
বকেয়া টাকা না পাওয়ায় জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে (নিকডু) ডায়ালাইসিসের উপকরণ সরবরাহে অনীহা প্রকাশ করেছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্যানডোর। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে, বকেয়া টাকা পরিশোধ না করলে যেকোনো সময় কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে স্যানডো ও হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ পরিচালিত একমাত্র ডায়ালাইসিস সেন্টারটি চালু রাখা সম্ভব হবে না।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, গতকাল রবিবার হঠাৎ করেই ডায়ালাইসিস সেন্টারে ডায়ালাইসিসের কাঁচামাল সংকট দেখা দেয়। রোগীরা সেন্টারে এলে স্যানডোর কর্র্তৃপক্ষ ডায়ালাইসিসের জন্য কাঁচামালের সংকটের কথা জানিয়ে অপেক্ষা করতে বলে। এতে দীর্ঘ অপেক্ষার ভোগান্তিতে পড়েন সেবা নিতে আসা রোগীরা। এখানে ডায়ালাইসিস করতে আসা রোগীদের তারিখ ও সময় পূর্বনির্ধারিত থাকে। সে অনুযায়ী গতকালও রোগীরা হাসপাতালে আসে। কিন্তু সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ডায়ালাইসিস বন্ধ রাখে। পরে অবশ্য চালু করেছে।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু থাকে। সরকারের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের আওতায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যানডোর পরিচালনা করে ডায়ালাইসিস সেন্টারটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিডনি হাসপাতালের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, দীর্ঘদিন সরকার স্যানডোকে বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় এখন প্রতিষ্ঠানটি আর ডায়ালাইসিসের কাঁচামাল ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে চাইছে না। এ নিয়ে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এ ব্যাপারে স্যানডোর হিসাবরক্ষক নাজমুল হাসান গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিডনি হাসপাতালের কাছে আমাদের ৩১ কোটি টাকা পাওনা। এসব টাকা না পেলে হাসপাতালকে ডায়ালাইসিসের কাঁচামাল সরবরাহ করা যাবে না। আমরা আমাদের এমন আশঙ্কার কথা হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কারণ আমরা যেসব সোর্স থেকে কাঁচামাল আনি তারাও বাকিতে আর মাল দিচ্ছে না। বেশি দাম দিয়ে নগদে কিনতে হচ্ছে। এটা খুব কঠিন। এত বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিদিন এভাবে নগদ টাকায় কাঁচামাল কিনে সরবরাহ করা সম্ভব না। সেই উদ্বেগটাই হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা বলেছি, এভাবে নগদে কিনে আর বেশিদিন কাঁচামাল সরবরাহ করা যাবে না।
স্যানডোর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে বলেছি, কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তারা যেন রোগীর সেবার দিক বিবেচনায় রেখে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে রাখেন। বিষয়টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। বলেছি, পাওনা টাকা না দিলে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তবে গতকাল পর্যন্ত পাওনা পরিশোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ডেপুটি পরিচালক) ডা. আকতারুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। গতকাল রাতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বিষয়টি জেনেছেন। তিনি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করেছেন। তিনি এমনও বলেছেন, স্যানডোরের চুক্তি হাসপাতালের সঙ্গে নয়, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। তারা সেখানে যোগাযোগ করুক। ডায়ালাইসিস বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়।
এর আগে গত বছর জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট (নিকডু) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই সেবা বন্ধ করে দিয়েছিল স্যানডোর। পরে পাওনা টাকা পরিশোধ করলে প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় কাঁচামাল সরবরাহ ও ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করে।
গুপ্তধনের প্রতি আগ্রহ-কৌতূহল আছে বিশ্বজুড়ে। বহু মানুষ এই গুপ্তধনের খোঁজে বন-পাহাড়-সমুদ্র আর পুরনো স্থাপনায় চষে বেড়ান। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে হাজারো গল্প-নাটক-সিনেমা। আর এবার এই অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য নেদারল্যান্ডসের ন্যাশনাল আর্কাইভ প্রকাশ করেছে গুপ্তধনের ম্যাপ!
সম্প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশ করেছে নেদারল্যান্ডসের ন্যাশনাল আর্কাইভ। এর মধ্যে রয়েছে গুপ্তধনের ম্যাপও। তাদের দাবি, দেশটির একটি ব্যাংক লুটের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এ গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছিল নাৎসি বাহিনী। ৭৮ বছর আগের সে ম্যাপ দেখেই এখন লুকিয়ে রাখা ধনসম্পদ খুঁজছেন নেদারল্যান্ডসের অনেকে।
মূলত ‘অ্যানুয়াল ওপেন এক্সেস ডে’ উপলক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অনেক নথি প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল আর্কাইভ। এর মধ্যে প্রকাশিত ওই ম্যাপ দেখে এখন বহু মানুষ বেরিয়ে পড়েছে এই গুপ্তধনের খোঁজে। তেমনই একজন হলেন জান হেনজেন। তিনি বলেন, অনেকের মতো গুপ্তধনের খবর আমাকেও পুলকিত করেছে। এই অঞ্চলে ৩০ বছর ধরে আমি গুপ্তধন অনুসন্ধান করে আসছি। রোমান সাম্রাজ্যের অনেক প্রতœতত্ত্ব খুঁজে পেয়েছি। তবে এতদিন এটা জানতাম না যে নাৎসিরা এখানে ধনসম্পদ লুকিয়ে রেখেছে। এখন জার্মানদের সেই গুপ্তধন খোঁজার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।
নেদারল্যান্ডসের ন্যাশনাল আর্কাইভের তথ্যমতে, যুদ্ধের সময় হীরা, রুপা, সোনা, রুবিসহ নানা মূল্যবান জিনিস চারটি বাক্সে ভরে লুকিয়ে রেখেছে জার্মানরা। ১৯৪৪ সালে আর্নহেল যুদ্ধে একটি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে এসব লুট করেছিল তারা। দ্য ডাচ ন্যাশনাল আর্কাইভের কো-অর্ডিনেটর অ্যানেট ওয়াল্কেন্স বলেন, নথিপত্র অনুযায়ী ব্রেসলেট, ঘড়ি, নেকলেস, রৌপ্য ও স্বর্ণের মুদ্রা, মূল্যবান পাথর, হীরাসহ অনেক গুপ্তধন লুকানো আছে। মানচিত্রে জায়গাটির বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। ১৯৪৫ সালে মুক্ত হওয়ার পর জার্মান সৈনিকের কাছ থেকে এই মানচিত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। এতদিন এটি সংরক্ষণ করে রেখেছিল ন্যাশনাল আর্কাইভ। ৭৮ বছর পর সেটিই প্রকাশ করল তারা। দীর্ঘ এ সময়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকেও কয়েকবার গুপ্তধন খোঁজার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো তার সন্ধান মেলেনি।
রাজধানী ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় রূপগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় এক হাজার শিল্প কারখানা। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে এ উপজেলায় আসেন। উপজেলায় উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অপরাধও। বেড়েছে মাদকের বাণিজ্য। এই মাদক সেবনের টাকা জোগাড়ে উপজেলায় যাত্রীবেশে বেড়েছে ছিনতাই, হত্যাসহ নানা অপরাধ। আর সেই সঙ্গে বেড়েছে ইজিবাইক ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ উপজেলায় পাঁচ বছরে ১৭ জন ইজিবাইকচালক খুন হয়েছেস। এ ছাড়া ১৮৮টি ইজিবাইক ও অটোরিকশা ছিনতাই হয়েছে বলে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), পিবিআই ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ প্রকাশের সূত্রে জানা গেছে।
ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক মহাসড়কগুলোতে চালানো নিষেধ। এগুলো এলাকার বিভিন্ন শাখা- উপশাখা রাস্তায় চলাচল করে। এ কারণে ইজিবাইকের কোনো নম্বরপ্লেট অথবা কোনো কাগজপত্র থাকে না। কাগজপত্র না থাকায় খুব সহজে বিক্রি করা যায় বলেই ছিনতাইকারীরা ইজিবাইক ছিনতাইয়ে আগ্রহ বেশি। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে একই ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে লাইসেন্স ও নম্বরপ্লেট না থাকার কারণেই একের পর এক খুন ও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন তারা। হত্যার পর খুব সহজেই এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার রং পরিবর্তন করে আবার রাস্তায় নামানো হচ্ছে।
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার রূপসী, মৈকুলী, ভুলতা, বিশ^রোড ও কাঞ্চন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় ১০-১২টি গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক ও অটোরিকশা রং পাল্টে ক্রয়-বিক্রয় চলে। অটোরিকশা ছিনতাইয়ের জন্য গড়ে উঠেছে ৭টি চক্র। এই চক্রের সদস্যরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এসব হত্যাকা-ের নেপথ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক কারণ। এই চক্রের সদস্যরা মাদক কিনে দেওয়ার কথা বলে মাদক সেবীদের এ কাজে জড়াচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৮ মে নোয়াপাড়া এলাকার ইজিবাইকচালক কুরবান আলী ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন। একই বছরের ১১ জানুয়ারি পরশি এলাকার মজুরউদ্দিন ও ২৩ মার্চ পশ্চিমগাঁও এলাকার আমির হোসেন বাবু খুন হন। ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল ৩০০ ফুট সড়কে যাত্রীবেশে ইমন মিয়া নামে এক চালককে পিটিয়ে তার ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ভায়েলা এলাকায় সোবহান মিয়া নামে এক চালককে গলা কেটে তার ইজিবাইক ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী চক্র। সর্বশেষ ১৭ জানুয়ারি সাইদুর নামে একজনের অটোরিকশা যাত্রীবেশে ছিনতাইকারী ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
উপজেলার ইছাছালী এলাকার সাইদুর রহমান। অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চলত তার। ১৭ জানুয়ারি ভোরে যাত্রীবেশে একদল ছিনতাইকারী তার ইজিবাইকটি ছিনিয়ে যায়। শেষ সম্বল ইজিবাইকটি ছিনতাই হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদেই আছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্যার, আমার শেষ সম্বল রিক্সাডা ছিনতাইকারীরা লইয়া গেল। অহন আমি সংসার কেমনে চালামু। পোলাপাইনের লেহাপড়া তো দূরের কথা, তিনবেলা খামু কেমনে, অইডা অই জানি না।’
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই এখন ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইজিবাইক ছিনতাইয়ে চালককে খুনের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন। তারা জানতে পেরেছেন, প্রতিটি থানা এলাকাতেই ভিন্ন ভিন্ন ছিনতাইকারী গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপ তিনটি দলে বিভক্ত। প্রথম দলের সদস্যরা একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালককে টার্গেট করে তার সব খোঁজখবর নেয়। তার বাসা-বাড়ি ও গাড়ির গ্যারেজের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নেয়। সংগ্রহ করে চালকের মোবাইল ফোন নম্বর। এসব তারা দ্বিতীয় দলকে বুঝিয়ে দেয়। এই দলের সদস্যরা গাড়ির গ্যারেজের আশপাশে অবস্থান নেয়। দিনভর গাড়ি চালিয়ে চালক রাতে গাড়ি গ্যারেজে জমা দিতে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা যাত্রীবেশে গাড়িতে চড়ে এবং লোভনীয় ভাড়া দেওয়ার কথা বলে নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে চালকের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ^াসরোধ করে কিংবা ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। লাশ রাস্তার পাশে ফেলে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। গাড়িটি তৃতীয় দলের হাতে পৌঁছে দিয়ে তারা তাদের কাজ শেষ করে। তৃতীয় দলের সদস্যরা গাড়ির রংসহ আনুষঙ্গিক কিছু সাজসরঞ্জাম পরিবর্তন করে তা বিক্রি করে দেয়। গাড়ি বিক্রির অর্ধেক টাকা নেয় খুনিরা। বাকি টাকা অন্যরা সমানভাবে ভাগ করে নেয়। প্রতিটি ঘটনা সফলভাবে শেষ হওয়ার পরপরই তারা দ্বিতীয় মিশন শুরু করে। তিনি আরও বলেন, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পর এগুলো গ্যারেজে বিক্রি করা হয়। যে এরিয়া থেকে ছিনতাই করবে, সেই এরিয়ায় বিক্রি করবে না। যেমন রূপগঞ্জে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক বিক্রি করা হয় সোনারগাঁ কিংবা ফতুল্লায়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এসপি মো. মনিরুল ইসলাম পিপিএম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইজিবাইক ছিনতাইয়ের বিষয়টা গুরুত্বসহকারে দেখছি। বেশ কিছু কাজ করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি চালকদের সচেতন হতে হবে। রাত ১০টার পর নির্জন জায়গায় যাওয়া ঠিক না। ইজিবাইকগুলোতে জিপিএস লাগানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জিপিএসের মাধ্যমে গাড়ির লোকেশন জানা যাবে। এরই মাঝে ইজিবাইক মামলার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বেশ কিছু ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় হত্যা মামলা শনাক্ত করেছি। আমরা গ্যারেজ সিলগালা করেছি।’
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এ এফ এম সায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইজিবাইক ছিনতাই রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চালকদের সচেতন করছি। আশা করছি এটা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। রাত ৯-১০টার পর চালকরা যাতে অতিরিক্ত ভাড়া পাওয়ার আশায় নির্জন স্থানে না যায়, সে ব্যাপারে তাদের সচেতন হতে হবে।’
২০১৫ সাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন টাঙ্গাইল কালিহাতীর আবদুল কুদ্দুছ খাঁর মেয়ে পারুল আক্তার। মেয়ের সন্ধানে পারুলের স্বামী ও স্বজনদের আসামি করে একের পর এক মামলা করেছেন তিনি। ওইসব মামলায় জেলে রয়েছে পারুলের স্বামী নাসির উদ্দিন বাবু। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারুলের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। অবশেষে পারুলের কথা বলা একটি মোবাইল ফোন নম্বরের দুটি ডিজিট ‘৩৭’-এর সূত্র ধরে সাত বছর পর নিখোঁজের জট উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলা।
পিবিআইয়ের ভাষ্য, পরিবারের অসম্মতিতে ঘর ছেড়ে পালিয়ে নাসিরকে বিয়ে করেন পারুল। এতে সামাজিকভাবে অপদস্থ হন পারুলের বাবা। সেই ক্ষোভ থেকে পারুলকে কৌশলে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে একটি নদীর পাশে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন বাবা আবদুল কুদ্দুছ ও তার এক বন্ধু। একই ক্ষোভে পারুলের স্বামী নাসিরকে ফাঁসাতে মামলা করেন তিনি। গত শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে নিলে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন। পরে গতকাল রবিবার কুদ্দুছের বন্ধুকেও গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
গতকাল দুপুর ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, পারুল নিখোঁজের পর তার স্বামী নাসির থানায় যে জিডি করেন তার সঙ্গে থাকা কাগজ ঘেঁটে একটি অস্পষ্ট মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়। যার শুধু শেষ দুটি ডিজিট ৩৭ বোঝা যায়। এ নম্বরের ব্যক্তির সঙ্গে নিখোঁজের আগে পারুল সর্বশেষ কথা বলেছিলেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, নম্বরটি ছিল পারুলের বাবা কুদ্দুছের। সেই সূত্র ধরেই পারুল নিখোঁজের রহস্য উদঘাটন হয়।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার শুরু ২০১২ সালে। সেই বছর কুদ্দুছ খাঁর মেয়ে পারুল টাঙ্গাইলের কালিহাতীর একই এলাকার নাসির উদ্দিন ওরফে বাবুকে ভালোবেসে ঢাকায় পালিয়ে এসে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় কুদ্দুছ ২০১২ সালে কালিহাতী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। উভয়ের পরিবার বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তারা ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় বসবাস শুরু করেন। চাকরি নেন পোশাক কারখানায়। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই তাদের পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে পারুল তার বাবাকে ফোন করে পারিবারিক অশান্তির কথা জানান। বাবা মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন, একই সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করায় অপমান বোধ ও প্রচ- রাগও ছিল। একপর্যায়ে ভালো ছেলে দেখে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে উন্নত জীবনযাপনের লোভ দেখান মেয়েকে। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই পারুলের স্বামী নাসির তার নানিকে দেখতে গ্রামে যান। সেই সুযোগে ১৯ জুলাই পারুল বাবার দেওয়া আশ্বাসে তাকে ফোন করে টাঙ্গাইলে যান। একই দিন পারুলের স্বামী নাসির ঢাকায় ফিরে স্ত্রীকে বাসায় না পেয়ে শ্বশুর কুদ্দুছ খাঁর বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় জিডি করেন। জিডিতে পারুলকে বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতে প্ররোচনার অভিযোগ তোলা হয়। এদিকে ওই বছর ৪ আগস্ট পারুলের স্বামী ও পরিবারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেন কুদ্দুছ।
পারুল নিখোঁজের মামলার ঘটনাটি প্রথমে কালিহাতী থানা পুলিশ তদন্ত করে প্রেম করে বিয়ে করার সংশ্লিষ্টতা পায়। কিন্তু পারুলকে না পাওয়ায় ঘটনাস্থল তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত এলাকা (ঢাকায়) মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। বাদীর বারবার নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইলের ডিবি পুলিশ, পিবিআই টাঙ্গাইল, সিআইডি টাঙ্গাইল তদন্ত করে একই রিপোর্ট দেয় আদালতে। সবশেষে আদালত জুডিশিয়াল তদন্ত করে রিপোর্ট দেয় যে, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারে। গত বছর ২৭ নভেম্বর কুদ্দুছ খাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতে তদন্তের রেফারেন্সসহ নারী নির্যাতন দমন আইনে যৌতুকের জন্য মারধর করে হত্যা মামলার আবেদন করেন। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর আদালত আশুলিয়া থানাকে মামলা রুজু এবং পিবিআই ঢাকা জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। আশুলিয়া থানায় ১১ ডিসেম্বর ২০২২ মামলা করা হলে পিবিআই, ঢাকা জেলা তদন্ত শুরু করে।
হত্যাকান্ডের বিবরণ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বলেন, ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই কুদ্দুছ তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে না নিয়ে বন্ধু মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা ম-লের বাড়ি ভূঞাপুরে নিয়ে যান। সেখান থেকে মোকাদ্দেছ ভবিষ্যতে পারুলকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কিছুদিন নাসিরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে এই আশ্বাস দিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশে রওনা দেন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় একটি নদীর পাশে নির্জন জায়গায় রাতের অন্ধকারে পারুলকে তার বাবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মোকাদ্দেছের সহযোগিতায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে টাঙ্গাইলে চলে আসে তারা। কুদ্দুছ ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কুদ্দুছের দেওয়া তথ্য যাচাই করার জন্য পিবিআই জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা থেকে ২০১৫ সালের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। ওই সময় সেখান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় একটি লাশ উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পাঁচবিবি থানায় হওয়া মামলার আলামত, সুরতহালের বর্ণনা এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এর সঙ্গে আ. কুদ্দুছের বর্ণনার মিল পাওয়া যায়। ঘটনায় জড়িত কুদ্দুছের বন্ধু মোকাদ্দেছও তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। তাকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে ফিল্মি কায়দায় ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে আরিয়ান আহমেদ জয় (২৩) র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার রাতে র্যাব-১-এর সদস্য আল মোমেনের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ে অংশ নেয় তারা। রাজধানীর বনানী থানায় ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলামের করা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে র্যাব সদস্য মোমেনকে প্রচলিত আইনে বিচারের সুযোগ না থাকায় তাকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য দুজনকে আদালতের মাধ্যমে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও একজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিমানবন্দর এলাকা থেকে এ চক্রটি ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলামকে টার্গেট করে। চক্রটির ধারণা ছিল গাড়িতে বিদেশ থেকে আনা মূল্যবান জিনিস রয়েছে। ভুক্তভোগী শহিদুলের সবকিছু ছিনিয়ে নিতে ফ্লাইওভারের ওপর গাড়ি থামিয়ে তাদের নিজেদের গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে ছিনতাই চক্রটি। ভাড়ার প্রাইভেট কারচালকও ছিনতাই চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দর এলাকার আশপাশ থেকে টার্গেট করে ছিনতাই করে আসছিল।
উল্লেখ্য, মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে শহিদুল ইসলাম তার ভাগনে মো. রিয়াজকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার রাতে একটি ভাড়ার প্রাইভেট কারে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সেখানে তার বিদেশফেরত এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। রাত পৌনে ১টার দিকে ওই প্রাইভেট কারেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তারা। বনানী থানাধীন আমতলী ট্রাফিক বক্সের ওপর বরাবর মহাখালী ফ্লাইওভারে রাত সোয়া ২টার দিকে আকস্মিকভাবে একটি প্রাইভেট কার তাদের গতিরোধ করে। ওই প্রাইভেট কার থেকে তিন ব্যক্তি নেমে তাদের প্রাইভেট কারের কাছে এসে পিস্তল দেখিয়ে সঙ্গে থাকা সব মালামাল নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। তখন তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন আরিয়ান আহমেদ জয় নামের একজনকে আটক করে। অন্য দুজন তাদের প্রাইভেট কার নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে বনানী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জয়কে হেফাজতে নেয়। পরে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, তার সহযোগীদের নাম আল মোমেন, মো. ফরহাদ হোসেন ও জালাল। বনানী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোমেন ও ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযুক্ত মোমেন (২৬) র্যাবের সদস্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক তিনি। বর্তমানে প্রেষণে র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকায় কর্মরত। তার সৈনিক নম্বর-১০০৭৫৪৩। আল মোমেনকে সামরিক আদালতে বিচার তথা কোর্ট মার্শাল করার জন্য থানা পুলিশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাহফুজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গ্রেপ্তারদের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত এক দিনের রিমান্ড দিয়েছে। এ চক্রে আরও যারা জড়িত আছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা হয়েছে কি না সেটা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে গতকাল রবিবার দুপুরে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছে। সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়। নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুরে ট্রলির সঙ্গে সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে এক যুবক প্রাণ হারিয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন। এর আগে গত শনিবার রাতে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় মাহিন্দ্র উল্টে চালকের মৃত্যু হয়। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর:
ফরিদপুরে বাবা-মেয়েসহ নিহত ৩ : ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে বাবা-মেয়েসহ তিনজন নিহত হয়েছে। গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মনসুরাবাদ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা একটি মোটরসাইকেলের যাত্রী ছিল। এ ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা সড়ক অবরোধ করে বাসটিতে আগুন দিয়েছে।
নিহতরা হলো নগরকান্দা উপজেলার ধর্মদী এলাকার বাবা মাঈন উদ্দিন শেখ (৩৫), তার কন্যা তাবাসসুম (১০) ও ভাঙ্গার মাঝারদিয়া এলাকার সৌরভ মাতুব্বর (১৬)। গোপালগঞ্জে নিহত ২ : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাথালিয়া এলাকায় ট্রাকচাপায় এক ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন। তার নাম রাজু শেখ (২৪)। তিনি সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া থেকে ভ্যান চালিয়ে শহরের মান্দারতলায় আসছিলেন।
এদিকে বেলা ১১টার দিকে একই মহাসড়কের আরামবাগ এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় হান্নান ফকির (৬০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রাস্তা পারাপারের সময় দ্রুতগামী মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। মোটরসাইকেলচালক সুদীপ্ত বণিক গুরুতর আহত হয়েছেন।
জামালপুরে গাড়িচাপায় চালক নিহত : জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় মাহিন্দ্র উল্টে চাপা পড়ে মো. ভাসানী নামের এক গাড়িচালকের মৃত্যু হয়েছে। গত শনিবার রাতে উপজেলার টুপকারচর এলাকায় মাহিদ্র গাড়ি উল্টে খাদে পড়ে তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর শহর থেকে বালু নিয়ে উপজেলার নয়ানগর ইউনিয়নের টুপকারচরের একটি মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে মাহিন্দ্র উল্টে গিয়ে তার নিচে ভাসানী চাপা পড়েন ভাসানী। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
নাটোরে ট্রলি-সিএনজির সংঘর্ষে নিহত ১ : নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুরে ট্রলির সঙ্গে সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে আমিরুল ইসলাম (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আসলাম উদ্দিন (৪০) নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার গোপালপুর-বনপাড়া সড়কে গোপালপুর বিএম কলেজের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আমিরুল বড়াইগ্রাম উপজেলার আঠুয়া গ্রামের আবেদ আলীর ছেলে।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোনোয়ারুজ্জামান জানান, ঘটনাস্থল থেকে ট্রলি ও অটোরিকশা দুটি জব্দ করে করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুজন নিহত : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছেন। রবিবার সকালে কানসাট-ভোলাহাট সড়কের ঘোষলাদহা ব্রিজ ও গোমস্তাপুর উপজেলার শিমুলতলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা দুটি ঘটে। নিহতরা হলেন শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের গোয়াবাড়ি চাঁদপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেন (৩৫) ও গোমস্তাপুরের চৌডালা ইউনিয়নের দিয়াড় ইসলামপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম (৪২)।
শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহাম্মদ বলেন, সকালে দুলাল হোসেন তার নানার বাড়ি ঘোষলাদহা এলাকা থেকে মোটরসাইকেলে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় কানসাট-ভোলাহাট সড়কের ঘোষলাদহা ব্রিজ এলাকায় একটি ভটভটি ধাক্কা দেন। এতে ঘটনাস্থলেই দুলাল হোসেন মারা যান।
অন্যদিকে গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, তরিকুল রহনপুর থেকে নিজ বাড়ি চৌডালা যাওয়ার পথে যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দিলে গুরুতর জখম হন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আজ থেকে ছেষট্টি বছর আগে ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) ১৩৬৪’র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫’র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান শনাক্ত করতে এই লেখা। প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক একাডেমিক ও নির্মোহ- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রচিত, এর সঙ্গে কলাম লেখকের নিজস্ব বোধ বিশ্বাস চিন্তা চেতনা কিংবা কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগের সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক দেশে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
ভাষার গঠনপ্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতিপ্রকৃতি তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র-নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
খোদ ‘রাজনীতি’র ধারণার বিবর্তন ও ব্যবহারিক তাৎপর্যে পরিবর্তন-পর্যালোচনায় দেখা যায় কৌটিল্য (খ্রি.পূর্ব ৩৭৬-২৮৩) এর মতে রাজনীতি হচ্ছে নিজ সমাজ পোষণ তোষণ কিংবা শত্রু মোকাবিলায় রাজার ক্ষমতা ধরে রাখা বা প্রয়োগ করার কৌশল। কৌটিল্য বিশ্বাস করতেন রাজার দায়িত্ব বা লক্ষ্য হচ্ছে বহু বৈষয়িক সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাম্ভিক আনন্দলাভ ও বিলাস উপভোগ করা, আর এ জন্য রাজা যেকোনোভাবে সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনে সচেষ্ট হবে, সৈন্য পুষবে নিজের নিরাপত্তা বিধান এবং অন্য রাজ্য দখল করে সাম্রাজ্যের আকার বাড়ানোর কাজে। প্রজাকল্যাণ সাধন এবং নিজের ক্ষমতা সংরক্ষণে রাজাকে কূট-কৌশলী হতে হয়। কৌটিল্যের মতে রাজনীতি হচ্ছে একই সঙ্গে সেরা কৌশল বিজ্ঞান (সুপার সায়েন্স) ও সেরা কলা (সুপার আর্ট)। কৌটিল্যের অর্ধশতাব্দী পর প্লেটো (খ্রি.পূ ৪২৮-৩৪৮) মনে করতেন সমাজে চাওয়া পাওয়ার সব ধরনের প্রয়াস-প্রচেষ্টা, বাদ-বিসংবাদ, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নিরসনে সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ন্যায়নীতিনির্ভরতা, যৌক্তিতা, সুশাসন বা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে সব পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ বা সমন্বিত শক্তি হিসেবে বিকাশ লাভ করবে। ঐকবদ্ধ করাই সৎ বা সফল রাজনীতি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল (খ্রি.পূর্ব ৩৮৪-৩২২) যদিও তার গুরুর অনুসারী ছিলেন তথাপি তার মতে রাজনীতি is highly critical of the ideal constitution set forth in Plato’s Republic on the grounds that it overvalues political unity, it embraces a system of communism that is impractical and inimical to human nature, and it neglects the happiness. সমসাময়িক আরেক পন্ডিত সক্রেটিসও (৪৭০-৩৯৯) ভাবতেন ভিন্নভাবে- the purpose of politics was not to capture power, nor it was an art hwo to remain in power. Political ethics make good and proper citizens. Both public and private persons must learn the art of political ethics. ম্যাকিয়াভেলি (১৪৫৯-১৫২৭) মনে করতেন for a ruler, it was better to be widely feared than to be greatly loved; a loved ruler retains authority by obligation, while a feared leader rules by fear of punishment.
রাজনীতির ভাষায় শব্দ একটি বড় অনুষঙ্গ। সময়ের অবসরে সৃষ্ট ও বহুল উচ্চারিত বা ব্যবহৃত এসব শব্দের ব্যঞ্জনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র ও চারিত্র ফুটে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবৎ দেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়। অন্যকথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা দলীয় প্রয়োজনে ভাষার যে ব্যবহার করেছেন, তা দেখানোর আগে দুনিয়ার কয়েকটি বড় বড় রাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রয়োজনে ভাষার কী ব্যবহার করেছে তার দু একটি দৃষ্টান্ত অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের রচনা থেকেই দেখা যাক ‘১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় গোয়েবলসের নেতৃত্বাধীনে ‘রাইখ সংস্কৃতি সংসদ’ গড়ে উঠছে। এ সংস্কৃতি সংসদের বিভাগ ছিল সাতটি-সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, শিল্প, সংগীত, থিয়েটার এবং সিনেমা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করে তোলার জন্য সাতটি বিভাগই একযোগে প্রচারণার কাজ করতে শুরু দিল। যারা এর কিছুদিন আগে জনমত প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল যখন ক্ষমতাসীন হয়, অন্যদল রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে। সেজন্য সরকারি দলের অস্তিত্বের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সরকার সমর্থিত বিরোধী দলের। সমগ্র জাতিকে এ দুই দল আপনাপন মতে দীক্ষিত করে তুলবার জন্য খবরের কাগজ, সভা-সমিতি ও ভাষা ব্যবহারের অন্য পন্থাগুলোকে অবলম্বন করে জোর প্রচারণা চালায়। জনমত যাদের প্রচারণায় অধিক পরিমাণে সাড়া দেয়, তারাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায়।’
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ নিচয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সে সব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কাজ করার জন্য নয়। রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতকগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্র করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্রে ত্যক্তবিরক্ত ও বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়। দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দরকষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রাজনৈতিক দল তাদের না থাকে, তাহলে যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়। আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিয়ালদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতাদের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।