
কাঠ পোড়ানো চুলার চেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ করা এবং কম ঝুট-ঝামেলার জন্য বিশ্বব্যাপী বেশ জনপ্রিয় গ্যাসের চুলা। তবে এখন এই চুলা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। গবেষণা বলছে, গ্যাসের চুলায় রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্যাসের চুলা থেকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন নির্গত হয়। ৪ কোটি গ্যাসের চুলা থেকে নির্গত এই গ্যাস পরিবেশের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব রাখে তা পাঁচ লাখ গ্যাসচালিত গাড়ির দূষণের সমান। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, চুলা না ধরালেও এই গ্যাস নিঃসরণ হতেই থাকে। গবেষণাটির প্রধান গবেষক এরিক লেবেল বলছেন, ‘গ্যাসের চুলা থেকে যে পরিমাণ মিথেন নির্গত হয়, এর ৭৫ শতাংশ চুলা বন্ধ থাকার সময়েই নির্গত হয়। খুব কম মনে হলেও দিনশেষে এই পরিমাণ বিশাল।’ সব মিলিয়ে বাড়িতে রান্নাবান্নার কাজে গ্যাস সংযোগকে দূষণের এক বড় উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাছাড়া, মিথেন গ্যাস শুধু জলবায়ু পরিবর্তনেই প্রভাব ফেলে না, একইসঙ্গে গ্যাস চুলা নিঃসৃত ক্ষতিকর দূষিত কণার কারণে শ্বাসকষ্ট ও কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন কোটি কোটি মানুষ। এদিক দিয়ে দেখলে গ্যাসের চুলা নীরব এক ঘাতক। বাস্তবতা হলো যুক্তরাষ্ট্রে ৪ কোটি বাসাবাড়িতে গ্যাসের চুলা আছে, আর তাদের বায়ুদূষণের কারণে শিশুদের অ্যাজমা আক্রান্ত হওয়াসহ অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বাড়ছে। মিথেন দূষণ পৃথিবীকেও উষ্ণ করছে। এ কারণে দেশটির বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দূষণের উৎসটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এ দাবি কর্র্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্বও পেতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি ভোক্তাপণ্য সুরক্ষা কমিশনের একটি গত সোমবার জানিয়েছে, তারা গ্যাস স্টোভ নিষিদ্ধের বিষয়ে ভাবছে। এছাড়া, লস এে লেস, সিয়াটল ও নিউ ইয়র্কের মতো বড় মহানগরীর কর্র্তৃপক্ষও নির্দিষ্ট কিছু বাসাবাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্টে গ্যাস স্টোভ নিষিদ্ধ করেছে। নিউ ইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর পুরো রাজ্যেই স্টোভসহ গ্যাসচালিত অন্যান্য দূষণ উৎস বন্ধের প্রস্তাবও দিয়েছেন।
কভিড মহামারীর সময় সারা বিশ্বের কৃষকরা করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন সবচেয়ে কম। বিশ্বের ৯৯ শতাংশ কৃষক ও খামারি নিরাপদ ছিলেন।
কৃষকদের মধ্যে যারা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অধিকাংশ ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে ছিলেন। এ পেশার যুবকরা সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি এক হাজার করোনা-আক্রান্ত কৃষক বা খামারির মধ্যে মারা গেছেন গড়ে সাতজন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. কাজী ইকবালের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আনানিশ চৌধুরী। তার উপস্থাপিত প্রবন্ধের নাম ‘নাডজড ইনটু লকডাউন? আ ডিফারেন্ট পারস্পেকটিভ অন দ্য গ্লোবাল রেসপন্স টু দ্য কভিড-১৯ প্যানডেমিক’।
গবেষণায় বলা হয়, কভিডে উন্নত দেশগুলোই বেশি সমস্যায় পড়ে। এসব দেশের যেকোনো মহামারী নিয়ন্ত্রণের জাতীয় পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কারও পরিকল্পনাতেই ‘লকডাউন’ ছিল না।
ড. আনানিশ চৌধুরী বলেন, কভিডে লকডাউনে তেমন কারোর লাভ হয়নি। সুইজারল্যান্ড কোনো লকডাউন দেয়নি; তারাও মৃত্যু ঠেকিয়েছে। ব্রিটেনে যারা কভিডে মারা গেছেন তাদের অধিকাংশ ঘরে ছিলেন। সুইডেনে যারা মারা যান তাদেরও বেশিরভাগ ঘরে ছিলেন।
তার মতে, প্রথম দিকে স্বল্পমেয়াদে লকডাউন ঠিক ছিল। তখন বোঝা যাচ্ছিল না, কোথা থেকে কী হচ্ছে। কিন্তু যখন সবকিছু পরিষ্কার হলো তখন কেন বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ লকডাউন দিয়েছিল? এর ফলে সব কর্মকা- বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে মানসিক ও শিক্ষাগত ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হতে দুই প্রজন্ম লাগবে।
ড. আনানিশের গবেষণায় বলা হয়, লকডাউন যে জীবন রক্ষা করতে পারেনি তার প্রমাণ ইউরোপের ২৪টি দেশে কঠোর বা লঘু লকডাউন ছিল, কিন্তু মৃত্যু ঠেকানো যায়নি। মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুও কমে গেছে। লকডাউনে অনেক অপারচুনিটি কস্ট (ব্যয়) হয়েছে। সেদিকে নজর দেওয়া হয়নি। নীতিনির্ধারকদের বোঝা দরকার ছিল যে, সম্পদ সীমিত। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি যে শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেড়েছে তা নয়। এর জন্য কভিডের সময় নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগও দায়ী।
টিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই থেকে চার ডোজ টিকা দিয়েও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তাহলে টিকার পেছনে এত সম্পদ ব্যয় করার কী দরকার ছিল?
প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯১৩ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বে স্প্যানিশ ফ্লুতে মারা গিয়েছিল ২১৯ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মানুষ। আর ২০১৯-২০ সালে কভিডে মারা গেছে ৬ দশমিক ৩১ মিলিয়ন মানুষ। স্প্যানিশ ফ্লুর চেয়ে কভিড কোনোভাবেই বড় দুর্যোগ ছিল না। তবে পার্থক্যটা হলো, স্প্যানিশ ফ্লুতে সব বয়সের মানুষই মারা গিয়েছিল, কভিডে একটু বয়স্ক মানুষ বেশি মারা গেছে।
বলা হয়, ১৯৫৭ সালের এশিয়ান ফ্লুতে মারা যায় ৪ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মানুষ। ১৯৬৮ সালের হংকং ফ্লুতে মারা যায় ২ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মানুষ। তবে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে কভিড-১৯। কভিড মহামারীর আগেও বিভিন্ন রোগে মৃত্যুসহ স্বাভাবিক মৃত্যু বিশ্বব্যাপী কম হয়নি। কভিডের চেয়েও মৃত্যুর সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
কভিড-১৯ মহামারী চলার সময় ক্যানসার, কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে মানুষ মারা গেছে। এসব রোগের সঠিক চিকিৎসা ছিল না। এসব মৃত্যুর বিষয়ে গণমাধ্যম এবং লোকের মধ্যে খুব বেশি আলোচনা ছিল না। সবাই ব্যস্ত ছিল কভিডে মৃত্যুর হিসাব নিয়ে। ইংল্যান্ড ব্যাংকে কর্মরত অর্থনীতিবিদ ডেভিড মাইলসের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে যদি জিডিপির ৯ শতাংশ ক্ষতি হয় তাহলে ইংল্যান্ডের ক্ষতি হবে ৬৮ বিলিয়ন পাউন্ড। ২০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে যদি জিডিপির ৯ শতাংশ ক্ষতি হয় তাহলেও ক্ষতি হবে ১৯৪ বিলিয়ন ডলার। যদি ২০ হাজার মানুষের জীবন বাঁচাতে জিডিপির ১৫ শতাংশ ক্ষতি হয় তাহলে নিট ক্ষতি হবে ৩২৪ বিলিয়ন পাউন্ড। সুতরাং ক্ষতির বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া দরকার ছিল।
ড. কাজী ইকবাল বলেন, কভিডের সময় দেশগুলো ভেবেছে তারা জনগণের জন্য কিছু একটা করছে। দৃশ্যমান কিছু, যাতে মানুষ বুঝতে পারে সরকার তাদের পাশে আছে। যদি নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে তরুণরা থাকত তাহলে হয়তো এত লকডাউন হতো না।
দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ তথ্য জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এ বছর মারা যাওয়া ওই নারী রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা। বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এই নারীর নমুনা পরীক্ষায় নিপাহ ভাইরাস শনাক্ত হয়। কিন্তু প্রতিবেদন আসার আগেই তিনি মারা যান।
বিদায়ী বছর ২০২২ সালে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত তিন জনের মধ্যে দুজনই মারা যায়। মৃতরা নওগাঁর বাসিন্দা ও বেঁচে যাওয়া একজন রাজবাড়ীর বাসিন্দা। এর আগে ২০১১ সালে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ২২ জনের মধ্যে ২১ জনই মারা যায়। তবে এ-যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আকারের প্রাদুর্ভাব হয় ফরিদপুর জেলায়, ২০০৪ সালে। সে বছর ফরিদপুরে নিপাহ ভাইরাসে ৩৫ জন আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে রাজবাড়ী, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ ও ফরিদপুরে সবচেয়ে বেশি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইইডিসিআর জানিয়েছে, গত ২০০১ সাল থেকে ২১ বছরে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩২৭ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছে ২৩২ জন। অর্থাৎ এ ভাইরাসে আক্রান্তের ৭১ শতাংশই মারা গেছে। এছাড়া আক্রান্ত রোগীদের মাধ্যমে ৪৬ শতাংশ সুস্থ মানুষ রোগটিতে সংক্রমিত হয়েছে।
আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরা দেশের মানুষকে নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে উচ্চ মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। তাই বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমণ ছড়ায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত বাদুরের লালা এবং মলের মাধ্যমে। এখন পর্যন্ত এ রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তাই এ রোগ থেকে বাঁচতে কিছুতেই শীতকালে খেজুরর কাঁচা রস এবং গ্রীষ্মকালে কোনো ধরনের বাদুড়ে খাওয়া আংশিক ফল খাওয়া যাবে না। প্রয়োজনে রস গরম করে খেতে হবে।
গতকাল বুধবার রাজধানীতে ‘শীতকালীন সংক্রামক রোগ এবং নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য জানায় আইইডিসিআর।
আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে ফরিদপুর জেলায় প্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ২০০৬ সাল থেকে দেশে নিপাহ ভাইরাসের তথ্য সংরক্ষণ এবং এ ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। ২০০১ সালের পর থেকে প্রতি বছরই বিচ্ছিন্নভাবে রোগী পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত দেশের ৩২ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে।
সেমিনারে আইইডিসিআরের গবেষকরা বলেন, খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার ৮-৯ দিন পর নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ পায়। মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণের লক্ষণগুলো ৬-১১ দিন পরে প্রকাশ পায়। প্রথম দুই দিনের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে ভালো চিকিৎসা করতে পারলে এ রোগ থেকে সুস্থ হওয়া যায়। মূলত খেজুরের কাঁচা রসপানে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। নিপাহ একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ, যা বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। এ রোগের প্রধান লক্ষণ হচ্ছে জ্বরসহ মাথাব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ বকা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। এসবের পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
সেমিনারে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘এ দেশে বাদুড়ের লালা এবং মলের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কোনো ধরনের বাদুড়ে খাওয়া আংশিক ফল খাওয়া যাবে না এবং আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসার পর সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, বাংলদেশে সাধারণত শীতকালে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা যায়। এই সময়ে খেজুরের রসপানে বিরত থাকুন। এমনকি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আইইডিসিআরের আহ্বান দয়া করে খেজুরের রস সংক্রান্ত উৎসবসহ যে কোনো আয়োজন থেকে বিরত থাকুন। তবে খেজুরের রস খেতে চাইলে গরম করার পর পান করা নিরাপদ এবং খেজুরের গুড়ও নিরাপদ। এ সময় খেজুরের রস সংগ্রহকারীদের রস সংগ্রহের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন, কনসালন্টেন্ট ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম, সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. শারমিন সুলতানা প্রমুখ।
রাজধানীর ভাটারা ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন পিরোজপুরের সুলতান খাঁ (৫০), শরীয়তপুরের রোকেয়া বেগম (৬০)। এ ছাড়া যশোরে দুই মোটরসাইকেল আরোহী ও কুড়িগ্রামে আলুবোঝাই ট্রলির চাকা খুলে হেলপার নিহত হয়েছে। অন্যদিকে গাজীপুরে বাস-সিএনজি সংঘর্ষের ঘটনায় একজন আহত হয়েছে। পরে ক্ষুব্ধ জনতা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
গতকাল বুধবার ভোরে ভাটারার সোলমাইদ এলাকার সড়কে একটি বেপরোয়া ট্রাক সুলতান খাঁকে ধাক্কা দেয়। তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। সুলতানের বাড়ি পিরোজপুরের ভা-ারিয়া উপজেলার গৌরিপুর গ্রামে। বাবার নাম মৃত চাঁদ খাঁ। তিনি একশো ফিট এলাকায় থাকতেন এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ বি এম আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, সোলমাইদ এলাকার একশো ফিট রাস্তায় সোলমাইদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একটি ট্রাক অটোরিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন চালক সুলতান খাঁ। তবে অটোরিকশায় কোনো যাত্রী ছিল না। ঘটনার পরপর ট্রাকটি জব্দ ও চালককে আটক করা হয়েছে।
অন্যদিকে এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগনাল এলাকায় বুধবার দুপুরে বাসের ধাক্কায় রোকেয়া বেগম নিহত হন। পরে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে।
ডিএমপির নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মুরাদ খান জানান, বাটা সিগনাল মোড়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধা। এ সময় মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই বৃদ্ধা। ঘটনার পরপরই বাসটি জব্দ ও চালককে আটক করা হয়েছে।
যশোর প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ সড়কের শানতলায় মঙ্গলবার রাতে দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হচ্ছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারের ইসাহাক আলীর ছেলে বুলু মিয়া (৪০) ও যশোরের চৌগাছা উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কাদের মোল্লার ছেলে হযরত আলী (৩৫)। হযরত ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চালক। যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, রাত ৯টার পর যশোর সদরের শানতলার সাবেক পেপসি কোম্পানি ভবনের সামনে যশোর-ঝিনাইদহ সড়কের ওপর দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন পথচারীরা। এ সময় তারা ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে জানান। ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ওসি আরও জানান, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
গাজীপুরে বাস-সিএনজি সংঘর্ষের ঘটনায় বাসে আগুন: গাজীপুরে বাস-সিএনজি অটোরিকশা সংঘর্ষে সিএনজির চালক আহত হওয়ার ঘটনায় তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। বুধবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরীর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার এসআই মো. মতিউজ্জামান জানান, বুধবার দুপুর পৌনে ১২টায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নাওজোর মাহবুব ফিলিং এলাকায় তাকওয়া পরিবহনের একটি মিনিবাস চন্দ্রার দিকে যাচ্ছিল। এ সময় উল্টোপথে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হলে সিএনজি উল্টে যায়। এতে সিএনজিচালক আহত হন। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাকওয়া পরিবহনের মিনিবাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আগুনের ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলে তিনি জানান।
কুড়িগ্রামে আলুবোঝাই ট্রলির চাকা খুলে হেলপার নিহত : কুড়িগ্রামে আলুবোঝাই শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলির সামনের চাকা খুলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। আহতরা রংপুর ও কুড়িগ্রামে চিকিৎসাধীন। গতকাল সকালের দিকে জেলার রাজারহাট-তিস্তা সড়কের ঘোড়ামারা ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম লুৎফর রহমান (৪৫)। তিনি উলিপুর উপজেলার চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা।
রাজধানীর তেজগাঁও রেলগেট এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় এক শিক্ষর্থী নিহত হয়েছেন। নিহত সাঈদ আবদুল্লাহ (২০) বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এছাড়া টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় শিশুসহ তিন অটোরিকশাযাত্রী নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
সাঈদ আবদুল্লাহর বানি বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। পুলিশ বলছে, ফোনে কথা বলতে বলতে রেললাইন পার হচ্ছিলেন আবদুল্লাহ। পরে ট্রেনের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সহপাঠীরা মরদেহ উদ্ধার করে বিজ্ঞান কলেজ ক্যাম্পাসে নিয়ে যান। পরে সেখান থেকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিমানবন্দর রেলস্টেশনের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) কামরুল হাসান। তিনি জানান, তেজগাঁও রেলগেটে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে পার হচ্ছিলেন আবদুল্লাহ। এ সময় দুদিক থেকে দুটি ট্রেন চলে আসে। তখন ধাক্কা লেগে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। সাঈদ আবদুল্লাহ নও মুসলিম বলে জানা গেছে।
সহপাঠীরা জানান, আবদুল্লাহ সকালে কলেজ হোস্টেল থেকে বের হন কাকরাইল মসজিদে যাওয়ার জন্য। পথে দুর্ঘটনার শিকার হন।
টাঙ্গাইলে শিশুসহ নিহত তিন : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় শিশুসহ তিন অটোরিকশাযাত্রী নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু-তারাকান্দি রেললাইনের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের ঢেঁপাকান্দী এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হচ্ছেন ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা গ্রামের আগতেরিল্লা গ্রামের আলমগীর হোসেনের স্ত্রী লাবনী আক্তার (২৫), একই গ্রামের সংগ্রাম আলীর দেড় বছরের মেয়ে জান্নাতি। নিহত অপর নারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজনের মরদেহ ভূঞাপুর থানায় এবং অপরজনের মরদেহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম জানান, জামালপুরের তারাকান্দি থেকে ছেড়ে আসা বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশনগামী একটি ট্রেন ভূঞাপুর উপজেলার ঢেঁপাকান্দী রেলক্রসিং পার হওয়ার সময় একটি অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশায় থাকা তিন যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ যাত্রী। অটোরিকশাটি ভূঞাপুর থেকে যাত্রী নিয়ে ফলদা বাজারে যাচ্ছিল। গুরুতর আহত অবস্থায় পাঁচজনকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়ানো বিএনপি নেতা আলী আজম গতকাল বুধবার কারামুক্ত হয়েছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম একটি মামলায় ১ মাস ৯ দিন কারাভোগ শেষে কারামুক্ত হয়েছেন।
আলী আজমের আইনজীবী মো. আনিসুর রহমান জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় মামলায় গত ২ ডিসেম্বর আলী আজমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। জেলখানায় থাকা অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর তার মা সাহেরা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। পরে শেষবারের মতো মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে ১৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। কিন্তু ওইদিন দাপ্তরিক কাজ শেষ না হওয়ায় ২০ ডিসেম্বর তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান এ বিএনপি নেতা। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সকাল ১০টার দিকে নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজাস্থলে উপস্থিত হন তিনি। জানাজা ও মায়ের দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন আলী আজম। ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় তিনি মায়ের জানাজা পড়ান।
ওই ঘটনায় ২১ ডিসেম্বর ‘হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়েই মায়ের জানাজা পড়লেন বিএনপি নেতা’ শিরোনামে একটি খবর সচিত্র খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
ওই আইনজীবী আরও জানান, বিভিন্ন সংবাদপত্রে খবরসহ গাজীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এর বিচারক নাজমুন নাহারের কাছে পেশ করা হয়। পরে তিনি বিস্তারিত জেনে আলী আজমের জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের কাগজ কারাগারে পাঠানো হলে তা যাচাই-বাছাই করে সন্ধ্যায় তার মুক্তি দেওয়া হয়।
কারাগার থেকে মুক্তির পর আলী আজম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা কোনোমতেই কাম্য নয়। কোনো দোষ না করেও মিথ্যা মামলায় আমাকে জেল খাটতে হয়েছে। জেলে থাকা অবস্থায় আমার মায়ের মৃত্যুর সময় প্যারোলে মুক্তি দিলেও দুর্ধর্র্ষ অপরাধীদের মতো হাতকড়া ও পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রেখেছে। যা খুবই অমানবিক কাজ হয়েছে। এতে আমি ও আমার পরিবার চরম অপমানিত হয়েছে।’ কারাগারে থাকার সময় এবং মায়ের মৃত্যুর পর বিএনপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা তার বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন, এ জন্য তিনি দলের নেতাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।