
গত শতকের আশির দশকে ছাত্ররাজনীতির বাঁক বদলে দেওয়া ছাত্রদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। চার দশক পর ছাত্রসংগঠনটি খেই হারিয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের সামনের সারিতে দেখা গেলেও একসময়ের ‘স্মার্ট’ ছাত্রসংগঠনটি ছাত্রদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে তেমনটি দৃশ্যমান নয়। বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় এর ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলও গতিহারা। কমিটি বাণিজ্যসহ নানা কারণে সংগঠনের সংগ্রামী ঐতিহ্যও ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান মনে করেন, ছাত্ররাজনীতি গতি হারিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কারণে। তার মতে, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে ছাত্ররাজনীতি স্বাভাবিক ছিল। ক্যাম্পাসগুলোতে সহাবস্থান ছিল। কিন্তু ’৯৬ সালের পরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ভিন্নমতের ছাত্রদের হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। যার ধারা এখনো চলছে। ফলে মেধাবী ছাত্ররা এখন আর রাজনীতিতে আসতে চাচ্ছে না।’
১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি গঠন করা হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সেই সময়কার ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা মুস্তাফিজুর রহমান মূলত তিনটি ছাত্রসংগঠন যথাক্রমে ন্যাপ (ভাসানী) ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রদল, ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) ছাত্রসংগঠন জাগ ছাত্রদল থেকে বেশ কিছু নেতাকে নিয়ে ছাত্রদল গঠন করেন।
নিজেদের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতির স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হল সংসদে ছাত্রদের ভোটে জেতে ছাত্রদল। পরবর্তী বছর ১৯৮১ সালের ডাকসু নির্বাচনে ইকবাল হল ও জগন্নাথ হল ছাড়া বাকি সব হলে একচেটিয়া বিজয় অর্জন করে ছাত্রদল। এই সর্বজনপ্রিয়তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা শহরের গন্ডি পেরিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। স্বৈরাচারী এরশাদের সময়ে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), রাকসু (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), চাকসুসহ (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) বিভিন্ন কলেজ পর্যায়ে ৩০৮টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২২১টি সংসদেই জয় পায় ছাত্রদল।
ছাত্রদলের সাবেক নেতারা আরও বলেন, ছাত্রদলের এই উত্থান কোনো অঘটন ছিল না। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ ধারণ করে দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে পথ চলছে সংগঠনটি। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা প্রবল থাকলেও সেটা ভ্রাতৃঘাতী হয়নি। যার ফলে সুদীর্ঘ সময়েও একবারের জন্যও ভাঙনের মুখে পড়েনি এই সংগঠনটি।
ছাত্রদলের চার দশকের পথচলায় সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান। ছাত্রদলের ওপর ভিত্তি করে খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে দেশের জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করেন। ২০০৭ সালের ১/১১-খ্যাত অস্বাভাবিক সরকারের সময় প্রথম রুখে দাঁড়ানোসহ ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনসহ বর্তমানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে আছে ছাত্রদল।
বিএনপির ক্ষমতার রাজনীতিতে ছাত্রদল প্রথম সারিতে থাকলেও ছাত্রদের দাবি আদায় কিংবা কোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় দেখা যায়নি সংগঠনটিকে। একসময় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের ছাত্রসংগঠন শিবিরের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ছিল এই ছাত্রসংগঠনটির। কিন্তু এখন দলীয় রাজনীতি করতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিল করতে হচ্ছে।
আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে দেখা গেলেও কমিটি বাণিজ্যসহ নানা কারণে অতীত ঐহিত্য হারাচ্ছে বিএনপির সহযোগী সংগঠনটি। ৪৪ বছরেও একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র করতে পারেনি। ১৯৯৭-৯৮ সালের কমিটির সময় করা ‘খসড়া’ গঠনতন্ত্র দিয়ে চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম। যদিও ওই ‘খসড়া’ গঠনতন্ত্র ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সংগঠনটির নেতারা দাবি করেছেন। ছাত্রদলকে দেখভালের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের পদও রয়েছে। কিন্তু ৬ বছর ধরে সে পদও ফাঁকা আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে ছাত্রদল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার পর ২৪টি কমিটি হয়েছে। এর মধ্যে ছয়বার নির্বাচনের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি, সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কমিটি দেওয়া হয়। পরে ১১ সেপ্টেম্বর ৩০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়। যদিও এর মধ্যে বিবাহিতসহ নানা অভিযোগে ৩২ জন নেতার পদ স্থগিত রাখা হয়েছে।
ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছাত্রদলের খসড়া গঠনতন্ত্র রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্রের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। খসড়া গঠনতন্ত্র দিয়ে আমরা কাজ করছি।’
বর্তমানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ৫০২। এর মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে অনেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক ও সহসম্পাদক পদ পেয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলের নেতৃত্বেও রয়েছেন কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বেপারি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে রাজনীতি নির্ধারণ করত ছাত্ররা। স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগ ও অ্যান্টি ছাত্রলীগের যে ধারা তৈরি হলো, তাতে রাজনীতিতে ছাত্রনেতাদের ভূমিকা আস্তে আস্তে স্তিমিত হতে লাগল। এরশাদের সময় ছাত্ররা জোরালো ভূমিকা রাখলেও ১৯৯১ সালের পর থেকে ছাত্রদের সংগ্রামী ভূমিকা চরিত্র হারাতে লাগল, যা ২০১৪ সালে এসে একেবারেই শেষ হয়ে গেল। ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা আজ জঞ্জাল ও আতঙ্কের নাম।’
তার মতে, ‘ছাত্ররাজনীতির হাত ধরে স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। কিন্তু সেই ছাত্ররাজনীতি এখন অনেকটাই গতিহারা। সেই গতিহারা ছাত্ররাজনীতির অংশ হিসেবে সক্রিয় রয়েছে ছাত্রদল।’
ছাত্রসংগঠনগুলোকে বড় দলগুলো তাদের উপাঙ্গ ভাবে এমনটা দাবি করে নুরুল আমিন বেপারি বলেন, ‘এর ফলে বেড়েছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, সিট দখলের রাজনীতি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা ধরনের ভর্তিবাণিজ্য, নির্মাণ উপকরণ সরবরাহ ইত্যাদি।’
কর্মসূচি : ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে সংগঠনটি। সকালে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্র সমাবেশ হবে। সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
২০০৯ সাল থেকে প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীকে বছরের প্রথম দিনে উৎসবের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। ইতিমধ্যে এই উৎসব সার্বজনীনে রূপ নিয়েছে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশের প্রায় প্রতিটি স্কুলেই নেওয়া হয়েছে উৎসবের প্রস্তুতি। আজ রবিবার দেওয়া হচ্ছে নতুন বই। বই উৎসবের সঙ্গে দেশে যাত্রা শুরু হচ্ছে নতুন কারিকুলামেরও।
ইতিমধ্যে গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বই উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন। আজ ঘরে ঘরে সেই উৎসব গিয়ে পৌঁছবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাজধানীর বাইরে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে বই উৎসবের আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বই উৎসবের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এ ছাড়া দেশের জেলা, উপজেলা ও মফস্বল পর্যায়ের সব স্কুলের উৎসবেও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেবেন।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কিছু বই এখনো বাকি আছে, যা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে যাবে বলে আমরা আশা করছি। দেশের সব উপজেলায়ই বই পৌঁছানো হয়েছে। সব শিক্ষার্থীর হাতেই নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। সাধারণত প্রথম দিনেই সবাই স্কুলে আসে না। তাই যারা আসবে তাদের সবাই বই পাবে। কাগজ সংকটের মধ্যেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, যত বেশি সম্ভব বই স্কুলে পৌঁছানোর। আর এতে সকলেই আন্তরিক ছিলেন।’
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩৪ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক প্রাথমিকে প্রায় ৬৬ লাখ ২৯ হাজার বই, প্রাথমিকে ৯ কোটি ৬৬ লাখ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৭টি বই বিতরণ করা হবে। আর মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ২৪ কোটি ৬৩ লাখ কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। তবে গতকাল পর্যন্ত মাধ্যমিকে প্রায় ৮০ শতাংশ এবং প্রাথমিকে প্রায় ৭১ শতাংশ বই স্কুল পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আজ বই উৎসবের সঙ্গে দেশে যাত্রা শুরু করছে নতুন কারিকুলাম। তবে এ বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই দেওয়া হবে। ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে। ফলে এ বছর থেকেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন বই নিয়ে উৎসাহ ও কৌতূহল আগের চেয়েও বেশি।
জানা যায়, নতুন কারিকুলামে সমষ্টিক মূল্যায়নের চেয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের এত বেশি পরীক্ষায় বসতে হবে না। নতুন কারিকুলামের আওতায় ২০২৪ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভাগ বিভাজন উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ নবম শ্রেণিতে ওঠার পর একজন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ বেছে নিতে হবে না। একজন শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ই পড়তে হবে। একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর শিক্ষার্থীরা কোন বিভাগে পড়বে তা বেছে নেবে।
নতুন কারিকুলামে প্রাথমিকে পড়তে হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্পকলা। মাধ্যমিকে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে পড়তে হবে। তবে সব বিষয়েই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে হবে না। আর যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষা হবে সেখানেও কিছুটা অংশ থাকবে শিখনকালীন মূল্যায়ন আর কিছুটা অংশ থাকবে সমষ্টিক মূল্যায়ন।
শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম সম্বন্ধে ধারণা দিতে ইতিমধ্যে এক দিনের অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আর ৬, ৭, ১৩, ১৪ ও ২১ জানুয়ারি সব শিক্ষককে সরাসরি নতুন কারিকুলামের ওপর পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। উপজেলা পর্যায়ে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন মারা গেছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই সাবেক সভাপতি ফুসফুসেরসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এক শোকবার্তায় মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
৮৪ বছর বয়সী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে গত ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৮ ডিসেম্বর তাকে হাসপাতালের ভেন্টিলেশন সাপোর্টে নেওয়া হয়। ৩০ ডিসেম্বর রাত থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। কিছুদিন আগে ব্যাংকক থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছিলেন তিনি।
১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন খন্দকার মাহবুব। বরগুনার বামনায় তার পৈতৃক বাড়ি। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালের ১৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে আইনি পেশায় ছিলেন খন্দকার মাহবুব। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে গঠিত আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন। খন্দকার মাহবুব চার মেয়াদে (২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইবার (২০০৭-৮ ও ২০১২-১৫) দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে বিএনপিতে যোগ দেন খন্দকার মাহবুব। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে (২০২৩-২৪) সভাপতি পদে ফরিদা ইয়াসমিন আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শ্যামল দত্ত। তারা দুজনই একই প্যানেল (ফরিদা ইয়াসমিন-শ্যামল দত্ত) থেকে নির্বাচন করেছিলেন।
গতকাল শনিবার এ নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতি ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলে। রাতে ঘোষিত ফলে সভাপতি পদে প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি ও ইত্তেফাকের সাংবাদিক ফরিদা ইয়াসমিন পেয়েছেন ৫৬৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল উদ্দিন সবুজ পেয়েছেন ৪০১ ভোট। আর সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত পেয়েছেন ৪৯৬ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেস ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান পেয়েছেন ৪৭৪ ভোট। সবুজ ও ইলিয়াস একই প্যানেল (সবুজ-ইলিয়াস পরিষদ) থেকে নির্বাচন করেছিলেন।
অন্যান্য পদের মধ্যে সিনিয়র সহসভাপতি পদে সবুজ-ইলিয়াস পরিষদের হাসান হাফিজ পুনর্র্নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সহসভাপতি পদে ফরিদা-শ্যামল পরিষদের রেজোয়ানুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আইয়ুব ভূঁইয়া ও মো. আশরাফ আলী এবং কোষাধ্যক্ষ পদে শাহেদ চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির ১০টি সদস্য পদের মধ্যে সবুজ-ইলিয়াস পরিষদের ৬ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন কাজী রওনক হোসেন, সৈয়দ আবদাল আহমদ, বখতিয়ার রাণা, শাহনাজ বেগম, সীমান্ত খোকন ও মোহাম্মদ মোমিন হোসেন। সদস্য পদে ফরিদা-শ্যামল পরিষদের তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন ফরিদ হোসেন, কল্যাণ সাহা ও শাহনাজ সিদ্দিকী। এ ছাড়া সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জুলহাস আলম নির্বাচিত হয়েছেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব নির্বাচন পরিচালনায় ৮ সদস্যের মধ্যে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. মোস্তফা-ই-জামিল। এ ছাড়া নির্বাচন কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জাফর ইকবাল, এস এ এম শওকত হোসেন, মিনার মনসুর, গৌতম অরিন্দম বড়ুয়া (শেলু বড়ুয়া), শামীমা চৌধুরী, মো. মনিরুজ্জামান এবং নবনীতা চৌধুরী।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবনে ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ দখল করে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাইনুর রহমান গড়ে তুলেছেন নিজের বাসস্থান। কলেজের তিনতলা অনার্স ভবনের তৃতীয় তলার একটি শ্রেণিকক্ষকে দুই কক্ষে ভাগ করে একটি অংশে তিনি আর অন্য অংশে কয়েকজন শিক্ষক থাকছেন। এসব শিক্ষক নিয়মিত সরকারি বাড়ি ভাড়া গ্রহণ করলেও তারা দিব্যি শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই থাকা-খাওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ শ্রেণিকক্ষের অভাবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে অধ্যক্ষ মাইনুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগও উঠছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানপ্রধান হওয়ায় চাকরির ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তার এসব অনিয়ম জেনেও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানান না শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউই।
কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, পুরো জেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে জেলা শহরের ইসলামবাগ এলাকায় গড়ে ওঠে। ১৯৯৭ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিকের মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ ছাড়াও ৯টি বিষয়ে স্নাতকে পড়াশুনা করছেন প্রায় চার হাজার ছাত্রী। কলেজের পুকুরপাড় সংলগ্ন তিনতলা অনার্স ভবনটিতে বাংলা, ইংরেজি, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষ ছিল মাত্র ৮টি। শ্রেণিকক্ষের সংকটে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। প্রায়ই মাঠে ক্লাস নিতে হয় শিক্ষকদের। কখনো আবার শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফাঁকা শ্রেণিকক্ষের খোঁজ করে বেড়াতে হয়। ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক মো. মাইনুর রহমান। যোগদানের মাসখানেক পরই অনার্স ভবনের তিনতলায় ছাত্রীদের একটি শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগার দখল করে কলেজের খরচে নিজের মতো করে বাসস্থান তৈরি করে নেন। সেখানে দুটি কক্ষ করা হয়। একটিতে তিনি থাকেন, আরেকটিতে থাকেন নতুন যোগদান করা কয়েকজন শিক্ষক। এতে ছাত্রীদের আরেকটি শ্রেণিকক্ষ কমে যায়। এছাড়া শৌচাগার ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থীদের নিচতলায় নামতে হয়। অথচ শিক্ষকরা প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়ার সরকারি টাকা উত্তোলন করলেও দখল করে রেখেছেন ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগার। একাডেমিক ভবনে শ্রেণিকক্ষ দখল করে বাসস্থান করায় ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, আগে কলেজের সব ব্যাংক হিসাব অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ দুজনের স্বাক্ষরে পরিচালিত হলেও মাইনুর রহমান যোগদানের পর শুধুমাত্র তার স্বাক্ষরেই পরিচালিত করতে শুরু করেন ব্যাংক হিসাবগুলো। কলেজের বিভিন্ন সংস্কারের নামে বিভিন্ন কাজের কমিটি করে সেখানে অনৈতিকভাবে কাজের বরাদ্দের টাকা থেকে কমিটির সদস্যদের সম্মানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। নিজেও নেন বড় অঙ্কের সম্মানী। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার শর্তে পিকনিকের নাম করে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে নিয়ে সেই টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন অধ্যক্ষ ও তার ঘনিষ্ঠ শিক্ষকরা। দিনের পর দিন এমন অনিয়ম চললেও প্রতিষ্ঠানপ্রধান হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ মাইনুর রহমান নিজের মতো করে যা ইচ্ছে তাই করছেন। শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকা সত্ত্বেও তিনি অবৈধভাবে শ্রেণিকক্ষ দখল করে বসবাস করছেন। অন্য শিক্ষকদেরও রাখছেন। আমরা বিষয়টিতে বারবার আপত্তি জানালেও তিনি কোনো কথা শোনেননি। এছাড়া দুই টাকার কাজে পাঁচ টাকার সম্মানীর নিয়ম করেছেন তিনি। এভাবে কাজ যাই হোক না কেন পকেট ভরছে তাদের।’
এ প্রসঙ্গে কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সদ্য অবসরে যাওয়া বিভাগীয় প্রধান হাসনুর রশিদ বাবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কলেজের শ্রেণিকক্ষ সংকট এতটাই যে আমরা ছাত্রীদের নিয়ে ঘুরে ঘুরে কোথায় খালি কক্ষ আছে তা খুঁজে সেখানে ক্লাস নিতাম। অনার্স ভবনে ৯টি বিভাগের ছাত্রীদের জন্য মাত্র ৮টি শ্রেণিকক্ষ ছিল। তার মধ্যে একটিতে বছরখানেক ধরে অধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষক থাকছেন। ছাত্রীদের ওয়াশরুমটিও (শৌচাগার) তারাই ব্যবহার করছেন। শ্রেণিকক্ষকে আবাসিক না করার জন্য আমি অধ্যক্ষ মহোদয়কে বারবার নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি শোনেননি। বিষয়টি একদিকে যেমন অনৈতিক, তেমনি ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ সংকটের মধ্যে আরেকটি কক্ষ তারা দখল করে রেখেছেন।’
ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাইনুর রহমান বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনের ৩০ বছরে অনেক প্রতিষ্ঠানে ঘুরেছি। প্রায় সব কলেজেই দেখেছি বহিরাগত শিক্ষকদের থাকার জন্য একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এখানকার শিক্ষকরাই আমাকে ওই ভবনে (অ্যাকাডেমিক ভবন) থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। যাতে আমি সবকিছু ভালোভাবে দেখাশুনা করতে পারি। সেটি শ্রেণিকক্ষ না, ওই বিল্ডিংয়ের এক কোনায় ছোট্ট একটা কক্ষ। এ ছাড়া দূরের শিক্ষকদের থাকার জন্য আলাদা পার্ট করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর তা না হলে তারা তো কলেজ ছেড়ে চলে যেতে চাইবেন।’
আর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের সব অভিযোগ অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ মাইনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সবকিছু তো নিয়মে চলে না। যিনি কাজ করছেন তাকে আমাদের সম্মানী দিতে হয়। না হলে তারা কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পিকনিকের জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে। তারাই পিকনিক করবে। শিগগিরই পিকনিক হবে। এখানে আমাদের কোনো বিষয় নেই। গত ১০ বছরে এই কলেজের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। কিন্তু যারা উন্নয়ন চায় না তারাই আমার বিরুদ্ধে নানা রকম কথা বলছে।’
ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সাবেক ধর্মগুরু পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট মারা গেছেন। গতকাল শনিবার ভ্যাটিকানের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এ ধর্মগুরু। তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৮ বছর ক্যাথলিক গির্জার নেতৃত্বে থাকা বেনেডিক্ট ১৪১৫ সালে ত্রয়োদশ গ্রেগরির পর প্রথম ব্যক্তি, যিনি মৃত্যুর আগেই পোপের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। এ হিসেবে গত ৬০০ বছরের মধ্যে তিনিই প্রথম পোপ, যিনি আজীবন পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরিবর্তে পদত্যাগ করেছিলেন।
শনিবার এক বিবৃতিতে ভ্যাটিকান জানায়, গভীর দুঃখেরে সঙ্গে জানাচ্ছি, পোপ ইমেরিটাস, ষোড়শ বেনেডিক্ট ভ্যাটিকানের মাতের একসলেসিয়ে মঠে ৯টা ৩৪ মিনিটের দিকে মারা গেছেন। যত শিগগির সম্ভব আরও তথ্য জানানো হবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জীবনের শেষ বছরগুলো তিনি ভ্যাটিকানের মাতের একসলেসিয়ে মঠে কাটিয়েছেন, সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সাবেক এ প্রধান ধর্মীয় নেতা অনেক দিন ধরে অসুস্থ থাকলেও ভ্যাটিকান বলছে, বয়স বাড়ার কারণে তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। তার উত্তরসূরি পোপ ফ্রান্সিস জানিয়েছেন, তিনি নিয়মিতই অসুস্থ পোপকে দেখতে গেছেন।
গত বুধবারই পোপ ফ্রান্সিস ভ্যাটিকানে বছরের শেষ প্রার্থনায় পোপ ইমেরিটাস বেনেডিক্ট গুরুতর অসুস্থ জানিয়ে তার জন্য বিশেষ প্রার্থনা করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
জার্মানিতে জন্ম নেওয়া জোসেফ রাতজিঙ্গার ২০০৫ সালে যখন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট হন, তখনই তার বয়স ৭৮। নির্বাচিত পোপদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম বয়স্ক পোপ। তার আমলে ক্যাথলিক চার্চ একের পর এক অভিযোগ, আইনি ঝামেলা ও যাজকদের হাতে দশকের পর দশক ধরে শিশু নির্যাতনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেখেছিল। ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত মিউনিখের আর্চবিশপ থাকাকালে নিপীড়নের বিভিন্ন ঘটনায় ভুল করেছিলেন বলে চলতি বছরের শুরুর দিকে সাবেক পোপ বেনেডিক্ট স্বীকারও করে নিয়েছিলেন।
শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এ দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অ·ফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভ‚মি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহ‚র্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহ‚র্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।