
ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব রটনার অভিযোগে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে ঢাকা মহানগর ডিবির প্রধান হারুন-অর-রশীদ গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্য উপায়ে গুজব ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করে বাংলাদেশের আর্থিক খাতকে অস্থিতিশীল করে তোলে। সম্প্রতি কিছু লোককে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যে ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত কিছু ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। এ ছাড়া তাদের দেওয়া তথ্যে আরও কিছু কর্মকর্তাকে সন্দেহের মধ্যে রেখে অধিকতর তদন্ত চলছে। তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রাপ্ত অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে কিছুসংখ্যক স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি জড়িত ছিল। পরবর্তী সময়ে এ ব্যাংকটি যখন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের হাত থেকে এস আলম গ্রুপসহ অন্যদের হাতে আসে, তখন থেকে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রটি ব্যাংকটিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা শুরু করে। ব্যাংকটিকে ধ্বংসের পাশাপাশি তারা দেশের অর্থনীতিকে টালমাটাল করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে চায়। এরা মূলত স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সহযোগিতায় তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের সোশ্যাল মিডিয়া ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এমন চারজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা সবাই ব্যাংকার। ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত ছিল। গ্রেপ্তাররা হলো মো. সাইদ উল্লা, মো. মোশাররফ হোসেন, শহিদুল্লাহ মজমুদার ও ক্যাপ্টেন (অব.) হাবিবুর রহমান।
দেশে বর্তমানে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে জানিয়ে ডিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হওয়ার বিষয়টি একটি গুজব। আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে আমানত উত্তোলনে বিরত থাকতে হবে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে গুজব থেকে সচেতন থাকতে হবে। এ ছাড়া গুজব রটনাকারীদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য প্রদানের জন্য অনুরোধও করা হয়।
দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা যে কয়টি খাতের ওপর নির্ভরশীল তার মধ্যে অন্যতম রেমিট্যান্স প্রবাহ (প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা)। কিন্তু সেই প্রবাসীরাই বিদেশ গমনের সময় বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নথি নোটারি বা নোটারি পাবলিক করে আইনজীবী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিল দিয়ে সত্যায়িত করাতে হয়। সরকারি এসব কার্যক্রম বিনামূল্যে হওয়ার কথা থাকলেও প্রায় সময়ই প্রবাসীরা তাদের নথি সত্যায়িত করাতে গিয়ে দালালদের হাতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী বিদেশগামী প্রবাসীদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবা ও আইনজীবী কর্র্তৃক নথি সত্যায়িতের সিল বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। কিন্তু এ দুটি সিল নিতে যেখানে কোনো টাকা প্রদানের কথা নয়, সেখানে দাপ্তরিক নানা জটিলতার ভয় দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ের আশপাশে ওত পেতে থাকা দালালরা সত্যায়িত প্রার্থীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ২৫০০-৩০০০ টাকা আদায় করে থাকে। আর শুধু দালালই নয়, এর সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগ এবং আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন বিচার শাখা-৬-এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অনেক পুলিশ সদস্য জড়িত বলে অভিযোগ সেবাপ্রার্থীদের। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগ, পরিবহন পুল ভবনে অবস্থিত আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৬-এ আসা বিদেশগামী প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
তাদেরই একজন বরিশালের ইব্রাহিম হাওলাদার। থাকেন ইতালিতে। জন্মনিবন্ধনের কাগজ সত্যায়িত করতে ঢাকায় এসে তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও ওয়েলফেয়ার অনুবিভাগের সেবাকক্ষে বসে ইব্রাহিম হাওলাদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জন্মনিবন্ধনে ভুল তথ্য থাকায় অনলাইন প্রক্রিয়া মেনে তা আবার ঠিক করাতে হয়েছে। এরপর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় এসেছি আমার জন্মনিবন্ধন সত্যায়িত করাতে। কিন্তু এ কাজে এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশপাশে থাকা দালাল ও পুলিশ সদস্যদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তারা নানা জটিলতার ভয় দেখিয়ে আমার কাছে ৩ হাজার টাকা দাবি করে। যেহেতু আমারও জরুরি ভিত্তিতে সত্যায়িত নিবন্ধনের দরকার ছিল, তাই রিস্ক (ঝুঁকি) না নিয়ে তাদের টাকা দিয়ে কাজটি করাতে বাধ্য হয়েছি। যদিও পরে জানতে পেরেছি নথি সত্যায়িত করতে কোনো টাকার দরকার হয় না।’
আরেক ভুক্তভোগী শারমিন আক্তার। রংপুর থেকে আসা এ নারী পরিবহন পুল ভবনের বিচার শাখা-৬-এ আইনজীবীর সিল সেবা নিতে এসে পুলিশ সদস্যদের হয়রানির শিকার হন। শারমিনের স্বামী বেলায়েত হোসেন থাকেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। শারমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমিও স্বামীর কাছে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে তার আগে আমাদের বিয়ের কাবিন সত্যায়িত করাতে হবে। এর জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। এসব কাগজ কীভাবে সত্যায়িত করাতে হয় তা না জানার কারণে চার দিন ধরেও কাবিন সত্যায়িত করতে পারিনি। যেখানেই গিয়েছি সেখানেই আমাকে সাহায্য করার কথা বলে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দাবি করে দালালরা। অ্যাডভোকেটের সিল পেতে পরিবহন পুল ভবনের প্রবেশমুখে বাধা ও টাকার বিনিময়ে সিল পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্য।’
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন পুল ভবনে প্রবেশদ্বারে ডিউটিরত পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল হক বলেন, ‘কোনো পুলিশ সদস্য টাকা নেন বলে আমার জানা নেই। বরং এখানে আসা প্রত্যেক সেবাপ্রার্থীকে আমরা সাহায্য করে থাকি। তবে কেউ যদি বাইরের দালাল দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে আসা প্রতিটি মানুষকে আমরা অবজার্ভ (পর্যবেক্ষণ) করে থাকি। যাকে সন্দেহ হয় তাকেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে থাকি। এ কারণে কোনো দালাল বিচার শাখা-৬-এ যেতে পারে না।’
এ প্রসঙ্গে বিচার শাখা-৬-এর অফিস সহকারী শেখ বাবুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকেলে পর্যন্ত চলে। তবে একই ভবনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থাকায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয় সেবাগ্রহীতাদের।’
সেবাপ্রার্থীদের হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (কনস্যুলার) মো. তৌফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কনস্যুলার সেবা দেশের সব মানুষের জন্য। এ সেবাগ্রহণের জন্য কোনোরকমের ফি দিতে হয় না। তবে মাঝেমধ্যে মন্ত্রণালয়ের বাইরে থাকা দালালদের কাছে সেবাগ্রহীতাদের অনেকেই প্রতারিত হয় বলে খবর পাওয়া যায়। নির্দিষ্টভাবে এখনো কোনো ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দেয়নি। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা দালালদের পাকড়াও করতে পারব।’
আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক (কনস্যুলার ও এমআরপি) মো. মোনয়ার মুকাররম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কনস্যুলার সেবা আমরা যেখানে দিয়ে থাকি, সেখানে অনেক বোর্ড স্থাপন করেছি যেন সেবাপ্রার্থীরা এসে প্রতারণার শিকার না হন। এরপরও কনস্যুলার সেবার জন্য একজন সেবাপ্রার্থীর কোন কোন কাগজগুলো দরকার হবে তা আমাদের ওয়েবসাইটে ক্লিয়ার (পরিষ্কার) করে দিয়ে রেখেছি। এর থেকে আরও বেশি সুবিধা পেতে আমরা আমাদের নাম্বারগুলো দিয়েছি। যে কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সেবার বিষয়ে জেনে নিতে পারবেন। এরপরও কেউ প্রতারিত হলে যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ দেয়। তাহলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবা তথ্য অনুযায়ী, বিদেশগামীদের জন্মসনদ, নিকাহনামা, অবিবাহিত সনদপত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট তাদের নিজ নিজ কার্যালয় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রধানের সিল ও স্বাক্ষর সংবলিত সনদকে বিচার শাখা-৬-এর আওতায় নটারাইজ ও আইনজীবী দিয়ে সত্যায়িত করাতে হবে। আইনজীবী দিয়ে সত্যায়িতের জন্য তোপখানা রোডের পরিবহন কমিশন কার্যালয় ভবনের দশমতলায় বিচার শাখা-৬-এ সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে উপস্থিত থাকতে হয়। একইদিনে আইনজীবী দিয়ে সত্যায়িতের নথি নিয়ে দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার সেবাকক্ষে উপস্থিত থেকে নথি জমা দিতে হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্র্তৃক প্রত্যয়নপূর্বক বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে বিদেশগামীরা তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাতে পাবেন। অর্থাৎ এক কর্মদিবসের মধ্যেই সত্যায়িত নথির কপি পাওয়ার কথা সেবাপ্রার্থীদের।
লোকসাহিত্য বাংলাদেশের সোনালি সম্পদ বাংলা লোকসাহিত্য আমাদের সংস্কৃতির শেকড়ের সন্ধান দেয়। বাঙালির সঙ্গে বাংলা লোকসাহিত্যের রয়েছে নাড়ির সম্পর্ক। বাংলাদেশের লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় কৃষ্টি, চিন্তাধারা, শিক্ষা, সভ্যতা, উন্নতি ও ঐশ্বর্যের আধার।
গ্রামবাংলার মাঠে-ঘাটে-বাটে, আলো-বাতাসে মিশে আছে বাংলা লোকসাহিত্যের অবয়ব। আমাদের লোকসাহিত্যের নানা উপাদান ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকস্মৃতি বা লোকইতিহাসে। এসব লোকস্মৃতির একাংশকে কিংবদন্তি বলা হয়। স্থান ও নামের ইতিহাসে বিধৃত থাকে কিংবদন্তি।
কিংবদন্তি হলো ইতিহাস ও কল্পনার সংমিশ্রণ; লোককথা বিশেষ যার মধ্যে থাকতে পারে অলৌকিক ঘটনা, যা সত্যিই ঘটেছিল বলে বিশ্বাস করা হয়। সময়ে সময়ে এটি পরিবর্তিত হতে পারে বিশ্বাসটিকে তাজা, জীবন্ত এবং বাস্তবসম্মত রাখার উদ্দেশ্যে। গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয় ঐতিহাসিক পটভূমিতে স্থাপিত লোককথাকে কিংবদন্তি বলেছেন।
লোকস্মৃতি বা কিংবদন্তির ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের বা বাংলাদেশের কোনো কোনো জেলার বিভিন্ন স্থানের নামকরণ করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিত মনে রেখে লোকায়ত বাংলাদেশ সিরিজে আমরা নিবেদন করছি ‘কুমিল্লা অঞ্চলের কিংবদন্তি’। কুমিল্লা অঞ্চলে অসংখ্য গ্রাম, গঞ্জ, অঞ্চল, শহর বা দীঘি আছে যেসবের নাম কিংবদন্তি বা কল্পকথাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে।
কুমিল্লা জেলার নামও কিংবদন্তি-আশ্রিত। কুমিল্লায় কিংবদন্তি আছে যে, হজরত শাহজালাল (র.) চতুর্দশ শতকের শুরুর দিকে তার মাতুল আহমদ কবীরের দেওয়া এক মুঠো মাটি নিয়ে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করতে আসেন। মাতুল কবীরের নির্দেশ ছিল এরকম: ‘যে স্থানের মাটির সঙ্গে এই মাটির রং, গন্ধ ও স্বাদ মিলে যাবে, সেই স্থান হবে তোমার সাধনার স্থল ও ধর্মপ্রচারের কেন্দ্র।’ হজরত শাহজালাল (র.) পাহাড়-পর্বত, দুস্তর মরুপথ পাড়ি দিয়ে দেশের পর দেশ পেরিয়ে একদিন কুমিল্লা শহরের পূর্বদিকে গাজীপুর মহল্লার খিলাতলীতে হাজির হন এবং রাত্রিযাপনের জন্য উঁচু একটি টিলায় তাঁবু ফেলেন। হঠাৎ কী মনে করে তাঁর ভূতত্ত্ববিদ চাশনী পীর এ স্থানের মাটি পরীক্ষা করে তাদের বয়ে আনা মাটির সঙ্গে মেলাতে গিয়ে ‘কোহমিলা’ বলে উল্লাসে চিৎকার করে ওঠেন।
কোহমিলা অর্থাৎ অভীষ্ট পাহাড় পাওয়া গেছে শাহজালাল! এ অঞ্চলের কিংবদন্তি এই যে, এই ‘কোহমিলা’ শব্দই পরে ‘কুমিল্লা’য় পরিবর্তিত হয়েছে।
আরেক কিংবদন্তি বলে এখানে ‘কমলাঙ্ক’ নামে এক রাজা ছিলেন। সেই রাজার নামে তার শাসনাধীন এলাকার নাম হয় ‘কমলাঙ্ক নগর’, যে নাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে ‘কুমিল্লা’। ‘রাজমালা’ ও ‘ইসলামাবাদ’ নামের গ্রন্থদ্বয়ে এ বিবরণের সমর্থন পাওয়া যায়।
কুমিল্লা অঞ্চলের নানা স্থানের নামকরণেও কিংবদন্তির উল্লেখ পাওয়া যায়। কুমিল্লার কয়েকটি দীঘি এবং স্থানের নামকরণে কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। কুমিল্লার অনেক দীঘি ও পুকুরের কথা আমাদের কাব্যসাহিত্যেও পাওয়া যায়।
কবি শেখ ফয়জুল্লার ‘গোরক্ষ বিজয়’ কাব্যে বর্ণনা করা হয়েছে:
‘নাথে বোলে এই রাজ্য বড় হএ ভালা।
চারি কড়াকড়ি বিকাএ চন্দনের তোলা।।
লোকের পিধঁন দেখে পাটের পাছড়া।
প্রতি ঘর চালে দেখে সোনার কোমড়া।।
কার পখরির পানি কেহ নাহি খাএ।
মণিমাণিক্য তারা রৌদ্রতে শুকাএ।।
ধন্য ধন্য রাজনগর করি এ বাখানি।
সুবর্ণের কলসে সর্বলোকে খাএ পানি।।’
কিংবদন্তি আছেÑ কুমিল্লার ময়নামতীর নামকরণও রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী রানী ময়নামতীর নামানুসারে হয়েছে। ‘রোহিতগিরি’ নাম থেকে হয়েছে লালমাই পাহাড়। রাজা শালিবাহনের নামানুসারে হয়েছে শালবন বিহার, শালবানপুর গ্রাম, শালবান রাজার দীঘি প্রভৃতি। তেমনি আনন্দ রাজার নামানুসারে হয়েছে আনন্দ বিহার, আনন্দসার ও আনন্দপুর গ্রাম এবং আনন্দ রাজার দীঘি।
কুমিল্লার ‘কোটবাড়ী’র নামকরণও কিংবদন্তিবহুল। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বর্তমান কোটবাড়ী এলাকা ছিল তখনকার গুপ্ত, খড়গ, পাল, চন্দ্র, দেব প্রভৃতি রাজ-রাজড়ার রাজধানী। কেউ কেউ বলেন, এটি ছিল তখনকার রাজাদের দরবারবাড়ি। আবার কেউ বলেন, এটি ছিল তাদের ‘দুর্গ-বাটি’ অর্থাৎ কোটবাড়ী। শব্দের ব্যুৎপত্তি বিবেচনায় নিলে দেখা যায় : কোট একটি সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ দুর্গ, অন্য অর্থ পাহাড় বা পর্বতের চূড়া। এজন্যই পরবর্তীকালে এ স্থানটি ‘কোটবাড়ী’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
কুমিল্লা শহরের পুবদিকে ‘বজ্রপুর’ নামে একটি গ্রাম আছে। কিংবদন্তি আছে, এখানে এককালে বজরা ভিড়ত। এখানে বজরাঘাট ছিল। এখান থেকে মানুষ বজরায় চড়ে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা করত। ‘বজরা’ থেকেই ‘বজ্রপুর’ নামের উৎপত্তি। আবার কেউ কেউ মনে করেন, একবার এখানে প্রচন্ড বজ্রপাত হয়েছিল, সে কারণেই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে বজ্রপুর। ‘বজ্র’ নামের কোনো ব্যক্তির নামানুসারে ‘বজ্রপুর’ হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়।
নদীকেন্দ্রিক কিংবদন্তি কুমিল্লা অঞ্চলে প্রচলিত আছে। যেমন
‘গোমতী নদীর কুলে মজিদ স্থাপিয়া।
সুজা বাদসার নামে মজিদ করিয়া।।
সুজা নামে এক গঞ্জ রাজা বসাইল।
সুজাগঞ্জ নাম বলি তাহার রাখিল।।’
সুজাগঞ্জ মানে গোমতীবিধৌত কুমিল্লা। গোমতী নদীর কূলেই সুজা মসজিদ। এর পাশ ঘেঁষেই সুজাগঞ্জ। মোগল শাসনকর্তা শাহ সুজার নাম অনুসারে সুজাগঞ্জ এবং সুজা মসজিদ। আজও টিকে আছে ‘সুজা মসজিদ’ এবং ‘সুজাগঞ্জ’ নাম।
কুমিল্লা অঞ্চল কিংবদন্তিসমৃদ্ধ। কিংবদন্তিবহুল এ অঞ্চলের কৃষ্টি, সভ্যতা, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, যা লোকায়ত বাংলার সম্পদ। এ অঞ্চলের স্থান বা নামের লোকস্মৃতি বা কিংবদন্তি বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন, তাদের রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার, সংস্কার-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, অভিজ্ঞতা-অভিজ্ঞান, বুদ্ধি-প্রজ্ঞা, ধর্মীয় ও লৌকিক কার্যকলাপের প্রতিচ্ছবি, যাতে পরিস্ফুটিত লোকায়ত বাংলার মুখ।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার ২২ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০০১ সালের এই দিনে পল্টন ময়দানে সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু মণ্ডল, রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিক নেতা আবদুল মজিদ, ঢাকার ডেমরার লতিফ বাওয়ানি জুটমিলের শ্রমিক নেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের কর্মী মোক্তার হোসেন ঘটনাস্থলেই মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ দিন পর মারা যান খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস রায়। আহত হয় শতাধিক নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান মতিঝিল থানায় মামলা করেন।
পল্টনে সিপিবির সমাবেশে তিন শক্তির যৌথ আক্রমণ করেছিল বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, সেদিন কমিউনিস্টদের স্তব্ধ করার জন্যই বোমা হামলা চালানো হয়েছিল, যাতে তারা মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স দেশ রূপান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘২০০১ সালে পল্টন ময়দানে সিপিবির আহ্বানে লাখো মানুষের সমাবেশ হয়। সমাবেশটি ছিল ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক. ক্ষেতমজুর, বুদ্ধিজীবীÑ সবার সমাবেশ। তারা জড়ো হয়েছিলেন যারা যার দাবিতে। আমাদের দাবি ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করা, লুটপাটতন্ত্র ধ্বংস করা এবং বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় এগিয়ে নিতে গণতন্ত্রের সংগ্রামকে বেগবান করা।’
তিনি বলেন, ‘বোমা হামলার ঘটনায় আমাদের মনে হয়েছে, ওই সময় কমিউনিস্ট পার্টি যে লড়াই করছিল, তা ছিল দ্বিদলীয় ব্যবস্থার বাইরে একটি বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা। সেটা দেখে শাসকগোষ্ঠী ভয় পেয়ে যায়। সেই সঙ্গে বুর্জোয়া গোষ্ঠী এবং সাম্প্রদায়িক শক্তিও ভীত ছিল। তাদের যৌথ আক্রমণ আমাদের ওপর পরিচালিত হয়েছিল। এ দেশে যাতে বামপন্থি শক্তির উত্থান না ঘটে। আমরা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে বলতে পারি, বামপন্থি শক্তিকে ধ্বংস করা যায়নি। কমিউনিস্ট পার্টি নীতি আদর্শের লড়াই অব্যাহত রেখেছে এবং জনগণের সঙ্গে তাদের দাবি আদায়ের লড়াই করে যাচ্ছে।’
সিপিবির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘আমাদের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের পর আমাদের তৎকালীন সভাপতি বাদী হয়ে মামলা করেন। দীর্ঘদিন এ মামলা ঝুলে ছিল। দুই বছর আগে মামলায় রায় হয়েছে। তাতে কয়েকজন উগ্রবাদী ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। এখন পর্যন্ত মামলার রায় কার্যকর হয়নি।’
২০২০ সালে ২০ জানুয়ারি পল্টনে সিপিবি সমাবেশে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ১০ জন আসামির মৃত্যুদণ্ড হয়। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করেন। মামলার জীবিত ১২ আসামির মধ্যে দুজনকে খালাস দেন তিনি।
হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানও এ মামলায় অভিযুক্ত আসামি ছিলেন। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির মধ্যে মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। আর জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান ও নুর ইসলাম পলাতক।
এ ১০ আসামিকে সর্বোচ্চ সাজার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে রায়ে। এ ছাড়া পলাতক দুই আসামি মো. মশিউর রহমান ও রফিকুল আলম মিরাজকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়ে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এটা ছিল রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। এর পেছনে কী ঘটনা ছিল এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ খুঁজে বের করতে পারেনি বলে মনে করছি আমরা। আমরা এখন দাবি করছি ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা হোক এবং জনগণের সামনে উপস্থিত করা হোক।’
প্রতি বছরের মতো এবারও পল্টন শহীদদের স্মরণে আজ (২০ জানুয়ারি, শুক্রবার) সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তি ভবনের সামনে শহীদ স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হবে। বেলা ৩টায় শাহবাগ চত্বরে সমাবেশ ও লাল পতাকার মিছিল করবে দলটি।
ফেনীর দক্ষিণ সহদেবপুরের বাসিন্দা পলাশ চন্দ্র দাস (৩৯) গত বছর ১২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে রাজধানীর গুলশানে দেশটির দূতাবাসে পাসপোর্টসহ উপস্থিত হন। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ পলাশের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণ এবং ২০ নম্বর পৃষ্ঠায় মালয়েশিয়া ভ্রমণের ভিসার জাল সিল।
একইভাবে মাদারীপুরের হাউজদী দুর্গাবদী গ্রামের বাসিন্দা মাহাবুবুর রহমান খান (৩৬) গত বছর ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎকার দিতে দূতাবাসে যান। তার পাসপোর্টেও ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কম্বোডিয়া ও ১১ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণের ভিসার সিল জাল হিসেবে শনাক্ত করে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। ভিসাপ্রত্যাশী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার বাসিন্দা মো. মিলন (৪০) গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য যান। তার পাসপোর্টের ২০ ও ২২ নম্বর পৃষ্ঠায় মালদ্বীপ ভ্রমণের জাল ভিসার সিল শনাক্ত করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রত্যাশী আরও কয়েকজন বাংলাদেশির পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসার সিল জাল হিসেবে শনাক্ত করার পর পুলিশের শরণাপন্ন হয় দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। দূতাবাসের সহকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ইনভেস্টিগেশন) মাইকেল লি গুলশান থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পলাশ চন্দ্র দাশ রাজধানীর মতিঝিলের রহমানিয়া ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লেক্সে ‘ট্রাভেলার্স ডায়েরি’ নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে তার ভিসা প্রসেসিং করেছেন। মাহাবুবুর রহমান ভিসা প্রসেসিং করেছেন ‘হ্যাপি হলিডেইস’ নামের আরেকটি এজেন্সির মাধ্যমে। অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ না করেই পাসপোর্টে সেসব দেশের ভিসার জাল সিল মারা ব্যক্তিদের পাসপোর্ট নম্বর উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, ‘তারা অসাধু উদ্দেশ্যে আমেরিকার ভিসা পেতে চেয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হলো।’
এ অভিযোগের পর তদন্ত শেষে পাসপোর্টে ভিসার জাল সিল মেরে ভিসার আবেদনকারী ও ভিসা প্রসেসিং এজেন্সির অভিযুক্ত ছয়জনকে গত বুধবার রাতে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন পলাশ চন্দ্র দাশ, ওয়াহিদ উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম সুমন, মাহাবুবুর রহমান খান, আবু জাফর ও আরিফুর রহমান। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন দেশের ভিসার চারটি জাল সিল ও তিনটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমেরিকান দূতাবাসের এক কর্মকর্তা আমাদের জানান, তাদের কাছে ভিসার জন্য আবেদনকারীদের অনেক পাসপোর্টে বিভিন্ন দেশের ভিসা ও ইমিগ্রেশনের ইন ও আউটের সিল মারা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাদের সন্দেহ হয়েছে। এরপরই আমরা তদন্তে নামি। তদন্তে দেখা গেছে এসব ভিসার সিল জাল।’
তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে কিছু এজেন্সি এসব ভিসার জাল সিল মারছে। তারা ভেবেছিল এগুলো কখনো যাচাই করা হবে না। চক্রটি মূলত যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাতে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি করছে। তাদের ফাঁদে অনেকেই পা দিচ্ছেন। এসব এজেন্সিই জাল সিল মেরে ভিসা করে দিতে পারে না।
ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশের ভিসা পাওয়া কঠিন সেসব দেশের ভিসা করে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি। ভিসা প্রার্থীদের সম্মতিতেই তারা প্রার্থীর পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসার সিল এবং ইমিগ্রেশনের ইন (ঢোকা) ও আউটের (বের হওয়া) জাল সিল পাসপোর্টে লাগায়। চক্রটি গত দুই থেকে তিন বছর ধরে এ ধরনের কাজ করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা এবং প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, দেখা গেছে ব্যবসায়ী পলাশ চন্দ্র দাস অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়ার জন্য ট্রাভেলার্স ডায়েরি নামের এজেন্সিটির মালিক ওয়াহিদ উদ্দিন ও তার সহকারী শফিকুল ইসলাম সুমনের মাধ্যমে পাসপোর্টে জাল সিল মারেন। মাহাবুবুর হ্যাপি হলিডেইস এজেন্সির মালিক মো. আরিফুর রহমান ও তার সহকারী মো. আবু ভাবনার সঙ্গে যোগসাজশে বিভিন্ন দেশের জাল ভিসা এবং সিল নিজেরা তৈরি করে পাসপোর্টে ব্যবহার করেন।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সিই ভিসা প্রসেসিং এজেন্সি খুলে বসেছে। এদের মধ্যে কিছু অসাধু এজেন্সি ভিসাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভিসা সহজে পেতে পাসপোর্টের গুরুত্ব বাড়াতে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের জাল সিল মারছে পাসপোর্টে।’
এসব ভিসা প্রসেসিং এজেন্সির কোনো বৈধ কাগজ আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান ডিবির এ ডিসি।
প্রতি বছর শীতের মৌসুমে সবজিতে সয়লাব থাকে রাজধানীসহ সারা দেশের হাটবাজার। বাজারে প্রচুর সবজির সরবরাহ ক্রেতাদের স্বস্তি দেয়। কিন্তু এবার শীতের ভরা মৌসুমে পরিস্থিতি উল্টো। বাজারে সবজি থাকলেও দাম তো কমেইনি, বরং কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে বেড়েছে। বাজারে এখন সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ ও কাঁচামরিচ।
ক্রেতারা অস্বস্তি প্রকাশ করে বলছেন, সব কিছুর দামই বেড়ে গেছে। আগে শীত শুরু হলে সবজির দাম কমে যেত, কিন্তু এবার উল্টোটা দেখছি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে রাজধানীর কাঁঠালবাগান ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ৯০-১০৫ টাকায় বিক্রি হওয়া কাঁচামরিচ গতকাল ১১০-১১৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। প্রতি পিস লাউ আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। শসার কেজি ৫০-৫৫ টাকা, মুলা ৩০-৩৫ টাকা, নতুন লাল আলু ৪০-৪৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা (লম্বা), ফুলকপি প্রতিটি ৩০-৪০ টাকা, পাতাকপি ৩০-৩৫ টাকা। অবশ্য ৫ টাকা কমে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়।
এছাড়া মিষ্টিকুমড়া কেজি ৪০-৫০ টাকা দরে, জাত ভেদে প্রতি কেজি শিম ৩৫-৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা ও লেবুর হালি ৩০-৩৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় সুলাইমান আহমেদ নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সব সময় দেখে আসছেন শীতকালে প্রচুর সবজির জোগান থাকে বাজারে। দামও থাকে কম। এখন পরিস্থিতি দেখে তার মনে হচ্ছে না যে তিনি দেশে আছেন। তিনি মনে করেন, কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা মানুষের পকেট কাটছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় কৃষকরা মাঠ থেকে ফসল তুলছেন না। যার ফলে বাজারে আমদানি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী বেলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাইকারি বাজার থেকে আমাদের বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। এখান থেকে অন্যান্য বাজারের ব্যবসায়ীরাও কেনেন। আমাদের যাতায়াত খরচটা লাগে না বলে কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারি। কিন্তু অন্য এলাকার বাজারগুলোতে আরও বেশি দামে সবজি বিক্রি হয়।
তেজকুনিপাড়া সংলগ্ন কলমীলতা বাজারের কয়েকটি মুদি দোকান ঘুরে জানা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব থেকে বেশি বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা করে।
প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল ৪৬-৫০ টাকা, ব্রি-আটাশ ৫৬-৬০ টাকা, মিনিকেট ৭৬-৮০, নাজিরশাইল ৭০-৯০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আগের মতো চড়া দামে সব ধরনের মাছের বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বড় আকারের রুই মাছের কেজি ৩০০-৩১০ টাকা, কাতলা মাছ (ছোট) ২৭০-২৮০ টাকা, কার্প জাতীয় মাছের কেজি ২৫০ টাকা, বড় আকারের তেলাপিয়া ২০০, কই ২২০, মৃগেল ২০০-২১০ ও নলা ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁঠালবাগান বাজারের মাছ বিক্রেতা মনির দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাছের বাজার কখন ওঠে কখন নামে তা বলা মুশকিল। তবে নতুন বছরের শুরুর দিন থেকে মাছের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। বাজার একবার বাড়লে তা আর কমার কোনো সম্ভাবনা থাকে না বরং বাড়ার একটা প্রতিযোগিতা থাকে।
কাঁঠালবাগান ও তেজকুনিপাড়া সংলগ্ন কলমীলতা বাজারের মাংসের দোকান ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৫৫-১৬৫ টাকা করে। পাকিস্তানি লাল ২৮০-৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫১০-৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ছাড়াও মাংসের মধ্যে গরু ৭০০ টাকা, খাসি ১ হাজার ১০০ টাকা ও বকরির মাংসের কেজি ৯০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।