
ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব রটনার অভিযোগে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর ডিবির প্রধান হারুন-অর-রশীদ গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্য উপায়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে অস্থিতিশীল করে তোলে। সম্প্রতি কিছু লোককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যে ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। এ ছাড়া তাদের দেওয়া তথ্যে আরও কিছু কর্মকর্তাকে সন্দেহের মধ্যে রেখে অধিকতর তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রাপ্ত অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে কিছুসংখ্যক স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি জড়িত ছিল। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাংকটি যখন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের হাত থেকে এস আলম গ্রুপসহ অন্যদের হাতে আসে, তখন থেকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি ব্যাংকটিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা শুরু করে। ব্যাংকটিকে ধ্বংসের পাশাপাশি তারা দেশের অর্থনীতিকে টালমাটাল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে চায়। এরা মূলত স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সহযোগিতায় তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এমন চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই ব্যাংকার। ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত ছিল। গ্রেপ্তাররা হলো মো. সাইদ উল্লা, মো. মোশাররফ হোসেন, শহিদুল্লাহ মজমুদার ও ক্যাপ্টেন (অব.) হাবিবুর রহমান।
দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে জানিয়ে ডিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার বিষয়টি একটি গুজব। আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে আমানত উত্তোলনে বিরত থাকতে হবে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে গুজব থেকে সচেতন থাকতে হবে। এ ছাড়া গুজব রটনাকারীদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য প্রদানের জন্য অনুরোধও করা হয়।
দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা যে কয়টি খাতের ওপর নির্ভরশীল তার মধ্যে অন্যতম রেমিট্যান্স প্রবাহ (প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা)। কিন্তু সেই প্রবাসীরাই বিদেশ গমনের সময় বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথি নোটারি বা নোটারি পাবলিক করে আইনজীবী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিল দিয়ে সত্যায়িত করাতে হয়। সরকারি এসব কার্যক্রম বিনামূল্যে হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সময়ই প্রবাসীরা তাদের নথি সত্যায়িত করাতে গিয়ে দালালদের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী বিদেশগামী প্রবাসীদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবা ও আইনজীবী কর্র্তৃক নথি সত্যায়িতের সিল বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। কিন্তু এ দুটি সিল নিতে যেখানে কোনো টাকা প্রদানের কথা নয়, সেখানে দাপ্তরিক নানা জটিলতার ভয় দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ের আশপাশে ওত পেতে থাকা দালালরা সত্যায়িত প্রার্থীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ২৫০০-৩০০০ টাকা আদায় করে থাকে। আর শুধু দালালই নয়, এর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিচার শাখা-৬-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অনেক পুলিশ সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগ, পরিবহন পুল ভবনে অবস্থিত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৬-এ আসা বিদেশগামী প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তাদেরই একজন বরিশালের ইব্রাহিম হাওলাদার। থাকেন ইতালিতে। জন্মনিবন্ধনের কাগজ সত্যায়িত করতে ঢাকায় এসে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগের সেবাকক্ষে বসে ইব্রাহিম হাওলাদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জন্মনিবন্ধনে ভুল তথ্য থাকায় অনলাইন প্রক্রিয়া মেনে তা আবার ঠিক করাতে হয়েছে। এরপর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছি আমার জন্মনিবন্ধন সত্যায়িত করাতে। কিন্তু এ কাজে এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশপাশে থাকা দালাল ও পুলিশ সদস্যদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তারা নানা জটিলতার ভয় দেখিয়ে আমার কাছে ৩ হাজার টাকা দাবি করে। যেহেতু আমারও জরুরি ভিত্তিতে সত্যায়িত নিবন্ধনের দরকার ছিল, তাই রিস্ক (ঝুঁকি) না নিয়ে তাদের টাকা দিয়ে কাজটি করাতে বাধ্য হয়েছি। যদিও পরে জানতে পেরেছি নথি সত্যায়িত করতে কোনো টাকার দরকার হয় না।’
আরেক ভুক্তভোগী শারমিন আক্তার। রংপুর থেকে আসা এ নারী পরিবহন পুল ভবনের বিচার শাখা-৬-এ আইনজীবীর সিল সেবা নিতে এসে পুলিশ সদস্যদের হয়রানির শিকার হন। শারমিনের স্বামী বেলায়েত হোসেন থাকেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। শারমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমিও স্বামীর কাছে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে তার আগে আমাদের বিয়ের কাবিন সত্যায়িত করাতে হবে। এর জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। এসব কাগজ কীভাবে সত্যায়িত করাতে হয় তা না জানার কারণে চার দিন ধরেও কাবিন সত্যায়িত করতে পারিনি। যেখানেই গিয়েছি সেখানেই আমাকে সাহায্য করার কথা বলে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দাবি করে দালালরা। অ্যাডভোকেটের সিল পেতে পরিবহন পুল ভবনের প্রবেশমুখে বাধা ও টাকার বিনিময়ে সিল পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য।’
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন পুল ভবনে প্রবেশদ্বারে ডিউটিরত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল হক বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্য টাকা নেন বলে আমার জানা নেই। বরং এখানে আসা প্রত্যেক সেবাপ্রার্থীকে আমরা সাহায্য করে থাকি। তবে কেউ যদি বাইরের দালাল দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে আসা প্রতিটি মানুষকে আমরা অবজার্ভ (পর্যবেক্ষণ) করে থাকি। যাকে সন্দেহ হয় তাকেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকি। এ কারণে কোনো দালাল বিচার শাখা-৬-এ যেতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে বিচার শাখা-৬-এর অফিস সহকারী শেখ বাবুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেলে পর্যন্ত চলে। তবে একই ভবনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থাকায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয় সেবাগ্রহীতাদের।’
সেবাপ্রার্থীদের হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (কনস্যুলার) মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কনস্যুলার সেবা দেশের সব মানুষের জন্য। এ সেবাগ্রহণের জন্য কোনোরকমের ফি দিতে হয় না। তবে মাঝেমধ্যে মন্ত্রণালয়ের বাইরে থাকা দালালদের কাছে সেবাগ্রহীতাদের অনেকেই প্রতারিত হয় বলে খবর পাওয়া যায়। নির্দিষ্টভাবে এখনো কোনো ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা দালালদের পাকড়াও করতে পারব।’
আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (কনস্যুলার ও এমআরপি) মো. মোনয়ার মুকাররম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কনস্যুলার সেবা আমরা যেখানে দিয়ে থাকি, সেখানে অনেক বোর্ড স্থাপন করেছি যেন সেবাপ্রার্থীরা এসে প্রতারণার শিকার না হন। এরপরও কনস্যুলার সেবার জন্য একজন সেবাপ্রার্থীর কোন কোন কাগজগুলো দরকার হবে তা আমাদের ওয়েবসাইটে ক্লিয়ার (পরিষ্কার) করে দিয়ে রেখেছি। এর থেকে আরও বেশি সুবিধা পেতে আমরা আমাদের নাম্বারগুলো দিয়েছি। যে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সেবার বিষয়ে জেনে নিতে পারবেন। এরপরও কেউ প্রতারিত হলে যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ দেয়। তাহলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবা তথ্য অনুযায়ী, বিদেশগামীদের জন্মসনদ, নিকাহনামা, অবিবাহিত সনদপত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট তাদের নিজ নিজ কার্যালয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রধানের সিল ও স্বাক্ষর সংবলিত সনদকে বিচার শাখা-৬-এর আওতায় নটারাইজ ও আইনজীবী দিয়ে সত্যায়িত করাতে হবে। আইনজীবী দিয়ে সত্যায়িতের জন্য তোপখানা রোডের পরিবহন কমিশন কার্যালয় ভবনের দশমতলায় বিচার শাখা-৬-এ সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে হয়। একইদিনে আইনজীবী দিয়ে সত্যায়িতের নথি নিয়ে দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবাকক্ষে উপস্থিত থেকে নথি জমা দিতে হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক প্রত্যয়নপূর্বক বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে বিদেশগামীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পাবেন। অর্থাৎ এক কর্মদিবসের মধ্যেই সত্যায়িত নথির কপি পাওয়ার কথা সেবাপ্রার্থীদের।
লোকসাহিত্য বাংলাদেশের সোনালি সম্পদ বাংলা লোকসাহিত্য আমাদের সংস্কৃতির শেকড়ের সন্ধান দেয়। বাঙালির সঙ্গে বাংলা লোকসাহিত্যের রয়েছে নাড়ির সম্পর্ক। বাংলাদেশের লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় কৃষ্টি, চিন্তাধারা, শিক্ষা, সভ্যতা, উন্নতি ও ঐশ্বর্যের আধার।
গ্রামবাংলার মাঠে-ঘাটে-বাটে, আলো-বাতাসে মিশে আছে বাংলা লোকসাহিত্যের অবয়ব। আমাদের লোকসাহিত্যের নানা উপাদান ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকস্মৃতি বা লোকইতিহাসে। এসব লোকস্মৃতির একাংশকে কিংবদন্তি বলা হয়। স্থান ও নামের ইতিহাসে বিধৃত থাকে কিংবদন্তি।
কিংবদন্তি হলো ইতিহাস ও কল্পনার সংমিশ্রণ; লোককথা বিশেষ যার মধ্যে থাকতে পারে অলৌকিক ঘটনা, যা সত্যিই ঘটেছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। সময়ে সময়ে এটি পরিবর্তিত হতে পারে বিশ্বাসটিকে তাজা, জীবন্ত এবং বাস্তবসম্মত রাখার উদ্দেশ্যে। গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় ঐতিহাসিক পটভূমিতে স্থাপিত লোককথাকে কিংবদন্তি বলেছেন।
লোকস্মৃতি বা কিংবদন্তির ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের বা বাংলাদেশের কোনো কোনো জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে লোকায়ত বাংলাদেশ সিরিজে আমরা নিবেদন করছি ‘কুমিল্লা অঞ্চলের কিংবদন্তি’। কুমিল্লা অঞ্চলে অসংখ্য গ্রাম, গঞ্জ, অঞ্চল, শহর বা দীঘি আছে যেসবের নাম কিংবদন্তি বা কল্পকথাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।
কুমিল্লা জেলার নামও কিংবদন্তি-আশ্রিত। কুমিল্লায় কিংবদন্তি আছে যে, হজরত শাহজালাল (র.) চতুর্দশ শতকের শুরুর দিকে তার মাতুল আহমদ কবীরের দেওয়া এক মুঠো মাটি নিয়ে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করতে আসেন। মাতুল কবীরের নির্দেশ ছিল এরকম: ‘যে স্থানের মাটির সঙ্গে এই মাটির রং, গন্ধ ও স্বাদ মিলে যাবে, সেই স্থান হবে তোমার সাধনার স্থল ও ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র।’ হজরত শাহজালাল (র.) পাহাড়-পর্বত, দুস্তর মরুপথ পাড়ি দিয়ে দেশের পর দেশ পেরিয়ে একদিন কুমিল্লা শহরের পূর্বদিকে গাজীপুর মহল্লার খিলাতলীতে হাজির হন এবং রাত্রিযাপনের জন্য উঁচু একটি টিলায় তাঁবু ফেলেন। হঠাৎ কী মনে করে তাঁর ভূতত্ত্ববিদ চাশনী পীর এ স্থানের মাটি পরীক্ষা করে তাদের বয়ে আনা মাটির সঙ্গে মেলাতে গিয়ে ‘কোহমিলা’ বলে উল্লাসে চিৎকার করে ওঠেন।
কোহমিলা অর্থাৎ অভীষ্ট পাহাড় পাওয়া গেছে শাহজালাল! এ অঞ্চলের কিংবদন্তি এই যে, এই ‘কোহমিলা’ শব্দই পরে ‘কুমিল্লা’য় পরিবর্তিত হয়েছে।
আরেক কিংবদন্তি বলে এখানে ‘কমলাঙ্ক’ নামে এক রাজা ছিলেন। সেই রাজার নামে তার শাসনাধীন এলাকার নাম হয় ‘কমলাঙ্ক নগর’, যে নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে ‘কুমিল্লা’। ‘রাজমালা’ ও ‘ইসলামাবাদ’ নামের গ্রন্থদ্বয়ে এ বিবরণের সমর্থন পাওয়া যায়।
কুমিল্লা অঞ্চলের নানা স্থানের নামকরণেও কিংবদন্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। কুমিল্লার কয়েকটি দীঘি এবং স্থানের নামকরণে কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। কুমিল্লার অনেক দীঘি ও পুকুরের কথা আমাদের কাব্যসাহিত্যেও পাওয়া যায়।
কবি শেখ ফয়জুল্লার ‘গোরক্ষ বিজয়’ কাব্যে বর্ণনা করা হয়েছে:
‘নাথে বোলে এই রাজ্য বড় হএ ভালা।
চারি কড়াকড়ি বিকাএ চন্দনের তোলা।।
লোকের পিধঁন দেখে পাটের পাছড়া।
প্রতি ঘর চালে দেখে সোনার কোমড়া।।
কার পখরির পানি কেহ নাহি খাএ।
মণিমাণিক্য তারা রৌদ্রতে শুকাএ।।
ধন্য ধন্য রাজনগর করি এ বাখানি।
সুবর্ণের কলসে সর্বলোকে খাএ পানি।।’
কিংবদন্তি আছেÑ কুমিল্লার ময়নামতীর নামকরণও রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী রানী ময়নামতীর নামানুসারে হয়েছে। ‘রোহিতগিরি’ নাম থেকে হয়েছে লালমাই পাহাড়। রাজা শালিবাহনের নামানুসারে হয়েছে শালবন বিহার, শালবানপুর গ্রাম, শালবান রাজার দীঘি প্রভৃতি। তেমনি আনন্দ রাজার নামানুসারে হয়েছে আনন্দ বিহার, আনন্দসার ও আনন্দপুর গ্রাম এবং আনন্দ রাজার দীঘি।
কুমিল্লার ‘কোটবাড়ী’র নামকরণও কিংবদন্তিবহুল। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বর্তমান কোটবাড়ী এলাকা ছিল তখনকার গুপ্ত, খড়গ, পাল, চন্দ্র, দেব প্রভৃতি রাজ-রাজড়ার রাজধানী। কেউ কেউ বলেন, এটি ছিল তখনকার রাজাদের দরবারবাড়ি। আবার কেউ বলেন, এটি ছিল তাদের ‘দুর্গ-বাটি’ অর্থাৎ কোটবাড়ী। শব্দের ব্যুৎপত্তি বিবেচনায় নিলে দেখা যায় : কোট একটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ দুর্গ, অন্য অর্থ পাহাড় বা পর্বতের চূড়া। এজন্যই পরবর্তীকালে এ স্থানটি ‘কোটবাড়ী’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
কুমিল্লা শহরের পুবদিকে ‘বজ্রপুর’ নামে একটি গ্রাম আছে। কিংবদন্তি আছে, এখানে এককালে বজরা ভিড়ত। এখানে বজরাঘাট ছিল। এখান থেকে মানুষ বজরায় চড়ে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা করত। ‘বজরা’ থেকেই ‘বজ্রপুর’ নামের উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ মনে করেন, একবার এখানে প্রচন্ড বজ্রপাত হয়েছিল, সে কারণেই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে বজ্রপুর। ‘বজ্র’ নামের কোনো ব্যক্তির নামানুসারে ‘বজ্রপুর’ হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়।
নদীকেন্দ্রিক কিংবদন্তি কুমিল্লা অঞ্চলে প্রচলিত আছে। যেমন
‘গোমতী নদীর কুলে মজিদ স্থাপিয়া।
সুজা বাদসার নামে মজিদ করিয়া।।
সুজা নামে এক গঞ্জ রাজা বসাইল।
সুজাগঞ্জ নাম বলি তাহার রাখিল।।’
সুজাগঞ্জ মানে গোমতীবিধৌত কুমিল্লা। গোমতী নদীর কূলেই সুজা মসজিদ। এর পাশ ঘেঁষেই সুজাগঞ্জ। মোগল শাসনকর্তা শাহ সুজার নাম অনুসারে সুজাগঞ্জ এবং সুজা মসজিদ। আজও টিকে আছে ‘সুজা মসজিদ’ এবং ‘সুজাগঞ্জ’ নাম।
কুমিল্লা অঞ্চল কিংবদন্তিসমৃদ্ধ। কিংবদন্তিবহুল এ অঞ্চলের কৃষ্টি, সভ্যতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, যা লোকায়ত বাংলার সম্পদ। এ অঞ্চলের স্থান বা নামের লোকস্মৃতি বা কিংবদন্তি বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন, তাদের রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, সংস্কার-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, অভিজ্ঞতা-অভিজ্ঞান, বুদ্ধি-প্রজ্ঞা, ধর্মীয় ও লৌকিক কার্যকলাপের প্রতিচ্ছবি, যাতে পরিস্ফুটিত লোকায়ত বাংলার মুখ।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার ২২ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০০১ সালের এই দিনে পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু মণ্ডল, রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কর্মী মোক্তার হোসেন ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ দিন পর মারা যান খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস রায়। আহত হয় শতাধিক নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান মতিঝিল থানায় মামলা করেন।
পল্টনে সিপিবির সমাবেশে তিন শক্তির যৌথ আক্রমণ করেছিল বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, সেদিন কমিউনিস্টদের স্তব্ধ করার জন্যই বোমা হামলা চালানো হয়েছিল, যাতে তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘২০০১ সালে পল্টন ময়দানে সিপিবির আহ্বানে লাখো মানুষের সমাবেশ হয়। সমাবেশটি ছিল ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক. ক্ষেতমজুর, বুদ্ধিজীবীÑ সবার সমাবেশ। তারা জড়ো হয়েছিলেন যারা যার দাবিতে। আমাদের দাবি ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করা, লুটপাটতন্ত্র ধ্বংস করা এবং বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় এগিয়ে নিতে গণতন্ত্রের সংগ্রামকে বেগবান করা।’
তিনি বলেন, ‘বোমা হামলার ঘটনায় আমাদের মনে হয়েছে, ওই সময় কমিউনিস্ট পার্টি যে লড়াই করছিল, তা ছিল দ্বিদলীয় ব্যবস্থার বাইরে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা। সেটা দেখে শাসকগোষ্ঠী ভয় পেয়ে যায়। সেই সঙ্গে বুর্জোয়া গোষ্ঠী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিও ভীত ছিল। তাদের যৌথ আক্রমণ আমাদের ওপর পরিচালিত হয়েছিল। এ দেশে যাতে বামপন্থি শক্তির উত্থান না ঘটে। আমরা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, বামপন্থি শক্তিকে ধ্বংস করা যায়নি। কমিউনিস্ট পার্টি নীতি আদর্শের লড়াই অব্যাহত রেখেছে এবং জনগণের সঙ্গে তাদের দাবি আদায়ের লড়াই করে যাচ্ছে।’
সিপিবির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের তৎকালীন সভাপতি বাদী হয়ে মামলা করেন। দীর্ঘদিন এ মামলা ঝুলে ছিল। দুই বছর আগে মামলায় রায় হয়েছে। তাতে কয়েকজন উগ্রবাদী ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। এখন পর্যন্ত মামলার রায় কার্যকর হয়নি।’
২০২০ সালে ২০ জানুয়ারি পল্টনে সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ১০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার জীবিত ১২ আসামির মধ্যে দুজনকে খালাস দেন তিনি।
হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানও এ মামলায় অভিযুক্ত আসামি ছিলেন। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আর জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলাম পলাতক।
এ ১০ আসামিকে সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে রায়ে। এ ছাড়া পলাতক দুই আসামি মো. মশিউর রহমান ও রফিকুল আলম মিরাজকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এটা ছিল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এর পেছনে কী ঘটনা ছিল এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ খুঁজে বের করতে পারেনি বলে মনে করছি আমরা। আমরা এখন দাবি করছি ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা হোক এবং জনগণের সামনে উপস্থিত করা হোক।’
প্রতি বছরের মতো এবারও পল্টন শহীদদের স্মরণে আজ (২০ জানুয়ারি, শুক্রবার) সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনের সামনে শহীদ স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হবে। বেলা ৩টায় শাহবাগ চত্বরে সমাবেশ ও লাল পতাকার মিছিল করবে দলটি।
ফেনীর দক্ষিণ সহদেবপুরের বাসিন্দা পলাশ চন্দ্র দাস (৩৯) গত বছর ১২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে রাজধানীর গুলশানে দেশটির দূতাবাসে পাসপোর্টসহ উপস্থিত হন। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ পলাশের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণ এবং ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় মালয়েশিয়া ভ্রমণের ভিসার জাল সিল।
একইভাবে মাদারীপুরের হাউজদী দুর্গাবদী গ্রামের বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান খান (৩৬) গত বছর ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে দূতাবাসে যান। তার পাসপোর্টেও ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কম্বোডিয়া ও ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণের ভিসার সিল জাল হিসেবে শনাক্ত করে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। ভিসাপ্রত্যাশী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বাসিন্দা মো. মিলন (৪০) গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য যান। তার পাসপোর্টের ২০ ও ২২ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণের জাল ভিসার সিল শনাক্ত করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রত্যাশী আরও কয়েকজন বাংলাদেশির পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসার সিল জাল হিসেবে শনাক্ত করার পর পুলিশের শরণাপন্ন হয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। দূতাবাসের সহকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ইনভেস্টিগেশন) মাইকেল লি গুলশান থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পলাশ চন্দ্র দাশ রাজধানীর মতিঝিলের রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্সে ‘ট্রাভেলার্স ডায়েরি’ নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে তার ভিসা প্রসেসিং করেছেন। মাহাবুবুর রহমান ভিসা প্রসেসিং করেছেন ‘হ্যাপি হলিডেইস’ নামের আরেকটি এজেন্সির মাধ্যমে। অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ না করেই পাসপোর্টে সেসব দেশের ভিসার জাল সিল মারা ব্যক্তিদের পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তারা অসাধু উদ্দেশ্যে আমেরিকার ভিসা পেতে চেয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হলো।’
এ অভিযোগের পর তদন্ত শেষে পাসপোর্টে ভিসার জাল সিল মেরে ভিসার আবেদনকারী ও ভিসা প্রসেসিং এজেন্সির অভিযুক্ত ছয়জনকে গত বুধবার রাতে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন পলাশ চন্দ্র দাশ, ওয়াহিদ উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম সুমন, মাহাবুবুর রহমান খান, আবু জাফর ও আরিফুর রহমান। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের ভিসার চারটি জাল সিল ও তিনটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমেরিকান দূতাবাসের এক কর্মকর্তা আমাদের জানান, তাদের কাছে ভিসার জন্য আবেদনকারীদের অনেক পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসা ও ইমিগ্রেশনের ইন ও আউটের সিল মারা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সন্দেহ হয়েছে। এরপরই আমরা তদন্তে নামি। তদন্তে দেখা গেছে এসব ভিসার সিল জাল।’
তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে কিছু এজেন্সি এসব ভিসার জাল সিল মারছে। তারা ভেবেছিল এগুলো কখনো যাচাই করা হবে না। চক্রটি মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাতে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করছে। তাদের ফাঁদে অনেকেই পা দিচ্ছেন। এসব এজেন্সিই জাল সিল মেরে ভিসা করে দিতে পারে না।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন সেসব দেশের ভিসা করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি। ভিসা প্রার্থীদের সম্মতিতেই তারা প্রার্থীর পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসার সিল এবং ইমিগ্রেশনের ইন (ঢোকা) ও আউটের (বের হওয়া) জাল সিল পাসপোর্টে লাগায়। চক্রটি গত দুই থেকে তিন বছর ধরে এ ধরনের কাজ করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, দেখা গেছে ব্যবসায়ী পলাশ চন্দ্র দাস অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য ট্রাভেলার্স ডায়েরি নামের এজেন্সিটির মালিক ওয়াহিদ উদ্দিন ও তার সহকারী শফিকুল ইসলাম সুমনের মাধ্যমে পাসপোর্টে জাল সিল মারেন। মাহাবুবুর হ্যাপি হলিডেইস এজেন্সির মালিক মো. আরিফুর রহমান ও তার সহকারী মো. আবু ভাবনার সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা এবং সিল নিজেরা তৈরি করে পাসপোর্টে ব্যবহার করেন।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সিই ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি খুলে বসেছে। এদের মধ্যে কিছু অসাধু এজেন্সি ভিসাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভিসা সহজে পেতে পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের জাল সিল মারছে পাসপোর্টে।’
এসব ভিসা প্রসেসিং এজেন্সির কোনো বৈধ কাগজ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান ডিবির এ ডিসি।
প্রতি বছর শীতের মৌসুমে সবজিতে সয়লাব থাকে রাজধানীসহ সারা দেশের হাটবাজার। বাজারে প্রচুর সবজির সরবরাহ ক্রেতাদের স্বস্তি দেয়। কিন্তু এবার শীতের ভরা মৌসুমে পরিস্থিতি উল্টো। বাজারে সবজি থাকলেও দাম তো কমেইনি, বরং কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে। বাজারে এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ ও কাঁচামরিচ।
ক্রেতারা অস্বস্তি প্রকাশ করে বলছেন, সব কিছুর দামই বেড়ে গেছে। আগে শীত শুরু হলে সবজির দাম কমে যেত, কিন্তু এবার উল্টোটা দেখছি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজধানীর কাঁঠালবাগান ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ৯০-১০৫ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ গতকাল ১১০-১১৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। প্রতি পিস লাউ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। শসার কেজি ৫০-৫৫ টাকা, মুলা ৩০-৩৫ টাকা, নতুন লাল আলু ৪০-৪৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা (লম্বা), ফুলকপি প্রতিটি ৩০-৪০ টাকা, পাতাকপি ৩০-৩৫ টাকা। অবশ্য ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়।
এছাড়া মিষ্টিকুমড়া কেজি ৪০-৫০ টাকা দরে, জাত ভেদে প্রতি কেজি শিম ৩৫-৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা ও লেবুর হালি ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় সুলাইমান আহমেদ নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সব সময় দেখে আসছেন শীতকালে প্রচুর সবজির জোগান থাকে বাজারে। দামও থাকে কম। এখন পরিস্থিতি দেখে তার মনে হচ্ছে না যে তিনি দেশে আছেন। তিনি মনে করেন, কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা মানুষের পকেট কাটছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় কৃষকরা মাঠ থেকে ফসল তুলছেন না। যার ফলে বাজারে আমদানি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী বেলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। এখান থেকে অন্যান্য বাজারের ব্যবসায়ীরাও কেনেন। আমাদের যাতায়াত খরচটা লাগে না বলে কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারি। কিন্তু অন্য এলাকার বাজারগুলোতে আরও বেশি দামে সবজি বিক্রি হয়।
তেজকুনিপাড়া সংলগ্ন কলমীলতা বাজারের কয়েকটি মুদি দোকান ঘুরে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব থেকে বেশি বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা করে।
প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল ৪৬-৫০ টাকা, ব্রি-আটাশ ৫৬-৬০ টাকা, মিনিকেট ৭৬-৮০, নাজিরশাইল ৭০-৯০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতো চড়া দামে সব ধরনের মাছের বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বড় আকারের রুই মাছের কেজি ৩০০-৩১০ টাকা, কাতলা মাছ (ছোট) ২৭০-২৮০ টাকা, কার্প জাতীয় মাছের কেজি ২৫০ টাকা, বড় আকারের তেলাপিয়া ২০০, কই ২২০, মৃগেল ২০০-২১০ ও নলা ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁঠালবাগান বাজারের মাছ বিক্রেতা মনির দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাছের বাজার কখন ওঠে কখন নামে তা বলা মুশকিল। তবে নতুন বছরের শুরুর দিন থেকে মাছের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। বাজার একবার বাড়লে তা আর কমার কোনো সম্ভাবনা থাকে না বরং বাড়ার একটা প্রতিযোগিতা থাকে।
কাঁঠালবাগান ও তেজকুনিপাড়া সংলগ্ন কলমীলতা বাজারের মাংসের দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৫৫-১৬৫ টাকা করে। পাকিস্তানি লাল ২৮০-৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫১০-৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ছাড়াও মাংসের মধ্যে গরু ৭০০ টাকা, খাসি ১ হাজার ১০০ টাকা ও বকরির মাংসের কেজি ৯০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি এক বছরেরও কম। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করা দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আন্দোলন করছে।
এ ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের চাপ রয়েছে বিদেশিদের। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে এই চাপ ক্রমশ বাড়ছে। বিদেশিদের মধ্যে এবার যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অনেক বেশি। এর আলামত দেখা যাচ্ছে কয়েক মাস ধরে। নির্বাচন ছাড়াও দেশটি মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীন প্রশ্নে অনেক সোচ্চার। ২০২১ সালের ডিসেম্বর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি।
সরকারের তরফ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য তারা বিদেশিদের উদ্যোগ নিতে বলছে। একই সঙ্গে সরকার যেকোনো চাপে নতি স্বীকার করবে না, সেটাও বলেছে।
কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯০ সালে দেশে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি আসার পর থেকেই বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক আগ্রহ বাড়ছে। নির্বাচনের এক বছর আগে থেকেই প্রভাবশালী দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নানা সবক দিতে থাকে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
তাদের মতে, বরং নির্বাচন ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রভাব লক্ষণীয়। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই প্রতিবেশী দেশ এবং বড় দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং সরকার নিয়ে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল ভারত। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পশ্চিমাদের প্রভাব। আর তিন দশক ধরে বিভিন্ন কূটনৈতিক জোট, আঞ্চলিক জোট এবং সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহ বেড়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রভাবশালী দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ যতই থাক না কেন, এর মূল কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা। তারা মনে করছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির সমাধান যদি নিজেরা না করতে পারি, তাহলে বাইরের প্রভাব বাড়তে থাকবে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ওয়ালী উর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন ভূ-রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশকে তাদের প্রভাব বলয়ে রাখতে চায়। তাদের নিজেদের দেশেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান সরকারও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করছে। তাদের এই চাপ কাজে দেবে না।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের অভিমত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে এবং আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কারণও তাই। কূটনীতিকরা বলছেন, ভারত, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ থাকলেও এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বিএনপির পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে বারবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি কিছুটা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন পদ্ধতি এবং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বেশি সোচ্চার হলেও তাদের কূটনীতি সরকারবিরোধী দলগুলোর পক্ষে যাবে এমন ধারণা করার কোনো কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। এটা যেমন সত্য, তেমনি ইন্দো প্যাসিফিক এবং এ অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের বোঝাপড়াটা বেশি জরুরি। আর সে কারণেই বিএনপি যতই তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলুক যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছে না। তাদের বক্তব্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং নির্বাচনে বিরোধীপক্ষের জন্য সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ তৈরি করা।
কূটনীতিক সূত্রগুলো বলছে, আগের কয়েক দফা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও ভারতের সঙ্গে একধরনের সমঝোতা করে বা আলোচনা করে তাদের মতামত দিয়েছে। কিন্তু ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ এবং তাদের চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ পায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে। এরপর থেকেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সংলাপও হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেছেন। তাদের সফরে আগামী নির্বাচন, বিরোধীপক্ষের প্রতি সরকারের আচরণ, মানবাধিকার ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সরকার, আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
গত ২১ মার্চ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃত করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে, নির্বাচনে জাল ভোট দেওয়া হয়েছে এবং বিরোধীদলীয় পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোসহ গুরুতর অনিয়ম রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিয়মিত সম্মান ও অংশীদারিত্বের মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। এটা তারা চালিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এমন আগ্রহের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এশিয়ায় নিজেদের প্রভাব বলয় বাড়াতে চায় দেশটি। এরই মধ্যে দেশটি এশিয়ায় তাদের বন্ধু দেশগুলোকে নিয়ে ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ (আইপিএস) পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এর আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিক ফোরাম গঠন করা হয়েছে। একই কৌশলের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ভারত সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে কোয়াড গঠন করেছে। এগুলোর লক্ষ্য হলো চীনের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলে একটি শক্তিশালী বলয় গঠন করা। ভারতের পাশাপাশি এ বলয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকেও চায়। বাংলাদেশ যেন কোনোভাবেই চীনের বলয়ে না যেতে পারে, সেই কৌশলের অংশ হিসেবেও আগামী নির্বাচন ঘিরে চাপ তৈরির কৌশল নিয়েছে দেশটি। যদিও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোনো জোটেই যায়নি। আবার ‘বার্মা অ্যাক্ট’ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়। এসব কারণে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ নানা ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুসহ ঢাকায় সফররত দেশটির কর্মকর্তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নিয়েও ইতিবাচক কথা বলেন। এ ছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের বিভিন্ন বক্তব্যেও নির্বাচনের পরিবেশ ও স্বচ্ছতা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকা সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তারও বলেছিলেন, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে তারা সরকারকে এবং এই দেশকে সহযোগিতা করেব। তিনি সেই সময় দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাস ও ইউএসএইডের বাংলাদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব তুলে ধরেন।
গত বছরের অক্টোবরে ঢাকায় এসেই এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। এরপর থেকে তিনি নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোনো একটি দলকে সমর্থন করে না। তারা চান জনগণ তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচন করবে।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে তাদের মনোভাব তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন বার্তায়ও বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তায় অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে লেখা বাইডেনের এ বার্তায় বর্তমান সরকার ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসাও করা হয়েছে।
এর আগে ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউন্সিলর ডেরেক এইচ শোলে তার ঢাকা সফরে বলেছিলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, অর্থাৎ যারা পরাজিত হবেন, তারাও যেন মনে করেন নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ হয়েছে এমনটাই তারা চান। তিনি বলেছিলেন, শক্তিশালী সুশীল সমাজ, মুক্ত গণমাধ্যম এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক পরিবেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠবে না। এই পরিবেশ তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও শোলে জানান।
ডেরেক শোলে চলে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, সরকারপক্ষ থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিকে বলা হয়েছে তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত। তবে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পূর্ববর্তী নির্বাচন নিয়ে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। যখনই প্রয়োজন হবে, তারা সেটা জানাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশিদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই সুযোগটা আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোই করে দিয়ে আসছে। এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী অবস্থান চায়। এ জন্যই তারা কথা বলছে।’
রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষায় সবার দায়িত্ব রয়েছে। কারও কোনো অবহেলা কিংবা গর্হিত কাজে রোজাদারের রোজা পালনে অসুবিধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা। রমজানের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি মুসলমানরা যেন নির্বিঘেœ ইবাদত-বন্দেগি করতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। মাহে রমজান ও রোজাদারের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। সকল প্রকার গোনাহ পাপাচার এবং অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকা।
রোজাদারদের কষ্ট লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা। তারা যেন সুন্দরভাবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে, সে জন্য মসজিদের আশপাশের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সাহরি ও ইফতারে পচা-বাসি খাবার বিক্রি না করার বিষয়ে নজরদারি করা। মশার কামড় রোধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া।
নানা কারণে অনেকে রোজা রাখতে পারেন না। এ কারণে ব্যক্তিভেদে মাসয়ালা প্রয়োগ হবে। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা নষ্ট করা, রোজা ও রোজাদারের প্রতি সম্মান না দেখানো অনেক বড় ধৃষ্টতা। এগুলো থেকে বিরত থাকা চাই। প্রকাশ্যে ইসলামের কোনো বিধানের অমর্যাদা, রোজার মূল চেতনা ক্ষুণœ হয় এমন বিষয়ে লিপ্ত থাকা নাফরমানির অন্তর্ভুক্ত। জেনেবুঝে সংঘবদ্ধভাবে এমন নাফরমানি আল্লাহর ক্রোধ বাড়িয়ে দেয় এবং অনেক বড় দুর্গতি ডেকে আনে। আল্লাহর ওয়াস্তে রমজানের সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এসব গর্হিত আচরণ থেকে নিবৃত্ত থাকা চাই।
মনে রাখতে হবে, রমজান তাকওয়া (আল্লাহভীতি) অর্জনের মাস। এ মাসে করণীয় হলো তাকওয়া অর্জনে এগিয়ে আসা। কিয়ামুল লাইলের (তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ) প্রতি যতœবান হওয়া। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে তেলাওয়াতে কোরআন, তাদাব্বুরে কোরআন (কোরআনের আয়াত ও হেদায়েত নিয়ে চিন্তাভাবনা) এবং আমল বিল কোরআনের (কোরআনের আমল) প্রতি মনোযোগী হওয়া। যাদের কোরআন তেলাওয়াত সহিহ নেই তেলাওয়াত সহিহ করা। বেশি বেশি নফল ইবাদত, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তিগফার, জিকির-আজকার ইত্যাদিতে সময় ব্যয় করা। সর্বাবস্থায় সহনশীলতা ও ভ্রাতৃত্ব চর্চায় মনোযোগী হওয়া। অধিক পরিমাণে দান-সদকা করা এবং সব ধরনের কল্যাণকর কাজে এগিয়ে আসা। সংযম বজায় রাখা। প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আত্মিক উৎকর্ষের প্রতি মনোনিবেশ করা।
রমজানের বিশেষ বিশেষ মুহূর্তগুলোর ব্যাপারে যতœবান হওয়া। যেমন সাহরি, ইফতার, তারাবি, তাহাজ্জুদ, শবেকদর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর ব্যাপারে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। এ মুহূর্তগুলোর যে বিশেষ আমল রয়েছে তাতে আত্মনিয়োগ করা। বাসাবাড়ি, অফিস-আদালতে ইবাদতের পরিবেশ গড়ে তোলা। মসজিদগুলো ইবাদতের মাধ্যমে আবাদ রাখা। মোদ্দা কথা, এই এক মাসে তাকওয়ার মেহনতের মাধ্যমে গোটা বছরের ইমানি, আমলি এবং রুহানি জিন্দেগির পাথেয় সংগ্রহ করা।
আলেমরা বলে থাকেন, রোজা রেখে ক্লান্ত হয়ে গেলে প্রয়োজনে বিশ্রাম করুন। কিন্তু অনর্থক গল্পে লিপ্ত হবেন না। কারণ কথায় কথা টানতে থাকে এবং আল্লাহ না করুন, বেশি কথা বললে তা ধীরে ধীরে মিথ্যা, গীবত-শেকায়েত ইত্যাদি বিভিন্ন দিকে ছুটতে থাকে।
রমজানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা খুবই খারাপ কথা। যেখানে ঘোষণা হতে থাকে নেকির কাজে অগ্রসর হতে, অনিষ্ট থেকে নিবৃত্ত হতে, সেখানে গোনাহের ধারা অব্যাহত রাখা অনেক বড় বঞ্চনার কারণ। বিশেষ করে অনাচার-পাপাচার ও অশ্লীলতা এবং এমন গোনাহ, যা আল্লাহর ক্রোধকে বাড়িয়ে দেয়, এমনসব বিষয় পুরোপুরি বর্জন করা। কারণ ফিরে আসার এটাই মোক্ষম সময়। কিন্তু ফিরে না এসে এর অনুভূতিও জাগ্রত না হওয়া বহুত বড় ক্ষতির বিষয়।
আজ রমজানের ৯ তারিখ। দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে রমজান মাস। এভাবে মানুষের জীবনও একদিন শেষ হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান তো সে, যে আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। কাজে লাগায় রমজানের বরকতময় প্রতিটি মুহূর্ত। সে অগ্রগামী হয় নেকি ও কল্যাণের পথে, তাকওয়া হাসিলের পথে এবং ব্রত হয় গোনাহ থেকে পাক-পবিত্র হয়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মেহনতে।
লেখক : খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
রাজধানীর পল্লবীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা স্থানীয় যুবদলের নেতা। শুক্রবার ইফতারের আগে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য চলাকালে যুবদলের নেতাকর্মীরা সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন।
হামলায় বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি ইমরুল আহসান জনি, চ্যানেল আইয়ের প্রতিবেদক আখতার হাবিবসহ বেশ কয়েকটি চ্যানেলের ক্যামেরাপারসন আহত হন। দুটি ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জানা গেছে, ইফতার অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের বিপুল উপস্থিতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে দলের কিছু কর্মী কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর চড়াও হন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, যুবদল নেতাদের হামলা থামাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঞ্চ থেকে নেমে এলেও তাদের নিবৃত্ত করতে পারছিলেন না। পরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ভিডিওতে দেখা যায় হামলায় অংশ নেন পল্লবী থানার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, পল্লবী থানা যুবদলের পিয়াস, পল্লবী থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি রাজিব হোসেন পিন্টু, রূপনগর থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. আসিফ, পল্লবী থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মো. মাসুদ এবং পল্লবী থানা ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের মো. মনির।
নেতাকর্মীরা জানান, এসব নেতা যুবদল কেন্দ্রীয় সংসদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের অনুসারী। তবে এ বিষয়ে জানতে মিল্টনের মোবাইলে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হকের মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও সাড়া দেননি তিনি।
তবে ঘটনার পর সংবাদকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর আমিনুল হক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। মিল্টন ও আমিনুল উভয়ই ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী।
এ ঘটনায় সংবাদকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির প্রায় অনুষ্ঠানে সংবাদকর্মীদের হেনস্তা হতে হয়। ক্ষমতায় না আসতেই সাংবাদিকদের এ অবস্থা। ক্ষমতায় আসলে তো আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি নির্যাতন করবে। এমন কোনো প্রোগ্রাম নেই যে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়নি।
তারা আরো বলেন, ‘এর আগে বিএনপির কর্মীরা মাই টিভির সাংবাদিক ইউসুফের ওপর হামলা করেছে। আজকের (শুক্রবার) ঘটনা যে ঘটিয়ে থাকুক, এর দায় উত্তরের শীর্ষ দুই নেতার। আপনারা নিজেরা নিজেরা মারামারি করেন, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হাত তোলা বরদাশত করা যায় না। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিন, ব্যাখ্যা দিন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করেন। একই সঙ্গে আর এমন হবে না, সেটি প্রকাশ্যে বলুন। মনে রাখবেন, এই সাংবাদিকরাই আপনাদের বছরের পর বছর সার্ভ করছে। তারা এভাবে মার খেলে আখেরে আপনারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সব হারাবেন’।
এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির ভাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘জনি ভাইসহ আহত সাংবাদিকদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বিএনপির মহাসচিব মহোদয়ের প্রতি তিনি নিজে গিয়ে জনি ভাইকে উদ্ধার করেছেন। তবে ফুটেজে দেখলাম হামলাকারীদের ছবি আছে। তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া উচিত। দলের না হলেও চিহ্নিত করে পরিষ্কার করা উচিত তারা কারা’।
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে হামলায় আহত সাংবাদিকদের বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এ ঘটনায় মির্জা ফখরুল এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হয় না তারা (নেতাকর্মীরা) দলকে ভালোবাসে। তারা অতিথিদের সম্মান রক্ষা করতে জানে না।’
এ সময় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার মধ্যে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের দালালেরা অনুষ্ঠানে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে।’
আয়োজকদের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে এর সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমাও চাওয়া হয়েছে।’
এ বছর ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের আসর। তবে পাকিস্তান নিজেদের ম্যাচগুলো ভারতে না খেলে বাংলাদেশে খেলতে চায় বলে খবর প্রকাশিত ছড়িয়েছিল। যে খবরকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান নাজাম শেঠি।
এমন কোনো আলোচনাই হয়নি বলে দাবি করে শেঠি বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো পর্যায়ে আমি আইসিসির প্রসঙ্গ কিংবা অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ বিশ্বকাপ নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। এখন পর্যন্ত আইসিসির কোনো সম্মেলনে এই বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
বিশ্বকাপের আগে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে বসবে এশিয়া কাপ। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে খেলতে প্রতিবেশী দেশে যেতে রাজি নয় ভারত। তাই তাদের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজনের কথা ভাবছে এসিসি। নাজাম জানিয়েছেন এখনো বিষয়টি আলোচনার টেবিলে আছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ ম্যাচ বাংলাদেশে হওয়ার খবর প্রসঙ্গে শুক্রবার মুখ খুলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। আসলে আমি এটা টিভিতে দেখেছি। আইসিসি বা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড কেউ আমাদের কিছু বলেনি।’
রুতুরাজ গয়কোয়াডের দাপুটে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। যা তাড়া করতে নেমে শুভমন গিলের পর রাহুল তেওয়াতিয়া ও রশিদ খানের নৈপুণ্যে জয় তুলে নিল গুজরাট টাইটান্স।
আহমেদাবাদে শুক্রবার আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে ৫ উইকেটের জয় তুলে নেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন গুজরাট। ১৭৯ রানের লক্ষ্য তারা ৪ বল হাতে রেখে ছুঁয়েছে।
গিল সর্বোচ্চ ৩৬ বলে ৬৩ রান করেছেন ৬ চার ও ৩ ছক্কায়। শেষ দিকে তেওয়াতিয়ার ১৪ বলে অপরাজিত ১৫ ও রশিদ খানের ৩ বলে অপরাজিত ১০ রান দলকে জয় এনে দেয়।
চেন্নাইয়ের পক্ষে রাজবর্ধন হাঙ্গার্গেকর ৩৬ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা চেন্নাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৮ রান সংগ্রহ করে। রুতুরাজ সর্বোচ্চ ৯২ রান করেন। তার ৫০ বলের ইনিংসে ছিল ৪ চার ও ৯ ছক্কা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।