
সংবাদ উপস্থাপক ও চিকিৎসক এন কে নাতাশা মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
আইইডিসিআর প্রকাশিত ন্যাশনাল জার্নাল অব পাবলিক হেলথের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন এন কে নাতাশা। টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির প্রতিষ্ঠাকালে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সবশেষ তিনি মাছরাঙা টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা চিকিৎসক মুশতাক হোসেন জানান, ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে নাতাশার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর দেশে ও দেশের বাইরে চিকিৎসা নেন তিনি। ২০২০ সালের মার্চে তার স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করা হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে সুস্থ হয়ে উঠে আবার সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করেন। কিন্তু পরে ডিসেম্বর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে হার্ট অ্যাটাক করলে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
চিকিৎসক নাতাশার মৃত্যুতে তার পরিবার ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরে বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর। নতুন এ স্থায়ী ভেন্যু বুঝে পাওয়ার পর মেলাকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। প্রথম কয়েক দিন আশানুরূপ দর্শনার্থী না থাকলেও এখন প্রতিদিনই ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার সার্বিক আয়োজন নিয়ে দর্শনার্থী-ব্যবসায়ীদের যেমন রয়েছে সন্তুষ্টি, আবার অন্যদিকে কিছু বিষয় নিয়ে রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে অন্যতম হলো রেস্তোরাঁ সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ড।
মেলার স্টলের কর্মচারীদের বাসা থেকে আনা খাবার নিয়ে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বাধ্য হয়ে রেস্তোরাঁগুলোর খাবার চড়া দামে কিনে খেতে হচ্ছে স্টল কর্মচারীদের। মাসিক বেতনের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া এসব স্টলকর্মী বলছেন, এভাবে ‘গলাকাটা’ দামে খাবার কিনতে গেলে মাস শেষে পাওয়া বেতনের টাকা থেকে তাদের পকেটে আর উদ্বৃত্ত কিছু থাকবে না।
এদিকে এবারের আসরের ২০তম দিন গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে মেলায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। এতে করে বিক্রি বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে। গতকাল মেলায় প্রায় ৩ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিল বলে জানিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কর্র্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার মেলায় দেশি-বিদেশি পণ্যের ৩৩১টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলায় নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরাও অংশ নিয়েছেন। মেলার স্টলের প্রাণ হচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা। তারা মেলায় আসা ক্রেতাদের পণ্য সম্পর্কে বুঝিয়ে পরে বিক্রি করেন। এ কারণে প্রায় প্রতিটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলেই আকৃতিভেদে ৫-১৫ জন করে এক মাসের জন্য খণ্ডকালীন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। মেলার স্টলগুলোতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বিক্রয়কর্মী রয়েছে বলে জানা গেছে। মেলার আশপাশে বাড়ি বা মেস ভাড়া আকাশছোঁয়া হওয়ায় এসব কর্মচারী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে এসে-গিয়ে কাজ করছেন। মেলার ভেতরের রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণে স্টল কর্মচারীরা দুপুরের খাবার বাসা থেকে রান্না করে অথবা বাইরে থেকে সাশ্রয়ীমূল্যে কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু এবার মেলায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা স্টল কর্মচারীদের বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার সময় ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে বাধ্য হয়ে চড়া দামেই খাবার কিনে খেতে হচ্ছে মেলার ভেতরে করা রেস্তোরাঁগুলো থেকে। এতে করে তাদের দিনের বেতনের টাকার অধিকাংশই চলে যাচ্ছে দুপুরের খাবার খেতেই। যা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ স্টলগুলোর কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষুব্ধ এক স্টল কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এক মাসের আয়ের বেশিরভাগ টাকা খরচ হচ্ছে মেলার ভেতরে খাবার খেতে। আমাদের বেতন আর কত ধরা হয়েছে! মেলায় খাবার বিক্রির জন্য রেস্তোরাঁ মালিকদের নিয়ে সিন্ডিকেট করা হয়েছে। তারা কাউকেই বাসা থেকে রান্না করা খাবার অথবা বাইরে থেকে খাবার আনতে দিচ্ছে না। আনতে গেলেই বাধা দিচ্ছে তাদের লোকজন। আমাদের বিষয়টি মেলা কর্র্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত। না হলে সামনের বার (মেলার পরের বছরের আসর) আসবে না অনেকেই।’
এ প্রসঙ্গে তার্কিশ প্যাভিলিয়নের কর্মচারী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার বাসা ঢাকার বাড্ডা এলাকায়। প্রতিদিন মেলায় আসতে হচ্ছে। প্রথম প্রথম কয়েক দিন মেলায় বাসা থেকে রান্না করা খাবার এনেছি। তবে প্রথম দিন থেকেই একটি সিন্ডিকেট বাধা দেয়। এখন আর আনতে না পারায় বাধ্য হয়ে ভেতরের রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। যে কয় টাকা বেতন পাচ্ছি তার বেশিরভাগ অংশ রেস্তোরাঁর খাবার বিল দিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এখানে কাজ করতে হচ্ছে। তাই মেলার যে কদিন বাকি রয়েছে কর্র্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার।’
মেলার আরেকটি স্টলের কর্মচারী তুষার আবদুল্লাহ বলেন, ‘রেস্তোরাঁর রান্না করা খাবার খেতে আমার কষ্ট হয়। গ্যাসের সমস্যাসহ একাধিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এখানকার খাবার খেয়ে। বাসা থেকে খাবার আনতে পারলে যেমন খরচ বাঁচত, তেমনি অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা পেতাম। তাছাড়া খরচ কমে গেলে সংসার আরও ভালো চালাতে পারতাম।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবির সচিব ও বাণিজ্যমেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় প্রায় তিন লাখ দর্শনার্থী আসে। এতে করে মেলা জমে উঠে। মেলার ভেতরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব রান্নাঘর রয়েছে। তারা কর্মচারীদের খাবার নিয়ে আসছে বলে আমি জানি। কিন্তু মেলার ভেতরে কর্মচারীদের খাবার নিয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। কেউ যদি এমন অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কিছু নক্ষত্র আয়ুষ্কালের শেষে এসে বিশাল সুপারনোভায় বিস্ফোরিত হয়। কিন্তু বেশির ভাগ নক্ষত্রই শীতল ও সংকুচিত হয়ে একটি ছোট কোরে পরিণত হওয়ার আগে নিজের সব উপাদান ত্যাগ করে। তবে ক্ষুধার্থ কৃষ্ণগহ্বরের নক্ষত্র গিলে খাওয়ার দৃশ্য মহাবিশ্বে খুবই বিরল। কোনো ছায়াপথে এ ধরনের ঘটনা প্রতি এক লাখ বছরে অল্প কয়েকবার ঘটে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ধরা পড়েছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপে। বিষয়টি উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের প্রতিবেদনে।
১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকরা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রের জীবনের অন্তিম কিছু মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করেন, যা কৃষ্ণগহ্বরের খুব কাছাকাছি বিচরণ করছিল এবং কৃষ্ণগহ্বরের উদরে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে বিপুল আলো ছড়িয়ে যায়। গবেষকরা এ ঘটনাকে ‘এটি২০২২ডিএসবি’ নামে অভিহিত করেছেন।
কোনো কৃষ্ণগহ্বরের প্রভাবে নক্ষত্রের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার ঘটনা ‘টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্ট’ নামে পরিচিত। আর এটি ঘটে থাকে বিশালাকৃতির কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ শক্তির কারণে।
বিশালাকৃতির কৃষ্ণগহ্বরগুলো ছায়াপথের কেন্দ্রে লুকিয়ে থাকে। আর বেশি কাছাকাছি থাকা নক্ষত্রের গ্যাসীয় স্তরগুলো নিজের দিকে টেনে আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ভার্জ।
নক্ষত্র পুরোপুরি টুকরা টুকরা হওয়ার পর এর অবশিষ্টাংশ চলে যায় কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে থাকা ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’ নামে পরিচিত এক গোলাকৃতির বলয়ে। আর এই জায়গা থেকেই কৃষ্ণগহ্বর তা গিলে ফেলে।
‘কৃষ্ণগহ্বর খুবই অগোছালো ভক্ষক’ ‘আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র বৈঠকে বলেছেন ‘হার্ভার্ড অ্যান্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিসিকসের’ গবেষক এমিলি এঙ্গেলথালার। তিনি বলেন, ‘তারা ভেতর থেকে এই “ডোনাট” আকৃতির অ্যাক্রিশন ডিস্ক খেয়ে ফেলছে। আর তারা এতটাই খেয়ে বিকিরণ ঘটাচ্ছে, যার ফলে ওই ডিস্ক বড় ও সুন্দর স্থূলাকৃতির “ডোনাটে” পরিণত হচ্ছে।’
এসব ঘটনা থেকে পাওয়া কিছুসংখ্যক বিকিরণ ‘জেট’ আকারে দূরে সরে যায়। এই গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া হয়েছে খোদ অ্যাক্রিশন ডিস্কের মধ্য দিয়ে আসা বিকিরণের ওপর।
নক্ষত্র থেকে নির্গত অতিবেগুনি রশ্মি দেখতে গবেষকরা হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ‘স্পেকট্রোকপি’ বা ‘বর্ণালিবিদ্যা’ নামে পরিচিত কৌশল। ওই আলোকে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ভেঙে এতে কী ধরনের পদার্থ শোষিত হয়েছে, তা দেখার উদ্দেশ্যে। এটি তাদের কী ধরনের উপাদান ছিল, তা নির্ধারণ করতে এবং ব্ল্যাক হোলের চারপাশে উজ্জ্বল, গরম বিশৃঙ্খলার অভ্যন্তরে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়।
অতিবেগুনি রশ্মিতে এমন ঘটনা সব সময় দেখা যায় না। কারণ এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য সহজেই আটকে দেওয়া যায়। ফলে ডেটা সংগ্রহ করাও জটিল হয়ে ওঠে। আর এগুলো সংগ্রহ করতে প্রয়োজন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে থাকা কোনো টেলিস্কোপ।
এঙ্গেলথালার বলেন, ‘অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের বেলায় অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এটা আমাদের জন্য ভালো হলেও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণে ভালো ফল দেয় না। এ কারণে, আমাদের মহাকাশে বসানো হাবলের মতো টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে হয়।’
এই শহরে এখন আমি আর কিছুই খুঁজে পাই না। ড্রয়ার হাতড়াতে গিয়ে দেখি বৃষ্টি ঝরছে। এক গলা পানিতে স্মৃতি টুকে রাখার খাতায় কালো অক্ষরগুলোর অনেকাংশ ধুয়ে গিয়ে কেমন অসহায় পড়ে আছে কিছু চিহ্ন; যেন সার্কাসের একদল ক্লাউন! কখনো বাইরে রোদের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, রিপ ভ্যান উইংকেলের মতো ১০০ বছর পরে কোথাও জেগে উঠে চোখ কচলে বুঝে নিতে চাইছি অচেনা চারপাশ। এই শহরে কোথাও কারও বাড়িতে কড়া নাড়তে গিয়ে দেখি কড়াটা উধাও, সঙ্গে বেপাত্তা মানুষটাও। কাউকে কোথাও খুঁজে পায় না হাতের মুঠোয় সক্রিয় ফোন, মন অথবা তীব্র আকাক্সক্ষাও। কোথাও পৌঁছে দেখি শীত পড়ে গেছে, পাতা ঝরে গেছে, লেকের ধারে অব্যর্থ কাঠের বেঞ্চিও আর চেনে না লন্ড্রির স্লিপে লিখে রাখা গল্পগুলো। তবুও মনে পড়ে। অবলুপ্ত কোনো স্থাপত্যের জলমগ্ন সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে নেমে গেলে হঠাৎ মনের মধ্যে ফুটে ওঠে আরেকটা শহর, অন্য রকম ঘ্রাণে উতরোল আরেকটা সময়। তখন গলিতে ক্রিকেট খেলা ছিল, সেলুনে বসে খবরের কাগজে সিনেমার বিজ্ঞাপন পড়া ছিল নেশা, শেষ করে আসা জড়ানো কণ্ঠের অনেক গান ছিল রাত্রিবেলা। এখন নিজেকে মৃত ভেবে মাঝে মাঝে স্পর্শ করে দেখি, না, প্রাণ আছে এখনো। আর প্রাণ আছে মানেই মনে পড়ে যাওয়াটুকু আছে, ভেতরে মেঘের মতো জমে আছে লাল নীল মানুষের গল্প।
বছর চল্লিশেক আগে ইন্টারনেটের এত বাড়ন্ত হয়নি। পত্রিকা অফিসগুলোতে লেখা দিতে গেলে গণপরিবহন ছিল ভরসা। সাহিত্য সম্পাদকদের দপ্তর ছিল গল্পে ভরা এক পৃথিবী। আড্ডার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ঘড়ির কাঁটাও অসহায় বোধ করত। সাহিত্যিকরা আসতেন সম্পাদকের কাছে লেখা দিতে। চায়ের কাপের গায়ে লেখা হয়ে থাকত অনেক মহাকাব্য। দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার সুবাদে এ ধরনের আড্ডার ঝড়ের কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু সাহিত্যিকদের বাড়িতে বিশেষ সংখ্যার লেখা সংগ্রহ করতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাও আমার কাছে সমান মূল্যবান। একটি সাপ্তাহিকের জন্য কবিতা আনতে গিয়েছি প্রয়াত কবি সিকদার আমিনুল হকের বাড়িতে। সিকদার ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা আমার পুরনো এবং লোভনীয়। অনেকবার আড্ডা দিতে গিয়েছি তার বাড়িতে। অগ্রজ কবিদের সঙ্গী হয়েছি। দুপুরবেলা সিকদার ভাইয়ের বাড়ি মানেই নিরিবিলি মাকড়সার জাল বোনা এক সময়। এলিফ্যান্ট রোডে তখনো আকাশ ফুটো করা বাড়ি তৈরি হয়নি। একটা নির্জন গলির মুখেই বাসাটা। ফুরফুরে একটা শহরে রিকশা ভ্রমণ জলাঞ্জলি দিয়ে গলির মুখ থেকে একটু হাঁটলেই এলিফ্যান্ট রোডে ল্যামারাসের গলির পাকস্থলী বরাবর সিকদার ভাইয়ের ঠিকানা। সিঁড়ি বেয়ে উঠে কড়া নাড়তেই দরজা খুলে যায়। ছিমছাম বসার ঘরে একটু পরেই বাটিক প্রিন্টের শার্ট আর লুঙ্গি পরে সিকদার ভাইয়ের আগমন।
-সিকদার ভাই, কবিতা নিতে এসেছি।
-ওহ, কবিতা? আচ্ছা, বসো একটু। আসছি আমি।
অন্দরমহলে অন্তর্হিত সিকদার ভাই। আধা ঘণ্টা পর যখন ফিরে এলেন, পরনে বাটিক প্রিন্টের লাল শার্ট আর প্যান্ট। ভুরভুর করে সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে আফটার শেভ।
-...খাবে একটু?
আমার তরুণ আত্মার নৌকা বাতাসে ভর করে।
-এখন!
- এটাই তো সময়। চলো, পান করে বের হব।
ঝকঝকে গ্লাসে পানীয় আসে। বাইরে তার চেয়ে বেশি ঝকঝক করছে রোদ্দুর। পাগলাটে হওয়ার ঝটকা। এলিফ্যান্ট রোডে তখনো রোদের রাজত্ব।
-সিকদার ভাই, কবিতাটা?
-আরে, হয়ে যাবে। ভেব না। রফিক (কবি রফিক আজাদ) ফোন করেছে। চলো, সাকুরায় যাই। ও অপেক্ষা করছে।
-সাকুরায়! বিস্ময় আর হতাশা একসঙ্গে ঝরে পড়ে আমার কণ্ঠে। সিকদার ভাইয়ের ঝকঝকে দৃষ্টিতে অন্য ধরনের আলো খেলে যায়। হতাশার কারণ হলো লেখা পাওয়ার আশায় বালি ঝরে পড়তে শুরু করেছে বলেই মন জানান দিল।
গ্লাস ফুরিয়ে গেলে সিকদার ভাই অন্দর মহল থেকে পূর্ণ করে নিয়ে আসেন। অতঃপর গ্লাস শূন্য করে রিকশায় আমরা। যথারীতি সিকদার ভাইয়ের হাতে ধরা ব্রিফকেস। পোশাক থেকে ভুরভুর করে ভেসে আসছে চমৎকার সুগন্ধ। কবি সিকদার আমিনুল হককে দেখেছি সর্বদা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরতেন, ঝরঝরে ক্লিন শেভড থাকতেন।
এলিফ্যান্ট রোডে তখন মাছির মতো উড়ে বেড়ানো ভিড়, দোকানে দোকানে মানুষের ভিড়ের জড়াজড়ি। রিকশা আমাদের নিয়ে যায় নানান গলি পার হয়ে সাকুরা বারে। আমি তখনই অবশ্য টের পেতে শুরু করেছি কবিতা প্রাপ্তির আশার কপালে ছুরি মেরেছে কেউ। সত্যি সত্যি সেদিন কবিতাটা আর পাওয়া হয়নি আমার। শাহবাগে বিকেলের আলো পানশালার জানালায় অস্থির পাখির মতো ঠোকর মারছিল। ভেতরে পানপাত্রে উপচে পড়ছিল কবিদের তীব্র আত্মা। লেখা পাওয়ার টান আমাকে পথ ভুলিয়ে নিয়ে এসেছে পানশালায়।
এ রকম পথ ভোলা লেখা সংগ্রহের গল্পটা অবশ্য আরেক প্রয়াত সাহিত্যিক সৈয়দ আলী আহসানের বেলায় একেবারেই অন্য রকম ছিল। তখন তিনি থাকেন কলাবাগানে একটা গলির গায়ে হেলান দিয়ে থাকা বাড়তি আরেকটা গলির শেষ মাথায়। প্রথমবার কোনো এক রমজান মাসে লেখা আনার জন্য বাসায় গিয়ে অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। প্রবন্ধটা তখনো শেষ করেননি আলী আহসান সাহেব। বেশ বড় আকৃতির বসার ঘরে ল্যাম্পের মৃদু আলোয় একটা কাঠের একপেয়ে ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে লিখছেন। পিঠের ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে এ রকম ব্যবস্থা। মুশকিল হলো আমার। কারণ আমাকেও লেখা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। উনি দাঁড়িয়ে আর আমি বসে আছি, বিষয়টা একেবারেই বেমানান। অগত্যা পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে বইয়ের আলমারিতে ব্যস্ত থাকলাম। অসম্ভব ভালো একটি বইয়ের সংগ্রহ ছিল সৈয়দ আলী আহসানের। ভদ্রলোক বিস্তর পড়তেন। বহু বিষয়ে বই না ঘেঁটেই অনর্গল কথা বলে যেতে পারতেন। আরেকবার তার বাড়িতে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার ঈদসংখ্যার জন্য লেখা সংগ্রহ করতে গিয়ে এশিয়ার চারুকলার উত্থান পর্ব নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার দীর্ঘ বক্তৃতা শুনতে হয়েছিল মনে আছে।
আমি তখন কোনো কাগজে কাজ করছি না। একরকম বেকারত্ব চলছে। বিভিন্ন খবরের কাগজের অফিসে ঘুরে ঘুরে আড্ডা দিয়ে বেড়াই। একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক আমাকে পাকড়াও করে পাঠালেন কথাসাহিত্যিক রাহাত খানের বাড়িতে লেখা আনতে। তিনি ওই কাগজে একটি ধারাবাহিক উপন্যাস লিখছেন। আমার কাজ হচ্ছে ওই সপ্তাহের কিস্তিটা নিয়ে আসা। সোৎসাহে রাজি হয়ে গেলাম। রাহাত ভাই থাকেন সিদ্ধেশ্বরীতে। নির্জনতায় ফুটে থাকা সাদা রং করা একটা একতলা বাড়ি। দরজায় পরিচয় দিতেই ভেতরে ডাক পড়ল। রাহাত ভাই খানিক অগোছালো একটা ঘরে টেবিলে বসে লিখছেন। তখনকার দিনে পত্রিকা অফিসে একধরনের নিউজপ্রিন্টের প্যাড ছিল, যাতে আমরা খবর লিখতাম। রাহাত ভাই দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। দেখলাম, উনিও সেই প্যাডেই লিখছেন উপন্যাস। আমাকে বসতে বললেন। আরও কয়েক সিøপ লিখবেন। কুশলবিনিময়ের পর রাহাত ভাই এক তাড়া কাগজ আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এখানে বসে তুমি কথা বললে লিখতে পারব না। তুমি বরং আমার লেখার অক্ষরগুলোতে মাত্রা বসাও।
লেখা হাতে নিয়ে আমি বিস্মিত। ভীষণ খুদে খুদে হস্তাক্ষরে রাহাত ভাই লেখেন এবং কোনো বর্ণের ওপর মাত্রা নেই। ওনার লেখার আরেকটি বৈশিষ্ট্য দেখলাম, সবগুলো লাইনের আকৃতি নৌকার মতো। এক পাশে উঁচু হয়ে শুরু, মাঝখানটা নিচের দিকে বেঁকে গিয়ে আবার ওপরে উঠে গেছে। কী আর করা, আমি বসে বসে রাহাত ভাইয়ের লেখায় মাত্রা দেওয়ার কাজ চালিয়ে গেলাম গভীর নিষ্ঠায়।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় দুই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের ডুমনী এলাকার পাগলা বেইলি ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একই দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
শ্রীপুরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে। স্থানীয়রা বলছে, কুয়াশায় ভেজা বেইলি ব্রিজের পাটাতন পিচ্ছিল থাকায় দ্রুত গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন দুর্ঘটনাস্থলের পাশের কাপাসিয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের সোলাইমান হোসেনের ছেলে সিয়াম আহম্মেদ (২০) ও তার বন্ধু শাকিল আহম্মেদ (২০)। শাকিলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়াতে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। দুজনই গাজীপুর বিজিএমইএ কলেজে পড়তেন বলে স্বজনরা জানিয়েছে পুলিশকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রহল্লাদপুর ডুমনী আঞ্চলিক সড়কের পাগলা বেইলি ব্রিজে ওঠার সময় তাদের মোটরসাইকেল অনিয়ন্ত্রিত হয়ে রেলিংয়ে সজোরে ধাক্কা লাগে। এ সময় তাদের মোটরসাইকেলের গতি ছিল বেশি। তার ওপর কুয়াশাভেজা ব্রিজের পাটাতন পিচ্ছিল থাকায় মোটরসাইকেল দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরে ব্রিজের রেলিংয়ে সজোরে ধাক্কা লাগায় তাদের মাথা-মুখ থেঁতলে যায়। মারাত্মক আঘাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। এ সময় ওদের রক্তে ব্রিজের পাটাতন ভিজে যায়। দুর্ঘটনা দেখে উদ্ধারে এগিয়ে আসা মানুষ পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ।
শ্রীপুর মডেল থানার (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘দ্রুত গতির মোটরসাইকেল (গাজীপুর-ল-১১-৩৪৫৭) বেইলি ব্রিজে ওঠার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই চালক ও আরোহীর মৃত্যু হয়।’
কালিয়াকৈরে ট্রাকচাপায় নিহত ১: গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মেদীআশুলাই এলাকায় গতকাল সকালে ট্রাকের চাপায় সিএনজিচালিত এক অটোরিকশা আরোহী মারা গেছেন। নিহত মিয়া চাঁন (৬০) টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার বাদচাল এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় দিনমজুর ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিয়া চাঁন দুই মাস আগে জীবিকার খোঁজে গাজীপুরের শ্রীপুর থানার মাওনা এলাকায় আসেন। সেখানে তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। গতকাল ভোরে তিনি সেখান থেকে কালিয়াকৈর যাচ্ছিলেন। কলারোয়ায় অবৈধ যানের চাপায় শিশু নিহত: সাতক্ষীরার কলারোয়ার গয়ড়া কলেজ মোড়ে মাটিবাহী একটি অবৈধ যানের চাপায় মুনতাহিনা নামে ৬ বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। সে উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের কন্যা। কলারোয়া থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা জানান, সকালে আলমগীর হোসেন তার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলে উপজেলার গয়ড়া কলেজ মোড়ে মাটিবাহী অবৈধ যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে দুজনই পড়ে যান। অবৈধ যানের চাপায় মারাত্মক আহত মুনতাহিনা মারা যায়।
রংপুরে বাস উল্টে নিহত ১: রংপুরে পিকআপ ভ্যানকে পাশ কাটাতে গিয়ে যাত্রীবাহী বাস উল্টে রফিকুল ইসলাম (৫০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বাসের অন্তত ২০ যাত্রী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে উদ্ধার করে ৭ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রংপুর সুন্দরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পীরগাছার ইছলারহাট ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের জামালহাটের মধ্যবর্তী স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রফিকুল সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সিংড়ায় ট্রাকের চাকায় প্রাণ গেল পথচারীর: নাটোরের সিংড়ায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছে মো. শামসুল হক (৫৫) নামে এক পথচারী। গতকাল বিকেলে বলিয়াবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত পথচারী উপজেলার হিজলি গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল ৫টার দিকে সিংড়া-কলম আঞ্চলিক সড়কের বলিয়াবাড়ি এলাকায় হেঁটে পথ চলার সময় বালুবহনকারী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় শামসুল হক। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাসে আগুন: মাদারীপুরের শিবচরের এক্সপ্রেসওয়েতে বরিশাল এক্সপ্রেস নামে একটি বাসে যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে বাসটির ভেতরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাসের বক্সে রাখা যাত্রীদের বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খবর পেয়ে শিবচর ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে থানা পুলিশ এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে শিবচরের এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চরসংলগ্ন মোল্লার বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
বিমান অফিসের ভেতরেই এখন আলোচনা হচ্ছে সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে বিমানের পুরো প্রশাসন। কাজের মধ্যেও নেই জবাবদিহি। যে যার মতো পারছে পরিচালনা করছে সংস্থাটি। নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার পরও অনেকেই বহাল তবিয়তে আছেন। ড্রিমলাইনার এয়ারলাইনসগুলো পুরো সিসিক্যামেরা দ্বারাই মনিটরিং করা হয়। অথচ আসন, হাতল এবং মনিটর ভাঙা হলেও ‘জড়িত কারা’ তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এভাবে চললে বিমানকে ‘ওপরে’ ওঠানো সম্ভব হবে না কিছুতেই।
বিমানের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিছুদিন আগে মধ্যপ্রাচ্যের একটি ফ্লাইটে দুই যাত্রীর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে এক যাত্রী পাগলামি করা শুরু করলে তাকে রশি দিয়ে পর্যন্ত বাঁধা হয়েছিল। শাহজালালে হ্যাঙ্গারে দুটি উড়োজাহাজে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছ কয়েক মাস আগে। বার্ড হিটের শিকার হয়ে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে পড়ে ছিল একটি উড়োজাহাজ। এমনকি গত বছরের ২৬ মার্চ টরন্টো ফ্লাইট নিয়ে অনেকটা তুলকালাম কা- ঘটেছে। বিমান ও মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা টরন্টো সফর করে এসে জানিয়ে দিয়েছেন, সরাসরি ফ্লাইট চালানো সম্ভব হবে না। সফরে বিশাল বহর নিয়ে যাওয়ার কারণে অন্তত ৮ কোটি টাকা গচ্চা গেছে। সব মিলিয়ে গত দুই বছরে নানা কারণে সংস্থাটির অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
জানতে চাইলে বেসমারিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিমানকে লাভজনক করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। বিমানের আসন ও মনিটর ভাঙার সঙ্গে কারা জড়িত আছে তা উদঘাটন করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবেই।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, কোনো নিয়মের মধ্য থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না বিমান। বিমানের বহরে রয়েছে অভিজাত সব এয়ারক্রাফট। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি সুযোগ-সুবিধার নেই কোনো ঘাটতি। এমনকি ভুগতে হয়নি কোনো অর্থের অভাবও। এরপরও বিশ্বমানের এয়ারলাইনস হওয়ার দৌড়ে বহু পিছিয়ে আছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এ সংস্থাটি।
বছরখানেক আগে বেশি লাভের আশায় উড়োজাহাজে কার্গো পরিবহন করতে গিয়ে সিটসহ নানা যন্ত্রাংশ নষ্ট করে ফেলে সংস্থাটি। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছিল দেশ-বিদেশে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে আরেকটি ড্রিমলাইনারে ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা-টরন্টো রুটে চলা বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের কয়েকটি আসনের বিভিন্ন অংশ ও টিভির মনিটর ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত উড়োজাহাজগুলো বিমানের বহরে সবচেয়ে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এয়ারক্রাফট। ক্ষতিগ্রস্ত ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজটি এখন কানাডার টরন্টোতে রয়েছে। সেখান থেকেই ১৭ জানুয়ারি বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের খুঁজছে বিমান। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত ড্রিমলাইনারের ভেতরের কিছু ছবি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, উড়োজাহাজটির কয়েকটি আসনের হাতল, আসনের সামনের এলইডি স্ক্রিন, আসনের প্যানেল ও রিমোট ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে। আবার একটি আসনের দুই পাশের হাতল ভেঙে ফেলা হয়েছে। আসনের নিচের প্যানেলও ভেঙে গেছে। ওই আসনে যুক্ত এলইডি মনিটরটিও টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। বাঁকা হয়ে ঝুলে আছে এলইডি মনিটর। আসনের নিচে গ্লাস, চামচ, কম্বল সব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উড়োজাহাজের আসন ও মনিটর যারা ভেঙেছে, তাদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না। ভাঙার ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে খারাপ উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে। এই আক্রোশ বিমানের ওপর নাকি দেশের ওপর, তা বোঝা মুশকিল। আমরা তদন্ত কমিটি করেছি। আশা করি যারা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিমানকে লাভজনক করতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। নির্দিষ্ট সময়ে বিমান গন্তব্য যাওয়াসহ যাত্রীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়, সেদিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। বিমানের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
সার কারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রেখে আমদানিকৃত গ্যাসের ওপর ভর দিয়ে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্যাসের চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এরপরও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে ভুগতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এভাবে গ্যাস বন্ধ কিংবা সীমিত করে জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টার ফলে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্রাহকরা যেমন ঠিকমতো গ্যাস পাবে না, তেমনি গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়বে। সার কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে।
গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে বাড়তে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হয়। রমজান, সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মকালে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে পেট্রোবাংলা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৭০০ থেকে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে থেকে প্রায় ২২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং বাকি গ্যাসের চাহিদা পূরণ হবে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি দিয়ে।
বর্তমানে দেশে দৈনিক প্রায় ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এবং বাকি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলা বাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৭০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হলে ঘাটতি থাকবে। যার প্রভাব পড়বে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য খাতে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভর করে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা ভুল। কারণ কদিন আগেও বিশ^বাজারে এলএনজির দাম ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। এখন সেটা অনেক কমলেও যেকোনো পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই দাম বাড়তে পারে। তখন গ্যাসের সংকট আরও বাড়বে।’
‘সংকটের মুখে পড়ে সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। আরও আগেই এ কাজ করা দরকার ছিল। অন্তত ২০১৮ সাল থেকে যখন আমদানি শুরু হয় তখন থেকেও যদি অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হতো তাহলে এতদিনে অনেক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আজকের এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না’ যোগ করেন তিনি।
বদরূল ইমাম বলেন, এলএনজি আমদানিতে যতবেশি নজর দেওয়া হয়েছে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ততটায় অবহেলিত রয়েছে। প্রতি বছর অন্তত ৫ থেকে ৭টা কূপ খনন করা গেলে সংকট অনেকটাই কাটানো সম্ভব হবে।
সূত্রমতে, বিশ^বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। দাম কমতে থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে খোলাবাজার থেকে প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে গড়ে প্রতিদিন ২৬০০ থেকে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। চলতি মাস থেকে এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি করায় গ্যাসের সরবরাহও বেড়ে গেছে। এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, মে মাসে ৩০০ মিলিয়ন এবং জুনে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি খোলাবাজার থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশীয় গ্যাস এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলাবাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। তবে এর মধ্যে যদি কোনো কারণে খোলাবাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যায় তাহলে গ্যাস সরবরাহ আরও কমবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গ্যাস সরবরাহে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেলে বাসাবাড়ি ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ কমানো অথবা সরবরাহ বন্ধ করা হবে দিনের কিছু সময়ের জন্য। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হবে। তবে রমজানে সাহরি ও ইফতার তৈরিতে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে মানুষের ভোগান্তি অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তারাবি নামাজের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং হলে সেই ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে বদরূল ইমাম বলেন, ‘এটা একটা জোড়াতালির পরিকল্পনা। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করা নাগরিক হিসেবে সমর্থনযোগ্য নয়। এতে এলপিজির দামও আরও বেড়ে যাবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গত বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আমদানিকৃত ও দেশীয় বিদ্যুতের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা হবে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস অয়েল ও অন্যান্য জ¦ালানির পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২০০ থেকে ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা দুরূহ হয়ে যাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে কয়লা ও অন্যান্য জ¦ালানি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় অন্যান্য কেন্দ্রগুলো থেকেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সবমিলে এ বছর অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এ পরিস্থিতিতে উচ্চদামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।