
রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে এক শিশুর জন্ম দিয়েছেন সোনিয়া রানী রায় নামের এক নারী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্টেশনের ফার্স্ট এইড সেন্টারে তিনি ফুটফুটে শিশুটির জন্ম দেন। মেট্রোরেলের চিকিৎসক যাত্রী ও রোভার স্কাউটের এক নারী সদস্যের সহায়তায় সোনিয়া ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। পরে মা ও সন্তানকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজধানীর ধানম-ির একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া রানী রায় আগারগাঁও স্টেশনে নামার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে স্টেশনের ফার্স্ট এইড সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর দিয়াবাড়ী (উত্তরা) স্টেশনে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন তিনি। ওইদিনই দুই শতাধিক ভ্রমণসঙ্গী নিয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করেন সরকারপ্রধান।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখ লাখ মুসল্লি জড়ো হয়েছেন টঙ্গীর তুরাগতীরে। আজ শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার ৫৬তম আয়োজন। আমবয়ান করবেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের উদ্দেশে ইজতেমার মূল মঞ্চ থেকে নানা উপদেশমূলক বক্তব্য রাখা শুরু হয়েছে।
আগামী রবিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ২০ জানুয়ারি। প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে বুধবার থেকেই মুসল্লিরা তুরাগতীরে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত মুসল্লিদের ঢল আরও বাড়তে থাকে। করোনার কারণে দুই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ বছর বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে হাজির হয়েছেন। তারা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। গতকাল মুসল্লিদের উদ্দেশে প্রস্তুতিমূলক বয়ান দেওয়া হয়। এতে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের তিন দিন অবস্থানের নিয়মকানুন সম্পর্কে বলা হয়।
বিদেশি মেহমান : ইজতেমা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বিদেশি মেহমান এসেছেন। বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ২০ হাজার মেহমান এবারের ইজতেমা ময়দানে অংশগ্রহণ করতে পারেন। বিদেশি মেহমানদের মধ্যে যারা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে চার চিল্লায় ছিলেন তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের পথে রয়েছেন। তারা আজকের মধ্যে ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বৃহত্তর জুমার নামাজ : আজ শুক্রবার দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। এতে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুমার নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি জুমার জামাতে শরিক হবেন। জুমার নামাজে কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের ইমামতি করবেন বলে জানা গেছে।
ইজতেমা মাঠের মুরব্বিরা জানান, এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।
পুলিশের ব্রিফিং প্যারেড : বিশ্ব ইজতেমায় আসা লাখ লাখ মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে গতকাল দুপুরে পুলিশের ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ও আশপাশ এলাকায় জল, স্থল ও আকাশপথ ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকায় আমাদের পর্যাপ্তসংখ্যক জনবল ভেতরে-বাইরে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদাভাবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে।
গাড়ি পার্কিং : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন জানান, ইজতেমা চলাকালে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহনের জন্য ১৪টি পার্কিং পয়েন্ট রাখা হয়েছে। যেহেতু দেশের চারদিক থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের দিকে আসবেন তাই সংশ্লিষ্ট সড়কের খোলা জায়গা ও মাঠগুলোতে ওইসব যানবাহন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যান চলাচল নির্দেশনা : ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য উত্তরবঙ্গ হতে আসা টঙ্গী-ঢাকাগামী যানবাহন চান্দনা-চৌরাস্তা হয়ে কোনাবাড়ী, চন্দ্রা-ত্রিমোড়, বাইমাইল, নবীনগর, আমিনবাজার হয়ে চলাচল করবে।
আখেরি মোনাজাতের দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা-চৌরাস্তা হতে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কের মাজুখান ব্রিজ থেকে স্টেশন রোড ওভারব্রিজ পর্যন্ত এবং কামারপাড়া ব্রিজ থেকে মুন্নু টেক্সটাইল মিলগেট পর্যন্ত সড়কপথ বন্ধ থাকবে। এর আগে ১৪ ও ২১ জানুয়ারি রাত ১০টা হতে টঙ্গীর নিমতলী রেলক্রসিং, কামারপাড়া ব্রিজ ও ভোগড়া বাইপাস দিয়ে ইজতেমাস্থলের দিকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে বিকল্প হিসেবে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা হয়ে এবং বিপরীত দিকে ৩০০ ফুট সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে।
চিকিৎসাসেবা : মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইজতেমা ময়দানে ১০টি অস্থায়ী মেডিকেল টিম থাকবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান। গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, বিশেষায়িত মেডিকেল টিম রয়েছে ছয়টি। ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন গাজীপুর, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকা- সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুর রহমান কিরণ জানান, বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের ওজু, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরববরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইজতেমা চলাকালে বর্জ্য ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত অপসারণ করা হবে। টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার সিনেমা হল বন্ধ এবং দেয়ালের অশ্লীল পোস্টার অপসারণ করা হয়েছে।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প : টঙ্গীর মুন্নু নগর এলাকায় মুসল্লিদের জন্য হামদর্দ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিভিল সার্জন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ইউনানি হারবাল মেডিকেল সোসাইটি, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জনকল্যাণ ফ্রি- মেডিক্যাল ক্যাম্প, ইবনে সিনা, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প গতকাল থেকে মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠান্ডা, পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত।
দুই মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমা ময়দানে দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল তাদের মৃত্যু হয়। তারা হলেন গাজীপুর শহরের ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০) এবং সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের হেমুবটপাড়ার মো. নুরুল হক (৬৩)।
বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আবদুন নূর জানান, বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে মারা গেছেন তাবলিগ জামায়াতের গাজীপুর মারকাজের শূরা সদস্য তৈয়ব। আর নুরুল হক অ্যাজমা রোগে ভুগছিলেন।
আজ ১৩ জানুয়ারি জেমস জয়েসের প্রয়াণ দিবস, তিনি জন্মেছিলেন ২ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮২ সালে। তার মৃত্যুর বছর ১৯৪১, যে হিসাবে তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ৫৯ বছর। এই নাতিদীর্ঘ জীবনে তিনি লিখেছিলেন কম, কিন্তু ১৯০৪ সালে প্রথম লেখা গল্প সংকলন ‘ডাব্লিনার্স’ লিখেই তিনি সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তার গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং চরিত্র বিশ্লেষণের জন্য। তার পরবর্তী উপন্যাস, ‘এ পোর্ট্রটে অব দি আর্টিস্ট এস এ ইয়াং ম্যান’ (১৯১৬) ছিল আত্মজৈবনিক, যা কথাশিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯১৫ থেকে শুরু করে (এর বীজ রোপিত হয় ১৯০৫ সালে) ১৯২২ সালে শেষ করা ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস শুধু বিশাল কলেবরের ছিল না, হয়েছিল বিতর্কিত, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্ব সাহিত্যে কালজয়ী। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর গত বছর, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস প্রকাশনার একশ বছর পূর্তি হয়েছে। এ উপলক্ষে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে সাহিত্যের পাঠক, শিক্ষক, ছাত্র এবং সমালোচকরা আলোচনা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বইটির প্রতি তাদের নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। এর একটাই কারণ : ‘ইউলিসিস’ বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস যা কথাসাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে এবং ন্যারেটিভকে মডার্নিজমের উৎকর্ষে পৌঁছে দিয়ে পোস্ট-মডার্নিজমে উত্তরণের পথ প্রশস্ত করেছে।
ভাষা এবং আঙ্গিকের জটিলতার জন্য বইটি সহজপাঠ্য নয়, যদি না ব্যাখ্যামূলক বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। তারপরও জনপ্রিয় বলতে যা বোঝায়, সেই শ্রেণির বইয়ের মধ্যে পরিগণিত হবে না এই বই। সাধারণত বটেই, পরিশ্রমী এবং মনোযোগী পাঠকের জন্যও বইটি চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকবে, যেমন হয়ে এসেছে এতকাল। যেহেতু ইউলিসিস পাঠ একটা চ্যালেঞ্জ, সে জন্য, অনেকে না হলেও, সম্মানজনক সংখ্যার পাঠক এই বই পড়বে, যতদিন কথাসাহিত্যের দিন শেষ না হয়। আর এটা তো আপ্তবাক্য হয়ে গিয়েছে যে, The death of novel has been exaggerated. ইউলিসিস বই আকারে বের হওয়ার আগে, ১৯১৯ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘দি ইগোইস্ট’ পত্রিকায় কয়েক কিস্তিতে ছাপা হয়েছিল। এর সম্পাদিকা ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক হ্যারিয়েট উইভার, যিনি জয়েসের লেখার ভক্ত হিসেবে তাকে মাঝেমধ্যেই সাহায্য করে অর্থ সংকট থেকে রক্ষা করেছেন। তার পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর ছাপাখানার মালিক এবং পত্রিকার বেশ কিছু পাঠক প্রতিবাদ জানায়। এর ফলে হ্যারিয়েট উইভারকে পদত্যাগ করতে হয়।
প্রায় একই সময়ে, ১৯১৮ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত, ‘ইউলিসিস’ ধারাবাহিকভাবে নিউইয়র্ক থেকে ‘দ্য লিটল রিভিউ’ পত্রিকায় বের হচ্ছিল। চার কিস্তি বের হওয়ার পর অশ্লীলতার অভিযোগে কোর্টের আদেশে পত্রিকার সব কপি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং সম্পাদকদ্বয় ফৌজদারি মামলার আসামি হোন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে বইটির আর কোনো অংশ ছাপা যাবে না মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। দায়ের করা মামলার রায় বের হয় ১৯৩৩ সালে, ১৩ বছর পর। নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্টের বিচারক, জন উলসে তার রায়ে ‘ইউলিসিস’ উপন্যাসের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলেন, বইটি An amazing tour de force, which, on account of its style and and literary ambition could not be considered obscene. তিনি আরও যোগ করেন, Ulysses is a sincere and serious attempt to devise a new literary method for the observation and description of mankind. উপসংহারে তিনি বলেন, While the effect of of Ulysses is in places somewhat emetic, nowhere does it tend to be an aphrodisiac. তার এ রায় আপিল বিভাগের দুজন বিচারক সমর্থন করেন। বিচারক লার্নেড হ্যান্ড তার রায়ে বলেনthe offending passages are clearly necessary to the epic of the soul as Joyce conceived it নিউইয়র্ক আদালতে মামলা শুরু হওয়ার পর প্রথম সারির আমেরিকান ঔপন্যাসিক, জন ডস প্যাসজ এবং এফ স্কট ফিটজেরাল্ড উপন্যাসটির পক্ষে মত দিয়ে বলেন, it is a modern classic in every sense of the word নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ১৯৩৪ সাল থেকে আমেরিকায় ‘ইউলিসিস’ বৈধভাবে বইয়ের আকারে ছাপা হয়ে বের হয়। ইংল্যান্ডে বইটির ছাপা শুরু হয় এর দুই বছর পর, ১৯৩৬ সালে। কিন্তু জয়েসের নিজ দেশ, আয়ারল্যান্ডে বইটি নিষিদ্ধ না হলেও ছাপা হয়ে বের হতে সময় নেয় আরও এক যুগ। এর পেছনে ছিল ক্যাথলিক চার্চের নীরব নেতিবাচক ভূমিকা।
আমরা সময়ের দিক থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়েছি। এখন ফেরা যাক ১৯২০ সালে প্যারিস শহরে, যেখানে এজরা পাউন্ডের পরামর্শে জয়েস সপরিবারে বাস করছিলেন। ‘ইগোইস্ট’ এবং ‘দি লিটল রিভিউ’ পত্রিকায় বইটি ছাপা বন্ধ এবং অশ্লীলতার জন্য মামলা শুরু হওয়ার পর কোনো প্রকাশক ছাপানোর সাহস দেখায়নি। তখন প্যারিসের লেফট ব্যানকে অবস্থিত ‘শেকসপিয়ার অ্যান্ড কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠাতা-মালিক, মার্কিন নারী সিলভিয়া বিচ এগিয়ে আসেন প্রকাশক হিসেবে, যদিও এর আগে দোকানে বই বিক্রি ছাড়া প্রকাশনায় হাত দেননি তিনি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১৯২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি (জয়েসের জন্মদিন) ইউলিসিস বইয়ের আকারে দিনের আলো দেখতে পায়। কিন্তু বইটি বিতর্কিত হওয়ার জন্য ‘জনপ্রিয়’ হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে ইংল্যান্ড বা আমেরিকায় বিক্রি করার উপায় ছিল না। চোরাই পথে (শেকসপিয়ারের নাটকের প্রচ্ছদ ব্যবহার করে) পাঠাবার চেষ্টা করা হলেও তা ধরা পড়ে যায়। বন্দরেই ব্রিটিশ শুল্ক বিভাগ এবং আমেরিকার পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ সব কপি বাজেয়াপ্ত করে নষ্ট করে ফেলে। জয়েসের চরম আর্থিক সংকটের সময় তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন হ্যারিয়েট উইভার।
‘ইউলিসিস’ উপন্যাস বইয়ের আকারে বের হওয়ার আগেই জয়েস অকুণ্ঠ প্রশংসা এবং প্রবল সমর্থন পেয়েছিলেন আধুনিকতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত এজরা পাউন্ডের কাছ থেকে, যার স্লোগান ছিল make it new আধুনিকতার আরেক পথিকৃত টিএস এলিয়ট ইউলিসিস বের হওয়ার পর লিখলেন, instead of the narrative method we may now use the mythical method. তিনি এও বললেন যে, ‘ইউলিসিস’ বের হওয়ার পর গতানুতিক উপন্যাস লেখা বন্ধ হয়ে যাবে।
ডাব্লিউবি ইয়েটস প্রথমে বইটির সমালোচনা করলেও পরে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন তিনি বইটির গভীরতা (capacity) বুঝতে পারেননি। তিনি উপন্যাসে যে ‘heroic quality’ বিধৃত, তার প্রশংসা করেন।
ইংল্যান্ডে বা আমেরিকায় ‘ইউলিসিস’ নিষিদ্ধ হলেও সিলভিয়া বিচের দোকান থেকে কিনে যারা পড়েছে এবং সামান্য বুঝতে পেরেছে, তাদের উৎসাহে ১৯২৪ সাল থেকে প্রতি বছর ১৬ জুন তারিখে ব্লুমস ডে উদযাপিত হতে থাকে। এ বিষয়টি জয়েস এক চিঠিতে লিখে তার শুভার্থী কহ্যারিয়েট উইভারকে জানান। প্রথম দিকে এদিনটি পালনের উদ্দেশ্য ছিল ‘ইউলিসিস’ পাঠের জন্য উৎসাহী গোষ্ঠী গড়ে তোলা। ক্রমে এই দিনের উদযাপনে ভৌগোলিক পরিধি এবং কর্মসূচির বিস্তার লাভ ঘটে। ১৯৫৪ সালে, জয়েসের মৃত্যুর এক যুগ পর, ব্লুমস ডের ৫০তম বার্ষিকীতে ডাবলিন শহরে সারা দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যার মধ্যে ছিল সেসব রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং পানশালায় গিয়ে পান করা যেখানে ইউলিসিসের চরিত্ররা ১৯০৪ সালের ১৬ জুন হেঁটেছিল এবং পান করেছিল। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শহরে প্রতি বছর ১৬ জুন যেভাবে ব্লুমস ডে উদযাপিত হয় তার মধ্যে রয়েছে ইউলিসিস উপন্যাস থেকে পাঠ এবং বিভিন্ন দৃশ্যের অভিনয়। এ দিনের উদযাপনে রাস্তায় যারা হাঁটে তারা উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের উপযুক্ত পোশাক পরিহিত হয়ে তাদের ভূমিকা পালন করে। ২০২২ সালের ১৬ জুন ডাবলিনে ব্লুমস ডে ছিল রাস্তাঘাটে লোকে লোকারণ্য আর পুরো শহর ছিল উৎসবমূখর। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয় শতবর্ষের ব্লুমস ডে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে ইউলিসিস ভক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, কেননা তখন সেই বই প্রায় সব দোকানেই পাওয়া যায়। বইটির দুর্বোধ্যতা ভেদ করার জন্য ব্যাখ্যা দিয়ে কেউ কেউ বই লেখেন। ক্রমেই ইউলিসিস নিয়ে লেখা ব্যাপক হতে থাকে এবং একপর্যায়ে এসে এটি ‘ইন্ডাস্ট্রিতে’ পরিণত হয়। ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য বিভাগের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ‘ইউলিসিস’ নিয়ে লেখালেখি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এখন এমন অনেক অধ্যাপক আছেন যারা শুধু ইউলিসিস পড়ান এবং সেই জন্য ‘জয়েস স্কলার’ হিসেবে পরিচিত। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং আমেরিকার প্রায় প্রতিটি বড় বইয়ের দোকানে শুধু ইউলিসিস উপন্যাস নয়, তার ওপর লেখা টীকাভাষ্য, ব্যাখ্যামূলক লেখা ইত্যাদি পাঠক সহায়ক সব ধরনের বই পাওয়া যায়। এসব বইয়ের সাহায্য নিয়ে পড়লে ইউলিসিস পাঠ অনেকটাই সহজ মনে হয়। আর কোনো উপন্যাসের ওপর এমন বিপুলসংখ্যক বইপত্র বের হয়েছে, তার দৃষ্টান্ত নেই। আমাজনের মতো ঘরে বই পৌঁছে দেওয়ার প্রতিষ্ঠান বাজারে আসায় ইউলিসিসসংক্রান্ত বই কিনতে বইয়ের দোকানে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে খ্যাতিমান জয়েস স্কলারদের কথা শোনার জন্য ইউটিউবে বা গুগল সার্চ করলেই যখন খুশি তাদের কথা শোনা যায়। ইউলিসিসের শতবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইনে এ বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা শোনার সুযোগ বিস্তৃত হয়েছে।
২০০৪ সালে ব্লুমস ডের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ডাবলিন শহরে পাঁচ মাসব্যাপী এক উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন ভোরে অংশগ্রহণকারীদের বিনামূল্যে আইরিশ প্রাতরাশ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
জয়েস কেন উপন্যাসটি ১৯০৪ সালের ১৬ তারিখে শুরু এবং শেষ করেন? এর কারণ শুনলে তিনি যে খুবই সেন্টিমেন্টাল এবং রোমান্টিক প্রবণতার মানুষ ছিলেন তা বোঝা যাবে। এদিনটিতেই তিনি প্রথমবার তার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গিনী নোরা বারনাকলের সঙ্গে ডেটিং করেন এবং একত্রে সময় কাটান। ১৯০৫ সালে তারা দুজন ডাবলিন ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ইউরোপে চলে যান। ২৭ বছর একসঙ্গে থাকা এবং পুত্র-কন্যার জন্মের পর তাদের বিয়ে হয়, তাও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নয়, আদালতে সিভিল ম্যারেজ।
১৯৩৪ সালের ২৯ জানুয়ারি সংখ্যায় তাদের প্রচ্ছদ কাহিনীতে আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন লিখেছিল Trusting readers who plunge in hopefully to a smooth beginning soon find themselves floundering lin troubled waters. Arrogant author Joyce gives them no help, lets them swim or sink. But thanks to exploratory works of critics, and notably such an exegetical commentaty as Stuart Gilbert’s James Joyce’s Ulysses (Time Janury 5,1931 উল্লিখিত),the plain reader can now literally found out what Ulysses is all about..আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ইউলিসিস বৈধভাবে এসে পৌঁছায়। টাইম ম্যাগাজিন ওপরের একই সংখ্যায় (২৯ জানুয়ারি, ১৯৩৪) সেই উপলক্ষে লেখে Strictly speaking, Ulysses did not so much disembark as come out of hiding, garbed in new and respectable garments. Ever since 1922, when the first edition of Ulysses was published in Parisp, hundreds of Americans have smuggled copies through the custom or bought from bookleggers. But this week, on the strength of Federal Judge John Munro Woolsey’s decision that Ulysses is not obscene (Time December 18, 1934), Random House was able to publish the first edition of the book ever legally printed in any Englishspeaking country ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে, এখনো হচ্ছে, যে নিরবচ্ছিন্ন সৃষ্টির কারণে ঠাট্টা করে এ বিপুল প্রকাশনাকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’র সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে। গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় ইংরেজ চিত্রশিল্পী ফ্রানক বাজেনের লেখা ঔধসবং James Joyce and the Making of Ulysses (1934 (১৯৩৪) যার পুনর্মুদ্রণ হয়েছে বেশ কয়েকবার। জয়েস যখন যুদ্ধ এড়াবার জন্য ত্রিয়েসত থেকে জুরিখে তার আস্তানা গেড়েছেন এবং আবার ‘ইউলিসিস’ লেখা শুরু করেন, একই সময়ে তার প্রতিবেশী ছিলেন ইংরেজ এ চিত্রশিল্পী। তিনি বাজেনের সঙ্গে বইটি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করতেন এবং তার মতামত জানতে চাইতেন। বাজেন তার বইতে বইটি কীভাবে ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে, সে কথা লিখেছেন।
গত একশ বছরে ইউলিসিস নিয়ে যে বিষয় গবেষক-স্কলারদের সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে তা হলো বইটির কোন এডিশন মৌলিক? ১৯২২ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকাশক বইটির যে এডিশন বের করেছে তার কোনোটাই ত্রুটিহীন নয়, এমনকি সিলভিয়া বিচ প্রথম যে সংস্করণ বের করেন, সেটিও নয়। আশির দশকে এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির অবসানের জন্য মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যান্স ওয়াল্টার গেবলার এবং তার গবেষক দল অনেক অনুসন্ধানের পর যে এডিশনকে প্রামান্য বলে স্থির করেন তাও সমালোচনার মুখে টেকেনি। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত এই এডিশন পদ্ধতিগত এবং টেক্সটের ভুলের জন্য সর্ববাদীসম্মত হতে পারল না। তা সত্ত্বেও অনেকের মতে গেবলারের এ এডিশনই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম ভুল রয়েছে। প্রামাণ্য বলা না গেলেও এ এডিশন সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য।
কোনটি প্রামাণ্য এডিশন তা নির্ধারণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে এ কারণে যে, জয়েস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকাশককে যে কপি দিয়েছিলেন সে সব হুবহু এক ছিল না। প্রতিটিতে তিনি ভিন্ন সংশোধন করেছেন। আবার একই খসড়ার কপি প্রেস থেকে প্রুফ দেখার জন্য পাঠানো হলে তিনি নতুন করে সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। এভাবে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে মূল পান্ডুলিপিতে সংশোধন করে যাওয়ার ফলে কোন এডিশনে যে চূড়ান্ত সংশোধন করেছেন তিনি, তা বোঝা বেশ কঠিন।
জয়েসের জীবদ্দশায় না হলেও ইউলিসিস যে কালজয়ী উপন্যাস বা ‘ক্লাসিক’, এই ঐকমত্যে আসতে খুব সময় নেয়নি। ক্লাসিকের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, কালনিরপেক্ষতা, তার উল্লেখে কেউ কেউ বলেছেন যে ইউলিসিস ঐতিহাসিক উপন্যাস, কালনিরপেক্ষ নয়। এর সপক্ষে বইটিতে আয়ারল্যান্ডের বিশেষ সময়ের (ব্রিটিশ উপনিবেশ) ঘটনার এবং চরিত্রের উল্লেখের কথা বলা হয়েছে। এমার নোলান-এর বই James Joyce and Nationalism (1995) এই বিষয়টির ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা যায় ‘ইউলিসিস’ যদি পোস্ট-কলোনিয়াল ধারার বই হয়ে থাকে তাহলেও তার ক্লাসিক চরিত্র ক্ষুন্ন হয় না।
আগেই বলা হয়েছে, গত একশ বছরে বিভিন্ন সহায়ক বইপত্র বের হওয়ার ফলে ইউলিসিস পাঠের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ বৃদ্ধি জনপ্রিয়তার প্রমাণ নয়। জয়েস জনপ্রিয় লেখক হতে চানওনি। তিনি বিশ্বাস করেছেন উপন্যাস কেবল সৃজনশীলতার প্রকাশ নয়, মননশীলতার চারণভূমিও বটে। তিনি আশা করেছেন ইউলিসিস তারা পড়বে যাদের মধ্যে জ্ঞানচর্চা আছে, যারা ধৈর্যশীল, নতুন কিছু দেখে কৌতূহলী এবং মানসিক পরিশ্রম করে পড়তে যাদের অনীহা নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন পাঠকের সংখ্যা সর্বকালেই সীমিত।
হাসনাত আবদুল হাই; বরেণ্য কথাসাহিত্যিক
বর্ণিল সাজে সেজেছে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের স্থায়ী ভেন্যুতে বসা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৭তম আসর। প্রথম কয়েক দিন কিছুটা অগোছালো থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে জমে উঠতে শুরু করেছে মেলা। প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। তবে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) এবং তিনশ’ ফুট সড়ক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত এই দুটি সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে মেলায় আসতে পথে পথে ভোগান্তির শিকার হন দর্শনার্থীরা। এমনকি অনেকে মেলায় আসার পথে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে শেষমেশ মাঝপথ থেকেই বাড়ি ফিরে যান। পূর্বাচল উপশহরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না এক্সিবিশন সেন্টারের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর। মেলা সফল করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তুতির রং অনেকটাই ফিকে হয়ে আছে যানজটের কারণে। নরসিংদী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও পূর্বাঞ্চল এলাকার দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে গেলে এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক ব্যবহার করতে হয়। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও উত্তরাঞ্চলের দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে হলে তিনশ’ ফুট সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের উন্নয়নকাজ চলায় শুরুর দিন থেকেই মেলায় আসতে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। তিনশ ফুট সড়ক ছিল অনেকটাই যানজটমুক্ত। তবে আজ শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা। সিলেট, ভৈরব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও ও মেঘনাসহ এর আশপাশের অঞ্চলের মানুষ ইজতেমায় যাওয়ার জন্য এশিয়ান বাইপাস সড়ক ও তিনশ ফুট সড়ক ব্যবহার করছে। এ কারণে সড়ক দুটিতে যান চলাচল বেড়ে তিনশ ফুট সড়কেও দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। দুটি সড়কেই যানজটের কারণে মেলায় আসতে দর্শনার্থীদের পথে পথে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অনেক দর্শনার্থী মাঝরাস্তা থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এছাড়া কাঞ্চন টোল প্লাজায় টোল নেওয়ায় ধীরগতির কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এশিয়ান বাইপাস ও তিনশ ফুট সড়ক দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ উত্তরবঙ্গের মালবাহী অনেক ট্রাক চলাচল করছে। এসব ট্রাক তুলনামূলক ধীরে চলার কারণেও বাইপাস সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন রূপসী-কাঞ্চন সড়ককে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করতে বললেও তা কাজে আসছে না। এছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মেলা পর্যন্ত সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। ওইসব এলাকার মানুষও সড়কটি দিয়ে আসলে যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছেন। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের যথাযথ তৎপরতার অভাবে বাইপাস সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়। এই দুদিন যানজট আরও প্রকট আকার নেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গতকাল রাজধানী মগবাজার থেকে মেলায় আসা নীরব নামে এক দর্শনার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনশ ফুট ও এশিয়ান বাইপাস সড়ক মানেই ভোগান্তি। অনেক ভোগান্তির পর মেলায় আসতে পেরেছি। বাড়ি ফিরতে কতক্ষণ লাগবে আল্লাহই ভালো জানে।’
ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে আসা শাহজালাল বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও তিনশ ফুট সড়ক দিয়ে মেলায় এসেছিলাম। সেদিন যানজট দেখিনি। কিন্তু আজ মেলায় আসতে গিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা যানজটে আটকে বসে ছিলাম। একপর্যায়ে অনেকটা পথ হেঁটে মেলায় আসতে হয়েছে। অনেক দর্শনার্থীকে দেখেছি মাঝরাস্তা থেকেই বাড়ি ফিরে যেতে।’
যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় ঘুরতে আসা কিবরিয়া বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু যানজটের কারণে আমার ছোট মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাই ফিরে যাচ্ছি বাড়িতে।’
মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দিচ্ছেন। যাতে করে মেলায় দর্শনার্থী বেশি বেশি আসে। কিন্তু যানজটের কারণে দর্শনার্থী কমছে। যানজটের কারণে দর্শনার্থীরা আসতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। শুক্র ও শনিবারও যদি মেলায় আসতে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ যানজট পোহাতে হয় তাহলে লোকসানের মুখোমুখি হবেন ব্যবসায়ীরা।
মেলায় রোগীদের বিনামূল্যে সেবাদানের জন্য বিআরবি হাসপাতালের একটি স্টল রয়েছে। সেখানকার সিনিয়র স্টাফ নার্স আলামিন বলেন, ‘আমরা দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে ব্লাড প্রেসার, বিএমআই ও ডায়াবেটিস চেক করছি। আমাদের স্টলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকেন। তিনি ফ্রিতে রোগী দেখেন। এছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করছি আমরা। কিন্তু তিনশ ফুট সড়কে যানজট থাকার কারণে আজ দর্শনার্থী কিছুটা কম।’
এদিকে হাইওয়ে পুলিশের দাবি তারা যানজট নিরসনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, ‘যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তবে যানজট নিরসনে চালকদেরও সচেতন হতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, ‘এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। উন্নয়নকাজ বন্ধ রাখা তো সম্ভব না। তবে পুলিশ যানজট নিরসনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবি সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৈাধুরী বলেন, ‘যানজটের বিষয়টি দেখছে পুলিশ প্রশাসন। যানজটের কারণে মেলায় আসতে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে এটি সত্যি। কিন্তু পুলিশও যানজট নিরসনে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।’
দুর্নীতি করে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল খালেক অবশেষে স্থায়ী বরখাস্ত হয়েছেন। গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এতদিন বরখাস্তের বিষয়টি গোপন থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার ফাঁস হয়ে যায়। বেবিচকের সদস্য প্রশাসন মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বরখাস্তের কথা বলা হয়েছে। ১৫ বছরের চাকরি জীবনে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কানাডায় খালেকের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে গত ২৭ জুলাই দেশ রূপান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খালেকের মতো বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানও ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তাকেও যেকোনো সময় বরখাস্ত করা হবে বলে বেবিচক সূত্র জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বেবিচকের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার পর বেশ তোলপাড় হয়। এ নিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেবিচক চেয়ারম্যান কঠোর নির্দেশনা দেন। অন্যদিকে নিজেদের রক্ষা করতে ওই দুই কর্মকর্তা নানা উপায়ে দেন-দরবার চালান। কিন্তু সংস্থাটির চেয়ারম্যান কঠোর থাকায় শেষরক্ষা হয়নি।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানকেও যেকোনো সময় বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে জানান বেবিচকের এক কর্মকর্তা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেক ওপরের মহল থেকে নানাভাবে তদবির করেছিলেন বরখাস্তের হাত থেকে বাঁচতে। চেয়ারম্যানের কাছে একাধিক ফোন এসেছে। শহীদুজ্জামানও একইভাবে দেন-দরবার করেছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকদের অবহিতও করেছিলেন।
বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, আবদুল খালেক চাকরি জীবনের শুরু থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। চাকরিও পান তদবির ও অর্থের জোরে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার পর তার দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে তিনি টাকা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি দিয়েছেন।
অন্যদিকে, বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান ২০০০ সালের ২২ নভেম্বর চাকরিতে যোগ দেন। চাকরির কয়েক মাস পরই তিনি জড়িয়ে পড়েন টেন্ডার বাণিজ্যে। মোটা অঙ্কের অর্থ কামান। অন্তত ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি নিউইয়র্কের জ্যামাইকা অ্যাভিনিউতে একটি বাড়ি কিনেছেন। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের হরিকুমারিয়ার শহীদ বাচ্চু সরণি এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে শহীদুজ্জামান আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ২১ দিনের ছুটি নেন। তারপর থেকে তিনি ‘পলাতক’।
বিএনপির ১১ জানুয়ারির গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে হাঁকডাক সর্বস্ব বলে অভিহিত করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, তাদের সমাবেশ দেখে এটিই প্রতীয়মান হয়, জনগণ তো দূরের কথা, বিএনপির কর্মীরাও সবাই সেখানে অংশগ্রহণ করেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, হাঁস ডিম পাড়ার আগে কিন্তু অনেক হাঁকডাক দেয় এবং শেষে একটা ডিম পাড়ে। বিএনপিও ঠিক সে রকম গতকালের (বুধবার) কর্মসূচি নিয়ে অনেক হাঁকডাক দিয়েছে এবং শেষে দেখা গেল ৫২ দলের সব নেতাকর্মী মিলে কয়েকশ’ মানুষ, আর বিএনপির সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ। খালি কলসি বেশি বাজে, বিএনপির হাঁকডাকটাও ছিল ঠিক সে রকম।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতারা যেভাবে বক্তব্য রেখেছেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বাস্তবতা হচ্ছে তাদের কালকের সমাবেশ দেখে এটিই প্রতীয়মান হয়, জনগণ তো দূরের কথা, বিএনপির কর্মীরাও সবাই সেখানে অংশগ্রহণ করেনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা মানুষ এনেছে, তারপরও নয়াপল্টনের সামনের সমাবেশে আশানুরূপ মানুষ হয়নি।’
আগামী ১৬ জানুয়ারি বিএনপির দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা যেমন ১১ তারিখ ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সতর্ক পাহারায় ছিলাম, ১৬ তারিখেও থাকব। তারা যদি কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা চালায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটি প্রতিহত করা হবে। দেশে কাউকে শান্তি, স্থিতি, শৃঙ্খলা এবং জনজীবনে নিরাপত্তা বিঘিœত করতে দেওয়া হবে না।’
বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার জামিনে মুক্তি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মির্জা ফখরুল এবং মির্জা আব্বাস সাহেব মুক্তি পেয়েছেন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এতেই প্রমাণিত হয় দেশে আইন আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিএনপি বারবার আইন আদালত নিয়ে যে প্রশ্ন তোলে সেটি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা, তাদের জামিনের মাধ্যমে সেটি প্রমাণিত হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তবে জেল থেকে বের হওয়ার পর মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুলসহ নেতারা একটু গণতন্ত্রের পথে হাঁটার মতো করে বক্তব্য দিতে চেষ্টা করছেন বলে আমি মনে করছি।’
তিনি বলেন, ‘মির্জা আব্বাস বলেছেন আমরা কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে চাই না, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় দিতে চাই।’ আমরা তো বলি আপনারা নির্বাচনে আসুন, নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। জনগণ যদি চায় তাহলে আমরা দেশ পরিচালনা করব। জনগণ যাদের চায়, তারা দেশ পরিচালনা করবেন। এটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার রীতিনীতি, গণতন্ত্রের রীতিনীতি। তারা গণতন্ত্রের পথেই হাঁটবেন সেটিই আশা করি। তাদের দুজনেরই সুস্বাস্থ্য-দীর্ঘায়ু কামনা করি। সরকার করোনার চতুর্থ ডোজ দিচ্ছে, প্রয়োজনে তারা সেটিও নিতে পারেন।
নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে তাকে আটক করা হয়। এরপর গত শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। র্যাবের দাবি, প্রতারণার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বুধবার সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়। আটকের পর অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছেন। তবে স্বজনদের অভিযোগ, হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া সুলতানার মামা এবং নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নাজমুল হক মন্টু দেশ রূপান্তরকে বলেন, তার ভাগনি বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুক্তির মোড় থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাবের লোকজন সুলতানাকে ধরে নিয়ে গেছে বলে মোবাইল ফোনে কল করে বিভিন্নজন তাকে জানান। একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে তার ভাগনি সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত মোবাইল ফোনে কল করে জানান, তার মাকে র্যাব সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে। এরপর মন্টু তার ভাগনির সন্ধানে থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু সন্ধান পাননি। পরে বেলা ২টার দিকে সুলতানা জেসমিনের ছেলে তাকে আবার মোবাইল ফোনে কল করে জানান তার মা নওগাঁ সদর হাসপাতালে আছেন। এরপর হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাগনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কিন্তু ভেতরে গিয়ে ভাগনির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা বাধা দেন বলে অভিযোগ করেন মন্টু। তবে জেসমিনকে র্যাবের কোন ক্যাম্প নেওয়া হয়েছিল তারা তার কিছুই জানতেন না। এর কিছুক্ষণ পর জেসমিনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। যদিও লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে গতকাল শনিবার। গতকাল বাদ আসর তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
সুলতানা জেসমিনের ছেলে সাহেদ হোসেন সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। বিভিন্নভাবে জানতে পারেন তার মাকে র্যাবের সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। এর পরই তার সন্ধানের চেষ্টা করা হয়। একপর্যায়ে জানতে পারেন তার মা নওগাঁ হাসপাতালে রয়েছেন। সেখানে তার মায়ের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।
সৈকতের দাবি, তার মা চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। যার কারণে মৃত্যু হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাব-৫-এর উপ-অধিনায়ক এএসপি মাসুদ রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মুক্তির মোড় এলাকা থেকে র্যাবের হেফাজতে নেওয়া হয়। কিন্তু আটকের পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে দ্রুত তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকরা তাকে রাজশাহীতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাজশাহীতে নেওয়ার পর তার অবস্থা আরও খারাপ হয়। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্ট্রোক করে তিনি মারা যান।’
সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুরে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।
নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মৌমিতা জলিল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বুধবার দুপুরে সুলতানা জেসমিন নামে এক রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন র্যাবের সদস্যরা। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হাসপাতালেই সুলতানা জেসমিনের পরিবারের লোকজন র্যাবের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ওই রোগী মারা যান বলে জানতে পেরেছি।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, তারা যতটুকু জানতে পেরেছেন, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের সময় সুলতানা জেসমিন পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। তারপর তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সিটি স্ক্যান করে তারা জানতে পেরেছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। তার মাথায় ছোট্ট একটি লাল দাগ ছিল। শরীরে অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন জানান, ময়নাতদন্ত শেষে সুলতানা জেসমিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে না আসা পর্যন্ত তার মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংকের অফিসার থেকে জিএম পদ পর্যন্ত পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২। অনুসরণ করা হচ্ছে পর্ষদের ৮১০তম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত। এই অনিয়ম বন্ধ ও আগের নিয়মে পদোন্নতির প্রক্রিয়া চালু করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদন জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি দিলে বেশির ভাগ মেধাবী কর্মকর্তা বঞ্চিত হবেন। এতে কর্মকর্তারা কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এই নীতি বাদ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই এমডির কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি, তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পর্ষদের ৮১০তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অফিসার/সমমান থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার/সমমান পদ পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য শূন্য পদের চেয়ে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি হলে জ্যেষ্ঠতা তালিকা থেকে প্রতিটি সম্ভাব্য শূন্য পদের বিপরীতে সর্বোচ্চ তিনজন (১:৩) প্রার্থী নির্বাচনী সাক্ষাৎকার/বাছাইয়ের জন্য বিবেচ্য হবেন,’ যা সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী পদোন্নতি নীতিমালা-২০২২-এর সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। কারণ এর ফলে মেধাতালিকার কর্মীরা পদোন্নতি তো দূরের কথা, সাক্ষাৎকারেও অংশ নিতে পারবেন না।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২’-এ পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ বিষয়ের ৮(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘এই প্রবিধানমালা মোতাবেক এবং তফসিলে বর্ণিত শর্তাবলী পরিপালন সাপেক্ষে, কোনো কর্মচারীকে পরবর্তী উচ্চতর পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে মেধা, কর্মদক্ষতা ও জ্যেষ্ঠতাকে প্রাধান্য দেওয়া হইবে। কিন্তু কেবল জ্যেষ্ঠতার কারণে কোনো কর্মচারী অধিকার হিসেবে তাহার পদোন্নতি বা পদায়ন দাবি করিতে পারিবেন না।’
এদিকে, ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকারদের পদোন্নতি বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ‘ব্যাংকের চাকরিতে সিনিয়র অফিসার (জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা) অথবা সমতুল্য পদের পরবর্তী সব পদে পদোন্নতি পেতে হলে ব্যাংকিং ডিপ্লোমার দুই পর্বেই পাস করতে হবে,’ অর্থাৎ সোনালী ব্যাংকের ১:৩ নীতিমালা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক।
এ বছর সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার থেকে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার থেকে জেনারেল ম্যানেজার পদে পদোন্নতিযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৫০, ৯১ ও ১৩ জন। এর বিপরীতে সম্ভাব্য পদোন্নতিযোগ্য পদের সংখ্যা যথাক্রমে ৬০, ১৯ ও ৩ জন। কিন্তু জ্যেষ্ঠ বিবেচনায় মৌখিক পরীক্ষার জন্য মনোনীত হবেন ১৮০, ৫৭ ও ৬ জন। এতে বঞ্চিত হবে মেধাতালিকা। সুতরাং আলোচ্য পদোন্নতি নীতিমালা স্ববিরোধী ও চাকরি প্রবিধানমালার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং যেখানে সততা ও ন্যায়ের প্রতিফলন নেই।
সোনালী ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের তথ্য যাচাই-বাছাই ও গভীর অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে যেখানে দ্রুত পদোন্নতি হয়ে যায়, সেখানে সোনালী ব্যাংকে ব্যক্তি/গোষ্ঠী স্বার্থে প্রতিবার নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা আমদানি করে অনাকাক্সিক্ষত সময়ক্ষেপণ করে একেবারে বছরের শেষে এসে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এভাবে সোনালী ব্যাংকের দক্ষ ও মেধাবী কমকর্তারা এখন সব জায়গায় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছেন। এমন অবস্থায় সোনালী ব্যাংকে একটি স্থায়ী নীতিমালা করা প্রয়োজন। যেখানে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থ প্রাধান্য পাবে না; বরং তা অপরিহার্য পছন্দরূপে সর্বমহলে প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হবে। যত দিন না এরূপ নীতিমালা করা সম্ভব, তত দিন কোনো বিতর্কিত নীতিমালা চাপিয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত বলে মনে করছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা। কারণ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে যদি সততা, দক্ষতা ও মেধার পরিবর্তে কেবল জ্যেষ্ঠতাকেই বেছে নেওয়া হয়, তাহলে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আগ্রহ ও উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলবেন। চ্যালেঞ্জিং পদগুলো সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তার অভাবে দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আফজাল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোনালী ব্যাংকে যেই নীতিমালা রয়েছে, এটি অন্যান্য জায়গায়ও আছে; বিশেষ করে কৃষি ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিংয়েও একই নীতি মেনে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এখানে একজনের বিপরীতে তিনজনকে ডাকা হচ্ছে। তা ছাড়া এটা বোর্ডের সিদ্ধান্ত।
মেধাবীরা বঞ্চিত হবেন কি না এমন প্রশ্নে আফজাল করিম বলেন, ‘পদোন্নতির ক্ষেত্রে ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৫ হচ্ছে তার অর্জন। বাকি ১৫ নম্বর ভাইভা থেকে পাবেন। এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো বৈষম্য হবে বলে মনে করি না। গত বছর অন্যভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। সে সময়ও কর্মকর্তাদের অনেকেই নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এটা থাকবেই।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটির ছাড়পত্র নেই। অনুমোদন ছাড়াই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও আবাসিক কার্যক্রম।
অনুমোদন তথা ছাড়পত্র না নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান।
অনুমোদন না নিয়ে বিধি অমান্য করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ময়মনসিংহ বিভাগের উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান।
দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, সে বিবেচনা থেকেই ভবন নির্মাণ করা হয়। সব ঠিক থাকলেই ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সনদ) দেওয়া হয়। সনদের বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণ এবং ব্যবহারের সুযোগ নেই। অভিযোগ এলে আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সুরাহা করার চেষ্টা করব। তবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স নেয়নি।’
ময়মনসিংহ গণপূর্ত দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্কস ও প্ল্যানিং কমিটির সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। তারা তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ক্লিয়ারেন্স নেওয়া দরকার। না নিলে আইন অমান্য করা হয়। আমি উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থাগ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করব।’
একদিকে ভবনের অনুমোদন নেই, অন্যদিকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাব। দশতলা বঙ্গমাতা ছাত্রী হলে অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৬২টি ছোট সিলিন্ডার রয়েছে। এসবের কোনোটিরই মেয়াদ তথা কার্যকারিতা নেই। এ কথা নিশ্চিত করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নুসরাত শারমিন তানিয়া।
অগ্নিনির্বাপণের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তিত। বারবার বলেও সমাধান পাইনি। আমাদের কিছু সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোর মেয়াদ নেই। তা ছাড়া এসব কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, সে বিষয়ে কাউকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। মোটকথা, এ ব্যাপারে প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। কিছুদিন আগে হলে আগুন লাগার কথা ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। আমরা নিদানের ব্যবস্থার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেই যাচ্ছি।’
ফায়ার সার্ভিস ও গণপূর্তের ছাড়পত্রহীন ভবনে হলের কার্যক্রম চলছে কি না জানতে চাইলে নুসরাত শারমিন বলেন, ‘আমাদের ডিপিডি ও প্রকৌশল দপ্তর বলেছে, সব অনুমোদন আছে। তবে তারা আমাদের কোনো ডকুমেন্ট দেয়নি।’
একই চিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দশতলা বঙ্গবন্ধু হল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন, কলা ও বিজ্ঞান ভবনসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ডরমিটোরি, কোয়ার্টার ও প্রশাসনিক ভবনের। এমনকি নির্মাণাধীন কোনো ভবনের নকশার অনুমোদন নেই।’
আগুন নেভানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৪টি সিলিন্ডার থাকলেও অধিকাংশের মেয়াদ নেই; এসব ব্যবহারের নিয়মও কেউ জানে না। অগ্নিনির্বাপণের কোনো প্রশিক্ষণের আয়োজনও নেই। ১৫৪টি সিলিন্ডারের মধ্যে বঙ্গমাতা হলে ৬২টি, বঙ্গবন্ধু হলে ২২টি, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে ৩০টি করে এবং প্রশাসনিক ভবনে ১০টি সিলিন্ডার রয়েছে বলে জানা গেলেও জায়গামতো সেগুলো দৃশ্যমান নয়।
চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গমাতা হলে আগুন লাগার গুজবে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালেও নিতে হয়েছিল। এরপর প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।
৫৭ একরের বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো পানির উৎস নেই। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে পানির ব্যবস্থা কীভাবে হবে তা নিয়ে শঙ্কিত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এত বড় ভবনের আগুন নেভানো তাদের রিজার্ভের পানি দিয়ে সম্ভব নয়।
আগুন নেভানোর সরঞ্জামের ঘাটতি ও ছাড়পত্র না থাকলেও তাদের প্রস্তুতি রয়েছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা ও ওয়ার্কস দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব হোসেন। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দুটি আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার রয়েছে। আগুন লাগলে সেখান থেকে পানি সরবরাহ করা যাবে। আর জলাশয় নির্মাণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে ছাড়পত্রের বিষয়টি দেখা যাবে। আগুন লাগলে সৃষ্টিকর্তা না চাইলে আমাদের প্রস্তুতি দিয়েও লাভ হবে না। যা হয়ে গেছে, তা তো হয়েই গেছে।’
ভবনের গণপূর্ত ও ফায়ার সার্ভিসের সনদ না থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার ধারণা নেই। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলতে পারবে। যদি সেসবের প্রয়োজন থাকে আর আমাদের সেসব না থেকে থাকে, তাহলে আমরা প্রশাসনিকভাবে সেসব নিয়ে কাজ করব। এসব বিষয়ে দ্রুতই চিঠি দেওয়া হবে।’
বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী ফাইজাহ ওমর তূর্ণা বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে থাকি। সারা দেশে যেভাবে আগুন লাগছে, চিন্তা হয়। আমাদের এত বড় হল, তার আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই; যা আছে তা ব্যবহার করতেও জানি না আমরা। আগুন লাগলে ভয়েই মরে যাব।’
বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী ফাহমিদ অর্ক বলেন, ‘আগুন নেভানোর যথেষ্ট ব্যবস্থা নেই। ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিক্ষার্থীরা। সত্বর সুরাহার ব্যবস্থা করা উচিত।’
অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার দুর্দশা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিয়াদ হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেব।’
মোবাইল টেলিফোনে, এক ধরনের বিপ্লব ঘটেছে। বছর ২৫ আগে, বিষয়টি সাধারণের কল্পনার বাইরে ছিল। বর্তমানে এমন কোনো পেশার লোক নেই, যাদের হাতে মোবাইল ফোন দেখা যায় না। এমনকি, যারা নিত্য ভিক্ষা তনু রক্ষায় ব্যস্ত- সেই ভিক্ষুক শ্রেণির অধিকাংশের হাতেও মোবাইল। কিন্তু ৯০ দশকের শেষের দিকে, এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করা মোটেও সহজ ছিল না।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা নিয়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। দপ্তরটির কতিপয় কর্মকর্তা, কানুনগো, সার্ভেয়ার এবং অফিস সহকারীদের কমিশন বাণিজ্য, দালালদের যোগসাজশে ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎসহ নানান অভিযোগে প্রায় সময় খবরের শিরোনাম হয়। সম্প্রতি এই দপ্তরের যাবতীয় কর্মকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ঘিরে শক্তিশালী একটি চক্রের সন্ধানও পেয়েছে সংস্থাগুলো।
ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির দৈত্য
দেশের পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) অন্যতম। অনেকটা নীরবেই দলটি তার ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে ৬ মার্চ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালের এই দিনে পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই তারিখকেই সিপিবি তার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে উদযাপন করে।
আল্লাহতায়ালার কাছে বান্দার সব আমল এক রকম আর রোজার হিসাব ভিন্ন রকম। আল্লাহর কাছে বান্দা আমলের প্রতিদান লাভ করবে। তবে রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে বান্দাকে দান করবেন। আল্লাহ কেমন প্রতিদান দেবেন তা তিনিই ভালো জানেন। আমরা শুধু বুঝি, যে প্রতিদান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ বিশেষভাবে দেবেন, তা তার শান মোতাবেক দেবেন।
রোজার প্রতিদান আল্লাহ নিজে দেবেন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনেই গণপূর্ত অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) নেই। বহুতল ভবন নির্মাণের আগে এবং পরে তা বসতের বা ব্যবহারের উপযোগী কি না, তার জন্য দুই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন বা ছাড়পত্র লাগে।
তখনো দিনের আলো ফোটেনি পুরোপুরি, পুব আকাশ সবে একটু একটু করে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। তখন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হতে শুরু করলেন নীলরঙের টি-শার্ট পরা কিছু মানুষ। প্রথমে একজন-দুজন। তারপর পাঁচজন-দশজনের ছোট ছোট দলে। সংখ্যা দাঁড়াল ১২৭। এরা একটি বিশেষ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছেন। এরা এসেছেন ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরপরাধ বাঙালির ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল তার প্রতিবাদ জানাতে, এরা এসেছেন সেদিন যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, এরা এসেছেন শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে দেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিতে, এরা এসেছেন জাতীয় শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’য় অংশ নিতে।
বাজার থেকে মুরগি কিনে ড্রেসিং করার পর অনেকেই মুরগির পা, গিলা-কলিজা (লটপট) ফেলে যান। আর এসব গিলা, কলিজা কম দামে কেনেন নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু বাজারে হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ায় এসব গিলা, কলিজার কদর বেড়েছে। তবে এখানেও দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষ এসব কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
বাজারে গিলা-কলিজাও ২৬০ টাকা কেজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে অবৈধভাবে টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এই লেনদেন সম্পর্কিত একটি ফোনালাপ দৈনিক দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
১৬ লাখ টাকা ভাগাভাগি ছাত্রলীগের ৫ নেতার
মেধাতালিকা বাদ দিয়ে নতুন নিয়মে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক। যার ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পদোন্নতিযোগ্য সোনালী ব্যাংকের শত শত কর্মী। এত দিন শূন্য পদের ভিত্তিতে মেধাতালিকা থেকে দুজন ও জ্যেষ্ঠতা (সিনিয়রিটি) তালিকা থেকে একজনকে পদোন্নতি দেওয়া হতো। কিন্তু হঠাৎ করেই নতুন নিয়ম চালু হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় ব্যাংকটিতে। পদোন্নতিতে মৌখিক পরীক্ষার জন্য শুধু জ্যেষ্ঠ তালিকার কর্মকর্তাদের বিবেচনা করা হয়েছে। বিশেষ কিছু ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মেধাবী ও কর্মঠ অফিসারদের বঞ্চিত করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সোনালী ব্যাংকের কর্মীরা।
মেধার মূল্যায়ন নেই সোনালী ব্যাংকে
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে একটি গান গেয়েছেন প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী ফাহমিদা নবী। ‘ভোরের আলোয় ঝিকিমিকি’ শিরোনামের গানটি লিখেছেন সুলতানা নূরজাহান রোজ। সুর ও সংগীত করেছেন সজীব দাস। অডিও রেকর্ডিং শেষে এখন চলছে ভিডিও নির্মাণের কাজ। ইয়ামিন এলানের পরিচালনায় মিউজিক ভিডিওটিতে ফাহমিদা নবীও আছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সুন্দর একটি গান করলাম। দেশ রাগের সুরে গানটি করা হয়েছে। এতে ঢোল, বাঁশি, তবলাসহ দেশীয় সংগীতের ছোঁয়া পাবেন শ্রোতারা। সুরকার সজীব দাস অনেক যত্ন নিয়ে গানটি করেছেন। আশা করছি গানের সুর ও মিউজিক ভিডিওটি শ্রোতা-দর্শকদের মন জয় করবে।’ গতকাল গানটি সুলতানা নূরজাহান রোজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে।
‘তুমি আর নেই সে তুমি’, চন্দিকা হাথুরসিংহের বেলায় শচীন দেব বর্মনের এই গানের কলিটা উপমা হিসেবে আসতেই পারে। দ্বিতীয় মেয়াদে অনেক বদলে গেছেন শ্রীলঙ্কান এই কোচ। আগের মতো কড়া হেডমাস্টারের বদনাম এখনো শোনা যায়নি, সেই সঙ্গে প্রতিভার উপযাচক হিসেবেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। হাথুরুসিংহে প্রতিভার প্রয়োগ চান, তাহলে তার দলে জায়গা মিলবে। স্রেফ প্রতিভার জোরে জাতীয় দলে দিনের পর দিন জায়গা ধরে রাখার দিন শেষ, কাল চট্টগ্রামে ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের কোচ।
শুধু প্রতিভায় মন গলবে না হাথুরুর
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সিনিয়র পেশ ইমাম। দারুস সুন্নাহ ওয়াল ফিকর, মিরপুরের প্রতিষ্ঠাতা মুহতামিম এবং মিরপুর সাংবাদিক এলাকার মসজিদে ফারুকের খতিব। হুফফাজুল কুরআন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি। দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন- রমজানের আমল, ইমামের গুণাবলি ও হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতাসহ সমসাময়িক নানা প্রসঙ্গে।
সকাল ১০টায় রেডিও নতুন সামরিক আদেশের ঘোষণা দিল। যখনই কোনো সাংবাদিক সেনা কর্মকর্তাদের কাছে কোনো তথ্য জানতে চান, তাদের রূঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। কূটনৈতিক মিশনে পৌঁছার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলো। এক দল সাংবাদিক যখন সামনের দরজা দিয়ে একজন ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে বেরিয়ে এলেন, ক্যাপ্টেন ভয়ংকর ক্ষুব্ধ হলেন। তাদের ভেতরে ঢোকার হুকুম দিয়ে পেছন থেকে বললেন, ‘আপনাদের কীভাবে সামলাতে হবে আমি জানি। আমি আমার নিজের মানুষদের হত্যা করতে পারি। আমি আপনাদেরও হত্যা করতে পারব।’
রাষ্ট্রায়ত্ত এসেনসিয়াল ড্রাগস সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওষুধের চাহিদার ৭০ শতাংশ পূরণ করে। সাশ্রয়ীমূল্য কিন্তু মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনকারী এ প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির, যিনি পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আকর্ষণীয় মুনাফা ও নিয়মিত সম্প্রসারণে অনুকরণীয় প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের বিশেষ প্রতিবেদক আলতাফ মাসুদ-এর সঙ্গে।
গভর্নমেন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস ল্যাবরেটরি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৮৩ সালে এটি এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড নামে পুনঃনামকরণ করা হয়। এ কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদনের পাশাপাশি নিজস্ব সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে সরকারি স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে তা পৌঁছে দেওয়া। ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর এসেনসিয়াল ড্রাগসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির। এরপর থেকেই পাল্টে যেতে শুরু করে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সাড়ে আট বছরে গতানুগতিক প্রতিষ্ঠানটি আজ সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় অপরিহার্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
এসেনসিয়াল ড্রাগস ইতিমধ্যেই সরকারের একটি ইউনিক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি মানুষ এ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধ সেবন করছেন, যা বিনামূল্যে সরকার প্রদান করছে। পরিবার পরিকল্পনায় যেসব ওষুধ প্রয়োজন হয় সেগুলোও উৎপাদন করছে কোম্পানিটি।
দেশ রূপান্তরকে অধ্যাপক ডা. এহ্সানুল কবির জানিয়েছেন, বর্তমানে আমরা ১২৩ ধরনের ওষুধ উৎপাদন করি। এর মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিস্টামিনসহ জেনারেল প্রোডাক্টগুলো উৎপাদন করা হচ্ছে। এর বাইরে কিছু ব্যয়বহুল ওষুধও উৎপাদন করা হচ্ছে। বাইরের কোম্পানির তুলনায় আমরা সরকারকে ১৫-২০ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে মানসম্মত ওষুধ দিতে পারছি। আমাদের উৎপাদিত ওষুধের মাধ্যমে প্রতি বছর সরকারের শত শত কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
২০১৪ সালে এসেনসিয়াল ড্রাগসের বার্ষিক টার্নওভার ছিল প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা, যা এখন ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এহ্সানুল কবির বলেন, সরকার আমাদের উৎপাদিত ওষুধে ৫ থেকে ৭ শতাংশ মুনাফা দেয়। সরকারের কাছে ওষুধ বিক্রির অর্থে উৎপাদনসহ সব খরচ মেটানোর পরও আমরা প্রতি বছর ভালো মুনাফা করছি। সর্বশেষ হিসাববছরে আমাদের প্রতিষ্ঠান ১১০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে।
এসেনসিয়াল ড্রাগসের ওষুধ মানসম্মত ও সাশ্রয়ী হলে বাইরে পাওয়া যায় না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞ এ চিকিৎসক বলেন, আমরা সরকারের চাহিদাই মেটাতে পারছি না। কারণ আমাদের কারখানাগুলো অনেক পুরনো, যার কারণে এর উৎপাদন সক্ষমতা কম ছিল। যখন আমাদের কারখানাগুলো তৈরি হয় তখন সারা দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছিল আটটা। কিন্তু এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭টিতে। কিন্তু এ সময়ে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা তেমনটা বাড়েনি। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালগুলোর ওষুধের কেনার যে বাজেট, তার ৭০ শতাংশ আমরা সরবরাহ করতে পারছি।
কারখানা সম্প্রসারণের বেশ কিছু উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকার তেজগাঁওয়ের প্ল্যান্টটা মানিকগঞ্জে স্থানান্তর করা হচ্ছে। মানিকগঞ্জে ৩১ একর জমিতে আপাতত ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। মানিকগঞ্জের প্ল্যান্ট চালু হলে হাসপাতালগুলোর শতভাগ ওষুধ আমরা সরবরাহ করতে পারব বলে আশা করছি। শুধু তাই নয়, রপ্তানিও করতে পারব।
গোপালগঞ্জে নতুন প্ল্যান্ট করা হয়েছে, যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, ইনজেকশন, সাল্যাইনসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা হবে। দেশে প্রথম ভ্যাকসিন প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগের কথা জানিয়ে এহ্সানুল কবির বলেন, আমাদের গোপালগঞ্জের প্ল্যান্টের পাশে সাড়ে ছয় একর জমি অধিগ্রহণ করেছি, যেখানে ১২টি টিকা উৎপাদন করব। ইনফ্লুয়েঞ্জা, ম্যানিনজাইটিস, করোনা, টিউবারকলোসিসসহ বাংলাদেশে শিশুদের যে ১১টি টিকা দেওয়া হয় সেগুলোর সবই আমদানিনির্ভর, যা আমরা উৎপাদন করব। এর বাইরে করোনার টিকাও উৎপাদন করব। সেখানে উৎপাদন, বোতলজাত ও ভ্যাকসিন ম্যানুফ্যাকচারÑ এ তিন পর্যায়ে উৎপাদন হবে। এ ছাড়া গবেষণা উন্নয়নেও ব্যবস্থা থাকছে। গোপালগঞ্জে ডায়ালাইসিস সøুইড তৈরি হবে, যার ফলে ডায়ালাইসিসের খরচ অনেক কমে যাবে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ইতিমধ্যে এ প্রকল্পে ২৫০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর সরকার দেবে ৫০ কোটি। ইতিমধ্যেই ডিপিপি তৈরি হয়েছে। আগামী জুলাই থেকে কাজ শুরু হবে আশা করছি। কয়েকটি ধাপে প্রকল্পটি সম্পন্ন হতে পাঁচ বছর সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বগুড়ায় ২১ বছর আগে একটি প্ল্যান্ট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যেখানে অবকাঠামো তৈরির আগেই মেশিন কেনা হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। আমি সেখানে ভবন তৈরিসহ সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করেছি, যা গত ১৫ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। বগুড়ার প্ল্যান্টে উন্নতমানের অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন করা হচ্ছে।
এহ্সানুল কবির পেশায় একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি অবসরে এখনো রোগীদের পরামর্শ সেবা দিয়ে থাকেন। ওষুধ কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় তার মূল পেশা কোনো সহায়ক ভূমিকা পালন করছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলছিলেন, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার কারণে কোম্পানি পরিচালনায় অবশ্যই কিছু সুবিধা পেয়েছি। একজন ডাক্তার হওয়ার কারণে আমি বুঝতে পারি কোন ওষুধটি মানুষের বেশি প্রয়োজন। কোন ওষুধটা ডেভেলপ করলে মানুষের সত্যিকারের উপকার হবে সেগুলো আমরা তৈরি করে সাশ্রয়ীমূল্যে সরবরাহ করেছি। তিনি জানান, এসেনসিয়াল ড্রাগসে কাজ শুরুর আগে তিনটি দেশের একাধিক প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কাজ করতে হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাও এখানে কাজে লাগছে।
আমি চেষ্টা করছি কর্মিবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে। এ জন্য সামর্থ্যরে মধ্য থেকে শ্রমিকদের কী কী সুবিধা দেওয়া যায়, তার পরিকল্পনা হয়েছে এবং ধাপে ধাপে তা বাস্তবায়ন করেছি। আমি যোগ দেওয়ার পর ২০১৫ সালে আমি শ্রমিকদের বেতন দ্বিগুণ করে দিয়েছি। তাদের খাবারের মান উন্নয়ন করেছি। ঢাকার যত শ্রমিক আছে তাদের সবার জন্য বাস সার্ভিস চালু করেছি। মধুপুরে আমাদের একটি কারখানা আছে, যেখানকার শ্রমিকদের জন্য বীরশ্রেষ্ঠদের নামে চারটি ডরমিটরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কারখানায় ডাক্তারের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমাদের পাঁচটা প্ল্যান্টে শ্রমিকদের বিনোদনের জন্য বার্ষিক বনভোজনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের কারখানাগুলোতে যেসব অস্থায়ী শ্রমিক কাজ করেন, তারা কিন্তু আগে ঈদ বোনাস পেত না। আমি তাদের জন্য ঈদ অ্যালাউন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যা দিয়ে তারা নিজেদের পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতে পারছেন বলেন এহ্সানুল কবির।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’