
‘বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। প্রতিদিনই দলের গঠিত মেডিকেল টিমের সদস্যরা গুলশানে তার বাসভবন ফিরোজায় গিয়ে শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিচ্ছেন। আগের মতোই আছেন আমাদের চেয়ারপারসন।’ গতকাল শুক্রবার রাতে দেশ রূপান্তরকে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় মির্জা ফখরুল গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনে যান। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থান শেষে রাত ১০টার দিকে বেরিয়ে উত্তরার নিজ বাসভবনে চলে যান। পরিবারের সদস্যদের বাইরে শুধু বিএনপি মহাসচিবকে মাঝেমধ্যে ডেকে পাঠান খালেদা জিয়া।
বিএনপি মহাসচিব বলেন. ‘সাংবিধানিকভাবে সুযোগ থাকলেও শুধু সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার রাজনীতির কারণে চেয়ারপারসন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারছেন না। বিদেশে যেতে পারলে বৃদ্ধ বয়সে একটু ভালো থাকতে পারতেন। কিন্তু সে সুযোগ তাকে দেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘চেয়ারপারসন আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে বলেছেন। তার নিজের সুস্থতার জন্য দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সারা দেশের জনগণের কাছে দোয়া চেয়েছেন চেয়ারপারসন।’
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন বিএনপি-সমর্থক নিহত এবং পুলিশসহ অর্ধশত ব্যক্তি আহত হন। ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে ৮ ডিসেম্বর উত্তরার নিজ বাসভবন থেকে আটক করা হয় মির্জা ফখরুলকে। এর এক মাস পর ৯ জানুয়ারি মুক্তি পান মির্জা ফখরুল। এরপর তিনি নিজেই এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন চিকিৎসার জন্য। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার ডাকে তার বাসভবন ফিরোজায় যান মির্জা ফখরুল।
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উন্নত চিকিৎসার জন্য চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিতে না পারায় আমরা দলীয় চিকিৎসকরা ও এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা দেশে যতটুকু সুযোগ আছে, সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। আরও অবনতি যাতে না হয়, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
সর্বশেষ গত বছরের ২২ আগস্ট নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার নেতৃত্বাধীন একটি মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সর্বশেষ গত ১১ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে তার হৃৎপি-ের ব্লক অপসারণ করে একটি ‘স্টেন্ট’ বসানো হয়েছিল।
দুর্নীতির মামলায় দন্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে গিয়েছিলেন। পরের বছর দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তখন শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তাকে দেশে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে। বিএনপি তাকে বিদেশে নেওয়ার দাবি জানিয়ে এলেও সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি।
কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায়ই থাকছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে ছয় দফায় ঢাকার বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। গত বছর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানান চিকিৎসকরা।
দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরে বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর। নতুন এ স্থায়ী ভেন্যু বুঝে পাওয়ার পর মেলাকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। প্রথম কয়েক দিন আশানুরূপ দর্শনার্থী না থাকলেও এখন প্রতিদিনই ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার সার্বিক আয়োজন নিয়ে দর্শনার্থী-ব্যবসায়ীদের যেমন রয়েছে সন্তুষ্টি, আবার অন্যদিকে কিছু বিষয় নিয়ে রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে অন্যতম হলো রেস্তোরাঁ সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ড।
মেলার স্টলের কর্মচারীদের বাসা থেকে আনা খাবার নিয়ে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বাধ্য হয়ে রেস্তোরাঁগুলোর খাবার চড়া দামে কিনে খেতে হচ্ছে স্টল কর্মচারীদের। মাসিক বেতনের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া এসব স্টলকর্মী বলছেন, এভাবে ‘গলাকাটা’ দামে খাবার কিনতে গেলে মাস শেষে পাওয়া বেতনের টাকা থেকে তাদের পকেটে আর উদ্বৃত্ত কিছু থাকবে না।
এদিকে এবারের আসরের ২০তম দিন গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে মেলায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। এতে করে বিক্রি বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে। গতকাল মেলায় প্রায় ৩ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিল বলে জানিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কর্র্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার মেলায় দেশি-বিদেশি পণ্যের ৩৩১টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলায় নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরাও অংশ নিয়েছেন। মেলার স্টলের প্রাণ হচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা। তারা মেলায় আসা ক্রেতাদের পণ্য সম্পর্কে বুঝিয়ে পরে বিক্রি করেন। এ কারণে প্রায় প্রতিটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলেই আকৃতিভেদে ৫-১৫ জন করে এক মাসের জন্য খণ্ডকালীন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। মেলার স্টলগুলোতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বিক্রয়কর্মী রয়েছে বলে জানা গেছে। মেলার আশপাশে বাড়ি বা মেস ভাড়া আকাশছোঁয়া হওয়ায় এসব কর্মচারী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে এসে-গিয়ে কাজ করছেন। মেলার ভেতরের রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণে স্টল কর্মচারীরা দুপুরের খাবার বাসা থেকে রান্না করে অথবা বাইরে থেকে সাশ্রয়ীমূল্যে কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু এবার মেলায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা স্টল কর্মচারীদের বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার সময় ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে বাধ্য হয়ে চড়া দামেই খাবার কিনে খেতে হচ্ছে মেলার ভেতরে করা রেস্তোরাঁগুলো থেকে। এতে করে তাদের দিনের বেতনের টাকার অধিকাংশই চলে যাচ্ছে দুপুরের খাবার খেতেই। যা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ স্টলগুলোর কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষুব্ধ এক স্টল কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এক মাসের আয়ের বেশিরভাগ টাকা খরচ হচ্ছে মেলার ভেতরে খাবার খেতে। আমাদের বেতন আর কত ধরা হয়েছে! মেলায় খাবার বিক্রির জন্য রেস্তোরাঁ মালিকদের নিয়ে সিন্ডিকেট করা হয়েছে। তারা কাউকেই বাসা থেকে রান্না করা খাবার অথবা বাইরে থেকে খাবার আনতে দিচ্ছে না। আনতে গেলেই বাধা দিচ্ছে তাদের লোকজন। আমাদের বিষয়টি মেলা কর্র্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত। না হলে সামনের বার (মেলার পরের বছরের আসর) আসবে না অনেকেই।’
এ প্রসঙ্গে তার্কিশ প্যাভিলিয়নের কর্মচারী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার বাসা ঢাকার বাড্ডা এলাকায়। প্রতিদিন মেলায় আসতে হচ্ছে। প্রথম প্রথম কয়েক দিন মেলায় বাসা থেকে রান্না করা খাবার এনেছি। তবে প্রথম দিন থেকেই একটি সিন্ডিকেট বাধা দেয়। এখন আর আনতে না পারায় বাধ্য হয়ে ভেতরের রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। যে কয় টাকা বেতন পাচ্ছি তার বেশিরভাগ অংশ রেস্তোরাঁর খাবার বিল দিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এখানে কাজ করতে হচ্ছে। তাই মেলার যে কদিন বাকি রয়েছে কর্র্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার।’
মেলার আরেকটি স্টলের কর্মচারী তুষার আবদুল্লাহ বলেন, ‘রেস্তোরাঁর রান্না করা খাবার খেতে আমার কষ্ট হয়। গ্যাসের সমস্যাসহ একাধিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এখানকার খাবার খেয়ে। বাসা থেকে খাবার আনতে পারলে যেমন খরচ বাঁচত, তেমনি অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা পেতাম। তাছাড়া খরচ কমে গেলে সংসার আরও ভালো চালাতে পারতাম।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবির সচিব ও বাণিজ্যমেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় প্রায় তিন লাখ দর্শনার্থী আসে। এতে করে মেলা জমে উঠে। মেলার ভেতরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব রান্নাঘর রয়েছে। তারা কর্মচারীদের খাবার নিয়ে আসছে বলে আমি জানি। কিন্তু মেলার ভেতরে কর্মচারীদের খাবার নিয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। কেউ যদি এমন অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কিছু নক্ষত্র আয়ুষ্কালের শেষে এসে বিশাল সুপারনোভায় বিস্ফোরিত হয়। কিন্তু বেশির ভাগ নক্ষত্রই শীতল ও সংকুচিত হয়ে একটি ছোট কোরে পরিণত হওয়ার আগে নিজের সব উপাদান ত্যাগ করে। তবে ক্ষুধার্থ কৃষ্ণগহ্বরের নক্ষত্র গিলে খাওয়ার দৃশ্য মহাবিশ্বে খুবই বিরল। কোনো ছায়াপথে এ ধরনের ঘটনা প্রতি এক লাখ বছরে অল্প কয়েকবার ঘটে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ধরা পড়েছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপে। বিষয়টি উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের প্রতিবেদনে।
১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকরা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রের জীবনের অন্তিম কিছু মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করেন, যা কৃষ্ণগহ্বরের খুব কাছাকাছি বিচরণ করছিল এবং কৃষ্ণগহ্বরের উদরে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে বিপুল আলো ছড়িয়ে যায়। গবেষকরা এ ঘটনাকে ‘এটি২০২২ডিএসবি’ নামে অভিহিত করেছেন।
কোনো কৃষ্ণগহ্বরের প্রভাবে নক্ষত্রের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার ঘটনা ‘টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্ট’ নামে পরিচিত। আর এটি ঘটে থাকে বিশালাকৃতির কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ শক্তির কারণে।
বিশালাকৃতির কৃষ্ণগহ্বরগুলো ছায়াপথের কেন্দ্রে লুকিয়ে থাকে। আর বেশি কাছাকাছি থাকা নক্ষত্রের গ্যাসীয় স্তরগুলো নিজের দিকে টেনে আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ভার্জ।
নক্ষত্র পুরোপুরি টুকরা টুকরা হওয়ার পর এর অবশিষ্টাংশ চলে যায় কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে থাকা ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’ নামে পরিচিত এক গোলাকৃতির বলয়ে। আর এই জায়গা থেকেই কৃষ্ণগহ্বর তা গিলে ফেলে।
‘কৃষ্ণগহ্বর খুবই অগোছালো ভক্ষক’ ‘আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র বৈঠকে বলেছেন ‘হার্ভার্ড অ্যান্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিসিকসের’ গবেষক এমিলি এঙ্গেলথালার। তিনি বলেন, ‘তারা ভেতর থেকে এই “ডোনাট” আকৃতির অ্যাক্রিশন ডিস্ক খেয়ে ফেলছে। আর তারা এতটাই খেয়ে বিকিরণ ঘটাচ্ছে, যার ফলে ওই ডিস্ক বড় ও সুন্দর স্থূলাকৃতির “ডোনাটে” পরিণত হচ্ছে।’
এসব ঘটনা থেকে পাওয়া কিছুসংখ্যক বিকিরণ ‘জেট’ আকারে দূরে সরে যায়। এই গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া হয়েছে খোদ অ্যাক্রিশন ডিস্কের মধ্য দিয়ে আসা বিকিরণের ওপর।
নক্ষত্র থেকে নির্গত অতিবেগুনি রশ্মি দেখতে গবেষকরা হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ‘স্পেকট্রোকপি’ বা ‘বর্ণালিবিদ্যা’ নামে পরিচিত কৌশল। ওই আলোকে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ভেঙে এতে কী ধরনের পদার্থ শোষিত হয়েছে, তা দেখার উদ্দেশ্যে। এটি তাদের কী ধরনের উপাদান ছিল, তা নির্ধারণ করতে এবং ব্ল্যাক হোলের চারপাশে উজ্জ্বল, গরম বিশৃঙ্খলার অভ্যন্তরে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়।
অতিবেগুনি রশ্মিতে এমন ঘটনা সব সময় দেখা যায় না। কারণ এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য সহজেই আটকে দেওয়া যায়। ফলে ডেটা সংগ্রহ করাও জটিল হয়ে ওঠে। আর এগুলো সংগ্রহ করতে প্রয়োজন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে থাকা কোনো টেলিস্কোপ।
এঙ্গেলথালার বলেন, ‘অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের বেলায় অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এটা আমাদের জন্য ভালো হলেও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণে ভালো ফল দেয় না। এ কারণে, আমাদের মহাকাশে বসানো হাবলের মতো টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে হয়।’
এই শহরে এখন আমি আর কিছুই খুঁজে পাই না। ড্রয়ার হাতড়াতে গিয়ে দেখি বৃষ্টি ঝরছে। এক গলা পানিতে স্মৃতি টুকে রাখার খাতায় কালো অক্ষরগুলোর অনেকাংশ ধুয়ে গিয়ে কেমন অসহায় পড়ে আছে কিছু চিহ্ন; যেন সার্কাসের একদল ক্লাউন! কখনো বাইরে রোদের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, রিপ ভ্যান উইংকেলের মতো ১০০ বছর পরে কোথাও জেগে উঠে চোখ কচলে বুঝে নিতে চাইছি অচেনা চারপাশ। এই শহরে কোথাও কারও বাড়িতে কড়া নাড়তে গিয়ে দেখি কড়াটা উধাও, সঙ্গে বেপাত্তা মানুষটাও। কাউকে কোথাও খুঁজে পায় না হাতের মুঠোয় সক্রিয় ফোন, মন অথবা তীব্র আকাক্সক্ষাও। কোথাও পৌঁছে দেখি শীত পড়ে গেছে, পাতা ঝরে গেছে, লেকের ধারে অব্যর্থ কাঠের বেঞ্চিও আর চেনে না লন্ড্রির স্লিপে লিখে রাখা গল্পগুলো। তবুও মনে পড়ে। অবলুপ্ত কোনো স্থাপত্যের জলমগ্ন সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে নেমে গেলে হঠাৎ মনের মধ্যে ফুটে ওঠে আরেকটা শহর, অন্য রকম ঘ্রাণে উতরোল আরেকটা সময়। তখন গলিতে ক্রিকেট খেলা ছিল, সেলুনে বসে খবরের কাগজে সিনেমার বিজ্ঞাপন পড়া ছিল নেশা, শেষ করে আসা জড়ানো কণ্ঠের অনেক গান ছিল রাত্রিবেলা। এখন নিজেকে মৃত ভেবে মাঝে মাঝে স্পর্শ করে দেখি, না, প্রাণ আছে এখনো। আর প্রাণ আছে মানেই মনে পড়ে যাওয়াটুকু আছে, ভেতরে মেঘের মতো জমে আছে লাল নীল মানুষের গল্প।
বছর চল্লিশেক আগে ইন্টারনেটের এত বাড়ন্ত হয়নি। পত্রিকা অফিসগুলোতে লেখা দিতে গেলে গণপরিবহন ছিল ভরসা। সাহিত্য সম্পাদকদের দপ্তর ছিল গল্পে ভরা এক পৃথিবী। আড্ডার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ঘড়ির কাঁটাও অসহায় বোধ করত। সাহিত্যিকরা আসতেন সম্পাদকের কাছে লেখা দিতে। চায়ের কাপের গায়ে লেখা হয়ে থাকত অনেক মহাকাব্য। দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার সুবাদে এ ধরনের আড্ডার ঝড়ের কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু সাহিত্যিকদের বাড়িতে বিশেষ সংখ্যার লেখা সংগ্রহ করতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাও আমার কাছে সমান মূল্যবান। একটি সাপ্তাহিকের জন্য কবিতা আনতে গিয়েছি প্রয়াত কবি সিকদার আমিনুল হকের বাড়িতে। সিকদার ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা আমার পুরনো এবং লোভনীয়। অনেকবার আড্ডা দিতে গিয়েছি তার বাড়িতে। অগ্রজ কবিদের সঙ্গী হয়েছি। দুপুরবেলা সিকদার ভাইয়ের বাড়ি মানেই নিরিবিলি মাকড়সার জাল বোনা এক সময়। এলিফ্যান্ট রোডে তখনো আকাশ ফুটো করা বাড়ি তৈরি হয়নি। একটা নির্জন গলির মুখেই বাসাটা। ফুরফুরে একটা শহরে রিকশা ভ্রমণ জলাঞ্জলি দিয়ে গলির মুখ থেকে একটু হাঁটলেই এলিফ্যান্ট রোডে ল্যামারাসের গলির পাকস্থলী বরাবর সিকদার ভাইয়ের ঠিকানা। সিঁড়ি বেয়ে উঠে কড়া নাড়তেই দরজা খুলে যায়। ছিমছাম বসার ঘরে একটু পরেই বাটিক প্রিন্টের শার্ট আর লুঙ্গি পরে সিকদার ভাইয়ের আগমন।
-সিকদার ভাই, কবিতা নিতে এসেছি।
-ওহ, কবিতা? আচ্ছা, বসো একটু। আসছি আমি।
অন্দরমহলে অন্তর্হিত সিকদার ভাই। আধা ঘণ্টা পর যখন ফিরে এলেন, পরনে বাটিক প্রিন্টের লাল শার্ট আর প্যান্ট। ভুরভুর করে সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে আফটার শেভ।
-...খাবে একটু?
আমার তরুণ আত্মার নৌকা বাতাসে ভর করে।
-এখন!
- এটাই তো সময়। চলো, পান করে বের হব।
ঝকঝকে গ্লাসে পানীয় আসে। বাইরে তার চেয়ে বেশি ঝকঝক করছে রোদ্দুর। পাগলাটে হওয়ার ঝটকা। এলিফ্যান্ট রোডে তখনো রোদের রাজত্ব।
-সিকদার ভাই, কবিতাটা?
-আরে, হয়ে যাবে। ভেব না। রফিক (কবি রফিক আজাদ) ফোন করেছে। চলো, সাকুরায় যাই। ও অপেক্ষা করছে।
-সাকুরায়! বিস্ময় আর হতাশা একসঙ্গে ঝরে পড়ে আমার কণ্ঠে। সিকদার ভাইয়ের ঝকঝকে দৃষ্টিতে অন্য ধরনের আলো খেলে যায়। হতাশার কারণ হলো লেখা পাওয়ার আশায় বালি ঝরে পড়তে শুরু করেছে বলেই মন জানান দিল।
গ্লাস ফুরিয়ে গেলে সিকদার ভাই অন্দর মহল থেকে পূর্ণ করে নিয়ে আসেন। অতঃপর গ্লাস শূন্য করে রিকশায় আমরা। যথারীতি সিকদার ভাইয়ের হাতে ধরা ব্রিফকেস। পোশাক থেকে ভুরভুর করে ভেসে আসছে চমৎকার সুগন্ধ। কবি সিকদার আমিনুল হককে দেখেছি সর্বদা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরতেন, ঝরঝরে ক্লিন শেভড থাকতেন।
এলিফ্যান্ট রোডে তখন মাছির মতো উড়ে বেড়ানো ভিড়, দোকানে দোকানে মানুষের ভিড়ের জড়াজড়ি। রিকশা আমাদের নিয়ে যায় নানান গলি পার হয়ে সাকুরা বারে। আমি তখনই অবশ্য টের পেতে শুরু করেছি কবিতা প্রাপ্তির আশার কপালে ছুরি মেরেছে কেউ। সত্যি সত্যি সেদিন কবিতাটা আর পাওয়া হয়নি আমার। শাহবাগে বিকেলের আলো পানশালার জানালায় অস্থির পাখির মতো ঠোকর মারছিল। ভেতরে পানপাত্রে উপচে পড়ছিল কবিদের তীব্র আত্মা। লেখা পাওয়ার টান আমাকে পথ ভুলিয়ে নিয়ে এসেছে পানশালায়।
এ রকম পথ ভোলা লেখা সংগ্রহের গল্পটা অবশ্য আরেক প্রয়াত সাহিত্যিক সৈয়দ আলী আহসানের বেলায় একেবারেই অন্য রকম ছিল। তখন তিনি থাকেন কলাবাগানে একটা গলির গায়ে হেলান দিয়ে থাকা বাড়তি আরেকটা গলির শেষ মাথায়। প্রথমবার কোনো এক রমজান মাসে লেখা আনার জন্য বাসায় গিয়ে অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। প্রবন্ধটা তখনো শেষ করেননি আলী আহসান সাহেব। বেশ বড় আকৃতির বসার ঘরে ল্যাম্পের মৃদু আলোয় একটা কাঠের একপেয়ে ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে লিখছেন। পিঠের ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে এ রকম ব্যবস্থা। মুশকিল হলো আমার। কারণ আমাকেও লেখা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। উনি দাঁড়িয়ে আর আমি বসে আছি, বিষয়টা একেবারেই বেমানান। অগত্যা পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে বইয়ের আলমারিতে ব্যস্ত থাকলাম। অসম্ভব ভালো একটি বইয়ের সংগ্রহ ছিল সৈয়দ আলী আহসানের। ভদ্রলোক বিস্তর পড়তেন। বহু বিষয়ে বই না ঘেঁটেই অনর্গল কথা বলে যেতে পারতেন। আরেকবার তার বাড়িতে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার ঈদসংখ্যার জন্য লেখা সংগ্রহ করতে গিয়ে এশিয়ার চারুকলার উত্থান পর্ব নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার দীর্ঘ বক্তৃতা শুনতে হয়েছিল মনে আছে।
আমি তখন কোনো কাগজে কাজ করছি না। একরকম বেকারত্ব চলছে। বিভিন্ন খবরের কাগজের অফিসে ঘুরে ঘুরে আড্ডা দিয়ে বেড়াই। একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক আমাকে পাকড়াও করে পাঠালেন কথাসাহিত্যিক রাহাত খানের বাড়িতে লেখা আনতে। তিনি ওই কাগজে একটি ধারাবাহিক উপন্যাস লিখছেন। আমার কাজ হচ্ছে ওই সপ্তাহের কিস্তিটা নিয়ে আসা। সোৎসাহে রাজি হয়ে গেলাম। রাহাত ভাই থাকেন সিদ্ধেশ্বরীতে। নির্জনতায় ফুটে থাকা সাদা রং করা একটা একতলা বাড়ি। দরজায় পরিচয় দিতেই ভেতরে ডাক পড়ল। রাহাত ভাই খানিক অগোছালো একটা ঘরে টেবিলে বসে লিখছেন। তখনকার দিনে পত্রিকা অফিসে একধরনের নিউজপ্রিন্টের প্যাড ছিল, যাতে আমরা খবর লিখতাম। রাহাত ভাই দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। দেখলাম, উনিও সেই প্যাডেই লিখছেন উপন্যাস। আমাকে বসতে বললেন। আরও কয়েক সিøপ লিখবেন। কুশলবিনিময়ের পর রাহাত ভাই এক তাড়া কাগজ আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এখানে বসে তুমি কথা বললে লিখতে পারব না। তুমি বরং আমার লেখার অক্ষরগুলোতে মাত্রা বসাও।
লেখা হাতে নিয়ে আমি বিস্মিত। ভীষণ খুদে খুদে হস্তাক্ষরে রাহাত ভাই লেখেন এবং কোনো বর্ণের ওপর মাত্রা নেই। ওনার লেখার আরেকটি বৈশিষ্ট্য দেখলাম, সবগুলো লাইনের আকৃতি নৌকার মতো। এক পাশে উঁচু হয়ে শুরু, মাঝখানটা নিচের দিকে বেঁকে গিয়ে আবার ওপরে উঠে গেছে। কী আর করা, আমি বসে বসে রাহাত ভাইয়ের লেখায় মাত্রা দেওয়ার কাজ চালিয়ে গেলাম গভীর নিষ্ঠায়।
সংবাদ উপস্থাপক ও চিকিৎসক এন কে নাতাশা মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
আইইডিসিআর প্রকাশিত ন্যাশনাল জার্নাল অব পাবলিক হেলথের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন এন কে নাতাশা। টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির প্রতিষ্ঠাকালে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সবশেষ তিনি মাছরাঙা টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা চিকিৎসক মুশতাক হোসেন জানান, ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে নাতাশার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর দেশে ও দেশের বাইরে চিকিৎসা নেন তিনি। ২০২০ সালের মার্চে তার স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করা হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে সুস্থ হয়ে উঠে আবার সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করেন। কিন্তু পরে ডিসেম্বর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে হার্ট অ্যাটাক করলে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
চিকিৎসক নাতাশার মৃত্যুতে তার পরিবার ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় দুই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের ডুমনী এলাকার পাগলা বেইলি ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একই দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
শ্রীপুরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে। স্থানীয়রা বলছে, কুয়াশায় ভেজা বেইলি ব্রিজের পাটাতন পিচ্ছিল থাকায় দ্রুত গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন দুর্ঘটনাস্থলের পাশের কাপাসিয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের সোলাইমান হোসেনের ছেলে সিয়াম আহম্মেদ (২০) ও তার বন্ধু শাকিল আহম্মেদ (২০)। শাকিলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়াতে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। দুজনই গাজীপুর বিজিএমইএ কলেজে পড়তেন বলে স্বজনরা জানিয়েছে পুলিশকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রহল্লাদপুর ডুমনী আঞ্চলিক সড়কের পাগলা বেইলি ব্রিজে ওঠার সময় তাদের মোটরসাইকেল অনিয়ন্ত্রিত হয়ে রেলিংয়ে সজোরে ধাক্কা লাগে। এ সময় তাদের মোটরসাইকেলের গতি ছিল বেশি। তার ওপর কুয়াশাভেজা ব্রিজের পাটাতন পিচ্ছিল থাকায় মোটরসাইকেল দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরে ব্রিজের রেলিংয়ে সজোরে ধাক্কা লাগায় তাদের মাথা-মুখ থেঁতলে যায়। মারাত্মক আঘাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। এ সময় ওদের রক্তে ব্রিজের পাটাতন ভিজে যায়। দুর্ঘটনা দেখে উদ্ধারে এগিয়ে আসা মানুষ পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ।
শ্রীপুর মডেল থানার (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘দ্রুত গতির মোটরসাইকেল (গাজীপুর-ল-১১-৩৪৫৭) বেইলি ব্রিজে ওঠার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই চালক ও আরোহীর মৃত্যু হয়।’
কালিয়াকৈরে ট্রাকচাপায় নিহত ১: গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মেদীআশুলাই এলাকায় গতকাল সকালে ট্রাকের চাপায় সিএনজিচালিত এক অটোরিকশা আরোহী মারা গেছেন। নিহত মিয়া চাঁন (৬০) টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার বাদচাল এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় দিনমজুর ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিয়া চাঁন দুই মাস আগে জীবিকার খোঁজে গাজীপুরের শ্রীপুর থানার মাওনা এলাকায় আসেন। সেখানে তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। গতকাল ভোরে তিনি সেখান থেকে কালিয়াকৈর যাচ্ছিলেন। কলারোয়ায় অবৈধ যানের চাপায় শিশু নিহত: সাতক্ষীরার কলারোয়ার গয়ড়া কলেজ মোড়ে মাটিবাহী একটি অবৈধ যানের চাপায় মুনতাহিনা নামে ৬ বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। সে উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের কন্যা। কলারোয়া থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা জানান, সকালে আলমগীর হোসেন তার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলে উপজেলার গয়ড়া কলেজ মোড়ে মাটিবাহী অবৈধ যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে দুজনই পড়ে যান। অবৈধ যানের চাপায় মারাত্মক আহত মুনতাহিনা মারা যায়।
রংপুরে বাস উল্টে নিহত ১: রংপুরে পিকআপ ভ্যানকে পাশ কাটাতে গিয়ে যাত্রীবাহী বাস উল্টে রফিকুল ইসলাম (৫০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বাসের অন্তত ২০ যাত্রী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে উদ্ধার করে ৭ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রংপুর সুন্দরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পীরগাছার ইছলারহাট ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের জামালহাটের মধ্যবর্তী স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রফিকুল সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সিংড়ায় ট্রাকের চাকায় প্রাণ গেল পথচারীর: নাটোরের সিংড়ায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছে মো. শামসুল হক (৫৫) নামে এক পথচারী। গতকাল বিকেলে বলিয়াবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত পথচারী উপজেলার হিজলি গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল ৫টার দিকে সিংড়া-কলম আঞ্চলিক সড়কের বলিয়াবাড়ি এলাকায় হেঁটে পথ চলার সময় বালুবহনকারী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় শামসুল হক। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাসে আগুন: মাদারীপুরের শিবচরের এক্সপ্রেসওয়েতে বরিশাল এক্সপ্রেস নামে একটি বাসে যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে বাসটির ভেতরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাসের বক্সে রাখা যাত্রীদের বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খবর পেয়ে শিবচর ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে থানা পুলিশ এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে শিবচরের এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চরসংলগ্ন মোল্লার বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সাতক্ষীরার পৌরসভার ব্যাংক লেনদেন সচল রাখার দাবিতে ময়লার গাড়ি রেখে ব্যাংকের প্রবেশ পথ আড়াই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন বেতন না পাওয়া পৌর কর্মচারীরা।
সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরার সুলতানপুর বড় বাজার সড়কস্থ সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের সামনে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় ব্যাংকের সাধারণ গ্রাহকরা লেনদেন করতে না পেরে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যাংক ম্যানেজার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিষ্পত্তির আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
তবে, সমস্যা সুরাহা করতে ১২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আন্দোলনকারী জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ২/৩ মাস যাবত বেতন তুলতে পারছেন না। বেতনের টাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক কর্মকর্তা ও পৌর কর্মচারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সে কারণে ব্যাংকের সামনে পৌরসভার ময়লার গাড়ি রেখে অবরোধ করা হয়।
পরে, পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যাংক ম্যানেজারের আশ্বাসে আন্দোলন আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। ১২ ঘণ্টার মধ্যে সুরাহা না হলে ফের আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব, যোগ করেন ওই আন্দোলনকারী।
জানা যায়, সাতক্ষীরার পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতীর বিরুদ্ধে নাশকতার মামলায় হওয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে বরখাস্ত হন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন কাজী ফিরোজ হাসান।
এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি কে এম কামরু কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বিত হাইকোর্ট ডিভিশনের দ্বৈত বেঞ্চ এক আদেশে চিশতীর বরখাস্তের ওই আদেশ স্থগিত করেন। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে মেয়র পদে বসতে দেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, চিশতীর পক্ষে দেওয়া উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কপি সোনালী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিলে পৌরসভার ব্যাংক লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। যে কারণে ২/৩ মাস পৌর কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এক পর্যায়ে তারা সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পৌরসভার ময়লার গাড়ি নিয়ে পূবালী ব্যাংক, সাউথবাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রবেশ পথ বন্ধ করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান বলেন, পৌর কর্মচারীদের মাসিক বেতন দিতে তার এবং পৌরসভার সিইওয়ের যৌথ স্বাক্ষরে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকে। কিন্তু হাইকোর্টের চিঠি আছে টাকা তোলা যাবে না বলে বিভিন্ন তালবাহানা করছে তারা।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছি আমি আর আমার পৌর কর্মচারীরা বেতন পাবে না। তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। টাকার জন্য পৌরসভার অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হবে, তাও কাম্য নয়। পৌরসভার ২ লাখ বাসিন্দা টাকার অভাবে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে, এ হতে পারে না। ব্যাংক ম্যানেজার কেন একক সিদ্ধান্তে এ রকম তালবাহানা করল তা জানা নেই। মঙ্গলবারের (২৮ মার্চ) মধ্যে ব্যাংকে জমা রাখা সমুদয় টাকা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
অন্যদিকে, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার সরফরাজ নেওয়াজ বলেন, পৌর কর্মচারীদের বেতন দিয়ে দিতে বাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হওয়া কথা উল্লেখ করে ৬ ফেব্রুয়ারি পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতীকে বরখাস্ত করে। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি নাশকতার মামলায় তিনি কারাগারে যান এবং ৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে জামিনে মুক্ত হন।
পাবনার বেড়া উপজেলায় অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্প ‘বীর নিবাস’-এ বাড়ি বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজ পরিবারের নামে সেখানে বাড়ি নিয়েছেন বরাদ্দ কমিটির সদস্য সচিব বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তাকে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুজিববর্ষে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ‘বীর নিবাস’ নামে সারা দেশে ৩০ হাজার একতলা পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে সরকার। নীতিমালা অনুসারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতি ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে বরাদ্দ কমিটি গঠন করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বাছাইয়ের কাজ করবেন।
বাস্তবে দেখা গেল, রক্ষক ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ছোট ভাই শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ, এখন তা হস্তান্তরের পালা।
‘বীর নিবাস’-এ বরাদ্দ নীতিমালায় বলা হয়েছে, সরকারি আবাসন কিংবা ভূমি সুবিধা পাননি এমন অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবার সেখানে বরাদ্দ পাবেন। যুদ্ধাহতরা অগ্রাধিকার পাবেন। আবেদনকারী আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেই শুধু বিবেচনাধীন হবেন।
কিন্তু বেড়া উপজেলার কাজীরহাটে বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া সমাজসেবা কর্মকর্তার ভাই শফিউদ্দিন ফকির অসচ্ছল ব্যক্তি নন। তিনি সরকারি চাকরিজীবী, কাজীরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। রফিকুলের আরেক ছোট ভাই শওকত আলী ফকির পাবনার সুজানগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। রফিকুল ইসলামরা তিন ভাই রফিকুল, শফিউদ্দিন ও শওকত।
অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজ পরিবারের সদস্যকে বীর নিবাসে বরাদ্দ দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।
সরেজমিনে কাজীরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, শফিউদ্দিন ফকিরের জন্য বীর নিবাসের বাড়ি নির্মাণ শেষ হয়েছে। ওই বাড়ির পাশেই তিনতলা বাড়িতে থাকেন তার বড় ভাই বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
শফিউদ্দিন জানান, তাদের বাবা মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন ফকিরের নামে পরিবারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ কমিটির কাছে বীর নিবাসে বাড়ি বরাদ্দ চান তারা। পৈতৃক জমিতে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তারা মাসুমদিয়া ইউনিয়নে জায়গা কেনেন। সেখানেই বীর নিবাসের বাড়ি বরাদ্দ করেছে বরাদ্দ কমিটি। ভালো বেতনে সরকারি চাকরি করেও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার ঘর কীভাবে বরাদ্দ পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ইউএনও সাহেব বলতে পারবেন।’
বরাদ্দপ্রাপ্তির পর বাড়ির ভোগদখলের জন্য শফিউদ্দিনকে ক্ষমতা দিয়ে হলফনামা করেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। সে সময় আবুল হোসেনের দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা খাতুন বরাদ্দ দাবি করলে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে প্রভাব খাটিয়ে বীর নিবাসের স্বত্ব ছাড়তে লিখিত দলিল করিয়ে নেন প্রথম পক্ষের সন্তানরা। এ অভিযোগ করেছেন দ্বিতীয় স্ত্রী হালিমা খাতুন।
হালিমা খাতুন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার বিধবা স্ত্রী হিসেবে বাড়িপ্রাপ্তিতে আমার অগ্রাধিকার আছে। আমার একটি নাবালিকা মেয়েও আছে। প্রথম পক্ষের ছেলেরা সরকারি চাকরি করে। তাদের অবস্থা ভালো।’
তিনি বলেন, ‘বাড়ি বরাদ্দের কথা শুনে আমি ইউএনও অফিসে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা আমাকে বরাদ্দ দেয়নি। শফির নামে বাড়ি বরাদ্দ হবে বলে জানায়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠক করে আমার মেয়ের নামে এক লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে দলিলে সই করিয়ে নেয়। বাধ্য হয়েই তাদের সিদ্ধান্ত আমাকে মেনে নিতে হয়েছে।’
রূপপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মাজহারুল ইসলাম মোহন বলেন, ‘উপজেলা কমিটির কাছ থেকে বীর নিবাসে বরাদ্দ নেওয়ার পর মৃত আবুল হোসেন ফকিরের প্রথম পক্ষের ছেলেদের সঙ্গে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বিরোধ বাধে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউএনও আমার পরিষদে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। সেখানে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নাবালিকা মেয়ের জন্য এক লাখ টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত ও বিয়ের সময় সহযোগিতার শর্তে বীর নিবাসের বাড়ির মালিকানা প্রথম পক্ষের মেজো ছেলে শফিউদ্দিনকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।’
শফিউদ্দিন বীর নিবাসের বাড়ির বরাদ্দ নেওয়ায় অনিয়ম হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়াই অনিয়মের মধ্য দিয়ে গেছে। কারণ আবুল হোসেন ফকির মুক্তিযোদ্ধাই নন। তিনি ভারতেও প্রশিক্ষণে জাননি, কোনো দিন মুক্তিযুদ্ধ করেছেন বলেও শুনিনি। অথচ এসব পরিবারের লোকজন মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা ভোগ করছেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত হচ্ছেন। আমি এর বিপক্ষে।’
‘বীর নিবাস’ নিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুলের পারিবারিক সালিশ শেষে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর কাছ থেকে বীর নিবাসের দাবি না করার অঙ্গীকারনামা-দলিল করে নেওয়া হয়। সেই দলিলে সাক্ষী হিসেবে সই করেছেন বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হোসেন ফকিরের বিধবা স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম পক্ষের সন্তানদের বীর নিবাস নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়। পরে উভয় পক্ষ বসে সমঝোতা করে নিয়েছে। বৈঠকে আমি অসচ্ছল বিধবা স্ত্রীর অগ্রাধিকারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু উভয় পক্ষ সমঝোতা করে স্ট্যাম্প করে। সবার অনুরোধে আমি সাক্ষী হিসেবে স্ট্যাম্পে সই করেছি। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আমার স্বাক্ষর দেওয়া ঠিক হয়নি। আমি তখন বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করিনি; সরল মনে স্বাক্ষর করেছি। সমাজসেবা কর্মকর্তার ক্ষমতা ব্যবহার করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি কেন নিতে হবে, আমার বোধগম্য হয় না। এটি লজ্জারও বিষয়।’
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বীর নিবাসে বাড়ির জন্য আবেদন আবেদন কম ছিল। আবার যারা আবেদন করেছিল তাদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় জমি নেই। আমার পরিবারের সদস্যকে বীর নিবাসে বাড়ি বরাদ্দ আমি একা দিইনি। কমিটি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বাড়ি বরাদ্দে অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন বরাদ্দ কমিটির সভাপতি ও বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবুর আলী। তিনি বলেন, কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতেই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শফিউদ্দিনের নিজের বাড়ি নেই। অসচ্ছল হিসেবেই তাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘সচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা বা তার পরিবারের কোনো সদস্যের বীর নিবাসে বরাদ্দপ্রাপ্তির সুযোগ নেই। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চলতি রমজান মাসের শুরুতে টানা তিন দিন ছিল সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি। যে কারণে ওই তিন দিনে রাজধানীতে যানজট তেমন একটা সৃষ্টি হয়নি। তবে ছুটি শেষে গতকাল সোমবার রমজানের প্রথম কর্মদিবসে যানজটে নাকাল হতে হয়েছে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো রাজধানীতে যানজটের মাত্রাও বাড়তে থাকে। ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে তীব্র গরমের মধ্যে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়তে হয় অফিসগামী ও বিভিন্ন গন্তব্যমুখী মানুষকে।
গতকাল রাজধানীর সদরঘাট, গুলিস্তান, পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, রামপুরা ও মিরপুরসহ বেশ কটি এলাকা ঘুরে সকাল থেকে তীব্র যানজট দেখা যায়। যানজটে আটকা পড়ে অনেককে হাঁসফাঁস করতে দেখা যায়। কাউকে কাউকে আবার বাসে দীর্ঘ সময় বসে থেকে পরে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য হেঁটেই রওনা দিতে দেখা যায়। অনেক জায়গায় শুধু সড়ক নয়, ফ্লাইওভারে দেখা দেয় তীব্র যানজট।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর অনেক জায়গায় রাস্তাঘাটের সংস্কারকাজ চলায় বিকল্প পথ ব্যবহারের কারণে যানজটের শিকার বেশি হতে হচ্ছে ওইসব এলাকার যাত্রীদের। বিশেষ করে অফিসের শুরু ও শেষের দিকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রাইসুল হক চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মতিঝিল থেকে মহাখালী যেতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়। মতিঝিলের চারপাশে জায়গায় জায়গায় রাস্তা কাটা থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। তা ছাড়া কোনো কিছুরই সঠিক পরিকল্পনা নেই। এক রাস্তা কয়েকবার কাটতে দেখা যায়। আর এজন্যই মূলত এত যানজট।’
মিরপুরের বাসিন্দা মো. জয় বলেন, ‘অফিসের কাজে প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে যেতে হয়। কিন্তু যানজটের কারণে কোনো কাজই সময়মতো করতে পারছি না। রমজানের শুরু থেকেই সব রাস্তাঘাটে জ্যাম (যানজট) লেগেই আছে। রমজানের বাকি সময়ে যানজট পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।’
যানজটের কারণে যাত্রীদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ গণপরিবহনের চালক ও কর্মীরাও। তানজীল পরিবহনের চালক মো. তানভীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সকাল থেকেই রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট ছিল। কোনোভাবেই গাড়ি সামনে যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি থাকলে সারা দিন গাড়ি চালিয়েও লোকসানে পড়তে হবে।’
এদিকে নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে যানজট নিরসনে ছোট ছোট গাড়ি কমিয়ে গণপরিবহন ব্যবস্থা আরও উন্নত করার দাবি জানিয়েছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি শহরের জন্য যতটুকু পরিমাণ রাস্তাঘাট দরকার তার কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না এই নগরীতে। আর প্রতিদিন কী পরিমাণ যানবাহন সড়কে চলছে তার সঠিক সংখ্যাও জানা নেই বিআরটিএর। এ ছাড়া এখনো অনেক জায়গায় প্রকাশ্যে অবৈধ অনেক যানবাহন চলাচল করছে। সেই সঙ্গে ছোট ছোট গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু গণপরিবহনের দিকে কারও নজর নেই। অথচ ছোট গাড়ি কমিয়ে গণপরিবহনকে আরও উন্নত করার বিষয়টি প্রাধান্য দিলে যানজট অনেকটাই কমে যেত।’
রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টির কারণ জানতে চাইলে গতকাল সন্ধ্যায় ফার্মগেটে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো. মমতাজ ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যানজট নিরসনের জন্য ট্রাফিক পুলিশ সব সময় কাজ করে। টানা কয়েক দিনের ছুটির পর সড়কে গাড়ি বেশি নামায় কিছুটা যানজট বেড়েছে। সকালের দিকে একটু বেশি যানজট ছিল। বেলা ২টার পর কিছুটা কমলেও আবার বিকেলের দিকে অফিসগামীদের জন্য গাড়ির কিছুটা জটলা দেখা যায়। তবে যানজট নিরসনের জন্য আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তাও রাস্তায় নেমেছেন, কীভাবে যানজট নিরসন করা যায় সেই পদক্ষেপ নিতে।’
কনটেন্ট ক্রিয়েশন এখন চাহিদামূলক পেশার তালিকায় প্রথম। দেশের অনেকে কনটেন্ট ক্রিয়েশন করে উপার্জন করছেন। অনেকে আবার পেশা হিসেবেই বেছে নিয়েছেন। লিখেছেন অনিন্দ্য শোভা
সালটি ২০১৭। প্রথমে নিজ প্রোফাইলে মজার মজার ভিডিও আপলোড করতেন সাইফুদ্দিন সিয়াম। যা তার পরিচিতদের হাসির খোরাক হতো। পরে এসপি ক্রিয়েশন (SP. creation) ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে শুরু করেন। পছন্দের মানুষের মন খারাপ বা রাগ ভাঙানোর জন্য ছোট ছোট ফানি ভিডিও ইনবক্সে পাঠিয়ে ভালো-খারাপ ফ্রিডব্যাক পাওয়ার মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট ক্রিয়েশন হিসেবে তার যাত্রা শুরু। শুরুতে পেশা হিসেবে না ভাবলেও পরে নিয়মিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পেশা হিসেবে কনটেন্ট ক্রিয়েশন ভালো আবার খারাপও দুটো দিকই আছে। ঝুঁকিও কম নয়। কারণ সফল হবেন কি না সেটার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। তবে নিয়মিত ধৈর্য ধরে মানসম্পন্ন কাজটা করলে সফলতা অবশ্যই ধরা দেবে।’ ডাকো কেন (DAKO KEN) চ্যানেলের কনটেন্ট ক্রিয়েটর আবদুল্লাহ মজাদার (ফানি) কনটেন্ট ক্রিয়েটিং করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কনটেন্ট ক্রিয়েশনের দিকটা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে, চাহিদা বাড়ছে। পেশা হিসেবে কনটেন্ট ক্রিয়েশন ভালো একটি পছন্দ হতে পারে। অবসর সময়েই করতে হবে এমন নয়, এটিও যেহেতু একটি কাজ তাই পেশা হিসেবেও নেওয়া যায়।’
‘কী ধরনের কনটেন্ট তৈরি করবেন তার ওপর নির্ভর করে যন্ত্রপাতি। তবে কনটেন্ট ক্রিয়েশন শুরু করতে বেশি কিছুর প্রয়োজন হয় না। ভিডিও ধারণের জন্য একটা মোবাইল ফোন, মাইক্রোফোন হলেই হয়’ যোগ করেন আবদুল্লাহ। তার কণ্ঠে সুর মিলিয়ে সাইফুদ্দিন সিয়ামও বলেন, ‘অনেকে মনে করে নামিদামি ক্যামেরা, গ্যাজেট না হলে কনটেন্ট ক্রিয়েশন করা যায় না। এটা ভুল ধারণা।’
একটা সময় অনেকেই শখের বশে কন্টেন্ট ক্রিয়েশন করতেন। সময়ের দোলাচলে বিশ্বব্যাপী ডিজিটালাইজেশন, স্মার্টফোন সহজলভ্য এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধা হওয়ায় কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে ঝুঁকছে তরুণ-তরুণী থেকে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। অনেকে পেশা হিসেবে নিতে শুরু করেছে। কনটেন্ট ক্রিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি বলতে ‘ইউটিউব’কেই একটা সময় সবাই জানত। তবে সময়ের ধারাবাহিকতায় ইউটিউবের বাইরেও ফেসবুক, ব্লগার, পোডকাস্টার, স্টিমার ইত্যাদিতে কনটেন্ট ক্রিয়েট চলছে সমানতালে। আয়ও করছে ভালো পরিমাণে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকেই গতানুগতিক এবং সাধারণ কনটেন্ট নিয়ে কাজ করে, তাদের জন্য পেশা হিসেবে কনটেন্ট ক্রিয়েশন না। যারা সিরিয়াসলি প্রফেশনালভাবে কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে নেবে এবং কোয়ালিটিপূর্ণ কনটেন্ট নিয়ে কাজ করবে, তাদের ভবিষ্যৎ আলোকিত।’
কী নিয়ে কাজ করব
প্রতি বছর বাংলাদেশে কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের সংখ্যা বাড়ছে। আগে সবাই ইউটিউবকেন্দ্রিক হলেও বর্তমানে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে নিয়মিত হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর (রান্নাবান্না, ভ্রমণ ভøগ, রিভিউ, হাস্য-রসাত্মক, শিক্ষণীয়, টিচিং ইত্যাদি) কনটেন্ট ক্রিয়েট করছে।
এ বিষয়ে কথা হয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর সোহাগ মিয়ার সঙ্গে, যিনি বর্তমানে ‘সোহাগ ৩৬০ ডিগ্রি’ এবং ‘বেসিক ভাই’ ফেসবুক পেজ পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ট্রাভেল, ফুড, টেক, কুকিং, বিনোদন নিয়ে কনটেন্টের চাহিদা বাড়ছে। তবে যে বিষয় নিয়েই কাজ করুক না কেন, সেটা প্রফেশনালি করতে হবে এবং ইউনিক কনটেন্ট হতে হবে।’
হরেক উপায়ে আয়
একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারেন। ফেসবুক ও ইউটিউবের ক্ষেত্রে প্রথমে মনিটাইজেশন করতে হয়। তবে এই মনিটাইজেশন পেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের ভিত্তিতে ফেসবুক এবং ইউটিউব পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। এরপর থেকে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন ভিডিওতে দেখাবে এবং যত বেশি দর্শক (ভিউয়ার) দেখবে তার ওপর ভিত্তি করে টাকা পাবেন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। এছাড়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বা পণ্যের স্পনসরশিপ, এফিলিয়েট মার্কেটিংসহ আরও কয়েকটি ধাপে আয় করা যায়।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর আবদুল্লাহ বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরে বেশি আয় হচ্ছে। স্পন্সরের বিষয়টা হলো, একটি ব্যান্ডের পণ্য ভিডিও বা পোস্টের মাধ্যমে প্রমোট করলে ব্যান্ড নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিয়ে থাকে।’
আয় কেমন
সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আয়টা ভিউয়ার এবং সাবসক্রাইবের ওপর নির্ভর করে। তবে সাধারণভাবে ২০ হাজার থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব।’
বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের ফলে মানুষও প্রযুক্তি-নির্ভর হচ্ছে, তাই কনটেন্ট ক্রিয়েটিংও পেশা হিসেবে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য, নিয়মিত এবং প্রফেশনালভাবে কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে সামনে রেখে শুরু করলে এই পেশাতেও সাফল্য অর্জন সম্ভব বলে জানান কনটেন্ট ক্রিয়েটররা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
রাজধানীর মিরপুরের একটি মাধ্যমিক-সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে সিফাত। একই এলাকায় বসবাসকারী তার বন্ধু সিয়াম পড়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে। সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রোজার ছুটি। আর সরকারি প্রাথমিকে ছুটি ১৫ রোজা অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে।
এক দেশে একই শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ভিন্ন নিয়মে ছুটি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এতে লেখাপড়ায় কেউ এগিয়ে যাবে, আবার কেউ পিছিয়ে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ মামুনুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকার বা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে ভেবেচিন্তেই নেয়। তবে সব ধরনের স্কুলে একটা কো-অর্ডিনেশন থাকলে ভালো হয়। আমরা ছুটির ব্যাপারে আরও আলাপ-আলোচনা করব।’
জানা গেছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে আগামী শুক্রবার শুরু হতে পারে রমজান মাস। বছরের শুরুতেই স্কুলগুলোর ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। সে অনুযায়ী পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদ্রাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা ভিন্ন। তারা পবিত্র রমজান, ইস্টার সানডে, চৈত্র-সংক্রান্তি ও বাংলা নববর্ষ, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা থাকবে।
রাজধানীসহ বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রোজার ছুটিও একই। তবে মাদ্রাসায় রোজার ছুটি শুরু এক দিন আগেই অর্থাৎ আজ বুধবার, ২২ মার্চ।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান। তাই বুধবার ক্লাস করে বৃহস্পতিবার রোজার ছুটি শুরু হবে। তবে সব স্কুলে একই ধরনের ছুটি থাকা জরুরি। এতে একই সময়ে সিলেবাস শেষ করা যাবে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও সন্তুষ্ট থাকবে।’
রমজানে মাধ্যমিকে স্কুল বন্ধ আর প্রাথমিকে খোলা রাখায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার লাখ শিক্ষকের মধ্যে। তারা বলছেন, যেসব অভিভাবকের সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক দুই স্কুলেই পড়ে তাদের সমস্যা হবে। রমজান মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রাথমিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরাও রোজা রাখেন। তাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রাথমিকের ছুটি নির্ধারণ করা যৌক্তিক হবে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ বছর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরকারি ছুটি ৭৬ দিন, কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৫৪ দিন। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি নির্ধারণের যুক্তি তুলে ধরে আমরা ইতিমধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছি। কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো সাড়া পাইনি।’