
বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর । তিনি বলেন, বিএনপির ৫ আসন শূন্য হবে এটা অপ্রত্যাশিত ছিল। তা ছাড়া এই বিষয়ে বাজেটও ধরা হয়নি। তবে নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারে কোনো সমাধান নয় বলে মনে করেন তিনি। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর এ কথা জানান।
বাজেটস্বল্পতায় বিএনপির ছেড়ে দেওয়ার কারণে শূন্য আসনের উপনির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনেক নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ছিল না, অথচ কোনো অঘটন ঘটেনি। এবার নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হবে, এতে ব্যালান্স হবে। ফলে নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা লাগবে না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিবি) থোক বরাদ্দ দিয়ে সিসি ক্যামেরা কেনা যায় কি না, এমন প্রশ্নে মো. আলমগীর বলেন, এটি দিয়ে কেনা সম্ভব নয়। এডিপির টাকা প্রকল্পে খরচ করা যায়। সিসি ক্যামেরা রেভিনিউয়ের টাকায় কিনতে হয়। তারপরও ভোট হতে বাকি আছে। যদি প্রয়োজন হয় তবে কমিশন বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতেও পারে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেওয়ার বিষয়ে আলমগীর বলেন, আদালতের রায় অফিশিয়ালি পেলে কমিশন বসে সিদ্ধান্ত নেবে। সব সিদ্ধান্ত কোর্টের আদেশ দেখে নিতে হবে।
২০১৮ সালের ১৪ জুন নির্বাচন কমিশন এক নোটিশের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন ও চালান জমা না দেওয়াসহ কয়েকটি কারণে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধিত না করার বিষয়টি জানালে, ওই নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন নাজমুল হুদা। পরে ১৪ আগস্ট তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। এরপর ৪ নভেম্বর এ বিষয়ে রায় দেওয়া হয়। পরে এ নিয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন।
চট্টগ্রাম বন্দরে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধার মধ্যে এখনই ভেড়ানো যাবে বড় দৈর্ঘ্যরে জাহাজ। শুধু দৈর্ঘ্য নয়, বেশি ড্রাফটের (গভীর) জাহাজ ভেড়াতেও কোনো সমস্যা নেই। চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে গত তিন বছর ধরে গবেষণা করা যুক্তরাজ্যের বিশ^খ্যাত প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়ালিংফোর্ড তাদের রিপোর্টে এ সুপারিশ করেছে। আর তাদের সুপারিশ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড সভায় অনুমোদনও পেয়েছে। সেই আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে (যেখানে জাহাজ ভেড়ানো হয়) বর্তমানে সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো হয়ে থাকে। এর চেয়ে বড় দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ভেড়ানো নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছিল। সেই আলোকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্ণফুলী নদী ও চ্যানেল (যেখান দিয়ে জাহাজ চলাচল করে) নিয়ে স্টাডি করার জন্য বিশ^ব্যাপী নেভিগেশন (জাহাজ) চ্যানেল নিয়ে গবেষণা করা যুক্তরাজ্যের এইচআর ওয়ালিংফোর্ডকে দায়িত্ব দেয়। প্রতিষ্ঠানটি গত সেপ্টেম্বরে তাদের রিপোর্ট বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এইচআর ওয়ালিংফোর্ডকে মূলত তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমত ছিল বিদ্যমান অবকাঠামোতে চট্টগ্রাম বন্দরে বেশি দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ও বেশি গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে কি না? দ্বিতীয়ত, চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান অবস্থায় উভয়পাড়ের কোনো স্থানকে বন্দরের জেটি বা ইয়ার্ড সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করা যাবে কি না? তৃতীয়ত, চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘমেয়াদিভাবে সর্বোচ্চ কত বড় দৈর্ঘ্য ও বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে ওয়ালিংফোর্ড ২০২০ থেকে কর্ণফুলী নদী নিয়ে গবেষণা করে এবং রিপোর্ট প্রদান করে।
রিপোর্ট প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চিফ হাইড্রোগ্রাফার এম আরিফুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওয়ালিংফোর্ড এখনই চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার জাহাজ ভেড়ানোর সুপারিশ করেছে। অর্থাৎ আমরা চাইলে এখনই ভেড়াতে পারব। তবে বন্দরের বহির্নোঙর (সাগর ও নদীর মিলিত স্থানের কাছে), গুপ্তা বেন্ড (গুপ্তা খালের কাছের বাঁক), কাটিং বেন্ড (নৌবাহিনীর জেটির কাছের বাঁক), বাকলিয়ার চর ও সদরঘাট এলাকায় ড্রেজিং করলে সর্বোচ্চ ২২৫ মিটার দীর্ঘ ও ১১ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভেড়ানো যাবে।’
বন্দরের হাইড্রোগ্রাফি ও মেরিন ডিপার্টমেন্টের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এখন ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের একটি জাহাজ পরীক্ষামূলকভাবে ভেড়ানো যেতে পারে। প্রথমে একটি জেটিতে এবং পরবর্তীকালে বাকি জেটিগুলোতে ভেড়ানোর মাধ্যমে বন্দর এ লক্ষ্যে উন্নীত হতে পারে। আর পরীক্ষামূলকভাবে সফল হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে দৈর্ঘ্য ও ড্রাফটের বিষয়টি জানানো হবে। আর তা জানানো হলে বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো বড় জাহাজ আনবে চট্টগ্রাম বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও সচিব ওমর ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওয়ালিংফোডের রিপোর্ট আমরা গ্রহণ করেছি। এখন সেই রিপোর্টের আলোকে কখন কোন সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে তা পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বড় দৈর্ঘ্যরে জাহাজ ও বেশি ড্রাফটের জাহাজ ভিড়লে বেশি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসবে উল্লেখ করে চিটাগং চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সংস্থা সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশি কনটেইনার নিয়ে জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারলে জাহাজের ভাড়া কমে আসবে। আর ভাড়া কমে এলে পণ্যের দামও কমে আসবে এবং ভোক্তাপর্যায়ে জনগণ এর সুবিধা পাবে।’
এ বিষয়ে বিভিন্ন শিপিং কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে সর্বোচ্চ ২৪০০ একক কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারে। এখন দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার ও ড্রাফট ১০ মিটারে উন্নীত করা হলে সর্বোচ্চ ৩০০০ একক কনটেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে জাহাজের সংখ্যা কমে আসবে এবং পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে আরও সহজ হবে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র জন্মের বিরোধিতা করেছিল তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আরও সুনির্দিষ্ট করে বললে বাঙালি নিধনযজ্ঞে প্রকাশ্যে ইয়াহিয়া খানের মদদদাতা ছিলেন দেশটির তৎকালীন নিক্সন প্রশাসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা, পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। নিক্সন-কিসিঞ্জারের শীতল যুদ্ধকালীন কেন্দ্রীয় নীতি হয়ে উঠেছিল ভারত-সোভিয়েত ইউনিয়নকে (যার সবচেয়ে প্রভাবশালী অংশ ছিল রাশিয়া) ঠেকাতে বাংলাদেশের জন্মের বিরোধিতা করা। তাই বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগে পাকিস্তানকে রক্ষায় শেষ পদক্ষেপ হিসেবে একদিকে জাতিসংঘে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব, অন্যদিকে বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌবহর পাঠায় কিসিঞ্জারের বুদ্ধিতে চলা নিক্সন প্রশাসন। তবে তাদের হতাশ করে ভেঙে যায় পাকিস্তান, ১৬ ডিসেম্বর মুক্ত হয় বাংলাদেশ।
মুক্তিযুদ্ধের ৫১ বছর পর এবার ইউক্রেন যুদ্ধেও আলোচনায় সেই কিসিঞ্জার। তবে যুদ্ধবাজ এই নেতা এবার বলছেন যুদ্ধ বন্ধের কথা! রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি এড়াতে ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনার এখনই সময় বলে মন্তব্য তার। এমনকি রাশিয়াকে ভাঙার স্বপ্ন পারমাণবিক বিশৃঙ্খলার জন্ম দিতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। অবশ্য কিসিঞ্জারের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পডোলিয়াক টেলিগ্রামে বলেন, ‘জনাব কিসিঞ্জার, আপনি এই যুদ্ধের প্রকৃতি এবং বিশ্ব ব্যবস্থার ওপর এই যুদ্ধের প্রভাবের কিছুই বোঝেননি।’ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত মে মাসে দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কিসিঞ্জার। সেসময় ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে রাখার পক্ষে মত দেন।
এখন যুদ্ধ বন্ধের কথা বললেও অতীতে একাধিক দেশে যুদ্ধ ও প্রাণহানিতে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ৯২ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতার বিরুদ্ধে। প্রায় এক যুগ আগে ‘হেনরি কিসিঞ্জারের বিচার’ নামে একটি বই লেখেন ব্রিটিশ লেখক ক্রিস্টোফার হিচেনস। সেই বইয়ের তথ্য অনুযায়ী ষাট-সত্তর দশকে ইন্দোচীনে নিরপরাধ নাগরিকদের সুপরিকল্পিত হত্যার মদদ দেওয়া, ১৯৭৩-এ চিলির সামরিক অভ্যুত্থান ও বামপন্থি রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যার নীলনকশা করা, সাইপ্রাসের আর্চবিশপ ম্যাকারিয়সের হত্যা পরিকল্পনা, পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনীর গণহত্যায় সাহায্য করার কালিমা লেগে আছে হেনরি কিসিঞ্জার নামটির সঙ্গে।
হাবিবুর রহমান পলাশের উপস্থাপনায় দেশ রূপান্তর-বসুন্ধরা কিংস প্রতিদিনের কুইজ ২৭-এর পুরস্কার তুলে দেন গোল্ডেন মিডিয়ার সিইও রায়হান মাসুদ, হাইপার টেগ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শফিউল আলম এবং দেশ রূপান্তরের বিশেষ প্রতিনিধি আশরাফুল হক
বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে বিশেষ অভিযানের ১৭ দিনে সারা দেশে ৩৩ হাজার ৪২৯টি অভিযান চালিয়ে ১৫ হাজার ৯৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই সময়ে মামলা হয়েছে ৫ হাজার ১৩২টি। আর ওইসব মামলায় ২৩ হাজার ৯৬৮ জন অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ সময় ২৭টি দেশি-বিদেশি অস্ত্রের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ মাদকও উদ্ধার করা হয় বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে পুলিশের ব্যাপক সফলতা রয়েছে। ওয়ারেন্ট ও তালিকাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। তবে কাউকে হয়রানি করতে অভিযান চালানো হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, গত ২৯ নভেম্বর পুলিশ সদর দপ্তরের অপারেশন শাখার এক আদেশে দেশের সব পুলিশ ইউনিটের প্রধান ও সব জেলার পুলিশ সুপারদের বিশেষ অভিযান চালাতে বলা হয়। অভিযান শুরুর পর গ্রেপ্তার করা হয় ২৩ হাজার ৯৬৮ জনকে। এর মধ্যে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আছে ৭২ জন। উদ্ধার করা হয় ২৭টি অস্ত্র। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। এর মধ্যে ৮৬ হাজার ৫৯২ পিস ইয়াবা, ৫ হাজার ১১৫ বোতল ফেনসিডিল, ৭ হাজার ৫৮১ কেজি গাঁজা এবং ১১৭ গ্রাম ক্রিস্টাল ম্যাথ (আইস) রয়েছে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের পাশাপাশি ওয়ারেন্টের আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণে পুলিশের ওপর চাপ ছিল আদালতের। এ কারণে বিশেষ অভিযানে ওয়ারেন্টের আসামি গ্রেপ্তারের জন্য বেশি নজর দেওয়া হয়। শুধু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছেই ঝুলে আছে প্রায় ৩১ হাজার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি জিআর মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুলে আছে পুলিশের মিরপুর বিভাগে (৬ হাজার ৪৮৫টি)। আর সবচেয়ে কম জিআর পরোয়ানা রয়েছে উত্তরা বিভাগে (৭২টি)। সবচেয়ে বেশি সিআর পরোয়ানাও মিরপুর বিভাগে (৩৩৫টি)। আর সবচেয়ে কম সিআর পরোয়ানা তেজগাঁও বিভাগে (১৪২টি)। মোট হিসাবে সবচেয়ে বেশি পরোয়ানা ঝুলে আছে তেজগাঁও বিভাগে। এখানে মোট মুলতবি পরোয়ানার সংখ্যা ৯ হাজার ২৮০। আর সবচেয়ে কম মুলতবি পরোয়ানার সংখ্যা উত্তরা বিভাগে (৮৯২টি)।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ও দুজন পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিরা আমাদের বেশি ভোগাচ্ছে। তারা নানারকমের অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এমনকি ওইসব অপরাধী আদালত থেকে জামিন না নিয়ে প্রকাশ্য চলাফেরা করছে বলে আমরা তথ্য পাচ্ছি। কিছু দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যের সঙ্গে তারা আঁতাত করে অপকর্ম করছে। যারা তাদের সহায়তা করছে তাদেরও চিহ্নিত করা গেছে। যেকোনো সময় তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এ নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন মামলার আসামিদের পাশাপাশি অপরাধী পুলিশ সদস্যদের বিষয়েও আলোচনা হয়। যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইজিপি নির্দেশনা দিয়েছেন।
রংপুরের তারাগঞ্জে অ্যাম্বুলেন্স, অটোরিকশা ও ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষে পাঁচ জন নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ন্যাংটিছিরা ব্রিজ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। একই দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক পৃথক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে আরও চার জনের।
রংপুর প্রতিনিধি জানান, তারাগঞ্জে নিহতরা হলেন হাবিব উল্লা (৪৫), আজানুর রহমান (৪৪), শুকলাল বাসফোর (৫০), খাদেমুল (৩৮) ও সহিত উদ্দিন (৪)। তারা সবাই উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যার পর তারাগঞ্জ থেকে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা প্রায় ১০ জন যাত্রী নিয়ে সৈয়দপুরের চিকলীর দিকে যাচ্ছিল। পথে ন্যাংটিছিরা ব্রিজ নামক স্থানে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্স অটোরিকশাটিকে ধাক্কায় দেয়। এ-সময় একই দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগতির ট্রাক অটোরিকশাটিকে আবারও ধাক্কা দিলে সেটি দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন মারা যান। পরে আহতদের উদ্ধার করে তারাগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে রমেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনিও মারা যান। দুর্ঘটনার বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে নিশ্চিত করেছেন তারাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মাহবুব মোর্শেদ। তিনি জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে থেকে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করেন এবং আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, লরিচাপায় মো. আনিস (২৮) নামের এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ-সময় আহত হয়েছেন আরও দুজন। গতকাল সকালে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের আহরন্দ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মো. আনিস সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের ঘাটুরা গ্রামের আমীর হোসেনের ছেলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাহিদ হোসেন জানান, মোটরসাইকেলটি উল্টোপথে যাওয়ার সময় লরির সঙ্গে ধাক্কা খায়। এ-সময় এক যুবক নিহত হন।
এদিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে মোটরসাইকেলে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় হেদায়েত উল্যাহ (২০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন। নিহত হেদায়েত উল্যাহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি গ্রামের এনায়েত উল্যাহর ছেলে। ভাটিয়াপাড়া হাইওয়ে থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল পৌনে ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া কলম্বিয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে বাসচাপায় এক পোশাক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। নিহত পোশাক শ্রমিকের নাম আইয়ুব আলী (২৬)। তিনি দিনাজপুরের খানাসামা থানার সাহাপাড়া গ্রামের মৃত আফতাব উদ্দিনের ছেলে। তিনি স্থানীয় মোগড়খাল এলাকার বিসু মিয়া বাড়িতে ভাড়া থেকে গাছা এলাকায় টেক্স সোয়েটার কারখানায় চাকরি করতেন।
এদিকে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মক্তব থেকে বাড়ি ফেরার পথে অটোরিকশার চাপায় লামিয়া আক্তার (৬) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে। সে উপজেলার গফরগাঁও ইউনিয়নের উথুরী গ্রামের ছুবান মিয়ার মেয়ে।
গফরগাঁও থানার ওসি ফারুক আহম্মেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।