
অন্যান্য বছরের মতো ২০২২ সালও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদমাধ্যম সরব ছিল, জনপরিসরেও ছিল আলোচনা-সমালোচনা। দুর্নীতি দমন কমিশনও আগের বছরের চেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল মামলা করার ক্ষেত্রে। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের লাগাম টেনে ধরার মতো কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং উল্টো চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শত শত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ এসেছে। বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে।
ব্যতিক্রম ছিল প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের ভারতে গ্রেপ্তারের ঘটনা, যার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। কানাডায় ‘বেগমপাড়ায়’ বাংলাদেশি নাগরিকদের সহায়-সম্পদ নিয়েও ছিল অলোচনা।
গত বছরের (২০২১ সাল) তুলনায় চলতি বছর অভিযোগের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়লেও দায়ের করা মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিলের হার কমেছে। আসামির তালিকায় নেই আলোচিত কোনো বড় দুর্নীতিবাজ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৬ বছরে দেশের ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা (৪৯৬৫ কোটি ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে। গড়ে প্রতি বছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। কানাডায় টাকা পাচার করে বাড়িঘর বানিয়েছেন বহু প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মচারী ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ী।
দুদক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ১৮ হাজার ১৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ৮৪০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেছে কমিশন, যা মোট জমা হওয়া অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এসব অভিযোগের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে ৩ হাজার ৬০টি অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ১৪ হাজার ১১৯টি অভিযোগ কোনো কার্যক্রমের জন্য সুপারিশ করা হয়নি।
এর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দুদকে জমা পড়েছিল ১১ হাজার ৮২৮টি অভিযোগ। ২০২০ সালে একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৪৮৯। ২০২২ সালে গড়ে দুদকে প্রতি মাসে ১ হাজার ৬৩৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৫৪১ ও ১ হাজার ১৮৩টি।
দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হকের মতে, যে পরিমাণ অভিযোগ এসেছে তার বেশিরভাগই অসুসন্ধানের জন্য নিতে পারি না। কারণ, যেসব অভিযোগ আসে তার বড় অংশই দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। দুদকের সেসব অভিযোগ গ্রহণের এখতিয়ার নেই। এ ছাড়া দুদক বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসব অভিযোগ গ্রহণ করে তা অনেক সময় অসম্পূর্ণ থাকে। কমিশনে যে কয়টি সোর্সের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় তার একটি সরাসরি বা ডাকযোগে আসা অভিযোগ। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদ অভিযোগ হিসেবে নেওয়া হয়। কমিশন অভিযোগগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পেলে তা অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে।
গত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবসে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, দুর্নীতির মাত্রা কিছুটা হলেও কমেছে। তবে জন-আকাক্সক্ষা অনুসারে হয়তো কমেনি।
সম্প্রতি দেশের আরও ১৪টি জেলায় কার্যালয় স্থাপন করার ফলে বর্তমান ৩৬ জেলায় সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এজন্যই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চলতি বছর দুর্নীতিবাজদের ৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৯ হাজার ৭০১ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সময়ে জরিমানা করা হয়েছে ১৩৯ কোটি ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৯৫৩ টাকা।
চলতি বছর দুদক ৩৫৪টি অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১২টি অভিযোগ, সম্পদ বিবরণীর নোটিস জারি ৮৯টির, এফআইআর ২৭৬টি, অভিযোগপত্র ১৬২টি আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছে ৭৮টি অভিযোগের। দুদকে বর্তমানে অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে ৩ হাজার ৫৭৮টি অভিযোগ। চলমান মামলা আছে ১ হাজার ৬৯৯টি। মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও মামলা আছে যথাক্রমে ৭২৪ ও ১৫৭টি। মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও মামলার শতকরা হার ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। অর্থপাচার, ব্যাংক-বীমা সংক্রান্ত অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব অনুসন্ধান ও মামলা চলছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত পিকে হালদার ও তার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুই ডজনের ওপর মামলা করেছে দুদক। চলতি বছরের ১৪ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে সে দেশে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।
ঘুরে দাঁড়াতে চায় দুদক : গত ২১ নভেম্বর দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক অর্থপাচারের ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে দুদকের কর্মপরিকল্পনা জানতে চান। জবাবে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, অর্থপাচার হচ্ছে, এটা সত্যি। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু অর্থপাচারের ব্যাপারে আমাদের (দুদক) তফসিল থেকে সব নিয়ে গেছে আইন করে। এখন আমাদের যেটা আছে মাত্র একটা তফসিলভুক্ত, সেটা নিয়েই আমরা ফাইট করছি।
অর্থপাচার আইনের ২৭টি অপরাধের মধ্যে শুধু একটি অপরাধ দুদকের তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্তে আইনি সীমাবদ্ধতা দুদকের জন্য বড় জটিলতা। আগামী বছর (২০২৩ সাল) দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম বাড়াবে দুদক। সততা সংঘের সঙ্গে জড়িতদের বিশেষ স্বীকৃতি ও বেশ কয়েকটি জেলায় গণশুনানির আয়োজন করা হবে।
বিচার : সাজা হওয়া উল্লেখযোগ্য মামলা হলো টেকনাফের আলোচিত বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা, তিতাসের উপ-ব্যবস্থাপক এস এম হাফিজুর রহমান, ধারা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের মেজর জেনারেল (অব.) জালাল উদ্দিন আহমেদ ও সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া কর্নেল মো. শহিদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে করা মামলা। গত ২৯ নভেম্বর বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের তিন মামলায় এক আসামির জামিন শুনানিতে দুদক কেন নীরব, তা জানতে চান হাইকোর্ট। বেসরকারি ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার সাবেক ম্যানেজার মোহাম্মদ আলীর জামিনের ওপর শুনানিতে এ প্রশ্ন করেন হাইকোর্ট। গত ২৭ নভেম্বর এক শুনানিতে অর্থশালীরা পাওয়ারফুল (শক্তিশালী), তারা বিচারের ঊর্ধ্বে কিংবা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে কি না দুদকের প্রতি এমন প্রশ্ন রাখে উচ্চ আদালত। দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলে, আপনারা ধরছেন চুনোপুঁটি। তাহলে রাঘব-বোয়ালদের ধরবে কে?
সবশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’র ১ থেকে ২৫ নম্বরে থাকা ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে কোনো অভিযোগ আগে অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
খুলনার কয়রা উপজেলায় সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের শিংয়ের টেকের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র বানাচ্ছে প্রশাসন। এ কাজে অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্যুরিজম বোর্ড। পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে বরাদ্দের পাশাপাশি ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়েছে।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঠের সেতু ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়-সূত্র জানায়, কয়রা সদর থেকে দেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। নদী পার হলেই সুন্দরবন। ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণে গোলখালী গ্রামের সামনের বেড়িবাঁধের বাইরে মূল জঙ্গল থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় পলি জমে গড়ে উঠেছে আরেকটি বন। নাম শিংয়ের টেকের চর।
চরের চারপাশে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লেখা সাইনবোর্ড রয়েছে। তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অস্তিত্ব আর থাকছে না। কারণ বন বিভাগকে না জানিয়ে শিংয়ের টেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র বানাতে বরাদ্দের পাশাপাশি ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন করেছে কয়রা উপজেলা প্রশাসন।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাতে হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিংয়ের টেকের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঠের সেতু বা ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হলে সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ বিবেচনায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আপত্তি জানিয়েছে বন বিভাগ। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের কাছে।
কয়রার ইউএনও কার্যালয়-সূত্র জানায়, শিংয়ের টেকের সব জমি বন বিভাগের নয়। সেখানে সরকারি খাসজমিও রয়েছে। শিংয়ের টেকের যেটুকু অংশে সড়ক, ওয়াকওয়ে ও ওয়াচ টাওয়ার হবে তা মূলত নদীতে জেগে ওঠা চর, যা মূল ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে তেমন গাছপালা নেই। তা ছাড়া গাছপালা না কেটেই সব নির্মাণ করা যাবে।
সূত্র আরও জানায়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্যুরিজম বোর্ড কয়রার গোলখালীতে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রথম ধাপে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে ও কাঠের সেতু নির্মাণ করা হবে। পরে ১ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। বাস্তবায়নে রয়েছে মেসার্স ঘোষ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
খুলনার সুন্দরবন অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বা নতুনভাবে জেগে ওঠা চরে, যেখানে বন গড়ে উঠছে, সেখানে পর্যটনকেন্দ্র করা উচিত নয়, এতে বনায়ন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হবে।
সুন্দরবনের কোবাদক স্টেশনের কর্মকর্তা মো. ফারুকুল ইসলাম বলেন, গোলখালীর যেখানে পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে সে জায়গা সরকারি গেজেট অনুযায়ী অভয়ারণ্য বিবেচনায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেজন্য বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম শুরু না করতে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কয়রার ইউএনও মো. মমিনুর রহমান বলেন, শিংয়ের টেকের জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। সেখানকার জমি বন বিভাগের নয়। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্যুরিজম বোর্ডের সচিব এসে জায়গাটি দেখে গেছেন। এরপর পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ করার নির্দেশ ছিল। সময় মতো কাজ শুরু করা যায়নি। তবে বন বিভাগকে আমরা আশ্বস্ত করেছি, গহীন বনে কিছু নির্মাণ করা হবে না। লোকালয়ঘেঁষে সড়ক ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। তাতেও বন বিভাগের আপত্তি। অনুমোদিত গেজেটে ওই জায়গা ভূমি অধিদপ্তরের, বন বিভাগের নয়।
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, গোলখালী শিংয়ের টেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে আমি অবাক হয়েছি। শিংয়ের টেকে একসময় ফরেস্ট অফিস ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে অফিসটি ভেঙে গিয়েছে। আবারও সেখানে বন বিভাগের অফিস করা হবে। ওই এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের কোনো সুযোগ দেখি না।
আফ্রিকার দেশ সেনেগালের দক্ষিণাঞ্চলের শহর কাসামানসের বাসিন্দা আদামা দিয়েমি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই। মাঝে কিছু দিন ইউরোপে থাকলেও তিনি এখন ফিরেছেন নিজের এলাকায়। কিন্তু ফিরেই দেখেন, এলাকাটি আর তার শৈশবের মতো নেই। একসময়ে সবুজে ঢাকা থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘন সবুজ গাছপালা উজাড় হয়ে গেছে। তাই তিনি নিজের শহর ও আশপাশের এলাকাকে আবারও সবুজে সবুজে ভরিয়ে তুলতে চান। এজন্য তিনি এক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। আদামা আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৫০ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে সে কাজ শুরুও করেছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ সময় ইউরোপে বসবাস করেছেন আদামা। প্রকৃতির গুরুত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বৈশ্বিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো তিনি ইউরোপে থাকতেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ইউরোপের পাট চুকিয়ে ২০২০ সালে নিজ গ্রামে ফেরেন আদামা। আর তখনই প্রকৃতির পরিবর্তন তিনি উপলব্ধি করতে শুরু করেন।
৪৮ বছর বয়সী আদামা জানান, তার গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় আগে অনেক গাছপালা ছিল। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে তার বেড়ে ওঠা। কিন্তু গ্রামে ফিরে দেখেন, চারপাশ ধূসর হয়ে গেছে। গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। আশপাশের অনেক গ্রামে একটিও গাছ নেই এখন। আদামা বলেন, গ্রামবাসী একের পর এক গাছ কেটে উজাড় করেছে। কিন্তু নতুন করে গাছ লাগানোর কথা ভাবেনি। তিনি জানান, এ পরিস্থিতি চিন্তায় ফেলে দেয় আদামাকে। তিনি বুঝতে পারেন, প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। আজ হোক কিংবা কাল, এর অভিঘাত মোকাবিলা করতেই হবে। তাই উদ্যোগী হয়েছেন আদামা। ৫ বছরে ৫০ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেছেন তিনি। এজন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করেছেন। এমনকি নিজের পকেট থেকে এ তহবিলে ৫ হাজার ডলার দিয়েছেন আদামা।
বর্তমানে আদামা নিজ এলাকায় স্পেনভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থায় প্রকল্প ব্যবস্থাপক পদে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে কৃষি প্রশিক্ষক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। কর্মক্ষেত্র নিজ এলাকাতেই। নিজের পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা গাছ লাগানোর স্বপ্নপূরণে কাজে লাগছে আদামার।
কাসামানসে নদীর মাঝখানে দ্বীপের মতো আদামার গ্রামের অবস্থান। আগে নদীর পানি কদাচিৎ তাদের গ্রাম ছুঁয়ে যেত। কিন্তু গাছপালা উজাড় হতে শুরু হওয়ার পর প্রকৃতিও আচরণ বদলেছে। ইদানীং নদী উপচে বিভিন্ন সময় প্লাবিত হয় গ্রাম।
আদামার মতে, এসব গাছ কেটে ফেলা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। তাই গ্রাম, বসতি ও জীবন রক্ষা করতে হলে বেশি বেশি গাছ লাগানো জরুরি। এ ভাবনাই তাকে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মা হীরাবেন মোদি মারা গেছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোররাতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। মোদির মায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বাংলাদেশের জনগণ এবং নিজের পক্ষ থেকে আপনার প্রিয় মা শ্রীমতী হীরাবেন মোদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, হীরাবেন গুজরাটের গান্ধীনগরের কাছে রায়সান গ্রামে তার ছোট ছেলে পঙ্কজ মোদির সঙ্গে থাকতেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দিন কয়েক আগে তাকে গুজরাটেরই একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মায়ের মৃত্যুর পর নরেন্দ্র মোদি টুইটারে লিখেছেন, ‘একটি মহিমান্বিত শতাব্দী ঈশ্বরের চরণে বিশ্রামে গেলেন।’
এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদি তার মাকে দেখতে দিল্লি থেকে গুজরাটে গিয়েছিলেন। গুজরাটে অধিকাংশ সফর চলাকালে মোদি নিয়মিতভাবে তার মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে রায়সানে যেতেন।
হীরাবেন ১৯২৩ সালের ১৮ জুন গুজরাটের মেহসানার ভাদনগরে জন্মগ্রহণ করেন। শতবর্ষী এই নারীর মৃত্যুর পর পাঠানো শোকবার্তায় শেখ হাসিনা হীরাবেনকে একজন গর্বিত মা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা দেখেছি একজন মা, প্রেরণাদাতা ও পরামর্শদাতা হিসেবে আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শ্রীমতী হীরাবেন মোদির পরলোক গমনের মধ্য দিয়ে আমরা সারল্য, পবিত্রতা ও মূল্যবোধে পরিপূর্ণ এক শতাব্দীর জীবনকালের সমাপ্তি প্রত্যক্ষ করেছি।’ শোকবার্তায় হীরাবেন মোদির বিদেহী আত্মার মুক্তি কামনা করেন শেখ হাসিনা।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কাছাকাছি এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মো. অনিক (১৭) ও শাওন মিয়া (১৮)। এ ছাড়া বান্দরবানের থানচিতে কাঠবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এক পর্যটক, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে লরির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে
কেরানীগঞ্জ : ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন অনিক ও শাওন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ২টার দিকে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। অনিক রাজধানীর মুগদা মানিকনগর বালুরমাঠ এলাকার মো. ইদ্রিস আলীর ছেলে ও শাওন একই এলাকার মো. চান্দু মিয়ার ছেলে। অনিক সাইনবোর্ড ও ব্যানারের কাজ করতেন।
নিহত অনিকের বড়ভাই ইয়াসিন মিয়া জানান, রাত ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার কথা হয়। তখন অনিক জানায়, বন্ধুদের সঙ্গে দাওয়াত খেতে যাচ্ছে। এরপর রাত ১২টার দিকে তিনি খবর পান ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে পড়ে অনিকসহ দুজন আহত হয়েছে। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে তাদের মরদেহ দেখতে পান। শাওন মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ দুটি মর্গে রাখা হয়েছে।
থানচিতে ট্রাকের ধাক্কায় কাপ্তাই সুইডিশ পলিটেকনিক্যালের শিক্ষার্থী নিহত : বান্দরবানের থানচিতে কাঠবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিহত পর্যটকের নাম জয়রাজ দাশ। গতকাল বিকেলে থানচি যাওয়ার পথে বিদ্যামণিপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। জয়রাজ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা ১নং ওয়ার্ডের অমল দাশের ছেলে। তিনি রাঙ্গামাটির কাপ্তাই সুইডিশ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অটোমোবাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল দুপুরে পাঁচজনের একটি দল মোটরসাইকেল নিয়ে থানচি যাওয়ার পথে বিদ্যামণিপাড়া এলাকায় একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই জয়রাজের মৃত্যু হয়।
সীতাকুন্ডে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত : চট্টগ্রামের সীতাকু-ে সড়কের পাশে পার্কিং করার সময় একটি লরির পেছনে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী হোসাইন বিন আরিফসহ (২৫) দুই বন্ধু গুরুতর আহত হন। উপজেলার কুমিরা পিএইচপি গেট এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি সীতাকু-ের কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরা মাস্টারপাড়া এলাকার মৃত জেবল হোসেনের ছেলে। আরিফের বন্ধু ইমন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সীতাকুন্ড মডেল থানার এসআই মোতাব্বির হোসেন গাজী বলেন, গাড়ি দুটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
আড়াইহাজারে বাসের ধাক্কায় অটোচালক নিহত : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে জাকির হোসেন (৪৫) নামে এক অটোরিকশা চালক নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-বিশনন্দী সড়কের সাদারদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির উপজেলার কৃষ্ণপুরা এলাকার সানাউল্লার ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অন্য দিনের মতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হন জাকির। উপজেলার সাদারদিয়া এলাকায় আল আফরাহ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে তার রিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে জাকির গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কেরানীগঞ্জ (ঢাকা), বান্দরবান ও সীতাকু- (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ও আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা)
গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীত জেঁকে বসেছে। বইছে হিমেল হাওয়া। রাতে ও ভোরে মাঝেমধ্যেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে চারপাশ। আর কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে আসায় বিঘিœত হচ্ছে দেশের রেলপথ, সড়কপথ, নৌপথ ও আকাশপথে চলাচল। কুয়াশাচ্ছন্ন সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনাও। এরই ধারাবাহিকতায় ঘন কুয়াশার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশপথখ্যাত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত টানা ছয় ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। একই কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও শ্রীনগরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গতকাল ভোর থেকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে ঘন কুয়াশায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়।
এদিকে চলাচলে বিঘœ ঘটায় চরম দুর্ভোগের শিকার হন সংশ্লিষ্ট পথগুলো ব্যবহারকারী হাজারো যাত্রী এবং বাহনগুলোর চালক ও কর্মীরা। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ যাত্রীরা বেশি বিপাকে পড়েন। ঘন কুয়াশার কারণে ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গতকাল সকাল ৮টা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। এতে ব্যস্ততম এই নৌপথের দুই পাশে যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপ তৈরি হয়। বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ফেরিঘাট শাখার (বাণিজ্য) ব্যবস্থাপক আব্দুল সালাম বলেন, ‘মাঝ পদ্মা নদীতে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরির মার্কিং বাতির আলো অস্পষ্ট হয়ে আসায় নৌদুর্ঘটনা এড়াতে রাত ২টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ঘন কুয়াশা কেটে গেলে সকাল ৮টা থেকে ফেরি চলাচল পুনরায় শুরু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় যানবাহনের চাপ থাকে। এর মধ্যে ছয় ঘণ্টা ফেরি চালাচল বন্ধ থাকায় বাড়তি চাপ পড়েছে। সকাল থেকে ১১টি ফেরি দিয়ে যাত্রীবাহী বাস ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক অগ্রাধিকারভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।’
যাত্রী ও যানবাহন চালকরা জানান, তীব্র শীতে ফেরিঘাট এলাকায় নদীর পাড়ে আটকে থেকে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ যাত্রীরা বেশি বিপাকে পড়েন।
বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে ৫ কিলোমিটার জট : ঘন কুয়াশার কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও শ্রীনগরে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে (ঢাকা-মাওয়া) ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সকাল ৬টার দিকে লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে যানজটের শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীনগরের সমষপুর এলাকা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায় এই যানজট। তবে দুপুর ১টার দিকে জট কমে আসে। এ সময় এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করে। কুয়াশাচ্ছন্ন পদ্মা সেতুতে দুর্ঘটনা এড়াতে ৬টি লেনের মধ্যে ২টি লেন দিয়ে টোল আদায় করার কারণে এক্সপ্রেসওয়েতে এই যানজটের সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক সজল তালুকদার বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ৬টি লেনে সাধারণত টোল নেওয়া হয়। এরমধ্যে ২টিতে সংস্কারকাজ চলছে। কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে বাকি ৪টির মধ্যে ২টি লেনে টোল আদায় করা হচ্ছিল বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে। কুয়াশা কিছুটা কমলে সকাল ১০টা থেকে ৪টি লেনের মাধ্যমে টোল আদায় শুরু করা হয়।’
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের জট এখন নিয়মিত ব্যাপার। ঘন কুয়াশার কারণে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় টোলের লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাতে পদ্মা সেতুর ওপর দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। এ কারণে যানবাহনের দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ১টার দিকে যানজট নিরসন হলেও যানবাহন চলাচলে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে।’
হিলিতে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় : দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে ভোর থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ঝড়ছে। এতে করে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে ট্রেন চলাচল করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। প্রতিটি ট্রেন আধা ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন এই পথে চলাচলরত ট্রেনের যাত্রীরা। ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে, আর যার প্রভাবে ক্রসিং বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্র্তৃপক্ষ।
ট্রেনের যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জয়পুরহাট কলেজে লেখাপড়া করি, নিয়মিত হিলি থেকে ট্রেনে করে জয়পুরহাট যাতায়াত করে থাকি। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেন বিলম্বে আসছে। এতে করে অনেক সময় ধরে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সময়মতো ট্রেন না আসার কারণে ক্লাস ধরতে না পারাসহ আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’
আরেক ট্রেনযাত্রী শেরেগুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা হিলি থেকে আত্রাই যাচ্ছি কাজ করতে। কিন্তু শীত ও কুয়াশার কারণে ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছে। আগে যেখানে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে তিতুমীর এক্সপ্রেস আসত, এখন তা আসতে ১১টা থেকে ১২টা বেজে যাচ্ছে। ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। শীতের মধ্যে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এমন সমস্যার মধ্যে অনেককেই পড়তে হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হিলি রেলস্টেশনের মাস্টার তপন কুমার বলেন, ‘ঘন কুয়াশাজনিত কারণে ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। ট্রেনের সিগন্যাল মেনে চলতে হয়। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে সেই সিগন্যাল দেখতে সমস্যা হওয়ায় ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। কোনো ট্রেন আধা ঘণ্টা, কোনো ট্রেন এক ঘণ্টা, আবার কোনো ট্রেন দুই ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। ক্রসিং বিপর্যয়ের কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। শিডিউল টাইমে না চলাচলের কারণে যেখানে যেখানে ক্রসিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করা থাকে, তখন সেখানে ক্রসিং না হওয়ার কারণে ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হচ্ছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দিনাজপুর কাযালয়ের ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান জানান, গতকাল দিনাজপুর অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ ভাগ।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।