
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পুরস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারও ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। ইতিমধ্যে ‘বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২২’-এর জন্য প্রতিবেদন চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, এবার বেড়েছে পুরস্কারের কলেবর এবং মূল্যমান। সব মিলিয়ে ১০টি ক্যাটাগরিতে এবার পুরস্কার পাবেন ২৫ জন। পুরস্কারের মূল্যমান ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিজয়ীরা প্রত্যেকে পাবেন ক্রেস্ট এবং সনদপত্র।
গত বছর দেশে প্রথমবারের মতো মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদানের সূচনা করেছিল বসুন্ধরা গ্রুপ। ওই অনুষ্ঠানে গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ঘোষণা দিয়েছিলেন পরবর্তী পুরস্কারের মূল্যমান হবে ১০ লাখ টাকা। একইসঙ্গে পুরস্কারের কলেবর বৃদ্ধিরও ঘোষণা দেন তিনি। সে অনুযায়ী এবার ১০টি ক্যাটাগরিতে ২৫টি পুরস্কারের জন্য প্রতিবেদন আহ্বান করা হয়েছে।
বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গতবারের মতো এবারও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২২ প্রদান করা হবে। দেশের সংবাদপত্র, অনলাইন নিউজপোর্টাল, টেলিভিশন ও রেডিওতে কর্মরত সাংবাদিকরা বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২২-এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। পুরস্কারের জন্য ১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের মধ্যে প্রকাশিত বা প্রচারিত প্রতিবেদন নির্দিষ্ট ঠিকানায় জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের সঙ্গে অবশ্যই বাংলা ও ইংরেজিতে প্রতিযোগীর নাম, ই-মেইল, মোবাইল নম্বর এবং বর্তমান কর্মস্থলের ঠিকানাসহ এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও এ পুরস্কারের সঙ্গে যুক্ত থাকছে নিরপেক্ষ জুরি বোর্ড। অভিজ্ঞ সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত নিরপেক্ষ জুরি বোর্ড প্রতিটি প্রতিবেদন, আলোকচিত্র ও ভিডিওচিত্র মূল্যায়ন করবেন। সর্বোচ্চ গড় নম্বরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারিত হবেন। জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।
যেসব ক্যাটাগরিতে পুরস্কার : ১০টি ক্যাটাগরিতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, ভিডিও বা অডিও প্রতিবেদন এবং আলোকচিত্র আহ্বান করা হয়েছে। ক্যাটাগরিগুলো হলো মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, অপরাধ, নারী ও শিশু, পরিবেশ-জলবায়ু ও মাইগ্রেশন, অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র, আলোকচিত্র এবং ভিডিও জার্নালিজম। প্রথম ৮টি ক্যাটাগরিতে ২৩ জন বিজয়ী প্রত্যেকে পাবেন ১০ লাখ টাকার পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সনদ। শেষ দুই ক্যাটাগরিতে দু’জন বিজয়ী পাবেন আড়াই লাখ টাকার পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সনদ।
এগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে প্রিন্ট, অনলাইন, টেলিভিশনের পাশাপাশি রেডিওতেও সেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে। অপরাধ ও দুর্নীতি, নারী ও শিশু, পরিবেশ, জলবায়ু ও মাইগ্রেশন, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ক্যাটাগরিতে প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের সেরা ৩টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পুরস্কৃত হবে। সেরা অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রের জন্য নির্বাচিত হবেন ১ জন। সেরা অনুসন্ধানী ভিডিওচিত্র ও আলোকচিত্রের জন্য ২ জন পাবেন পুরস্কার। ভিডিও জার্নালিস্টদের আলাদা করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। টেলিভিশন ও অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্র ক্যাটাগরিতে যেসব প্রতিবেদন জমা পড়বে সেখান থেকেই জুরি বোর্ড সেরা অনুসন্ধানী ভিডিও জার্নালিস্ট নির্বাচন করবেন।
আবেদনের নিয়মাবলি : প্রতিবেদন, প্রামাণ্যচিত্র ও আলোকচিত্র কুরিয়ার, ই-মেইল অথবা সরাসরি ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের কার্যালয়ে জমা দিতে পারবেন।
জমা দেওয়ার সময় অবশ্যই খামের ওপর অথবা ই-মেইলের সাবজেক্টে কাক্সিক্ষত ক্যাটাগরির নাম উল্লেখ করতে হবে।
একজন প্রতিবেদক শুধু একটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন। তবে সিরিজ প্রতিবেদন হলে একাধিক প্রতিবেদন জমা দেওয়া যাবে।
১ জানুয়ারি ২০২২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশিত বা প্রচারিত হতে হবে। প্রতিবেদনের সঙ্গে অবশ্যই বাংলা ও ইংরেজিতে প্রতিযোগীর নাম, ই-মেইল, মোবাইল নম্বর এবং বর্তমান কর্মস্থলের ঠিকানাসহ এক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দিতে হবে।
প্রতিবেদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির প্রত্যয়নপত্রও জমা দিতে হবে।
প্রতিটি প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদনের ১০ সেট প্রিন্ট বা স্ক্যান কপি ও অনলাইন লিংক এবং টেলিভিশনের ক্ষেত্রে ১০ সেট স্ক্রিপ্ট, সিডি কপি বা পেনড্রাইভ ও নিউজ লিংক জমা দিতে হবে।
যদি কেউ ই-মেইলে আবেদন করেন তাহলে মূল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্যান কপিসহ ইপেপারের প্রতিবেদনের লিংক জমা দিতে হবে। একইভাবে অনলাইনের ক্ষেত্রে মূল প্রতিবেদনের লিংক জমা দিতে হবে। টেলিভিশন প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মূল ইউটিইউ বা ফেইসবুকে আপলোড হওয়া অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের লিংকটি জমা দিতে হবে।
টেলিভিশন রিপোর্ট ও অনুসন্ধানী প্রামাণ্যচিত্রের ক্ষেত্রে আবেদনের সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে অবশ্যই ভিডিও জার্নালিস্টের নাম ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
প্রতিবেদন পাঠানোর ঠিকানা : ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড, প্লট-৩৭১/এ, ব্লক-ডি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বারিধারা, ঢাকা-১২২৯। ইমেইল নধংযঁহফযধৎধ.ধধিৎফ@মসধরষ.পড়স
প্রতিবেদন জমাদানের শেষ তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩।
দ্বিতীয়বারের মতো নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরে বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর। নতুন এ স্থায়ী ভেন্যু বুঝে পাওয়ার পর মেলাকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। প্রথম কয়েক দিন আশানুরূপ দর্শনার্থী না থাকলেও এখন প্রতিদিনই ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার সার্বিক আয়োজন নিয়ে দর্শনার্থী-ব্যবসায়ীদের যেমন রয়েছে সন্তুষ্টি, আবার অন্যদিকে কিছু বিষয় নিয়ে রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে অন্যতম হলো রেস্তোরাঁ সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ড।
মেলার স্টলের কর্মচারীদের বাসা থেকে আনা খাবার নিয়ে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বাধ্য হয়ে রেস্তোরাঁগুলোর খাবার চড়া দামে কিনে খেতে হচ্ছে স্টল কর্মচারীদের। মাসিক বেতনের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া এসব স্টলকর্মী বলছেন, এভাবে ‘গলাকাটা’ দামে খাবার কিনতে গেলে মাস শেষে পাওয়া বেতনের টাকা থেকে তাদের পকেটে আর উদ্বৃত্ত কিছু থাকবে না।
এদিকে এবারের আসরের ২০তম দিন গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে মেলায় ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। এতে করে বিক্রি বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে। গতকাল মেলায় প্রায় ৩ লাখ লোকের সমাগম হয়েছিল বলে জানিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) কর্র্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার মেলায় দেশি-বিদেশি পণ্যের ৩৩১টি স্টল ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলায় নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরাও অংশ নিয়েছেন। মেলার স্টলের প্রাণ হচ্ছেন বিক্রয়কর্মীরা। তারা মেলায় আসা ক্রেতাদের পণ্য সম্পর্কে বুঝিয়ে পরে বিক্রি করেন। এ কারণে প্রায় প্রতিটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলেই আকৃতিভেদে ৫-১৫ জন করে এক মাসের জন্য খণ্ডকালীন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। মেলার স্টলগুলোতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বিক্রয়কর্মী রয়েছে বলে জানা গেছে। মেলার আশপাশে বাড়ি বা মেস ভাড়া আকাশছোঁয়া হওয়ায় এসব কর্মচারী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে এসে-গিয়ে কাজ করছেন। মেলার ভেতরের রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম অতিরিক্ত হওয়ার কারণে স্টল কর্মচারীরা দুপুরের খাবার বাসা থেকে রান্না করে অথবা বাইরে থেকে সাশ্রয়ীমূল্যে কিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু এবার মেলায় রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা স্টল কর্মচারীদের বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসার সময় ফটকের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে বাধ্য হয়ে চড়া দামেই খাবার কিনে খেতে হচ্ছে মেলার ভেতরে করা রেস্তোরাঁগুলো থেকে। এতে করে তাদের দিনের বেতনের টাকার অধিকাংশই চলে যাচ্ছে দুপুরের খাবার খেতেই। যা নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ স্টলগুলোর কর্মচারীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষুব্ধ এক স্টল কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এক মাসের আয়ের বেশিরভাগ টাকা খরচ হচ্ছে মেলার ভেতরে খাবার খেতে। আমাদের বেতন আর কত ধরা হয়েছে! মেলায় খাবার বিক্রির জন্য রেস্তোরাঁ মালিকদের নিয়ে সিন্ডিকেট করা হয়েছে। তারা কাউকেই বাসা থেকে রান্না করা খাবার অথবা বাইরে থেকে খাবার আনতে দিচ্ছে না। আনতে গেলেই বাধা দিচ্ছে তাদের লোকজন। আমাদের বিষয়টি মেলা কর্র্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত। না হলে সামনের বার (মেলার পরের বছরের আসর) আসবে না অনেকেই।’
এ প্রসঙ্গে তার্কিশ প্যাভিলিয়নের কর্মচারী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার বাসা ঢাকার বাড্ডা এলাকায়। প্রতিদিন মেলায় আসতে হচ্ছে। প্রথম প্রথম কয়েক দিন মেলায় বাসা থেকে রান্না করা খাবার এনেছি। তবে প্রথম দিন থেকেই একটি সিন্ডিকেট বাধা দেয়। এখন আর আনতে না পারায় বাধ্য হয়ে ভেতরের রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। যে কয় টাকা বেতন পাচ্ছি তার বেশিরভাগ অংশ রেস্তোরাঁর খাবার বিল দিতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এখানে কাজ করতে হচ্ছে। তাই মেলার যে কদিন বাকি রয়েছে কর্র্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়টি খতিয়ে দেখার।’
মেলার আরেকটি স্টলের কর্মচারী তুষার আবদুল্লাহ বলেন, ‘রেস্তোরাঁর রান্না করা খাবার খেতে আমার কষ্ট হয়। গ্যাসের সমস্যাসহ একাধিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এখানকার খাবার খেয়ে। বাসা থেকে খাবার আনতে পারলে যেমন খরচ বাঁচত, তেমনি অসুস্থতার হাত থেকে রক্ষা পেতাম। তাছাড়া খরচ কমে গেলে সংসার আরও ভালো চালাতে পারতাম।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিবির সচিব ও বাণিজ্যমেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘শুক্রবার ছুটির দিনে মেলায় প্রায় তিন লাখ দর্শনার্থী আসে। এতে করে মেলা জমে উঠে। মেলার ভেতরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব রান্নাঘর রয়েছে। তারা কর্মচারীদের খাবার নিয়ে আসছে বলে আমি জানি। কিন্তু মেলার ভেতরে কর্মচারীদের খাবার নিয়ে প্রবেশ করতে না দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। কেউ যদি এমন অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
কিছু নক্ষত্র আয়ুষ্কালের শেষে এসে বিশাল সুপারনোভায় বিস্ফোরিত হয়। কিন্তু বেশির ভাগ নক্ষত্রই শীতল ও সংকুচিত হয়ে একটি ছোট কোরে পরিণত হওয়ার আগে নিজের সব উপাদান ত্যাগ করে। তবে ক্ষুধার্থ কৃষ্ণগহ্বরের নক্ষত্র গিলে খাওয়ার দৃশ্য মহাবিশ্বে খুবই বিরল। কোনো ছায়াপথে এ ধরনের ঘটনা প্রতি এক লাখ বছরে অল্প কয়েকবার ঘটে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ধরা পড়েছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপে। বিষয়টি উঠে এসেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জের প্রতিবেদনে।
১৮ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষকরা পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি নক্ষত্রের জীবনের অন্তিম কিছু মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করেন, যা কৃষ্ণগহ্বরের খুব কাছাকাছি বিচরণ করছিল এবং কৃষ্ণগহ্বরের উদরে হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে বিপুল আলো ছড়িয়ে যায়। গবেষকরা এ ঘটনাকে ‘এটি২০২২ডিএসবি’ নামে অভিহিত করেছেন।
কোনো কৃষ্ণগহ্বরের প্রভাবে নক্ষত্রের টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার ঘটনা ‘টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্ট’ নামে পরিচিত। আর এটি ঘটে থাকে বিশালাকৃতির কৃষ্ণগহ্বরের মহাকর্ষ শক্তির কারণে।
বিশালাকৃতির কৃষ্ণগহ্বরগুলো ছায়াপথের কেন্দ্রে লুকিয়ে থাকে। আর বেশি কাছাকাছি থাকা নক্ষত্রের গ্যাসীয় স্তরগুলো নিজের দিকে টেনে আনতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ভার্জ।
নক্ষত্র পুরোপুরি টুকরা টুকরা হওয়ার পর এর অবশিষ্টাংশ চলে যায় কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে থাকা ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’ নামে পরিচিত এক গোলাকৃতির বলয়ে। আর এই জায়গা থেকেই কৃষ্ণগহ্বর তা গিলে ফেলে।
‘কৃষ্ণগহ্বর খুবই অগোছালো ভক্ষক’ ‘আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি’র বৈঠকে বলেছেন ‘হার্ভার্ড অ্যান্ড স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিসিকসের’ গবেষক এমিলি এঙ্গেলথালার। তিনি বলেন, ‘তারা ভেতর থেকে এই “ডোনাট” আকৃতির অ্যাক্রিশন ডিস্ক খেয়ে ফেলছে। আর তারা এতটাই খেয়ে বিকিরণ ঘটাচ্ছে, যার ফলে ওই ডিস্ক বড় ও সুন্দর স্থূলাকৃতির “ডোনাটে” পরিণত হচ্ছে।’
এসব ঘটনা থেকে পাওয়া কিছুসংখ্যক বিকিরণ ‘জেট’ আকারে দূরে সরে যায়। এই গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া হয়েছে খোদ অ্যাক্রিশন ডিস্কের মধ্য দিয়ে আসা বিকিরণের ওপর।
নক্ষত্র থেকে নির্গত অতিবেগুনি রশ্মি দেখতে গবেষকরা হাবল টেলিস্কোপ ব্যবহার করেছেন। এতে ব্যবহৃত হয়েছে ‘স্পেকট্রোকপি’ বা ‘বর্ণালিবিদ্যা’ নামে পরিচিত কৌশল। ওই আলোকে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ভেঙে এতে কী ধরনের পদার্থ শোষিত হয়েছে, তা দেখার উদ্দেশ্যে। এটি তাদের কী ধরনের উপাদান ছিল, তা নির্ধারণ করতে এবং ব্ল্যাক হোলের চারপাশে উজ্জ্বল, গরম বিশৃঙ্খলার অভ্যন্তরে কী ঘটছে, সে সম্পর্কে ধারণা দেয়।
অতিবেগুনি রশ্মিতে এমন ঘটনা সব সময় দেখা যায় না। কারণ এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য সহজেই আটকে দেওয়া যায়। ফলে ডেটা সংগ্রহ করাও জটিল হয়ে ওঠে। আর এগুলো সংগ্রহ করতে প্রয়োজন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে থাকা কোনো টেলিস্কোপ।
এঙ্গেলথালার বলেন, ‘অতিবেগুনি রশ্মি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের বেলায় অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এটা আমাদের জন্য ভালো হলেও নক্ষত্র পর্যবেক্ষণে ভালো ফল দেয় না। এ কারণে, আমাদের মহাকাশে বসানো হাবলের মতো টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে হয়।’
এই শহরে এখন আমি আর কিছুই খুঁজে পাই না। ড্রয়ার হাতড়াতে গিয়ে দেখি বৃষ্টি ঝরছে। এক গলা পানিতে স্মৃতি টুকে রাখার খাতায় কালো অক্ষরগুলোর অনেকাংশ ধুয়ে গিয়ে কেমন অসহায় পড়ে আছে কিছু চিহ্ন; যেন সার্কাসের একদল ক্লাউন! কখনো বাইরে রোদের দিকে তাকিয়ে মনে হয়, রিপ ভ্যান উইংকেলের মতো ১০০ বছর পরে কোথাও জেগে উঠে চোখ কচলে বুঝে নিতে চাইছি অচেনা চারপাশ। এই শহরে কোথাও কারও বাড়িতে কড়া নাড়তে গিয়ে দেখি কড়াটা উধাও, সঙ্গে বেপাত্তা মানুষটাও। কাউকে কোথাও খুঁজে পায় না হাতের মুঠোয় সক্রিয় ফোন, মন অথবা তীব্র আকাক্সক্ষাও। কোথাও পৌঁছে দেখি শীত পড়ে গেছে, পাতা ঝরে গেছে, লেকের ধারে অব্যর্থ কাঠের বেঞ্চিও আর চেনে না লন্ড্রির স্লিপে লিখে রাখা গল্পগুলো। তবুও মনে পড়ে। অবলুপ্ত কোনো স্থাপত্যের জলমগ্ন সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে নেমে গেলে হঠাৎ মনের মধ্যে ফুটে ওঠে আরেকটা শহর, অন্য রকম ঘ্রাণে উতরোল আরেকটা সময়। তখন গলিতে ক্রিকেট খেলা ছিল, সেলুনে বসে খবরের কাগজে সিনেমার বিজ্ঞাপন পড়া ছিল নেশা, শেষ করে আসা জড়ানো কণ্ঠের অনেক গান ছিল রাত্রিবেলা। এখন নিজেকে মৃত ভেবে মাঝে মাঝে স্পর্শ করে দেখি, না, প্রাণ আছে এখনো। আর প্রাণ আছে মানেই মনে পড়ে যাওয়াটুকু আছে, ভেতরে মেঘের মতো জমে আছে লাল নীল মানুষের গল্প।
বছর চল্লিশেক আগে ইন্টারনেটের এত বাড়ন্ত হয়নি। পত্রিকা অফিসগুলোতে লেখা দিতে গেলে গণপরিবহন ছিল ভরসা। সাহিত্য সম্পাদকদের দপ্তর ছিল গল্পে ভরা এক পৃথিবী। আড্ডার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে ঘড়ির কাঁটাও অসহায় বোধ করত। সাহিত্যিকরা আসতেন সম্পাদকের কাছে লেখা দিতে। চায়ের কাপের গায়ে লেখা হয়ে থাকত অনেক মহাকাব্য। দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার সুবাদে এ ধরনের আড্ডার ঝড়ের কেন্দ্রে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু সাহিত্যিকদের বাড়িতে বিশেষ সংখ্যার লেখা সংগ্রহ করতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটাও আমার কাছে সমান মূল্যবান। একটি সাপ্তাহিকের জন্য কবিতা আনতে গিয়েছি প্রয়াত কবি সিকদার আমিনুল হকের বাড়িতে। সিকদার ভাইয়ের বাড়িতে যাওয়ার অভিজ্ঞতাটা আমার পুরনো এবং লোভনীয়। অনেকবার আড্ডা দিতে গিয়েছি তার বাড়িতে। অগ্রজ কবিদের সঙ্গী হয়েছি। দুপুরবেলা সিকদার ভাইয়ের বাড়ি মানেই নিরিবিলি মাকড়সার জাল বোনা এক সময়। এলিফ্যান্ট রোডে তখনো আকাশ ফুটো করা বাড়ি তৈরি হয়নি। একটা নির্জন গলির মুখেই বাসাটা। ফুরফুরে একটা শহরে রিকশা ভ্রমণ জলাঞ্জলি দিয়ে গলির মুখ থেকে একটু হাঁটলেই এলিফ্যান্ট রোডে ল্যামারাসের গলির পাকস্থলী বরাবর সিকদার ভাইয়ের ঠিকানা। সিঁড়ি বেয়ে উঠে কড়া নাড়তেই দরজা খুলে যায়। ছিমছাম বসার ঘরে একটু পরেই বাটিক প্রিন্টের শার্ট আর লুঙ্গি পরে সিকদার ভাইয়ের আগমন।
-সিকদার ভাই, কবিতা নিতে এসেছি।
-ওহ, কবিতা? আচ্ছা, বসো একটু। আসছি আমি।
অন্দরমহলে অন্তর্হিত সিকদার ভাই। আধা ঘণ্টা পর যখন ফিরে এলেন, পরনে বাটিক প্রিন্টের লাল শার্ট আর প্যান্ট। ভুরভুর করে সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছে আফটার শেভ।
-...খাবে একটু?
আমার তরুণ আত্মার নৌকা বাতাসে ভর করে।
-এখন!
- এটাই তো সময়। চলো, পান করে বের হব।
ঝকঝকে গ্লাসে পানীয় আসে। বাইরে তার চেয়ে বেশি ঝকঝক করছে রোদ্দুর। পাগলাটে হওয়ার ঝটকা। এলিফ্যান্ট রোডে তখনো রোদের রাজত্ব।
-সিকদার ভাই, কবিতাটা?
-আরে, হয়ে যাবে। ভেব না। রফিক (কবি রফিক আজাদ) ফোন করেছে। চলো, সাকুরায় যাই। ও অপেক্ষা করছে।
-সাকুরায়! বিস্ময় আর হতাশা একসঙ্গে ঝরে পড়ে আমার কণ্ঠে। সিকদার ভাইয়ের ঝকঝকে দৃষ্টিতে অন্য ধরনের আলো খেলে যায়। হতাশার কারণ হলো লেখা পাওয়ার আশায় বালি ঝরে পড়তে শুরু করেছে বলেই মন জানান দিল।
গ্লাস ফুরিয়ে গেলে সিকদার ভাই অন্দর মহল থেকে পূর্ণ করে নিয়ে আসেন। অতঃপর গ্লাস শূন্য করে রিকশায় আমরা। যথারীতি সিকদার ভাইয়ের হাতে ধরা ব্রিফকেস। পোশাক থেকে ভুরভুর করে ভেসে আসছে চমৎকার সুগন্ধ। কবি সিকদার আমিনুল হককে দেখেছি সর্বদা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরতেন, ঝরঝরে ক্লিন শেভড থাকতেন।
এলিফ্যান্ট রোডে তখন মাছির মতো উড়ে বেড়ানো ভিড়, দোকানে দোকানে মানুষের ভিড়ের জড়াজড়ি। রিকশা আমাদের নিয়ে যায় নানান গলি পার হয়ে সাকুরা বারে। আমি তখনই অবশ্য টের পেতে শুরু করেছি কবিতা প্রাপ্তির আশার কপালে ছুরি মেরেছে কেউ। সত্যি সত্যি সেদিন কবিতাটা আর পাওয়া হয়নি আমার। শাহবাগে বিকেলের আলো পানশালার জানালায় অস্থির পাখির মতো ঠোকর মারছিল। ভেতরে পানপাত্রে উপচে পড়ছিল কবিদের তীব্র আত্মা। লেখা পাওয়ার টান আমাকে পথ ভুলিয়ে নিয়ে এসেছে পানশালায়।
এ রকম পথ ভোলা লেখা সংগ্রহের গল্পটা অবশ্য আরেক প্রয়াত সাহিত্যিক সৈয়দ আলী আহসানের বেলায় একেবারেই অন্য রকম ছিল। তখন তিনি থাকেন কলাবাগানে একটা গলির গায়ে হেলান দিয়ে থাকা বাড়তি আরেকটা গলির শেষ মাথায়। প্রথমবার কোনো এক রমজান মাসে লেখা আনার জন্য বাসায় গিয়ে অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। প্রবন্ধটা তখনো শেষ করেননি আলী আহসান সাহেব। বেশ বড় আকৃতির বসার ঘরে ল্যাম্পের মৃদু আলোয় একটা কাঠের একপেয়ে ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে লিখছেন। পিঠের ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে এ রকম ব্যবস্থা। মুশকিল হলো আমার। কারণ আমাকেও লেখা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। উনি দাঁড়িয়ে আর আমি বসে আছি, বিষয়টা একেবারেই বেমানান। অগত্যা পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে বইয়ের আলমারিতে ব্যস্ত থাকলাম। অসম্ভব ভালো একটি বইয়ের সংগ্রহ ছিল সৈয়দ আলী আহসানের। ভদ্রলোক বিস্তর পড়তেন। বহু বিষয়ে বই না ঘেঁটেই অনর্গল কথা বলে যেতে পারতেন। আরেকবার তার বাড়িতে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার ঈদসংখ্যার জন্য লেখা সংগ্রহ করতে গিয়ে এশিয়ার চারুকলার উত্থান পর্ব নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার দীর্ঘ বক্তৃতা শুনতে হয়েছিল মনে আছে।
আমি তখন কোনো কাগজে কাজ করছি না। একরকম বেকারত্ব চলছে। বিভিন্ন খবরের কাগজের অফিসে ঘুরে ঘুরে আড্ডা দিয়ে বেড়াই। একটি পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক আমাকে পাকড়াও করে পাঠালেন কথাসাহিত্যিক রাহাত খানের বাড়িতে লেখা আনতে। তিনি ওই কাগজে একটি ধারাবাহিক উপন্যাস লিখছেন। আমার কাজ হচ্ছে ওই সপ্তাহের কিস্তিটা নিয়ে আসা। সোৎসাহে রাজি হয়ে গেলাম। রাহাত ভাই থাকেন সিদ্ধেশ্বরীতে। নির্জনতায় ফুটে থাকা সাদা রং করা একটা একতলা বাড়ি। দরজায় পরিচয় দিতেই ভেতরে ডাক পড়ল। রাহাত ভাই খানিক অগোছালো একটা ঘরে টেবিলে বসে লিখছেন। তখনকার দিনে পত্রিকা অফিসে একধরনের নিউজপ্রিন্টের প্যাড ছিল, যাতে আমরা খবর লিখতাম। রাহাত ভাই দৈনিক ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। দেখলাম, উনিও সেই প্যাডেই লিখছেন উপন্যাস। আমাকে বসতে বললেন। আরও কয়েক সিøপ লিখবেন। কুশলবিনিময়ের পর রাহাত ভাই এক তাড়া কাগজ আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, এখানে বসে তুমি কথা বললে লিখতে পারব না। তুমি বরং আমার লেখার অক্ষরগুলোতে মাত্রা বসাও।
লেখা হাতে নিয়ে আমি বিস্মিত। ভীষণ খুদে খুদে হস্তাক্ষরে রাহাত ভাই লেখেন এবং কোনো বর্ণের ওপর মাত্রা নেই। ওনার লেখার আরেকটি বৈশিষ্ট্য দেখলাম, সবগুলো লাইনের আকৃতি নৌকার মতো। এক পাশে উঁচু হয়ে শুরু, মাঝখানটা নিচের দিকে বেঁকে গিয়ে আবার ওপরে উঠে গেছে। কী আর করা, আমি বসে বসে রাহাত ভাইয়ের লেখায় মাত্রা দেওয়ার কাজ চালিয়ে গেলাম গভীর নিষ্ঠায়।
সংবাদ উপস্থাপক ও চিকিৎসক এন কে নাতাশা মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
আইইডিসিআর প্রকাশিত ন্যাশনাল জার্নাল অব পাবলিক হেলথের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ছিলেন এন কে নাতাশা। টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির প্রতিষ্ঠাকালে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সবশেষ তিনি মাছরাঙা টেলিভিশনে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা চিকিৎসক মুশতাক হোসেন জানান, ২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে নাতাশার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর দেশে ও দেশের বাইরে চিকিৎসা নেন তিনি। ২০২০ সালের মার্চে তার স্তন ক্যানসারের অস্ত্রোপচার করা হয়। গত বছর সেপ্টেম্বরে সুস্থ হয়ে উঠে আবার সংবাদ উপস্থাপনা শুরু করেন। কিন্তু পরে ডিসেম্বর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে হার্ট অ্যাটাক করলে হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
চিকিৎসক নাতাশার মৃত্যুতে তার পরিবার ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরে বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় দুই কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের ডুমনী এলাকার পাগলা বেইলি ব্রিজে এ দুর্ঘটনা ঘটে। একই দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় আরও চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন।
শ্রীপুরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করে। স্থানীয়রা বলছে, কুয়াশায় ভেজা বেইলি ব্রিজের পাটাতন পিচ্ছিল থাকায় দ্রুত গতির মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন দুর্ঘটনাস্থলের পাশের কাপাসিয়া উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের সোলাইমান হোসেনের ছেলে সিয়াম আহম্মেদ (২০) ও তার বন্ধু শাকিল আহম্মেদ (২০)। শাকিলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়াতে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। দুজনই গাজীপুর বিজিএমইএ কলেজে পড়তেন বলে স্বজনরা জানিয়েছে পুলিশকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রহল্লাদপুর ডুমনী আঞ্চলিক সড়কের পাগলা বেইলি ব্রিজে ওঠার সময় তাদের মোটরসাইকেল অনিয়ন্ত্রিত হয়ে রেলিংয়ে সজোরে ধাক্কা লাগে। এ সময় তাদের মোটরসাইকেলের গতি ছিল বেশি। তার ওপর কুয়াশাভেজা ব্রিজের পাটাতন পিচ্ছিল থাকায় মোটরসাইকেল দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরে ব্রিজের রেলিংয়ে সজোরে ধাক্কা লাগায় তাদের মাথা-মুখ থেঁতলে যায়। মারাত্মক আঘাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। এ সময় ওদের রক্তে ব্রিজের পাটাতন ভিজে যায়। দুর্ঘটনা দেখে উদ্ধারে এগিয়ে আসা মানুষ পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ।
শ্রীপুর মডেল থানার (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘দ্রুত গতির মোটরসাইকেল (গাজীপুর-ল-১১-৩৪৫৭) বেইলি ব্রিজে ওঠার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই চালক ও আরোহীর মৃত্যু হয়।’
কালিয়াকৈরে ট্রাকচাপায় নিহত ১: গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মেদীআশুলাই এলাকায় গতকাল সকালে ট্রাকের চাপায় সিএনজিচালিত এক অটোরিকশা আরোহী মারা গেছেন। নিহত মিয়া চাঁন (৬০) টাঙ্গাইলের নাগরপুর থানার বাদচাল এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় দিনমজুর ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিয়া চাঁন দুই মাস আগে জীবিকার খোঁজে গাজীপুরের শ্রীপুর থানার মাওনা এলাকায় আসেন। সেখানে তিনি দিনমজুরের কাজ করতেন। গতকাল ভোরে তিনি সেখান থেকে কালিয়াকৈর যাচ্ছিলেন। কলারোয়ায় অবৈধ যানের চাপায় শিশু নিহত: সাতক্ষীরার কলারোয়ার গয়ড়া কলেজ মোড়ে মাটিবাহী একটি অবৈধ যানের চাপায় মুনতাহিনা নামে ৬ বছরের এক শিশু নিহত হয়েছে। সে উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের আলমগীর হোসেনের কন্যা। কলারোয়া থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা জানান, সকালে আলমগীর হোসেন তার মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হলে উপজেলার গয়ড়া কলেজ মোড়ে মাটিবাহী অবৈধ যানের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে দুজনই পড়ে যান। অবৈধ যানের চাপায় মারাত্মক আহত মুনতাহিনা মারা যায়।
রংপুরে বাস উল্টে নিহত ১: রংপুরে পিকআপ ভ্যানকে পাশ কাটাতে গিয়ে যাত্রীবাহী বাস উল্টে রফিকুল ইসলাম (৫০) নামে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বাসের অন্তত ২০ যাত্রী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে উদ্ধার করে ৭ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রংপুর সুন্দরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের পীরগাছার ইছলারহাট ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের জামালহাটের মধ্যবর্তী স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রফিকুল সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সিংড়ায় ট্রাকের চাকায় প্রাণ গেল পথচারীর: নাটোরের সিংড়ায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছে মো. শামসুল হক (৫৫) নামে এক পথচারী। গতকাল বিকেলে বলিয়াবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত পথচারী উপজেলার হিজলি গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিকেল ৫টার দিকে সিংড়া-কলম আঞ্চলিক সড়কের বলিয়াবাড়ি এলাকায় হেঁটে পথ চলার সময় বালুবহনকারী ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় শামসুল হক। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
শিবচরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাসে আগুন: মাদারীপুরের শিবচরের এক্সপ্রেসওয়েতে বরিশাল এক্সপ্রেস নামে একটি বাসে যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে বাসটির ভেতরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাসের বক্সে রাখা যাত্রীদের বিভিন্ন মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। খবর পেয়ে শিবচর ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে থানা পুলিশ এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে শিবচরের এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চরসংলগ্ন মোল্লার বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
অর্থনৈতিক সংকট আর রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে নতুন বছরে নতুন শুরুর আশা ছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সংকটের অভিঘাত এখনো সইতে হচ্ছে দেশটির। বিদেশি সহায়তার পরও হু হু করে বাড়ছে দেশটির মূল্যস্ফীতি। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার ৫০ শতাংশের ওপরে ছিল। অথচ শ্রমিক-চাকরিজীবীদের বেতন বাড়েনি। অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারানো লোকের সংখ্যাও কম না। এ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার তরুণদের অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশটির সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালেই ৩ লাখের বেশি মানুষ বাইরের দেশে কাজ খুঁজতে গিয়েছে। আর চলতি বছর প্রথম দিনেই দেশ ছেড়েছে আরও ৭৩ হাজার মানুষ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দেশটি তার বিভিন্ন শিল্প খাতের প্রয়োজনীয় লোকবলই পাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চললে উৎপাদন কমে গিয়ে আরেক দফা সংকটে পড়তে পারে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে দেশটির ব্যবসায়ীদের বরাতে বলা হয়েছে, তারা কর্মী সংকটে ভুগছেন, যাদের মধ্যে ম্যানেজার পদও রয়েছে। খালি থাকা ম্যানেজার পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাদের আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কোম্পানিগুলো সাধারণত ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদেরই নিয়োগ দিত এবং এ বয়সের তরুণরাই চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরিতে যোগ দিতেন। তবে এখন চল্লিশ এবং পঞ্চাশ বছর বয়সীরাও চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আইএমএফ-এর ঋণ প্যাকেজের শর্ত হিসেবে বেশ কয়েক দফা কর বাড়িয়েছেন। বর্তমানে দেশটিতে আয়করের হার ৩৬ শতাংশ। এর সঙ্গে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি জনগণকে ফেলেছে ভীষণ চাপে। দ্বিমুখী এই চাপে দেশ ছাড়ছেন নাগরিকরা। দেশটির বিরোধী দল ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির ভাষ্য, সরকার অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানোয় দলে দলে দেশ ছাড়ছেন মানুষ।
সাময়িকীটি বলছে, শত শত ডাক্তার ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, যার মধ্যে গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসেই গিয়েছেন ৪৭৭ জন। এভাবে এগোতে থাকলে গ্রামীণ অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার সংকট দেখা যাবে।
এদিকে শ্রীলঙ্কান সরকারও এই দেশ ছেড়ে পালানোকে উৎসাহিত করছে। প্রথমত, সরকারি খাতে বেতনের বোঝা কমানোর জন্য এবং দ্বিতীয়ত, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের আশায়। গত জুন মাসে সরকার মাসে ১০০-৫০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্তে দেশটির ডাক্তারদের পাঁচ বছরের জন্য ছুটি দেওয়ার ঘোষণাও দেয়।
ইকোনমিস্ট বলছে, দেশটির প্রবাসী নিয়োগ মন্ত্রী মনুশা নানায়াক্কার বিভিন্নভাবে শ্রীলঙ্কান কর্মীদের দেশের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরির সুযোগের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। চলো বিদেশে যাই- নামের এক ইউটিউব চ্যানেল থেকে জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিদেশে চাকরির সুযোগ প্রচার করা হচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, নার্সিং, কেয়ার-গিভিংসহ অন্যান্য সেবামূলক কাজেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে শ্রীলঙ্কান সরকার, যাতে করে কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে তারা কাজের ব্যবস্থা করতে পারে। আর এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছে শ্রীলঙ্কান সরকার। গত চার মাসে রেমিট্যান্সের হার বেশ খানিকটা বেড়েছে। তবে এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় মেধাবীরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন, যাদের দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন।
নানায়াক্কার জানিয়েছেন সেবা এবং উৎপাদন খাতে ইতিমধ্যেই কর্মী সংকট দেখা গিয়েছে। এটি প্রতিরোধের জন্য কিছু কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘লয়্যালটি বোনাস’ ঘোষণা করেছে, অর্থাৎ চাকরি না ছাড়লে অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তায় ইটের প্রাচীর তুলে প্রতিবেশী দুই পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। আর শুধু তাই নয় মাইনুদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম নামে ওই দুই সহোদরের তোলা প্রাচীরের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে একটি মাদ্রাসাও। ফলে নিরুপায় হয়ে মই দিয়ে ৭ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর পার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মাদ্রাসাটির শতাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীকে, যা তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অন্যদিকে প্রাচীরে আটকে পড়া দুটি পরিবারের শিক্ষার্থীরাও মই দিয়ে প্রাচীর টপকে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবার দুটি। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার রামচন্দ্রপুর উত্তর বাখরাবাদ গ্রামে।
এদিকে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছে, প্রত্যেকেরই যার যার বাড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রয়োজন রয়েছে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে তা কারও কাম্য নয়।
জানা গেছে, উত্তর বাখরাবাদ গ্রামের প্রভাবশালী মাইনুদ্দিনের বাড়ির পাশে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় রাবেয়া বসরী মাদ্রাসা। তার পাশে বসবাস দুটি পরিবারের। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবার দুটির সদস্যদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ছিল মাইনুদ্দিন ও শফিকুলের জমির ওপর দিয়ে। কিন্তু তিনি হঠাৎই তার বাড়ির চারপাশে ইটের সীমানা দেয়াল তুলে দেন। এতে বাধ্য হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন মাদ্রাসায় যেতে হচ্ছে বাঁশের মই বেয়ে প্রতিবেশীদের দেয়াল টপকে। আবার তাদের বাড়ি ফিরতেও হয় দেয়াল বেয়ে। এরই মধ্যে পা ফসকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে অনেকেই।
ভুক্তভোগী রাবেয়া বসরী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বি চাপিতলা গ্রামের মরহুম হাজি আব্দুর রহমান ২০১৮ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি মৌখিকভাবে দিয়ে যান। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ছেলে মাইনুদ্দিন ও তার ভাই শফিকুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। সমাধান চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার গেলেও তিনি দুই বছর ধরে আমাকে ঘুরাচ্ছেন। দুই বছর আগে বাড়িসহ জমি কেনার প্রস্তাব দেন তারা। কিনতে রাজি না হওয়ায় সীমানা প্রচীর নির্মাণ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন।’ এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান হাফেজ নজরুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক কবির আহমেদ ভূঁইয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে বসবাস করছি এবং বসবাসের শুরু থেকেই ওই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। হঠাৎ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
তবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকারী মাইনুদ্দিন বলেন, ‘প্রাচীর নির্মাণ করে আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার জমিতে আমি প্রাচীর নির্মাণ করেছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমি চেষ্টা করেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার। কিন্তু জমির মালিক মাইনুদ্দিন তার জমির ওপর দিয়ে সড়ক দিতে রাজি হচ্ছেন না।’
সার্বিক বিষয়ে মুরাদনগরের ইউএনও মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী বলেন, ‘অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য। এর পরও ভুক্তভোগীরা আদালতের সহযোগিতা নিতে পারেন।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।