল বাঁচানো না ঘটলে তো খেলার শেষে এমবাপ্পেকে এত ম্রিয়মাণ লাগার কথা নয়। তখনই বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা আবার খেতাব পেয়ে যায় ৪-৩। গোল্ডেন বল নিয়ে মেসির নিস্পন্দ হাঁটা আবার প্রত্যক্ষ করতে হয় বিশ্বকে। আমার কাছে ফাইনালের ওটাই টার্নিং পয়েন্ট।
আর বিশ্ববাণিজ্যের বাজারে বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকা ফুটবলের টার্নিং পয়েন্টÑ আজকের ফাইনালের মহাজাগতিক মান। নাহ, এই গ্রহে যতদিন একটি লোকও ফুটবলে কেউ লাথি মারবে, ততদিন জীবিত থাকবে মেসিয়ানার জ্যোৎস্নারাত!
৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা। লিওনেল মেসি দেশের তৃতীয় বিশ্বকাপ সাফল্যে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকেই। লুসাইল স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনার জয়ে দুই গোল করেছেন। একটি নির্ধারিত সময়ে, অন্যটি অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে। টুর্নামেন্টে তার গোল সাতটি। সঙ্গে অ্যাসিস্ট তিনটি। তাতে বিশ্বকাপের সঙ্গে গোল্ডেন বলটা মেসির হাতেই মানায়। হলোও তাই। বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন মেসি।
১৯৮২ সাল থেকে অফিশিয়ালভাবে দেওয়া হচ্ছে গোল্ডেন বল পুরস্কার। মেসিই এখন পর্যন্ত একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পুরস্কারটি দ্বিতীয়বার পেলেন।
এর আগে ২০১৪ বিশ্বকাপেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন এ খুদে জাদুকর। তবে সেবার তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল রানার্সআপ হয়ে। এবার গোল্ডেন বল জিতে যেন প্রাপ্তির পূর্ণতা পেলেন। কাতার বিশ্বকাপ দুই হাত ভরে দিয়েছে মেসিকে। বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে করেছেন বেশ কিছু রেকর্ডও। কাতার আসরের গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্তÑ অর্থাৎ শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল। সব রাউন্ডেই মেসি পেয়েছেন গোলের দেখা। সাত ম্যাচের ছয়টিতেই করেছেন গোল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এ রেকর্ড শুধু মেসিরই।
বিশ্বকাপে মেসির মোট গোলসংখ্যা ১৩টি। যা মেসিকে তুলেছে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় চার নম্বরে। ১৩টি করে গোল মেসি এবং ফ্রান্সের জিস্ত ফন্তেইনের। ১৯৫৮ সালে এক আসরেই ১৩ গোল করেছিলেন ফন্তেইন। বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (২৬টি) খেলার রেকর্ডও এলএমটেনের। ২৫ ম্যাচ খেলেছেন জার্মানির লোথার ম্যাথিউস। চারটি বিশ্বকাপ খেলার পথে ইতালির পাওলো মালদিনি ২ হাজার ২১৭ মিনিট খেলেছিলেন। মেসি খেললেন ২ হাজার ৩১৫ মিনিট। বিশ্বকাপে মেসির গোলে অবদান অর্থাৎ (গোল ও অ্যাসিস্ট) সংখ্যা ২১। গোল করেছেন ১৩টি, অ্যাসিস্ট ৮টি। ফাইনালের দুই গোলে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৯৮-তে। গোল্ডেন বল পুরস্কার হাতে নিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমু খেয়েছেন মেসি।
প্রায় এক মাস হয়ে গেল, সন্ধান মিলছে না ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে শাকিবের। তারা দেশে আছে নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছে, তাও নিশ্চিত নয়।
পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গি, সন্ত্রাসী ও অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের ধরতে সারা দেশে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১৫ ডিসেম্বর পুলিশের বিশেষ অভিযান শেষ হয়েছে। এই সময়ে বিএনপির ২ হাজার ৭০০ নেতাকর্মী, জামায়াতের আমির ও তার ছেলে এবং কিছু মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হলেও উল্লেখযোগ্য কোনো সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ বা জঙ্গি গ্রেপ্তার হয়নি। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিএনপির দাবি, বিশেষ অভিযান মূলত তাদের সমাবেশকে কেন্দ্র করে চালানো হয়েছিল। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে। পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা বিএনপির দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, নাশকতা ও জ্বালাও-পোড়াও মামলার আসামিদের ধরা হয়েছে। কাউকে হয়রান করা হয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের বিশেষ অভিযান সফল হয়েছে। সন্ত্রাসী ও বেশ কিছু জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজনৈতিক দলকে দমন করার জন্য অভিযান চালানো হয়নি। তবে আদালতপাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকে ধরতে পুলিশ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। আশা করি, অল্প সময়ের মধ্যে তাদের সন্ধান পাওয়া যাবে।’
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের অবস্থান এবং কোন রুট ধরে তারা পালিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো অন্ধকারে গোয়েন্দারা। এমন পরিস্থিতিতে সারাক্ষণ মাঠে থাকছে র্যাব-পুলিশের একাধিক ইউনিট। তাদের ধারণা, শিগগির জঙ্গিরা গ্রেপ্তার হবে। জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সমন্বয়ক হিসেবে মেহেদী হাসান অমি নামে এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই দফায় ১২ দিনের রিমান্ডে নিয়ে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে অমি চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে দাবি তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের। ওই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বরখাস্ত মেজর জিয়ার নাম সামনে এসেছে। জিয়াসহ ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি এখন গোয়েন্দাদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি ইদি আমিন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ঘটনার দিন সে একটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে। তবে রিমান্ডে তার কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
গত ২০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকার সিএমএম আদালতে শুনানি শেষে প্রিজন ভ্যানে তোলার ঠিক আগমুহূর্তে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি সামির ও শাকিবকে ছিনিয়ে নেয় তাদের সহযোগী জঙ্গিরা। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকার শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি।
দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে সারা দেশে রেড এলার্ট জারি করে পুলিশ সদর দপ্তর। ওই ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট। একপর্যায়ে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার সমন্বয়ক হিসেবে অমিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিট।
পুলিশ-সূত্র জানায়, রিমান্ডে জঙ্গি অমির কাছ থেকে অর্থ ও আশ্রয়দাতাদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। তার দেওয়া তথ্যমতে, পুলিশ জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগে জামায়াতের আমির ডাক্তার শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া আরও ২০ জনের নামের তালিকা রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। তাদের অনেকের অবস্থান দেশের বাইরে। কাট-আউট পদ্ধতিতে চলা জঙ্গিদের নাম ছাড়া কোনো তথ্যই দিতে পারেনি অমি। তার দেওয়া নামগুলো সাংকেতিক বলে গোয়েন্দা নিশ্চিত হয়েছে। এরপর প্রকৃত অর্থদাতাদের তালিকা পেয়েছে সিটিটিসি। জামিন নিয়ে লাপাত্তা থাকা জঙ্গিরাই এখন নানাভাবে সক্রিয় রয়েছে। তারা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পলাতক জঙ্গিরা তাদের সহযোগীদের ডেরায় পৌঁছে গেছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি যেসব জঙ্গি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়েছে, তাদের আমরা গ্রেপ্তার করেছি। বেশ কয়েক জন জঙ্গি র্যাবের নজরদারির মধ্যে রয়েছে। তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব বলে আশা করছি। জঙ্গিদের আক্রমণাত্মক হওয়ার সামর্থ্য নেই। র্যাব বহুমুখী কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রম চালাচ্ছে। যখনই জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার ও অর্থসংগ্রহের চেষ্টা করছে, তখনই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু অভিযান নয়, জঙ্গিবাদবিরোধী জনমত গঠনে র্যাব ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে।
ডিএমপির উপকমিশনার (জনসংযোগ) ফারুক হোসেন বলেন, ‘আইজিপির নির্দেশে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান হয়েছে গত ১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অভিযানে ডিএমপিও অংশগ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে ডিএমপির ৫০টি থানায় অন্তত ১ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের ধারণা ছিল, বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু তা ভুল ধারণা। বিশেষ অভিযান চালানো হয় ওয়ারেন্টের আসামি, পেশাদার অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি গ্রেপ্তারে ও জঙ্গিবাদ দমনে। মাঝেমধ্যেই পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়। এটি রুটিনওয়ার্ক।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করতে কাজ করছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দারা। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত তারা ধরা পড়বে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিশেষ অভিযানে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশও বিবেচ্য ছিল। এই অভিযান না চালালে দেশে বড় ধরনের নাশকতা ঘটতে পারত। তবে অভিযানে বড় ধরনের অপরাধী গ্রেপ্তার হয়নি। ধরা যায়নি পালিয়ে যাওয়া দুই জঙ্গিকেও। তারা দেশে নাকি বিদেশে, আমাদের কাছে তথ্য নেই।’
রাজধানীর চকবাজারের ইমামগঞ্জ লেনে হার্ডওয়্যার মার্কেটের দোকানমালিক মো. দেলোয়ার হোসেন। ২২ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন আশা এন্টারপ্রাইজ ও আফসার এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি হার্ডওয়্যারের দোকান। দোকানের ওপর ও ভেতরে ছিল দুটি গুদাম। গত শনিবার রাতে হার্ডওয়্যার মার্কেটের আগুনে তার দোকান ও গুদাম যখন জ¦লছিল, তখন দূরে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না দেলোয়ার হোসেনের। আগুনে পুড়ে গেছে তার স্বপ্নগুলোও।
গতকাল রবিবার দুপুরে ইমামগঞ্জ লেনের হার্ডওয়্যার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, পোড়া দোকানের সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন দেলোয়ার। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে মার্কেটে দোকানদারি করছি। একসময় অন্যের দোকানে কর্মচারীর কাজ করলেও বছর পাঁচেক আগে নিজেই দুটি পজিশন নিয়ে দোকান ও গুদাম দিয়েছি। সেখানে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল ছিল, যার সবই নষ্ট হয়ে গেছে।’
গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হার্ডওয়্যার মার্কেটটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১টা ৫ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আগুনে একটি মন্দির ও মার্কেটের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
দোকানমালিকদের অভিযোগ, আগুন লাগার অন্তত ৩০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসেছে। এ কারণে দোকান ও গুদামগুলো পুড়ে গেছে। মার্কেটটির কোনো দোকানে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছেন তারা। মোট কতটি দোকান ও গুদাম পুড়েছে তার সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুন নেভাতে তাদের বেগ পেতে হয়েছে। রাস্তা সরু হওয়ায় ঢুকতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। ঘটনাস্থল থেকে ২০০ মিটার দূরে গাড়ি রেখেই কাজ করেছেন ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের ইন্সপেক্টর আনোয়ারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাত ১০টা ৪৪ মিনিটে আগুন লাগার খবর পেয়ে সাত মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। পরে একে একে ১০টি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে। পানির স্বল্পতার কারণে আমাদের পানিবাহী গাড়ি নিতে হয়। এ ছাড়া পাশের নদী ও অন্যান্য ভবনের রিজার্ভ ট্যাংকি থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানো হয়েছে। আগুনের সূত্রাপাত ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো জানা যায়নি।’
গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সরু রাস্তার দুই পাশে হার্ডওয়্যারের সারি সারি দোকান ও গুদামঘর। টিনের দোকান ও গুদাম পুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। মার্কেটের ছয়টি টিনের বড় দোকান একেবারে পুড়ে গেছে। এ ছাড়া আশপাশের ৬টি বহুতল ভবনে থাকা দুই শতাধিক দোকান ও গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। পোড়া মালামালের বেশির ভাগই ছিল তার, তারকাঁটা, লোহা, সুতি, ঝাড়ু, প্লাস্টিক ও ইলেকট্রনিক পণ্য। মার্কেটের আশপাশের যে ৬টি বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার বেশির ভাগই গুদাম। এসব ভবনের একটিতে কয়েকতলায় লোকজনও থাকে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাসা ছেড়ে বের হয়ে আসায় কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
স্থানীয় লোকজন জানান, অন্তত ১ হাজার দোকান রয়েছে ইমামগঞ্জ লেনে। আগুন লাগার পর সবাই আতঙ্কে ছিলেন। তবে আগুন খুব একটা ছড়াতে না পারায় বেশির ভাগ দোকান অক্ষত আছে।
তারা জানান, চকবাজারের ইমামগঞ্জ লেনের মার্কেটে আগুনের ঘটনা নতুন নয়। বছর তিনেক আগে নুরানী সেন্টারের দোকানেও আগুন লাগে। তখনো কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত মেসার্স শওকত অ্যান্ড ব্রাদার্সের ছয়তলা ভবনের পুরোটা বিভিন্ন পণ্যের গুদাম। সেখানে ৫০টির বেশি ছোট ছোট গুদামঘর রয়েছে। আগুনে গুদামের বেশির ভাগ মালামাল পুড়ে গেছে। গতকাল বেলা ২টার দিকেও সেই ভবন থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, মেসার্স শওকত অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের ভবনটির সব তলায় প্লাস্টিক পণ্যের গুদাম।
পাশের চারতলা ভবনের পুরোটাই অগ্রণী ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। আগুনে ব্যাংকের মালামাল পুড়ে গেছে। ভবনটিতে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তা প্রহরী বাধা দেন। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভেতর মূল্যবান জিনিসপত্র আছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসেছেন। বাইরের লোকের প্রবেশ নিষেধ।
পাশের সাততলা আরেকটি ভবনের (খান প্লাজা) বেশির ভাগজুড়েই মানুষের বসবাস। ভবনটির নিচতলায় হার্ডওয়্যারের দোকান রয়েছে।
হাবিব অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি দোকানের কর্মচারী জিহাদুল মিজান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আগুনের তাপে তাদের দোকানের অনেক মালামাল গলে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ভবনটির পাশের আরেকটি ভবনের নিচতলায় বিসমিল্লাহ স্টোরের কর্মচারী জাকির হোসেন জানান, তার দোকানে কোটি টাকার মালামাল আছে। অল্পের জন্য পোড়েনি। পুড়ে যাওয়া দোকান ও গুদামগুলোর প্রতিটিতেই কোটি টাকার ওপরে মালামাল ছিল বলে তিনি জানান।
শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব ফেয়ার-২০২২। আবাসন ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় এ আয়োজন আগামী ২১ ডিসেম্বর বুধবার থেকে ২৫ ডিসেম্বর রবিবার পর্যন্ত চলবে। বুধবার সকাল ১১টা থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম-এ ফেয়ারের উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। মেলার প্রথম দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা দুপুর ২টা থেকে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। বাকি দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। এ বছর মেলায় ১৮০টি স্টল অংশ নিচ্ছে।
গতকাল রবিবার রাজধানীর প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রিহ্যাব ফেয়ার ২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিয়েল এস্টেট হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব নেতারা এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি (অর্থ) ও মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী সোহেল রানা লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে রিহ্যাবের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের পরিচালক এবং প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান মো. সুলতান মাহমুদ, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম (ইসলাম) প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব-এর সহ-সভাপতি (প্রথম) কামাল মাহমুদ বলেন, নতুন ড্যাপের কারণে আবাসনের স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। সবার জন্য মানসম্মত আবাসন আরও কঠিন হয়ে যাবে। ড্যাপ নিয়ে এক বছর আগে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আমরা যে শঙ্কার কথা বলেছিলাম সেই শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। নতুন ড্যাপের ঘোষিত ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) হ্রাসের কারণে মূল ঢাকায় বেশিরভাগ ভবন হবে ৪ থেকে ৫ তলা। ফলে আগামীতে আবাসন সংকট আরও প্রকট হবে। উচ্চহারে বাড়বে ফ্ল্যাটের দাম এবং আকাশচুম্বী হবে বাড়িভাড়া। কারণ ফ্ল্যাটের চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।
তিনি বলেন, নতুন ড্যাপের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর বিগত প্রায় ৪ মাসে আমাদের রিহ্যাব সদস্যরা জমির মালিকের সঙ্গে কোনো চুক্তি বা সমঝোতায় যেতে পারেননি। কেউ নতুন করে প্ল্যান পাস করেননি। পুরাতন প্রকল্পগুলো নিয়েই অনেকে কাজ করছেন। ফলে আগামীতে ফ্ল্যাটের সংকট তৈরি হবে এবং দাম বাড়বে। আমরা রাজউকসহ ড্যাপের আহ্বায়ক এলজিআরডিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা তুলে ধরে ফার-এর পরিমাণ সংশোধনের দাবি জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করবেন। আমাদের প্রত্যাশা নতুন ড্যাপে ফার-এর পরিমাণ সংশোধন করা হবে।
কামাল মাহমুদ বলেন, রিহ্যাব সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণেই আজ শহরগুলোতে সুন্দর সুন্দর নান্দনিক ভবন তৈরি হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের বেশ কয়েকজন রিহ্যাব সদস্য অল্প জায়গায় কনডোমোনিয়াম প্রজেক্ট তৈরি করেছেন। অনেকের এই কনডোমোনিয়াম প্রজেক্টের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের।
আয়োজকরা জানান, এবারের ফেয়ারে ১৮০টি স্টল থাকছে। এ বছর ৩টা ডায়মন্ড প্যাভিলিয়ন, ৭টি গোল্ড স্পন্সর, ২২টি কো-স্পন্সর, ১৬টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩ অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে রিহ্যাব। বিগত সময়ের ধারাবাহিকতায় এ বছরের মেলাতেও দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী মেলার সময় ৫ বার প্রবেশ করতে পারবেন। এন্ট্রি টিকিটের প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ দুস্থদের সাহায্যার্থে ব্যয় করা হবে। এন্ট্রি টিকিটের র্যাফেল ড্র’তে থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।
নোট : ছবি যেতে পারে
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।