
অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)। গত ৩৬ বছরে তিনবার বড় ধরনের ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে দলটিকে। রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাত সামাল দিতে হয়েছে। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর গত তিন বছরে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেড়েছে, কিন্তু দল ভাঙেনি। সর্বশেষ ২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন সংকটে পড়েছে দলটি। নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির নেতৃত্ব নিয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে। পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন নেতাকর্মীরাও। দলের ভেতর ও বাইরে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বিশেষ করে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে রওশনপন্থিদের একের পর এক মামলা ও এসব মামলায় আদালতের রায়ে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে জিএম কাদের সাংগঠনিক কর্মকা-ের বাইরে থাকায়, সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দলটি।
এমন অবস্থায় আজ রবিবার ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে দলটি। দলের নেতারা বলেছেন, নানা ঘাত-প্রতিঘাতে এখনো টিকে থাকা দলটি চেষ্টা করছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাটিয়ে ওঠার। তার উদাহরণ হিসেবে দীর্ঘদিন পর আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে বসছেন রওশন ও কাদের। এ নিয়ে দুপক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যেও উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল শনিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির যে সাংগঠনিক কাঠামো, তার মধ্যে কোনো অনৈক্য নেই। পার্টির চেয়ারম্যান, ৬ জন কো-চেয়ারম্যান, মহাসচিব, ৪১ জন নীতিনির্ধারণী প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও ৩০১ জনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ও ৭৭ জেলায় সাংগঠনিক কমিটি আছে। প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ অসুস্থ ছিলেন। সে সময় দলের কিছু নিষ্ক্রিয় লোক, দলে যাদের কোনো পদ নেই, তারা রওশন এরশাদের মাধ্যমে দলে অনৈক্য তৈরির চেষ্টা করেছে। এটা ম্যাডামের (রওশন) বিরোধিতার কারণে পারেনি। ফলে পার্টিতে সে রকম কোনো অনৈক্য নেই।’
জাপার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসেন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পরের বছর রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেন তিনি। তার অনুসারীরা প্রথমে গঠন করে জনদল। পরে গঠিত হয় জাতীয় ফ্রন্ট। বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল থেকে আসা নেতারা এ ফ্রন্টে যোগ দেন। পাঁচ দলের ফ্রন্টটি বিলুপ্ত করে এরশাদের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় পার্টি।
প্রতিষ্ঠার পর প্রতিটি সংসদেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে জাপা। এছাড়া ক্ষমতাচ্যুতির পরও জাপা দেশের রাজনীতি ও সরকার গঠনে সব সময় নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট। সরকার গঠনে প্রয়োজন পড়ে জাপার সমর্থন। এরশাদ শর্তহীন সমর্থন দেন আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর আবারও সরকার গঠন করে। এরপরের সবগুলো জাতীয় নির্বাচনেই সরকার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জাপা।
দলের অর্জন ও ব্যর্থতা : গত ৩৬ বছরে দলের অর্জন ও ব্যর্থতা বিশ্লেষণ করেছেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় পার্টির অর্জন হলো নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে দলটি এখনো ভালোভাবেই টিকে আছে। দলটা ৩২ বছর ক্ষমতার বাইরে। আওয়ামী লীগ মাত্র ৪-৫ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকায় দলটা ভাগ হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে এলেন। তখন দলটা আবার ঐক্যবদ্ধ হলো। বিএনপি ১৪ বছর ক্ষমতায় নেই। পরবর্তী বছরেও যদি ক্ষমতায় না আসে, তা হলে বিএনপিও এক থাকতে পারে কি না সন্দেহ। জাতীয় পার্টি চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এখনো টিকে আছে এরশাদের নামে। অনেকে ভাবছিলেন এরশাদ মারা যাওয়ার পর দলটা থাকবে না। কিন্তু এরশাদ মারা যাওয়ার পরও দলটা আমরা ধরে রেখেছি নানা ঘাত-প্রতিঘাতে। আমাদের অনেক সমস্যা ছিল। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিএনপি-আওয়ামী লীগ দুই দলই যখন ক্ষমতায় যায়, জাতীয় পার্টি যাতে সামনে না এগোতে পারে, সে জন্য নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সেই বাঁধা পেরিয়ে আমাদের জন্য সামনে যাওয়া খুব মুশকিল। তবে আমরা অস্তিত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।
এই দীর্ঘ সময় দলের ব্যর্থতা তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা হলো, গত ৩২ বছরে দলটাকে আরও শক্তিশালী করার দরকার ছিল, সেটা পারিনি। আমরা কয়েকবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন ও জোট করার কারণে মানুষ অনেক সময় আমাদের বলেছে আমরা ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল, আমরা আওয়ামী লীগের ‘বি’ টিম। এই যে বলে এটা আমাদের বড় ব্যর্থতা। এটা আমাদের কাটিয়ে ওঠা উচিত ছিল। আমরা সেটা পারিনি। এখন আমরা সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’
তিনবার ভেঙেছে দল : জাপা নেতারা জানান, গত ৩৬ বছরে জাপা তিনবার ভেঙেছে। ১৯৯৬ সালে প্রথম দফায় জাতীয় পার্টি ভাঙনের কবলে পড়ে মিজানুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে। দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে জাতীয় পার্টি (জেপি) গঠন করেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। বর্তমানে তিনি সংসদ সদস্য। ২০০১ সালে দ্বিতীয় দফায় ভাঙনের শিকার হয় নাজিউর রহমানের নেতৃত্ব। তখন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) গঠন করেন তিনি। এখন বিজেপির প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ। ২০১৪ সালে প্রয়াত কাজী জাফর আহমদের হাত ধরে আরেক দফা ভাঙনের শিকার হয় জাপা। সে সময় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) একাংশ গঠন করেন তিনি।
একই মঞ্চে দেবর-ভাবী : দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাটিয়ে এবার একসঙ্গে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে জাপা। আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকছেন রওশন এরশাদ। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে অনুষ্ঠানে কোনো দায়িত্বে না থাকলেও মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন জিএম কাদের।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে দুপুর ২টায় রাজধানীর মুক্তাঙ্গন (সচিবালয় সংলগ্ন) থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা। শ্যামপুর-কদমতলী থানা জাতীয় পার্টির উদ্যোগে শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ-এর সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি। বিকেল ৩টায় রাজধানীর কাকরাইলের জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতিত্ব করবেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
২০০৯ সাল থেকে প্রাক প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীকে বছরের প্রথম দিনে উৎসবের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। ইতিমধ্যে এই উৎসব সার্বজনীনে রূপ নিয়েছে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম নয়। দেশের প্রায় প্রতিটি স্কুলেই নেওয়া হয়েছে উৎসবের প্রস্তুতি। আজ রবিবার দেওয়া হচ্ছে নতুন বই। বই উৎসবের সঙ্গে দেশে যাত্রা শুরু হচ্ছে নতুন কারিকুলামেরও।
ইতিমধ্যে গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বই উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেছেন। আজ ঘরে ঘরে সেই উৎসব গিয়ে পৌঁছবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাজধানীর বাইরে গাজীপুরের কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে বই উৎসবের আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বই উৎসবের আয়োজন করেছে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এ ছাড়া দেশের জেলা, উপজেলা ও মফস্বল পর্যায়ের সব স্কুলের উৎসবেও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেবেন।
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কিছু বই এখনো বাকি আছে, যা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছে যাবে বলে আমরা আশা করছি। দেশের সব উপজেলায়ই বই পৌঁছানো হয়েছে। সব শিক্ষার্থীর হাতেই নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। সাধারণত প্রথম দিনেই সবাই স্কুলে আসে না। তাই যারা আসবে তাদের সবাই বই পাবে। কাগজ সংকটের মধ্যেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, যত বেশি সম্ভব বই স্কুলে পৌঁছানোর। আর এতে সকলেই আন্তরিক ছিলেন।’
এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩৪ কোটি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক প্রাথমিকে প্রায় ৬৬ লাখ ২৯ হাজার বই, প্রাথমিকে ৯ কোটি ৬৬ লাখ এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে ২ লাখ ১২ হাজার ১৭৭টি বই বিতরণ করা হবে। আর মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ২৪ কোটি ৬৩ লাখ কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। তবে গতকাল পর্যন্ত মাধ্যমিকে প্রায় ৮০ শতাংশ এবং প্রাথমিকে প্রায় ৭১ শতাংশ বই স্কুল পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আজ বই উৎসবের সঙ্গে দেশে যাত্রা শুরু করছে নতুন কারিকুলাম। তবে এ বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বই দেওয়া হবে। ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে। ফলে এ বছর থেকেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে নতুন বই নিয়ে উৎসাহ ও কৌতূহল আগের চেয়েও বেশি।
জানা যায়, নতুন কারিকুলামে সমষ্টিক মূল্যায়নের চেয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের এত বেশি পরীক্ষায় বসতে হবে না। নতুন কারিকুলামের আওতায় ২০২৪ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভাগ বিভাজন উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ নবম শ্রেণিতে ওঠার পর একজন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ বেছে নিতে হবে না। একজন শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ই পড়তে হবে। একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর শিক্ষার্থীরা কোন বিভাগে পড়বে তা বেছে নেবে।
নতুন কারিকুলামে প্রাথমিকে পড়তে হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্পকলা। মাধ্যমিকে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে পড়তে হবে। তবে সব বিষয়েই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে হবে না। আর যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষা হবে সেখানেও কিছুটা অংশ থাকবে শিখনকালীন মূল্যায়ন আর কিছুটা অংশ থাকবে সমষ্টিক মূল্যায়ন।
শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম সম্বন্ধে ধারণা দিতে ইতিমধ্যে এক দিনের অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আর ৬, ৭, ১৩, ১৪ ও ২১ জানুয়ারি সব শিক্ষককে সরাসরি নতুন কারিকুলামের ওপর পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। উপজেলা পর্যায়ে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
গত শতকের আশির দশকে ছাত্ররাজনীতির বাঁক বদলে দেওয়া ছাত্রদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। চার দশক পর ছাত্রসংগঠনটি খেই হারিয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের সামনের সারিতে দেখা গেলেও একসময়ের ‘স্মার্ট’ ছাত্রসংগঠনটি ছাত্রদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে তেমনটি দৃশ্যমান নয়। বিএনপি দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় এর ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলও গতিহারা। কমিটি বাণিজ্যসহ নানা কারণে সংগঠনের সংগ্রামী ঐতিহ্যও ঢাকা পড়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান মনে করেন, ছাত্ররাজনীতি গতি হারিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কারণে। তার মতে, ‘১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে ছাত্ররাজনীতি স্বাভাবিক ছিল। ক্যাম্পাসগুলোতে সহাবস্থান ছিল। কিন্তু ’৯৬ সালের পরই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ভিন্নমতের ছাত্রদের হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ। যার ধারা এখনো চলছে। ফলে মেধাবী ছাত্ররা এখন আর রাজনীতিতে আসতে চাচ্ছে না।’
১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি গঠন করা হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সেই সময়কার ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা মুস্তাফিজুর রহমান মূলত তিনটি ছাত্রসংগঠন যথাক্রমে ন্যাপ (ভাসানী) ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্রদল, ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) ছাত্রসংগঠন জাগ ছাত্রদল থেকে বেশ কিছু নেতাকে নিয়ে ছাত্রদল গঠন করেন।
নিজেদের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ রূপান্তরকে বলেন শিক্ষা, ঐক্য ও প্রগতির স্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হল সংসদে ছাত্রদের ভোটে জেতে ছাত্রদল। পরবর্তী বছর ১৯৮১ সালের ডাকসু নির্বাচনে ইকবাল হল ও জগন্নাথ হল ছাড়া বাকি সব হলে একচেটিয়া বিজয় অর্জন করে ছাত্রদল। এই সর্বজনপ্রিয়তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা শহরের গন্ডি পেরিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। স্বৈরাচারী এরশাদের সময়ে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), রাকসু (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), চাকসুসহ (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) বিভিন্ন কলেজ পর্যায়ে ৩০৮টি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২২১টি সংসদেই জয় পায় ছাত্রদল।
ছাত্রদলের সাবেক নেতারা আরও বলেন, ছাত্রদলের এই উত্থান কোনো অঘটন ছিল না। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ ধারণ করে দীর্ঘ প্রায় চার দশক ধরে পথ চলছে সংগঠনটি। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা প্রবল থাকলেও সেটা ভ্রাতৃঘাতী হয়নি। যার ফলে সুদীর্ঘ সময়েও একবারের জন্যও ভাঙনের মুখে পড়েনি এই সংগঠনটি।
ছাত্রদলের চার দশকের পথচলায় সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থান। ছাত্রদলের ওপর ভিত্তি করে খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে দেশের জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করেন। ২০০৭ সালের ১/১১-খ্যাত অস্বাভাবিক সরকারের সময় প্রথম রুখে দাঁড়ানোসহ ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনসহ বর্তমানে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সামনের কাতারে আছে ছাত্রদল।
বিএনপির ক্ষমতার রাজনীতিতে ছাত্রদল প্রথম সারিতে থাকলেও ছাত্রদের দাবি আদায় কিংবা কোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় দেখা যায়নি সংগঠনটিকে। একসময় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের ছাত্রসংগঠন শিবিরের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ছিল এই ছাত্রসংগঠনটির। কিন্তু এখন দলীয় রাজনীতি করতে গিয়ে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিল করতে হচ্ছে।
আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে দেখা গেলেও কমিটি বাণিজ্যসহ নানা কারণে অতীত ঐহিত্য হারাচ্ছে বিএনপির সহযোগী সংগঠনটি। ৪৪ বছরেও একটি পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্র করতে পারেনি। ১৯৯৭-৯৮ সালের কমিটির সময় করা ‘খসড়া’ গঠনতন্ত্র দিয়ে চলছে সংগঠনটির কার্যক্রম। যদিও ওই ‘খসড়া’ গঠনতন্ত্র ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সংগঠনটির নেতারা দাবি করেছেন। ছাত্রদলকে দেখভালের জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদকের পদও রয়েছে। কিন্তু ৬ বছর ধরে সে পদও ফাঁকা আছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশে ছাত্রদল কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
ছাত্রদল প্রতিষ্ঠার পর ২৪টি কমিটি হয়েছে। এর মধ্যে ছয়বার নির্বাচনের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি, সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কমিটি দেওয়া হয়। পরে ১১ সেপ্টেম্বর ৩০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়। যদিও এর মধ্যে বিবাহিতসহ নানা অভিযোগে ৩২ জন নেতার পদ স্থগিত রাখা হয়েছে।
ছাত্রদলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ছাত্রদলের খসড়া গঠনতন্ত্র রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ গঠনতন্ত্রের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। খসড়া গঠনতন্ত্র দিয়ে আমরা কাজ করছি।’
বর্তমানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ৫০২। এর মধ্যে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে অনেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক ও সহসম্পাদক পদ পেয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দলের নেতৃত্বেও রয়েছেন কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বেপারি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে রাজনীতি নির্ধারণ করত ছাত্ররা। স্বাধীনতার পর ছাত্রলীগ ও অ্যান্টি ছাত্রলীগের যে ধারা তৈরি হলো, তাতে রাজনীতিতে ছাত্রনেতাদের ভূমিকা আস্তে আস্তে স্তিমিত হতে লাগল। এরশাদের সময় ছাত্ররা জোরালো ভূমিকা রাখলেও ১৯৯১ সালের পর থেকে ছাত্রদের সংগ্রামী ভূমিকা চরিত্র হারাতে লাগল, যা ২০১৪ সালে এসে একেবারেই শেষ হয়ে গেল। ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা আজ জঞ্জাল ও আতঙ্কের নাম।’
তার মতে, ‘ছাত্ররাজনীতির হাত ধরে স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। কিন্তু সেই ছাত্ররাজনীতি এখন অনেকটাই গতিহারা। সেই গতিহারা ছাত্ররাজনীতির অংশ হিসেবে সক্রিয় রয়েছে ছাত্রদল।’
ছাত্রসংগঠনগুলোকে বড় দলগুলো তাদের উপাঙ্গ ভাবে এমনটা দাবি করে নুরুল আমিন বেপারি বলেন, ‘এর ফলে বেড়েছে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, সিট দখলের রাজনীতি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা ধরনের ভর্তিবাণিজ্য, নির্মাণ উপকরণ সরবরাহ ইত্যাদি।’
কর্মসূচি : ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে সংগঠনটি। সকালে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছাত্র সমাবেশ হবে। সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন মারা গেছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির এই সাবেক সভাপতি ফুসফুসেরসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এক শোকবার্তায় মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
৮৪ বছর বয়সী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে গত ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২৮ ডিসেম্বর তাকে হাসপাতালের ভেন্টিলেশন সাপোর্টে নেওয়া হয়। ৩০ ডিসেম্বর রাত থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। কিছুদিন আগে ব্যাংকক থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছিলেন তিনি।
১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন খন্দকার মাহবুব। বরগুনার বামনায় তার পৈতৃক বাড়ি। ১৯৬৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ সালের জানুয়ারিতে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮৮ সালের ১৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে আইনি পেশায় ছিলেন খন্দকার মাহবুব। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে গঠিত আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন। খন্দকার মাহবুব চার মেয়াদে (২০১০-১১, ২০১১-১২, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুইবার (২০০৭-৮ ও ২০১২-১৫) দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে বিএনপিতে যোগ দেন খন্দকার মাহবুব। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে (২০২৩-২৪) সভাপতি পদে ফরিদা ইয়াসমিন আবারও নির্বাচিত হয়েছেন। নতুন সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শ্যামল দত্ত। তারা দুজনই একই প্যানেল (ফরিদা ইয়াসমিন-শ্যামল দত্ত) থেকে নির্বাচন করেছিলেন।
গতকাল শনিবার এ নির্বাচনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতি ছাড়াই ভোটগ্রহণ চলে। রাতে ঘোষিত ফলে সভাপতি পদে প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি ও ইত্তেফাকের সাংবাদিক ফরিদা ইয়াসমিন পেয়েছেন ৫৬৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল উদ্দিন সবুজ পেয়েছেন ৪০১ ভোট। আর সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত পেয়েছেন ৪৯৬ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেস ক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান পেয়েছেন ৪৭৪ ভোট। সবুজ ও ইলিয়াস একই প্যানেল (সবুজ-ইলিয়াস পরিষদ) থেকে নির্বাচন করেছিলেন।
অন্যান্য পদের মধ্যে সিনিয়র সহসভাপতি পদে সবুজ-ইলিয়াস পরিষদের হাসান হাফিজ পুনর্র্নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়া সহসভাপতি পদে ফরিদা-শ্যামল পরিষদের রেজোয়ানুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আইয়ুব ভূঁইয়া ও মো. আশরাফ আলী এবং কোষাধ্যক্ষ পদে শাহেদ চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন।
এ ছাড়া ব্যবস্থাপনা কমিটির ১০টি সদস্য পদের মধ্যে সবুজ-ইলিয়াস পরিষদের ৬ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন কাজী রওনক হোসেন, সৈয়দ আবদাল আহমদ, বখতিয়ার রাণা, শাহনাজ বেগম, সীমান্ত খোকন ও মোহাম্মদ মোমিন হোসেন। সদস্য পদে ফরিদা-শ্যামল পরিষদের তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন ফরিদ হোসেন, কল্যাণ সাহা ও শাহনাজ সিদ্দিকী। এ ছাড়া সদস্য পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী জুলহাস আলম নির্বাচিত হয়েছেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব নির্বাচন পরিচালনায় ৮ সদস্যের মধ্যে কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. মোস্তফা-ই-জামিল। এ ছাড়া নির্বাচন কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জাফর ইকবাল, এস এ এম শওকত হোসেন, মিনার মনসুর, গৌতম অরিন্দম বড়ুয়া (শেলু বড়ুয়া), শামীমা চৌধুরী, মো. মনিরুজ্জামান এবং নবনীতা চৌধুরী।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবনে ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ দখল করে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাইনুর রহমান গড়ে তুলেছেন নিজের বাসস্থান। কলেজের তিনতলা অনার্স ভবনের তৃতীয় তলার একটি শ্রেণিকক্ষকে দুই কক্ষে ভাগ করে একটি অংশে তিনি আর অন্য অংশে কয়েকজন শিক্ষক থাকছেন। এসব শিক্ষক নিয়মিত সরকারি বাড়ি ভাড়া গ্রহণ করলেও তারা দিব্যি শ্রেণিকক্ষের ভেতরেই থাকা-খাওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ শ্রেণিকক্ষের অভাবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে অধ্যক্ষ মাইনুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগও উঠছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানপ্রধান হওয়ায় চাকরির ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তার এসব অনিয়ম জেনেও প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানান না শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেউই।
কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, পুরো জেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৫ সালে জেলা শহরের ইসলামবাগ এলাকায় গড়ে ওঠে। ১৯৯৭ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চমাধ্যমিকের মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ ছাড়াও ৯টি বিষয়ে স্নাতকে পড়াশুনা করছেন প্রায় চার হাজার ছাত্রী। কলেজের পুকুরপাড় সংলগ্ন তিনতলা অনার্স ভবনটিতে বাংলা, ইংরেজি, ব্যবস্থাপনা, অর্থনীতি, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষ ছিল মাত্র ৮টি। শ্রেণিকক্ষের সংকটে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। প্রায়ই মাঠে ক্লাস নিতে হয় শিক্ষকদের। কখনো আবার শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফাঁকা শ্রেণিকক্ষের খোঁজ করে বেড়াতে হয়। ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক মো. মাইনুর রহমান। যোগদানের মাসখানেক পরই অনার্স ভবনের তিনতলায় ছাত্রীদের একটি শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগার দখল করে কলেজের খরচে নিজের মতো করে বাসস্থান তৈরি করে নেন। সেখানে দুটি কক্ষ করা হয়। একটিতে তিনি থাকেন, আরেকটিতে থাকেন নতুন যোগদান করা কয়েকজন শিক্ষক। এতে ছাত্রীদের আরেকটি শ্রেণিকক্ষ কমে যায়। এছাড়া শৌচাগার ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থীদের নিচতলায় নামতে হয়। অথচ শিক্ষকরা প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়ার সরকারি টাকা উত্তোলন করলেও দখল করে রেখেছেন ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ ও শৌচাগার। একাডেমিক ভবনে শ্রেণিকক্ষ দখল করে বাসস্থান করায় ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, আগে কলেজের সব ব্যাংক হিসাব অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ দুজনের স্বাক্ষরে পরিচালিত হলেও মাইনুর রহমান যোগদানের পর শুধুমাত্র তার স্বাক্ষরেই পরিচালিত করতে শুরু করেন ব্যাংক হিসাবগুলো। কলেজের বিভিন্ন সংস্কারের নামে বিভিন্ন কাজের কমিটি করে সেখানে অনৈতিকভাবে কাজের বরাদ্দের টাকা থেকে কমিটির সদস্যদের সম্মানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। নিজেও নেন বড় অঙ্কের সম্মানী। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার শর্তে পিকনিকের নাম করে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে নিয়ে সেই টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন অধ্যক্ষ ও তার ঘনিষ্ঠ শিক্ষকরা। দিনের পর দিন এমন অনিয়ম চললেও প্রতিষ্ঠানপ্রধান হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের এক শিক্ষক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অধ্যক্ষ মাইনুর রহমান নিজের মতো করে যা ইচ্ছে তাই করছেন। শ্রেণিকক্ষের সংকট থাকা সত্ত্বেও তিনি অবৈধভাবে শ্রেণিকক্ষ দখল করে বসবাস করছেন। অন্য শিক্ষকদেরও রাখছেন। আমরা বিষয়টিতে বারবার আপত্তি জানালেও তিনি কোনো কথা শোনেননি। এছাড়া দুই টাকার কাজে পাঁচ টাকার সম্মানীর নিয়ম করেছেন তিনি। এভাবে কাজ যাই হোক না কেন পকেট ভরছে তাদের।’
এ প্রসঙ্গে কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সদ্য অবসরে যাওয়া বিভাগীয় প্রধান হাসনুর রশিদ বাবু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কলেজের শ্রেণিকক্ষ সংকট এতটাই যে আমরা ছাত্রীদের নিয়ে ঘুরে ঘুরে কোথায় খালি কক্ষ আছে তা খুঁজে সেখানে ক্লাস নিতাম। অনার্স ভবনে ৯টি বিভাগের ছাত্রীদের জন্য মাত্র ৮টি শ্রেণিকক্ষ ছিল। তার মধ্যে একটিতে বছরখানেক ধরে অধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষক থাকছেন। ছাত্রীদের ওয়াশরুমটিও (শৌচাগার) তারাই ব্যবহার করছেন। শ্রেণিকক্ষকে আবাসিক না করার জন্য আমি অধ্যক্ষ মহোদয়কে বারবার নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি শোনেননি। বিষয়টি একদিকে যেমন অনৈতিক, তেমনি ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ সংকটের মধ্যে আরেকটি কক্ষ তারা দখল করে রেখেছেন।’
ছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষ দখলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাইনুর রহমান বলেন, ‘আমার চাকরিজীবনের ৩০ বছরে অনেক প্রতিষ্ঠানে ঘুরেছি। প্রায় সব কলেজেই দেখেছি বহিরাগত শিক্ষকদের থাকার জন্য একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এখানকার শিক্ষকরাই আমাকে ওই ভবনে (অ্যাকাডেমিক ভবন) থাকতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। যাতে আমি সবকিছু ভালোভাবে দেখাশুনা করতে পারি। সেটি শ্রেণিকক্ষ না, ওই বিল্ডিংয়ের এক কোনায় ছোট্ট একটা কক্ষ। এ ছাড়া দূরের শিক্ষকদের থাকার জন্য আলাদা পার্ট করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর তা না হলে তারা তো কলেজ ছেড়ে চলে যেতে চাইবেন।’
আর নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের সব অভিযোগ অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ মাইনুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সবকিছু তো নিয়মে চলে না। যিনি কাজ করছেন তাকে আমাদের সম্মানী দিতে হয়। না হলে তারা কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পিকনিকের জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে। তারাই পিকনিক করবে। শিগগিরই পিকনিক হবে। এখানে আমাদের কোনো বিষয় নেই। গত ১০ বছরে এই কলেজের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। কিন্তু যারা উন্নয়ন চায় না তারাই আমার বিরুদ্ধে নানা রকম কথা বলছে।’
টেস্ট ক্রিকেটে সিলেটের পথচলা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। অভিজাত সংস্করণে যা ছিল দেশের অষ্টম ভেন্যু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে পা রাখে দেশের সবচেয়ে সুন্দর এই স্টেডিয়ামটি। তবে মাঠের অভিষেক ম্যাচেই হেরে যায় বাংলাদেশ। তারপর আর কোনো পাঁচ দিনের খেলা গড়ায়নি এই মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই।
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরাচ্ছে। পাঁচ বছর পর আবারও টেস্ট ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
ক্রিকবাজের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ‘আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজের প্রথম টেস্ট আয়োজন করতে পারব বলে আশা করছি। এটি আমাদের জন্য খুব একটি উপলক্ষ হবে। কারণ পাঁচ বছর পর সিলেটের মাঠে টেস্ট ক্রিকেট ফিরবে।’
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল সিলেট সফর করেছে। তারা সেখানকার মাঠসহ সব সুযোগ সুবিধা পরিদর্শন করেছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সবকিছু দেখে তারা এখানে আরও বেশি ম্যাচ আয়োজনের জন্য উন্মুখ বলে জানিয়েছেন বিসিবির নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান নাদেল।
তিনি যোগ করেছেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের প্রতিনিধি দল আমাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশ মুগ্ধ। তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে আমরা তাদের সব প্রত্যাশা ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারব।’
এফটিপি সূচি অনুযায়ী চলতি বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজে খেলার কথা নিউজিল্যান্ডের। তবে সিরিজটি হবে দুই ভাগে। প্রথম ভাগে সেপ্টেম্বরের শেষভাগে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলবে কিউইরা। এই সিরিজ খেলেই বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে দুই দল।
বিশ্বকাপের পর হবে দুই দলের টেস্ট সিরিজ। নভেম্বরের শেষ দিকে আবারও বাংলাদেশে আসবে কিউইরা। বিসিবি প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী ২১ নভেম্বর ঢাকায় পা রাখার কথা সফরকারীদের। এরপর একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলবে দলটি। ২৮ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর হবে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট।
প্রথম দুই সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। প্রথমটি নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫ মিনিটে। দ্বিতীয়টিও টাইব্রেকারে। সেটির নিষ্পত্তি ঘণ্টার ওপরে। দুটোতেই জয় নোভাক জকোভিচের। তারপরেরটিও জিতে যান এই সার্বিয়ান। ১৪তম ফ্রেঞ্চ ওপেনের খেলায় স্পেনের আলেজান্দ্রো ফোকিনার সঙ্গে ৩-০ সেটে জয়লাভ করেন তিনি। যে জয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছেন তিনি।
৩৬ বছর বয়সী এই নাম্বার ওয়ান টেনিস তারকা প্রথম সেটে কিছুটা ছন্দহীন ছিলেন। তবে চ্যাম্পিয়নদের ঘুরে দাঁড়াতে তো সময় বেশি লাগে না। জকোভিচও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তারপর ফোকিনাকে কোনো সেট জিততে না দিয়েই ম্যাচ শেষ করেন তিনি।
প্রায় ৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা এই ম্যাচটিতে এক পেশে জয় হলেও প্রতিটি সেটেই উত্তেজনার পারদ ছড়িয়েছেন দুজন। সমর্থকেরাও বারবার হয়েছেন রোমাঞ্চিত। তবে শেষ পর্যন্ত নোভাক জকোভিচের সমর্থকেরাই হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আগামী সোমবার জকোভিচ শেষ ষোলোর ম্যাচ খেলতে নামবেন। সেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে কার্লোস আলকারাজকে পেতে পারেন তিনি।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।