
ভর্তুকি কমাতে রেন্টাল-কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিডিপি)। তারা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তেলভিত্তিক এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়বহুল। পাশাপাশি বছর শেষে এসব কেন্দ্রকে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। সবদিক বিবেচনায় সংস্থাটি সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে ‘নো ইকেলট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ নীতিতে যাওয়ার। পাশাপাশি তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ আইন বাতিলের দাবি করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে ‘খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি): পরিচ্ছন্ন জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কী?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব পরামর্শ ও দাবি তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
ব্রিফিংয়ে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় জ্বালানি খাতে আমরা পিছিয়ে আছি। আইইপিএমপি-এ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টি উপেক্ষিত হয়নি, তবে অবহেলিত হয়েছে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তন যেভাবে চিন্তা করা দরকার সেটা পর্যাপ্ত হয়নি। ডকুমেন্টটি এখনো পর্যন্ত যেভাবে রয়েছে, প্রকারান্তরে তা এলএনজিকে উৎসাহিত করছে।’ তিনি আরও বলেন, ধীরে ধীরে আমাদের কয়লা ও জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসতে হবে। নতুন করে আর যেন কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর সঙ্গে কোনোভাবেই যেন এই খাতে আর ভর্তুকি না বাড়ে সে দিকে নজর দিতে হবে। কারণ ভর্তুকি বাড়লে তা সামাজিক নিরাপত্তার অন্য খাতগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিআরসি) নখদন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। তাদের ক্ষমতাকে খর্ব করে সরকার অযাচিতভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। তা ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ আইনের কারণে বিদ্যুৎ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হচ্ছে না। এর ফলে গোষ্ঠীবিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী। এই লক্ষ্যমাত্রাটা একটা স্লোগানের মতো।
এ সময় আইইপিএমপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এমন একটা খাত, এখানে অনেকেরই স্বার্থ রয়েছে। এই স্বার্থ দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরেও। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৌশলগত উপাদান, বাইরের স্বার্থকে পেছনে ফেলে দেশের স্বার্থটা কী হবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।’
সুশাসনের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও অনেকে জাতীয় গ্রিডে দিতে পারছে না উল্লেখ করে ফাহমিদা বলেন, আমরা মানুষের কাছে সুলভমূল্যে পৌঁছে দিতে পারছি না। অন্যদিকে ক্রমান্বয়ে বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছি। যাদের ভর্তুকির দরকার নেই, কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। এমন একটা ক্রিটিক্যাল সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, যখন মূল্য যৌক্তিকীকরণের কথা বলি, তখন সেটা সাধারণ মানুষের ওপর এসে পৌঁছায়। যেখানে সুশাসন দিয়ে বড় রকমের সাশ্রয় করতে পারি, আধুনিক টেকসই জ্বালানি খাত তৈরি করতে পারি, সেটার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকার শিশুদের দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী উচ্চমাত্রার ডায়রিয়া জীবাণু ই-কোলাই পেয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। গবেষণায় বলা হয়েছে, ই-কোলাই একটি ব্যাকটেরিয়া যা ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ।
দেশের চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ ও মতলব উপজেলার ১০০টি পরিবারের (প্রত্যেক উপজেলায় ৫০টি) মা ও শিশুদের মল এবং খাবার পানির নমুনা পরীক্ষা করে এমন তথ্য পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল বৃহস্পতিবার আইসিডিডিআর,বি এই গবেষণা প্রকাশ করে। গবেষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিষয়ক সাময়িকী প্লস প্যাথোজেন্সে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, হাজীগঞ্জের মানুষ অগভীর নলকূপের পানি পান করে। এখানকার পানিতে আর্সেনিকের উচ্চমাত্রা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, মতলবের পরিবারের সদস্যরা আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপের পানি পান করে।
হাজীগঞ্জের প্রতি লিটার পানিতে ৪৮১ মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক। অথচ খাবার পানিতে আর্সেনিকের সর্বোচ্চ সীমা হওয়া উচিত ১০ মাইক্রোগ্রাম। তবে মতলবের পানিতে আর্সেনিকের ঘনত্ব ছিল শূন্য মাইক্রোগ্রাম।
অবশ্য দুটি এলাকার ৮৪ শতাংশ পানি ও মলের নমুনায় ই-কোলাই পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মতলবের (২২ শতাংশ) পানির তুলনায় হাজীগঞ্জে (৪৮%) পানিতে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ই-কোলাই বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে, হাজীগঞ্জের ৯৪ শতাংশ ও মতলবের ৭৬ শতাংশ শিশুর দেহে ব্যাকটেরিয়াটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে কোনো এলাকার মায়েদের মধ্যে ই-কোলাই পাওয়া যায়নি।
এছাড়া হাজীগঞ্জের পানি ও মলে ই-কোলাই-এর উচ্চতর অনুপাত পেনিসিলিন, সেফালোস্পোরিন এবং ক্লোরামফেনিকলসহ একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ছিল।
গবেষণায় আশঙ্কা করা হয়েছে, বাংলাদেশে আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাবযুক্ত এলাকার শিশুদের দেহে আর্সেনিকের উপস্থিতি এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মধ্যকার সম্পর্ক জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগের বিষয়। ফলে আর্সেনিকের প্রভাব ও বিস্তার কমানোর প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে গবেষণার প্রধান গবেষক আইসিডিডিআর,বি-র অ্যাডজাঙ্কট সায়েন্টিস্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু পরিবেশে অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল। এসব ধাতু দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাকটেরিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। যার ফলাফল হিসেবে মানুষের মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স গড়ে উঠছে। এর ফলে কখনো অ্যান্টিবায়োটিক নেয়নি তবে আর্সেনিকের মতো ধাতুর সংস্পর্শে এসেছে এমন মানুষ এবং বিভিন্ন প্রাণীর দেহে অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী বিভিন্ন অণুজীব সহজেই তাদের বসতি গড়ে তুলতে পারে।
এই গবেষক সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পরিবেশে যাতে ভারী ধাতুর প্রভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখার পাশাপাশি ওষুধ ও কৃষিতে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল ব্যবহারে দায়িত্বশীল হতে হবে। আইসিডিডিআর,বি-র অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট মোহাম্মদ বদরুল আমিন বলেন, বর্তমান গবেষণার ফলাফল বিবেচনা করে দেশের বিভিন্ন পরিবেশে সিসা, পারদ ও লোহার মতো অন্যান্য ভারী ধাতুর প্রভাব সম্পর্কে আরও অনুসন্ধান করার এখনই সঠিক সময়।
গবেষণাটির আরেক গবেষক প্রভাত তালুকদার বলেন, ‘আমরা দেখেছি যে আর্সেনিক-প্রতিরোধী ই-কোলাই একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক, বিশেষ করে তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিরোধী। এই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
নাজমুল হোসেন। জেদ্দা প্রবাসী। থাকেন ঢাকার উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে। ১২ নম্বর সেক্টরের পাশের রূপায়ণ সিটি বাইর থেকে দেখেছেন। কিন্তু ভেতরে প্রবেশ করা হয়নি। বাইর থেকে দেখতে সুন্দর এই সিটিতে তিনিও একটি ফ্ল্যাট নিতে হাজির হয়েছিলেন চলমান রিহ্যাব ফেয়ারে রূপায়ণের স্টলে। নাজমুল হোসেনের মতো এমন আরও অনেকে দুবাই বা সিঙ্গাপুরের আদলে নির্মিত এবং অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধার এই সিটিতে নিজেদের ঠিকানা গড়তে চান।
কী সুযোগ সুবিধা রয়েছে এই সিটিতে? গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রূপায়ণ সিটি দেখতে গিয়ে প্রথমেই চোখ আটকে যাবে প্রবেশমুখে। চার লেনের বিশাল গেটের প্রবেশমুখের দুটো রয়েছে আবাসিকের জন্য এবং অপর দুটি লেন রয়েছে বাণিজ্যিক স্থাপনায় ব্যবহারকারীদের জন্য। গেটে প্রবেশ করতে হাতের বাম পাশে ৩০ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠছে ‘রূপায়ণ ম্যাক্সাস মল’। ১০ তলার এই মল শুধু কেনাকাটার জন্যই ব্যবহার হবে না, এটি হবে একটি পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র।
দেশের প্রথম আধুনিক শপিং মল ‘বসুন্ধরা সিটি’র আর্কিটেক্ট মোস্তফা খালিদ পলাশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রূপায়ণের ম্যাক্সাস মলের ডিজাইনও আমি করেছি। আজ থেকে ২৪ বছর আগে (১৯৯৮ সাল) বসুন্ধরা শপিং মলের ডিজাইনও আমি করেছিলাম। এই সময়ের মধ্যে ডিজাইনে অনেক পরিবর্তন এসেছে কিংবা বসুন্ধরায় যেসব সীমাবদ্ধতা ছিল তা এখানে দূর করার চেষ্টা করে ডিজাইন করা হয়েছে।’
ডিজাইনে কী পরিবর্তন এনেছেন জানতে চাইলে এই আর্কিটেক্ট বলেন, ‘বসুন্ধরায় একটি এন্ট্রিয়াম রয়েছে, যা নিচ থেকে ওপর পর্যন্ত দেখা যায়। কিন্তু রূপায়ণ ম্যাক্সাসে এ ধরনের ছয়টি এন্ট্রিয়াম রয়েছে। এছাড়া দোকানের সাইজ আগে ছোট ছিল, কিন্তু এখানে দোকানের সাইজ অনেক বড় করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, এই মলে অনেক ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া মেট্রোরেল ও ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে এটি যুক্ত থাকায় ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ যেমন এখানে আসার সুযোগ পাবে, তেমনিভাবে বিমানের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের যাত্রীদের বিরতি কেন্দ্র হবে এই মল।’
বিশ^মানের শপিং মলকে হাতের বাম পাশে রেখে সামনে এগিয়ে গেলেই প্রথমে চোখে পড়বে ফরিদা বেগম জামে মসজিদ ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এই সিটিতে চারটি জোনের মধ্যে তিনটি আবাসিক জোন। এই আবাসিকের প্রতিটি জোনেই একটি করে মসজিদ, স্কুল ও খেলার মাঠ রয়েছে। ১২০ ফুট চওড়া সাড়ে ৬ কিলোমিটার রোডের উভয় প্রান্তে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি আবাসিক জোন। তিনটি আবাসিক জোনের মধ্যে দুটিতে (রূপায়ণ গ্র্যান্ড ও রূপায়ণ ম্যাজেস্ট্রিক) রয়েছে প্রিমিয়াম কন্ডো অ্যাপার্টমেন্ট এবং অপরটিতে রয়েছে স্কাই ভিলা। প্রিমিয়াম কন্ডো অ্যাপার্টমেন্টের গ্র্যান্ড ও ম্যাজিস্ট্রিকে রয়েছে ৮৯২টি কন্ডো অ্যাপার্টমেন্ট। এই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলোর সামনে রয়েছে সবুজ মাঠ, বাস্কেটবল, সুইমিং পুল এবং নাইট বারবিকিউ স্থান। এছাড়া প্রতিটি ভবনের প্রথম ফ্লোরে রয়েছে কমিউনিটি লাউঞ্জ, পার্কিং সুবিধা এবং ভবনের নিচে বেজমেন্ট।
অপরদিকে স্কাই ভিলার ৭টি ভবনে রয়েছে ২৪৪টি স্কাই ভিলা অ্যাপার্টমেন্ট। সাধারণত থাকার ঘরকে আমরা ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট বলে থাকি।
কিন্তু এখানে স্কাই ভিলা কেন বলা হচ্ছে? তাই স্কাই ভিলা দেখতে চাইলে রূপায়ণ সিটির সেলস এক্সিকিউটিভ মো. শরিফুল ইসলাম নিয়ে যান একটি স্কাই ভিলায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ফ্লোরেই রয়েছে মাটির ছোঁয়া। অর্থাৎ, আপনি যে ফ্লোরেই থাকেন না কেন, সেই রুমের পাশেই রয়েছে মাটি এবং সেই মাটিতে রয়েছে গাছ-গাছালি। আর পাখির কলরব শোনার জন্য রয়েছে বাঁশঝাড়। প্রতিটি রুম থেকেই আকাশ দেখা যায়।
কেন এই সিটি ব্যতিক্রম : ১৫০ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা এই সিটির ৮৬ বিঘা জমি সবুজে আচ্ছাদিত। অর্থাৎ সবুজকে প্রাধান্য দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই সিটি। এ বিষয়ে রূপায়ণ সিটির প্রধান নির্বাহী মো. মাহবুবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখানে প্রায় সাড়ে তিনশ প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। রাস্তার উভয় পাশে খেঁজুর গাছসহ অন্যান্য গাছের মাধ্যমে দুবাই বা সিঙ্গাপুর সিটির অবয়ব আনা হয়েছে। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে আধুনিকতা আনা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে পাইপে গ্যাস না দেওয়া হলেও আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে গ্যাস রিজার্ভার ব্যবহার করে সেখান থেকে প্রতিটি ঘরে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করছি।’
এদিকে সিটি ঘুরতে গিয়ে কিছু গলফ কার দেখতে পাওয়া যায়। গলফ কারগুলোর কাজ কী জানতে চাইলে মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এই সিটিতে সিএনজি অটো ও রিকশা প্রবেশ করবে না। তাই আমরা সার্ভিসের অংশ হিসেবে এসব গলফ কার সার্ভিস দিয়েছি। সম্পূর্ণ বিনা ভাড়ায় বসবাসকারীরা এসব কারে চলাচল করতে পারবেন।’
দেশের সর্বপ্রথম প্রিমিয়াম মেগা রেটেড সিটি হতে যাচ্ছে রূপায়ণ সিটি। উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধার এই সিটি উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের পাশে। ঢাকায় আগামীর যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম মেট্রোরেলের স্টেশন (দিয়াবাড়ী) এই সিটির সঙ্গে লাগোয়া। এছাড়া ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের রোডও এই সিটির পাশ দিয়ে যাচ্ছে। এই সিটি সম্পর্কে পুরকৌশল জগতে দেশের অন্যতম খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. জেড এম বসুনিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই সিটির সবগুলো ভবনের উচ্চতা সমান (১০তলা)। এর কারণে সব ভবনই আলো-বাতাস সমান পাবে। এছাড়া একটি সুদৃশ্য আবাসিক সিটি গড়ে উঠবে।’ তিনি আরও বলেন, এই আবাসিকে সবুজায়নকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এতে পুরো এলাকাটি সবুুজে ঘেরা একটি সিটি হিসেবে গড়ে উঠবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে জায়গা নেওয়ার পর প্রকল্পের মাস্টারপ্ল্যান এবং ডিজাইন সম্পন্ন করে কাজ শুরু করে রূপায়ণ গ্রুপ। কাজ শুরুর পর ইতিমধ্যে অনেক ভবনে পুরোদমে বসবাস শুরু হয়ে গেছে। ব্যক্তি উদ্যোগে একটি স্বতন্ত্র আধুনিক সিটি দেশে এটিই প্রথম বলে রূপায়ণ কর্তৃপক্ষ জানায়।
একাদশ জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির নির্বাচিত সংসদ সদস্য (এমপি) হারুনুর রশীদ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। হারুনুর রশীদ গতকাল বেলা ১১টার দিকে পদত্যাগপত্র নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে যান। দুপুর ১২টার দিকে সংসদ ভবন থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের কাছে নিজের পদত্যাগের কথা জানান তিনি।
বর্তমান সংসদে বিএনপির সংসদ সদস্য ছিলেন সাতজন। তারা ১০ ডিসেম্বর দলের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরদিন ১১ ডিসেম্বর বগুড়া-৬ আসনের জিএম সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান ও সংরক্ষিত নারী আসনের (৫০) রুমিন ফারহানা জাতীয় সংসদ ভবনে গিয়ে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ বিদেশে থাকায় এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার অসুস্থ থাকায় তারা সেদিন সশরীরে পদত্যাগপত্র দিতে পারেননি। তবে তাদের পক্ষ থেকেও সেদিন স্পিকারকে পদত্যাগপত্র দেওয়া হয়।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্যের পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন। তবে হারুনুর রশীদ পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ই-মেইলে, তার স্বাক্ষর স্ক্যান করে বসানো হয়েছে। এ কারণে সেটি গ্রহণ করা হবে না। তাকে আবার পদত্যাগপত্র দিতে হবে।
এদিকে ১১ ডিসেম্বর রাতে জাতীয় সংসদের ছয়টি আসন শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সংসদ সচিবালয়। বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের কারণে ইতিমধ্যে শূন্য হওয়া পাঁচ সংসদীয় আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচন হবে। এসব আসনে উপনির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসন-৫০-এর ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে ইসি।
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) সদস্যদের উদ্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বলেছেন, আমাদের সবাইকে এক থাকতে হবে। আপনারা যেভাবেই হোক দেশটা শান্ত রাখবেন। এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না, যাতে দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়। এটা আপনাদের দায়িত্ব। গতকাল বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে রূপায়ণ এফপিএবি টাওয়ারে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে ক্র্যাবকে দেওয়া নতুন কার্যালয়ের ডেকোরেশনের (সাজসজ্জা) কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ক্র্যাব সদস্যদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ক্র্যাব মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ঘোষণা দেন বিশিষ্ট এই শিল্পপতি। এর আগে, তিনি ফিতা কেটে ক্র্যাবের নতুন কার্যালয়ের ডেকোরেশনের কাজ উদ্বোধন করেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন তার ছেলে ওয়ালিদ সোবহান। এ ছাড়া বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ডেইলি সানের সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক জুয়েল মাজহার, নিউজ২৪ টেলিভিশনের নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের উপদেষ্টা আবু তৈয়বসহ ক্র্যাবের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সায়েম সোবহান আনভীর ক্র্যাব সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ৩৬ বছর পর একটা স্থায়ী কার্যালয় আপনারা পেয়েছেন, আগামীতে আরও ভালো কার্যালয় উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব। আগামীতে আপনাদের জন্য সুন্দর একটা ভবন করে দেওয়ার চেষ্টা করব, যেখানে আপনারা সুন্দরভাবে আপনাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন। তিনি বলেন, আমি আপনাদের পাশে সবসময় থাকতে চাই। ক্র্যাব সদস্যদের সুখ-দুঃখে যখন যেটা লাগবে আমাকে জানাবেন। আমার যতদূর ক্ষমতা আছে, সাধ্য আছে, আমি আপনাদের সহযোগিতা করব। আপনারা আমার পরিবার, আমি আপনাদের পরিবারের মতোই পাশে থাকব।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, কমিটমেন্ট অনেকেই দেয়, কিন্তু সবাই রক্ষা করতে পারে না। কেউ কেউ কমিটমেন্ট রক্ষা করেন। সে রকম একজন মানুষ সায়েম সোবহান আনভীর। যিনি কথা দিলে তার নড়চড় হয় না। আমি মনে করি, আপনাদের সঙ্গে তার পথচলা কেবল শুরু হলো। তিনি একটি কার্যালয় দিয়েছেন। আরও অনেক বড় পরিসরে কিছু হবে, আমার দেখা মতে তিনি সেরকম একজন অনন্য উচ্চতার ব্যতিক্রমী মানুষ। তিনি মিডিয়াবান্ধব। করোনাকালেও তার অধীন কোনো মিডিয়া হাউজের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়নি। তিনি মিডিয়াকর্মীদের যেকোনো সমস্যার কথা শুনলেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে, গণমাধ্যম নিয়ে তার আরও অনেক ভালো পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি একজন গণমাধ্যমকর্মীর মতোই গণমাধ্যমের পাশে দাঁড়ান।
কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন তার বক্তব্যে সায়েম সোবহান আনভীরের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন। মঞ্চে বসা সায়েম সোবহান আনভীরকে দেখিয়ে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, যে লোকটাকে দেখতে পাচ্ছেন, তার হৃদয় আরও আরও হাজার হাজার গুণ বড়। যা পরিমাপ করে শেষ করা যায় না। এর প্রমাণ আপনারাই পাবেন। একজন সায়েম সোবহান আনভীরকে পাশে পেলে আর কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। আপনাদেরও আর কিছুর প্রয়োজন পড়বে না। কারণ আপনাদের পাশে একজন মহান দানশীল বিরাট মনের অধিকারী সায়েম সোবহান আনভীর আছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ক্র্যাব সভাপতি মির্জা মেহেদী তমাল। তিনি ক্র্যাবকে কার্যালয় দেওয়ার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। মির্জা মেহেদী তমাল বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের সুদৃষ্টির মধ্য দিয়ে ক্র্যাব সদস্যদের দীর্ঘ ৩৬ বছরের প্রত্যাশা পূরণ হলো। সায়েম সোবহান আনভীরকে উদ্দেশ করে ক্র্যাব সভাপতি আরও বলেন, আপনি ক্র্যাব পরিবারের পাশে থাকার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, তা আমাদের শক্তি আর সাহসকে শতগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ক্র্যাবের সাবেক সভাপতি পারভেজ খান, আবুল খায়ের ও মিজান মালিক, ক্র্যাবের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বিকু, নির্বাহী সদস্য আমানুর রহমান রনি প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ক্র্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আতাউর রহমান। এ সময় ক্র্যাবের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা সায়েম সোবহান আনভীর ও বসুন্ধরা গ্রুপের আর্তমানবতার সেবায় অবদান রাখার কথা উল্লেখ করে ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তারা বিভিন্ন সময় বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিঃস্বার্থ দানের কথা তুলে ধরেন। গণমাধ্যমসহ গণমাধ্যমকর্মীদের প্রয়োজনে সায়েম সোবহান আনভীর যেভাবে তার সহযোগিতার হাত উদারভাবে বাড়িয়ে দেন, তা অনন্য বলেন বক্তারা।
শীত আর বর্ষা নেই, সব মৌসুমেই বই-খাতার সঙ্গে রান্নার হাঁড়ি নিয়ে রওনা করত শিক্ষার্থীরা। পাতিলের মধ্যে বই-পুস্তক আর স্কুলের পোশাক নিয়ে পার হতো খাল। ভেজা জামা-কাপড় রোদে শুকাতে দিয়ে স্কুল পোশাক পরে ছুটত ক্লাসে। এভাবেই প্রতিদিন দু’বার খাল সাঁতরে পাঠগ্রহণ করত পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের দিয়ারচর ও উত্তর চরমোন্তাজ গ্রামের অর্ধশতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের পারাপারের দুর্ভোগের চিত্র নিয়ে গত ৭ ডিসেম্বর দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘ভেসে ভেসে স্কুলযাত্রা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আসে বেসরকারি সংস্থা জাগোনারী ও শুভসংঘ নামের একটি সংগঠনের। এরপরই ওই শিশু শিক্ষার্থীদের দুটি নৌকা উপহার দেয় তারা। এতে এখন থেকে তারা আড়াইশ ফুট প্রশস্তের বাইলাবুনিয়ার খালটি নির্বিঘেœ পারাপার হয়ে স্কুলে যেতে পারবে।
নৌকা উপহার পেয়ে চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া শিক্ষার্থী কেয়ামণি বলে, ‘পাতিল নিয়ে আমাদের আসতে যেতে অনেক ভয় হতো। কখনো হাত থেকে পাতিল (হাঁড়ি) ছুইট্টা (ছুটে) যেত। আমরা অনেক কষ্ট করি। তয় এখন থেইকা আর আমাদের পাতিলে ভেসে স্কুলে যেতে হবে না। আর পাল্টাইতে হইবে না স্কুল ড্রেসও।
এই স্কুলের আরেক শিক্ষার্থী নাজমুল বলে, এ্যাহন আর স্কুলে আইতে খাল হাতরাইতে (সাঁতার কাটতে) হইবে না। টানা লাগবে না হাঁড়ি পাতিল। ছোট ভাইটারে লইয়া স্কুলে আইতে পারতাম।
দিয়ারচর গ্রামের শিক্ষার্থী অভিভাবক রেহেনা বেগম বলেন, ‘আমার দুই নাতি স্কুলে পড়ে মাঝেমধ্যে টাকা দিয়া জাইল্লা (জেলে) নৌকায় পার হতো। আবার অনেক সময় টাকা দিলেও নৌকায় পার করত না। এবার ওরা দুইডা নৌকা পাইছে। নিরাপদে স্কুলে আইতে যাইতে পারবে।
মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রুহুল আমিন বলেন, স্থানীয়দের উদ্যোগে কয়েকবার বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু নোনা জলে সাঁকো বেশিদিন টেকে না। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুলে সাঁকো থাকাকালে ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী ছিল। এর মধ্যে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ছিল ওই দুই চরের। সাঁকো না থাকায় এখন শিক্ষার্থী কমে গেছে। এখন দুই চর থেকে ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী আসে। এদের কেউ কেউ নিয়মিত আসেও না। তবে জাগোনারী নামের একটি এনজিও সংস্থা ও শুভসঙ্গ নামের একটি সামাজিক সংগঠন থেকে দুটি নৌকা উপহার হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কোমলমতি শিশুরা নিরাপদে নৌকায় পারাপার হবে। খালের ওপর ব্রিজ (সেতু) নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি অবহিত করেছি।’
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশু শিক্ষার্থীদের নৌকা উপহারকালে উপস্থিত ছিলেন জাগোনারীর পরিচালক (যোগাযোগ) ডিউক ইবনে আমিন, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বায়েজিদ আহমেদ, রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামরুল হাসান, রাঙ্গাবালী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম সোহেল, মাঝেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন প্রমুখ।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্গম এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের একটি খাল পেরিয়ে স্কুলে আসতে হতো। সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য বেশ কিছুদিন আগে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা দিয়েছি। তবে ইতিমধ্যে বাচ্চাদের স্কুলে আসা-যাওয়ার জন্য একটি সংগঠন ও একটি সংস্থা থেকে দুটি নৌকা উপহার দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুল কবির বলেন, ‘শিশু শিক্ষার্থী এবং জনস্বার্থে ওই খালের ওপর ব্রিজ (সেতু) নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি অবহিত করেছি।’
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন আর খাল সাঁতরে শিশুদের স্কুলে যেতে হবে না, এটি সত্যি আমাদের জন্য আনন্দের একটি বার্তা। কোমলমতি শিশুরা এখন থেকে নৌকায় স্কুলে আসা-যাওয়া করবে।’
বেসরকারি সংস্থা জাগোনারী পরিচালক (যোগাযোগ) ডিউক ইবনে আমিন বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীদের পাতিলে ভেসে স্কুলে যাওয়ার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিষয়টি আমাদের নজরে আসে এবং আমাদের দাতা সংস্থা বোসের সহযোগিতায় একটি নৌকা উপহার হিসেবে দিয়ে থাকি। এখন থেকে ছোট শিশু শিক্ষার্থীরা নৌকায় পারাপার হবে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।