
বিএনপির ১১ জানুয়ারির গণ-অবস্থান কর্মসূচিকে হাঁকডাক সর্বস্ব বলে অভিহিত করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, তাদের সমাবেশ দেখে এটিই প্রতীয়মান হয়, জনগণ তো দূরের কথা, বিএনপির কর্মীরাও সবাই সেখানে অংশগ্রহণ করেনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, হাঁস ডিম পাড়ার আগে কিন্তু অনেক হাঁকডাক দেয় এবং শেষে একটা ডিম পাড়ে। বিএনপিও ঠিক সে রকম গতকালের (বুধবার) কর্মসূচি নিয়ে অনেক হাঁকডাক দিয়েছে এবং শেষে দেখা গেল ৫২ দলের সব নেতাকর্মী মিলে কয়েকশ’ মানুষ, আর বিএনপির সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ। খালি কলসি বেশি বাজে, বিএনপির হাঁকডাকটাও ছিল ঠিক সে রকম।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি নেতারা যেভাবে বক্তব্য রেখেছেন, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বাস্তবতা হচ্ছে তাদের কালকের সমাবেশ দেখে এটিই প্রতীয়মান হয়, জনগণ তো দূরের কথা, বিএনপির কর্মীরাও সবাই সেখানে অংশগ্রহণ করেনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা মানুষ এনেছে, তারপরও নয়াপল্টনের সামনের সমাবেশে আশানুরূপ মানুষ হয়নি।’
আগামী ১৬ জানুয়ারি বিএনপির দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা যেমন ১১ তারিখ ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সতর্ক পাহারায় ছিলাম, ১৬ তারিখেও থাকব। তারা যদি কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টা চালায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটি প্রতিহত করা হবে। দেশে কাউকে শান্তি, স্থিতি, শৃঙ্খলা এবং জনজীবনে নিরাপত্তা বিঘিœত করতে দেওয়া হবে না।’
বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার জামিনে মুক্তি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মির্জা ফখরুল এবং মির্জা আব্বাস সাহেব মুক্তি পেয়েছেন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এতেই প্রমাণিত হয় দেশে আইন আদালত সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিএনপি বারবার আইন আদালত নিয়ে যে প্রশ্ন তোলে সেটি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা, তাদের জামিনের মাধ্যমে সেটি প্রমাণিত হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তবে জেল থেকে বের হওয়ার পর মির্জা আব্বাস, মির্জা ফখরুলসহ নেতারা একটু গণতন্ত্রের পথে হাঁটার মতো করে বক্তব্য দিতে চেষ্টা করছেন বলে আমি মনে করছি।’
তিনি বলেন, ‘মির্জা আব্বাস বলেছেন আমরা কাউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলতে চাই না, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় দিতে চাই।’ আমরা তো বলি আপনারা নির্বাচনে আসুন, নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। জনগণ যদি চায় তাহলে আমরা দেশ পরিচালনা করব। জনগণ যাদের চায়, তারা দেশ পরিচালনা করবেন। এটা হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার রীতিনীতি, গণতন্ত্রের রীতিনীতি। তারা গণতন্ত্রের পথেই হাঁটবেন সেটিই আশা করি। তাদের দুজনেরই সুস্বাস্থ্য-দীর্ঘায়ু কামনা করি। সরকার করোনার চতুর্থ ডোজ দিচ্ছে, প্রয়োজনে তারা সেটিও নিতে পারেন।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখ লাখ মুসল্লি জড়ো হয়েছেন টঙ্গীর তুরাগতীরে। আজ শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার ৫৬তম আয়োজন। আমবয়ান করবেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের উদ্দেশে ইজতেমার মূল মঞ্চ থেকে নানা উপদেশমূলক বক্তব্য রাখা শুরু হয়েছে।
আগামী রবিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ২০ জানুয়ারি। প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে বুধবার থেকেই মুসল্লিরা তুরাগতীরে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত মুসল্লিদের ঢল আরও বাড়তে থাকে। করোনার কারণে দুই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ বছর বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে হাজির হয়েছেন। তারা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। গতকাল মুসল্লিদের উদ্দেশে প্রস্তুতিমূলক বয়ান দেওয়া হয়। এতে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের তিন দিন অবস্থানের নিয়মকানুন সম্পর্কে বলা হয়।
বিদেশি মেহমান : ইজতেমা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বিদেশি মেহমান এসেছেন। বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ২০ হাজার মেহমান এবারের ইজতেমা ময়দানে অংশগ্রহণ করতে পারেন। বিদেশি মেহমানদের মধ্যে যারা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে চার চিল্লায় ছিলেন তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের পথে রয়েছেন। তারা আজকের মধ্যে ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বৃহত্তর জুমার নামাজ : আজ শুক্রবার দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। এতে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুমার নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি জুমার জামাতে শরিক হবেন। জুমার নামাজে কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের ইমামতি করবেন বলে জানা গেছে।
ইজতেমা মাঠের মুরব্বিরা জানান, এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।
পুলিশের ব্রিফিং প্যারেড : বিশ্ব ইজতেমায় আসা লাখ লাখ মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে গতকাল দুপুরে পুলিশের ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ও আশপাশ এলাকায় জল, স্থল ও আকাশপথ ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকায় আমাদের পর্যাপ্তসংখ্যক জনবল ভেতরে-বাইরে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদাভাবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে।
গাড়ি পার্কিং : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন জানান, ইজতেমা চলাকালে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহনের জন্য ১৪টি পার্কিং পয়েন্ট রাখা হয়েছে। যেহেতু দেশের চারদিক থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের দিকে আসবেন তাই সংশ্লিষ্ট সড়কের খোলা জায়গা ও মাঠগুলোতে ওইসব যানবাহন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যান চলাচল নির্দেশনা : ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য উত্তরবঙ্গ হতে আসা টঙ্গী-ঢাকাগামী যানবাহন চান্দনা-চৌরাস্তা হয়ে কোনাবাড়ী, চন্দ্রা-ত্রিমোড়, বাইমাইল, নবীনগর, আমিনবাজার হয়ে চলাচল করবে।
আখেরি মোনাজাতের দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা-চৌরাস্তা হতে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কের মাজুখান ব্রিজ থেকে স্টেশন রোড ওভারব্রিজ পর্যন্ত এবং কামারপাড়া ব্রিজ থেকে মুন্নু টেক্সটাইল মিলগেট পর্যন্ত সড়কপথ বন্ধ থাকবে। এর আগে ১৪ ও ২১ জানুয়ারি রাত ১০টা হতে টঙ্গীর নিমতলী রেলক্রসিং, কামারপাড়া ব্রিজ ও ভোগড়া বাইপাস দিয়ে ইজতেমাস্থলের দিকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে বিকল্প হিসেবে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা হয়ে এবং বিপরীত দিকে ৩০০ ফুট সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে।
চিকিৎসাসেবা : মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইজতেমা ময়দানে ১০টি অস্থায়ী মেডিকেল টিম থাকবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান। গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, বিশেষায়িত মেডিকেল টিম রয়েছে ছয়টি। ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন গাজীপুর, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকা- সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুর রহমান কিরণ জানান, বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের ওজু, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরববরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইজতেমা চলাকালে বর্জ্য ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত অপসারণ করা হবে। টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার সিনেমা হল বন্ধ এবং দেয়ালের অশ্লীল পোস্টার অপসারণ করা হয়েছে।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প : টঙ্গীর মুন্নু নগর এলাকায় মুসল্লিদের জন্য হামদর্দ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিভিল সার্জন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ইউনানি হারবাল মেডিকেল সোসাইটি, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জনকল্যাণ ফ্রি- মেডিক্যাল ক্যাম্প, ইবনে সিনা, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প গতকাল থেকে মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠান্ডা, পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত।
দুই মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমা ময়দানে দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল তাদের মৃত্যু হয়। তারা হলেন গাজীপুর শহরের ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০) এবং সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের হেমুবটপাড়ার মো. নুরুল হক (৬৩)।
বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আবদুন নূর জানান, বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে মারা গেছেন তাবলিগ জামায়াতের গাজীপুর মারকাজের শূরা সদস্য তৈয়ব। আর নুরুল হক অ্যাজমা রোগে ভুগছিলেন।
আজ ১৩ জানুয়ারি জেমস জয়েসের প্রয়াণ দিবস, তিনি জন্মেছিলেন ২ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮২ সালে। তার মৃত্যুর বছর ১৯৪১, যে হিসাবে তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ৫৯ বছর। এই নাতিদীর্ঘ জীবনে তিনি লিখেছিলেন কম, কিন্তু ১৯০৪ সালে প্রথম লেখা গল্প সংকলন ‘ডাব্লিনার্স’ লিখেই তিনি সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তার গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং চরিত্র বিশ্লেষণের জন্য। তার পরবর্তী উপন্যাস, ‘এ পোর্ট্রটে অব দি আর্টিস্ট এস এ ইয়াং ম্যান’ (১৯১৬) ছিল আত্মজৈবনিক, যা কথাশিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯১৫ থেকে শুরু করে (এর বীজ রোপিত হয় ১৯০৫ সালে) ১৯২২ সালে শেষ করা ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস শুধু বিশাল কলেবরের ছিল না, হয়েছিল বিতর্কিত, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্ব সাহিত্যে কালজয়ী। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর গত বছর, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস প্রকাশনার একশ বছর পূর্তি হয়েছে। এ উপলক্ষে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে সাহিত্যের পাঠক, শিক্ষক, ছাত্র এবং সমালোচকরা আলোচনা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বইটির প্রতি তাদের নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। এর একটাই কারণ : ‘ইউলিসিস’ বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস যা কথাসাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে এবং ন্যারেটিভকে মডার্নিজমের উৎকর্ষে পৌঁছে দিয়ে পোস্ট-মডার্নিজমে উত্তরণের পথ প্রশস্ত করেছে।
ভাষা এবং আঙ্গিকের জটিলতার জন্য বইটি সহজপাঠ্য নয়, যদি না ব্যাখ্যামূলক বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। তারপরও জনপ্রিয় বলতে যা বোঝায়, সেই শ্রেণির বইয়ের মধ্যে পরিগণিত হবে না এই বই। সাধারণত বটেই, পরিশ্রমী এবং মনোযোগী পাঠকের জন্যও বইটি চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকবে, যেমন হয়ে এসেছে এতকাল। যেহেতু ইউলিসিস পাঠ একটা চ্যালেঞ্জ, সে জন্য, অনেকে না হলেও, সম্মানজনক সংখ্যার পাঠক এই বই পড়বে, যতদিন কথাসাহিত্যের দিন শেষ না হয়। আর এটা তো আপ্তবাক্য হয়ে গিয়েছে যে, The death of novel has been exaggerated. ইউলিসিস বই আকারে বের হওয়ার আগে, ১৯১৯ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘দি ইগোইস্ট’ পত্রিকায় কয়েক কিস্তিতে ছাপা হয়েছিল। এর সম্পাদিকা ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক হ্যারিয়েট উইভার, যিনি জয়েসের লেখার ভক্ত হিসেবে তাকে মাঝেমধ্যেই সাহায্য করে অর্থ সংকট থেকে রক্ষা করেছেন। তার পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর ছাপাখানার মালিক এবং পত্রিকার বেশ কিছু পাঠক প্রতিবাদ জানায়। এর ফলে হ্যারিয়েট উইভারকে পদত্যাগ করতে হয়।
প্রায় একই সময়ে, ১৯১৮ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত, ‘ইউলিসিস’ ধারাবাহিকভাবে নিউইয়র্ক থেকে ‘দ্য লিটল রিভিউ’ পত্রিকায় বের হচ্ছিল। চার কিস্তি বের হওয়ার পর অশ্লীলতার অভিযোগে কোর্টের আদেশে পত্রিকার সব কপি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং সম্পাদকদ্বয় ফৌজদারি মামলার আসামি হোন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে বইটির আর কোনো অংশ ছাপা যাবে না মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। দায়ের করা মামলার রায় বের হয় ১৯৩৩ সালে, ১৩ বছর পর। নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্টের বিচারক, জন উলসে তার রায়ে ‘ইউলিসিস’ উপন্যাসের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলেন, বইটি An amazing tour de force, which, on account of its style and and literary ambition could not be considered obscene. তিনি আরও যোগ করেন, Ulysses is a sincere and serious attempt to devise a new literary method for the observation and description of mankind. উপসংহারে তিনি বলেন, While the effect of of Ulysses is in places somewhat emetic, nowhere does it tend to be an aphrodisiac. তার এ রায় আপিল বিভাগের দুজন বিচারক সমর্থন করেন। বিচারক লার্নেড হ্যান্ড তার রায়ে বলেনthe offending passages are clearly necessary to the epic of the soul as Joyce conceived it নিউইয়র্ক আদালতে মামলা শুরু হওয়ার পর প্রথম সারির আমেরিকান ঔপন্যাসিক, জন ডস প্যাসজ এবং এফ স্কট ফিটজেরাল্ড উপন্যাসটির পক্ষে মত দিয়ে বলেন, it is a modern classic in every sense of the word নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ১৯৩৪ সাল থেকে আমেরিকায় ‘ইউলিসিস’ বৈধভাবে বইয়ের আকারে ছাপা হয়ে বের হয়। ইংল্যান্ডে বইটির ছাপা শুরু হয় এর দুই বছর পর, ১৯৩৬ সালে। কিন্তু জয়েসের নিজ দেশ, আয়ারল্যান্ডে বইটি নিষিদ্ধ না হলেও ছাপা হয়ে বের হতে সময় নেয় আরও এক যুগ। এর পেছনে ছিল ক্যাথলিক চার্চের নীরব নেতিবাচক ভূমিকা।
আমরা সময়ের দিক থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়েছি। এখন ফেরা যাক ১৯২০ সালে প্যারিস শহরে, যেখানে এজরা পাউন্ডের পরামর্শে জয়েস সপরিবারে বাস করছিলেন। ‘ইগোইস্ট’ এবং ‘দি লিটল রিভিউ’ পত্রিকায় বইটি ছাপা বন্ধ এবং অশ্লীলতার জন্য মামলা শুরু হওয়ার পর কোনো প্রকাশক ছাপানোর সাহস দেখায়নি। তখন প্যারিসের লেফট ব্যানকে অবস্থিত ‘শেকসপিয়ার অ্যান্ড কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠাতা-মালিক, মার্কিন নারী সিলভিয়া বিচ এগিয়ে আসেন প্রকাশক হিসেবে, যদিও এর আগে দোকানে বই বিক্রি ছাড়া প্রকাশনায় হাত দেননি তিনি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১৯২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি (জয়েসের জন্মদিন) ইউলিসিস বইয়ের আকারে দিনের আলো দেখতে পায়। কিন্তু বইটি বিতর্কিত হওয়ার জন্য ‘জনপ্রিয়’ হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে ইংল্যান্ড বা আমেরিকায় বিক্রি করার উপায় ছিল না। চোরাই পথে (শেকসপিয়ারের নাটকের প্রচ্ছদ ব্যবহার করে) পাঠাবার চেষ্টা করা হলেও তা ধরা পড়ে যায়। বন্দরেই ব্রিটিশ শুল্ক বিভাগ এবং আমেরিকার পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ সব কপি বাজেয়াপ্ত করে নষ্ট করে ফেলে। জয়েসের চরম আর্থিক সংকটের সময় তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন হ্যারিয়েট উইভার।
‘ইউলিসিস’ উপন্যাস বইয়ের আকারে বের হওয়ার আগেই জয়েস অকুণ্ঠ প্রশংসা এবং প্রবল সমর্থন পেয়েছিলেন আধুনিকতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত এজরা পাউন্ডের কাছ থেকে, যার স্লোগান ছিল make it new আধুনিকতার আরেক পথিকৃত টিএস এলিয়ট ইউলিসিস বের হওয়ার পর লিখলেন, instead of the narrative method we may now use the mythical method. তিনি এও বললেন যে, ‘ইউলিসিস’ বের হওয়ার পর গতানুতিক উপন্যাস লেখা বন্ধ হয়ে যাবে।
ডাব্লিউবি ইয়েটস প্রথমে বইটির সমালোচনা করলেও পরে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন তিনি বইটির গভীরতা (capacity) বুঝতে পারেননি। তিনি উপন্যাসে যে ‘heroic quality’ বিধৃত, তার প্রশংসা করেন।
ইংল্যান্ডে বা আমেরিকায় ‘ইউলিসিস’ নিষিদ্ধ হলেও সিলভিয়া বিচের দোকান থেকে কিনে যারা পড়েছে এবং সামান্য বুঝতে পেরেছে, তাদের উৎসাহে ১৯২৪ সাল থেকে প্রতি বছর ১৬ জুন তারিখে ব্লুমস ডে উদযাপিত হতে থাকে। এ বিষয়টি জয়েস এক চিঠিতে লিখে তার শুভার্থী কহ্যারিয়েট উইভারকে জানান। প্রথম দিকে এদিনটি পালনের উদ্দেশ্য ছিল ‘ইউলিসিস’ পাঠের জন্য উৎসাহী গোষ্ঠী গড়ে তোলা। ক্রমে এই দিনের উদযাপনে ভৌগোলিক পরিধি এবং কর্মসূচির বিস্তার লাভ ঘটে। ১৯৫৪ সালে, জয়েসের মৃত্যুর এক যুগ পর, ব্লুমস ডের ৫০তম বার্ষিকীতে ডাবলিন শহরে সারা দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যার মধ্যে ছিল সেসব রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং পানশালায় গিয়ে পান করা যেখানে ইউলিসিসের চরিত্ররা ১৯০৪ সালের ১৬ জুন হেঁটেছিল এবং পান করেছিল। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শহরে প্রতি বছর ১৬ জুন যেভাবে ব্লুমস ডে উদযাপিত হয় তার মধ্যে রয়েছে ইউলিসিস উপন্যাস থেকে পাঠ এবং বিভিন্ন দৃশ্যের অভিনয়। এ দিনের উদযাপনে রাস্তায় যারা হাঁটে তারা উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের উপযুক্ত পোশাক পরিহিত হয়ে তাদের ভূমিকা পালন করে। ২০২২ সালের ১৬ জুন ডাবলিনে ব্লুমস ডে ছিল রাস্তাঘাটে লোকে লোকারণ্য আর পুরো শহর ছিল উৎসবমূখর। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয় শতবর্ষের ব্লুমস ডে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে ইউলিসিস ভক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, কেননা তখন সেই বই প্রায় সব দোকানেই পাওয়া যায়। বইটির দুর্বোধ্যতা ভেদ করার জন্য ব্যাখ্যা দিয়ে কেউ কেউ বই লেখেন। ক্রমেই ইউলিসিস নিয়ে লেখা ব্যাপক হতে থাকে এবং একপর্যায়ে এসে এটি ‘ইন্ডাস্ট্রিতে’ পরিণত হয়। ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য বিভাগের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ‘ইউলিসিস’ নিয়ে লেখালেখি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এখন এমন অনেক অধ্যাপক আছেন যারা শুধু ইউলিসিস পড়ান এবং সেই জন্য ‘জয়েস স্কলার’ হিসেবে পরিচিত। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং আমেরিকার প্রায় প্রতিটি বড় বইয়ের দোকানে শুধু ইউলিসিস উপন্যাস নয়, তার ওপর লেখা টীকাভাষ্য, ব্যাখ্যামূলক লেখা ইত্যাদি পাঠক সহায়ক সব ধরনের বই পাওয়া যায়। এসব বইয়ের সাহায্য নিয়ে পড়লে ইউলিসিস পাঠ অনেকটাই সহজ মনে হয়। আর কোনো উপন্যাসের ওপর এমন বিপুলসংখ্যক বইপত্র বের হয়েছে, তার দৃষ্টান্ত নেই। আমাজনের মতো ঘরে বই পৌঁছে দেওয়ার প্রতিষ্ঠান বাজারে আসায় ইউলিসিসসংক্রান্ত বই কিনতে বইয়ের দোকানে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে খ্যাতিমান জয়েস স্কলারদের কথা শোনার জন্য ইউটিউবে বা গুগল সার্চ করলেই যখন খুশি তাদের কথা শোনা যায়। ইউলিসিসের শতবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইনে এ বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা শোনার সুযোগ বিস্তৃত হয়েছে।
২০০৪ সালে ব্লুমস ডের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ডাবলিন শহরে পাঁচ মাসব্যাপী এক উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন ভোরে অংশগ্রহণকারীদের বিনামূল্যে আইরিশ প্রাতরাশ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
জয়েস কেন উপন্যাসটি ১৯০৪ সালের ১৬ তারিখে শুরু এবং শেষ করেন? এর কারণ শুনলে তিনি যে খুবই সেন্টিমেন্টাল এবং রোমান্টিক প্রবণতার মানুষ ছিলেন তা বোঝা যাবে। এদিনটিতেই তিনি প্রথমবার তার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গিনী নোরা বারনাকলের সঙ্গে ডেটিং করেন এবং একত্রে সময় কাটান। ১৯০৫ সালে তারা দুজন ডাবলিন ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ইউরোপে চলে যান। ২৭ বছর একসঙ্গে থাকা এবং পুত্র-কন্যার জন্মের পর তাদের বিয়ে হয়, তাও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নয়, আদালতে সিভিল ম্যারেজ।
১৯৩৪ সালের ২৯ জানুয়ারি সংখ্যায় তাদের প্রচ্ছদ কাহিনীতে আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন লিখেছিল Trusting readers who plunge in hopefully to a smooth beginning soon find themselves floundering lin troubled waters. Arrogant author Joyce gives them no help, lets them swim or sink. But thanks to exploratory works of critics, and notably such an exegetical commentaty as Stuart Gilbert’s James Joyce’s Ulysses (Time Janury 5,1931 উল্লিখিত),the plain reader can now literally found out what Ulysses is all about..আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ইউলিসিস বৈধভাবে এসে পৌঁছায়। টাইম ম্যাগাজিন ওপরের একই সংখ্যায় (২৯ জানুয়ারি, ১৯৩৪) সেই উপলক্ষে লেখে Strictly speaking, Ulysses did not so much disembark as come out of hiding, garbed in new and respectable garments. Ever since 1922, when the first edition of Ulysses was published in Parisp, hundreds of Americans have smuggled copies through the custom or bought from bookleggers. But this week, on the strength of Federal Judge John Munro Woolsey’s decision that Ulysses is not obscene (Time December 18, 1934), Random House was able to publish the first edition of the book ever legally printed in any Englishspeaking country ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে, এখনো হচ্ছে, যে নিরবচ্ছিন্ন সৃষ্টির কারণে ঠাট্টা করে এ বিপুল প্রকাশনাকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’র সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে। গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় ইংরেজ চিত্রশিল্পী ফ্রানক বাজেনের লেখা ঔধসবং James Joyce and the Making of Ulysses (1934 (১৯৩৪) যার পুনর্মুদ্রণ হয়েছে বেশ কয়েকবার। জয়েস যখন যুদ্ধ এড়াবার জন্য ত্রিয়েসত থেকে জুরিখে তার আস্তানা গেড়েছেন এবং আবার ‘ইউলিসিস’ লেখা শুরু করেন, একই সময়ে তার প্রতিবেশী ছিলেন ইংরেজ এ চিত্রশিল্পী। তিনি বাজেনের সঙ্গে বইটি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করতেন এবং তার মতামত জানতে চাইতেন। বাজেন তার বইতে বইটি কীভাবে ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে, সে কথা লিখেছেন।
গত একশ বছরে ইউলিসিস নিয়ে যে বিষয় গবেষক-স্কলারদের সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে তা হলো বইটির কোন এডিশন মৌলিক? ১৯২২ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকাশক বইটির যে এডিশন বের করেছে তার কোনোটাই ত্রুটিহীন নয়, এমনকি সিলভিয়া বিচ প্রথম যে সংস্করণ বের করেন, সেটিও নয়। আশির দশকে এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির অবসানের জন্য মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যান্স ওয়াল্টার গেবলার এবং তার গবেষক দল অনেক অনুসন্ধানের পর যে এডিশনকে প্রামান্য বলে স্থির করেন তাও সমালোচনার মুখে টেকেনি। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত এই এডিশন পদ্ধতিগত এবং টেক্সটের ভুলের জন্য সর্ববাদীসম্মত হতে পারল না। তা সত্ত্বেও অনেকের মতে গেবলারের এ এডিশনই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম ভুল রয়েছে। প্রামাণ্য বলা না গেলেও এ এডিশন সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য।
কোনটি প্রামাণ্য এডিশন তা নির্ধারণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে এ কারণে যে, জয়েস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকাশককে যে কপি দিয়েছিলেন সে সব হুবহু এক ছিল না। প্রতিটিতে তিনি ভিন্ন সংশোধন করেছেন। আবার একই খসড়ার কপি প্রেস থেকে প্রুফ দেখার জন্য পাঠানো হলে তিনি নতুন করে সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। এভাবে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে মূল পান্ডুলিপিতে সংশোধন করে যাওয়ার ফলে কোন এডিশনে যে চূড়ান্ত সংশোধন করেছেন তিনি, তা বোঝা বেশ কঠিন।
জয়েসের জীবদ্দশায় না হলেও ইউলিসিস যে কালজয়ী উপন্যাস বা ‘ক্লাসিক’, এই ঐকমত্যে আসতে খুব সময় নেয়নি। ক্লাসিকের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, কালনিরপেক্ষতা, তার উল্লেখে কেউ কেউ বলেছেন যে ইউলিসিস ঐতিহাসিক উপন্যাস, কালনিরপেক্ষ নয়। এর সপক্ষে বইটিতে আয়ারল্যান্ডের বিশেষ সময়ের (ব্রিটিশ উপনিবেশ) ঘটনার এবং চরিত্রের উল্লেখের কথা বলা হয়েছে। এমার নোলান-এর বই James Joyce and Nationalism (1995) এই বিষয়টির ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা যায় ‘ইউলিসিস’ যদি পোস্ট-কলোনিয়াল ধারার বই হয়ে থাকে তাহলেও তার ক্লাসিক চরিত্র ক্ষুন্ন হয় না।
আগেই বলা হয়েছে, গত একশ বছরে বিভিন্ন সহায়ক বইপত্র বের হওয়ার ফলে ইউলিসিস পাঠের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ বৃদ্ধি জনপ্রিয়তার প্রমাণ নয়। জয়েস জনপ্রিয় লেখক হতে চানওনি। তিনি বিশ্বাস করেছেন উপন্যাস কেবল সৃজনশীলতার প্রকাশ নয়, মননশীলতার চারণভূমিও বটে। তিনি আশা করেছেন ইউলিসিস তারা পড়বে যাদের মধ্যে জ্ঞানচর্চা আছে, যারা ধৈর্যশীল, নতুন কিছু দেখে কৌতূহলী এবং মানসিক পরিশ্রম করে পড়তে যাদের অনীহা নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন পাঠকের সংখ্যা সর্বকালেই সীমিত।
হাসনাত আবদুল হাই; বরেণ্য কথাসাহিত্যিক
রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে এক শিশুর জন্ম দিয়েছেন সোনিয়া রানী রায় নামের এক নারী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্টেশনের ফার্স্ট এইড সেন্টারে তিনি ফুটফুটে শিশুটির জন্ম দেন। মেট্রোরেলের চিকিৎসক যাত্রী ও রোভার স্কাউটের এক নারী সদস্যের সহায়তায় সোনিয়া ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। পরে মা ও সন্তানকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজধানীর ধানম-ির একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া রানী রায় আগারগাঁও স্টেশনে নামার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে স্টেশনের ফার্স্ট এইড সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর দিয়াবাড়ী (উত্তরা) স্টেশনে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন তিনি। ওইদিনই দুই শতাধিক ভ্রমণসঙ্গী নিয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করেন সরকারপ্রধান।
বর্ণিল সাজে সেজেছে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের স্থায়ী ভেন্যুতে বসা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৭তম আসর। প্রথম কয়েক দিন কিছুটা অগোছালো থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে জমে উঠতে শুরু করেছে মেলা। প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। তবে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) এবং তিনশ’ ফুট সড়ক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত এই দুটি সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে মেলায় আসতে পথে পথে ভোগান্তির শিকার হন দর্শনার্থীরা। এমনকি অনেকে মেলায় আসার পথে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে শেষমেশ মাঝপথ থেকেই বাড়ি ফিরে যান। পূর্বাচল উপশহরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না এক্সিবিশন সেন্টারের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর। মেলা সফল করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তুতির রং অনেকটাই ফিকে হয়ে আছে যানজটের কারণে। নরসিংদী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও পূর্বাঞ্চল এলাকার দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে গেলে এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক ব্যবহার করতে হয়। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও উত্তরাঞ্চলের দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে হলে তিনশ’ ফুট সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের উন্নয়নকাজ চলায় শুরুর দিন থেকেই মেলায় আসতে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। তিনশ ফুট সড়ক ছিল অনেকটাই যানজটমুক্ত। তবে আজ শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা। সিলেট, ভৈরব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও ও মেঘনাসহ এর আশপাশের অঞ্চলের মানুষ ইজতেমায় যাওয়ার জন্য এশিয়ান বাইপাস সড়ক ও তিনশ ফুট সড়ক ব্যবহার করছে। এ কারণে সড়ক দুটিতে যান চলাচল বেড়ে তিনশ ফুট সড়কেও দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। দুটি সড়কেই যানজটের কারণে মেলায় আসতে দর্শনার্থীদের পথে পথে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অনেক দর্শনার্থী মাঝরাস্তা থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এছাড়া কাঞ্চন টোল প্লাজায় টোল নেওয়ায় ধীরগতির কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এশিয়ান বাইপাস ও তিনশ ফুট সড়ক দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ উত্তরবঙ্গের মালবাহী অনেক ট্রাক চলাচল করছে। এসব ট্রাক তুলনামূলক ধীরে চলার কারণেও বাইপাস সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন রূপসী-কাঞ্চন সড়ককে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করতে বললেও তা কাজে আসছে না। এছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মেলা পর্যন্ত সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। ওইসব এলাকার মানুষও সড়কটি দিয়ে আসলে যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছেন। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের যথাযথ তৎপরতার অভাবে বাইপাস সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়। এই দুদিন যানজট আরও প্রকট আকার নেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গতকাল রাজধানী মগবাজার থেকে মেলায় আসা নীরব নামে এক দর্শনার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনশ ফুট ও এশিয়ান বাইপাস সড়ক মানেই ভোগান্তি। অনেক ভোগান্তির পর মেলায় আসতে পেরেছি। বাড়ি ফিরতে কতক্ষণ লাগবে আল্লাহই ভালো জানে।’
ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে আসা শাহজালাল বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও তিনশ ফুট সড়ক দিয়ে মেলায় এসেছিলাম। সেদিন যানজট দেখিনি। কিন্তু আজ মেলায় আসতে গিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা যানজটে আটকে বসে ছিলাম। একপর্যায়ে অনেকটা পথ হেঁটে মেলায় আসতে হয়েছে। অনেক দর্শনার্থীকে দেখেছি মাঝরাস্তা থেকেই বাড়ি ফিরে যেতে।’
যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় ঘুরতে আসা কিবরিয়া বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু যানজটের কারণে আমার ছোট মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাই ফিরে যাচ্ছি বাড়িতে।’
মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দিচ্ছেন। যাতে করে মেলায় দর্শনার্থী বেশি বেশি আসে। কিন্তু যানজটের কারণে দর্শনার্থী কমছে। যানজটের কারণে দর্শনার্থীরা আসতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। শুক্র ও শনিবারও যদি মেলায় আসতে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ যানজট পোহাতে হয় তাহলে লোকসানের মুখোমুখি হবেন ব্যবসায়ীরা।
মেলায় রোগীদের বিনামূল্যে সেবাদানের জন্য বিআরবি হাসপাতালের একটি স্টল রয়েছে। সেখানকার সিনিয়র স্টাফ নার্স আলামিন বলেন, ‘আমরা দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে ব্লাড প্রেসার, বিএমআই ও ডায়াবেটিস চেক করছি। আমাদের স্টলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকেন। তিনি ফ্রিতে রোগী দেখেন। এছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করছি আমরা। কিন্তু তিনশ ফুট সড়কে যানজট থাকার কারণে আজ দর্শনার্থী কিছুটা কম।’
এদিকে হাইওয়ে পুলিশের দাবি তারা যানজট নিরসনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, ‘যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তবে যানজট নিরসনে চালকদেরও সচেতন হতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, ‘এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। উন্নয়নকাজ বন্ধ রাখা তো সম্ভব না। তবে পুলিশ যানজট নিরসনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবি সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৈাধুরী বলেন, ‘যানজটের বিষয়টি দেখছে পুলিশ প্রশাসন। যানজটের কারণে মেলায় আসতে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে এটি সত্যি। কিন্তু পুলিশও যানজট নিরসনে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।’
দুর্নীতি করে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল খালেক অবশেষে স্থায়ী বরখাস্ত হয়েছেন। গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এতদিন বরখাস্তের বিষয়টি গোপন থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার ফাঁস হয়ে যায়। বেবিচকের সদস্য প্রশাসন মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বরখাস্তের কথা বলা হয়েছে। ১৫ বছরের চাকরি জীবনে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কানাডায় খালেকের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে গত ২৭ জুলাই দেশ রূপান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খালেকের মতো বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানও ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তাকেও যেকোনো সময় বরখাস্ত করা হবে বলে বেবিচক সূত্র জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বেবিচকের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার পর বেশ তোলপাড় হয়। এ নিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেবিচক চেয়ারম্যান কঠোর নির্দেশনা দেন। অন্যদিকে নিজেদের রক্ষা করতে ওই দুই কর্মকর্তা নানা উপায়ে দেন-দরবার চালান। কিন্তু সংস্থাটির চেয়ারম্যান কঠোর থাকায় শেষরক্ষা হয়নি।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানকেও যেকোনো সময় বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে জানান বেবিচকের এক কর্মকর্তা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেক ওপরের মহল থেকে নানাভাবে তদবির করেছিলেন বরখাস্তের হাত থেকে বাঁচতে। চেয়ারম্যানের কাছে একাধিক ফোন এসেছে। শহীদুজ্জামানও একইভাবে দেন-দরবার করেছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকদের অবহিতও করেছিলেন।
বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, আবদুল খালেক চাকরি জীবনের শুরু থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। চাকরিও পান তদবির ও অর্থের জোরে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার পর তার দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে তিনি টাকা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি দিয়েছেন।
অন্যদিকে, বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান ২০০০ সালের ২২ নভেম্বর চাকরিতে যোগ দেন। চাকরির কয়েক মাস পরই তিনি জড়িয়ে পড়েন টেন্ডার বাণিজ্যে। মোটা অঙ্কের অর্থ কামান। অন্তত ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি নিউইয়র্কের জ্যামাইকা অ্যাভিনিউতে একটি বাড়ি কিনেছেন। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের হরিকুমারিয়ার শহীদ বাচ্চু সরণি এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে শহীদুজ্জামান আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ২১ দিনের ছুটি নেন। তারপর থেকে তিনি ‘পলাতক’।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।