
গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীত জেঁকে বসেছে। বইছে হিমেল হাওয়া। রাতে ও ভোরে মাঝেমধ্যেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে চারপাশ। আর কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে আসায় বিঘিœত হচ্ছে দেশের রেলপথ, সড়কপথ, নৌপথ ও আকাশপথে চলাচল। কুয়াশাচ্ছন্ন সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনাও। এরই ধারাবাহিকতায় ঘন কুয়াশার কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশপথখ্যাত পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত টানা ছয় ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। একই কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও শ্রীনগরে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে গতকাল ভোর থেকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে ঘন কুয়াশায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দেয়।
এদিকে চলাচলে বিঘœ ঘটায় চরম দুর্ভোগের শিকার হন সংশ্লিষ্ট পথগুলো ব্যবহারকারী হাজারো যাত্রী এবং বাহনগুলোর চালক ও কর্মীরা। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ যাত্রীরা বেশি বিপাকে পড়েন। ঘন কুয়াশার কারণে ছয় ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গতকাল সকাল ৮টা থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। এতে ব্যস্ততম এই নৌপথের দুই পাশে যাত্রী ও যানবাহনের বাড়তি চাপ তৈরি হয়। বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ফেরিঘাট শাখার (বাণিজ্য) ব্যবস্থাপক আব্দুল সালাম বলেন, ‘মাঝ পদ্মা নদীতে ঘন কুয়াশার কারণে ফেরির মার্কিং বাতির আলো অস্পষ্ট হয়ে আসায় নৌদুর্ঘটনা এড়াতে রাত ২টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে ঘন কুয়াশা কেটে গেলে সকাল ৮টা থেকে ফেরি চলাচল পুনরায় শুরু হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় যানবাহনের চাপ থাকে। এর মধ্যে ছয় ঘণ্টা ফেরি চালাচল বন্ধ থাকায় বাড়তি চাপ পড়েছে। সকাল থেকে ১১টি ফেরি দিয়ে যাত্রীবাহী বাস ও পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক অগ্রাধিকারভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।’
যাত্রী ও যানবাহন চালকরা জানান, তীব্র শীতে ফেরিঘাট এলাকায় নদীর পাড়ে আটকে থেকে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধ যাত্রীরা বেশি বিপাকে পড়েন।
বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে ৫ কিলোমিটার জট : ঘন কুয়াশার কারণে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও শ্রীনগরে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে (ঢাকা-মাওয়া) ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল সকাল ৬টার দিকে লৌহজংয়ের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে যানজটের শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রীনগরের সমষপুর এলাকা পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায় এই যানজট। তবে দুপুর ১টার দিকে জট কমে আসে। এ সময় এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করে। কুয়াশাচ্ছন্ন পদ্মা সেতুতে দুর্ঘটনা এড়াতে ৬টি লেনের মধ্যে ২টি লেন দিয়ে টোল আদায় করার কারণে এক্সপ্রেসওয়েতে এই যানজটের সৃষ্টি হয় বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক সজল তালুকদার বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ৬টি লেনে সাধারণত টোল নেওয়া হয়। এরমধ্যে ২টিতে সংস্কারকাজ চলছে। কুয়াশার কারণে দুর্ঘটনা এড়াতে বাকি ৪টির মধ্যে ২টি লেনে টোল আদায় করা হচ্ছিল বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকে। কুয়াশা কিছুটা কমলে সকাল ১০টা থেকে ৪টি লেনের মাধ্যমে টোল আদায় শুরু করা হয়।’
পদ্মা সেতু উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের জট এখন নিয়মিত ব্যাপার। ঘন কুয়াশার কারণে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় টোলের লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাতে পদ্মা সেতুর ওপর দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। এ কারণে যানবাহনের দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়। দুপুর ১টার দিকে যানজট নিরসন হলেও যানবাহন চলাচলে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে।’
হিলিতে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় : দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে ভোর থেকে শুরু করে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ঝড়ছে। এতে করে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে ট্রেন চলাচল করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেখা দিয়েছে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। প্রতিটি ট্রেন আধা ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলাচল করছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন এই পথে চলাচলরত ট্রেনের যাত্রীরা। ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে, আর যার প্রভাবে ক্রসিং বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে রেল কর্র্তৃপক্ষ।
ট্রেনের যাত্রী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জয়পুরহাট কলেজে লেখাপড়া করি, নিয়মিত হিলি থেকে ট্রেনে করে জয়পুরহাট যাতায়াত করে থাকি। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে ট্রেন বিলম্বে আসছে। এতে করে অনেক সময় ধরে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সময়মতো ট্রেন না আসার কারণে ক্লাস ধরতে না পারাসহ আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।’
আরেক ট্রেনযাত্রী শেরেগুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা হিলি থেকে আত্রাই যাচ্ছি কাজ করতে। কিন্তু শীত ও কুয়াশার কারণে ট্রেন আসতে দেরি হচ্ছে। আগে যেখানে ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে তিতুমীর এক্সপ্রেস আসত, এখন তা আসতে ১১টা থেকে ১২টা বেজে যাচ্ছে। ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে দীর্ঘসময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। শীতের মধ্যে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এমন সমস্যার মধ্যে অনেককেই পড়তে হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হিলি রেলস্টেশনের মাস্টার তপন কুমার বলেন, ‘ঘন কুয়াশাজনিত কারণে ট্রেন বিলম্বে চলাচল করছে। ট্রেনের সিগন্যাল মেনে চলতে হয়। কিন্তু ঘন কুয়াশার কারণে সেই সিগন্যাল দেখতে সমস্যা হওয়ায় ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। কোনো ট্রেন আধা ঘণ্টা, কোনো ট্রেন এক ঘণ্টা, আবার কোনো ট্রেন দুই ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। ক্রসিং বিপর্যয়ের কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। শিডিউল টাইমে না চলাচলের কারণে যেখানে যেখানে ক্রসিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করা থাকে, তখন সেখানে ক্রসিং না হওয়ার কারণে ট্রেন চলাচলে বিলম্ব হচ্ছে।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দিনাজপুর কাযালয়ের ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান জানান, গতকাল দিনাজপুর অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৯টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ ভাগ।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা
খুলনার কয়রা উপজেলায় সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের শিংয়ের টেকের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র বানাচ্ছে প্রশাসন। এ কাজে অর্থায়ন করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্যুরিজম বোর্ড। পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণে বরাদ্দের পাশাপাশি ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়েছে।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঠের সেতু ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা। বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা কোনোভাবেই ঠিক নয়।
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়-সূত্র জানায়, কয়রা সদর থেকে দেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়ন। নদী পার হলেই সুন্দরবন। ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণে গোলখালী গ্রামের সামনের বেড়িবাঁধের বাইরে মূল জঙ্গল থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকায় পলি জমে গড়ে উঠেছে আরেকটি বন। নাম শিংয়ের টেকের চর।
চরের চারপাশে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লেখা সাইনবোর্ড রয়েছে। তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অস্তিত্ব আর থাকছে না। কারণ বন বিভাগকে না জানিয়ে শিংয়ের টেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র বানাতে বরাদ্দের পাশাপাশি ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন করেছে কয়রা উপজেলা প্রশাসন।
সংরক্ষিত বনাঞ্চলে উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাতে হলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়াই পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিংয়ের টেকের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কাঠের সেতু বা ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হলে সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ বিবেচনায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আপত্তি জানিয়েছে বন বিভাগ। প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি সুন্দরবনের কোবাদক ফরেস্ট স্টেশনের কাছে।
কয়রার ইউএনও কার্যালয়-সূত্র জানায়, শিংয়ের টেকের সব জমি বন বিভাগের নয়। সেখানে সরকারি খাসজমিও রয়েছে। শিংয়ের টেকের যেটুকু অংশে সড়ক, ওয়াকওয়ে ও ওয়াচ টাওয়ার হবে তা মূলত নদীতে জেগে ওঠা চর, যা মূল ভূখ-ের সঙ্গে যুক্ত। সেখানে তেমন গাছপালা নেই। তা ছাড়া গাছপালা না কেটেই সব নির্মাণ করা যাবে।
সূত্র আরও জানায়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্যুরিজম বোর্ড কয়রার গোলখালীতে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রথম ধাপে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়ে ও কাঠের সেতু নির্মাণ করা হবে। পরে ১ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। বাস্তবায়নে রয়েছে মেসার্স ঘোষ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
খুলনার সুন্দরবন অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কাদির বলেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বা নতুনভাবে জেগে ওঠা চরে, যেখানে বন গড়ে উঠছে, সেখানে পর্যটনকেন্দ্র করা উচিত নয়, এতে বনায়ন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হবে।
সুন্দরবনের কোবাদক স্টেশনের কর্মকর্তা মো. ফারুকুল ইসলাম বলেন, গোলখালীর যেখানে পর্যটনকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে সে জায়গা সরকারি গেজেট অনুযায়ী অভয়ারণ্য বিবেচনায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেজন্য বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া কার্যক্রম শুরু না করতে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কয়রার ইউএনও মো. মমিনুর রহমান বলেন, শিংয়ের টেকের জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। সেখানকার জমি বন বিভাগের নয়। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ট্যুরিজম বোর্ডের সচিব এসে জায়গাটি দেখে গেছেন। এরপর পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বরাদ্দ দেয় মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে চলতি বছরের জুনে কাজ শেষ করার নির্দেশ ছিল। সময় মতো কাজ শুরু করা যায়নি। তবে বন বিভাগকে আমরা আশ্বস্ত করেছি, গহীন বনে কিছু নির্মাণ করা হবে না। লোকালয়ঘেঁষে সড়ক ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। তাতেও বন বিভাগের আপত্তি। অনুমোদিত গেজেটে ওই জায়গা ভূমি অধিদপ্তরের, বন বিভাগের নয়।
খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, গোলখালী শিংয়ের টেকে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে আমি অবাক হয়েছি। শিংয়ের টেকে একসময় ফরেস্ট অফিস ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে অফিসটি ভেঙে গিয়েছে। আবারও সেখানে বন বিভাগের অফিস করা হবে। ওই এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের কোনো সুযোগ দেখি না।
আফ্রিকার দেশ সেনেগালের দক্ষিণাঞ্চলের শহর কাসামানসের বাসিন্দা আদামা দিয়েমি। জন্ম ও বেড়ে ওঠা সেখানেই। মাঝে কিছু দিন ইউরোপে থাকলেও তিনি এখন ফিরেছেন নিজের এলাকায়। কিন্তু ফিরেই দেখেন, এলাকাটি আর তার শৈশবের মতো নেই। একসময়ে সবুজে ঢাকা থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘন সবুজ গাছপালা উজাড় হয়ে গেছে। তাই তিনি নিজের শহর ও আশপাশের এলাকাকে আবারও সবুজে সবুজে ভরিয়ে তুলতে চান। এজন্য তিনি এক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন। আদামা আগামী ৫ বছরের মধ্যে ৫০ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে সে কাজ শুরুও করেছেন তিনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ সময় ইউরোপে বসবাস করেছেন আদামা। প্রকৃতির গুরুত্ব ও জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে বৈশ্বিক পরিবর্তনের বিষয়গুলো তিনি ইউরোপে থাকতেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ইউরোপের পাট চুকিয়ে ২০২০ সালে নিজ গ্রামে ফেরেন আদামা। আর তখনই প্রকৃতির পরিবর্তন তিনি উপলব্ধি করতে শুরু করেন।
৪৮ বছর বয়সী আদামা জানান, তার গ্রাম ও আশপাশের এলাকায় আগে অনেক গাছপালা ছিল। সবুজ প্রকৃতির মধ্যে তার বেড়ে ওঠা। কিন্তু গ্রামে ফিরে দেখেন, চারপাশ ধূসর হয়ে গেছে। গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। আশপাশের অনেক গ্রামে একটিও গাছ নেই এখন। আদামা বলেন, গ্রামবাসী একের পর এক গাছ কেটে উজাড় করেছে। কিন্তু নতুন করে গাছ লাগানোর কথা ভাবেনি। তিনি জানান, এ পরিস্থিতি চিন্তায় ফেলে দেয় আদামাকে। তিনি বুঝতে পারেন, প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে দীর্ঘদিন টিকে থাকা সম্ভব নয়। আজ হোক কিংবা কাল, এর অভিঘাত মোকাবিলা করতেই হবে। তাই উদ্যোগী হয়েছেন আদামা। ৫ বছরে ৫০ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেছেন তিনি। এজন্য তহবিল সংগ্রহ শুরু করেছেন। এমনকি নিজের পকেট থেকে এ তহবিলে ৫ হাজার ডলার দিয়েছেন আদামা।
বর্তমানে আদামা নিজ এলাকায় স্পেনভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থায় প্রকল্প ব্যবস্থাপক পদে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে কৃষি প্রশিক্ষক হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে। কর্মক্ষেত্র নিজ এলাকাতেই। নিজের পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতা গাছ লাগানোর স্বপ্নপূরণে কাজে লাগছে আদামার।
কাসামানসে নদীর মাঝখানে দ্বীপের মতো আদামার গ্রামের অবস্থান। আগে নদীর পানি কদাচিৎ তাদের গ্রাম ছুঁয়ে যেত। কিন্তু গাছপালা উজাড় হতে শুরু হওয়ার পর প্রকৃতিও আচরণ বদলেছে। ইদানীং নদী উপচে বিভিন্ন সময় প্লাবিত হয় গ্রাম।
আদামার মতে, এসব গাছ কেটে ফেলা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। তাই গ্রাম, বসতি ও জীবন রক্ষা করতে হলে বেশি বেশি গাছ লাগানো জরুরি। এ ভাবনাই তাকে গাছ লাগাতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মা হীরাবেন মোদি মারা গেছেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোররাতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৯৯ বছর। মোদির মায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠানো এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বাংলাদেশের জনগণ এবং নিজের পক্ষ থেকে আপনার প্রিয় মা শ্রীমতী হীরাবেন মোদির মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, হীরাবেন গুজরাটের গান্ধীনগরের কাছে রায়সান গ্রামে তার ছোট ছেলে পঙ্কজ মোদির সঙ্গে থাকতেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দিন কয়েক আগে তাকে গুজরাটেরই একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মায়ের মৃত্যুর পর নরেন্দ্র মোদি টুইটারে লিখেছেন, ‘একটি মহিমান্বিত শতাব্দী ঈশ্বরের চরণে বিশ্রামে গেলেন।’
এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় নরেন্দ্র মোদি তার মাকে দেখতে দিল্লি থেকে গুজরাটে গিয়েছিলেন। গুজরাটে অধিকাংশ সফর চলাকালে মোদি নিয়মিতভাবে তার মায়ের সঙ্গে সময় কাটাতে রায়সানে যেতেন।
হীরাবেন ১৯২৩ সালের ১৮ জুন গুজরাটের মেহসানার ভাদনগরে জন্মগ্রহণ করেন। শতবর্ষী এই নারীর মৃত্যুর পর পাঠানো শোকবার্তায় শেখ হাসিনা হীরাবেনকে একজন গর্বিত মা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা দেখেছি একজন মা, প্রেরণাদাতা ও পরামর্শদাতা হিসেবে আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শ্রীমতী হীরাবেন মোদির পরলোক গমনের মধ্য দিয়ে আমরা সারল্য, পবিত্রতা ও মূল্যবোধে পরিপূর্ণ এক শতাব্দীর জীবনকালের সমাপ্তি প্রত্যক্ষ করেছি।’ শোকবার্তায় হীরাবেন মোদির বিদেহী আত্মার মুক্তি কামনা করেন শেখ হাসিনা।
অন্যান্য বছরের মতো ২০২২ সালও দুর্নীতি নিয়ে সংবাদমাধ্যম সরব ছিল, জনপরিসরেও ছিল আলোচনা-সমালোচনা। দুর্নীতি দমন কমিশনও আগের বছরের চেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল মামলা করার ক্ষেত্রে। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের লাগাম টেনে ধরার মতো কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং উল্টো চিত্র দেখা গেছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শত শত কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ এসেছে। বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি আলোচিত-সমালোচিত হয়েছে।
ব্যতিক্রম ছিল প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের ভারতে গ্রেপ্তারের ঘটনা, যার বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। কানাডায় ‘বেগমপাড়ায়’ বাংলাদেশি নাগরিকদের সহায়-সম্পদ নিয়েও ছিল অলোচনা।
গত বছরের (২০২১ সাল) তুলনায় চলতি বছর অভিযোগের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়লেও দায়ের করা মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিলের হার কমেছে। আসামির তালিকায় নেই আলোচিত কোনো বড় দুর্নীতিবাজ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৬ বছরে দেশের ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা (৪৯৬৫ কোটি ডলার) বিদেশে পাচার হয়েছে। গড়ে প্রতি বছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। কানাডায় টাকা পাচার করে বাড়িঘর বানিয়েছেন বহু প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মচারী ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ী।
দুদক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ১৮ হাজার ১৯টি অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে ৮৪০টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করেছে কমিশন, যা মোট জমা হওয়া অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এসব অভিযোগের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিতে ৩ হাজার ৬০টি অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ১৪ হাজার ১১৯টি অভিযোগ কোনো কার্যক্রমের জন্য সুপারিশ করা হয়নি।
এর আগে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দুদকে জমা পড়েছিল ১১ হাজার ৮২৮টি অভিযোগ। ২০২০ সালে একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার ৪৮৯। ২০২২ সালে গড়ে দুদকে প্রতি মাসে ১ হাজার ৬৩৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ৫৪১ ও ১ হাজার ১৮৩টি।
দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হকের মতে, যে পরিমাণ অভিযোগ এসেছে তার বেশিরভাগই অসুসন্ধানের জন্য নিতে পারি না। কারণ, যেসব অভিযোগ আসে তার বড় অংশই দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ নয়। দুদকের সেসব অভিযোগ গ্রহণের এখতিয়ার নেই। এ ছাড়া দুদক বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসব অভিযোগ গ্রহণ করে তা অনেক সময় অসম্পূর্ণ থাকে। কমিশনে যে কয়টি সোর্সের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় তার একটি সরাসরি বা ডাকযোগে আসা অভিযোগ। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদ অভিযোগ হিসেবে নেওয়া হয়। কমিশন অভিযোগগুলোর প্রাথমিক সত্যতা পেলে তা অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে।
গত ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবসে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, দুর্নীতির মাত্রা কিছুটা হলেও কমেছে। তবে জন-আকাক্সক্ষা অনুসারে হয়তো কমেনি।
সম্প্রতি দেশের আরও ১৪টি জেলায় কার্যালয় স্থাপন করার ফলে বর্তমান ৩৬ জেলায় সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের মাধ্যমে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এজন্যই কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
চলতি বছর দুর্নীতিবাজদের ৬ কোটি ৩৫ লাখ ১৯ হাজার ৭০১ টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সময়ে জরিমানা করা হয়েছে ১৩৯ কোটি ১৩ লাখ ৮১ হাজার ৯৫৩ টাকা।
চলতি বছর দুদক ৩৫৪টি অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩১২টি অভিযোগ, সম্পদ বিবরণীর নোটিস জারি ৮৯টির, এফআইআর ২৭৬টি, অভিযোগপত্র ১৬২টি আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছে ৭৮টি অভিযোগের। দুদকে বর্তমানে অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে ৩ হাজার ৫৭৮টি অভিযোগ। চলমান মামলা আছে ১ হাজার ৬৯৯টি। মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও মামলা আছে যথাক্রমে ৭২৪ ও ১৫৭টি। মেয়াদোত্তীর্ণ অনুসন্ধান ও মামলার শতকরা হার ১৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। অর্থপাচার, ব্যাংক-বীমা সংক্রান্ত অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব অনুসন্ধান ও মামলা চলছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত পিকে হালদার ও তার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দুই ডজনের ওপর মামলা করেছে দুদক। চলতি বছরের ১৪ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়ে সে দেশে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।
ঘুরে দাঁড়াতে চায় দুদক : গত ২১ নভেম্বর দুদকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিক অর্থপাচারের ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে দুদকের কর্মপরিকল্পনা জানতে চান। জবাবে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, অর্থপাচার হচ্ছে, এটা সত্যি। আমরা চেষ্টা করছি, কিন্তু অর্থপাচারের ব্যাপারে আমাদের (দুদক) তফসিল থেকে সব নিয়ে গেছে আইন করে। এখন আমাদের যেটা আছে মাত্র একটা তফসিলভুক্ত, সেটা নিয়েই আমরা ফাইট করছি।
অর্থপাচার আইনের ২৭টি অপরাধের মধ্যে শুধু একটি অপরাধ দুদকের তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। অর্থপাচারের অভিযোগ তদন্তে আইনি সীমাবদ্ধতা দুদকের জন্য বড় জটিলতা। আগামী বছর (২০২৩ সাল) দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম বাড়াবে দুদক। সততা সংঘের সঙ্গে জড়িতদের বিশেষ স্বীকৃতি ও বেশ কয়েকটি জেলায় গণশুনানির আয়োজন করা হবে।
বিচার : সাজা হওয়া উল্লেখযোগ্য মামলা হলো টেকনাফের আলোচিত বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা, তিতাসের উপ-ব্যবস্থাপক এস এম হাফিজুর রহমান, ধারা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের মেজর জেনারেল (অব.) জালাল উদ্দিন আহমেদ ও সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া কর্নেল মো. শহিদ উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে করা মামলা। গত ২৯ নভেম্বর বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের তিন মামলায় এক আসামির জামিন শুনানিতে দুদক কেন নীরব, তা জানতে চান হাইকোর্ট। বেসরকারি ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার সাবেক ম্যানেজার মোহাম্মদ আলীর জামিনের ওপর শুনানিতে এ প্রশ্ন করেন হাইকোর্ট। গত ২৭ নভেম্বর এক শুনানিতে অর্থশালীরা পাওয়ারফুল (শক্তিশালী), তারা বিচারের ঊর্ধ্বে কিংবা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবে কি না দুদকের প্রতি এমন প্রশ্ন রাখে উচ্চ আদালত। দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলে, আপনারা ধরছেন চুনোপুঁটি। তাহলে রাঘব-বোয়ালদের ধরবে কে?
সবশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’র ১ থেকে ২৫ নম্বরে থাকা ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে কোনো অভিযোগ আগে অনুসন্ধান ও তদন্ত করতে দুদককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কাছাকাছি এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মো. অনিক (১৭) ও শাওন মিয়া (১৮)। এ ছাড়া বান্দরবানের থানচিতে কাঠবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এক পর্যটক, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে লরির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাসের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অটোরিকশাচালক নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। বিস্তারিত প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে
কেরানীগঞ্জ : ঢাকা-মাওয়া হাইওয়েতে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন অনিক ও শাওন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ২টার দিকে চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। অনিক রাজধানীর মুগদা মানিকনগর বালুরমাঠ এলাকার মো. ইদ্রিস আলীর ছেলে ও শাওন একই এলাকার মো. চান্দু মিয়ার ছেলে। অনিক সাইনবোর্ড ও ব্যানারের কাজ করতেন।
নিহত অনিকের বড়ভাই ইয়াসিন মিয়া জানান, রাত ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার কথা হয়। তখন অনিক জানায়, বন্ধুদের সঙ্গে দাওয়াত খেতে যাচ্ছে। এরপর রাত ১২টার দিকে তিনি খবর পান ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ছিটকে পড়ে অনিকসহ দুজন আহত হয়েছে। পরে তিনি ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে তাদের মরদেহ দেখতে পান। শাওন মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিল।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ দুটি মর্গে রাখা হয়েছে।
থানচিতে ট্রাকের ধাক্কায় কাপ্তাই সুইডিশ পলিটেকনিক্যালের শিক্ষার্থী নিহত : বান্দরবানের থানচিতে কাঠবোঝাই ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে নিহত পর্যটকের নাম জয়রাজ দাশ। গতকাল বিকেলে থানচি যাওয়ার পথে বিদ্যামণিপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। জয়রাজ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা ১নং ওয়ার্ডের অমল দাশের ছেলে। তিনি রাঙ্গামাটির কাপ্তাই সুইডিশ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের অটোমোবাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল দুপুরে পাঁচজনের একটি দল মোটরসাইকেল নিয়ে থানচি যাওয়ার পথে বিদ্যামণিপাড়া এলাকায় একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই জয়রাজের মৃত্যু হয়।
সীতাকুন্ডে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত : চট্টগ্রামের সীতাকু-ে সড়কের পাশে পার্কিং করার সময় একটি লরির পেছনে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী হোসাইন বিন আরিফসহ (২৫) দুই বন্ধু গুরুতর আহত হন। উপজেলার কুমিরা পিএইচপি গেট এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা দুজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি সীতাকু-ের কুমিরা ইউনিয়নের ছোট কুমিরা মাস্টারপাড়া এলাকার মৃত জেবল হোসেনের ছেলে। আরিফের বন্ধু ইমন একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সীতাকুন্ড মডেল থানার এসআই মোতাব্বির হোসেন গাজী বলেন, গাড়ি দুটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
আড়াইহাজারে বাসের ধাক্কায় অটোচালক নিহত : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে বাসের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে জাকির হোসেন (৪৫) নামে এক অটোরিকশা চালক নিহত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকা-বিশনন্দী সড়কের সাদারদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত জাকির উপজেলার কৃষ্ণপুরা এলাকার সানাউল্লার ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে অন্য দিনের মতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হন জাকির। উপজেলার সাদারদিয়া এলাকায় আল আফরাহ পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে তার রিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে জাকির গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
(প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন কেরানীগঞ্জ (ঢাকা), বান্দরবান ও সীতাকু- (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ও আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা)
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।