
তীব্র দাবদাহে কোথায়ও শুকিয়ে যাচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিল; আবার কোনো কোনো এলাকা ভাসছে সর্বনাশা বানের জলে। এক দেশে দাবানলে ছাই হচ্ছে বনবাদাড় আর আবাসন; অন্য দেশ আবার তীব্র শীতে ঢাকা পড়ছে তুষারের তলে। গত কয়েক দশক ধরে আবহাওয়ার এ চরম অবস্থা পৃথিবীর মানুষের কাছে এক পরিচিত দৃশ্যপট হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিন দিন পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়ার বছরটিতেও আবহাওয়ার চরম অবস্থা দেখেছে বিশ্ব। তবে চলতি বছরের শুরুতেই পৃথিবীর জন্য এক সুখবর দিলেন গবেষকরা। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গবেষকদের এক মূল্যায়ন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় কারণ বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরের ক্ষয়ে লাগাম পরানো গেছে। গেল তিন দশকে ক্ষয়ে যাওয়া ওজোন স্তর পূরণ হতে শুরু করেছে।
ওজোন স্তর হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুম-লের একটি স্তর যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। এই স্তর থাকে প্রধানত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে কমবেশি ২০-৩০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। বায়ুমণ্ডলের এ স্তর সূর্য থেকে নির্গত ক্ষতিকর রশ্মিকে পৃথিবীতে আসতে বাধা দেয়। এ স্তর না থাকলে সূর্যের পৃষ্ঠা ১১ কলাম ১ >
অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের এই পৃথিবীতে এসে মানুষ, প্রাণী এবং উদ্ভিদের ক্ষতি করত। এই স্তরের পুরুত্ব স্থানভেদে এবং মৌসুমভেদে কমবেশি হয়। আবার মানবসৃষ্ট অনেক কারণেও এ স্তরের ক্ষয় হয়। গবেষকদের মতে, নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই ওজোন স্তর, সেখানে বড় বড় গর্ত তৈরি হচ্ছে যা গলে পৃথিবীতে ঢুকে পড়ছে ক্ষতিকর রশ্মি। বাড়াচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। আমরা দেখছি আবহাওয়ার চরম অবস্থা।
গেল শতকের সত্তরের দশকে বিষয়টি প্রথম নজরে আসে গবেষকদের। আশির দশকের শুরুতে ধরা পড়ে ওজোন স্তরের ছিদ্র বা ক্ষয়। এরপর শুরু হয় বায়ুমণ্ডলে কার্বন নিঃসরণ কমানোর নানা উদ্যোগ। এ লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালে কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে করা হয় এক চুক্তি। এরপর থেকে ওজোন স্তরের ক্ষয়কারী রাসায়নিক পদার্থের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় দেশে দেশে। চুক্তিতে থাকা ১৯৭টি দেশই কমবেশি মেনে চলছে সব শর্ত। তবে ২০০০ সাল অবধি কোনো ইতিবাচক বদল চোখে পড়েনি গবেষকদের। বিষয়টি নিয়ে তাদের বক্তব্য ও আলোচনা বারবার সমালোচনার মুখেই পড়েছে।
তবে এখন গবেষকরা বলছেন, চুক্তির শর্তগুলো প্রতিপালন হয়েছে বলেই ক্ষয়ে যাওয়া ওজোন স্তর ফের পূরণ হতে শুরু করেছে। দক্ষিণ মেরুতে অ্যান্টার্কটিকার ওপর ওজোন স্তরের এই গর্তের পরিধি যে কমে আসছে এই দাবির পক্ষে তারা পরিষ্কার তথ্য-প্রমাণও পেয়েছেন। তারা বলেছেন, ২০০০ সালে ওই গর্তটির আকার ছিল প্রায় ভারতের আয়তনের সমান। কিন্তু ১৫ বছর পর, অর্থাৎ ২০১৫ সালে দেখা গেছে ওই গর্তটি প্রায় ৪০ লাখ বর্গকিলোমিটার ছোট হয়ে গেছে।
গবেষকদের মতে, এর পেছনে সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে ক্লোরোফ্লোরোকার্বনের ব্যবহার কমে আসা। বিশেষ করে চীন ও ভারতের মতো দেশে এসব গ্যাসের ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে বলেই তার সুফল মিলছে। গেল তিন দশকে এ শর্তগুলো যতটুকু মানা হয়েছে আগামী তিন দশক একই ভাবে চলছে ওজোন স্তরের ক্ষত কমবে, কমবে পৃথিবীর ক্ষতি।
রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের স্থায়ী ভেন্যুতে দ্বিতীয়বারের মতো বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৭তম আসর। ১ জানুয়ারি উদ্বোধনের পর দিন যতই যাচ্ছে, ততই জমে উঠছে এবারের মেলার আসর। মেলার মূল মাঠের দোকানগুলোর পাশাপাশি জমজমাট বাইরের পরিবেশও। মেলা চত্বরের বাইরেও অবৈধভাবে বসানো হয়েছে রেস্তোরাঁ, চা, খাবার এবং খেলনার দোকানসহ অর্ধশতাধিক হরেক রকমের দোকানপাট। তবে এসব অবৈধ দোকানপাটে মেলার সৌন্দর্য অনেকটাই ম্লান হচ্ছে বলে দাবি মেলার মূল মাঠের দোকানি ও মেলায় আসা দর্শনার্থীদের।
স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেটের ব্যবস্থাপনায় বসানো হয়েছে এসব অবৈধ দোকানপাট। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে এসব দোকান বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ মেলার ব্যবসায়ীদের। তাদের ভাষ্য, প্রভাবশালী সিন্ডিকেটটি অবৈধ এসব দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। মেলার বাইরের প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০-২৫ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের হয়ে এসব দোকান থেকে টাকা ওঠানোর দায়িত্বে রয়েছে চার সদস্যের একটি দল। সিন্ডিকেটটির চাহিদামতো চাঁদা না দিলে তারা মেলার বাইরে কোনো দোকান বসতে দিচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রভাবশালী এই সিন্ডিকেটের দাবি, তারাই মেলার সবকিছু। তাদের অনুমতি ছাড়া মেলার বাইরে কেউ দোকানপাট নিয়ে বসতে পারে না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সবকিছু করছে বলে জানায় সিন্ডিকেটের সদস্যরা।’
বাইরের অবৈধ দোকানপাটে মেলার সৌন্দর্য ম্লান হচ্ছে ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে মেলার বাইরে দোকান নেওয়ার কথা জানিয়ে পরিচয় গোপন রেখে এই প্রতিবেদকের কথা হয় বি-বারিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক নবাব মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দিনপ্রতি ২২ হাজার টাকার চুক্তিতে সিন্ডিকেটকে ১০ দিনের জন্য এককালীন দুই লাখ টাকা দিয়েছি। এভাবে মেলার এক মাসে কয়েক লাখ টাকা দিতে হবে তাদের। আপনাকেও দোকান নিতে হলে সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে টাকা দিতে হবে। তাহলে তারা আপনাদের দোকান ম্যানেজ করে দেবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘মেলার বাইরের অংশে দোকান বসাতে ১০ দিনের জন্য এককালীন নগদ দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা সিন্ডিকেটের কাছে দিতে হয়। তবে টাকা নেওয়ার সময় আমাদের স্থানীয় বা প্রশাসনিক কোনো প্রকার ঝামেলায় পড়তে হবে না বলে কথা থাকলেও অনেক সময় ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। তা ছাড়া যে টাকা তারা নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা মেলার বাইরের দোকান হিসেবে অনেক। বেচাকেনার যে অবস্থা মনে হয় না জামানতের টাকা ওঠানো যাবে।’
কথা হয় আরেক দোকানি রুবেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে আসছি একজন নেতার মাধ্যমে। পরে সিন্ডিকেটকে টাকা দিয়ে দোকান বসিয়েছি। আসলে খুব ঝুঁকির মধ্যেই দোকান করতে হচ্ছে, কী আর করার?’
মেলায় আসা দর্শনার্থীদের অভিযোগ, সুন্দর ও সুসজ্জিতভাবে সাজানো হয়েছে মেলার মূল মাঠ। তবে বাইরে বস্তির মতো করে কাঠ-বাঁশ দিয়ে দোকানপাট করায় মেলার সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট হচ্ছে।
আর মেলার মূল মাঠের কয়েকজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, তারা লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেলার ভেতরে দোকান নিয়েছেন। কিন্তু মেলার বাইরের ভাসমান খাবারের দোকানগুলোর কারণে তাদের বিক্রি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। দর্শনার্থীরা অনেকেই মেলার বাইরের ভাসমান দোকান থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। বাইরের এসব দোকানপাট উচ্ছেদের দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেলার ভেতরের অংশ দেখার দায়িত্ব আমাদের। বাইরের অংশ দেখার জন্য প্রশাসন রয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নেবে বাইরের বিষয় নিয়ে। তবে মেলার সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় যেকোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে পোথাট্রি গ্রাম। ওই গ্রামের বাজারে ছোট একটি ওষুধের দোকান রয়েছে মো. আবদুল মজিদের। এখন থেকে যা আয় হয় তাতে ভালোই চলছিল তার পরিবার। কয়েক বছর আগে একই গ্রামের রুহুল আমিনের সঙ্গে কথা হয় বিটকয়েন নিয়ে। রুহুল তাকে জানায়, বিটকয়েনের মাধ্যমে দ্রুত অধিক লাভের কথা। বিটকয়েন কিংবা প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও অন্যদের বিনিয়োগে দেখে প্রলুব্ধ হন মজিদ। প্রথমে একটি আইডির মাধ্যমে ৯০ হাজার টাকার সমপরিমাণ ডলার বিনিয়োগ করেন। এর মাসখানেক পর ১৫ হাজার টাকা লাভ পান তিনি, এভাবে বেশ কয়েক মাস চলে যায়। ফলে বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। বিনিয়োগ বাড়ানোর ভাবনা এঁটে বসে তার মাথায়। দুই সন্তানের নামেও আইডি খুলে টাকা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। একসময় ফাঁদের বিষয়টিও বুঝতে পারেন। তবে ততক্ষণে নিজের জমানো সব টাকা চলে যায় প্রতারক চক্রের হাতে। তার মতো বহু মানুষ এভাবে বিটকয়েন চক্রটির ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন।ব্যবসায়ী আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনলাইনে বিটকয়েনে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রচুর আয় হয় বলে প্রচার করা হয়েছে। আমাদের গ্রামের বহু মানুষ টাকা দিয়ে ব্যাপক লাভ পেয়েছে। এ খবরে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষ টাকা দিতে ‘বিটকয়েন অফিসে’ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এত বেশি লাভের বিষয়টি পুরো এলাকায় আলোড়ন তৈরি করে। একসঙ্গে এত মানুষের বিনিয়োগ এবং অভিযুক্ত রুহুল আমিনের কথায় প্রায় ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। জমানো সব টাকা হারিয়ে এখন আমি প্রায় নিঃস্ব।
মজিদ এ প্রতারণার ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২১ সালে একটি মামলা করেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘এনজেড রোবো ট্রেড’ নামে সফটওয়্যার তৈরি করে এটিকে অনলাইন কোম্পানি হিসেবে পরিচিত করা হয়। সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে লাভের প্রলোভন দেখানো হয়। মূলত নিউজিল্যান্ডে ডলার বিক্রির কার্যক্রম দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করায় তারা। পোথাট্রি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় শাখা অফিস খুলে বিটকয়েন অফিস নামে পরিচিত করে।
এতে আবদুল মজিদসহ ওই এলাকার আরও ১১ জনের ৫ হাজার ৩০০ ডলার বিনিয়োগের কথা বলা হয়। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ টাকা। অন্য ভুক্তভোগীদের মধ্যে ফাতেমার ২৮ হাজার ২০০, ফাহমিদার ১ হাজার ৯০, মরজিনার ৪৬ হাজার ২০০, বীথি খাতুনের ২৮ হাজার ২০০, রাজিয়ার ৯০ হাজার, পলির ৯০ হাজার, হারুনুর রশীদের ৯০ হাজার, নাসিমার ৪৬ হাজার ২০০, আলতাবের ২৮ হাজার ২০০, বাশারের ২৮ হাজার ২০০ টাকার সমপরিমাণ ডলার।
এ মামলায় দুপচাঁচিয়া উপজেলার আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। তারা হলেন কোলগ্রাম এলাকার মো. রুহুল আমিন, মো. ইসমাইল হোসেন, মো. গোলাম মোস্তফা সরকার, মো. আবু সাইদ, পোথাট্রি গ্রামের মো. মাসুদ রানা, মো. মাইনুল ইসলাম, মো. বেলাল হোসেন ও মো. কামরুল ইসলাম।
এ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মামলা করেন ভুক্তভোগীরা। এসব মামলায় ৫৬ জন ভুক্তভোগীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মো. ছামসুল ইসলামের মামলার ১৩ জন দিয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা, মহসিন আলীর মামলায় ১১ জন দিয়েছে ৮ লাখ ২৭ হাজার, মো. জাকির আলী ফকিরের মামলায় ১১ জন দিয়েছে ৪ লাখ ৮৭ হাজার, শাকিল শাহানার মামলায় ১০ জন দিয়েছে ৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার সমপরিমাণ ডলার।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদর দপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, পোথাট্রি গ্রামে বিটকয়েনের নামে এ প্রতারণার ঘটনার পর ভুক্তভোগীর মামলা করলে আদালত এসব মামলার তদন্তের দায়িত্ব আমাদের দেন। মামলার তদন্ত শেষে আমরা ৩৯ হাজার ৭০০ ডলার খোয়া যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩১ লাখ ৯০ হাজার ৪০ টাকা। গত বছর আদালতে অভিযুক্ত আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র করা হয়েছে।
পিবিআই জানায়, ২০২১ সালের আগস্টে স্থানীয় মো. ফরিদ উদ্দিন প্রামাণিকের অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব ওই অফিসে অভিযান চালায়। তখন এ মামলাগুলোতে অভিযুক্ত মো. রুহুল আমিন, ইসমাইল হোসেন, বেলাল হোসেন এবং কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। তখন তাদের কাছ থেকে ৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। পরে অভিযুক্তরা জামিনে ফিরে এলে অন্য ভুক্তভোগীরা টাকা ফেরত চাইলে তাদের নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। এরপর তারাও পৃথকভাবে মামলা করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, অভিযুক্ত মো. রুহুল আমিন সিঙ্গাপুরে ছিলেন। সেখান থেকে প্রযুক্তি সম্পর্কে কিছু ধারণা নিয়ে বাংলাদেশে ফেরেন। পরে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভিযুক্ত আবু সাইদের ভবনের বাসা ভাড়া নেন। পরে এনজেড রোবো নামে এমএলএমের মতো সফটওয়্যার তৈরি করে ভুয়া এ প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন। এতে বিভিন্ন স্কেলে টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভের প্রচার চালায়। পরে অল্প কিছুদিন লাভের টাকা দেওয়ায় বিষয়টি পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বহু মানুষ অবৈধ ওই প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়। এ সুযোগে ওই উপজেলার বহু মানুষ না বুঝেই টাকা দেয়। পরে একসময় লাভের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে ভুক্তভোগীরা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন।
প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতে ও পরিবেশ রক্ষার বার্তা নিয়ে ১৫ হাজার কিলোমিটার পথ হেঁটে ভারতের নাগপুরের ২১ বছর বয়সী রোহান আগরওয়াল দিনাজপুরের হিলিতে এসেছেন। স্থলবন্দরসহ হিলির বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টিকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান তিনি। গত সোমবার রাতে তিনি জয়পুরহাট ও পাঁচবিবিতে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা শেষে হিলি পৌঁছান তিনি। হিলিতে তাকে অভ্যর্থনাসহ ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। তিনি হিলির বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষদের মধ্যে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। এরপর রাতেই দিনাজপুরের উদ্দেশে হিলি এলাকা ত্যাগ করেন। এখন তিনি দিনাজপুরে অবস্থান করছেন।
রোহান জানান, গত বছরের ৮ অক্টোবর ফেনীর বিলোনিয়া চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি। ইতিমধ্যেই তিনি বাংলাদেশের ৩৩টি জেলা ঘুরে প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালিয়েছেন। বাংলাদেশে প্রবেশের আগে তিনি হেঁটে ভারতের ২৭টি রাজ্য ঘুরেছেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরে গিয়ে আরও ১৫টি দেশে প্লাস্টিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে যেতে চান।
ভারতের গভর্নমেন্ট সিকিম প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী ছাত্র জানান, ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসিতে গঙ্গা নদীর তীর থেকে হাঁটা শুরু করেন তিনি। সেখান থেকে শুরু করে ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি, চ-িগড়, হিমাচল, উত্তরাখ-, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়–, প-িচেরি, কর্ণাটক, কেরালা ও গোয়া হয়ে ভারতের মোট ২৭টি রাজ্য পরিভ্রমণ করেন তিনি। এই যাত্রায় সর্বমোট ১৫ হাজার কিলোমিটার হেঁটেছেন।
রোহান বলেন, আমার মূল উদ্দেশ্য হলো প্লাস্টিকের বিপজ্জনক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা এবং বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দেওয়া। এ লক্ষ্যে ৮৬০ দিনের যাত্রায় আমি ভারত ও বাংলাদেশের অনেক স্কুল এবং ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছি। আমি সাইবেরিয়ার ওমিয়াকোমে হেঁটে যাব। যেখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৭২ ডিগ্রি এবং এটি পৃথিবীর সবচেয়ে শীতল স্থান। আমার আশা, আমিই দক্ষিণ এশীয় হিসেবে প্রথম স্থলপথে সেখানে পৌঁছাব। আরও ৫ বছরে ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, চীন, হংকং, ম্যাকাও, মঙ্গোলিয়া, রাশিয়াসহ দক্ষিণ এশিয়ার ২০টি দেশ অতিক্রম করার ইচ্ছা আছে আমার।
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ভারী কুয়াশা পড়েছিল গতকাল। কিন্তু সূর্যোদয়ের পর কুয়াশা আর টিকতে পারেনি। কুয়াশা ভেদ করে সকাল সকাল পুরো তেজ নিয়েই হাজির হয় সূর্য। মেঘ ও বাতাসমুক্ত আকাশে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে তাপমাত্রা। তবে এর মধ্যে সকাল ৯টায় সেখানে রেকর্ড করা হয় চলতি মৌসুমের দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। তবে পরপর দুদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কড়া রোদ থাকায় তেমন একটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি পঞ্চগড়ের মানুষের।
তবে উত্তরের আরেক জেলা দিনাজপুরের হিলিতে তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষজন। যারা জীবিকার তাগিদে বাইরে যাচ্ছেন তারাও শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। এর আগের দিন সোমবার এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, গত দুদিন ধরে তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। মঙ্গলবার মৌসুমের দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবারও এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আমাদের ভাষায় যেটাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তবে গত দুদিন ধরে দিনভর কড়া রোদ থাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে শীতার্তদের দুর্ভোগ অনেকটা কম হচ্ছে।
এদিকে, জেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে অসহায় দরিদ্র নারী-পুরুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম সদর উপজেলার তিনশত মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে প্রত্যেককে একটি করে কম্বল বিতরণ করেন। সরকারিভাবে জেলায় ৪২ হাজার পাঁচশত কম্বল বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
তবে দিনাজপুরের হাকিমপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরেই হিলিতে ঘন কুয়াশা পড়ছে। দিনের বেলাতেও সড়কে হেডলাইট জ¦ালিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে হিমেল বাতাস বওয়ায় শীতের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। দিনের অধিকাংশ সময় সূর্যের তেমন দেখা মিলছে না কখনো মিললেও সেই রোদের তীব্রতা তেমন নেই। এতে করে বাড়তি শীত অনুভূত হচ্ছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দিনাজপুর অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
যুক্তরাষ্ট্রের কেমব্রিজে শহরে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সাঈদ ফয়সালের মৃত্যুর পর দেশটির পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধে অশ্বেতাঙ্গ নির্যাতনের অভিযোগ আবারও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের অধিবাসীরা বিক্ষোভ করেছেন শহরের সিটি হলে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের শাস্তির পাশাপাশি অশ্বেতাঙ্গদের নিরাপত্তা জোরদারের দাবি তাদের। নগর কর্র্তৃপক্ষ ও পুলিশের পক্ষ থেকেও সুষ্ঠু তদন্তের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
কেমব্রিজ সিটি হলের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশে শুধু বাঙালি নন, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় অধিবাসীরা নেমেছেন আন্দোলনে। অনেকের হাতেই ছিল ‘জাস্টিস ফর ফয়সাল’ লেখা প্ল্যাকার্ড। তাদের অভিযোগ, শ্বেতাঙ্গ না হওয়ার কারণেই, ফয়সালের মতো তরুণরা নিরাপত্তা বাহিনীর রোষানলে পড়েন। এ প্রসঙ্গে সিএআইআর (কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন)
মুখপাত্র ফাতুমা মোহামেদ বলেন, ‘ফয়সাল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘাতে জড়ায়নি। এমনকি, সে কমিউনিটির কারও জন্যও হুমকি ছিল না। তাকে বুঝিয়ে নিরস্ত্র করার মাধ্যমে আটক করা যেত। আমাদের প্রশ্ন কেন গুলি করা হলো ফয়সালকে?’
সিডনি স্ট্রিটের এক বাসিন্দা গত ৪ জানুয়ারি জরুরি নম্বরে কল দিলে তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেখানে পৌঁছায় পুলিশ। তাদের দাবি, ধারালো অস্ত্র হাতে সেখানে ঘুরছিলেন ফয়সাল। যদিও কাউকে হামলা বা হুমকির বিষয়টি পুলিশের কাছেও স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধে আগেও অশ্বেতাঙ্গদের অপরাধী আখ্যা দিয়ে প্রাণঘাতী দমন নীতি প্রয়োগের অভিযোগ আছে। যার জেরে ছড়ায় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর মতো গণআন্দোলন। ফয়সালের বিষয়টি নিয়ে তাই তড়িঘড়ি জরুরি বৈঠক ডাকা হয় কেমব্রিজ সিটি হলে। এ বিষয়ে কেমব্রিজের মেয়র সুম্বুল সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের কষ্ট-বিভ্রান্তি-স্বজন হারানোর বেদনা অনুভব করতে পারছে। পুলিশ বিভাগ খুবই আস্থাহীনতার পরিচয় দিয়েছে। জন্ম দিয়েছে নানা বিতর্ক ও প্রশ্নের। কিন্তু ফয়সালের মৃত্যু বিষয়ে কোনো শক্ত বুনিয়াদ নেই। তাই মেয়র হিসেবে আমারও দায়িত্ব রয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।’
এদিকে, কেমব্রিজের পুলিশ বিভাগও অঙ্গীকার করেছে সুষ্ঠু তদন্তের। শহরের পুলিশ কমিশনার ক্রিস্টিন এলো বলেন, ‘জনমনে আস্থা ফেরানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে কেমব্রিজ পুলিশ বিভাগ। ভালোভাবেই বুঝতে পারছি, মর্মান্তিক এ ঘটনার কারণে আমাদের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে শহরবাসী। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।