
প্রতি বছর শীতের মৌসুমে সবজিতে সয়লাব থাকে রাজধানীসহ সারা দেশের হাটবাজার। বাজারে প্রচুর সবজির সরবরাহ ক্রেতাদের স্বস্তি দেয়। কিন্তু এবার শীতের ভরা মৌসুমে পরিস্থিতি উল্টো। বাজারে সবজি থাকলেও দাম তো কমেইনি, বরং কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে। বাজারে এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ ও কাঁচামরিচ।
ক্রেতারা অস্বস্তি প্রকাশ করে বলছেন, সব কিছুর দামই বেড়ে গেছে। আগে শীত শুরু হলে সবজির দাম কমে যেত, কিন্তু এবার উল্টোটা দেখছি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজধানীর কাঁঠালবাগান ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ৯০-১০৫ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ গতকাল ১১০-১১৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। প্রতি পিস লাউ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। শসার কেজি ৫০-৫৫ টাকা, মুলা ৩০-৩৫ টাকা, নতুন লাল আলু ৪০-৪৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা (লম্বা), ফুলকপি প্রতিটি ৩০-৪০ টাকা, পাতাকপি ৩০-৩৫ টাকা। অবশ্য ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়।
এছাড়া মিষ্টিকুমড়া কেজি ৪০-৫০ টাকা দরে, জাত ভেদে প্রতি কেজি শিম ৩৫-৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা ও লেবুর হালি ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় সুলাইমান আহমেদ নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সব সময় দেখে আসছেন শীতকালে প্রচুর সবজির জোগান থাকে বাজারে। দামও থাকে কম। এখন পরিস্থিতি দেখে তার মনে হচ্ছে না যে তিনি দেশে আছেন। তিনি মনে করেন, কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা মানুষের পকেট কাটছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় কৃষকরা মাঠ থেকে ফসল তুলছেন না। যার ফলে বাজারে আমদানি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী বেলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। এখান থেকে অন্যান্য বাজারের ব্যবসায়ীরাও কেনেন। আমাদের যাতায়াত খরচটা লাগে না বলে কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারি। কিন্তু অন্য এলাকার বাজারগুলোতে আরও বেশি দামে সবজি বিক্রি হয়।
তেজকুনিপাড়া সংলগ্ন কলমীলতা বাজারের কয়েকটি মুদি দোকান ঘুরে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব থেকে বেশি বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা করে।
প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল ৪৬-৫০ টাকা, ব্রি-আটাশ ৫৬-৬০ টাকা, মিনিকেট ৭৬-৮০, নাজিরশাইল ৭০-৯০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতো চড়া দামে সব ধরনের মাছের বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বড় আকারের রুই মাছের কেজি ৩০০-৩১০ টাকা, কাতলা মাছ (ছোট) ২৭০-২৮০ টাকা, কার্প জাতীয় মাছের কেজি ২৫০ টাকা, বড় আকারের তেলাপিয়া ২০০, কই ২২০, মৃগেল ২০০-২১০ ও নলা ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁঠালবাগান বাজারের মাছ বিক্রেতা মনির দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাছের বাজার কখন ওঠে কখন নামে তা বলা মুশকিল। তবে নতুন বছরের শুরুর দিন থেকে মাছের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। বাজার একবার বাড়লে তা আর কমার কোনো সম্ভাবনা থাকে না বরং বাড়ার একটা প্রতিযোগিতা থাকে।
কাঁঠালবাগান ও তেজকুনিপাড়া সংলগ্ন কলমীলতা বাজারের মাংসের দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৫৫-১৬৫ টাকা করে। পাকিস্তানি লাল ২৮০-৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫১০-৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ছাড়াও মাংসের মধ্যে গরু ৭০০ টাকা, খাসি ১ হাজার ১০০ টাকা ও বকরির মাংসের কেজি ৯০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা যে কয়টি খাতের ওপর নির্ভরশীল তার মধ্যে অন্যতম রেমিট্যান্স প্রবাহ (প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা)। কিন্তু সেই প্রবাসীরাই বিদেশ গমনের সময় বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথি নোটারি বা নোটারি পাবলিক করে আইনজীবী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিল দিয়ে সত্যায়িত করাতে হয়। সরকারি এসব কার্যক্রম বিনামূল্যে হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সময়ই প্রবাসীরা তাদের নথি সত্যায়িত করাতে গিয়ে দালালদের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী বিদেশগামী প্রবাসীদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবা ও আইনজীবী কর্র্তৃক নথি সত্যায়িতের সিল বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। কিন্তু এ দুটি সিল নিতে যেখানে কোনো টাকা প্রদানের কথা নয়, সেখানে দাপ্তরিক নানা জটিলতার ভয় দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ের আশপাশে ওত পেতে থাকা দালালরা সত্যায়িত প্রার্থীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ২৫০০-৩০০০ টাকা আদায় করে থাকে। আর শুধু দালালই নয়, এর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিচার শাখা-৬-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অনেক পুলিশ সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগ, পরিবহন পুল ভবনে অবস্থিত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৬-এ আসা বিদেশগামী প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তাদেরই একজন বরিশালের ইব্রাহিম হাওলাদার। থাকেন ইতালিতে। জন্মনিবন্ধনের কাগজ সত্যায়িত করতে ঢাকায় এসে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগের সেবাকক্ষে বসে ইব্রাহিম হাওলাদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জন্মনিবন্ধনে ভুল তথ্য থাকায় অনলাইন প্রক্রিয়া মেনে তা আবার ঠিক করাতে হয়েছে। এরপর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছি আমার জন্মনিবন্ধন সত্যায়িত করাতে। কিন্তু এ কাজে এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশপাশে থাকা দালাল ও পুলিশ সদস্যদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তারা নানা জটিলতার ভয় দেখিয়ে আমার কাছে ৩ হাজার টাকা দাবি করে। যেহেতু আমারও জরুরি ভিত্তিতে সত্যায়িত নিবন্ধনের দরকার ছিল, তাই রিস্ক (ঝুঁকি) না নিয়ে তাদের টাকা দিয়ে কাজটি করাতে বাধ্য হয়েছি। যদিও পরে জানতে পেরেছি নথি সত্যায়িত করতে কোনো টাকার দরকার হয় না।’
আরেক ভুক্তভোগী শারমিন আক্তার। রংপুর থেকে আসা এ নারী পরিবহন পুল ভবনের বিচার শাখা-৬-এ আইনজীবীর সিল সেবা নিতে এসে পুলিশ সদস্যদের হয়রানির শিকার হন। শারমিনের স্বামী বেলায়েত হোসেন থাকেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। শারমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমিও স্বামীর কাছে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে তার আগে আমাদের বিয়ের কাবিন সত্যায়িত করাতে হবে। এর জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। এসব কাগজ কীভাবে সত্যায়িত করাতে হয় তা না জানার কারণে চার দিন ধরেও কাবিন সত্যায়িত করতে পারিনি। যেখানেই গিয়েছি সেখানেই আমাকে সাহায্য করার কথা বলে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দাবি করে দালালরা। অ্যাডভোকেটের সিল পেতে পরিবহন পুল ভবনের প্রবেশমুখে বাধা ও টাকার বিনিময়ে সিল পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য।’
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন পুল ভবনে প্রবেশদ্বারে ডিউটিরত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল হক বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্য টাকা নেন বলে আমার জানা নেই। বরং এখানে আসা প্রত্যেক সেবাপ্রার্থীকে আমরা সাহায্য করে থাকি। তবে কেউ যদি বাইরের দালাল দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে আসা প্রতিটি মানুষকে আমরা অবজার্ভ (পর্যবেক্ষণ) করে থাকি। যাকে সন্দেহ হয় তাকেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকি। এ কারণে কোনো দালাল বিচার শাখা-৬-এ যেতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে বিচার শাখা-৬-এর অফিস সহকারী শেখ বাবুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেলে পর্যন্ত চলে। তবে একই ভবনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থাকায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয় সেবাগ্রহীতাদের।’
সেবাপ্রার্থীদের হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (কনস্যুলার) মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কনস্যুলার সেবা দেশের সব মানুষের জন্য। এ সেবাগ্রহণের জন্য কোনোরকমের ফি দিতে হয় না। তবে মাঝেমধ্যে মন্ত্রণালয়ের বাইরে থাকা দালালদের কাছে সেবাগ্রহীতাদের অনেকেই প্রতারিত হয় বলে খবর পাওয়া যায়। নির্দিষ্টভাবে এখনো কোনো ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা দালালদের পাকড়াও করতে পারব।’
আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (কনস্যুলার ও এমআরপি) মো. মোনয়ার মুকাররম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কনস্যুলার সেবা আমরা যেখানে দিয়ে থাকি, সেখানে অনেক বোর্ড স্থাপন করেছি যেন সেবাপ্রার্থীরা এসে প্রতারণার শিকার না হন। এরপরও কনস্যুলার সেবার জন্য একজন সেবাপ্রার্থীর কোন কোন কাগজগুলো দরকার হবে তা আমাদের ওয়েবসাইটে ক্লিয়ার (পরিষ্কার) করে দিয়ে রেখেছি। এর থেকে আরও বেশি সুবিধা পেতে আমরা আমাদের নাম্বারগুলো দিয়েছি। যে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সেবার বিষয়ে জেনে নিতে পারবেন। এরপরও কেউ প্রতারিত হলে যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ দেয়। তাহলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবা তথ্য অনুযায়ী, বিদেশগামীদের জন্মসনদ, নিকাহনামা, অবিবাহিত সনদপত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট তাদের নিজ নিজ কার্যালয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রধানের সিল ও স্বাক্ষর সংবলিত সনদকে বিচার শাখা-৬-এর আওতায় নটারাইজ ও আইনজীবী দিয়ে সত্যায়িত করাতে হবে। আইনজীবী দিয়ে সত্যায়িতের জন্য তোপখানা রোডের পরিবহন কমিশন কার্যালয় ভবনের দশমতলায় বিচার শাখা-৬-এ সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে হয়। একইদিনে আইনজীবী দিয়ে সত্যায়িতের নথি নিয়ে দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবাকক্ষে উপস্থিত থেকে নথি জমা দিতে হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক প্রত্যয়নপূর্বক বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে বিদেশগামীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পাবেন। অর্থাৎ এক কর্মদিবসের মধ্যেই সত্যায়িত নথির কপি পাওয়ার কথা সেবাপ্রার্থীদের।
লোকসাহিত্য বাংলাদেশের সোনালি সম্পদ বাংলা লোকসাহিত্য আমাদের সংস্কৃতির শেকড়ের সন্ধান দেয়। বাঙালির সঙ্গে বাংলা লোকসাহিত্যের রয়েছে নাড়ির সম্পর্ক। বাংলাদেশের লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় কৃষ্টি, চিন্তাধারা, শিক্ষা, সভ্যতা, উন্নতি ও ঐশ্বর্যের আধার।
গ্রামবাংলার মাঠে-ঘাটে-বাটে, আলো-বাতাসে মিশে আছে বাংলা লোকসাহিত্যের অবয়ব। আমাদের লোকসাহিত্যের নানা উপাদান ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকস্মৃতি বা লোকইতিহাসে। এসব লোকস্মৃতির একাংশকে কিংবদন্তি বলা হয়। স্থান ও নামের ইতিহাসে বিধৃত থাকে কিংবদন্তি।
কিংবদন্তি হলো ইতিহাস ও কল্পনার সংমিশ্রণ; লোককথা বিশেষ যার মধ্যে থাকতে পারে অলৌকিক ঘটনা, যা সত্যিই ঘটেছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। সময়ে সময়ে এটি পরিবর্তিত হতে পারে বিশ্বাসটিকে তাজা, জীবন্ত এবং বাস্তবসম্মত রাখার উদ্দেশ্যে। গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় ঐতিহাসিক পটভূমিতে স্থাপিত লোককথাকে কিংবদন্তি বলেছেন।
লোকস্মৃতি বা কিংবদন্তির ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের বা বাংলাদেশের কোনো কোনো জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে লোকায়ত বাংলাদেশ সিরিজে আমরা নিবেদন করছি ‘কুমিল্লা অঞ্চলের কিংবদন্তি’। কুমিল্লা অঞ্চলে অসংখ্য গ্রাম, গঞ্জ, অঞ্চল, শহর বা দীঘি আছে যেসবের নাম কিংবদন্তি বা কল্পকথাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।
কুমিল্লা জেলার নামও কিংবদন্তি-আশ্রিত। কুমিল্লায় কিংবদন্তি আছে যে, হজরত শাহজালাল (র.) চতুর্দশ শতকের শুরুর দিকে তার মাতুল আহমদ কবীরের দেওয়া এক মুঠো মাটি নিয়ে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করতে আসেন। মাতুল কবীরের নির্দেশ ছিল এরকম: ‘যে স্থানের মাটির সঙ্গে এই মাটির রং, গন্ধ ও স্বাদ মিলে যাবে, সেই স্থান হবে তোমার সাধনার স্থল ও ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র।’ হজরত শাহজালাল (র.) পাহাড়-পর্বত, দুস্তর মরুপথ পাড়ি দিয়ে দেশের পর দেশ পেরিয়ে একদিন কুমিল্লা শহরের পূর্বদিকে গাজীপুর মহল্লার খিলাতলীতে হাজির হন এবং রাত্রিযাপনের জন্য উঁচু একটি টিলায় তাঁবু ফেলেন। হঠাৎ কী মনে করে তাঁর ভূতত্ত্ববিদ চাশনী পীর এ স্থানের মাটি পরীক্ষা করে তাদের বয়ে আনা মাটির সঙ্গে মেলাতে গিয়ে ‘কোহমিলা’ বলে উল্লাসে চিৎকার করে ওঠেন।
কোহমিলা অর্থাৎ অভীষ্ট পাহাড় পাওয়া গেছে শাহজালাল! এ অঞ্চলের কিংবদন্তি এই যে, এই ‘কোহমিলা’ শব্দই পরে ‘কুমিল্লা’য় পরিবর্তিত হয়েছে।
আরেক কিংবদন্তি বলে এখানে ‘কমলাঙ্ক’ নামে এক রাজা ছিলেন। সেই রাজার নামে তার শাসনাধীন এলাকার নাম হয় ‘কমলাঙ্ক নগর’, যে নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে ‘কুমিল্লা’। ‘রাজমালা’ ও ‘ইসলামাবাদ’ নামের গ্রন্থদ্বয়ে এ বিবরণের সমর্থন পাওয়া যায়।
কুমিল্লা অঞ্চলের নানা স্থানের নামকরণেও কিংবদন্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। কুমিল্লার কয়েকটি দীঘি এবং স্থানের নামকরণে কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। কুমিল্লার অনেক দীঘি ও পুকুরের কথা আমাদের কাব্যসাহিত্যেও পাওয়া যায়।
কবি শেখ ফয়জুল্লার ‘গোরক্ষ বিজয়’ কাব্যে বর্ণনা করা হয়েছে:
‘নাথে বোলে এই রাজ্য বড় হএ ভালা।
চারি কড়াকড়ি বিকাএ চন্দনের তোলা।।
লোকের পিধঁন দেখে পাটের পাছড়া।
প্রতি ঘর চালে দেখে সোনার কোমড়া।।
কার পখরির পানি কেহ নাহি খাএ।
মণিমাণিক্য তারা রৌদ্রতে শুকাএ।।
ধন্য ধন্য রাজনগর করি এ বাখানি।
সুবর্ণের কলসে সর্বলোকে খাএ পানি।।’
কিংবদন্তি আছেÑ কুমিল্লার ময়নামতীর নামকরণও রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী রানী ময়নামতীর নামানুসারে হয়েছে। ‘রোহিতগিরি’ নাম থেকে হয়েছে লালমাই পাহাড়। রাজা শালিবাহনের নামানুসারে হয়েছে শালবন বিহার, শালবানপুর গ্রাম, শালবান রাজার দীঘি প্রভৃতি। তেমনি আনন্দ রাজার নামানুসারে হয়েছে আনন্দ বিহার, আনন্দসার ও আনন্দপুর গ্রাম এবং আনন্দ রাজার দীঘি।
কুমিল্লার ‘কোটবাড়ী’র নামকরণও কিংবদন্তিবহুল। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বর্তমান কোটবাড়ী এলাকা ছিল তখনকার গুপ্ত, খড়গ, পাল, চন্দ্র, দেব প্রভৃতি রাজ-রাজড়ার রাজধানী। কেউ কেউ বলেন, এটি ছিল তখনকার রাজাদের দরবারবাড়ি। আবার কেউ বলেন, এটি ছিল তাদের ‘দুর্গ-বাটি’ অর্থাৎ কোটবাড়ী। শব্দের ব্যুৎপত্তি বিবেচনায় নিলে দেখা যায় : কোট একটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ দুর্গ, অন্য অর্থ পাহাড় বা পর্বতের চূড়া। এজন্যই পরবর্তীকালে এ স্থানটি ‘কোটবাড়ী’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
কুমিল্লা শহরের পুবদিকে ‘বজ্রপুর’ নামে একটি গ্রাম আছে। কিংবদন্তি আছে, এখানে এককালে বজরা ভিড়ত। এখানে বজরাঘাট ছিল। এখান থেকে মানুষ বজরায় চড়ে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা করত। ‘বজরা’ থেকেই ‘বজ্রপুর’ নামের উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ মনে করেন, একবার এখানে প্রচন্ড বজ্রপাত হয়েছিল, সে কারণেই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে বজ্রপুর। ‘বজ্র’ নামের কোনো ব্যক্তির নামানুসারে ‘বজ্রপুর’ হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়।
নদীকেন্দ্রিক কিংবদন্তি কুমিল্লা অঞ্চলে প্রচলিত আছে। যেমন
‘গোমতী নদীর কুলে মজিদ স্থাপিয়া।
সুজা বাদসার নামে মজিদ করিয়া।।
সুজা নামে এক গঞ্জ রাজা বসাইল।
সুজাগঞ্জ নাম বলি তাহার রাখিল।।’
সুজাগঞ্জ মানে গোমতীবিধৌত কুমিল্লা। গোমতী নদীর কূলেই সুজা মসজিদ। এর পাশ ঘেঁষেই সুজাগঞ্জ। মোগল শাসনকর্তা শাহ সুজার নাম অনুসারে সুজাগঞ্জ এবং সুজা মসজিদ। আজও টিকে আছে ‘সুজা মসজিদ’ এবং ‘সুজাগঞ্জ’ নাম।
কুমিল্লা অঞ্চল কিংবদন্তিসমৃদ্ধ। কিংবদন্তিবহুল এ অঞ্চলের কৃষ্টি, সভ্যতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, যা লোকায়ত বাংলার সম্পদ। এ অঞ্চলের স্থান বা নামের লোকস্মৃতি বা কিংবদন্তি বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন, তাদের রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, সংস্কার-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, অভিজ্ঞতা-অভিজ্ঞান, বুদ্ধি-প্রজ্ঞা, ধর্মীয় ও লৌকিক কার্যকলাপের প্রতিচ্ছবি, যাতে পরিস্ফুটিত লোকায়ত বাংলার মুখ।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার ২২ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০০১ সালের এই দিনে পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু মণ্ডল, রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কর্মী মোক্তার হোসেন ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ দিন পর মারা যান খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস রায়। আহত হয় শতাধিক নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান মতিঝিল থানায় মামলা করেন।
পল্টনে সিপিবির সমাবেশে তিন শক্তির যৌথ আক্রমণ করেছিল বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, সেদিন কমিউনিস্টদের স্তব্ধ করার জন্যই বোমা হামলা চালানো হয়েছিল, যাতে তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘২০০১ সালে পল্টন ময়দানে সিপিবির আহ্বানে লাখো মানুষের সমাবেশ হয়। সমাবেশটি ছিল ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক. ক্ষেতমজুর, বুদ্ধিজীবীÑ সবার সমাবেশ। তারা জড়ো হয়েছিলেন যারা যার দাবিতে। আমাদের দাবি ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করা, লুটপাটতন্ত্র ধ্বংস করা এবং বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় এগিয়ে নিতে গণতন্ত্রের সংগ্রামকে বেগবান করা।’
তিনি বলেন, ‘বোমা হামলার ঘটনায় আমাদের মনে হয়েছে, ওই সময় কমিউনিস্ট পার্টি যে লড়াই করছিল, তা ছিল দ্বিদলীয় ব্যবস্থার বাইরে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা। সেটা দেখে শাসকগোষ্ঠী ভয় পেয়ে যায়। সেই সঙ্গে বুর্জোয়া গোষ্ঠী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিও ভীত ছিল। তাদের যৌথ আক্রমণ আমাদের ওপর পরিচালিত হয়েছিল। এ দেশে যাতে বামপন্থি শক্তির উত্থান না ঘটে। আমরা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, বামপন্থি শক্তিকে ধ্বংস করা যায়নি। কমিউনিস্ট পার্টি নীতি আদর্শের লড়াই অব্যাহত রেখেছে এবং জনগণের সঙ্গে তাদের দাবি আদায়ের লড়াই করে যাচ্ছে।’
সিপিবির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের তৎকালীন সভাপতি বাদী হয়ে মামলা করেন। দীর্ঘদিন এ মামলা ঝুলে ছিল। দুই বছর আগে মামলায় রায় হয়েছে। তাতে কয়েকজন উগ্রবাদী ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। এখন পর্যন্ত মামলার রায় কার্যকর হয়নি।’
২০২০ সালে ২০ জানুয়ারি পল্টনে সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ১০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার জীবিত ১২ আসামির মধ্যে দুজনকে খালাস দেন তিনি।
হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানও এ মামলায় অভিযুক্ত আসামি ছিলেন। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আর জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলাম পলাতক।
এ ১০ আসামিকে সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে রায়ে। এ ছাড়া পলাতক দুই আসামি মো. মশিউর রহমান ও রফিকুল আলম মিরাজকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এটা ছিল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এর পেছনে কী ঘটনা ছিল এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ খুঁজে বের করতে পারেনি বলে মনে করছি আমরা। আমরা এখন দাবি করছি ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা হোক এবং জনগণের সামনে উপস্থিত করা হোক।’
প্রতি বছরের মতো এবারও পল্টন শহীদদের স্মরণে আজ (২০ জানুয়ারি, শুক্রবার) সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনের সামনে শহীদ স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হবে। বেলা ৩টায় শাহবাগ চত্বরে সমাবেশ ও লাল পতাকার মিছিল করবে দলটি।
ফেনীর দক্ষিণ সহদেবপুরের বাসিন্দা পলাশ চন্দ্র দাস (৩৯) গত বছর ১২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে রাজধানীর গুলশানে দেশটির দূতাবাসে পাসপোর্টসহ উপস্থিত হন। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ পলাশের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণ এবং ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় মালয়েশিয়া ভ্রমণের ভিসার জাল সিল।
একইভাবে মাদারীপুরের হাউজদী দুর্গাবদী গ্রামের বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান খান (৩৬) গত বছর ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে দূতাবাসে যান। তার পাসপোর্টেও ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কম্বোডিয়া ও ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণের ভিসার সিল জাল হিসেবে শনাক্ত করে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। ভিসাপ্রত্যাশী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বাসিন্দা মো. মিলন (৪০) গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য যান। তার পাসপোর্টের ২০ ও ২২ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণের জাল ভিসার সিল শনাক্ত করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রত্যাশী আরও কয়েকজন বাংলাদেশির পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসার সিল জাল হিসেবে শনাক্ত করার পর পুলিশের শরণাপন্ন হয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। দূতাবাসের সহকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ইনভেস্টিগেশন) মাইকেল লি গুলশান থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পলাশ চন্দ্র দাশ রাজধানীর মতিঝিলের রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্সে ‘ট্রাভেলার্স ডায়েরি’ নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে তার ভিসা প্রসেসিং করেছেন। মাহাবুবুর রহমান ভিসা প্রসেসিং করেছেন ‘হ্যাপি হলিডেইস’ নামের আরেকটি এজেন্সির মাধ্যমে। অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ না করেই পাসপোর্টে সেসব দেশের ভিসার জাল সিল মারা ব্যক্তিদের পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তারা অসাধু উদ্দেশ্যে আমেরিকার ভিসা পেতে চেয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হলো।’
এ অভিযোগের পর তদন্ত শেষে পাসপোর্টে ভিসার জাল সিল মেরে ভিসার আবেদনকারী ও ভিসা প্রসেসিং এজেন্সির অভিযুক্ত ছয়জনকে গত বুধবার রাতে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন পলাশ চন্দ্র দাশ, ওয়াহিদ উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম সুমন, মাহাবুবুর রহমান খান, আবু জাফর ও আরিফুর রহমান। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের ভিসার চারটি জাল সিল ও তিনটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমেরিকান দূতাবাসের এক কর্মকর্তা আমাদের জানান, তাদের কাছে ভিসার জন্য আবেদনকারীদের অনেক পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসা ও ইমিগ্রেশনের ইন ও আউটের সিল মারা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সন্দেহ হয়েছে। এরপরই আমরা তদন্তে নামি। তদন্তে দেখা গেছে এসব ভিসার সিল জাল।’
তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে কিছু এজেন্সি এসব ভিসার জাল সিল মারছে। তারা ভেবেছিল এগুলো কখনো যাচাই করা হবে না। চক্রটি মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাতে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করছে। তাদের ফাঁদে অনেকেই পা দিচ্ছেন। এসব এজেন্সিই জাল সিল মেরে ভিসা করে দিতে পারে না।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন সেসব দেশের ভিসা করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি। ভিসা প্রার্থীদের সম্মতিতেই তারা প্রার্থীর পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসার সিল এবং ইমিগ্রেশনের ইন (ঢোকা) ও আউটের (বের হওয়া) জাল সিল পাসপোর্টে লাগায়। চক্রটি গত দুই থেকে তিন বছর ধরে এ ধরনের কাজ করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, দেখা গেছে ব্যবসায়ী পলাশ চন্দ্র দাস অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য ট্রাভেলার্স ডায়েরি নামের এজেন্সিটির মালিক ওয়াহিদ উদ্দিন ও তার সহকারী শফিকুল ইসলাম সুমনের মাধ্যমে পাসপোর্টে জাল সিল মারেন। মাহাবুবুর হ্যাপি হলিডেইস এজেন্সির মালিক মো. আরিফুর রহমান ও তার সহকারী মো. আবু ভাবনার সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা এবং সিল নিজেরা তৈরি করে পাসপোর্টে ব্যবহার করেন।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সিই ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি খুলে বসেছে। এদের মধ্যে কিছু অসাধু এজেন্সি ভিসাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভিসা সহজে পেতে পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের জাল সিল মারছে পাসপোর্টে।’
এসব ভিসা প্রসেসিং এজেন্সির কোনো বৈধ কাগজ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান ডিবির এ ডিসি।
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব (সা’দ কান্ধলভীর অনুসারী) আজ শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার রাত থেকে বিভিন্ন জেলা থেকে ইজতেমায় মুসল্লিরা ময়দানে আসতে থাকেন। ইজতেমা ময়দানে বৃহত্তর জুমার নামাজ আদায় করা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাওলানা আব্দুস সাত্তারের জিম্মাদারিতে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্বেও দেশের ৬৪ জেলা ছাড়াও বিদেশি মুসল্লিরা ইজতেমায় অংশ নিয়ে যার যার খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। শুক্রবার ফজরের নামাজের পর বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।
এবারের ইজতেমায় প্রায় দশ হাজারের মতো বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশি মুসল্লিরা ইজতেমায় যোগ দেবেন বলে প্রত্যাশা করছেন ইজতেমা আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
প্রথম পর্বের মতো দ্বিতীয় পর্বেও ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা গড়ে তুলেছেন নিরাপত্তা বলয়। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগেই ময়দানে এসে পৌঁছেছেন আদি তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলবীর ছেলে মাওলানা ইউসুফ কান্ধলবী, মাওলানা সাঈদ কান্ধলবী, মাওলানা ইলিয়াস কান্ধলবী এবং তার মেয়ের জামাতা মাওলানা হাসান। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা ময়দানে প্রবেশ করেন। এ সময় তাদের তাবলিগের সাথীরা ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের সা’দপন্থিদের মিডিয়া সমন্বয়কারী মো. সায়েম। তিনি জানান, ইজতেমার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই বৃহস্পতিবার বাদ জোহর বয়ান করেন নিজাম উদ্দিন মারকাজের মাওলানা ফারুক এবং তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আশরাফ আলী। আছর বাদ আনুষ্ঠানিকভাবে আম বয়না করেন পাকিস্তান থেকে আগত হারুন কোরেশি এবং তা বাংলায় তরজমা করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ। তিনি আরও জানান, আজ জুম্মার নামাজ পড়াবেন দিল্লির মাওলানা সা’দ কান্ধলভীর বড় ছেলে মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ কান্ধলভী। পরে বয়ান করবেন ওয়াসিফুল ইসলাম। আসর বাদ নিজামউদ্দিন মারকাজের মাওলানা সাঈদ বিন সা’দ বয়ান করবেন এবং তার তরজমায় থাকবেন মুফতি আজিমুদ্দিন। মাগরিব বাদ মাওলানা ইউসুফ বিন সা’দ এবং তা বাংলায় তরজমা করবেন মাওলানা ইউসুফ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
আজ থেকে ছেষট্টি বছর আগে ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) ১৩৬৪’র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫’র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান শনাক্ত করতে এই লেখা। প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক একাডেমিক ও নির্মোহ- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রচিত, এর সঙ্গে কলাম লেখকের নিজস্ব বোধ বিশ্বাস চিন্তা চেতনা কিংবা কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগের সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক দেশে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
ভাষার গঠনপ্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতিপ্রকৃতি তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র-নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
খোদ ‘রাজনীতি’র ধারণার বিবর্তন ও ব্যবহারিক তাৎপর্যে পরিবর্তন-পর্যালোচনায় দেখা যায় কৌটিল্য (খ্রি.পূর্ব ৩৭৬-২৮৩) এর মতে রাজনীতি হচ্ছে নিজ সমাজ পোষণ তোষণ কিংবা শত্রু মোকাবিলায় রাজার ক্ষমতা ধরে রাখা বা প্রয়োগ করার কৌশল। কৌটিল্য বিশ্বাস করতেন রাজার দায়িত্ব বা লক্ষ্য হচ্ছে বহু বৈষয়িক সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাম্ভিক আনন্দলাভ ও বিলাস উপভোগ করা, আর এ জন্য রাজা যেকোনোভাবে সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনে সচেষ্ট হবে, সৈন্য পুষবে নিজের নিরাপত্তা বিধান এবং অন্য রাজ্য দখল করে সাম্রাজ্যের আকার বাড়ানোর কাজে। প্রজাকল্যাণ সাধন এবং নিজের ক্ষমতা সংরক্ষণে রাজাকে কূট-কৌশলী হতে হয়। কৌটিল্যের মতে রাজনীতি হচ্ছে একই সঙ্গে সেরা কৌশল বিজ্ঞান (সুপার সায়েন্স) ও সেরা কলা (সুপার আর্ট)। কৌটিল্যের অর্ধশতাব্দী পর প্লেটো (খ্রি.পূ ৪২৮-৩৪৮) মনে করতেন সমাজে চাওয়া পাওয়ার সব ধরনের প্রয়াস-প্রচেষ্টা, বাদ-বিসংবাদ, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নিরসনে সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ন্যায়নীতিনির্ভরতা, যৌক্তিতা, সুশাসন বা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে সব পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ বা সমন্বিত শক্তি হিসেবে বিকাশ লাভ করবে। ঐকবদ্ধ করাই সৎ বা সফল রাজনীতি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল (খ্রি.পূর্ব ৩৮৪-৩২২) যদিও তার গুরুর অনুসারী ছিলেন তথাপি তার মতে রাজনীতি is highly critical of the ideal constitution set forth in Plato’s Republic on the grounds that it overvalues political unity, it embraces a system of communism that is impractical and inimical to human nature, and it neglects the happiness. সমসাময়িক আরেক পন্ডিত সক্রেটিসও (৪৭০-৩৯৯) ভাবতেন ভিন্নভাবে- the purpose of politics was not to capture power, nor it was an art hwo to remain in power. Political ethics make good and proper citizens. Both public and private persons must learn the art of political ethics. ম্যাকিয়াভেলি (১৪৫৯-১৫২৭) মনে করতেন for a ruler, it was better to be widely feared than to be greatly loved; a loved ruler retains authority by obligation, while a feared leader rules by fear of punishment.
রাজনীতির ভাষায় শব্দ একটি বড় অনুষঙ্গ। সময়ের অবসরে সৃষ্ট ও বহুল উচ্চারিত বা ব্যবহৃত এসব শব্দের ব্যঞ্জনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র ও চারিত্র ফুটে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবৎ দেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়। অন্যকথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা দলীয় প্রয়োজনে ভাষার যে ব্যবহার করেছেন, তা দেখানোর আগে দুনিয়ার কয়েকটি বড় বড় রাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রয়োজনে ভাষার কী ব্যবহার করেছে তার দু একটি দৃষ্টান্ত অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের রচনা থেকেই দেখা যাক ‘১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় গোয়েবলসের নেতৃত্বাধীনে ‘রাইখ সংস্কৃতি সংসদ’ গড়ে উঠছে। এ সংস্কৃতি সংসদের বিভাগ ছিল সাতটি-সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, শিল্প, সংগীত, থিয়েটার এবং সিনেমা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করে তোলার জন্য সাতটি বিভাগই একযোগে প্রচারণার কাজ করতে শুরু দিল। যারা এর কিছুদিন আগে জনমত প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল যখন ক্ষমতাসীন হয়, অন্যদল রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে। সেজন্য সরকারি দলের অস্তিত্বের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সরকার সমর্থিত বিরোধী দলের। সমগ্র জাতিকে এ দুই দল আপনাপন মতে দীক্ষিত করে তুলবার জন্য খবরের কাগজ, সভা-সমিতি ও ভাষা ব্যবহারের অন্য পন্থাগুলোকে অবলম্বন করে জোর প্রচারণা চালায়। জনমত যাদের প্রচারণায় অধিক পরিমাণে সাড়া দেয়, তারাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায়।’
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ নিচয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সে সব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কাজ করার জন্য নয়। রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতকগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্র করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্রে ত্যক্তবিরক্ত ও বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়। দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দরকষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রাজনৈতিক দল তাদের না থাকে, তাহলে যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়। আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিয়ালদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতাদের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।