
নাটোরের বাগাতিপাড়া রেললাইনে ১০ লেভেল ক্রসিংয়ের পাঁচটি অরক্ষিত। এসব ক্রসিংয়ে নেই গেটম্যান এবং কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। উন্মুক্ত রেলগেটটি দিয়ে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এসব ক্রসিংয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। রেল কর্মকর্তা বলেছেন, সরকারি অনুমোদিত নয় বলে এ পাঁচটি ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ করা যাচ্ছে না।
উপজেলার সীমানার মধ্যে মালঞ্চি ও লোকমানপুর দুটি রেলস্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে আবদুলপুর থেকে পার্বতীপুর অভিমুখে মালঞ্চি রেলস্টেশনের দুই পাশের পাঁচটি লেভেল ক্রসিং, যার সবকটিতেই অনুমোদিত গেটম্যান রয়েছে। অন্যদিকে আবদুলপুর থেকে রাজশাহী অভিমুখে লোকমানপুর রেলস্টেশনের দুই পাশে পাঁচটি লেভেল ক্রসিংয়ের সবই অরক্ষিত। এগুলো হলো মাড়িয়া নিংটিপাড়া, হাড়ভাঙ্গী, মালিগাছা, গাঁওপাড়া ও ঝিনা ক্রসিং। রেলগেটসংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ছয় বছর আগে ইয়াছিনপুর রেলগেট পৃ পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় নববধূসহ চারজন ভটভটি যাত্রী নিহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর আবদুলপুর থেকে পার্বতীপুর অভিমুখে উপজেলার স্বরূপপুর, ঠেঙ্গামারা, ইয়াসিনপুর ও বড়পুকুরিয়া লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ করা হয়েছে। অন্যদিকে আবদুলপুর থেকে রাজশাহীর অভিমুখে উপজেলার পাঁচটি লেভেল ক্রসিংয়ের সবই উন্মুক্ত থাকায় প্রায়ই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। দুই বছর আগে মাড়িয়া নেংটিপাড়া রেলগেটে চিথলিয়া গ্রামের ফজিলা নামে এক গৃহিণী কাটা পড়েন। একই বছর ১৩ জুলাই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি একই ক্রসিংয়ে কাটা পড়ার ঘটনা ঘটে। এর দুদিনের মাথায় আইয়ুব আলী নামে আরও একজন ট্রেনে কাটা পড়েন।
হাড়ভাঙ্গী রেলগেটসংলগ্ন চা দোকানদার জামশেদ জানান, তিন বছর আগে তার চোখের সামনে ক্রসিং পার হওয়ার সময় একটি ট্রলি চলন্ত ট্রেনের ধাক্কা খায়। এতে চালকসহ অন্যরা ছিটকে পড়েন। এ সময় আবদুল খালেক সরকার নামে একজন মারা যান। তাছাড়াও গেটে প্রায় প্রতি বছরই যানবাহন পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হন। এ ছাড়া এসব রেলগেটে পারাপারের সময় নসিমন, খাবারের গাড়ি, সংবাদিকদের মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যান ট্রেনের ধাক্কা খেয়েও বড় ধরনের প্রাণহানি থেকে রক্ষা পেয়েছে।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ওই রেলক্রসিংগুলো সরকার অনুমোদিত নয়। সেগুলো নিয়ম মেনে করা হয়নি। এমনিতেই আমাদের জনবল কম, তারপরও রেল বিভাগের তালিকায় না থাকায় জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না।
অমর একুশে বইমেলা শুরু হতে আরও ১৭ দিন বাকি। এরই মধ্যে বাংলা একাডেমি মাঠ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে মেলার প্রস্তুতি। তবে গত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে মেলা অনেকটা দেরিতে শুরু হয়েছে। এবার সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই বইমেলা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
এ বিষয়ে এবার অমর একুশে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মুজাহিদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার করোনার কোনো প্রকোপ না থাকলে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিক্রমে বাংলা একাডেমিতে ১ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন হবে। আমরা ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও বাংলা একাডেমির মাঠ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা হবে। যদিও এবারের মেলার মাঠ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তবে ১ তারিখ থেকে পিডব্লিউডির কাছ থেকে মাঠ বুঝে নিয়েছি। মেলা উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা অফিশিয়াল সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছি। যারা স্টল বরাদ্দের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছেন তাদের আমরা স্টল বরাদ্দ দিয়ে দিয়েছি। ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত লিট ফেস্ট থাকায় মাঠপর্যায়ের কাজ শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। অনেক পরে কাজ শুরু করলেও ৫০ শতাংশের মতো আমাদের কাজ এগিয়ে গেছে। স্টল নিয়ে গতবার আমাদের কাছে কিছুটা অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের কাছাকাছি যে ১৮২টা স্টল ও প্যাভিলিয়ন তাদের খুব খারাপ অবস্থা ছিল। তাদের কথা চিন্তা করে বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতিকবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবার নামাজের স্থান, আনসার ক্যাম্প, খাবারের স্টল ও শৌচাগারসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশটায় রেখে পরিকল্পনা করেছি।’
প্রতি বছর বইপ্রেমীদের প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলায় প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য আটটি গেট করা হতো। এবার টিএসসির পাশে মেট্রোরেলের স্টেশন নির্মাণের কাজ চলার কারণে মাঝের একটি প্রবেশ ও দুটি প্রস্থানপথ ব্যবহার করতে পারছে না মেলা কর্র্তৃপক্ষ। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার মেলার অবকাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে অনেক।
এ প্রসঙ্গে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু মেট্রোরেলের স্টেশনের জন্য এবারের মেলার অবকাঠামোগত অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে, এ ব্যাপারে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা আমাদের অনেক সহায়তা করেছে। ফলে এবার আমরা মন্দির গেটকে মেলার প্রবেশ গেট এবং নতুন করে একটি বাইরের গেটের ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়াও উদ্যানে সাধুসঙ্গ নামে একটি জায়গা রয়েছে সেটিকে শিশু কর্নার করেছি।’
সরেজমিনে গতকাল শুক্রবার বাংলা একাডেমি মাঠ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন স্টল তৈরির শ্রমিকরা। একাডেমি মাঠ ও উদ্যানে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সঙ্গে কথা হলে জানা গেছে, এবার মেলায় স্টলের সংখ্যা হবে ৭৫০-৮০০টি। এরই মধ্যে ৩০০-৩৫০টি স্টলের কাঠামো তৈরি হয়েছে। এখনো স্টলের প্যান্ডেল, ছাউনি ও সীমানার কাজ বাকি।
এ বিষয়ে একটি স্টলে কর্মরত বেলায়েত সরদার নামে এক কর্মী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্টলের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ এগিয়ে চলছে। ঠিকঠাক সব উপকরণ পেলে এটি শেষ করতে আরও ১০-১২ দিন সময় লাগতে পারে। তবে এই মুহূর্তে বইমেলা নিয়ে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছি।’
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাহেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবার এবার বাড়ছে স্টল কমছে বইমেলায় স্টলসংখ্যা বেড়েছে। গত বছর যেখানে প্যাভিলিয়ন ও স্টলের সংখ্যা ছিল ৬৫০টির মতো, এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০০টির একটু বেশি। দেরিতে মেলার স্টল নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় আমাদের কর্মীদের দম ফেলার সময় নেই। সব কাজ শেষ করে আগামী ২৫-২৬ তারিখের মধ্যে বাংলা একাডেমি কর্র্তৃপক্ষকে স্টল বুঝিয়ে দিতে হবে।’
এদিকে কাগজের দাম বাড়ার কারণে এ বছর অনেক প্রকাশকই মেলায় নতুন বই আনছেন না। আবার যারা নতুন বই আনার চিন্তা করছেন তারাও এখনো প্রেসে তাদের সংগ্রহে থাকা পা-ুলিপি পাঠাননি। প্রকাশকদের দাবি, কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার বইয়ের দাম বেশি রাখতে হচ্ছে। তাই ভেবেচিন্তেই তারা বই প্রকাশ করবেন।
কবিতা প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী নজরুল হায়দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আবেদন করে আমরা স্টল বরাদ্দ পেয়েছি। কাগজের দাম এবার আড়াইগুণের বেশি বেড়েছে। তাই বইয়ের দামও অনেক বাড়বে। সব বিবেচনা করে এখনো নতুন বই নিয়ে ছাপাখানায় যাইনি। লেখকরাও অনেকে ভেবেচিন্তে তাদের পা-ুলিপি দিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত যদি সাশ্রয়ী মূল্যে কাগজ না পাওয়া যায় তাহলে অন্যবারের তুলনায় এবারে বইয়ের দাম ৩০-৩৫ শতাংশ বাড়ানো হবে।’
অন্যপ্রকাশের সিইও মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কাগজের দাম এবার আড়াইগুণের বেশি বেড়েছে। ফলে আগের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ বই আনছি। তবে নতুন লেখকদের বই আসছে হাতেগোনা। সব মিলিয়ে এবার বইয়ের দাম ৩০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।’
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অঙ্গ, যা মনের কথা বলে সহজ ভাষায়, বয়ানে। বাংলাদেশের লোকজীবন বিচিত্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছড়া, লোককাহিনী ও লোকশিল্প থেকে নিঃসৃত। লোকসাহিত্য, লোকসংস্কৃতি থেকে সমাজজীবন ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়; মানুষের যথাযথ পরিচয়ের জন্য ভাব ও চিন্তার খোরাক। লোকসাহিত্য-লোকসংস্কৃতিতে ফুটে ওঠে লোকায়ত বাংলার প্রতিচ্ছবি।
লোকশিল্পের মধ্যে লোকসাহিত্যের বীজ নিহিত। এ শিল্পের শিকড় হাজার বছর আগে প্রোথিত হয়েছিল এ দেশের মাটিতে। দেশের লোকঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতিতে আজো তা ধৃত। কালে-কালান্তরে প্রবহমান জীবনের, জীবনধারার, সংস্কৃতির জিয়নকাঠি।
লোকসাহিত্য সামাজিক সৃষ্টি এবং এ কারণেই লোকসাহিত্য সমাজের কথা বলে। এর সৃষ্টি জনগণের মধ্যে; জনগণই একে লালন করে। মানুষই লোকসাহিত্যকে এক কাল থেকে আরেক কালে, এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে বাহিত করে। এ পটভূমিতেই আমরা লোকায়ত বাংলা সিরিজে নিবেদন করছি : লোকসাহিত্যে বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্প। এ পর্যায়ে পরিবেশন করা হবে সিলেট অঞ্চলের শীতলপাটি ।
বাঙালির গ্রীষ্মকালীন পাটি শীতলপাটি, স্মরণাতীত কাল থেকে। একান্তভাবে একটি সম্প্রদায়ের নারীদের সৃষ্টি এ পাটি। মুত্তারপাটি, নলখাগড়ার দরমা, মলুয়ারপাটি, হোগলার ছাঁচ, বাঁশ-বেতের চাটাই ও ক্ষেত্রবিশেষে তালপাতার ধাড়াধাড়ি চাটাই প্রভৃতি নামে বাংলাদেশের সব জায়গায় এ পাটির ব্যবহার রয়েছে।
এসব কিছুকে নিয়েই বাংলাদেশের মাদুরশিল্পের বিকাশ। এ শিল্পের মধ্যে বিশিষ্ট হলো শীতলপাটি, যা আমাদের লোকায়ত সংস্কৃতিতে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
শীতলপাটির মূল উপকরণ মুত্তা বা মোস্তাক নামক গাছের ছালের বেতি বা বেত। কাঁথার মৌল একক যেমন সূচের ঘাই, শীতলপাটির তেমন বেতি। পাইটারা মহিলারা যে সূক্ষ্ম কৌশলে বেতি তৈরি করে, তা সত্যিই বিস্ময়কর। সুদীর্ঘ অভ্যাস, ধৈর্য, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমে অর্জিত হয় এ শিল্পের দক্ষতা বা নৈপুণ্য। বিরল হলেও একসময় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতির দাঁতের শৌখিন ও অতি মূল্যবান পাটি তৈরি হতো। হাতির দাঁত থেকে বেতি ওঠানো যে কত কঠিন! এদিক দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজাতি, বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের মণিপুরি ও খাসিয়া রমণীদের সুন্দিবেতে তৈরি শীতলপাটি বাংলাদেশের মেয়েলি লোকশিল্পের এক অতুলনীয় নিদর্শন।
শীতলপাটি বুননের কৌশল বা নৈপুণ্য কম বিস্ময়কর নয়। বুননের কৌশল ও বৈচিত্র্যেই তৈরি হয় শীতলপাটির নকশা বা কারুকার্য। পাখার তুলনায় কাঁথা বা শীতলপাটির বৃহত্তর পরিসরে শিল্পীর কল্পনা ও স্বাধীনতা অপেক্ষাকৃত বেশি। পালকি, হাঁড়ি, মসজিদ, নৌকা, হাঁস, কবুতর, ময়ূর, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, হরিণ প্রভৃতি পশুপাখির চিত্রের অবস্থান সত্ত্বেও বিশিষ্ট শীতলপাটির নকশার মূল উৎস তার কেন্দ্রসহ গাছ-ফুল-পাতা (প্রধানত ডাল-মেলা কদমগাছ), নানা জাতের পদ্ম, ফুল, পাতা প্রভৃতি। কাঁথার মতো শীতলপাটির কেন্দ্র ও নকশার চারদিকে শঙ্খলতা, কলসিলতা, শীষলতা, কলমিলতা প্রভৃতি লতাম-ল বিশেষভাবে দৃষ্টিগোচর হয়। পাটিতে বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা ও বুটির ব্যবহারও লক্ষণীয়। কাঁথার মতো পাটিতেও উজ্জ্বল রঙেরই প্রাধান্য। আল্পনাচিত্রের মতোই শীতলপাটির চিত্রও নিশ্চল; এর দুটো মাত্র ডাইমেনশন বা মাত্রা এবং বাস্তবের অনুকৃতি থাকে সাংকেতিকতায়। মুত্তা বা সুন্দিবেতের শীতলপাটিতে নানা রঙে রাঙানো বেতি-বিন্যাসের মাধ্যমে বর্ণ-সম্পাতের নকশা প্রস্ফুটিত।
বর্তমানে শীতলপাটি তৈরি সিলেট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। তবে সিলেটের শীতলপাটির খ্যাতি আছে বাংলাদেশের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় এবং বাইরের বিভিন্ন দেশে। সিলেট অঞ্চলে নির্মিত শীতলপাটিই সারা বিশ্বে আমাদের লোকায়ত সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে।
সিলেটের শীতলপাটির বেশিরভাগ তৈরি হয় সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায়। এই এলাকার ছয়টি গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ পাটি তৈরি করে বিক্রি করে।
গ্রামগুলো হলো দুর্গাপুর, চাঁনপুর, সোনাপুর, ভমিঘালী, কালীপুর ও কদমতলী। এগুলো এখন শীতলপাটির শিল্পীদের গ্রাম নামে পরিচিতি পেয়েছে। বৃহত্তর সিলেটে ইউরোপ, আমেরিকা থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি সংখ্যায় প্রবাসীরা আসেন এবং ফেরার সময় তাদের পছন্দের তালিকার অন্যতম হচ্ছে শীতলপাটি। এ শীতলপাটিগুলো সাধারণত সাত ফুট দৈর্ঘ্য ও পাঁচ ফুট প্রস্থের হয়। ছোট পাটিরও প্রচুর চাহিদা আছে।
সিলেটের শীতলপাটির জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রচলিত বাংলা লোকসাহিত্যের একটি চরণ উল্লেখ করা যায় :
‘দুটি পাতা একটি কুড়ি
শীতলপাটি গরম চা।’
শীতলপাটি-শিল্পে সিলেট অঞ্চলের কৃষ্টি, সভ্যতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিধৃত থাকে, যা আমাদের লোকায়ত বাংলার সম্পদ। এতে পরিস্ফুট হয় লোকায়ত বাংলার মুখ সজীব সজল বাংলাদেশের প্রতিকৃতি।
লেখক : শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় এপিআই শিল্পপার্কে (ওষুধ শিল্পনগরী প্রকল্প) বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের নিরাপত্তার অজুহাতে প্রয়োজন ছাড়াই গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। পল্লী বিদ্যুতের কর্মীদের সঙ্গে যোগসাজশে শিল্পপার্কের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বিচারে গাছ কাটছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। কেটে ফেলা গাছ বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াই তাদের উদ্দেশ্য।
গজারিয়ার বাউশিয়া ইউনিয়নের এপিআই শিল্পপার্কে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের নিরাপত্তার কথা বলে এরই মধ্যে প্রায় অর্ধশত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা হতে পারে আরও গাছ। যদিও কেটে ফেলা গাছের অধিকাংশেরই অবস্থান ছিল বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন থেকে বেশকিছুটা দূরে। এপিআই শিল্পপার্কের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রকল্প এলাকায় কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছিল। কেটে ফেলা গাছগুলো ছিল তারই অংশ। এসব গাছের গুঁড়ি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাউশিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং বাউশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সারওয়ার বিপ্লব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকজন গাছ কাটার এই কাজ করতে আসিনি। স্থানীয় দুর্বৃত্তরা এই নিষ্ঠুর কাজ করেছে, দ্রুত এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাই।’
বাউশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান প্রধান বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা এটা। এপিআই শিল্পপার্কে গাছ কাটার খবরটি আমি শুনেছি। যারা এই কাজের সঙ্গে জড়িত বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তার অজুহাতে বৃক্ষনিধন!খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
এ ব্যাপারে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩-এর গজারিয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) অভিলাষ চন্দ্র পাল বলেন, ‘বিদ্যুৎ লাইনের সেইফটির (নিরাপত্তা) জন্য আমরা শুধু কয়েকটি গাছ ও কয়েকটি গাছের ডাল কেটেছি। আমরা অপ্রয়োজনে কোনো গাছ কাটিনি।’
প্রয়োজনের বাইরেও গাছ কাটা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বাউশিয়া এপিআই শিল্পপার্কের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার জানামতে বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তার জন্য গাছ কাটা হয়েছে। এর বাইরে যদি অতিরিক্ত গাছ কাটা হয়ে থাকে তবে তদন্তসাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘গাছের সঙ্গে এমন নিষ্ঠুরতা মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শুরু হলো নদীপথে বিশ্বের দীর্ঘতম যাত্রা। গতকাল শুক্রবার সকালে দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে এমভি গঙ্গা বিলাস নামে প্রমোদতরীর যাত্রা শুরু করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গঙ্গা বিলাস বারানসি থেকে বাংলাদেশ হয়ে আসামের ডিব্রুগড় পর্যন্ত যাবে। ৫১ দিনের এ যাত্রায় গঙ্গা বিলাস পাড়ি দেবে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার। এ দীর্ঘ পথে দুই দেশের ২৭টি নদী পাড়ি দেবে বেসরকারি প্রমোদতরীটি।
গতকাল প্রমোদতরীর যাত্রা শুরু করে মোদি বলেন, পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই এ ‘ক্রুজ’ থেকে উপকৃত হবে। এর ফলে পূর্ব ভারতের বহু পর্যটনস্থল বিশ্বের পর্যটন ম্যাপে স্থান করে নেবে। তিনি বলেন, এই ক্রুজ যেখান দিয়ে যাবে, সেখানকার বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। হবে উন্নয়ন।
তবে এ প্রমোদতরীতে চেপে নদী বিলাসের খরচের পরিমাণ শুধু ধনীদের পক্ষেই বহন করা সম্ভব। কারণ ৫১ দিন ভ্রমণের দরুন মাথাপিছু খরচ পড়বে প্রায় ২০ লাখ রুপি। প্রমোদতরীতে রয়েছে ১৮টি বিলাসবহুল স্যুইট। প্রতিটিতে দুজনের থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। প্রথম দিন এই ক্রুজে যাত্রাসঙ্গী হন ৩২ জন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক।
এতে রয়েছে অত্যাধুনিক স্পা, জিম, লাইব্রেরি, বিনোদনের বন্দোবস্ত এবং দেশ-বিদেশের খাওয়া। ক্রুজে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকছে, যাতে গঙ্গা দূষিত না হয়। এ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে বিদেশি পর্যটকরা ভারত ও বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন ও আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে অবহিত হবেন বলে ভারতের কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জানিয়েছেন।
অবশ্য উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এ প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছেন। টুইট করে তিনি বলেন, সারা পৃথিবীর মানুষ কাশী-বারানসিতে আসেন আধ্যাত্মিকতার সন্ধানে, বিলাসী জীবনযাপনের জন্য নয়। বিজেপি এবার কাশীর নৌচালকদের রুটি-রুজি বন্ধ করে দিতে চলেছে। জাঁকজমকপূর্ণ বিলাসের মধ্য দিয়ে দেশের সার্বিক অন্ধকার এভাবে ঢাকা দেওয়া যায় না। জনমানসেও প্রশ্ন উঠেছে, ৫১ দিন অতিবাহিত করার মতো সময় কতজনের রয়েছে। ২০ লাখ রুপি খরচের ক্ষমতাও বা আছে কয়জন ভারতীয়ের।
কুমিল্লার মুরাদনগরে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত হয়েছে। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও একজন। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের পালসুতা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, উপজেলার কাজিয়াতল গ্রামের মো. নুরু মিয়া (২৮) ও একই উপজেলার পালাসুতা গ্রামের ইসমাইল হোসেন (২৭)। সদর দক্ষিণ থানার বাগমারা গ্রামের শাহজাহান মুমূর্ষু অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হতাহতরা কারও বাড়িতে ডাকাতি করেছে এমন কোনো সতত্য না পাওয়ায় হত্যার ঘটনাটি নিয়ে সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোড়ারচর গ্রামে ডাকাতি করতে এসে ধাওয়া খেয়ে ডাকাত দলের তিন সদস্য পালাসুতা গ্রামের একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে এমন খবর এলাকার মাইকে ঘোষণা করলে আশপাশের কয়েক গ্রামের সহস্রাধিক লোক জড়ো হয়ে ডাকাত সন্দেহে তিনজনকে ঘর থেকে ধরে এনে গণপিটুনি দেয়। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। খবর পেয়ে মুরাদনগর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। তা ছাড়া তারা বিভিন্ন চুরিসহ অপরাধমূলক কাজে জড়িত ছিল বলেও এলাকাবাসী জানান।
নিহত ইসমাইল হোসেনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে টুকিটাকি চুরির সঙ্গে জড়িত থাকলেও ডাকাতির মতো কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গেছে নুরু মিয়া তার শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য। আমার ছেলে যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে তারা আমাকে বলতে পারত। আমার ছেলেকে তো তারা একবারে মেরে ফেলতে পারে না। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।
দারোরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, ডাকাত সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনি দিয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি তাৎক্ষণিক পালাসুতা গ্রামে যাই। পরে মুরাদনগর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাদের চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় পাঠানো হয়। তাদের খারাপ ভালোর বিষয়টি আমার পুরোপুরি জানা নেই। লোকমুখে শুনেছি তারা নাকি বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
মুরাদনগর থানার ওসি কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের অতীত কর্মকা- যাচাই করা হচ্ছে। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মর্গে) পাঠানো হয়েছে। আমাদের কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার স্যার বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।