
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নিযার্তন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক এবং নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণের দাবিতে আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচি আরও তিনদিন বেড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির কর্মবিরতির ফলে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনজীবী সমিতির সভায় নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী আগামী ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। বিষয়টির সুরাহা হলে তবেই তারা কাজে যোগ দেবেন। আইনজীবীরা তাদের দাবিতে অটল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. তানবীর ভূঞা বলেন, বৃহস্পতিবারের আইনজীবী সমিতির সভায় রবিবার থেকে নতুন করে তিনদিনের কর্মবিরতি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে টানা ১২দিন ধরে, যা কর্মদিবস হিসেবে ১০ দিন। দুর্ভোগে রয়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। তবে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আদালতে নিয়মিত আসছেন। আইনজীবীদের বেশিরভাগ আদালতে এলেও কর্মবিরতি থাকায় তারা শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন না। অচলাবস্থার কারণে আদালতের সঙ্গে যুক্ত কর্মজীবী মানুষদের দুর্ভোগও বাড়ছে। আয় কমে যাওয়ায় জীবন-জীবিকা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তারা।
এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও বিচারকের নামে কুরুচিপূর্ণ সেøাগানসহ বিচারকাজে বিঘœ ঘটানোর অভিযোগে দু’দফায় ২৪ আইনজীবীকে উচ্চ আদালতে তলব করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত অমান্য করে একজন আইনজীবী মামলা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি’র সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে আইনজীবীদের সাক্ষাতের বিষয়টি সমস্যা সমাধানে আশা জাগিয়েছে। আইনমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে ‘জট’ খোলার সম্ভাবনা দেখছেন তারা। সিদ্ধান্ত এলে তারা দ্রুত কাজে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। অথচ এর মধ্যেই দেওয়া হলো আইনজীবীদের নতুন কর্মসূচি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান বাবুল বলেন, মঙ্গলবার রাতে আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি আমাদের আশ^স্ত করেছেন। আশা করি উনি সমাধান করে দিলে আমরা দ্রুত কাজে যোগ দিতে পারব। তিনি বলেন, দুই বিচারকের প্রত্যাহার এবং নাজির মোমিনুলের প্রত্যাহার দাবি করে আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে লিখিত দিয়েছি। নতুন কর্মসূচি দেওয়া হলেও এর মধ্যে সমস্যা সমাধান হলে আইনজীবীরা কাজে যোগ দেবেন।
আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকের অশোভন আচরণের অভিযোগ এনে ২৬ ডিসেম্বর সভা করে ১ জানুয়ারি থেকে সংশ্লিষ্ট আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা আইনজীবী সমিতি। তারা দুজন বিচারক ও একজন নাজিরের প্রত্যাহার দাবি করেন। অন্যদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৩ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারীরা।
এজলাসে ঢুকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৬ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ তিন আইনজীবীকে আগামী ১৭ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন। অপরদিকে বিচারকের নামে কুরুচিপূর্ণ সেøাগান দেওয়ার অভিযোগে আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ জনকে ২৩ জানুয়ারি আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-আজিজের বেঞ্চ।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখ লাখ মুসল্লি জড়ো হয়েছেন টঙ্গীর তুরাগতীরে। আজ শুক্রবার বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার ৫৬তম আয়োজন। আমবয়ান করবেন তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বি পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকে বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের উদ্দেশে ইজতেমার মূল মঞ্চ থেকে নানা উপদেশমূলক বক্তব্য রাখা শুরু হয়েছে।
আগামী রবিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ২০ জানুয়ারি। প্রথম পর্বের ইজতেমায় অংশ নিতে বুধবার থেকেই মুসল্লিরা তুরাগতীরে আসতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত মুসল্লিদের ঢল আরও বাড়তে থাকে। করোনার কারণে দুই বছর ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ বছর বিপুলসংখ্যক মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে হাজির হয়েছেন। তারা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। গতকাল মুসল্লিদের উদ্দেশে প্রস্তুতিমূলক বয়ান দেওয়া হয়। এতে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের তিন দিন অবস্থানের নিয়মকানুন সম্পর্কে বলা হয়।
বিদেশি মেহমান : ইজতেমা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার বিদেশি মেহমান এসেছেন। বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ২০ হাজার মেহমান এবারের ইজতেমা ময়দানে অংশগ্রহণ করতে পারেন। বিদেশি মেহমানদের মধ্যে যারা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে চার চিল্লায় ছিলেন তাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের পথে রয়েছেন। তারা আজকের মধ্যে ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বৃহত্তর জুমার নামাজ : আজ শুক্রবার দেশের সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমা ময়দানে। এতে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুমার নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি জুমার জামাতে শরিক হবেন। জুমার নামাজে কাকরাইল মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের ইমামতি করবেন বলে জানা গেছে।
ইজতেমা মাঠের মুরব্বিরা জানান, এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলিগ জামাতের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলিগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতি কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।
পুলিশের ব্রিফিং প্যারেড : বিশ্ব ইজতেমায় আসা লাখ লাখ মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে গতকাল দুপুরে পুলিশের ব্রিফিং প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা ও আশপাশ এলাকায় জল, স্থল ও আকাশপথ ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা বলবৎ থাকবে। ইজতেমাস্থল ও আশপাশ এলাকায় আমাদের পর্যাপ্তসংখ্যক জনবল ভেতরে-বাইরে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিয়োজিত থাকবে। এ ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদাভাবে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে।
গাড়ি পার্কিং : গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন জানান, ইজতেমা চলাকালে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহনের জন্য ১৪টি পার্কিং পয়েন্ট রাখা হয়েছে। যেহেতু দেশের চারদিক থেকে বিভিন্ন যানবাহনে করে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানের দিকে আসবেন তাই সংশ্লিষ্ট সড়কের খোলা জায়গা ও মাঠগুলোতে ওইসব যানবাহন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যান চলাচল নির্দেশনা : ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য উত্তরবঙ্গ হতে আসা টঙ্গী-ঢাকাগামী যানবাহন চান্দনা-চৌরাস্তা হয়ে কোনাবাড়ী, চন্দ্রা-ত্রিমোড়, বাইমাইল, নবীনগর, আমিনবাজার হয়ে চলাচল করবে।
আখেরি মোনাজাতের দিন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা-চৌরাস্তা হতে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত কালীগঞ্জ-টঙ্গী সড়কের মাজুখান ব্রিজ থেকে স্টেশন রোড ওভারব্রিজ পর্যন্ত এবং কামারপাড়া ব্রিজ থেকে মুন্নু টেক্সটাইল মিলগেট পর্যন্ত সড়কপথ বন্ধ থাকবে। এর আগে ১৪ ও ২১ জানুয়ারি রাত ১০টা হতে টঙ্গীর নিমতলী রেলক্রসিং, কামারপাড়া ব্রিজ ও ভোগড়া বাইপাস দিয়ে ইজতেমাস্থলের দিকে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে বিকল্প হিসেবে ভোগড়া বাইপাস দিয়ে কোনাবাড়ী ও চন্দ্রা হয়ে এবং বিপরীত দিকে ৩০০ ফুট সড়ক দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে।
চিকিৎসাসেবা : মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইজতেমা ময়দানে ১০টি অস্থায়ী মেডিকেল টিম থাকবে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান। গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, বিশেষায়িত মেডিকেল টিম রয়েছে ছয়টি। ১৪টি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন গাজীপুর, বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকা- সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুর রহমান কিরণ জানান, বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের ওজু, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরববরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইজতেমা চলাকালে বর্জ্য ট্রাকের মাধ্যমে দিন-রাত অপসারণ করা হবে। টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার সিনেমা হল বন্ধ এবং দেয়ালের অশ্লীল পোস্টার অপসারণ করা হয়েছে।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প : টঙ্গীর মুন্নু নগর এলাকায় মুসল্লিদের জন্য হামদর্দ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুর সিভিল সার্জন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ আয়ুর্বেদিক ইউনানি হারবাল মেডিকেল সোসাইটি, যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশন, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জনকল্যাণ ফ্রি- মেডিক্যাল ক্যাম্প, ইবনে সিনা, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প গতকাল থেকে মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, চিকিৎসা নিতে আসা মুসল্লিদের অধিকাংশই জ্বর, ঠান্ডা, পেটের পীড়াজনিত রোগে আক্রান্ত।
দুই মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমা ময়দানে দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল তাদের মৃত্যু হয়। তারা হলেন গাজীপুর শহরের ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০) এবং সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের হেমুবটপাড়ার মো. নুরুল হক (৬৩)।
বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আবদুন নূর জানান, বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে মারা গেছেন তাবলিগ জামায়াতের গাজীপুর মারকাজের শূরা সদস্য তৈয়ব। আর নুরুল হক অ্যাজমা রোগে ভুগছিলেন।
আজ ১৩ জানুয়ারি জেমস জয়েসের প্রয়াণ দিবস, তিনি জন্মেছিলেন ২ ফেব্রুয়ারি, ১৮৮২ সালে। তার মৃত্যুর বছর ১৯৪১, যে হিসাবে তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ৫৯ বছর। এই নাতিদীর্ঘ জীবনে তিনি লিখেছিলেন কম, কিন্তু ১৯০৪ সালে প্রথম লেখা গল্প সংকলন ‘ডাব্লিনার্স’ লিখেই তিনি সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তার গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং চরিত্র বিশ্লেষণের জন্য। তার পরবর্তী উপন্যাস, ‘এ পোর্ট্রটে অব দি আর্টিস্ট এস এ ইয়াং ম্যান’ (১৯১৬) ছিল আত্মজৈবনিক, যা কথাশিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯১৫ থেকে শুরু করে (এর বীজ রোপিত হয় ১৯০৫ সালে) ১৯২২ সালে শেষ করা ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস শুধু বিশাল কলেবরের ছিল না, হয়েছিল বিতর্কিত, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্ব সাহিত্যে কালজয়ী। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর গত বছর, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস প্রকাশনার একশ বছর পূর্তি হয়েছে। এ উপলক্ষে পৃথিবীর প্রায় সব দেশে সাহিত্যের পাঠক, শিক্ষক, ছাত্র এবং সমালোচকরা আলোচনা ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বইটির প্রতি তাদের নিরবচ্ছিন্ন আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। এর একটাই কারণ : ‘ইউলিসিস’ বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস যা কথাসাহিত্যে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে এবং ন্যারেটিভকে মডার্নিজমের উৎকর্ষে পৌঁছে দিয়ে পোস্ট-মডার্নিজমে উত্তরণের পথ প্রশস্ত করেছে।
ভাষা এবং আঙ্গিকের জটিলতার জন্য বইটি সহজপাঠ্য নয়, যদি না ব্যাখ্যামূলক বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়। তারপরও জনপ্রিয় বলতে যা বোঝায়, সেই শ্রেণির বইয়ের মধ্যে পরিগণিত হবে না এই বই। সাধারণত বটেই, পরিশ্রমী এবং মনোযোগী পাঠকের জন্যও বইটি চ্যালেঞ্জ হয়েই থাকবে, যেমন হয়ে এসেছে এতকাল। যেহেতু ইউলিসিস পাঠ একটা চ্যালেঞ্জ, সে জন্য, অনেকে না হলেও, সম্মানজনক সংখ্যার পাঠক এই বই পড়বে, যতদিন কথাসাহিত্যের দিন শেষ না হয়। আর এটা তো আপ্তবাক্য হয়ে গিয়েছে যে, The death of novel has been exaggerated. ইউলিসিস বই আকারে বের হওয়ার আগে, ১৯১৯ সালে লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘দি ইগোইস্ট’ পত্রিকায় কয়েক কিস্তিতে ছাপা হয়েছিল। এর সম্পাদিকা ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক হ্যারিয়েট উইভার, যিনি জয়েসের লেখার ভক্ত হিসেবে তাকে মাঝেমধ্যেই সাহায্য করে অর্থ সংকট থেকে রক্ষা করেছেন। তার পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর ছাপাখানার মালিক এবং পত্রিকার বেশ কিছু পাঠক প্রতিবাদ জানায়। এর ফলে হ্যারিয়েট উইভারকে পদত্যাগ করতে হয়।
প্রায় একই সময়ে, ১৯১৮ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত, ‘ইউলিসিস’ ধারাবাহিকভাবে নিউইয়র্ক থেকে ‘দ্য লিটল রিভিউ’ পত্রিকায় বের হচ্ছিল। চার কিস্তি বের হওয়ার পর অশ্লীলতার অভিযোগে কোর্টের আদেশে পত্রিকার সব কপি বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং সম্পাদকদ্বয় ফৌজদারি মামলার আসামি হোন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে বইটির আর কোনো অংশ ছাপা যাবে না মর্মে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। দায়ের করা মামলার রায় বের হয় ১৯৩৩ সালে, ১৩ বছর পর। নিউইয়র্কের ফেডারেল কোর্টের বিচারক, জন উলসে তার রায়ে ‘ইউলিসিস’ উপন্যাসের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। তিনি সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলেন, বইটি An amazing tour de force, which, on account of its style and and literary ambition could not be considered obscene. তিনি আরও যোগ করেন, Ulysses is a sincere and serious attempt to devise a new literary method for the observation and description of mankind. উপসংহারে তিনি বলেন, While the effect of of Ulysses is in places somewhat emetic, nowhere does it tend to be an aphrodisiac. তার এ রায় আপিল বিভাগের দুজন বিচারক সমর্থন করেন। বিচারক লার্নেড হ্যান্ড তার রায়ে বলেনthe offending passages are clearly necessary to the epic of the soul as Joyce conceived it নিউইয়র্ক আদালতে মামলা শুরু হওয়ার পর প্রথম সারির আমেরিকান ঔপন্যাসিক, জন ডস প্যাসজ এবং এফ স্কট ফিটজেরাল্ড উপন্যাসটির পক্ষে মত দিয়ে বলেন, it is a modern classic in every sense of the word নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ১৯৩৪ সাল থেকে আমেরিকায় ‘ইউলিসিস’ বৈধভাবে বইয়ের আকারে ছাপা হয়ে বের হয়। ইংল্যান্ডে বইটির ছাপা শুরু হয় এর দুই বছর পর, ১৯৩৬ সালে। কিন্তু জয়েসের নিজ দেশ, আয়ারল্যান্ডে বইটি নিষিদ্ধ না হলেও ছাপা হয়ে বের হতে সময় নেয় আরও এক যুগ। এর পেছনে ছিল ক্যাথলিক চার্চের নীরব নেতিবাচক ভূমিকা।
আমরা সময়ের দিক থেকে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়েছি। এখন ফেরা যাক ১৯২০ সালে প্যারিস শহরে, যেখানে এজরা পাউন্ডের পরামর্শে জয়েস সপরিবারে বাস করছিলেন। ‘ইগোইস্ট’ এবং ‘দি লিটল রিভিউ’ পত্রিকায় বইটি ছাপা বন্ধ এবং অশ্লীলতার জন্য মামলা শুরু হওয়ার পর কোনো প্রকাশক ছাপানোর সাহস দেখায়নি। তখন প্যারিসের লেফট ব্যানকে অবস্থিত ‘শেকসপিয়ার অ্যান্ড কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠাতা-মালিক, মার্কিন নারী সিলভিয়া বিচ এগিয়ে আসেন প্রকাশক হিসেবে, যদিও এর আগে দোকানে বই বিক্রি ছাড়া প্রকাশনায় হাত দেননি তিনি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ১৯২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি (জয়েসের জন্মদিন) ইউলিসিস বইয়ের আকারে দিনের আলো দেখতে পায়। কিন্তু বইটি বিতর্কিত হওয়ার জন্য ‘জনপ্রিয়’ হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে ইংল্যান্ড বা আমেরিকায় বিক্রি করার উপায় ছিল না। চোরাই পথে (শেকসপিয়ারের নাটকের প্রচ্ছদ ব্যবহার করে) পাঠাবার চেষ্টা করা হলেও তা ধরা পড়ে যায়। বন্দরেই ব্রিটিশ শুল্ক বিভাগ এবং আমেরিকার পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ সব কপি বাজেয়াপ্ত করে নষ্ট করে ফেলে। জয়েসের চরম আর্থিক সংকটের সময় তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন হ্যারিয়েট উইভার।
‘ইউলিসিস’ উপন্যাস বইয়ের আকারে বের হওয়ার আগেই জয়েস অকুণ্ঠ প্রশংসা এবং প্রবল সমর্থন পেয়েছিলেন আধুনিকতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত এজরা পাউন্ডের কাছ থেকে, যার স্লোগান ছিল make it new আধুনিকতার আরেক পথিকৃত টিএস এলিয়ট ইউলিসিস বের হওয়ার পর লিখলেন, instead of the narrative method we may now use the mythical method. তিনি এও বললেন যে, ‘ইউলিসিস’ বের হওয়ার পর গতানুতিক উপন্যাস লেখা বন্ধ হয়ে যাবে।
ডাব্লিউবি ইয়েটস প্রথমে বইটির সমালোচনা করলেও পরে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন তিনি বইটির গভীরতা (capacity) বুঝতে পারেননি। তিনি উপন্যাসে যে ‘heroic quality’ বিধৃত, তার প্রশংসা করেন।
ইংল্যান্ডে বা আমেরিকায় ‘ইউলিসিস’ নিষিদ্ধ হলেও সিলভিয়া বিচের দোকান থেকে কিনে যারা পড়েছে এবং সামান্য বুঝতে পেরেছে, তাদের উৎসাহে ১৯২৪ সাল থেকে প্রতি বছর ১৬ জুন তারিখে ব্লুমস ডে উদযাপিত হতে থাকে। এ বিষয়টি জয়েস এক চিঠিতে লিখে তার শুভার্থী কহ্যারিয়েট উইভারকে জানান। প্রথম দিকে এদিনটি পালনের উদ্দেশ্য ছিল ‘ইউলিসিস’ পাঠের জন্য উৎসাহী গোষ্ঠী গড়ে তোলা। ক্রমে এই দিনের উদযাপনে ভৌগোলিক পরিধি এবং কর্মসূচির বিস্তার লাভ ঘটে। ১৯৫৪ সালে, জয়েসের মৃত্যুর এক যুগ পর, ব্লুমস ডের ৫০তম বার্ষিকীতে ডাবলিন শহরে সারা দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যার মধ্যে ছিল সেসব রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং পানশালায় গিয়ে পান করা যেখানে ইউলিসিসের চরিত্ররা ১৯০৪ সালের ১৬ জুন হেঁটেছিল এবং পান করেছিল। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শহরে প্রতি বছর ১৬ জুন যেভাবে ব্লুমস ডে উদযাপিত হয় তার মধ্যে রয়েছে ইউলিসিস উপন্যাস থেকে পাঠ এবং বিভিন্ন দৃশ্যের অভিনয়। এ দিনের উদযাপনে রাস্তায় যারা হাঁটে তারা উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্রের উপযুক্ত পোশাক পরিহিত হয়ে তাদের ভূমিকা পালন করে। ২০২২ সালের ১৬ জুন ডাবলিনে ব্লুমস ডে ছিল রাস্তাঘাটে লোকে লোকারণ্য আর পুরো শহর ছিল উৎসবমূখর। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয় শতবর্ষের ব্লুমস ডে।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে ইউলিসিস ভক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, কেননা তখন সেই বই প্রায় সব দোকানেই পাওয়া যায়। বইটির দুর্বোধ্যতা ভেদ করার জন্য ব্যাখ্যা দিয়ে কেউ কেউ বই লেখেন। ক্রমেই ইউলিসিস নিয়ে লেখা ব্যাপক হতে থাকে এবং একপর্যায়ে এসে এটি ‘ইন্ডাস্ট্রিতে’ পরিণত হয়। ইংল্যান্ড ও আমেরিকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য বিভাগের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ‘ইউলিসিস’ নিয়ে লেখালেখি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। এখন এমন অনেক অধ্যাপক আছেন যারা শুধু ইউলিসিস পড়ান এবং সেই জন্য ‘জয়েস স্কলার’ হিসেবে পরিচিত। ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড এবং আমেরিকার প্রায় প্রতিটি বড় বইয়ের দোকানে শুধু ইউলিসিস উপন্যাস নয়, তার ওপর লেখা টীকাভাষ্য, ব্যাখ্যামূলক লেখা ইত্যাদি পাঠক সহায়ক সব ধরনের বই পাওয়া যায়। এসব বইয়ের সাহায্য নিয়ে পড়লে ইউলিসিস পাঠ অনেকটাই সহজ মনে হয়। আর কোনো উপন্যাসের ওপর এমন বিপুলসংখ্যক বইপত্র বের হয়েছে, তার দৃষ্টান্ত নেই। আমাজনের মতো ঘরে বই পৌঁছে দেওয়ার প্রতিষ্ঠান বাজারে আসায় ইউলিসিসসংক্রান্ত বই কিনতে বইয়ের দোকানে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। অন্যদিকে খ্যাতিমান জয়েস স্কলারদের কথা শোনার জন্য ইউটিউবে বা গুগল সার্চ করলেই যখন খুশি তাদের কথা শোনা যায়। ইউলিসিসের শতবার্ষিকী উপলক্ষে অনলাইনে এ বইয়ের অধ্যায়ভিত্তিক আলোচনা শোনার সুযোগ বিস্তৃত হয়েছে।
২০০৪ সালে ব্লুমস ডের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ডাবলিন শহরে পাঁচ মাসব্যাপী এক উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রতিদিন ভোরে অংশগ্রহণকারীদের বিনামূল্যে আইরিশ প্রাতরাশ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
জয়েস কেন উপন্যাসটি ১৯০৪ সালের ১৬ তারিখে শুরু এবং শেষ করেন? এর কারণ শুনলে তিনি যে খুবই সেন্টিমেন্টাল এবং রোমান্টিক প্রবণতার মানুষ ছিলেন তা বোঝা যাবে। এদিনটিতেই তিনি প্রথমবার তার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গিনী নোরা বারনাকলের সঙ্গে ডেটিং করেন এবং একত্রে সময় কাটান। ১৯০৫ সালে তারা দুজন ডাবলিন ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ইউরোপে চলে যান। ২৭ বছর একসঙ্গে থাকা এবং পুত্র-কন্যার জন্মের পর তাদের বিয়ে হয়, তাও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নয়, আদালতে সিভিল ম্যারেজ।
১৯৩৪ সালের ২৯ জানুয়ারি সংখ্যায় তাদের প্রচ্ছদ কাহিনীতে আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন লিখেছিল Trusting readers who plunge in hopefully to a smooth beginning soon find themselves floundering lin troubled waters. Arrogant author Joyce gives them no help, lets them swim or sink. But thanks to exploratory works of critics, and notably such an exegetical commentaty as Stuart Gilbert’s James Joyce’s Ulysses (Time Janury 5,1931 উল্লিখিত),the plain reader can now literally found out what Ulysses is all about..আমেরিকায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর ইউলিসিস বৈধভাবে এসে পৌঁছায়। টাইম ম্যাগাজিন ওপরের একই সংখ্যায় (২৯ জানুয়ারি, ১৯৩৪) সেই উপলক্ষে লেখে Strictly speaking, Ulysses did not so much disembark as come out of hiding, garbed in new and respectable garments. Ever since 1922, when the first edition of Ulysses was published in Parisp, hundreds of Americans have smuggled copies through the custom or bought from bookleggers. But this week, on the strength of Federal Judge John Munro Woolsey’s decision that Ulysses is not obscene (Time December 18, 1934), Random House was able to publish the first edition of the book ever legally printed in any Englishspeaking country ‘ইউলিসিস’ উপন্যাস নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে, এখনো হচ্ছে, যে নিরবচ্ছিন্ন সৃষ্টির কারণে ঠাট্টা করে এ বিপুল প্রকাশনাকে ‘ইন্ডাস্ট্রি’র সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে। গুরুত্বের দিক দিয়ে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় ইংরেজ চিত্রশিল্পী ফ্রানক বাজেনের লেখা ঔধসবং James Joyce and the Making of Ulysses (1934 (১৯৩৪) যার পুনর্মুদ্রণ হয়েছে বেশ কয়েকবার। জয়েস যখন যুদ্ধ এড়াবার জন্য ত্রিয়েসত থেকে জুরিখে তার আস্তানা গেড়েছেন এবং আবার ‘ইউলিসিস’ লেখা শুরু করেন, একই সময়ে তার প্রতিবেশী ছিলেন ইংরেজ এ চিত্রশিল্পী। তিনি বাজেনের সঙ্গে বইটি নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করতেন এবং তার মতামত জানতে চাইতেন। বাজেন তার বইতে বইটি কীভাবে ক্রমাগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে, সে কথা লিখেছেন।
গত একশ বছরে ইউলিসিস নিয়ে যে বিষয় গবেষক-স্কলারদের সবচেয়ে বেশি ভাবিয়েছে তা হলো বইটির কোন এডিশন মৌলিক? ১৯২২ থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকাশক বইটির যে এডিশন বের করেছে তার কোনোটাই ত্রুটিহীন নয়, এমনকি সিলভিয়া বিচ প্রথম যে সংস্করণ বের করেন, সেটিও নয়। আশির দশকে এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির অবসানের জন্য মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যান্স ওয়াল্টার গেবলার এবং তার গবেষক দল অনেক অনুসন্ধানের পর যে এডিশনকে প্রামান্য বলে স্থির করেন তাও সমালোচনার মুখে টেকেনি। ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত এই এডিশন পদ্ধতিগত এবং টেক্সটের ভুলের জন্য সর্ববাদীসম্মত হতে পারল না। তা সত্ত্বেও অনেকের মতে গেবলারের এ এডিশনই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম ভুল রয়েছে। প্রামাণ্য বলা না গেলেও এ এডিশন সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য।
কোনটি প্রামাণ্য এডিশন তা নির্ধারণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে এ কারণে যে, জয়েস বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকাশককে যে কপি দিয়েছিলেন সে সব হুবহু এক ছিল না। প্রতিটিতে তিনি ভিন্ন সংশোধন করেছেন। আবার একই খসড়ার কপি প্রেস থেকে প্রুফ দেখার জন্য পাঠানো হলে তিনি নতুন করে সংযোজন-বিয়োজন করেছেন। এভাবে প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে মূল পান্ডুলিপিতে সংশোধন করে যাওয়ার ফলে কোন এডিশনে যে চূড়ান্ত সংশোধন করেছেন তিনি, তা বোঝা বেশ কঠিন।
জয়েসের জীবদ্দশায় না হলেও ইউলিসিস যে কালজয়ী উপন্যাস বা ‘ক্লাসিক’, এই ঐকমত্যে আসতে খুব সময় নেয়নি। ক্লাসিকের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য, কালনিরপেক্ষতা, তার উল্লেখে কেউ কেউ বলেছেন যে ইউলিসিস ঐতিহাসিক উপন্যাস, কালনিরপেক্ষ নয়। এর সপক্ষে বইটিতে আয়ারল্যান্ডের বিশেষ সময়ের (ব্রিটিশ উপনিবেশ) ঘটনার এবং চরিত্রের উল্লেখের কথা বলা হয়েছে। এমার নোলান-এর বই James Joyce and Nationalism (1995) এই বিষয়টির ওপর বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বলা যায় ‘ইউলিসিস’ যদি পোস্ট-কলোনিয়াল ধারার বই হয়ে থাকে তাহলেও তার ক্লাসিক চরিত্র ক্ষুন্ন হয় না।
আগেই বলা হয়েছে, গত একশ বছরে বিভিন্ন সহায়ক বইপত্র বের হওয়ার ফলে ইউলিসিস পাঠের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ বৃদ্ধি জনপ্রিয়তার প্রমাণ নয়। জয়েস জনপ্রিয় লেখক হতে চানওনি। তিনি বিশ্বাস করেছেন উপন্যাস কেবল সৃজনশীলতার প্রকাশ নয়, মননশীলতার চারণভূমিও বটে। তিনি আশা করেছেন ইউলিসিস তারা পড়বে যাদের মধ্যে জ্ঞানচর্চা আছে, যারা ধৈর্যশীল, নতুন কিছু দেখে কৌতূহলী এবং মানসিক পরিশ্রম করে পড়তে যাদের অনীহা নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন পাঠকের সংখ্যা সর্বকালেই সীমিত।
হাসনাত আবদুল হাই; বরেণ্য কথাসাহিত্যিক
রাজধানীর আগারগাঁও মেট্রোরেল স্টেশনে এক শিশুর জন্ম দিয়েছেন সোনিয়া রানী রায় নামের এক নারী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে স্টেশনের ফার্স্ট এইড সেন্টারে তিনি ফুটফুটে শিশুটির জন্ম দেন। মেট্রোরেলের চিকিৎসক যাত্রী ও রোভার স্কাউটের এক নারী সদস্যের সহায়তায় সোনিয়া ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। পরে মা ও সন্তানকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজধানীর ধানম-ির একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া রানী রায় আগারগাঁও স্টেশনে নামার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে স্টেশনের ফার্স্ট এইড সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথম মেট্রোরেলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর দিয়াবাড়ী (উত্তরা) স্টেশনে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন তিনি। ওইদিনই দুই শতাধিক ভ্রমণসঙ্গী নিয়ে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভ্রমণ করেন সরকারপ্রধান।
বর্ণিল সাজে সেজেছে রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের স্থায়ী ভেন্যুতে বসা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৭তম আসর। প্রথম কয়েক দিন কিছুটা অগোছালো থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে জমে উঠতে শুরু করেছে মেলা। প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। তবে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) এবং তিনশ’ ফুট সড়ক। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত এই দুটি সড়কের প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে মেলায় আসতে পথে পথে ভোগান্তির শিকার হন দর্শনার্থীরা। এমনকি অনেকে মেলায় আসার পথে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে শেষমেশ মাঝপথ থেকেই বাড়ি ফিরে যান। পূর্বাচল উপশহরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না এক্সিবিশন সেন্টারের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর। মেলা সফল করতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তুতির রং অনেকটাই ফিকে হয়ে আছে যানজটের কারণে। নরসিংদী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও পূর্বাঞ্চল এলাকার দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে গেলে এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক ব্যবহার করতে হয়। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও উত্তরাঞ্চলের দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে হলে তিনশ’ ফুট সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এশিয়ান হাইওয়ে সড়কের উন্নয়নকাজ চলায় শুরুর দিন থেকেই মেলায় আসতে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। তিনশ ফুট সড়ক ছিল অনেকটাই যানজটমুক্ত। তবে আজ শুক্রবার থেকে টঙ্গীতে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমা। সিলেট, ভৈরব, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও ও মেঘনাসহ এর আশপাশের অঞ্চলের মানুষ ইজতেমায় যাওয়ার জন্য এশিয়ান বাইপাস সড়ক ও তিনশ ফুট সড়ক ব্যবহার করছে। এ কারণে সড়ক দুটিতে যান চলাচল বেড়ে তিনশ ফুট সড়কেও দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট। দুটি সড়কেই যানজটের কারণে মেলায় আসতে দর্শনার্থীদের পথে পথে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। অনেক দর্শনার্থী মাঝরাস্তা থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এছাড়া কাঞ্চন টোল প্লাজায় টোল নেওয়ায় ধীরগতির কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এশিয়ান বাইপাস ও তিনশ ফুট সড়ক দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ হয়ে গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ উত্তরবঙ্গের মালবাহী অনেক ট্রাক চলাচল করছে। এসব ট্রাক তুলনামূলক ধীরে চলার কারণেও বাইপাস সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসন রূপসী-কাঞ্চন সড়ককে বিকল্প রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করতে বললেও তা কাজে আসছে না। এছাড়া গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে মেলা পর্যন্ত সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। ওইসব এলাকার মানুষও সড়কটি দিয়ে আসলে যানজটের ভোগান্তিতে পড়ছেন। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের যথাযথ তৎপরতার অভাবে বাইপাস সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনে মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়। এই দুদিন যানজট আরও প্রকট আকার নেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গতকাল রাজধানী মগবাজার থেকে মেলায় আসা নীরব নামে এক দর্শনার্থী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘তিনশ ফুট ও এশিয়ান বাইপাস সড়ক মানেই ভোগান্তি। অনেক ভোগান্তির পর মেলায় আসতে পেরেছি। বাড়ি ফিরতে কতক্ষণ লাগবে আল্লাহই ভালো জানে।’
ঢাকার তেজগাঁও এলাকা থেকে আসা শাহজালাল বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও তিনশ ফুট সড়ক দিয়ে মেলায় এসেছিলাম। সেদিন যানজট দেখিনি। কিন্তু আজ মেলায় আসতে গিয়ে প্রায় চার ঘণ্টা যানজটে আটকে বসে ছিলাম। একপর্যায়ে অনেকটা পথ হেঁটে মেলায় আসতে হয়েছে। অনেক দর্শনার্থীকে দেখেছি মাঝরাস্তা থেকেই বাড়ি ফিরে যেতে।’
যাত্রাবাড়ী থেকে মেলায় ঘুরতে আসা কিবরিয়া বলেন, ‘স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু যানজটের কারণে আমার ছোট মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তাই ফিরে যাচ্ছি বাড়িতে।’
মেলায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দিচ্ছেন। যাতে করে মেলায় দর্শনার্থী বেশি বেশি আসে। কিন্তু যানজটের কারণে দর্শনার্থী কমছে। যানজটের কারণে দর্শনার্থীরা আসতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। শুক্র ও শনিবারও যদি মেলায় আসতে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ যানজট পোহাতে হয় তাহলে লোকসানের মুখোমুখি হবেন ব্যবসায়ীরা।
মেলায় রোগীদের বিনামূল্যে সেবাদানের জন্য বিআরবি হাসপাতালের একটি স্টল রয়েছে। সেখানকার সিনিয়র স্টাফ নার্স আলামিন বলেন, ‘আমরা দর্শনার্থীদের বিনামূল্যে ব্লাড প্রেসার, বিএমআই ও ডায়াবেটিস চেক করছি। আমাদের স্টলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একজন এমবিবিএস ডাক্তার থাকেন। তিনি ফ্রিতে রোগী দেখেন। এছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করছি আমরা। কিন্তু তিনশ ফুট সড়কে যানজট থাকার কারণে আজ দর্শনার্থী কিছুটা কম।’
এদিকে হাইওয়ে পুলিশের দাবি তারা যানজট নিরসনে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, ‘যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তবে যানজট নিরসনে চালকদেরও সচেতন হতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, ‘এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। উন্নয়নকাজ বন্ধ রাখা তো সম্ভব না। তবে পুলিশ যানজট নিরসনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবি সচিব ইফতেখার আহম্মেদ চৈাধুরী বলেন, ‘যানজটের বিষয়টি দেখছে পুলিশ প্রশাসন। যানজটের কারণে মেলায় আসতে দর্শনার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে এটি সত্যি। কিন্তু পুলিশও যানজট নিরসনে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে।’
দুর্নীতি করে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে কানাডায় পালিয়ে যাওয়া বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল খালেক অবশেষে স্থায়ী বরখাস্ত হয়েছেন। গত ১৫ ডিসেম্বর তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এতদিন বরখাস্তের বিষয়টি গোপন থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার ফাঁস হয়ে যায়। বেবিচকের সদস্য প্রশাসন মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে বরখাস্তের কথা বলা হয়েছে। ১৫ বছরের চাকরি জীবনে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কানাডায় খালেকের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে গত ২৭ জুলাই দেশ রূপান্তরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। খালেকের মতো বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানও ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তাকেও যেকোনো সময় বরখাস্ত করা হবে বলে বেবিচক সূত্র জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বেবিচকের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যাওয়ার পর বেশ তোলপাড় হয়। এ নিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বেবিচক চেয়ারম্যান কঠোর নির্দেশনা দেন। অন্যদিকে নিজেদের রক্ষা করতে ওই দুই কর্মকর্তা নানা উপায়ে দেন-দরবার চালান। কিন্তু সংস্থাটির চেয়ারম্যান কঠোর থাকায় শেষরক্ষা হয়নি।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহীদুজ্জামানকেও যেকোনো সময় বরখাস্ত করা হচ্ছে বলে জানান বেবিচকের এক কর্মকর্তা। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেক ওপরের মহল থেকে নানাভাবে তদবির করেছিলেন বরখাস্তের হাত থেকে বাঁচতে। চেয়ারম্যানের কাছে একাধিক ফোন এসেছে। শহীদুজ্জামানও একইভাবে দেন-দরবার করেছেন। কিন্তু চেয়ারম্যান বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকদের অবহিতও করেছিলেন।
বেবিচকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, আবদুল খালেক চাকরি জীবনের শুরু থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। চাকরিও পান তদবির ও অর্থের জোরে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার পর তার দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে তিনি টাকা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করে কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি দিয়েছেন।
অন্যদিকে, বেবিচকের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুজ্জামান ২০০০ সালের ২২ নভেম্বর চাকরিতে যোগ দেন। চাকরির কয়েক মাস পরই তিনি জড়িয়ে পড়েন টেন্ডার বাণিজ্যে। মোটা অঙ্কের অর্থ কামান। অন্তত ১৫০ কোটি টাকা নিয়ে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি নিউইয়র্কের জ্যামাইকা অ্যাভিনিউতে একটি বাড়ি কিনেছেন। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের হরিকুমারিয়ার শহীদ বাচ্চু সরণি এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে শহীদুজ্জামান আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার কথা বলে ২১ দিনের ছুটি নেন। তারপর থেকে তিনি ‘পলাতক’।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেও 'সময়োচিত সংস্কার পদক্ষেপ' গ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন সরকার চতুর্থ মেয়াদে নির্বাচিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সংবাদ সংস্থাটি এক নিবন্ধে লিখেছে, 'তিনি (শেখ হাসিনা) টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।' একই সঙ্গে শেখ হাসিনাকে পুরো তহবিল পেতে আরও সংস্কার করতে হবে বলেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে সম্ভাব্য জয়ী হওয়ার কারণ এটা নয় যে তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছেন বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন।
নিবন্ধে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিজয়ের কারণ 'কেবলমাত্র তার অনেক প্রতিপক্ষ কারাগারে আছে বা আইনি ফাঁদে পড়েছেন- এটা নয় বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তার সাফল্যের কারণেই এটা ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত।'
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির সময়োপযোগী সংস্কারের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণপ্রাপ্তির পটভূমিতে ব্লুমবার্গ দুটি উপশিরোনামসহ 'বাংলাদেশ লিডার বেটস আইএমএফ-ম্যান্ডেটেড রিগর উইল পে অফ ইন পোলস' শিরোনামের এই নিবন্ধটি প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, 'পুরো তহবিল পেতে শেখ হাসিনাকে আরও সংস্কার করতে হবে' এবং 'নির্বাচনে তিনি টানা চতুর্থবারের মতো জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে'।
ব্যালট বাক্সে পরাজিত হওয়ার ভয়ে বিশ্বজুড়ে সরকারি দলের নেতারা প্রায়শই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে সম্মত সংস্কার বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের মতো নন।
তার দ্রুত আইএমএফ ম্যান্ডেটের বাস্তবায়ন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে যেখানে পাকিস্তান এখনও জ্বালানি ভর্তুকি নিয়ে দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছে। শ্রীলঙ্কা স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচন বিলম্বিত করেছে, কারণ, তারা গত সপ্তাহে আইএমএফ তহবিল পেতে কর এবং সুদের হার বাড়িয়েছে।
গত জুলাই মাসে আইএমএফের সহায়তা চাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি দেশের মধ্যে সর্বশেষ ছিল বাংলাদেশ। দেশটি দ্রুত জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির পর প্রথম ঋণ অনুমোদন পেয়েছে। ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিতে কোনো কুণ্ঠা বোধ করেননি।
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
যদি কোনো নারী কমপক্ষে দুটি মুরগি পালন করেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করেন তাকে শ্রমশক্তির আওতায় এনেছে সরকার। অথচ সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করে কর্মের আওতায় এসেছেন এমন পরিসংখ্যানের হিসাবই দেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশের কথা থাকলে শ্রমশক্তি জরিপটি ছয় বছর পর প্রকাশ করল বিবিএস। এতে বর্তমানে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৩০ হাজার বলে উল্লেখ করা হযেছে। যা ২০১৭ সালের জরিপে ছিল ২৭ লাখ। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে দেশে বেকার কমেছে ৭০ হাজার। শ্রমশক্তি জরিপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
সরকারের বেকারত্বের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ৩০ দিনে বেতন বা নিজস্ব পণ্য উৎপাদনের নিমিত্তে কোনো না কোনো কাজ খুঁজে থাকেন এবং গত সাত দিনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন তবে তাকে বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, করোনার সময় দেশে বেকারের সংখ্যা বাড়েনি বরং কমেছে। কারণ ওই সময় সরকার বিশেষ অনেক পদক্ষেপ নেওয়ায় এসব বেকারের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। তাছাড়া কৃষি খাতে অংশগ্রহণ বাড়ায় বেকারের সংখ্যা কমেছে।
জরিপে বলা হয়েছে, দেশে এখন ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার আছে। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ। ছয় বছরের ব্যবধানে বেকার কমেছে ৭০ হাজার।
জরিপে দেখা গেছে, ছয় বছর আগের তুলনায় বেকারত্বের হারও কমেছে। ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করার সুযোগ না পেলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হয়।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখন দেশে শ্রমশক্তিতে ৭ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ আছে। এর মধ্যে কাজে নিয়োজিত ৭ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। এ শ্রমশক্তির মধ্যে থাকা ৪ কোটি ৭৪ লাখ পুরুষ আর ২ কোটি ৫৯ লাখ নারী। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৯৯ লাখ ১০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তির আওতায় এসেছে অর্থাৎ এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
জরিপে ১৫ বছরের বেশি বয়সীদের বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশের প্রায় সোয়া লাখ পরিবার থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তথ্য সংগ্রহ করা হয় দ্বৈবচয়ন অর্থাৎ লটারি পদ্ধতিতে বাছাইয়ের মাধ্যমে। এর আগে ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করেছে বিবিএস। প্রতি চার থেকে পাঁচ বছরের ব্যবধান এ জরিপ করা হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেকারদের মধ্যে পুরুষ ১৬ লাখ ৯০ হাজার। আর নারী ৯ লাখ ৪০ হাজার। পাঁচ বছর আগের চেয়ে নারীর বেকারত্ব কমেছে। বেড়েছে পুরুষের বেকারত্ব। ২০১৭ সালের জরিপে ১৪ লাখ পুরুষ বেকার ছিল। ওই সময় ১৩ লাখ নারী বেকার ছিল।
জরিপ বলছে, মোট সাত কোটি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তির মধ্যে কৃষি খাতে নিয়োজিত রয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ, শিল্প খাতে ১ কোটি ২০ লাখ এবং সেবা খাতে ২ কোটি ৬৬ লাখ।
জরিপের হিসাবে আরও দেখা যায়, দেশে শ্রমশক্তির বাইরে আছেন ৪ কোটি ৬৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে নারী ৩ কোটি ৪৮ লাখ, পুরুষের সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ। বেকারত্ব কমে আসার পাশাপাশি কর্মে নিয়োজিত জনবলও বেড়েছে দেশে। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে ২ কোটি ৬৮ লাখ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এ জরিপের মাধ্যমে অর্থনীতির মূল গতিবিধি আমরা বুঝতে পারব। আমরা কোনো তথ্যই লুকিয়ে রাখব না। তিনি বলেন, আমাদের দেশের গৃহিণীরা প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করেন। তাদের শ্রম হিসাব করা হয় না। তাদের শ্রম হিসাবে এলে জিডিপির আকার ৬০০ থেকে ৭০০ বিলিয়ন হতো। নারীদের শ্রমের প্রকৃত বিচার হয় না। আমরা আশা করছি এখন থেকে এ তথ্য প্রতি তিন মাসেই পাব।
আইএলওর আইন মানা হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইএলওর মানদ- অনুযায়ী এ জরিপ করা হয়েছে। কডিডের সময় আমাদের দেশে বেকারত্ব কমেছে কারণ সে সময় আমরা শিল্প খোলা রেখেছিলাম। লকডাউনে সড়কে বাস চলাচল করতে দিয়েছি। ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সে সময়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, এটি প্রভিশনাল রিপোর্ট। এ তথ্য মূল প্রতিবেদনে পরিবর্তিত হতে পারে। অর্থনীতির হাল বোঝার জন্য এ তথ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে বেকার বাড়ছে নাকি কমছে সে তথ্য সরকারের নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যেসব প্রশ্ন আসছে, এগুলো সবসময়ই এসে থাকে। এসব প্রশ্ন আসবেই। শহরের মহিলা শ্রমিক কমে গেছে, তার মানে হলো তারা গ্রামে গিয়ে কৃষিতে যুক্ত হচ্ছে।
বিবিএস বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঘরে ঘরে চাকরি প্রদানের বিষয়ে বিশেষ সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টায় বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে।
এ সময় শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এহসান-ই-এলাহী বলেন, আমি তো ভেবেছিলাম দেশে শ্রমিক ছয় কোটি, এখন দেখি সাত কোটির বেশি। এটি বড় সুসংবাদ। আমরা আগামী বছরের মধ্যে তিন লাখ শ্রমিকের ডেটাবেজ করব। কারণ আমাদের কাছে সঠিক কোনো ডেটাবেজ নেই।
মেট্রোরেলের উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন আগামীকাল ৩১ মার্চ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ইতিমধ্যে এ দুটি স্টেশন খোলার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। মেট্রোরেল সেবা পরিচালনাকারী ডিএমটিসিএল সূত্র এ তথ্য জানায়।
উত্তরা দক্ষিণ ও শেওড়াপাড়া স্টেশন চালু হলে যাত্রীরা উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন ব্যবহার করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করতে পারবেন।
ডিএমটিসিএল-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা দুটি দল গঠন করেছি যারা অপারেশনের জন্য উত্তরা দক্ষিণ এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের অপারেশন টিমের সাথে সমন্বয় করবে।'
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রোরেল উদ্বোধন করেন। রাজধানীর দিয়াবাড়িতে দিয়াবাড়ি-আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ এর ১১.৭৩ কিলোমিটার অংশের ফলক উন্মোচন করেন তিনি। বর্তমানে মেট্রোরেল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত যাত্রীসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।